নবি, রাসূল ও মহানবি (স.) এর সাহাবিগণের জীবনচরিত অনুসরণ
মহানবি হজরত মুহাম্মদ (স.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত
আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগের কথা। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে আরবের মক্কা নগরীতে এক শিশুর জন্ম হয়। শিশুটির দাদা তাঁর নাম রাখলেন মুহাম্মদ। হজরত মুহাম্মদ (স.) এর পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মায়ের নাম আমিনা। জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা মারা যান। জন্মের পর তাঁকে লালন-পালন করেন দুধ মা হালিমা। পাঁচ বছর বয়সে শিশুটি ফিরে আসে তার মায়ের কাছে। কিন্তু মায়ের কাছে বেশিদিন থাকা হয় না শিশু মুহাম্মদের। ছয় বছর বয়সে মাও মারা যান। তখন শিশু মুহাম্মদের লালন-পালন করেন দাদা আব্দুল মুত্তালিব। আট বছর বয়সে দাদাও মারা গেলেন। এবার বালক মুহাম্মদের দায়িত্ব নিলেন চাচা আবু তালিব।
ছোটোবেলা থেকেই মুহাম্মদ (স.) শান্ত ও বিনয়ী স্বভাবের ছিলেন। ছোটো-বড়ো সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। কখনো অহংকার করতেন না। কাউকে অপমান বা ছোটো করতেন না। মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়াতেন এবং সহযোগিতা করতেন। সে সময় আরবের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তারা নানা রকম অন্যায় কাজে লিপ্ত ছিল। প্রায়ই বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে মারামারি, সংঘাত লেগে থাকত। সমাজে মোটেও শান্তি ছিল না। তাই তিনি যুবক বয়সে আরবের অন্য যুবকদের নিয়ে 'হিলফুল ফুযুল' নামে একটি সংগঠন গড়ে তুললেন। সমাজে শান্তি ফেরাতে চেষ্টা করলেন।
পঁচিশ বছর বয়সে তিনি হজরত খাদিজা (রা.) কে বিয়ে করেন। মাঝে মাঝে তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যান করতেন। তিনি তখন মাঝ বয়সি, চল্লিশ ছুঁয়েছেন। তখন সেই হেরা গুহাতেই নবুয়ত প্রাপ্ত হন। এরপর তিনি সবাইকে এক আল্লাহর ইবাদাত করার আহবান জানান। মিথ্যা ও মন্দ কাজ থেকে সরে আসতে বলেন। ফলে তাঁর বিরোধীরা তাঁর ওপর নানা ধরনের অত্যাচার-অনাচার শুরু করে। মহানবি (স.) অসীম ধৈর্য ও মনোবল বজায় রেখে কাজ করে যেতে লাগলেন। ধীরে ধীরে আরও অনেক মানুষ নবিজির আহবানে সাড়া দিতে লাগল।
এক সময় তাঁর নেতৃত্বে আরবের অন্ধকার যুগ পার হলো। ইসলামের বাণী ছড়িয়ে পড়ল দূর-দূরান্তে। শান্তি ও সাম্যের ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো ইসলাম। ততদিনে তিনি জীবনের শেষপ্রান্তে। অবশেষে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ৬৩ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেন।
ক) হজরত মুহাম্মদ (স.) এর ছেলেবেলা সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এবার নিচের কাজটি করি। তাঁর ছেলেবেলা সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে নিচের চক্রটি পূরণ করি। কাজটি একাকী করি।
খ) হজরত মুহাম্মদ (স.) এর ছেলেবেলা সম্পর্কে নিজের ভাষায় আলোচনা করি। তিনি যেসব কাজ করেছেন তা নিচে ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে লিখি। কাজটি জোড়ায় করি।
গ) নিচের ছকে হজরত মুহাম্মদ (স.) এর জীবনের বিভিন্ন সময় দেওয়া আছে। দলে আলোচনা করে কোন বয়সে কী করেছেন তা লিখি।
মহানবি (স.) এর জীবনাদর্শ অনুসরণ
মহানবি হজরত মুহাম্মদ (স.) একজন উত্তম আদর্শসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তাঁর আদর্শ আমাদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, "নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ" (সূরা আল-আহজাব: ২১) আগের পাঠে আমরা জেনেছি যে নবিজি (স.) ছেলেবেলা থেকেই শান্ত ও বিনয়ী ছিলেন। অহংকার করতেন না। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন এবং সহযোগিতা করতেন। তাঁর নেতৃত্বের গুণ ছিল অসাধারণ। অসীম ধৈর্য্য, মনোবল ও বিচক্ষণতা ছিল তাঁর।
তিনি সব সময় সত্য কথা বলতেন। কাউকে কথা দিলে তা রক্ষা করতেন। তাই সবাই তাঁকে বিশ্বাস করত। এজন্য মক্কার লোকেরা তাঁকে 'আল-আমিন' বলে ডাকত। সবাই তাঁর ওপর আস্থা রাখত। একবার কাবা শরীফের মেরামতের সময় হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) পুনঃস্থাপন করার প্রয়োজন দেখা দেয়। আরবে অনেকগুলো গোত্র ছিল। কারা এই পাথর স্থাপন করবে? প্রত্যেক গোত্রই এই পাথর স্থাপনের মর্যাদা পেতে চায়। এ নিয়ে বিবাদ শুরু হলো। তখন সিদ্ধান্ত হলো, পরদিন সকালে যে সবার আগে কাবা ঘরে প্রবেশ করবে, তার সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিবে। পরদিন হজরত মুহাম্মদ (স.) সবার আগে কাবা ঘরে প্রবেশ করলেন। সবাই খুব খুশি হলো। ভরসা পেল যে, আল-আমিন এর সিদ্ধান্তই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে। মুহাম্মদ (স.) তখন একটি কাপড়ের উপর পাথরটি রাখলেন। এরপর সব গোত্র থেকে একজন করে নিয়ে ঐ কাপড়ের প্রান্ত ধরে কাবা ঘরের যথাস্থানে নিয়ে যেতে বললেন। এভাবে একটি সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা পেলো মক্কার মানুষ। সবাই খুব খুশি হলো।
হজরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। তিনি নিজের কাজ নিজে করতেন। অলস সময় নষ্ট করা তিনি পছন্দ করতেন না। একবার এক শারীরিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিকে ভিক্ষা করতে দেখে তাকে কুঠার কিনে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন সে যেনো ভিক্ষা না করে কাঠ কেটে তা বিক্রি করে উপার্জন করে।
তাঁর নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে আরবের কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। তিনি কন্যা শিশু হত্যা রোধ করেন। তিনি নারীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেন যে, "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত"। তাঁর দুধ মা হজরত হালিমা (রা.) মাঝে মাঝে তাঁর সাথে দেখা করতে আসতেন।
তাঁকে দেখামাত্র মহানবি (স.) দাঁড়িয়ে সম্মান জানাতেন। তিনি তার পাগড়ি অথবা চাদর বিছিয়ে হজরত হালিমা (রা.) কে বসতে দিতেন।
ক) মহানবি (স.) এর জীবন ও কাজের মধ্য দিয়ে তার যেসব গুণ প্রকাশিত হয়েছে তা দলগতভাবে আলোচনা করি। এরপর সেগুলোকে ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে গুণাবলির ফুল তৈরি করি।
আমরা দেখলাম মহানবি (স.) এর জীবন ও কাজের মধ্য দিয়ে অসংখ্য গুণ প্রকাশিত হয়েছে। এসব গুণাবলিই আমাদের জন্য আদর্শ। আমরা আমাদের জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে এসব আদর্শ অনুসরণ করব।
হজরত মুহাম্মদ (স.) এর যেসব আদর্শ অনুসরণ করতে পারি
খ) মহানবি (স.) এর জীবনাচরণ অনুসরণ করে আমরা নিজেরা কোন কোন আদর্শগুলো চর্চা করি তার একটি তালিকা তৈরি করি। কাজটি একাকী করি।
হজরত আবু বকর (রা.)
পরিচয়
হজরত আবু বকর (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা। তিনি ৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই হজরত মুহাম্মদ (স.) এর সাথে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিল। বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে হজরত আবু বকর (রা.) প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি সুখে-দুঃখে সকল অবস্থায় নবিজির সাথে থাকতেন। নবিজিকে তিনি বিশ্বাস করতেন ও ভালোবাসতেন।
মহানবি (স.) এর ইন্তেকালের পর তিনি ইসলামের প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন। সে সময় সে দেশে বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়। কেউ কেউ নিজেকে নবি দাবি করে, কিছু লোক ইসলাম ত্যাগ করে, আবার কেউ বা জাকাত দিতে অস্বীকার করে। তাঁর চেষ্টায় ইসলামে পুনরায় শৃঙ্খলা ফিরে আসে। এছাড়া তিনিই প্রথম পবিত্র কুরআনকে একত্রিত করে গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেন।
হজরত আবু বকর (রা.) ব্যবসা-বাণিজ্য করে উপার্জন করতেন। তবে খলিফা নির্বাচিত হবার পর অন্যদের পরামর্শে ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দেন। তখন সংসার চালানোর জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অল্পকিছু ভাতা নিতেন। তিনি ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ৬১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মদিনায় মহানবি (স.) এর পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়।
ক) হজরত আবু বকর (রা.) সম্পর্কে আমরা জানলাম। এর আলোকে নিচের প্রবাহচিত্রটি পূরণ করি। কাজটি একাকী করি।
খ) আমরা হজরত আবু বকর (রা.) সম্পর্কে জানলাম। তিনি যেসব কাজ করেছেন তা নিচে সাজিয়ে লিখি। কাজটি জোড়ায় করি।