ওয়্যান (WAN - Wide Area Network)

- তথ্য প্রযুক্তি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি | NCTB BOOK

ওয়্যান (WAN - Wide Area Network) হলো একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, যা বৃহৎ ভৌগোলিক এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। এটি সাধারণত শহর, দেশ, অথবা একাধিক দেশ বা মহাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। WAN বিভিন্ন স্থানীয় নেটওয়ার্ক (LAN) এবং অন্যান্য ছোট নেটওয়ার্কগুলোকে একত্রিত করে একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক তৈরি করে, যাতে ব্যবহারকারীরা দূরবর্তী অবস্থান থেকে সংযোগ স্থাপন করতে পারেন।

ওয়্যান (WAN)-এর বৈশিষ্ট্য:

১. বৃহৎ ভৌগোলিক পরিসর:

  • WAN একটি বৃহৎ ভৌগোলিক অঞ্চল কভার করে। এটি বিভিন্ন LAN এবং MAN (Metropolitan Area Network) সংযুক্ত করে এবং শহর, দেশ, বা মহাদেশ পর্যায়ে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে।

২. পাবলিক এবং প্রাইভেট নেটওয়ার্ক:

  • WAN গুলো সাধারণত পাবলিক নেটওয়ার্ক (যেমন ইন্টারনেট) এবং প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ব্যবসায়িক বা কর্পোরেট নেটওয়ার্ক) উভয় ধরনের হতে পারে।

৩. উচ্চ গতির সংযোগ:

  • WAN উচ্চ গতির এবং স্থিতিশীল সংযোগ প্রদান করে, যা ভিডিও কনফারেন্সিং, বড় ডেটা ট্রান্সফার, এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মতো কাজকে সহজ করে।

ওয়্যান (WAN)-এর উদাহরণ:

১. ইন্টারনেট:

  • ইন্টারনেট হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় WAN। এটি লক্ষ লক্ষ স্থানীয় এবং প্রাইভেট নেটওয়ার্ককে একত্রিত করে, যার মাধ্যমে মানুষ বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে যোগাযোগ করতে পারে।

২. ব্যবসায়িক WAN:

  • বড় ব্যবসায়িক সংস্থাগুলো তাদের বিভিন্ন অফিস এবং ডেটা সেন্টারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্রাইভেট WAN তৈরি করে। এটি ডেটা সেন্টার, ক্লাউড সার্ভিস, এবং অফিসের মধ্যে নিরাপদ সংযোগ নিশ্চিত করে।

ওয়্যান (WAN)-এর গঠন:

১. রাউটার এবং সুইচ:

  • রাউটার এবং সুইচ WAN-এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলো ডেটা প্যাকেট রাউটিং এবং নেটওয়ার্ক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।

২. টেলিকমিউনিকেশন লাইন:

  • WAN সাধারণত টেলিকমিউনিকেশন লাইন, যেমন ফাইবার অপটিক ক্যাবল, স্যাটেলাইট লিংক, এবং মাইক্রোওয়েভ লিংক ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এগুলো দূরবর্তী স্থানগুলোতে ডেটা ট্রান্সফারের জন্য কার্যকর।

৩. VPN (Virtual Private Network):

  • ব্যবসায়িক WAN সুরক্ষার জন্য VPN ব্যবহৃত হয়। এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিরাপদ এবং এনক্রিপ্টেড যোগাযোগের ব্যবস্থা করে, যাতে ডেটা লিক বা সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি কমে।

ওয়্যান (WAN)-এর সুবিধা:

১. দূরবর্তী সংযোগ এবং এক্সেস:

  • WAN দূরবর্তী স্থান থেকে সহজেই সংযোগ এবং ডেটা অ্যাক্সেসের সুবিধা প্রদান করে। এটি বড় ব্যবসায়িক সংস্থা এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

২. কেন্দ্রীয় ম্যানেজমেন্ট:

  • WAN-এর মাধ্যমে বড় বড় নেটওয়ার্ক একসঙ্গে ম্যানেজ করা যায়, যা কেন্দ্রীয়ভাবে বিভিন্ন স্থানে তথ্য এবং সংযোগ নিয়ন্ত্রণের সুবিধা দেয়।

৩. উচ্চ গতির ডেটা ট্রান্সফার:

  • ফাইবার অপটিক এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে WAN উচ্চ গতির ডেটা ট্রান্সফারের সুবিধা প্রদান করে, যা ক্লাউড সার্ভিস এবং বড় ফাইল শেয়ারিংয়ের জন্য সহায়ক।

ওয়্যান (WAN)-এর সীমাবদ্ধতা:

১. খরচবহুল:

  • WAN স্থাপন এবং মেইনটেন্যান্স খরচবহুল হতে পারে, বিশেষ করে বড় ভৌগোলিক এলাকা এবং উচ্চ গতির সংযোগের জন্য।

২. নিরাপত্তা ঝুঁকি:

  • WAN-এ অনেক ব্যবহারকারী এবং সংস্থার সংযোগ থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই সাইবার সিকিউরিটি এবং এনক্রিপশন ব্যবহারের প্রয়োজন হয়।

৩. লেটেন্সি এবং ব্যান্ডউইথ সমস্যা:

  • বড় ভৌগোলিক এলাকা কভার করার কারণে WAN-এ লেটেন্সি বা বিলম্ব সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ব্যান্ডউইথের সমস্যাও দেখা যেতে পারে, বিশেষ করে দূরবর্তী স্থানগুলোতে।

সারসংক্ষেপ:

ওয়্যান (WAN) হলো একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, যা বড় ভৌগোলিক এলাকা কভার করে এবং বিভিন্ন নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করে। এটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সরকারী সংস্থা, এবং সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য যোগাযোগ এবং ডেটা অ্যাক্সেসের সুবিধা প্রদান করে। যদিও এটি স্থাপন এবং পরিচালনায় ব্যয়বহুল এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে WAN কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।

Content added By
Content updated By
Promotion