SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - খেলাধুলার দুর্ঘটনা | NCTB BOOK

১. নাক দিয়ে রক্ত পড়া : খেলাধুলা করার সময় সামান্য আঘাত লাগলেই নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। বিশেষ করে
বক্সিং খেলার সময় এ দুর্ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। ক. প্রথমে রোগীকে চেয়ারে বসিয়ে বা চিৎ করে শুইয়ে মুখ পিছনের দিকে সামান্য হেলিয়ে রাখতে হবে।
খ. মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে বলতে হবে।
গ. নাক হালকাভাবে চেপে ধরে রাখতে হবে।
ঘ. জমাট বাঁধা রক্ত সরাতে হয় না, এতে রক্ত আরও বেশি বের হয়।
ঙ. বরফ বা ঠান্ডা পানি লাগালে রক্ত পড়া তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়।
 

২. পানিতে ডোবা : আমাদের চারপাশে অসংখ্য ডোবা, নালা, পুকুর রয়েছে। সেজন্য সকলেরই সাঁতার জানা দরকার। সাঁতার না জানলে কখনোই পানিতে নেমে গোসল করা উচিত নয়। পা পিছলে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পানি উপরে তুলে গোসল করলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। যদি কেউ পানিতে পড়ে যায়, সাথে সাথে ভাসমান কোনো কিছু পানিতে ছুড়ে দিয়ে বা সাঁতরিয়ে তাকে উদ্ধার করতে হবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে রোগী যেন উদ্ধারকারীকে জড়িয়ে ধরে তার জীবন বিপন্ন না করে। রোগী যদি পানি খায় তাহলে পানি দ্রুত বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে শ্বাসনালিতে পানি ঢুকে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ডুবে যাওয়া রোগীকে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নিতে হবে—
 

শিশু হলে
ক. পায়ের গোড়ালি উঁচু করে ধরতে হবে। মাথা নিচের দিকে থাকবে। মাঝে মাঝে পিঠে হালকা চাপ দিতে হবে। এতে গিলে খাওয়া পানি বের হয়ে আসবে। মুখে যদি জলজ উদ্ভিদ ঢোকে তাও বের হয়ে আসবে।
খ. কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
গ. ভেজা কাপড় খুলে ফেলতে হবে।
ঘ. মেডিকেল সাহায্য না পাওয়া পর্যন্ত কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যেতে হবে।
 

বয়স্ক লোক হলে
ক. প্রথমে রোগীর গলা,মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
খ. রোগীর হাঁটু ভাঁজ করে চেয়ার বা টুলের উপর এমনভাবে বসাতে হবে যেন মাথা ঝুলে থাকে। পিঠে হালকা চাপ দিলে গিলে খাওয়া পানি বের হয়ে আসবে ।
গ. ভেজা কাপড় খুলে ফেলতে হবে।
ঘ. মেডিকেল সাহায্য না পাওয়া পর্যন্ত কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যেতে হবে।
 

২. কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস ক্রিয়া : রোগীর শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে বা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে তখন কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসক্রিয়া চালু করতে হয় তাকে কৃত্রিম শ্বাসক্রিয়া বলে। কৃত্রিম শ্বাসক্রিয়া হাত দিয়ে বা যন্ত্রের সাহায্যে দেওয়া হয়। হাত দ্বারা চাপ দিয়ে কৃত্রিম শ্বাসক্রিয়ার লক্ষ হচ্ছে যাতে রোগীর ফুসফুসে মিনিটে ১০-১২ বার ছোট ও বড় করা যায়। ছোট হওয়ার সাথে সাথে ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যায় একে বলে নিঃশ্বাস। বড় হলে বাতাস প্রবেশ করে, একে বলে প্রশ্বাস। কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার কয়েকটি প্রচলিত পদ্ধতি আছে। বহুল প্রচলিত পদ্ধতিগুলো হলো-
 

১. সেফার (Schafer) পদ্ধতি।
২. সিলভেস্টার (Silvesters) পদ্ধতি।
৩. হোলজার নিলসন (Holger Neilson) পদ্ধতি।
৪. মুখে মুখ লাগানো (Mouth to Mouth) পদ্ধতি।
 

১. সেফার পদ্ধতি : রোগীকে উপুড় করে শোয়াতে হবে। তার মুখ থাকবে নিচের দিকে। হাত দুটি মাথার দু'পাশে ছড়ানো থাকবে। মাথা এক পাশ করে দিতে হবে যাতে তার নাক মাটিতে লেগে না থাকে। পরনের কাপড় চোপড় খোলার জন্য সময় নষ্ট করা উচিত নয়। প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী রোগীর মাথার দিকে মুখ করে কোমর বরাবর সমান্তরাল হয়ে পাশে হাঁটু গেড়ে বসবে। তারপর রোগীর কোমরের দু'পাশে নিজের দুটি হাত এমনভাবে রাখতে হবে যাতে বৃদ্ধাঙ্গুলি দুইটি সামনের দিকে এবং অন্য আঙ্গুলগুলো কোমরের দুই পাশে আড়াআড়িভাবে ছড়িয়ে থাকবে। নিজের হাত দুটি এবং কনুই ঠিক সোজা রাখতে হবে। তারপর কনুই না বাঁকিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে চাপ দিতে হবে। এ চাপ পেটের সমস্ত অস্ত্রে পড়বে এবং ফুসফুসের বায়ু বেরিয়ে আসবে। তারপর ধীরে ধীরে চাপ ছেড়ে দিতে হবে। চাপ দেওয়া এবং ছাড়া এ দুটি কাজ ৫ সেকেন্ডের ভিতর করতে হবে। চাপ দিতে ২ সেকেন্ড ও ছাড়তে ৩ সেকেন্ড এই মোট ৫ সেকেন্ড। যতক্ষণ শ্বাস ক্রিয়া স্বাভাবিক না হয় ততক্ষণ এ প্রক্রিয়া চলবে।

২. সিলভেস্টার পদ্ধতি : রোগীকে প্রথমে চিৎ করে শোয়াতে হবে। রোগীর ঘাড়ের নিচে একটি ছোট বালিশ দিতে হবে। মাথাটা বালিশের উপর এমনভাবে রাখতে হবে যেন মাথা সামনের দিকে থাকে। জামা কাপড় খুলে ফেলতে হবে। জিহ্বা উল্টে যেন বাতাস বন্ধ করে না দেয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। রোগীকে শুইয়ে দুই হাত দিয়ে তার কনুই দুটি সজোরে উপরের দিকে টেনে তুলতে হবে। তারপরে সজোরে কনুই দুটি বুকের দুপাশে রাখতে হবে। যাতে বুকের দু'পাশে চাপ পড়ে। এভাবে একবার চাপ পড়বে আবার চাপ ছাড়তে হবে। মোট সময় ৫ সেকেন্ড। নাকের কাছে এক টুকরা কাগজ ধরে দেখতে হবে শ্বাস পড়ছে কি না? শ্বাস ক্রিয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ ক্রিয়া চলতে থাকবে।

৩. হোলজার নিলসন পদ্ধতি : রোগীকে উপুড় করে শোয়াতে হবে।

ক. প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী রোগীর মাথার দিকে হাঁটু ভাঁজ করে বসবে।
খ. রোগীর পিঠে চাপ দিতে হবে। তারপর রোগীর বাহু দুটি উঠা-নামা করাতে হবে। মনে রাখতে হবে যদি শোল্ডার জয়েন্ট বা তার কাছাকাছি কোথাও অস্থিভাঙ্গা থাকে তাহলে এ পদ্ধতি চলবে না। 

চাপ দেয়ার নিয়ম-
 

এক, দুই— পিঠে চাপ সৃষ্টি
তিন- একটু থামতে হবে
চার, পাঁচ— বাহুতে টান সৃষ্টি
হয়— কিছুক্ষণ থাম।
এই প্রক্রিয়ায় রোগীকে প্রতি মিনিট ১০/১২ বার শ্বাস প্রশ্বাস দেওয়া যায়। প্রতিবারে বাতাস চলাচলের পরিমাণ ১ লিটার।
 

৪. মুখে মুখ লাগানো পদ্ধতি : কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের একটি সহজ পদ্ধতি হলো মুখে মুখ লাগানো পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ফুসফুসে বাতাস ঢোকানো যায়। এ পদ্ধতি খুবই সহজ ও পরিশ্রমও কম। অল্প বয়স্করাও সহজে এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবে। তবে নৈতিক দিক দিয়ে এ পদ্ধতি অনেক সময় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রশ্বাস না পেলে এই ধরনের প্রক্রিয়া বহু আগে থেকে চালু আছে। মূলত প্রতিবিধানকারীর লক্ষ্যই হলো যে কোনো উপায়ে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। মুখের ভিতরে ময়লা থাকলে তা পরিষ্কার করে, এক হাত দিয়ে রোগীর মাথা চেপে ধরে, অপর হাত নিম্ন চোয়াল ধরে মুখ ফাঁক করে নিজে শ্বাস পুরো গ্রহণ করে রোগীর মুখ ঠোঁট দিয়ে আটকে ধরে বাতাস ঢোকাতে হবে। এভাবে ১০-১২ বার বুক ফুলানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.