SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

On This Page
সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | NCTB BOOK

হাদিসের গুরুত্ব

ইসলামি জীবনদর্শনের মূলভিত্তি আল-কুরআন এবং দ্বিতীয় ভিত্তি আল-হাদিস। আল-কুরআনে জীবনবিধানের মৌলিক নীতিমালা দিয়েছে এবং আল-হাদিসে সেই মৌলিক নীতিমালার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আল- হাদিস হচ্ছে কুরআনের নির্ভুল ব্যাখ্যা, আল্লাহর রাসুল (সা.) এর জীবনচরিত, কর্মনীতি ও আদর্শ তথা তাঁর বাণী, কাজ ও নির্দেশনাবলির বিস্তারিত বিবরণ। মানুষ দৈনন্দিন জীবনে চলতে ফিরতে অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। এ সকল সমস্যার নিখুঁত সমাধান রয়েছে হাদিসের মধ্যে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য হাদিস অপরিহার্য । মানব জাতিকে ন্যায়-নীতি, সত্য ও শান্তির পথে আনতে দিকনির্দেশনা দেয় হাদিস। মুসলমানদের জীবনে হাদিস অধ্যয়ন ও চর্চা খুবই জরুরি।

শরিয়তের উৎস হিসেবে হাদিসের গুরুত্ব

ইসলামি জীবন বিধানের মূল উৎস হলো কুরআন ও হাদিস। পবিত্র কুরআন হলো ইসলামের মৌলিক ভিত্তি এবং হাদিসে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও বাস্তবায়নের নমুনা পাওয়া যায়। হাদিস আল-কুরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যা। হাদিস ইসলামি শরিয়তের দ্বিতীয় অপরিহার্য উৎস। কুরআনের পরেই হাদিসের স্থান। হাদিস হচ্ছে রাসুল (সা.)- এর জীবনলেখ্য ও কুরআনের ব্যাখ্যা। তাই ইসলামি শরিয়তে হাদিসের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআনে যেসব নিয়ম-কানুন সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে হাদিসে। উদাহরণস্বরূপ, সালাত ও সাওমের কথা বলা যেতে পারে। কুরআন শরিফে বলা হয়েছে, সালাত কায়েম করো এবং যাকাত দাও। হাদিসে কীভাবে সালাত আদায় করতে হবে, কখন সালাত পড়তে হবে এবং কী পরিমাণ যাকাত দিতে হবে, কাকে দিতে হবে, কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা উঠে এসেছে। এ ছাড়া দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিচার-আচার, যুদ্ধ-বিগ্রহ, সন্ধি-চুক্তি, বিবাহ ও তালাক সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান পাওয়া যায় হাদিসে। এ ছাড়া মানবাধিকার, প্রাণীর অধিকার, পরিবেশের সংরক্ষণসহ মানব জীবনের প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ রয়েছে হাদিসে। এমনকি মানুষের স্বাস্থ্যগত সকল প্রকারের নির্দেশনা রয়েছে হাদিসে।

সর্বোপরি মানুষের পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মের প্রতিটি বিষয় নিখুঁতভাবে পরিচালনা করার জন্য হাদিসের নির্দেশনা একান্ত প্রয়োজন।

কোনো মুসলমান হাদিসকে অস্বীকার করতে পারে না। কেননা, আল্লাহ তা'আলা রাসুল (সা.)-এর সকল কাজকে গ্রহণ করতে বলেছেন এবং যা নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করতে বলেছেন। এ বিষয়ে কুরআন শরিফে ঘোষণা করা হয়েছে,

অর্থ: ‘রাসুল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাকো।' (সূরা হাশর, আয়াত: ০৭)

মানবজাতিকে সুপথে পরিচালিত করার বাস্তব নির্দেশনা রয়েছে হাদিসে। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

অর্থ: ‘আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে গেলাম, যদি তা শক্তভাবে ধরে রাখো তবে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ বা হাদিস।' (মুয়াত্তা মালিক)

হাদিসের প্রকারভেদ

হাদিসের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। মূল বক্তব্য, বর্ণনাকারীর সংখ্যা বিবেচনায় হাদিসের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আমরা পরবর্তী ক্লাসগুলোতে শিখব। বর্তমানে আমরা মূল বক্তব্য অনুসারে হাদিসের বিভিন্ন প্রকার সম্পর্কে জানব। মূল বক্তব্য অনুসারে হাদিস তিন প্রকার। যথা- কওলি হাদিস, ফেলি হাদিস ও তাকরিরি হাদিস।

 

হাদিস গ্রন্থসমূহ

 

সিহাহ সিত্তার পরিচয়

(১) বুখারি: ইমাম বুখারি (রহ.) ১৬ বছর সাধনা করে বিশ্ববিখ্যাত ‘সহিহ আল বুখারি’ গ্রন্থ সংকলন করেন। তাঁরই নামানুসারে সহিহ বুখারি নামকরণ করা হয়। ইমাম বুখারি (রহ.) তার সংগৃহীত ছয় লক্ষের অধিক হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে ৭৭৬১টি হাদিস সন্নিবেশ করেন। তিনি হাদিস সংগ্রহের সময় খুবই আন্তরিক ও সতর্ক ছিলেন। সন্দেহ সৃষ্টি হলে সে হাদিস গ্রহণ করতেন না। তিনি হাদিস গ্রন্থসংকলন করার সময় রোজা রাখতেন, গোসল করতেন এবং দু'রাকাআত এস্তেখারা নামাজ আদায় করতেন। এ জন্যই বিশ্ব দরবারে ‘বুখারি’ সর্বোচ্চ প্রশংসিত বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

(২) মুসলিম: ইমাম মুসলিম (রহ.) ১৫ বছর পরিশ্রম করে ‘সহিহ মুসলিম' সংকলন করেন। তাঁর নামানুসারে ‘সহিহ মুসলিম’ নামকরণ করা হয়। তিনি ৩ লক্ষ হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে ৪ হাজার হাদিস এ গ্রন্থে উপস্থাপন করেন।

(৩) আবু দাউদ: ইমাম আবু দাউদ (রহ.)-এর নামানুসারে ‘সুনান আবু দাউদ' নামকরণ করা হয়। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) ৫ লক্ষ হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে ৪ হাজার ৮ শত হাদিস এ গ্রন্থে সন্নিবেশ করেন।

(৪) নাসাঈ: ইমাম নাসাঈ (রহ.)-এর নামানুসারে ‘সুনান নাসাঈ’ নামকরণ করা হয়। নাসাঈ শরিফে মোট ৪৪৮২টি হাদিস সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

(৫). তিরমিযি: ইমাম তিরমিযি (রহ.)-এর নামানুসারে ‘জামে’ তিরমিযি' নামকরণ করা হয়েছে। তিরমিযি শরিফে ৫ লক্ষ হাদিস থেকে বাছাইকৃত ১৬০০ হাদিস সন্নিবেশিত করেন।

(৬). ইবনে মাজাহ: ইবনে মাজাহ (রহ.)-এর নামানুসারে ‘সুনান ইবনে মাজাহ' নামকরণ করা হয়েছে। ইবনে মাজাহ (রহ.) কয়েক লক্ষ হাদিস থেকে মাত্র ৪ হাজার হাদিস এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেনে।

Content added By

Promotion