SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা - NCTB BOOK

খাদ্য গ্রহণ ছাড়াই আমরা বেঁচে থাকব তা কি কখনো ভাবতে পারি? নিশ্চয়ই পারি না তাই না? হ্যাঁ, বেঁচে থাকতে আমাদের বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে হয়। তবে পরিবার, অঞ্চল, সংস্কৃতি বা দেশভেদে আমরা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খাদ্যে অভ্যস্ত। নিজের পছন্দের খাবার খেয়ে তৃপ্তি ও আনন্দ পাই। আবার অনেক দিন ধরে নিজের পছন্দের কোনো খাবার খেতে না পেলে মন খারাপ হয়। আবার কোনো কোনো খাদ্যের ধরন বা খাদ্যাভ্যাস আমাদের জন্য ক্ষতিকরও হয়ে থাকে।

ইতিপূর্বে আমরা খাদ্যের উপাদান ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়ে ধারণা লাভ করেছি। এই অধ্যায়ে নিজেদের দৈনন্দিন পারিবারিক খাদ্যতালিকা করে আমাদের পরিবার ও সমাজে খাদ্য গ্রহণের প্রচলিত অভ্যাস সম্পর্কে আলোচনা ও পর্যালোচনা করব। পাশাপাশি খাদ্যের সাথে সম্পর্কিত রোগবালাইমুক্ত থাকতে আমরা যে কাজগুলো করি তার একটি তালিকা তৈরি করব। প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসের প্রভাবে এবং সুষম খাদ্যের অভাবে আমাদের শরীরে যে ধরনের রোগবালাই হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। উচ্চতা ও ওজন অনুসারে পুষ্টিচাহিদা বুঝে নিজের চর্চার জন্য খাবারের পরিকল্পনা তৈরি করব। সবশেষে পুষ্টিচাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিকল্পনার লক্ষ্যে পরিবার ও বিদ্যালয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ করব।

আমার পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা

শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী নিচের ছকে আমার পরিবারের খাদ্যতালিকা তৈরি করি।

দিনসকালদুপুররাত
দিন – ১

 

 

 

  
দিন – ২

 

 

 

  
দিন - ৩

 

 

 

  

দৈনন্দিন খাদ্যতালিকাটি পূরণ করার সাথে সাথে আমরা ‘রোগবালাইমুক্ত থাকতে আমাদের কাজ' ছকটিও পূরণ করব। নিজেদেরকে রোগবালাই থেকে মুক্ত রাখার জন্য আমরা যে কাজগুলো করে থাকি অপর পৃষ্ঠার ছকে তার একটি তালিকা তৈরি করি।

                                                                      রোগবালাইমুক্ত থাকতে আমাদের কাজ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমাদের খাদ্য ও পুষ্টি

আমরা শ্রেণিতে বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের উৎস ও পুষ্টিগুণ বিষয়ে উপস্থাপনা করেছি। এবার সেই তথ্যগুলোকে ব্যবহার করে নিজেদের তালিকার খাবারে খাদ্য উপাদানগুলো কেমন ছিল তা চিহ্নিত করি। সব ধরনের খাদ্য উপাদান ছিল কি না, কোন ধরনের উপাদান বেশি বা কম বা স্বাভাবিক মাত্রায় ছিল বলে মনে করছি তা নিচের ছকে লিখি।

 সকালদুপুররাতআমাদের খাদ্যে কোন ধরনের খাদ্য উপাদান আছে (কোন ধরনের উপাদান বেশি, কম বা স্বাভাবিক মাত্রায় আছে বলে মনে করছি কি না)
দিন – ১

 

 

 

 

   
দিন - ২

 

 

 

 

   
দিন – ৩

 

 

 

 

   

অপুষ্টি ও অতিপুষ্টি

আমাদের চারপাশে অপুষ্টি ও অতিপুষ্টিসম্পন্ন বিভিন্ন মানুষ দেখে থাকি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নিচের ছকে অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির লক্ষণগুলো লিখি।

অপুষ্টিঅতিপুষ্টি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির লক্ষণগুলো লিখেছি । আমরা জানি খাদ্য সঠিকভাবে গ্রহণ না করলে অনেক রোগব্যাধি হতে পারে । খাদ্যের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, খাদ্য ভালোভাবে রান্না না করা, অথবা সুষম খাদ্যের অভাবে আমাদের বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে পারে। এবার দলে বসে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে নিচের ছকে অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণগুলোর একটি সাধারণ তালিকা তৈরি করি।

                                                                    অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ
অপুষ্টিঅতিপুষ্টি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পুষ্টি প্রোফাইল

আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিজনিত রোগবালাই আলোচনার প্রথমে আমরা আমাদের পরিবার ও প্রতিবেশীদের একটি পুষ্টিপ্রোফাইল তৈরি করব। পুষ্টি প্রোফাইলের মাধ্যমে আমরা কোনো ব্যক্তি বা পরিবার বা এলাকার মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টির অবস্থা সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা পাই। পুষ্টি প্রোফাইল তৈরির জন্য আমাদের কিছু তথ্যের প্রয়োজন হবে। আর সে তথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করব। এই প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে আমরা আমাদের পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করব। পরিবার ও যেসব প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তথ্য নেব, তাদের ২-১৮বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের ওজন এবং উচ্চতাসংক্রান্ত তথ্যও নেব। সংগৃহীত এই তথ্য ব্যবহার করে পুষ্টি প্রোফাইল তৈরি করতে পারব। এবার বন্ধুদের সাথে দলে বসে পুষ্টি প্রোফাইল তৈরি করার জন্য কী কী প্রশ্ন করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করে নিচের ছকে একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করি।

পরিবারভিত্তিক পুষ্টিতথ্যসংক্রান্ত প্রশ্নমালা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ওজন এবং উচ্চতার চার্ট ব্যবহার করে শিশু-কিশোরদের পুষ্টির অবস্থা নির্ণয়

শিশু-কিশোরদের পুষ্টির অবস্থা জানার জন্য ওজন এবং উচ্চতা বৃদ্ধির চার্ট ব্যবহার করা হয়। ওজন এবং উচ্চতা বৃদ্ধির চার্ট ব্যবহার করে কীভাবে শিশুদের পুষ্টির অবস্থা নির্ণয় করা যায়,আমরা তা দেখেছি। যাদের বয়স ১৮-এর বেশি তাদের পুষ্টির অবস্থা জানার জন্য ভিন্ন পদ্ধতি আছে। সেটি আমরা পরবর্তী শ্রেণিতে জানব। অপর পৃষ্ঠার তালিকায় বয়স অনুযায়ী শিশু-কিশোরদের ওজন ও উচ্চতা দেওয়া আছে। এই তালিকা ব্যবহার করে আমরা আমাদের পরিবার ও প্রতিবেশী শিশু-কিশোরদের পুষ্টির অবস্থা তুলে ধরব। 

আমাদের পুষ্টিতথ্য সংগ্রহ করা শেষে শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করেছি। এবার ওজন এবং উচ্চতা বৃদ্ধির চার্ট ব্যবহার করে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী নিচের ছকগুলোতে শিশু-কিশোরদের ওজন ও উচ্চতার অবস্থাটি তুলে ধরি।

                                                                শিশু-কিশোরদের ওজনসংক্রান্ত তথ্য

                                                       মোট কতজন শিশু-কিশোরের তথ্য নিয়েছি =

স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম ওজনের শিশু-কিশোর কতজন পেয়েছি

 

 

স্বাভাবিক মাত্রার ওজনসম্পন্ন শিশু-কিশোর কতজন পেয়েছি

 

 

স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ওজনের শিশু-কিশোর কতজন পেয়েছি

 

 

                                                              শিশু-কিশোরদের উচ্চতাসংক্রান্ত তথ্য

                                                       মোট কতজন শিশু-কিশোরের তথ্য নিয়েছি =

স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম ওজনের শিশু-কিশোর কতজন পেয়েছি

 

 

স্বাভাবিক মাত্রার ওজনসম্পন্ন শিশু-কিশোর কতজন পেয়েছি

 

 

স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ওজনের শিশু-কিশোর কতজন পেয়েছি

 

 

 

স্বাস্থ্যকর খাবার থালা

প্রশ্নমালা থেকে আমাদের পরিবার ও প্রতিবেশীদের পুষ্টিসংক্রান্ত অনেক তথ্য পেলাম। শিশু-কিশোরদের পুষ্টির অবস্থাও জানলাম। পুষ্টির সমস্যা সম্পর্কেও ধারণা পেলাম। কৈশোরকাল থেকেই আমরা যদি আমাদের খাদ্যাভ্যাস সঠিকভাবে তৈরি করতে না পারি, তবে ভবিষ্যতেও এই পুষ্টি সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমরা অনেকেই মনে করি দামি খাবারের মধ্যে পুষ্টিমান বেশি থাকে। এধারণা ঠিক নয়। সব ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবারে পুষ্টি আছে। প্রয়োজন শুধু খাদ্য পরিকল্পনায় আমাদের সৃজনশীল চিন্তা।

প্রতিটি দেশের জলবায়ুর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন খাদ্যশস্য, মাছ, শাকসবজি ও ফল উৎপন্ন হয়। আমরা দেশীয় সহজলভ্য ও কম দামে পাওয়া যায় এমন খাদ্যশস্য, মাছ, শাকসবজি ও ফল দিয়েই আমাদের পুষ্টির চাহিদা মিটাতে পারি। এতে যেমন আমাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়, তেমনি খরচও তুলনামূলক কম হয়। তবে এজন্য পরিবারের খাদ্য পরিকল্পনার সাথে যারা জড়িত তাদের সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নিজেদের পরিবার, প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের মধ্যে সহজলভ্য ও কম দামি খাবার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পারি। সচেতনতার সাথে সঠিক খাদ্যাভ্যাস চর্চাই আমাদেরকে ভবিষ্যৎ পুষ্টি সমস্যা থেকে রক্ষা করবে। এতে আমরা এদেশের নাগরিক হিসেবে জাতীয় পুষ্টিমান উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি।

আমরা একটি স্বাস্থ্যকর খাবার থালার ধারণা পেলাম। এবার আমরা নিজেদের এলাকায় যে সহজলভ্য খাবারগুলো পুষ্টিকর ও নিরাপদ, সেগুলো দিয়ে নিজেদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের থালা তৈরি করি।

শ্রেণিকক্ষে আলোচনা করে আমরা খাদ্য, পুষ্টি, পুষ্টি সমস্যা সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়েছি। এর পাশাপাশি এই বই থেকেও কিছু সাধারণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক, যা আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজে লাগবে।

খাদ্য হতে হবে সুষম, নিরাপদ এবং বয়স উপযোগী। তা না হলে শরীর ও মনে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই দেখা দেবে। সুষম ও নিরাপদ খাবারের অভাবে কী কী সমস্যা হতে পারে তা জেনে নিই।

ওজনাধিক্য বা স্থূলতা : কারও দেহের ওজন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে গেলে স্থূলতা বা ওজনাধিক্য দেখা দিতে পারে। সাধারণত অতিরিক্ত তেল-চর্বিজাতীয় খাবার, বাইরের ভাজাপোড়া খাবার, জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি খাওয়ার কারণে আমাদের মধ্যে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ওজন আমাদের শরীরে | নানা ধরনের রোগব্যাধি তৈরি করতে পারে। এর মধ্যে রযেছে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি। এছাড়া আমাদের স্মরণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই স্থূলতা প্রতিরোধে আমাদেরকে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত তেল-চর্বিজাতীয় খাবার, বাইরের ভাজাপোড়া খাবার, জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি খাওয়া পরিহার করতে হবে।

ওজনস্বল্পতা : কারও দেহের ওজন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কমে গেলে ওজনস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। সাধারণত প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্যের অভাবে ওজনস্বল্পতা হয়। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া খাবার নিয়ন্ত্রণ বা ডায়েটিং করতে গিয়েও আমাদের মধ্যে ওজনস্বল্পতা তৈরি হতে পারে। অতিরিক্ত ওজনস্বল্পতাও আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে আমাদের শরীরে ভিটামিন ঘাটতি, রক্তশূন্যতা এবং হাড়ের ক্ষয় হতে পারে। এটি আমাদের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, মানসিক ক্লান্তি তৈরি করতে পারে এবং স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

রক্তশূন্যতা : পরিমাণমতো পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো রক্তশূন্যতা। কৈশোরে দেহের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য রক্ত শূন্যতা দেখা দিতে পারে । কারণ এ সময় দেহে হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য বেশি পরিমাণে আয়রন প্রয়োজন হয়, যার একমাত্র উৎস | হলো সুষম খাদ্য। হিমোগ্লোবিন হলো রক্তের সেই লোহিত কণিকা, যা শরীরের বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। কিশোরীদের মাসিকের সময় রক্তস্রাবের কারণে আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় যেসব খাবারে আয়রনের মাত্রা বেশি যেমন মাছ, মাংস, কলিজা, কচু, গাঢ় সবুজ শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি খাবার বেশি করে খেতে হয়।

প্রোটিন শক্তি অপুষ্টি বা প্রোটিন ক্যালোরি অপুষ্টি : খাদ্যতালিকায় উপযুক্ত পরিমাণ প্রোটিনজাতীয় খাদ্য অথবা শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য কিংবা উভয়ের অভাবে ১ থেকে ৬ বছরের শিশুদের মধ্যে যে অপুষ্টি দেখা | যায় তাকে প্রোটিন শক্তি অপুষ্টি বা প্রোটিন ক্যালোরি অপুষ্টি বলে। এক্ষেত্রে সাধারণত ২ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

১. ম্যারাসমাস : সাধারণত ৬ মাস থেকে দেড় বছর বয়সের শিশুদের প্রোটিন ও শক্তি (ক্যালোরি) উভয়ের ঘাটতির ফলে ম্যারাসমাস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। 

• এ সময় দেহের ওজন বয়সের তুলনায় অনেক কম হয়। 

• দেহের ত্বকশিথিল ও কুচকানো হয়। 

• বদহজম হয়। 

• রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

ম্যারাসমাস প্রতিরোধ করতে হলে শিশুকে সঠিকভাবে মাতৃদুগ্ধপান করাতে হবে। ৬ মাসের ওপরের বয়সী শিশুর খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, খনিজ লবণ, ফ্যাট, ভিটামিন (B12, ফলিক অ্যাসিড, A ইত্যাদি) রাখতে হয়।

২. কোয়াশিওরকর : সাধারণত ২ থেকে ৪ বছর বয়সের শিশুদের উপযুক্ত পরিমাণ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্যের অভাবে যে উপসর্গ দেখা যায় তাই কোয়াশিওরকর। খাদ্যে উপযুক্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট থাকলেও প্রয়োজনীয় প্রোটিন না থাকলে এই রোগ দেখা দেয়। আবার পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা এবং ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের ফলেও এই রোগ হয়।

• এ সময় শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ওজন কমে যায়। 

• শিশুর পেট ফুলে যায়। 

• মুখমণ্ডল, হাত, পায়ে পানি জমে ফুলে যায়। 

• রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়। 

• মেজাজ একটু খিটখিটে হয়। 

• তাছাড়া ক্ষুধামান্দ্য, অজীর্ণ এবং উদরাময় রোগও দেখা দিতে পারে।

এ ধরনের শিশুদের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য দিতে হবে।

রাতকানা : ভিটামিন এ এবং জিঙ্কের অভাবে রাতকানা রোগ হয়। অপুষ্টির প্রভাবে ভিটামিন এ-এর অভাব হতে পারে। বেশির ভাগ সময় দেখা গিয়েছে যে শিশুদের অপুষ্টি থেকেই রাতকানা হয়ে থাকে। এরোগে আক্রান্তরা রাতে বা কম আলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম দেখতে পায়, কিন্তু দিনের বেলায় বা আলোতে তেমন একটা দৃষ্টি সমস্যা থাকে না। উচ্চমাত্রায় ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খেলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। প্রাণিজাত খাবার যেমন কলিজা এবং শাকসবজি যেমন গাজর, পালংশাক, মিষ্টিকুমড়ায় বা লাল-হলদে রঙের সবজি ও ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এ ধরনের খাবার থাকাটা উপকারী।

আয়োডিনের অভাব : আয়োডিন এক ধরনের খনিজ পদার্থ যা আমাদের দেহে তৈরি হয় না, শুধু খাদ্য থেকে আসে। আয়োডিন আমাদের দেহে থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে। এই হরমোন বিপাক বৃদ্ধি করে এবং শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। 

• আয়োডিনের ঘাটতি হলে গলগণ্ড বা গয়টার হয়। 

• এছাড়া আয়োডিনের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য, বিষণ্ণভাব, শুষ্কত্বক হতে পারে। 

• মাসিক চক্রে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। 

• চুল এবং নখ পাতলা এবং ভঙ্গুর হতে পারে। 

• শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। 

• অনিচ্ছাকৃত ওজন বৃদ্ধি; আবার ওজনবৃদ্ধি থেকে মানসিক চাপ ও বিষন্নতা দেখা দিতে পারে।

আয়োডিনের ঘাটতি রোধে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করতে হবে। সামুদ্রিক মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল, চিংড়ি, দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, মুরগির মাংস, গরুর কলিজা ইত্যাদি আয়োডিনের ভালো উৎস। তাই খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো রাখা অত্যন্ত জরুরি।

বয়ঃসন্ধিকালে ওজন বেড়ে যাবে বলে অনেক কিশোর-কিশোরী সঠিক নিয়মে খায় না। এতে অনেক সময় কিশোর- কিশোরীদের মধ্যে অপুষ্টি দেখা দেয়। আমরা মনে রাখব ওজন কম থাকা মানেই সুস্থ ও ভালো থাকা নয়। বয়স অনুযায়ী সঠিক পুষ্টি, সঠিক ওজন না থাকলে দুর্বলতা ও মনোযোগের অভাবসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সামাজিক অসচেতনতা থেকে অনেক সময় ছেলে ও মেয়েদের খাবারের ব্যাপারে বৈষম্য করা হয়। ছেলেদের যতটুকু খেতে দেওয়া হয় মেয়েদেরকে তারচেয়ে কম দেওয়া হয়। প্রচলিত সামাজিক ভুল ধারণা থেকে অনেক সময় মনে করা হয় ছেলেদের মত মেয়েদের অতটা পুষ্টির দরকার নেই। এরফলে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। তাই তাদের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া খুবই জরুরি।

পুষ্টিসমস্যা প্রতিরোধে আমার স্লোগান

আমরা সবাই মিলে পুষ্টিজনিত সমস্যা প্রতিরোধে বিভিন্ন উপায় চিহ্নিত করেছি। এবার আমরা পুষ্টিজনিত সমস্যা প্রতিরোধে স্লোগান তৈরি করব।

ক্রমিকপুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের স্লোগান
অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার ও জাঙ্কফুড পরিহার করি। সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি।
 
 
 
 
 
 
 

পুষ্টিসমস্যা প্রতিরোধে আমার পরিকল্পনা

এরপর এই স্লোগান ব্যবহার করে নিচের ছকে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কাজ করার পরিকল্পনা তৈরি করি।

কী করবকখন করবকতবার করব

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুষম খাদ্য বিষয়ে আলোচনা করা

 

  

 

 

  

 

 

  

 

 

  

 

 

  

নিরাপদ ও সুষম খাবার খাওয়া এবং পুষ্টিসমস্যা সমাধানে আমার চর্চা

এই অধ্যায়ের কাজগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা স্বাস্থ্যকর খাবারের থালা তৈরি করেছি। পুষ্টিসমস্যা সমাধানে স্লোগান ও পরিকল্পনা তৈরি করেছি। এই বছরের বাকি সময়জুড়ে এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো করে তা ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করব।

প্রতিবেদন লেখার সময় নিচের প্রশ্নগুলোর আলোকে লিখব :

• গত এক মাসে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী কী কী কাজ করেছি? 

• কাজগুলো করতে কেমন লেগেছে? 

• কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি কি? হয়ে থাকলে কীভাবে তা মোকাবিলা করেছি? 

• শিক্ষক বা পরিবারের কাছে কি আমার কোনো সাহায্য দরকার? তা কী?

নির্দিষ্ট সময় পরপর কাজের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষককে দেখিয়ে নেব। শ্রেণিতে শিক্ষক এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। এভাবে চর্চা এবং মতবিনিময় বছরজুড়ে চলবে।

 

আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন

নিচের ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণ করবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমার অগ্রগতি সম্পর্কে আমি ধারণা লাভ করব। আমি নিজে আমাকে উৎসাহ দেব এবং কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। আমার অভিভাবক ও শিক্ষক আমাকে স্বীকৃতি দেবেন। কী ভালো করেছি এবং কীভাবে আরও ভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন। এর মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি সম্পর্কে শিক্ষক ধারণা দেবেন। কীভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আরও ভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন।

শিখন কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে আমার কাজগুলো মান অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে তারকা বা স্টার দিয়ে মূল্যায়ন করবেন।

 

ছক ১ : আমার অংশগ্রহণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে করা কাজ

সেশন নং অংশগ্রহণের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে শ্রদ্ধাশীল আচরণ অংশগ্রহণের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্কের প্রতি সচেতনতা ও গুরুত্ববইয়ে করা কাজের মান

সেশন

১-৪

নিজের রেটিং   
 মন্তব্য   
শিক্ষকের রেটিং   
মন্তব্য   

সেশন

৫-৬

নিজের রেটিং   
মন্তব্য   
শিক্ষকের রেটিং   
মন্তব্য   

সেশন

৭-৮

নিজের রেটিং   
মন্তব্য   

সেশন

৯-১০

শিক্ষকের রেটিং   
মন্তব্য   

 

ছক ২ : নিরাপদ ও সুষম খাবার খাওয়া এবং পুষ্টিসমস্যা সমাধানে আমার চর্চা

 নিরাপদ ও সুষম খাবার খাওয়া এবং পুষ্টিসমস্যা সমাধানে চর্চাসংক্রান্ত পরিকল্পনার যথার্থতানিরাপদ ও সুষম খাবার খাওয়া এবং পুষ্টিসমস্যা সমাধানে চর্চাগুলো জার্নালে লিপিবদ্ধকরণচর্চার সময় খাদ্য ও পুষ্টিসংক্রান্ত ধারণাগুলোর সঠিক প্রতিফলন
নিজের রেটিং

 

 

  
মন্তব্য

 

 

  
অভিভাবকের মন্তব্য

 

 

  
শিক্ষকের রেটিং

 

 

  
মন্তব্য

 

 

  

 

Content added By