SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - আখলাক | NCTB BOOK

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন এবং সম্মানজনক আচরণ করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। তাদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে অন্ধকে পথ ভুলিয়ে দেয় সে অভিশপ্ত'। (মুসনাদে আহমাদ)

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩' অনুসারে প্রতিবন্ধিতা অর্থ যেকোনো কারণে ঘটিত দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ীভাবে কোনো ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিগত, বিকাশগত বা ইন্দ্রিয়গত ক্ষতিগ্রস্ততা বা প্রতিকূলতা এবং উক্ত ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিগত ও পরিবেশগত বাধার পারস্পরিক প্রভাব, যার কারণে উক্ত ব্যক্তি সমতার ভিত্তিতে সমাজে পূর্ণ ও কার্যকর অংশগ্রহণে বাধাপ্রাপ্ত হন।

প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে কুসংস্কার প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক কুসংস্কার প্রচলিত। যেমন, প্রতিবন্ধী শিশু বাবা মায়ের পাপ বা অভিশাপের ফল, প্রতিবন্ধী শিশুর ওপর জিনের প্রভাব আছে, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্মের জন্য বাবা-মায়ের অসচেতনতা দায়ী, মায়ের দোষে এমন শিশুর জন্ম হয়, প্রতিবন্ধী শিশু পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য অভিশাপ ইত্যাদি। আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তার পরিবারকে উপহাস করা হয়। আল্লাহ তা'আলা এমন আচরণ নিষিদ্ধ করে বলেন,

يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ

وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءِ عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ 

অর্থ: 'হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে।' (সুরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১১) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে অভিভাবকের অনেক ভাবনা। প্রতিবেশীরা কী বলবে, আত্মীয়স্বজনরা কী ভাববে? এসব ভেবে তাদেরকে কখনোই ঘরের বাইরে নেওয়া হয় না। তাদেরকে ঘরবন্দি করে রাধা হয়। প্রতিবন্ধী শিশুর বিকাশ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য এসব কুসংস্কার দূর করতে হবে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মর্যাদা 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মর্যাদা ও সম্মানের দাবিদার। আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মর্যাদা অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে বিশেষ মর্যাদা দিতেন। তিনি মদিনার বাইরে গেলে অন্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুমকে (রা.) মদিনার অস্থায়ী শাসক নিয়োগ করতেন। অন্ধ ব্যক্তিদের জন্য জান্নাতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'আমি যে ব্যক্তির দু'টি প্রিয় চোখ কেড়ে নিয়েছি, অতঃপর সে ধৈর্য ধারণ করেছে। সে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে বলে মনে করে এবং সওয়াবের আশা করে, আমি তাকে জান্নাত ব্যতীত অন্য কোনো কিছু দিয়ে সন্তুষ্ট হব না'। (তিরমিযি)

ইসলাম প্রতিবন্ধী ও অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য শরিয়তের বিধিবিধান পালনে ছাড় দিয়েছে। প্রত্যেক ফরয বিধান তাদের সাধ্যের ওপর নির্ভর করবে। মহান আল্লাহ বলেন, 

لا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا 

অর্থ: 'আল্লাহ কারো ওপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত।' (সুরা আল- বাকারা, আয়াত: ২৮-৬)

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার

প্রতিবন্ধীতা মানবজীবনের এক দুর্বিষহ অধ্যায়ের নাম। জন্মগত, দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থতা যে কারণেই হোক, ইসলাম সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতেন। রাসুলুল্লাহকে (সা.) অনুসরণ করে মুসলিম খলিফারাও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। তারা সমাজের অসহায়-প্রতিবন্ধী লোকদের নামের তালিকা করেন। প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ ভাতার ব্যবস্থা করেন। প্রতি দু'জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির দেখভালের জন্য একজন খাদেম নিযুক্ত করেন। বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেবাকেন্দ্র চালু করেন।

মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির দায়িত্ব নেওয়া ফরযে কেফায়া। রাষ্ট্র যদি এ দায়িত্ব পালন না করে বা দেশের কোনো নাগরিকই তাদের সেবায় এগিয়ে না আসে, তাহলে সমাজের প্রতিটি মুসলমান এর জন্য দায়ী ও গুনাহগার হবে। পরকালে এ জন্য কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কারও দয়া চায় না। অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। দক্ষতা অর্জন করে স্বনির্ভর হতে চায়। আমাদের উচিত তাদের ব্যাপারে সমাজে বিদ্যমান নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দেওয়া। ইসলাম তাদের যে সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে তা নিশ্চিত করা।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। আমরা প্রতিবন্ধীদের ভালোবাসব এবং তাদের যথাযথ সম্মান ও সহযোগিতা করব।

 

Content added By
Promotion