SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা - পারমী | NCTB BOOK

গুপ্তধন অনুসন্ধান খেলার অভিজ্ঞতাটি নিচে লিখে ফেলি।

অভিজ্ঞতা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

তোমরা যে গুপ্তধন পেয়েছ, সেগুলো হলো পারমী। জীবনের পূর্ণতা লাভের জন্য এই দশটি পারমী খুব প্রয়োজন।

 

আমরা সকলেই সুন্দর ও সফল জীবন চাই। যে জীবনে দুঃখ-কষ্ট, বেদনা ও আকাঙ্ক্ষা থাকবে না। আনন্দময় হবে প্রতিটি ক্ষণ। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক হবে অকৃত্রিম অন্তরঙ্গ ও প্রীতিপূর্ণ। এ রকম পরিপূর্ণ জীবনই সফল ও সার্থক জীবন। মানুষের সফলতার প্রকাশ হয় তার কর্মে। এর মাধ্যমে মানুষের যশ, খ্যাতি ও গৌরবও বিকাশ লাভ করে। এরকম জীবন সকলেরই প্রত্যাশিত। কিন্তু অনায়াসে এ রকম জীবন অর্জন সম্ভব নয়। এ জীবন গঠনের জন্য যেমন পরিশ্রম করতে হয়, তেমনি লক্ষ্য অর্জনে হতে হয় অধ্যবসায়ী ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বৌদ্ধ দর্শনমতে বুদ্ধত্ব লাভের জন্য অত্যন্ত কঠিন কঠোর নীতি পালন করতে হয়। বৌদ্ধ সাহিত্যে এরকম লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়াকে বলে পারমী। পারমী বহু জন্মের সাধনার মাধ্যমে অর্জিত হয়। এটি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।

 

পারমী

পারমী শব্দের সরল অর্থ হলো পূর্ণতা। আর পূর্ণতা মানে সকল প্রকার তৃষ্ণার ক্ষয় সাধন করে বিশুদ্ধ জীবনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছা। ক্লেশমুক্ত জীবনের সাফল্যে বিভূষিত হওয়া। মহৎ গুণ ও উৎকর্ষের পরম শীর্ষস্থান লাভ করা। এ ছাড়া পাড়ে যাওয়া অর্থেও পারমী বলা হয়। পাড় মানে নদীর পাড় বা তীর। এই জগৎ সংসার দুঃখ ও যন্ত্রণার সাগর। আমরা সকলেই নানাবিধ যন্ত্রণা নিয়ে এই সাগরেই ভাসছি। এখানে সাগর হলো একটি রূপক শব্দ। জীবনের অন্তহীন সমস্যার প্রতিশব্দ এটি। এই দুঃখময় সংসার সাগর থেকে সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে জীবন পরিচালনা করে নিজের জীবনকে সৎ কর্ম ও সাধনায় পূর্ণতা দিতে পারলেই প্রকৃত মুক্তি সম্ভব হয়। এই দুঃখ মুক্তির পথ অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টসাধ্য। তা সত্ত্বেও অনেক মুনি-ঋষি এই পথ অনুশীলন করেন এবং অনেকে পূর্ণতাও লাভ করেন। এই পারমী পরিক্রমায় পূর্ণতা অর্জনকারী ব্যক্তিই হন বিশুদ্ধ ব্যক্তিত্ব।

বৌদ্ধ দর্শনে পারমী একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব। পারমী সাধারণত ভবিষ্যৎ জীবনে বুদ্ধত্ব অর্জনের মহৎ অভিপ্রায়ে অনুশীলন করা হয়। এটি যিনি পালনে ব্রতী হন, তাঁকে বলা হয় বোধিসত্ত্ব। এ পারমী একটি অনুশীলনীয় তত্ত্ব; জন্ম-জন্মান্তরে পণবদ্ধ হয়ে সম্পাদনীয় একটি প্রক্রিয়া। এ তত্ত্বের গুরুত্ব অনুধাবন হয় জীবন চর্যার মাধ্যমে। সে নিরিখে পারমী প্রক্রিয়াকে একটি উন্নত নৈতিক জীবন প্রক্রিয়াও বলা যায়। চিত্ত ও কায় সংযোগে ব্রত বা প্রত্যয়ের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। তাই পারমী হলো একধরনের ব্রত বা পণবদ্ধ কর্মানুশীলনী অভিযাত্রা।

 

পারমীর সংখ্যা

বৌদ্ধধর্মের প্রাচীন বিধিমতে পারমী দশটি। অনুশীলন কার্যক্রমে এগুলো একটির সঙ্গে অন্যটির সম্পর্ক রয়েছে। একটি অনুসরণে কোনো কারণে ব্যত্যয় হলে অন্যটি পালনেও এই দুর্বলতার প্রভাব পড়ে। এটি হাতের মুষ্টিবদ্ধতার মতো। একটি আঙুল বাদ দিলে যেমন মুষ্টি শক্ত হয় না, ঠিক তেমনি দশ পারমীর কোনো একটি অনুসরণে ব্যর্থ হলে অন্যটি পালন করার দৃঢ়তা হ্রাস পায়। এই পারমীগুলো সাধনাকারীর লক্ষ্য অর্জনের মার্গকে শানিত করে। অনুক্রমিক ধারায় এ পারমীগুলো পালন করতে হয়। অতীতের সকল বুদ্ধ বোধিসত্ত্বকালীন এই পারমীর অধিষ্ঠানব্রত পূর্ণ করেছিলেন। শুধু সম্যক সম্বুদ্ধ নয়, তাঁদের অনুগামী শ্রাবকবুদ্ধ ও প্রত্যেক বুদ্ধও এ পারমী ব্রত পূর্ণতার সাধনা সম্পাদন করেছিলেন।

নিচে দশ পারমীর নাম উল্লেখ করা হলো- 

১. দান পারমী 

২. শীল পারমী 

৩. নৈষ্ক্রম্য পারমী 

৪. প্রজ্ঞা পারমী 

৫. বীর্য পারমী 

৬. ক্ষান্তি পারমী 

৭. সত্য পারমী 

৮. অধিষ্ঠান পারমী 

৯. মৈত্রী পারমী 

১০. উপেক্ষা পারমী

 

পারমী অনুশীলনের পর্যায়

তোমরা ইতিমধ্যে জেনেছ, পারমী হলো নিজেকে বিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়া। এই বিশুদ্ধিতা হলো আচরণ ও মনোজগতের। মানুষের আচার-ব্যবহারের সঙ্গে তার চিন্তা-ভাবনার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃত অর্থে মানুষ যা ভাবে বা চিন্তা করে, সেটিই তার আচরণে প্রকাশ পায়। তাই একজন বিশুদ্ধ মানুষ বলতে তাঁকেই বোঝায়, যিনি ব্যবহারে, কথায় ও চিন্তায় বিশুদ্ধ। এই বিষয়গুলো মানুষকে অর্জন করতে হয়। এর জন্য শ্রম, সাধনা প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, দায়বদ্ধ হয়েই এটি অনুশীলন করতে হয়। পারমী তেমনি একটি নিত্য পালনীয় ও অনুসরণীয় বিষয়। অনুশীলনীয় পারমীর মূল ধাপ দশটি। প্রতিটি পারমী অনুশীলিত হয় তিন পর্যায়ে; অনুক্রমিকভাবে। যেমন: পারমী, উপ-পারমী ও পরমার্থ পারমী। সে হিসাবে দশ পারমী অনুশীলনের ক্ষেত্রে ত্রিশ পর্যায় বা ধাপে পরিণত হয়।

এখানে প্রতিটি পারমী অনুশীলনের প্রাথমিক পর্যায়। উপ-পারমী হলো মধ্যম ও পরমার্থ পারমী হলো চূড়ান্ত পর্যায়। এগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুসরণের উর্ধ্ব দিকে যাত্রা। পারমী অনুশীলনে প্রতিশ্রুতিবন্ধ বা পণবদ্ধ হলেই ক্রমে ধাপ অতিক্রম সম্ভব হয়।

 

দশ পারমীর পরিচয়

দশ পারমীর মধ্যে প্রতিটির স্বতন্ত্র রূপ ও পরিচয় আছে। আচরণের দিক থেকে একটি পারমী অন্যটির সঙ্গে কিছুটা সম্পর্ক থাকলেও লক্ষ্য ও মূল্যবোধ ভিন্ন। একেকটির পৃথক পৃথক আবেদন রয়েছে। অনুসরণের ক্ষেত্রে সেই বিষয়গুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত থাকতে হয়। তাই প্রতিটি পারমীর পরিচয় জানা আবশ্যক। নিচে দশ পারমীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।

দান পারমী

দশ পারমীর প্রথমটি হলো দান পারমী। দানে চিত্ত জাগ্রত হলে প্রসন্নভাবের সৃষ্টি হয়, সেই প্রসন্ন চিত্তে জাগে শীল, সমাধি, শ্রদ্ধা, মৈত্রী, করুণা ইত্যাদি সদ্‌ চৈতন্য জাগে। যার মাধ্যমে অন্যান্য পারমী পালনে চিত্ত প্রসারিত হয়। স্বাভাবিকভাবে দান কর্ম অনুশীলন সহজ। এই কার্যক্রম সব সময় চর্চা করা যায়।

সাধারণত বাহ্যিক বস্তু দানকে দান উপ-পারমী বলা হয়। বাহ্যিক বস্তু বলতে বোঝায় নিজের অধীনস্থ সম্পত্তি। অর্থাৎ, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দানই হলো দান পারমী। নিজের শরীরের অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ ও রক্তদানকে বলা হয় দান উপ-পারমী। প্রয়োজনে জীবন দান করাকে পরমার্থ পারমী বলা হয়।

শীল পারমী

আচরণে, কথায় ও চিন্তায় সংযমশীলতার অনুসরণই শীল। শীল হলো মানুষের সকল গুণ সম্ভারের উৎস। সচ্চরিত্র, সদাচার, গুণাচার ও সংযমশীলতার অনুশীলনই শীল। নৈতিক আদর্শে সুদৃঢ় থাকাই হলো শীলের লক্ষণ। আচরণের প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকার শীল আছে। সেগুলোর বিভিন্ন নামও রয়েছে। এর মধ্যে চারিত্রশীল ও বারিত্রশীল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিজে অনুপ্রাণিত হয়ে পালন করা নিয়ম-নীতিই হলো চারিত্রশীল। আর বিধিবদ্ধ শিক্ষাপদ বা নীতি অনুশীলন হলো বারিত্র শীল। দান পারমীর মতো শীল পারমীর তিনটি পর্যায়ে রয়েছে যেমন: প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে দৈনন্দিন জীবনে শীল পালন হলো শীল পারমী। জীবনে কোনো কিছুর বিনিময়ে শীল বিচ্যুত না হওয়ার সংকল্পবদ্ধ থাকাই হলো শীল উপ পারমী। এছাড়া শীল পালনের প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়াকে বলে পরমার্থ পারমী। প্রত্যেক পারমীই এরকম ত্রিমাত্রিক পর্যায়ে অনুশীলিত হয়।

নৈষ্ক্রম্য পারমী

নৈষ্ক্রম্য শব্দের উদ্ভব নিষ্ক্রমণ থেকে। যার অর্থ ত্যাগ, বন্ধন ত্যাগ, বিদায় ইত্যাদি। জগতের সমস্ত ভোগ-বিলাস ও অহংকার-অহমিকা থেকে বিদায়। নৈষ্ক্রম্য জীবনাচারের আদর্শ হলো কল্যাণমুখী মানসিকতায় নিজেকে গড়ে তোলা। সকল প্রকার অন্যায় ও দুরাচার থেকে বিরত থাকা। লোভ, হিংসা ও পরশ্রীকাতরতা থেকে দূরে থাকা। নৈষ্ক্রম্য সাধনার চূড়ান্ত অবস্থান ব্রহ্মচর্য। প্রাথমিকভাবে ভদ্রতা, নম্রতা, সততা ও সংযম রক্ষার প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে এই সাধনার সূচনা করতে হয়।

প্রজ্ঞা পারমী

প্রজ্ঞা মানে জ্ঞান; সম্যক জ্ঞান। অর্থাৎ, জ্ঞান সম্প্রযুক্ত চিত্তকে বলে প্রজ্ঞা। সুতরাং কোনো বিষয়কে প্রকৃষ্টরূপে জানার জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে যে জ্ঞান সাধনা করা হয়, তাকেই প্রজ্ঞা পারমী বলে। এটি দশ পারমীর চতুর্থ পর্যায়। প্রজ্ঞা পারমীর চর্চায় মানুষের সম্যক জ্ঞান লাভের ধারা শানিত হয়। অন্য সকল পারমীর অনুশীলনেও প্রজ্ঞা পারমীর প্রভাব রয়েছে। এখানে সম্যক জ্ঞান বলতে মূলত নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ভালো-মন্দ ও কর্তব্য-অকর্তব্য সম্পর্কে সঠিক বিবেচনাকে বোঝায়; যা মানুষের চিন্তা ও পরিকল্পনায় সর্বতোভাবে সক্রিয় থাকে।

বলাবাহুল্য, মানুষের ধর্মীয় জীবন ও পারিবারিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রজ্ঞা সাধনার গুরুত্ব রযেছে। আধ্যাত্মিক উৎকৃষ্টতা অর্জনে যেমন প্রজ্ঞার প্রয়োজন, তেমনি গৃহী জীবনে যশ ও খ্যাতি লাভের জন্যও প্রজ্ঞাসাধনার প্রয়োজন অপরিসীম। প্রজ্ঞাসাধনা ছাড়া মহৎ কাজ করা সম্ভব নয়। তাই বলা হয়, প্রজ্ঞাশক্তি যত প্রবল হবে, তত বেশি শুদ্ধ চেতনার বিকাশ হবে। অর্থাৎ সর্বকল্যাণ ও মঙ্গলকর্মের উৎসে প্রজ্ঞার প্রাধান্য রয়েছে। এছাড়া এটিও সত্য যে, প্রজ্ঞায় পূর্ণতা না এলে সাধনায়ও পূর্ণতা আসে না। এই প্রজ্ঞা পারমীর তিনটি রূপ হলো চিন্তাময়-প্রজ্ঞা, শ্রুতময়-প্রজ্ঞা ও ভাবনাময়-প্রজ্ঞা।

বীর্য পারমী

বীর্য শব্দের অর্থ হলো বীরত্ব, কর্মোদ্দীপনা ও কর্মচাঞ্চল্য। যথাসময়ে যথোপযুক্ত কাজের উদ্যোগ গ্রহণে সংকল্পবদ্ধ হওয়াকে বলে বীর্য পারমী। এটি দশ পারমীর পঞ্চম স্তর। বীর্য পারমী অনুশীলনের জন্য মনে বিশুদ্ধ কর্ম ও সর্বজনীন হিতকর্ম করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা, উৎসাহ ও মহৎ প্রচেষ্টা থাকতে হয়; যা সাধক অটল দৃঢ়চিত্তে অনুসরণ করেন। যাঁর এরকম চিত্ত জাগ্রত হয়, তাঁর দুঃখ মুক্তির পথও সুগম হয়। সাধনা যাঁর দুর্বল, তিনি কখনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন না। যাঁর সাধনা মধ্যম স্তরের, তিনি যেকোনো কাজ শুরু করলেও শেষ করতে পারেন না। কিন্তু যাঁর সাধনা উত্তম ও সুদৃঢ়, তিনি স্বাভাবিক গতিতেই লক্ষ্যে পৌঁছে যান। সাধনায় দৃঢ় ও কঠিন হলে প্রপঞ্চ ও মরীচিকা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। এছাড়া বীর্য পারমীর সাধক একটি উন্নত চরিত্র ও আদর্শিক জীবনলাভে সমর্থ হয়। প্রত্যেক বুদ্ধ ও শ্রাবক বুদ্ধগণও এই বীর্য পারমীর পরিপূর্ণতার গুণে মহিমান্বিত হয়েছেন।

ক্ষান্তি পারমী

ক্ষান্তি মানে ক্ষমা। ক্ষান্তি পারমীর চর্চা হলো সহনশীলতার সাধনা করা। সহ্য, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অনুশীলনের মাধ্যমে এই সাধনা করতে হয়। পৃথিবী যেমন তার ওপর শুচি-অশুচি নানাবিধ বস্তু নিক্ষেপিত হলেও নীরবে সহ্য করে, নিক্ষেপকারীর প্রতি দয়া বা ক্রোধ কোনো কিছুই প্রদর্শন করে না, তেমনি সকল মান-অপমান সহ্য করাই ক্ষান্তি পারমী।

সত্য পারমী

সত্য বলা ও সততা অনুসরণে সংকল্পবদ্ধ হওয়াই সত্য পারমী। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে সদাচার নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা এবং সকল কাজে সত্যব্রত সাধনই হলো সত্য পারমী। কোনো অবস্থাতেই সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। সত্য পারমীতে কথা ও কাজের একাত্মতা থাকবে, কোনো দ্বৈতচিত্ত ভাবের প্রকাশ হবে না। এই সত্য সাধনার মূল্যায়ন নিজেকেই করতে হয়। সত্যের কোনো বিকল্প নেই। সত্যের পরিপন্থী কোনো বিষয়ের সঙ্গে কোনো আপস নেই। প্রয়োজনে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া যাবে; কিন্তু সত্যের অপলাপ কখনো হবে না- সত্য অনুসরণে এই ব্রতই সত্য পারমী।

অধিষ্ঠান পারমী

এটি দশ পারমীর অষ্টম ধাপ। সংকল্প ও প্রতিশ্রুতি পালনে অটল থাকার কঠিন সিদ্ধান্ত অনুসরণকেই অধিষ্ঠান পারমী বলে। চিত্তের এই একাগ্রতা ও অবিচল দৃষ্টিভঙ্গিই অধিষ্ঠান পারমীর প্রাণ। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অধিষ্ঠান ব্রতের প্রয়োজন রয়েছে। স্বর্ণকে যেমন আগুনে পুড়িয়ে এর মলিনতা দূর করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়, তেমনি অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য আরাম-আয়াস ত্যাগ করে অধিষ্ঠানকে প্রবলতর করতে হয়। লক্ষ্য অর্জনে সদিচ্ছার সৃষ্টি করতে হয়। এই সদিচ্ছা হবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কর্ম সম্পাদনে জীবনপণ সদিচ্ছা। চঞ্চল চিত্তকে সাম্য দানের সদিচ্ছা। মানুষের সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় জীবনের সার্থকতা লাভের জন্য সর্বক্ষেত্রে চিত্তচাঞ্চল্য পরিহার করা আবশ্যক। অস্থির চিত্ত মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সেজন্য বলা হয়, মানবজীবনের সার্বিক কল্যাণের প্রধান অবলম্বন হলো অধিষ্ঠান। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট অধিষ্ঠান ব্রত আবশ্যক। কারণ, সংকল্পবদ্ধ হয়ে অগ্রসর হলে জীবনে সাফল্য আসবেই। তাই বলা হয়ে থাকে- অধিষ্ঠান মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধনের অন্যতম শক্তি।

মৈত্রী পারমী

নিজের মনে সর্বদা মৈত্রীভাব জাগ্রত রাখার সংকল্পবন্ধ হওয়াই মৈত্রী পারমীর সাধনা। এই সাধনা আচরণে, চিন্তায় ও কথায় সর্বক্ষেত্রে অনুশীলন করতে হয়। সর্ব জীবের শুভকামনা ও সর্বসত্তার মঙ্গল চেতনাই মৈত্রী। মৈত্রী সাধনা অন্তরের হিংসা বিনাশ করে এবং নিঃস্বার্থ পরোপকারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। সকল জীবের সঙ্গে একাত্মতা পোষণই মৈত্রীর স্বভাব। জল যেমন সৎ-অসৎ, হীন-উত্তম সকলকেই ধৌত করে, শীতল করে; তেমনি শত্রু-মিত্র সকলের প্রতি সমান প্রীতিভাব পোষণ করে মৈত্রী সাধনায় পূর্ণতালাভ করতে হয়।

উপেক্ষা পারমী

সর্ববিধ বিষয়ে ও সকলের প্রতি মনের সমতাভাব বজায় রাখার দৃঢ় অনুশীলনই উপেক্ষা পারমী। এটি একপ্রকার লোভ-হিংসা বর্জিত মনোচেতনা। এই সাধনায় চিত্ত অনুরাগ-বিরাগশূন্য মধ্যম অবস্থাধীন হয়। এটি দশ পারমীর সর্বশেষ পারমী।

উপেক্ষার অনুশীলনে চিত্তে যে সাম্যভাব সৃষ্টি হয়, তাতে আত্ম-পর ভেদ মন থেকে ঘুচে যায়। সাধকের সর্বজনীন উদার মনোবৃত্তি জাগ্রত হয়। উপেক্ষা নিয়ন্ত্রিত হয় জ্ঞান দ্বারা। তবে নিজের দায়িত্ব অবহেলা করে উপেক্ষার অনুসরণ গ্রহণযোগ্য হয় না। অর্থাৎ উপেক্ষার মাধ্যমে সকলের জন্য যেমন সেবা, মৈত্রী ও বন্ধুত্বভাব থাকবে, তেমনি সততা ও দায়িত্বের সঙ্গে নিজের কর্তব্য কর্মও পালন করতে হবে। উপেক্ষা অনুসরণকারী কারো প্রশংসায় উৎসাহিতও হয় না; আবার কারো বিরুদ্ধাচরণে কুপিতও হয় না। তাঁর চিত্ত থাকে সর্বদা সমভাবাপন্ন; মধ্যম স্বভাবের। যেমন নিজের প্রিয়জনকে দেখে উল্লসিতও নয়, আবার অপ্রিয়কে দেখে বিষাদময়ও নয়। চিত্তের এই স্থিত ভাব এক দিনে আসে না। এটি ধারাবাহিক চর্চার মাধ্যমে আয়ত্ত করতে হয়। এই চর্চা নিজের জন্য যেমন অত্যন্ত ফলপ্রসূ, তেমনি অন্যের জন্যও এটি পরম কল্যাণকর।

Content added || updated By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.