SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - আকাইদ | NCTB BOOK

মালাইকা বা ফেরেশতাগণের পরিচয়

‘মালাইকা’ শব্দটি আরবি। এটি বহুবচন। এর একবচন মালাক । বাংলা ভাষায় এর অর্থ হিসেবে ফেরেশতা কথাটি ব্যবহৃত হয়; এটি মূলত ফার্সি ভাষার শব্দ। ফেরেশতাগণ আল্লাহর আজ্ঞাবহ জ্যোতির্ময় সত্তা। তাঁরা আল্লাহর বার্তাবাহক। তাঁরা আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। তাঁরা নিষ্পাপ ও পূত-পবিত্র। তাঁরা সর্বদা আল্লাহর তাসবিহ ও ইবাদাতে মগ্ন থাকেন। তাঁরা আমাদের প্রিয়নবির প্রতিও দরুদ ও সালাম পাঠ করতে থাকেন। তাঁরা মহান আল্লাহর মহাসাম্রাজ্যের কর্মীবাহিনী। তাঁরা নূরের তৈরি। তাঁদের মধ্যে স্ত্রী-পুরুষ ভেদ নেই। তাঁদের পানাহার, নিদ্রা ও বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না। তাঁদের সংখ্যা অগণিত। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ তাঁদের প্রকৃত সংখ্যা জানেন না। তাঁদের কোনো নিজস্ব মত ও কর্মসূচি নেই। মানব চোখের অন্তরালে তাঁরা অবস্থান করেন। তাঁরা সর্বদা আল্লাহর আদেশ পালনে নিয়োজিত আছেন। আল্লাহর আদেশের বাইরে তাঁরা কিছুই করতে পারেন না। মহান আল্লাহ যাকে যে কাজে নিয়োজিত করেন, তিনি সে কাজেই নিয়োজিত থাকেন। কাজের ক্ষেত্রে তাঁরা ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হন না। আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘তারা আল্লাহ তা'আলা যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয় তাই করে।' (সূরা আত-তাহরিম, আয়াত : ৬)

ফেরেশতাগণের গঠন ও আকৃতি

আল্লাহ তা'আলা ফেরেশতাগণকে বিশেষ আকৃতিতে নূরের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ তা'আলা যখন যে রূপ ধারণ করতে বলেন তাঁরা তখন সেই রূপই ধারণ করেন। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও যমিনের স্রষ্টা এবং ফেরেশতাগণকে করেছেন বার্তাবাহক। তারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখাবিশিষ্ট।' (সূরা আল-ফাতির, আয়াত: ১)

প্রধান চার ফেরেশতা

ফেরেশতাগণের মধ্যে চারজন প্রধান ফেরেশতা আছেন। তাঁরা মহান আল্লাহর আদেশে বিশেষ বিশেষ কাজে নিয়োজিত আছেন। ফেরেশতা চারজন হলেন:

১. জিবরাঈল (আ.): তাঁকে সকল ফেরেশতাগণের সরদার বলা হয়। তাঁর প্রধান দায়িত্ব হলো আল্লাহ তা'আলার বাণীসমূহ নবি-রাসুলগণের নিকট পৌঁছে দেওয়া। তিনিই পবিত্র বাণী নিয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহানবির (সা.)- এর কাছে আসতেন। এ ছাড়া তিনি অন্যান্য কর্তব্যরত ফেরেশতাগণের নিকট বিভিন্ন সময়ে আল্লাহর দেওয়া নির্দেশ পৌঁছিয়ে দেন।

২. মিকাঈল (আ.): তাঁর দায়িত্ব হচ্ছে বৃষ্টি বর্ষণ, উদ্ভিদ উৎপাদন ও সকল জীবের জীবিকা বণ্টন। এ ছাড়া বজ্রপাত ঘটানোর কাজও মিকাঈল (আ.)-এর দায়িত্বে।

৩. ইসরাফিল (আ.): তাঁর দায়িত্ব মহান আল্লাহর নির্দেশক্রমে কিয়ামতের দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া। ইসরাফিল (আ.)-এর শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিয়ামত সংঘটিত হবে।

৪. আজরাঈল (আ.): যিনি মালাকুল মওত নামেও পরিচিত। মহান আল্লাহ পাকের আদেশে প্রাণিকুলের জান কবজের কাজে তিনি নিয়োজিত।

এ ছাড়াও কিছু ফেরেশতা মানুষের আমলনামা সংরক্ষণ করেন। তাঁদের বলা হয় কিরামান কাতিবিন। কিছু ফেরেশতা মানুষকে জাগ্রত অবস্থায়, নিদ্রায়, সফরে, বাড়িতে সর্বত্র সব সময় হেফাজত করেন। তাঁদের বলা হয় ‘মুয়াক্কিবাত’। কিছু আছেন জান্নাত-জাহান্নামের পাহারায়। উল্লেখ্য যে, জান্নাতের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতার নাম ‘রেদওয়ান’। আর জাহান্নামের রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতার নাম ‘মালেক’। কতিপয় ফেরেশতা নিয়োজিত আছেন আল্লাহর আরশ বহনের দায়িত্বে। একদল ফেরেশতা আছেন যাঁরা আল্লাহর জিকিরের মজলিসে মজলিসে ঘুরে বেড়ান। কিছু ফেরেশতা পাহাড়ের হেফাজতে আছেন। কিছু ফেরেশতা আল্লাহর সম্মানে সারাক্ষণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এভাবে আরও অসংখ্য অগণিত ফেরেশতা আল্লাহর হুকুমে বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত আছেন।

ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান

মহান আল্লাহ ফেরেশতাগণের মাধ্যমে তাঁর জগতসমূহ পরিচালনা করেন। তাদেরকে যা আদেশ করেন তারা তা-ই পালন করেন। মানুষের মধ্যে বাধ্যতা ও অবাধ্যতা দুটি প্রবৃত্তিই রয়েছে। কিন্তু ফেরেশতাগণের মধ্যে অবাধ্যতার প্রবৃত্তি নেই। তাঁদেরকে সৃষ্টিগতভাবেই আল্লাহর অনুগত করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি ফেরেশতাগণের ওপর বিশ্বাস রাখা ইমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেউ যদি ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান না রাখে তাহলে সে ইমানদার থাকে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন-

অর্থ: ‘যে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসুলগণের ওপর বিশ্বাস রাখবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহুদূরে গিয়ে পড়বে।' (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩৬)

ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান আনা ফরয বা অত্যাবশ্যক। তাই আমরা মহান আল্লাহর ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান আনব এবং তাঁদের প্রতি যথাযথ ভালোবাসা পোষণ করব।

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.