বন্ধু নেটওয়ার্কে ভাব বিনিময়

সপ্তম শ্রেণি (দাখিল) - ডিজিটাল প্রযুক্তি - NCTB BOOK

দল-১ তারযুক্ত নেটওয়ার্কষষ্ঠ শ্রেণিতে আমরা জেনেছিলাম নেটওয়ার্ক কী, কীভাবে কাজ করে। আমরা একটি নেটওয়ার্ক ও বানিয়েছিলাম। এবার আমরা নেটওয়ার্ক নানা ধরন জানব, অতীতে কেমন ছিল এখন কেমন হচ্ছে সেটি দেখব। এবার আমরা তারবিহীন নেটওয়ার্ক কীভাবে শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে যে আমাদের ইতিহাস জড়িয়ে আছে তা জানব। পিনা আর ন্যানোর কথা মনে আছে নিশ্চই। আমরা ওদের সঙ্গেও অনেকগুলো কাজ করব।

 

সেশন ১ - ইতিহাস থেকে অতীতের নেটওয়ার্ক জানি

আজকে পিনার মন ভালো নেই। অনেক দিন তার ন্যানোর সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে না। সে ভাবছে যদি এমন কোনো পথ থাকত যা দিয়ে ন্যানোর সঙ্গে যোগাযোগ করা যেত। মামার সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে ইন্টারনেটের সম্পর্কে জেনেছে; কিন্তু সেটা তো তারযুক্ত নেটওয়ার্ক। তারের মাধ্যমে সংযোগ; কিন্তু এখন যদি তার না থাকে। এই যে আমরা তার ছাড়া মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করি। কীভাবে সম্ভব? এভাবে যদি ন্যানোর সঙ্গেও যোগাযোগ করা যেত। পিনা এমন ভাবতে ভাবতে ছাদে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। এমন সময় দূর থেকে সে ডাক শুনতে পাচ্ছে “পিনা, এই পিনা, আমি চলে এসেছি' পিনা চোখ খুলেই দেখে ন্যানো তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

পিনা: ‘আরে ন্যানো, এত্তদিন পর তুমি এলে? তোমাকে কত খুঁজেছি। কোনোভাবেই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তুমি তো কম্পিউটারের ভিতরে ছিলে, বেরিয়ে এলে কী করে?”

ন্যানো: ‘আমি অন্য গ্রহে আমার মামার বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিলাম, সেখানে তুমি যোগাযোগ করতে পারছিলে না। দূর গ্রহের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনেক তরঙ্গশক্তির প্রয়োজন হয়।

পিনা: ‘ন্যানো, কী যে সব কঠিন শব্দ বলো না তুমি! এগুলো তো আমি কিছুই বুঝিনা। আমি শুধু জানি, নেটওয়ার্ক দুই রকম তারবিহীন আর তারযুক্ত তুমি তো আমাকে তাই শিখিয়েছিলে গতবার'।

ন্যানো: ‘হুম এবার তোমাকে আরও ভালো করে শিখাব। এবং তোমাদের বন্ধুদের নিয়ে তোমরা নিজেদের একটা নেটওয়ার্ক বানাবে।

–জানো পিনা, প্রথম বিনা তারের যোগাযোগ যারা শুরু করেছিলেন, তাদের মধ্যে একজন কিন্তু তোমার দেশের একজন বিজ্ঞানী তিনি হচ্ছেন জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনিই প্রথম মাইক্রোয়েভ এর মাধ্যমে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে তারবিহীন ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করেন সেই ১৮৯৭ সালে।

এই আবিষ্কারের সময় অন্যান্য দেশগুলোতেও অনেক বিজ্ঞানী বিনা তারের সাহায্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলেন, যার মধ্যে সফল হন ইতালির বিজ্ঞানী Guglielmo Marconi সেখান থেকে অন্য বিজ্ঞানীরাও গবেষণা করতে থাকেন, আবিষ্কার হয় রেডিও। যা যোগাযোগে আনে এক অসাধারণ পরিবর্তন।'

রেডিওর মাধ্যমে অনেক দূরে তথ্য পাঠানো যায় । আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সকল সংবাদ পাওয়া যেত রেডিও থেকে। ১৫ আগস্ট ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৌবহরে একসঙ্গে আক্রমন করেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর-১০-এর নৌ-কমান্ডোরা। তারা কিন্তু একসঙ্গে আক্রমণ করেছিলেন সেই সময় আকাশবাণী তে প্রচার হওয়া একটি গান ।

এই গান রেডিওতে যখনি বেজে ওঠে তখনি আক্রমণ শুরু হয়। এটি ছিল আক্রমণের গোপন সংকেত।

পিনা: ‘বাহ কী চমৎকার! তারবিহীন যোগাযোগে তো অনেক সুবিধা।' পিনা অবাক হয়ে শোনে

পিনা: ‘আচ্ছা ন্যানো এই যে বিনা তারে এভাবে যোগাযোগ করে, সেটি আসলে হয় কী করে?” ন্যানো: ‘এগুলোর প্রতিটাই আসলে নানা ধরোনের তরঙ্গ। তোমার শিক্ষক তোমাদেরকে বড় ক্লাসে উঠলে সব বুঝিয়ে দেবেন। হয়তো তোমরাও এই ব্যাপারে নতুন অনেক কিছু আবিষ্কার করবে।

হঠাৎ পিনা শুনতে পায় কে যেন দূর থেকে ডাকছে, ‘এই পিনা, পিনা! খেলতে যাবিনা?' আরে ন্যানো যে মিলিয়ে যাচ্ছে, সেখানে হাজির হলো পিনার বান্ধবী রিনি। পিনা বুঝতে পারে সে আসলে স্বপ্ন দেখছিল; কিন্তু কি সুন্দর একটা স্বপ্ন ছিলো!

আচ্ছা, বন্ধুরা আমরা পিনা আর ন্যানোর গল্প থেকে তারবিহীন নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানলাম। আমাদের চারপাশে কি এমন তারবিহীন নেটওয়ার্ক আছে? একটু খুঁজে দেখি তো আমাদের শ্রেণি কক্ষের মধ্যে বা আমাদের স্কুলে তারবিহীন নেটওয়ার্ক আছে কিনা। নিচের ছকটি পূরণ করি।

স্কুলের মধ্যে তারযুক্ত নেটওয়ার্কস্কুলের মধ্যে তারবিহীন নেটওয়ার্ক
টেলিফোনমোবাইল
  
  
  
  

আগামী সেশনের প্রস্তুতি 

এবার আমরা আমাদের বাড়ির চারপাশে কী কী ধরনের নেটওয়ার্ক আছে এবং সেগুলো কোথা থেকে কোথায় গেছে দেখে আসব।

 

 

সেশন ২-আমার চারপাশের আছে নানা ধরনের নেটওয়ার্ক

আমরা আমাদের চারপাশের বিভিন্ন যন্ত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখি কোনোটি তাঁরের সাহায্যে এবং কোনোটি বিনা তারের সাহায্যে তথ্য আদান-প্রদান করে।

যন্ত্রতথ্য পাঠানোর মাধ্যমআমার কোনো পর্যবেক্ষণ
মোবাইল ফোনতারবিহীনতথ্য গ্রহণ ও প্রেরণ
রেডিওতারবিহীনশুধু তথ্য গ্রহণ
   
   
   
   
   

আমরা এবার খুঁজে বের করি নেটওয়ার্কগুলো কীভাবে কাজ করে। আমাদের তারযুক্ত এবং তারবিহীন নেটওয়ার্কের জন্য দুটি দলে বিভক্ত হই, একদল তারবিহীন নেটওয়ার্কের সুবিধা ও অসুবিধা এবং অপর দল তারযুক্ত নেটওয়ার্কের সুবিধা-অসুবিধা খুঁজে বের করি এবং নিচের ছকে উপস্থাপন করি।

দল-১ তারযুক্ত নেটওয়ার্কতারবিহীন নেটওয়ার্ক
সুবিধাঅসুবিধাসুবিধাঅসুবিধা
    
    
    
    
    

আগামী সেশনের প্রস্তুতি

এবার আমরা আমাদের বাড়ির যেকোনো একটি নেটওয়ার্কের চিত্র এঁকে আনব। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আমরা যেমন ভ্রমণ পরিকল্পনা করেছিলাম, সেরকম যেকোনো একটি নেটওয়ার্ক আঁকব, কিন্তু এটি আমার বাড়ির আশপাশের কোনো নেটওয়ার্ক হবে । 

 

 

সেশন ৩ - চলো নেটওয়ার্ক দিয়ে তথ্য পাঠাই

আগের সেশনে আমরা বিভিন্ন তারযুক্ত ও তারবিহীন নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করেছি। নেটওয়ার্কগুলোর মূল কাজ তো হল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তথ্যের আদান প্রদান করা। কিন্তু এই কাজ আসলে কীভাবে হয়? এইযে কিছু নেটওয়ার্কে তারযুক্ত থাকে, সেই নেটওয়ার্কে তথ্য ওই তার দিয়ে কীভাবে যায়? আবার কিছু নেটওয়ার্কে তো তারও থাকে না! তাহলে সেই নেটওয়ার্ক দিয়েই বা কীভাবে তথ্য যায়? বেশ অবাক লাগছে তাই না ব্যাপারটা ভাবতে?

একেক নেটওয়ার্ক আসলে একেক পদ্ধতিতে কাজ করে। আমরা খুব সাধারণ দুইটি নেটওয়ার্কে তথ্য বিনিময় সম্পর্কে জেনে নেই।

তারযুক্ত নেটওয়ার্ক হিসাবে টেলিফোন যেভাবে অন্য টেলিফোনের কাছে তথ্য আদান প্রদান করে-

প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে আমরা টেলিফোন দিয়ে কীরকম তথ্য পাঠাচ্ছি। আমরা যখন টেলিফোনে কথা বলি, তথ্য হিসাবে শব্দকে পাঠাই অন্য টেলিফোনের কাছে। টেলিফোনের হ্যান্ডসেটে একটা মাইক্রোফোন থাকে। মাইক্রোফোনের কাজ হল আমাদের বলা শব্দগুলোকে ইলেকট্রিক সিগন্যালে রুপান্তর করা। ইলেকট্রিক সিগন্যাল মূলত একধরণের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ, যা তারের মধ্য দিয়ে একস্থান থেকে আরেক স্থানে পাঠানো যায়। টেলিফোনের যে তারের লাইন থাকে সেটার ভিতর আসলে তামার তার থাকে। তামা একটি ধাতু যা খুব সহজে তড়িৎ পরিবহন করতে পারে। তাই তামার তারের মধ্য দিয়ে মাইক্রোফোনে রুপান্তর হওয়া ইলেকট্রিক সিগন্যাল সহজেই অপর পাশে পাঠানো যায়। অন্য যে টেলিফোনে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ গ্রহণ হবে সেখানে থাকে একটা লাউডস্পিকার। লাউডস্পিকার অন্য প্রান্ত থেকে আসা ইলেকট্রিক সিগন্যালকে রুপান্তর করে আবার শব্দে পরিণত করে। তখন আমরা সেই শব্দ লাউডস্পিকারে শুনতে পাই।

তাহলে আমাদের তারযুক্ত নেটওয়ার্কের তথ্য আদান প্রদানের মূল কাজগুলো কি হল একটু আবার দেখে নেই-

ক) যে ডিভাইস থেকে তথ্য যাবে সেখানে একটি উপকরণ থাকবে যা তথ্যকে পাঠানোর মত একটি মাধ্যমে রুপান্তর করল

খ) রুপান্তরিত তথ্য একটি তারের মাধ্যমে যেই ডিভাইসে পৌঁছানোর কথা সেখানে গেল । 

গ) যেই ডিভাইস তথ্য গ্রহণ করল রুপান্তরিত তথ্যকে আবার আগের অবস্থায় ফেরত নিয়ে আসল।

টেলিফোনের পাশাপাশি অন্য সব তারযুক্ত নেটওয়ার্কই এই সাধারণ পদ্ধতি সচরাচর অনুসরণ করে তথ্যের আদান প্রদান করে।

এবারে চল একটা কাজ করা যাক। আমরা তো ষষ্ঠ শ্রেণিতে অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে একটি কাজ করার ধাপগুলো লেখা শিখেছি।

টেলিফোনের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদানের ধাপগুলো নিয়ে চল একটি অ্যালগোরিদম নিচে লিখে ফেলি-

১ম ধাপ – একটি টেলিফোনে কথা বলি

২য় ধাপ আমার বলা কথা মাইক্রোফোন দিয়ে ইলেকট্রিক সিগন্যালে রুপান্তরিত হল

 

 

এবার চল তারবিহীন নেটওয়ার্কে কীভাবে তথ্য আদান প্রদান হয় সেটাও একটু ধারণা নেয়া যাক। তারযুক্ত নেটওয়ার্কে যেহেতু টেলিফোনের কথা আলোচনা হল, আসো এখন আমরা মোবাইল ফোন কীভাবে তথ্য পাঠায় তা জেনে নেই।

আমরা এর আগে রেডিও তরঙ্গ সম্পর্কে জেনেছিলাম। আমাদের মোবাইল ফোন যখন তথ্য পাঠায় তখন রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমেই সেটা পাঠায়। প্রতিটি মোবাইল ফোনে একটি রেডিও তরঙ্গ পাঠানোর ও গ্রহণ করার এনটেনা থাকে। মোবাইলে যখন আমরা কথা বলি তখন মোবাইল থেকে চারপাশে এই এনটেনা দিয়ে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সেই তথ্য ছড়িয়ে পরে। মোবাইল এর এই তথ্য গ্রহণ করার জন্য নেটওয়ার্ক টাওয়ার থাকে। নেটওয়ার্ক টাওয়ার এই তথ্য গ্রহণ করে যেই মোবাইলে ওই তথ্য পাঠিয়ে দেয়া দরকার সেখানে আবার পাঠিয়ে দেয়। ওই মোবাইল ফোন তখন নিজের এনটেনা দিয়ে আবার সেই তথ্য গ্রহণ করে। তাহলে তারবিহীন নেটওয়ার্কে তথ্য আদান প্রদানের মূল পদ্ধতি নিচের মত-

ক) প্রথমে একটি ডিভাইস থেকে তথ্য পাঠালাম 

খ) রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সেই তথ্য একটি নেটওয়ার্ক টাওয়ারের কাছে গেল 

গ) নেটওয়ার্ক টাওয়ার থেকে আবার রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে তথ্য গ্রাহক ডিভাইসের কাছে চলে গেল

বেশিরভাগ তারবিহীন নেটওয়ার্ক এই সাধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করেই চলে।

চল মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদানের ধাপগুলো নিয়ে একটি অ্যালগোরিদম লিখে ফেলি নিচে-

 

 

 

 

 

আমরা এখানে খুব সরল উপায়ে দুইটি তারযুক্ত ও তারবিহীন নেটওয়ার্কে তথ্যের আদান প্রদান সম্পর্কে জানলাম। বাস্তবে কিন্তু নেটওয়ার্কগুলো আরো জটিল উপায়ে কাজ করে। যখন আমরা আরো বড় হব তখন নেটওয়ার্কে তথ্যের আদান প্রদান নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে পারব।

 

 

সেশন ৪ - আমাদের নিজেদের নেটওয়ার্ক রাখবো নিরাপদ

বন্ধুরা, গত বছর আমরা বিদ্যালয় শিখন নেটওয়ার্ক বানিয়েছিলাম। এবার আমরা সেই বিদ্যালয় শিখন নেটওয়ার্ককে আরও নিরাপদ করব। ধরো তুমি তোমার বন্ধু রাহাতের জন্মদিনে তাকে অবাক করে দেওয়ার জন্য আরেক বন্ধু তারেকের সঙ্গে মিলে একটি উপহার বানাচ্ছ। তুমি চাও পরিকল্পনাটি শুধু তোমার এবং তারেকের মধ্যেই থাকে। কোনোভাবেই যেন রাহাত বুঝতে না পারে। এখন তুমি কীভাবে তোমাদের এই বিষয়টি গোপন রাখবে এবং কাজটি করবে? নিশ্চয় কোনো গোপন সংকেতের মাধ্যমে। আমাদের বন্ধু নেটওয়ার্কের নিরাত্তার জন্য আমরা এমন একটি নিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহার করব।

এবারে আমাদের বন্ধু নেটওয়ার্কের কাজ হবে আমাদের সকল প্রয়োজনীয় বাড়ির কাজ এবং অন্যান্য সকল জরুরি তথ্য নিজেদের মধ্যে গোপনীয়ভাবে পাঠানো।

আচ্ছা, আমরা আগে জেনে নিই কীভাবে নেটওয়ার্কের মধ্যমে তথ্য নিরাপদ রেখে পাঠানো যায়। প্রত্যেক নেটওয়ার্কের রয়েছে কিছু গোপন সংকেত। এই সংকেত যদি আরেকটি যন্ত্র না জানে, তাহলে সেই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারবে না। নির্দিষ্ট যন্ত্র যদি সেই গোপন সংকেতটি জানে, তাহলেই সেই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারবে। তাই তথ্য গোপন করে পাঠানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত নেটওয়ার্কগুলো অনেক বেশি নিরাপত্তাযুক্ত করা হ্য়, যেন অন্য কেউ গোপনীয় তথ্য পেয়ে না যায় এবং ক্ষতি না করতে পারে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিনা তারে গোপন তথ্য আদান প্রদান করা হতো। জার্মানি ও তাঁর বন্ধুরাষ্ট্র এবং মিত্রশক্তির মধ্যে জয়পরাজয় নির্ধারিত হয়েছিল এরকম গোপন বার্তার অর্থ উদ্ধারের মাধ্যমে। বড় ক্লাসে উঠলে তোমরা আরও ভালোভাবে জানবে ।

আমরা গত বছর নেটওয়ার্কের বিভিন্ন অংশ যেমন প্রেরক, প্রাপক, সার্ভার, রাউটার ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছিলাম, এবার আমাদের তৈরি নেটওয়ার্কের সঙ্গে সেই অংশগুলোর তুলনা করব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমরা যেন নেটওয়ার্কের গোপনীয়তা ঠিক রাখতে পারি।

গোপনীয়তা রক্ষায় আমরা নিচের খেলাটি খেলব-

এটি অনেকটা ফুলটোক্কা খেলার মতো, যেখানে আমরা আমাদের বন্ধুদের কোনো একটি গোপন নাম দিয়ে ডাকি এবং তারপর চোখ বন্ধ করে রাখা আরেকটি বন্ধুর কপালে টোক্কা দিতে বলি, তারপর চোখ বাঁধা বন্ধুটির কাজ হয় সেই ছদ্ম নামে ডাকা বন্ধুকে খুঁজে বের করা।

প্রথমে আমরা ছয়টি দলে বিভক্ত হই। আমরা চারটি দল দুটি করে গোপন তথ্য পাঠাব আরেক দলের কাছে। আর বাকি দুটি দল হবে হ্যাকার। ওই দুই দল তথ্য চুরি করে জানতে চাইবে। কীভাবে গোপনীয় বার্তা পাঠাতে হয়, তার জন্য দরকার আমাদের এনকোড অর্থাৎ তথ্যকে গোপন করা ও ডিকোড অর্থাৎ গোপন তথ্যকে উদ্ধার করা। সেটি আমরা করব বিভিন্ন বর্ণকে একটির জায়গায় আরেকটি প্রতিস্থাপন করে। এখন পরের পাতার ছকটি ভালো করে দেখো

প্রকৃত অক্ষর
প্রতিস্থাপিত অক্ষর
      
      

এরূপ প্রতিস্থাপন করে তোমরা কোড করলে। এখন ‘কাকা' শব্দটি হয়ে যাবে ‘টাটা’ যা অন্য দলের জন্য বোঝা অনেক কঠিন হবে। এভাবেই মূলত বিভিন্ন নেটওয়ার্কের সাহায্যে তথ্য গোপন করে পাঠানো হয়।

তোমাদের কাজ হবে এমন করে বার্তা লিখবে যেটি অন্য দল বুঝতে না পারে। প্রতিটি দলের বার্তা হ্যাকার দলের কাছে তিন মিনিট করে থাকবে। এর মধ্যে যদি তারা অর্থ উদ্ধার করতে না পারে, তাহলে যেই দলটি বার্তা লিখছিল তারা জিতবে।

বন্ধুরা, এখন আমরা বুঝতে পারলাম নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা কীভাবে দেওয়া হয়। আমরা এবার নিজেরা বের করব কীভাবে নেটওয়ার্ক নিরাপদ রাখে।

নেটওয়ার্ক নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা

নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আমরা তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিরাপদ রাখতে হলে সেই নেটওয়ার্ককে নিরাপদ রাখতে হবে, যেন খারাপ মানুষের হাতে সেই তথ্য চলে না যায়। হ্যাকাররা অনেক সময় তথ্য নিয়ে অনেক ক্ষতি করতে পারে। যেমন ধর কোনো ব্যাংক এর নেটওয়ার্কের তথ্য নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করল। আবার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফলাফল পরিবর্তন করল, অন্য কারও মোবাইল ফোনের কথা শুনে ফেলল এবং সেটি দিয়ে ক্ষতি করল। এরকম আরও নানা কারণে আমাদের নেটওয়ার্ককে নিরাপদ রাখতে হয়।

আগামী সেশনের প্রস্তুতি 

আমরা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে যেভাবে বিদ্যালয় শিখন নেটওয়ার্ক ও অভিভাবক নেটওয়ার্ক বানিয়েছি সেভাবে একটি নেটওয়ার্ক বানাব (প্রয়োজনে ষষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বইয়ের ছয় নম্বর অভিজ্ঞতা দেখে নিতে পারো) ।

 

সেশন ৫ - তারবিহীন স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক

বন্ধুরা তোমরা কি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নাম শুনেছ? এটি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। এটি আমাদেরকে তথ্য আদান প্রদানে ব্যাপক সহায়তা করে। এটি মহাকাশে তাঁর কক্ষপথে এক অবস্থানে থেকে ঘুরছে এবং তথ্য পাঠাচ্ছে। অনেক সময় আমরা মোবাইল, ঘড়ি, জিপিএস (GPS- Global Positioning System) -এর মাধ্যমে আমাদের অবস্থান বের করতে পারি। এই অবস্থান বের করা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখনকার প্লেন, জাহাজ, গাড়ি সঠিক পথ খুঁজে পাওয়ার জন্য সাটেলাইট থেকে তথ্য নেয়। এটিও একটি তারবিহীন নেটওয়ার্ক। আমরা এবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান দেখব তার পর সেটি থেকে আমাদের স্কুলের অবস্থান কোথায় সেটি বের করব।

আমরা এবার নিচের মানচিত্রে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটি চিহ্নিত করব এবং সেই সঙ্গে সেটি কীভাবে তথ্য আদান-প্রদান করে সেটি নিজেরা আঁকব। আমাদের মানচিত্রে আমরা আমাদের স্কুলের অবস্থান চিহ্নিত করব তারপর সেখান থেকে আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান সংযুক্ত করব।

আমরা দেখতে পেলাম স্যাটেলাইটের অবস্থান কোথায় এবং আমাদের অবস্থান কোথায়। স্যাটেলাইট হচ্ছে বিনা তারের যোগাযোগ করার আরেক ধরনের নেটওয়ার্ক; যেটি আমাদেরকে তথ্য আদান-প্রদান করে সাহায্য করে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান খুঁজে বের করার জন্যও স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হয়।

ব্যক্তিগত কাজে স্যাটেলাইটব্যবসা ক্ষেত্রে সাটেলাইট
  
  
  
  
  

আগামী সেশনের প্রস্তুতি 

আমরা আমাদের নিজেদের জীবনের কোন কোন কাজে স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করি, তা খুঁজে বের করব।

 

সেশন ৬ - আমাদের বন্ধু নেটওয়ার্ক

আমরা সেশন-৪ যেমন বার্তা পাঠিয়েছিলাম সেই রকম আরেকটি বার্তা তৈরি করবো যেটি আমরা আমাদের নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে পাঠাবো নেটওয়ার্ক টি হবে আমরা যেভাবে সেশন ৩ এ দলগত ভাবে ভাগ হয়েছিলাম ঠিক সেই রকম করে নতুন দলে বিভক্ত হয়ে আমাদের বন্ধু নেটওয়ার্ক টি গঠন করবে। আমরা দলগত ভাবে একটি বার্তা লিখব যেটি আমরা পাঠাবো আরেক দলের কাছে। এবার আমার দলের সকল সদস্য বার্তাটি জানবে কিন্তু সেই বার্তা সেশন ৪ এ যেই বার্তা পাঠিয়েছি সেটার মত এনকোড করা থাকবে কিভাবে ডিকোড করতে হবে সেটি জানবে শুধু অন্য সহযোগী টিম।

এবার এসো নিচের কাজগুলো অনুসারে খেলাটি খেলবো:

১। আমাদেরকে নিজেদের দলের এবং হ্যাকার দলের বন্ধুদের বাড়ির অবস্থান জেনে আমরা একটি মানব নেটওয়ার্ক বানাবো।

২। প্রতি দুইজন বার্তা প্রদানকারী বন্ধুর মধ্যে একজন হ্যাকার বন্ধু পরবে। 

৩। প্রথমে স্কুল থেকে সবচেয়ে দূরের বন্ধু বার্তাটি শুরু করবে, সে শুধু প্রথম অংশটি লিখবে তারপর হ্যাকার দলের বন্ধুর কাছে নিয়ে গিয়ে কোডেড বার্তাটি দিবে সেই বন্ধুর কাজ হবে গোপন বার্তাটিকে ডিকোড করা 

৪। ডিকোড করার জন্য তার হাতে সময় থাকবে ১ ঘণ্টা এই সময় পরে তাকে বার্তাটি তার কাছের পরবর্তী বার্তা প্রেরণকারী বন্ধুর কাছে দিতে হবে ।

৫। এভাবে সকল বন্ধু পেরিয়ে বার্তাটি আবার বার্তা প্রেরনকারী দলের শেষ সদস্য এর কাছে আসবে। যদি বার্তাটি হ্যাকার দলের সদস্যরা উদ্ধার করতে না পারেন তাহলে বার্তা প্রেরণকারী দল জিতে যাবে আর বার্তা উদ্ধার করলে হ্যাকার দল জিতে যাবে। এভাবে আমরা পুরো খেলাটি শেষ করবো আর সেই সাথে গঠিত হবে আমাদের বন্ধু নেটওয়ার্ক।

এবার এসো, আমরা আমাদের স্কুল ও বন্ধুদের বাসার অবস্থান নিচের ম্যাপে চিহ্নিত করি এবং আমাদের নেটওয়ার্ক বানাই।

বন্ধুরা আমরা যে নেটওয়ার্কটি বানালাম, এটি হবে আমাদের তারবিহীন বন্ধু নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কে আমারা নানা প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করব এবং নেটওয়ার্কের গোপনীয়তা রক্ষা করব। এই খেলা যদি আমাদের মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকে, সেক্ষেত্রেও বিনা তারে যোগাযোগ করতে পারব আমাদের ক্লাস সিক্সে তৈরি বন্ধু কমিউনিটি নেটওয়ার্কের মতো। সেখানে আমরা শুধু হেঁটে এক বন্ধু থেকে আরেক বন্ধুর কাছে যাওয়ার বদলে বার্তাটি পাঠাব।

আগামী সেশনের প্রস্তুতি 

বন্ধু নেটওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী এবং গোপনীয় করা যায়, কীভাবে তোমার কৌশল গুলো লিখে আনবে। আর আমরা বন্ধু নেটওয়ার্ক থেকে কী কী সুবিধা পেতে পারি লিখব।

বন্ধু নেটওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী করার কৌশল

 

 

 

 

 

 

 

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion