SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

On This Page
সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - ইবাদাত | NCTB BOOK

পরবর্তী পাঠে প্রবেশের পূর্বে শিক্ষক তোমাদেরকে একটি গল্প বলবেন এবং সেই সাথে কিছু প্রশ্ন করবেন। শিক্ষকের বলা গল্পটি মনোযোগ সহকারে শুনে শিক্ষক যে প্রশ্ন করবেন তার উত্তর চিন্তা করে বের করার চেষ্টা করো। সাওম এবং যাকাতের পাঠের পর তোমরা সম্মিলিতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করবে। তাই এখন থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখো।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতিটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার এগুলোর প্রত্যেকটির কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাওম ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। সাওমেরও রয়েছে কিছু স্বাতন্ত্র্য। প্রিয় শিক্ষার্থী! এ শ্রেণিতে তুমি সাওমের বিস্তারিত ধারণা ও তাৎপর্য, প্রকারভেদ, সাওমের কাযা আদায়ের নিয়ম, সাওমের কাফফারাহ আদায়, সাওম- সংশ্লিষ্ট কতিপয় জরুরি মাসায়েল, ইতিকাফ, সাদাকাতুল ফিতর সম্পর্কে জানতে পারবে। অধিকন্তু তুমি মানবতার গুণাবলি বিকাশে সাওমের ভূমিকা জেনে সে অনুসারে জীবন গঠন করতে পারবে। তাহলে শুরু করা যাক নতুন বিষয়ের আলোচনা।

সাওমের ধারণা

‘সাওম' আরবি শব্দ। এর ফার্সি প্রতিশব্দ হলো রোযা। এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়- সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় নিয়তের সাথে পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোযা বলে। রমযান মাসের রোযা পালন করা প্রত্যেক প্ৰাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের উপর ফরয। এটি ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। যে তা অস্বীকার করবে সে কাফির হবে। বস্তুত রোযা পালনের বিধান পূর্ববর্তী সকল উম্মতের জন্য অপরিহার্য ইবাদাত ছিল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেছেন,

অর্থ: ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হলো, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।' (সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

সিয়াম সাধনার ফলে সমাজের লোকদের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়। ধনীরা গরিবদের অনাহারে, অর্ধাহারে জীবনযাপনের কষ্ট অনুধাবন করতে পারে। ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা যে কীরূপ পীড়াদায়ক হতে পারে তা তারা উপলব্ধি করতে পারে। ফলে তাদের মাঝে অসহায় নিরন্ন মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতার ভাব জাগ্রত হয়। এ কারণে তারা দান-খয়রাতে উৎসাহিত হয়। রমযান মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যদের দান-সাদকা করতে যেমন উদ্বুদ্ধ করেছেন, তিনি নিজেও তেমনিভাবে খুব দান-সাদকা করতেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) লোকদের মধ্যে অধিক দানশীল ছিলেন। বিশেষ করে রমযান এলে তাঁর দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।' (বুখারি ও মুসলিম)

রোযার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে।' (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৮৫) এতে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, রমযান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে বলে এটি একটি অতি পবিত্র মাস। হাদিসে কুদসিতে আছে—

অর্থ: ‘রোযা কেবল আমারই জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।' (বুখারি)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন সিয়াম পালনকারী ব্যতীত অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না।' (বুখারি) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সাথে এবং আখিরাতে সাওয়াবের আশায় সাওম পালন করে, তার অতীত জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।' (বুখারি ও মুসলিম)।

রমাযান মাস ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। এ মাসে মুমিনের রিযিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি কোনো রোযা পালনকারীকে ইফতার করাবে, সে তার রোযার সমান সাওয়াব পাবে। অথচ রোযা পালনকারী ব্যক্তির সাওয়াবের বিন্দুমাত্র ঘাটতি হবে না। ফযিলতের দিক দিয়ে রমযান মাসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশ রহমতের, দ্বিতীয় অংশ মাগফিরাতের এবং শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার।

রোযা পালনের মাধ্যমে মানুষ হিংসা, বিদ্বেষ, পরনিন্দা, ধূমপানে আসক্তি ইত্যাদি বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে। কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আত্মরক্ষার হাতিয়ার হলো রোযা। রোযা পালনের মাধ্যমে পানাহারে নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে ওঠে। এতে অনেক রোগ দূর হয়। স্বাস্থ্য ভালো থাকে, ফলে মনও ভালো থাকে।

সুতরাং আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবং এর নানাবিধ গুরুত্ব বিবেচনা করে আমাদের সাওম পালন করা উচিত। আমরা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে সাওম পালন করব।

 

সাওমের (রোযার) প্রকারভেদ

সাওম (রোযা) ছয় প্রকার। ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব, নফল ও মাকরুহ।

১. ফরয রোযা : রমযান মাসের রোযা রাখা ফরয। এর অস্বীকারকারী কাফির। রমযানের কাযা রোযা এবং সকল প্রকার কাফফারার রোযাও ফরয।

২. ওয়াজিব রোযা : কোনো নির্দিষ্ট দিনে রোযা রাখার মানত করলে সেই দিনের রোযা রাখা ওয়াজিব। যেমন— কেউ মানত করল যে, বৃহস্পতিবার রোযা রাখবে। অনুরুপভাবে নির্দিষ্ট দিনের উল্লেখ না করে রোযা রাখার মানত করলে সেই রোযা রাখাও ওয়াজিব। এমনকি নফল রোযা রেখে ভেঙ্গে ফেললে তা কাযা করা ওয়াজিব।

৩. সুন্নত রোযা : মহানবি (সা.) যে সকল রোযা পালন করেছেন এবং অন্যদের পালন করতে উৎসাহিত করেছেন, সেগুলো সুন্নত রোযা। যেমন— আশুরার দিন ও আরাফার দিনে রোযা পালন করা সুন্নত।

৪. মুস্তাহাব : প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা পালন করা মুস্তাহাব। এগুলোকে আইয়ামে বীযের রোযা বলা হয়। এ ছাড়া সপ্তাহের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এবং শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা পালন করাও মুস্তাহাব।

৫. নফল রোযা : ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব ছাড়া সকল প্রকার রোযা নফল। নফল অর্থ অতিরিক্ত। যে সকল দিনে রোযা পালন করা শরীয়তে হারাম ও মাকরুহ ঐ সকল দিন ব্যতীত বছরের অন্য যেকোনো দিন রোযা পালন করা নফল।

৬. মাকরুহ রোযা : মাকরুহ দুই প্রকার।

       ১. মাকরুহ তাহরিমি : যা মূলত হারাম রোযা। যেমন- দুই ঈদের দিনে ও আইয়ামে তাশরিকের অর্থাৎ জিলহজ্জ মাসের ১১,   ১২ ও ১৩ তারিখে রোযা পালন করা হারাম ।

      ২. মাকরুহ তানযিহি : মুহাররম মাসের ৯ বা ১১ তারিখে রোযা না রেখে শুধু আশুরার দিন আর্থাৎ ১০ তারিখে রোযা পালন করা মাকরুহ তানযিহি। কারণ, এতে ইয়াহুদিদের সাথে সামঞ্জস্য হয়। অনুরূপভাবে শুধু শনিবার রোযা রাখা। কারণ, এতেও ইয়াহুদিদের সাথে মিল হয়ে যায়। মাকরুহ তানযিহি অর্থ চলনসই অপছন্দনীয় কাজ, যা করলে গুণাহ নেই।

সাহরি

‘সাহরি’ আরবি শব্দ। এর অর্থ ভোর রাতের খাবার। ইসলামের পরিভাষায়, সাওম পালন করার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিকের পূর্বে যে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করা হয়, তাকে সাহরি বলে। সাহরি খাওয়া সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে সাহরি খেতেন এবং অন্যদেরকেও সাহরি খাওয়ার জন্য তাগিদ করতেন। মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা এতে তোমাদের জন্য বরকত রয়েছে।' (বুখারি)

সুবহে সাদিকের আগেই সাহরি খাওয়া শেষ করতে হবে। কোনো কোনো মানুষ মনে করে— আযান না হওয়া পর্যন্ত খাওয়া জায়েয, এটি একটি মারাত্মক ভুল ধারণা। তবে এত আগেও সাহরি খাওয়া উচিত নয় যে, সাহরি খাওয়ার পর সুবহে সাদিকের অনেক সময় বাকি থাকে। ফলে অনেকে বিশ্রামের জন্য বিছানায় যায় এবং ঘুমিয়ে পড়ে। এতে ফজরের সালাত কাযা হয়ে যায়।

ইফতার

ইফতার আরবি শব্দ। এর অর্থ ভঙ্গ করা, ছিঁড়ে ফেলা, রোযা ভঙ্গকরণ। ইসলামি পরিভাষায় নিয়ত সহকারে সূর্যাস্তের পর হালাল বস্তু পানাহারের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলা হয়।

রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হলো ইফতার। এতে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা উত্তম। হাদিসে কুদসিতে আছে মহান আল্লাহ বলেন– আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ঐ বান্দাগণ যারা বিলম্ব না করে ইফতার করে। ইফতারের সময় বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা এবং আলহামদুলিল্লাহ বলে শেষ করা উত্তম। তবে নিম্নোক্ত দোয়াটিও পড়া যায়:

অর্থ: ‘হে আল্লাহ ! আপনার জন্য সাওম পালন করেছি এবং আপনার দেওয়া রিযিক দ্বারাই ইফতার করলাম।' (আবু দাউদ)

অন্যকে ইফতার করানো অনেক সাওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন–‘যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। রোযাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে তবে রোযাদারের সাওয়াবের কোন কম করা হবে না।' (তিরমিযি)

‘সামান্য এক চুমুক দুধ বা একটি শুকনা খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারাও যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তাকে রোযাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব দান করবেন, আর যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে পরিতৃপ্তভাবে পানি পান করাবে আল্লাহ তাকে আমার হাওযে কাওসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে তৃষ্ণার্ত হবে না।' (তিরমিযি)

আমরা অধিক সাওয়াব ও আল্লাহর রহমতের আশায় সময়মতো ইফতার করব এবং অন্যকে ইফতার করাব।

সাওম ভঙ্গের কারণসমূহ

যেসব কারণে সাওম বা রোযা ভেঙে যায় সেগুলো হলো—

১. ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে বা কেউ জোরপূর্বক কোনো কিছু খাওয়ালে 

২. ধোঁয়া, ধূপ ইত্যাদি নাক বা মুখ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করালে; 

৩. ধূমপান বা হুক্কা পান করলে; 

8. ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু দাঁতের ফাঁক থেকে বের করে গিলে ফেললে; 

৫. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে; 

৬. কোনো অখাদ্যবস্তু গিলে ফেললে; 

৭. ইচ্ছাকৃতভাবে ওষুধ সেবন করলে; খেলে বা পান করলে; 

৮. রাত বাকি আছে ভেবে নির্দিষ্ট সময়ের পর সাহরি খেলে; 

৯. ইফতারের সময় হয়ে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে; 

১০. কুলি করার সময় হঠাৎ করে পেটের ভিতর পানি প্রবেশ করলে; 

১১. বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর পান করলে; 

১২. ভুলক্রমে পানাহার করে সাওম নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে আবার পানাহার করলে।

 

যাদের জন্য রোযা রাখা বাধ্যতামূলক নয়

অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন নয়-এমন কারও জন্যই রোযা ফরয বা বাধ্যতামূলক নয়।

সাওম মাকরুহ হওয়ার কারণ

সাওম মাকরুহ হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। নিচে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো— 

১. গিবত বা পরনিন্দা করলে; 

২. মিথ্যা কথা বললে, অশ্লীল আচরণ কিংবা গালমন্দ করলে; 

৩. গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বারবার কুলি করলে; 

8. কুলি করার সময় গড়গড়া করলে। কারণ, এতে পানি গলার ভিতরে প্রবেশ করে রোযা ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থাকে; 

৫. সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করে সাহরি খেলে; 

৬. সময়মত ইফতার না করে বিলম্বে ইফতার করলে।

 

সাওমের (রোযার) কাযা ও কাফফারা

কাযা

আরবিতে কাযা অর্থ কোনো কর্তব্য যথাসময়ের পরে পালন করা। কোনো অনিচ্ছাকৃত কারণে যদি সাওম ভেঙে যায় কিংবা অসুস্থতা বা কোনো ওজরের কারণে সাওম পালন করা না হয়, এসব ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে একটি সাওমের পরিবর্তে একটি সাওমই পালন করতে হয়। একে কাযা সাওম বলে।

সাওম কাযা করার কারণসমূহ

১. সাওম পালনকারী রমযান মাসে অসুস্থ হলে, সফরে থাকলে, নারীদের ক্ষেত্রে ‘মাসিক চক্র’ শুরু হলে অথবা অন্য কোনো ওজরের কারণে সাওম পালনে অপারগ হলে।

২. রাত আছে মনে করে সুবহি সাদিকের পরে পানাহার করলে। অনুরূপভাবে সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে।

৩. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভরে বমি করলে।

৪. জোরপূর্বক রোযাদারকে কেউ কিছু খাওয়ালে।

৫. কুলি করার সময় কিংবা গোসলের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি পেটে চলে গেলে।

৬. ভুলক্রমে কোনো কিছু খেয়ে ফেললে রোযা ভঙ্গ হয়ে গেছে মনে করে পুনরায় খেলে।

৭. দাঁতের ভিতরে আটকে থাকা ছোলা বুট পরিমাণ কোনো বস্তু বের করে খেয়ে ফেললে।

কাফফারা

ইচ্ছাকৃতভাবে সাওম পালন না করলে বা সাওম রেখে বিনা কারণে ভেঙ্গে ফেললে কাযা ও কাফফারা উভয়ই ফরজ হয়।

সাওমের কাফফারা

সাওমের জন্য কাফফারা হলো নিম্নরূপ—

১. একাধারে দুই মাস সাওম পালন করা। একাধারে কাফফারার সাওম আদায়কালে যদি কোনো কারণে দুই-একদিন বাদ পড়ে যায়, তাহলে পূর্বের সাওম বাতিল হয়ে যাবে। পুনরায় প্রথম থেকে শুরু করে দুই মাস বিরতিহীনভাবে সাওম পালন করতে হবে।

২. একাধারে দুই মাস সাওম পালনে অক্ষম হলে ষাটজন মিসকিনকে পরিতৃপ্তির সাথে দুই বেলা খাওয়ানো। অথবা আহার না করিয়ে ষাটজন মিসকিনকে সদাকায়ে ফিতর সমপরিমাণ খাদ্যদ্রব্য দিয়ে দেওয়া যাবে। এমনিভাবে এর সমপরিমাণ মূল্য দিয়ে দেওয়াও জায়িয। অথবা

৩. একজন দাসকে স্বাধীন করে দেওয়া।

মানবতার গুণাবলি বিকাশে সাওমের ভূমিকা

সিয়াম মানুষের মাঝে মানবতাবোধ বৃদ্ধি করে। রোযার প্রকৃত শিক্ষা গরিব ও দুঃখী মানুষের কষ্ট বুঝতে পারা। গরিব ও অসহায় মানুষ না খেয়ে থাকে ও অনেক কষ্ট করে থাকে। ক্ষুধার্ত অবস্থায় মানুষের কেমন কষ্ট হয় তা অনুধাবন করতে পারে একজন রোযাদার ব্যক্তি। যার ফলে সে দানশীল হবে ও অভাবী মানুষকে সাহায্য- সহযোগিতা করবে। রোযার মাসে ধনী-দরিদ্র একত্র হয়ে তারাবীর নামায আদায় করে। কোনো কোনো সময় একত্রে ইফতার করে যার মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায়। এক মানুষ অপর মানুষের প্রতি দয়া, মায়া, উদারতা, সেবা ও ভালোবাসার শিক্ষা পেয়ে থাকে। মানুষ রোযা রেখে কম কথা বলে। যার ফলে অশালীন কথা-বার্তা কম হয়ে থাকে। রোযার মাসে ঝগড়া-বিবাদ ও কলহ কম হয়ে থাকে। রোযা মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে । যার ফলে সামাজিক অপরাধ কম হয়। রোযার মাসে মানুষ ভালো কাজের চর্চা করে থাকে। এর ফলে সমাজে ভালো কাজের পরিধি বৃদ্ধি পায়। সহনশীলতা রোযার অন্যতম শিক্ষা। রোযার মাসে একে অপরের প্রতি সহনশীল আচরণ করে থাকে। সাওম যে কোনো কাজে সহনশীল হওয়ার শিক্ষা দেয়।

দলগত কাজ :

১. শিক্ষার্থীরা সাওমের কাযা ও কাফফারার কারণ একটি পোস্টারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। 

২. শিক্ষার্থীরা সাওমের কাফফারা আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে পরস্পরে মধ্যে আলোচনা করবে।

ইতিকাফ

‘ইতিকাফ’ আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো আটকে থাকা, কোথাও অবস্থান করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ হচ্ছে- জামাআতে সালাত অনুষ্ঠিত হয় এমন মসজিদে সাওম পালনরত অবস্থায় ইতিকাফ এর নিয়তে অবস্থান করা। যিনি ইতিকাফ পালন করেন তাকে ‘মুতাকিফ' বলে। ইতিকাফের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে নির্দেশনা রয়েছে যেমন মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এবং ইবরাহিম ও ইসমাইলকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য আমার গৃহকে পবিত্র রাখতে আদেশ দিয়েছিলাম।' (সূরা আল- বাকারা, আয়াত: ১২৫) মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) রমযানের শেষ দশ দিন সবর্দা ইতিকাফ করতেন।

ইতিকাফের তাৎপর্য

ইতিকাফের লক্ষ্য হচ্ছে দুনিয়াদারির কোলাহল মুক্ত থেকে নিবিড়ভাবে ধ্যান অনুধ্যান করে মহান আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা। এছাড়া-‘লাইলাতুল কদর' হলো হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও বরকতময়। সুতরাং এই রাতের মর্যাদা হাসিলের লক্ষ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফ পালন করতেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত আছে ‘রাসুল (সা.) প্রতি রমযানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ পালন করতেন। এ আমলটি তাঁর ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। মহানবি (সা.) এর ওফাতের পর তার বিবিগণ ও এই নিয়মে (ইতিকাফ) পালন করতেন। (বুখারি)

ইতিকাফ পালনের নিয়মাবলি ও জরুরি মাসায়েল

১. ইতিকাফের নিয়তে রমযান মাসের ২০ তারিখ আসরের পরে সূর্যাস্তের আগে মসজিদে প্রবেশ করতে হয় আর ২৯ বা ৩০ তারিখে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে ইতিকাফ শেষ করতে হয়।

২. শরিয়ত সম্মত প্রয়োজন অথবা মানবীয় প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। শরিয়ত সম্মত প্রয়োজন বলতে প্রয়োজনে জুমার নামাযে শরিক হতে বের হওয়া আর মানবীয় প্রয়োজন বলতে পায়খানা বা প্রস্রাব করার জন্য বের হওয়া। উল্লেখ্য, জানাজা নামাযে শরিক হওয়ার জন্য মসজিদ হতে বের হওয়া যাবে না।

৩. প্রতি রমযান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ পালন করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। যদি পাড়া বা মহল্লার যে কোন একজন ইতিকাফ পালন করেন তবে সকলের পক্ষ থেকে ঐ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া আদায় হবে। কিন্তু কেউ পালন না করলে সকলে গুনাহগার হবে।

সাদাকাতুল ফিতর

ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে সাওমের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে গরিব-দুঃখীদের সহযোগিতায় যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ-সম্পদ দান করা হয়, তাকে সাদাকাতুল ফিতর বলে। একে ‘যাকাতুল ফিতর' ও বলা হয়।

মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য বা সমপরিমাণ অর্থ প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকলে তাকে নিসাব বলে) সম্পদের মালিক প্রত্যেক স্বাধীন মুসলিম নর-নারীর উপর ‘সাদাকাতুল ফিতর' ওয়াজিব। শিশু ও নির্ভরশীল ব্যক্তির সাদাকা অভিভাবক আদায় করবে।

তাৎপর্য

মুসলমানগণ পবিত্র রমযান মাসে রোযা পালন করেন। পবিত্র রমযান মাসে রোযা পালনের জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার প্রতি যে অফুরন্ত নিয়ামত দান করেন, তার শুকরিয়া হিসেবে এবং রোযা পালন কালে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়, তার ক্ষতিপূরণের জন্য ‘সাদাকাতুল ফিতর’ ওয়াজিব করা হয়েছে। সাদাকাতুল ফিতর পেলে গরিব-অনাথ লোকেরাও ঈদের খুশিতে অংশীদার হতে পারে। এভাবেই ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান কমে আসে এবং সম্প্রীতি ও সৌহার্দ গড়ে ওঠে। হাদিসে আছে,

অর্থ: ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যাকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন রোযাদারকে অনর্থক কথা ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্র করার জন্য ও মিসকিনদের খাদ্যের ব্যবস্থা করার নিমিত্তে' (আবু দাউদ)

আদায়ের নিয়ম

ঈদের সালাতের পূর্বে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের আগেও ‘সাদাকাতুল ফিতর' আদায় করা যায়। তবে ঈদের দিন সালাতের উদ্দেশ্যে ঈদের মাঠে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে ‘সাদাকাতুল ফিতর' আদায় করা উত্তম। ঈদের পর কেউ যদি তা আদায় করে তবে আদায় হবে কিন্তু সাওয়াব কম হবে।

গরিব আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, ফকির-মিসকিনকে সাদাকাতুল ফিতর দেওয়া যাবে। একজনের ফিতরা একাধিক ব্যক্তিকে অথবা একাধিক ব্যক্তির ফিতরা একজনকে দেওয়া যাবে।

সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ

মাথাপিছু নিসফু সা অর্থাৎ প্রায় পৌনে দুই কেজি গম (১ কেজি ৭৫০ গ্রাম গম) বা তার মূল্য আদায় করতে হবে। তবে গম ছাড়া যদি অন্যকোন জিনিস যেমন- যব, কিসমিস, খেজুর, বা পনির দিয়ে আদায় করলে পূর্ণ এক সা‘ ৩ কেজি ৫০০ গ্রাম আদায় করতে হবে।

দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে ‘সাদাকাতুল ফিতর' আদায়ের গুরুত্বের উপর আলোচনা করবে।
Content added By

Promotion