SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

তৃতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক স্তর ২০২৪) - হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK
Please, contribute to add content into ধর্মগ্রন্থ, পূজা-পার্বণ ও ধর্মীয় উৎসব এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান.
Content

 

মানুষ যা ধারণ করে তাই ধর্ম। ধর্ম মানুষের মঙ্গল করে। জগতের কল্যাণ করে। ঈশ্বরকে জানতে সাহায্য করে। ঈশ্বরকে ভক্তি করতে শেখায়। ধর্মে আছে সুন্দর হওয়ার কথা। সুশৃঙ্খল ও পবিত্র জীবন-যাপনের কথা। আছে কল্যাণকর কাজের কথা।

যে গ্রন্থে ধর্মের কথা থাকে তাকে ধর্মগ্রন্থ বলে। ধর্মগ্রন্থে ঈশ্বরের কথা থাকে। দেব-দেবীর উপাখ্যান থাকে। জ্ঞানের কথা থাকে। কল্যাণের কথা থাকে। জীবকে সেবা করার কথা থাকে। শান্তির কথা থাকে। সমাজ ও জীবনের কথা থাকে। নানা উপদেশমূলক কাহিনি ও নীতিকথা থাকে।

প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। হিন্দুধর্মে রয়েছে অনেক ধর্মগ্রন্থ। বেদ আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। এছাড়া রয়েছে উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, পুরাণ, শ্রীশ্রীচণ্ডী ইত্যাদি। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে স্রষ্টার মহিমার কথা বলা হয়েছে। সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে।

 

আদি-কাণ্ডে রাম-জন্ম সীতা-পরিণয়।

অযোধ্যা-কাণ্ডেতে রাম-বনবাস হয় ॥ 

অরণ্য-কাণ্ডেতে হয় জানকী-হরণ। 

কিষ্কিন্ধ্যা-কাণ্ডেতে হয় সুগ্রীব-মিলন ॥ 

সুন্দর-কাণ্ডেতে হয় সাগর-বন্ধন।

লঙ্কা-কাণ্ডে মহারণে রাবণ-নিধন ॥ 

উত্তর-কাণ্ডেতে হয় কান্ডের বিশেষ। 

মনোদুঃখে বৈদেহীর পাতাল-প্রবেশ ॥ 

এই সুধাভাণ্ড সপ্তকাণ্ড-রামায়ণ। 

কবিবর কৃত্তিবাস করেন রচন ॥

 

 

 

এখানে ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :

 

রামায়ণ

 

মহর্ষি বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেন। রামায়ণ সাতটি ভাগে বিভক্ত। প্রত্যেক ভাগকে বলা হয় কাণ্ড। তাই বলা হয় সপ্তকাণ্ড রামায়ণ। এই সপ্তকাণ্ড হলো: আদিকাণ্ড, অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, যুদ্ধকাণ্ড এবং উত্তরকাণ্ড।

প্রাচীনকালে অযোধ্যার রাজা ছিলেন দশরথ। তাঁর তিন স্ত্রী। কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। কৌশল্যার ছেলে রাম। কৈকেয়ীর ছেলে ভরত। আর সুমিত্রার দুই ছেলে। লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন। অন্যদিকে মিথিলার রাজা ছিলেন জনক। জনকের দুই মেয়ে। সীতা ও উর্মিলা। সীতার সঙ্গে রামের বিয়ে হয়। ঊর্মিলার সঙ্গে বিয়ে হয় লক্ষ্মণের। জনকের ভাই ছিলেন কুশধ্বজ। তাঁর দুই মেয়ে। মাণ্ডবী ও শ্রুতকীর্তি। মাণ্ডবীর সঙ্গে ভরতের বিয়ে হয়। শ্রুতকীর্তির সঙ্গে বিয়ে হয় শত্রুমের।

রাজা দশরথের বড় ছেলে রাম। দশরথ রামকে রাজা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাদ সাধেন কৈকেয়ী। একসময় দশরথ খুব অসুস্থ হয়েছিলেন। তখন কৈকেয়ী তাঁর সেবা করেন। সেবায় তিনি সন্তুষ্ট হন। তখন তিনি কৈকেয়ীকে দুটি বর দিতে চেয়েছিলেন। দাসী মন্থরার পরামর্শে কৈকেয়ী এখন সেই দুটি বর চান। প্রথম বরে ভরত রাজা হবে। আর দ্বিতীয় বরে রাম চৌদ্দ বছরের জন্য বনে যাবে। রাম ছিলেন খুবই পিতৃভক্ত। তিনি পিতৃসত্য পালনের জন্য বনে যান। সঙ্গে যান স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণ।

এদিকে রামের শোকে দশরথের মৃত্যু হয়। ভরত তখন মামাবাড়িতে ছিলেন। অযোধ্যায় ফিরে তিনি মাকে ভর্ৎসনা করেন। রামকে ফিরিয়ে আনতে যান। কিন্তু রাম আসলেন না। ভরত তখন রামের পাদুকা নিয়ে আসেন। পাদুকা সিংহাসনে রেখে তিনি রাজ্য পরিচালনা করেন।

বনবাসে রাম-সীতা-লক্ষ্মণের তেরো বছর কেটে যায়। হঠাৎ একদিন লঙ্কার রাজা রাবণ বনে আসেন। সীতা তখন বনের কুটিরে একা ছিলেন। রাবণ সীতাকে একা পেয়ে হরণ করেন এবং লঙ্কায় নিয়ে যান। সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাম লঙ্কায় যান। রামের সঙ্গে ছিল অনেক বানরসৈন্য। রামের সাথে রাবণের ভীষণ যুদ্ধ হয়। রাবণ পরাজিত হন। রাবণের মৃত্যু হয়। রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ অযোধ্যায় ফিরে আসেন। রাম রাজা হন।

রামায়ণ নিত্যপাঠ্য ধর্মগ্রন্থ। রামায়ণের কাহিনি থেকে আমরা অনেক নৈতিক শিক্ষা পাই। তা হলো: পিতা-মাতাকে শ্রদ্ধা করা। বড় ভাইকে শ্রদ্ধা করা। বড়দের সম্মান করা। অধর্মের বিনাশ করা। যোগ্য রাজা হওয়া। রাজার কর্তব্য সর্বদা প্রজাদের মঙ্গল চিন্তা করা। প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা ইত্যাদি।

 

 

 

মহাভারত

 

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব মহাভারত রচনা করেন। মহাভারতের মূল কাহিনি কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনেক কাহিনি-উপকাহিনি। বিশাল মহাভারত কয়েকটি অংশে বিভক্ত। প্রত্যেক অংশকে বলা হয় পর্ব। মহাভারতে আঠারোটি পর্ব রয়েছে।

প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে হস্তিনাপুর নামে এক রাজ্য ছিল। একসময় তার রাজা ছিলেন শান্তনু। শান্তনুর তিন ছেলে। দেবব্রত, চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য। দেবব্রত বড়। তিনি এক ভীষণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। বিয়ে করবেন না। সিংহাসনেও বসবেন না। এ ভীষণ প্রতিজ্ঞা করার জন্য তাঁর নাম হয় ভীষ্ম। চিত্রাঙ্গদ অল্প বয়সে মারা যান। তাই শান্তনুর পর বিচিত্রবীর্য রাজা হন। বিচিত্রবীর্যের দুই ছেলে। ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু। ধৃতরাষ্ট্র ছিলেন জন্মান্ধ। তাই বিচিত্রবীর্যের মৃত্যুর পর পাণ্ডু রাজা হন। ধৃতরাষ্ট্রের ছিল একশত ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলের নাম দুর্যোধন। দুর্যোধনদের বলা হয় কৌরব। পাণ্ডুর পাঁচ ছেলে। বড় ছেলের নাম যুধিষ্ঠির। তাঁদের বলা হয় পাণ্ডব। পাণ্ডুর মৃত্যুর পর যুধিষ্ঠিরকে যুবরাজ করা হয়। কিন্তু দুর্যোধন তা মেনে নেননি।

তিনি পাণ্ডবদের মেরে ফেলার জন্য অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁরা রক্ষা পেয়ে যান। পরে ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডবদের অর্ধেক রাজ্য দান করেন। খাণ্ডবপ্রন্থ হয় পাণ্ডবদের রাজ্য। পরে এ রাজ্যের নাম হয় ইন্দ্রপ্রন্থ।

পাণ্ডবদের রাজ্যছাড়া করার জন্য দুর্যোধন নতুন ফন্দি আঁটেন। তিনি যুধিষ্ঠিরকে পাশা খেলায় আমন্ত্রণ করেন। যুধিষ্ঠির পাশা খেলায় হেরে যান। পাশা খেলায় পাণ্ডবদের জন্য একটা শর্ত ছিল। হেরে গেলে বারো বছর বনবাসে থাকতে হবে। পরে এক বছর অজ্ঞাতবাসে থাকতে হবে। শর্ত অনুযায়ী পাণ্ডবরা স্ত্রী দ্রৌপদীসহ বনবাসে যান। বারো বছর কেটে গেল। এরপর ছদ্মবেশে তাঁরা বিরাট রাজার রাজ্যে যান। সেখানে তাঁরা এক বছর অজ্ঞাতবাসে থাকেন। শর্ত পূরণ করেন পাণ্ডবরা। তাঁরা দ্রৌপদীসহ হস্তিনাপুরে ফিরে আসেন। কিন্তু দুর্যোধন তাঁদের প্রাপ্য রাজ্য ফিরিয়ে দেন না। যুধিষ্ঠির তখন পাঁচ ভাইয়ের জন্য পাঁচটি গ্রাম চান। দুর্যোধন তাও দেন না। শ্রীকৃষ্ণ সবার মধ্যে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।

হস্তিনাপুরের কাছে কুরুক্ষেত্র নামে একটি প্রান্তর ছিল। কুরুক্ষেত্রে কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে বিপক্ষে গুরুজন ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন। এঁদের দেখে অর্জুনের মন বিষাদগ্রস্ত হয়। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন- এ যুদ্ধ ধর্মযুদ্ধ। ধর্মের জন্য, ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ করলে পাপ হয় না। অনেক উপদেশ দেন শ্রীকৃষ্ণ। এতে অর্জুনের মন শান্ত হয়। তিনি যুদ্ধ করতে সম্মত হন। অর্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণের এই উপদেশসমূহ পৃথকভাবে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা নামে পরিচিত।

 

আঠারো দিনে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধে দুর্যোধনসহ কৌরব পক্ষের সব যোদ্ধা নিহত হন। যুধিষ্ঠির হস্তিনাপুরের রাজা হন। যুধিষ্ঠিরের রাজত্ব ছত্রিশ বছর পূর্ণ হয়। অজুর্নের ছেলে অভিমন্যুর পুত্র পরীক্ষিৎকে রাজা করা হয়। দ্রৌপদীসহ পঞ্চপাণ্ডব রাজ্য ছেড়ে হিমালয়ের পথে অগ্রসর হন। পথে একে একে দ্রৌপদী ও চার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। যুধিষ্ঠির সশরীরে স্বর্গে যান।

মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হচ্ছে ধর্মযুদ্ধ। অধর্ম ও অসত্যের বিরুদ্ধে ধর্ম ও সত্যের যুদ্ধ। যুদ্ধে সত্য ও ধর্মের জয় হয়। অসত্য ও অধর্মের পরাজয় হয়। মহাভারত থেকে আমরা অনেক নৈতিক শিক্ষা পাই। নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কামনা-বাসনা ত্যাগ করে কাজ করতে হবে। জ্ঞানার্জন করতে হবে। সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকতে হবে।

মহাভারত নিত্যপাঠ্য ধর্মগ্রন্থ। মহাভারতের কথা অমৃতের মতো। তা শুনলে পুণ্য হয়। তাই কাশীরাম দাস বলেছেন-

Content added || updated By

ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি সর্বশক্তিমান। অসীম তাঁর ক্ষমতা। অশেষ তাঁর গুণ। তাঁর কোনো আকার নেই। তিনি নিরাকার। তবে তিনি যে কোনো আকার বা রূপ ধারণ করতে পারেন। তিনি তাঁর কোনো গুণ বা ক্ষমতাকে যে কোনো রূপে প্রকাশ করতে পারেন। আবার সাধকেরা তাঁর কোনো গুণকে রূপ দেন। এভাবে ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শক্তি আকার পায়। রূপ পায়। এই আকার পাওয়াকে দেব-দেবী বলে। দেব-দেবী ঈশ্বরের সাকার রূপ। দেব-দেবীর শক্তি ঈশ্বরেরই শক্তি। দেব-দেবীর মধ্য দিয়েই ঈশ্বরের শক্তির প্রকাশ ঘটে। দেব-দেবী অনেক। যেমন- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, দুর্গা, কালী, সরস্বতী, লক্ষ্মী, মনসা, কার্তিক, গণেশ প্রভৃতি। ঈশ্বর যে রূপে সৃষ্টি করেন, তাঁর নাম ব্রহ্মা। যে রূপে পালন করেন, তাঁর নাম বিষ্ণু। যে রূপে ধ্বংস করেন, তাঁর নাম শিব। দুর্গা শক্তির দেবী। সরস্বতী বিদ্যার দেবী। লক্ষ্মী ধন-সম্পদের দেবী।

 

 

প্রথম শ্রেণিতে সরস্বতী ও গণেশ এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে লক্ষ্মী ও কার্তিক সম্পর্কে জেনেছি। এখন শিব ও দুর্গা সম্পর্কে জানব।

 

শিব

ঈশ্বর যে দেবতারূপে সংহার বা ধ্বংস করেন, তাঁর নাম শিব। শিব মঙ্গলের দেবতা। মঙ্গলের জন্য তিনি। সকল অশুভকে ধ্বংস করেন। ধ্বংস করে তিনি জগতের ভারসাম্য রক্ষা করেন। তাঁর অনেক নাম- মহেশ্বর, মহাদেব, ভোলানাথ, নটরাজ ইত্যাদি।

 

শিবের গায়ের রং তুষারের মতো সাদা। তাঁর মাথায় জটা। তাঁর তিনটি চোখ। একটি চোখ কপালের মাঝখানে। কপালের উপরের দিকে বাঁকা চাঁদ। তাঁর দুটি বাদ্যযন্ত্র- ডমরু ও শিঙ্গা। ত্রিশূল তাঁর প্রধান অস্ত্র। তিনি বাঘের চামড়া পরিধান করেন। তাঁর বাহন হচ্ছে ষাঁড়।

যে কোনো সময়ে শিবের পূজা করা যায়। তবে বিশেষভাবে বিশেষ দিনে শিবপূজা করা হয়। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবপূজা হয়। এই তিথিকে শিবচতুর্দশী বলা হয়। এই রাত্রিকে বলা হয় শিবরাত্রি। শিবের উপাসকেরা শৈব নামে পরিচিত। শিবের পূজা করলে অশুভ ধ্বংস হয়। মঙ্গল হয়।

সরলার্থ: তিন কারণের (সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের) হেতু শান্ত শিবকে নমস্কার। হে পরমেশ্বর, তুমিই গতি। তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করি।

দুর্গা

দুর্গা শক্তির দেবী। সকল শক্তির মিলিত রূপ দুর্গা। দুর্গম নামে এক অসুরকে তিনি বধ করেন। এজন্য তাঁর নাম দুর্গা। তিনি জীবের দুর্গতি নাশ করেন। তাই তাঁকে দুর্গতিনাশিনীও বলা হয়। তাঁর অনেক 

নাম- মহামায়া, ভগবতী, চণ্ডী, কালী ইত্যাদি। অতসী ফুলের মতো দুর্গার গায়ের রং। পূর্ণিমার চাঁদের মতো সুন্দর তাঁর মুখ। তাঁর তিনটি চোখ। এজন্য তাঁকে ত্রিনয়না বলা হয়। একটি চোখ কপালের মাঝখানে। তাঁর মাথার একপাশে বাঁকা চাঁদ। দেবী দুর্গার দশ হাত। এজন্য তাঁর আর এক নাম দশভুজা। দশ হাতে থাকে দশটি অস্ত্র। এই অস্ত্র শক্তির প্রতীক। তাঁর বাহন সিংহ।

ধর্মগ্রন্থ 'শ্রীশ্রীচণ্ডী'তে দেবী দুর্গার কাহিনি ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। সেখান থেকে জানা যায়, দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন। তাই তাঁর এক নাম মহিষাসুরমর্দিনী। তিনি আরও অনেক অসুরকে বধ করেন।

দুর্গাকে সর্বমঙ্গলা বলা হয়। কারণ তিনি সকল প্রকার মঙ্গল করেন। তিনি আমাদের শক্তি দেন। সাহস দেন। তিনি সকল দুঃখ-কষ্ট থেকে পরিত্রাণ করেন। দুর্গানাম স্মরণ করলে সকল বিপদ দূর হয়। 'দুর্গা দুর্গা' বলে যাত্রা করলে যাত্রা শুভ হয়। শরৎকালে দুর্গাপূজা হয়। এজন্য দুর্গাপূজাকে শারদীয় পূজা বলা হয়। বসন্তকালেও দুর্গাপূজা হয়। একে বাসন্তীপূজা বলা হয়। দুর্গাপূজায় শ্রীশ্রীচণ্ডী পাঠ করা হয়।

Content added || updated By

ঈশ্বরের বিভিন্ন প্রতীক বা রূপ হচ্ছে দেব-দেবী। আমরা দেব-দেবীর কৃপা লাভ করার জন্য পূজা করি। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। দেব-দেবীর পূজা করলে ঈশ্বরেরই পূজা করা হয়। পূজা করলে তাঁরা সন্তুষ্ট হন। দেব-দেবীরা সন্তুষ্ট হলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন। তখন আমাদের মঙ্গল হয়।

পূজা শব্দের অর্থ প্রশংসা করা বা শ্রদ্ধা করা। পূজা অর্থে আরাধনা এবং অর্চনা করাও বোঝায়। পূজা বলতে বোঝায় দেব-দেবীর স্তুতি করা। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা। নানা উপকরণ দিয়ে দেব-দেবীর পূজা করা হয়। উপকরণগুলো হলো: ফুল-ফল, দূর্বা, তুলসীপাতা, বেলপাতা, জল, চন্দন, আতপচাল, ধূপ-দীপ ইত্যাদি। দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করে পূজা করা হয়। মন্দিরে সাজসজ্জা করা হয়। সকলের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করা হয়। পূজার সময় পবিত্র মনে মন্ত্র পাঠ করতে হয়। তারপর পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, আরতি এবং ধ্যান করতে হয়। পূজা শেষে দেবতাকে প্রণাম করতে হয়।

পার্বণ শব্দের অর্থ হলো পর্ব বা উৎসব। উৎসব মানে আনন্দপূর্ণ অনুষ্ঠান। বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিভিন্ন ধরনের উৎসবের আয়োজন করা হয়। যে উৎসবগুলো পূজাকে আনন্দময় করে তোলে তাকে পার্বণ বলে। আনন্দের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পার্বণ পালিত হয়। পালিত পার্বণগুলোর মধ্যে নববর্ষ, পৌষসংক্রান্তি, চৈত্রসংক্রান্তি, নবান্ন, দোলযাত্রা, বিজয়া দশমী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

পূজা-পার্বণের অঙ্গের মধ্যে রয়েছে- দেব-দেবীর প্রতিমা নির্মাণ। মন্দির বা ঘর সাজানো। বিভিন্ন ধরনের বাদ্যের আয়োজন করা। বিশেষ করে ঢাক, ঢোল, ঘণ্টা, করতাল, কাঁসি, শঙ্খ ইত্যাদি বাদ্য বাজানো। সকলের সাথে ভাববিনিময়। নানা ধরনের খাওয়া-দাওয়া। বিভিন্ন ধরনের আনন্দমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। পরিচ্ছন্ন পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা।

হিন্দুধর্মে প্রায় সারা বছর নানা পূজার আয়োজন করা হয়। আমাদের প্রধান পূজাগুলো হচ্ছে দুর্গাপূজা, সরস্বতীপূজা ও লক্ষ্মীপূজা। সকলে মিলে মন্দিরে পূজা করে। পূজার সময় একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে। বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, নাড়ু ও ফল খেয়ে থাকে। শিশুরা নানা ধরনের খেলা ও আনন্দে মেতে ওঠে। সকলে মিলে যখন পূজা করা হয় তখন পূজা হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। এই উপলক্ষে ধর্মীয় আলোচনা সভা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। মেলা বসে। শোভাযাত্রা হয়। পুজাতে এরূপ নানা উৎসবের আয়োজন করা হয়। সকলের অংশগ্রহণে এসব উৎসব সর্বজনীন হয়ে ওঠে।

Content added || updated By

আমাদের দেশে চারটি প্রধান ধর্ম রয়েছে। প্রত্যেক ধর্মেরই নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কুরআন। আল্লাহর বাণী পবিত্র কুরআন গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। কুরআন প্রথম আরবি ভাষায় লেখা হয়।

বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম ত্রিপিটক। গৌতম বুদ্ধের ধর্মবাণী তিনটি পিটক বা গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। তিনটি পিটক হলো: সূত্র পিটক, বিনয় পিটক ও অভিধর্ম পিটক। এ তিনটি পিটককে একত্রে ত্রিপিটক বলে। ত্রিপিটক পালি ভাষায় রচিত।

পবিত্র বাইবেল খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বাইবেল শব্দের অর্থ বই বা গ্রন্থ। বাইবেল মূলত অনেকগুলো গ্রন্থের সমন্বয়ে গঠিত। এই বইগুলোতে ঈশ্বরের বাণী আছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মাধ্যমে এই বাণী বর্ণনা করা হয়েছে। বাইবেলের প্রথম বইটি হিব্রু ভাষায় লেখা হয়।

সকল ধর্মগ্রন্থই পবিত্র। নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। সকল ধর্মগ্রন্থের প্রতি সম্মান জানানো আমাদের কর্তব্য।

 

১. আমাদের দেশে কয়টি প্রধান ধর্ম রয়েছে?

ক. চারটি                            খ. তিনটি 

গ. পাঁচটি                             ঘ. দুটি

 

 

২. কুরআন প্রথম কোন ভাষায় লেখা হয়?

ক. আরবি                            খ. বাংলা

গ. ইংরেজি                          ঘ. উর্দু

Content added || updated By

আমাদের অন্য ধর্মাবলম্বী অনেক বন্ধু আছে। তাদের ধর্ম সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। প্রত্যেক ধর্মের মানুষই কিছু ধর্মীয় উৎসব পালন করে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ। আরবি ঈদ শব্দের অর্থ উৎসব। মুসলমানরা বছরে দুইটি ঈদ উদ্যাপন করে। ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আজহা। ঈদের দিন মুসলমানরা দল বেঁধে মসজিদ ও ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করে। একজন আর একজনকে 'ঈদ মোবারাক' বলে শুভেচ্ছা জানায়। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু, শিশু সবাই মিলে ঘুরে বেড়ায়। আনন্দ উপভোগ করে। খাওয়া-দাওয়া করে। মুসলমানদের আরও কয়েকটি ধর্মীয় উৎসব রয়েছে। ঈদ-ই-মিলাদুন্নবি, শব-ই-বরাত, শব-ই-কদর, আশুরা ইত্যাদি।

 

 

 

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা। গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালন করা হয়। এই সময় বৌদ্ধধর্মের অনুসারীরা বিশেষ প্রার্থনা করে। শিশুরাও তাতে আনন্দের সাথে অংশগ্রহণ করে। মাঘীপূর্ণিমাও বৌদ্ধদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব।

খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রীষ্টের জন্মদিনটি বড়দিন হিসেবে পালন করা হয়। আমাদের দেশে খ্রীষ্টধর্মের অনুসারীরা এই দিনে গির্জায় প্রার্থনা করে। একে অপরকে উপহার দেয়। সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ ও খাওয়া-দাওয়া করে। এছাড়া তারা গুড ফ্রাইডে ও ইস্টার সানডে পালন করে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ধর্মের মানুষ একসাথে বাস করে। এ দেশের মানুষ নিজ ধর্ম ও অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ঈদ, জন্মাষ্টমী, দুর্গাপূজা, বুদ্ধপূর্ণিমা, বড়দিন প্রভৃতি উৎসবে সকল ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করে। সকলের মঙ্গল কামনা করে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজা হয়। সরস্বতীপূজায় সকল শিক্ষার্থী নানাভাবে অংশগ্রহণ করে। একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানায়। ধর্মীয় উৎসব ছাড়াও অনেক সামাজিক উৎসব ও অনুষ্ঠান রয়েছে। যেমন- অন্নপ্রাশন, গায়েহলুদ, বিয়ে, শ্রাদ্ধ ইত্যাদি। এ সকল অনুষ্ঠানেও সকল ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করে।

সকল ধর্মের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এই চেতনাকে ধারণ করতে হবে। সকল ধর্মের মানুষ একে অপরের বিপদে সাহায্য করবে। সকলে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবে।

Content added || updated By
Promotion