গৃহের অভ্যন্তরীণ সজ্জা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - NCTB BOOK

আমাদের মৌলিক চাহিদার মধ্যে বাসস্থান অন্যতম। গৃহকে বাসোপযোগী করার জন্য প্রয়োজন হয় আসবাবপত্র আর গৃহকে মনোরম আকর্ষণীয় করে নান্দনিকতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হয় গৃহের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা। এই ক্ষেত্রে দামি আসবাবের প্রয়োজন নেই। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কমদামি জিনিস দিয়েও গৃহ সজ্জা করে রুচি শিল্পী মনের পরিচয় দেওয়া যায়। গৃহকে সুন্দর স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করে বসবাসের উপযোগী করে তোলার জন্য অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা একান্ত প্রয়োজন। পরিবার গৃহসজ্জার মাধ্যমে জীবনযাপনের মান উন্নত করে মানসিক তৃপ্তি লাভ করে। আর গৃহের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকে কেন্দ্র করেই সামাজিক উন্নতির বিকাশ ঘটে।

Content added By
ক) অব্যবহৃত জিনিসপত্র জমিয়ে বাজারে বিক্রি করে নতুন জিনিসকেনা
খ) নিজে ব্যবহার নাকরে জিনিসের বিনিময়ে বন্ধুকে দিয়ে দেওয়া
গ) ব্যবহার না করা জিনিসেচিত্রকর্ম করে তার রূপপাল্টিয়ে ফেলা
ঘ) ব্যবহার না করা জিনিসগুলোদিয়ে আবার ঘর সাজিয়েফেলা।
ক) আলো-বাতাসের জন্য
খ) পোকামাকড়ের জন্য
গ) ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কারেরজন্য
ঘ) সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য।

আসবাবপত্র বলতে টেবিল, চেয়ার, সোফাসেট, খাট, ওয়ারড্রোব, আলমিরা, বুকশেলফ ইত্যাদি ভারী অথচ বহনযোগ্য গৃহসজ্জা সামগ্রীকে বোঝায়। গৃহের বিভিন্ন কাজ সম্পাদন সহজতর করার জন্য আসবাবের ভূমিকা অনেক। তা ছাড়া আরাম সৌন্দর্য বাড়াতেও এগুলোর জুড়ি নেই।

শহর কিংবা গ্রাম সর্বত্রই গৃহের বিভিন্ন কাজের জন্য আসবাবপত্র ব্যবহার করা হয়। পরিবারের জীবনযাত্রার মান, অবস্থানের স্থান অর্থাৎ শহর কিংবা গ্রাম, পারিবারিক জীবন চক্রের স্তর ইত্যাদির ভিন্নতায় আসবাবের চাহিদার ধরন বদলায়

গ্রামাঞ্চলের গৃহগুলো যেহেতু স্থায়ী আবাসস্থল এবং পর্যাপ্ত আয়তনবিশিষ্ট হয়ে থাকে তাই বড় আকৃতির ভারী কাঠের আসবাবের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত আসবাবপত্রসমূহের মধ্যে খাট, চৌকি, চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ, মিটসেফ, আলমিরা, আলনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আম, জাম, কাঁঠাল, কড়ই ইত্যাদি গাছের কাঠ ব্যবহার করে কাঠমিস্ত্রি দিয়ে বাড়িতেই এই আসবাবগুলো নিজেদের চাহিদামতো বানিয়ে নেওয়া হয়

শহরাঞ্চলে অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী কর্মজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি। অধিকাংশ লোকই ভাড়াবাড়িতে বসবাস করে। যারা নিজেদের বাড়িতে থাকেন তারাও আয়তনের সীমাবদ্ধতার জন্য নিজেদের চাহিদা মেটানোর উপযোগী হালকা যুগোপযোগী আসবাব ব্যবহার করে থাকেন। তা ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করতে যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য হালকা রুচিশীল আসবাব ব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। শহরাঞ্চলে ব্যবহৃত আসবাবপত্রসমূহের মধ্যে খাট, বক্স খাট, নানা সাইজের টেবিল, লুকিং গ্লাসযুক্ত কাঠের আলমিরা, সোফাসেট, গদিওয়ালা চেয়ার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শহরাঞ্চলে সীমিত আয়তনের নকশাদার, শৌখিন আধুনিক মডেলের আসবাব ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে আম, কাঁঠাল, কড়ই কাঠের পাশাপাশি সেগুন কাঠ, প্লাই উড, পারটেক্স ইত্যাদি কৃত্রিম কাঠের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। শহরাঞ্চলে রেডিমেড বা তৈরি আসবাব বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায়।

বর্তমান গ্রাম শহর সর্বত্রই প্লাস্টিকের তৈরি আসবাব যেমন- চেয়ার, টেবিল, খাট, ্যাক ইত্যাদির বহুল ব্যবহার দেখা যায়

আসবাব নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয়গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো

  • প্রয়োজনীয়তা আসবাব ক্রয়ের প্রথমেই বিবেচনা করতে হবে আসবাবটির প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা। প্রয়োজন না থাকলে হুজুগের বশে ক্রয় করলে পরে অপচয়ের সামিল হয়। ছাড়া পুরনো আসবাব যদি রং বা বার্নিশ করে ব্যবহার করা যায় তাহলে নতুন আসবাব ক্রয় করে অর্থের অপচয় করা ঠিক নয়।
  • পরিবারের আয়পরিবারের আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আসবাব নির্বাচন করতে হবে। আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আসবাব নির্বাচন করলে তা সমাজেও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। তা না হলে সমাজের চোখেও তা দৃষ্টিকটু মনে হয়।
  • আসবাবের মূল্যআসবাবের মূল্য নির্ভর করে উপকরণের উপর। সেগুন,
  • মেহগনি ইত্যাদি কাঠের আসবাবপত্রের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র দাম অনেক। আবার বেত প্লাস্টিকের বা রডের আসবাবের দাম তুলনামূলক কম আরামআসবাব নির্বাচনে আরাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসবাবের আয়তন, উচ্চতা, গভীরতা আরামদায়ক না হলে ব্যবহারে অসুবিধা হয়। যেমন: টেবিলের উচ্চতা যদি বেশি হয় তবে কাজের সমস্যা হয়। আবার চেয়ারে বসে যদি আরাম না পাওয়া যায় তবে কাজ করা কষ্টকর হয়।
  • উপযোগিতাআসবাবের উপযোগিতা হচ্ছে তার চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা। ছোট শিশুর ব্যবহারের আসবাব তার বয়স উপযোগী হবে। খাট, চৌকি এগুলো আমাদের শয়ন কাজের চাহিদা মেটায়। আবার টুল,
  • মোড়া, সোফা, চেয়ার এগুলো আমাদের বসার কাজের চাহিদা মেটায়। আবার আসবাব কী উপাদানের দ্বারা
  • তৈরি তার উপরও উপযোগিতা নির্ভর করে। যেমন: কাঠের আসবাবের চেয়ে গদিওয়ালা আসবাবের
  • আরাম বেশি ফলে এর উপযোগিতা বেশি।
  • রুচি পছন্দআসবাব নির্বাচনে পরিবারের সদস্যদের রুচি পছন্দ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কক্ষের আকার আয়তন, মেঝে দেয়ালের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রুচিসম্মত আসবাব দিয়ে গৃহসজ্জা করলে ঘরের সৌন্দর্য অনেক বেড়ে যায়
  • স্থায়িত্ব আসবাবের স্থায়িত্ব নির্ভর করে উপকরণ নির্মাণ কাজের উপর। কাঁচা কাঠ দিয়ে আসবাব নির্মাণ করলে সহজেই ঘুণে ধরে নষ্ট হয়ে যায়। আবার পাকা কাঠ, মজবুত নির্মাণ কৌশল আসবাবের স্থায়িত্ব বাড়ায়
  • জীবনযাত্রার মান পদমর্যাদা বিত্তের উপর জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে। উচ্চ পদস্থ উচ্চ বিত্তের পরিবারের আসবাব বেশ দামি হয়। এইসব পরিবারের ড্রইং রুম প্রশস্থ হয় ফলে একটু জাঁকজমকভাবে সাজানো থাকে। আবার নিম্নবিত্তের পরিবারে শয়ন কক্ষের এক পাশেই বসার ব্যবস্থা থাকে।
  • নকশা আসবাবের নকশা রুচিসম্মত হতে হবে। এই ক্ষেত্রে যুগোপযোগী, আরামদায়ক শিল্পসম্মত নকশাই বেশি গ্রহণযোগ্য। আবার নকশাটি এমন হবে যাতে পরিষ্কার করতে বেশি কষ্ট বা সময় না লাগে।
  • বহুবিধ ব্যবহার একটি আসবাব বহুবিধভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমন: ডিভান বসা শোয়া দুই কাজে ব্যবহৃত হয়। ডাইনিং টেবিল- খাওয়া, পড়াশোনা, আলাপ-আলোচনা করার কাজে ব্যবহার করা যায়। আধুনিক যুগে গৃহের আয়তন কম থাকে তাই আসবাবের বহুবিধ ব্যবহারের কথা বিশেষভাবে চিন্তা করতে হবে।

 

 

  • পরিবারের আকার পরিবারের আকার যদি বড় হয় তবে নমনীয় বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী আসবাবের কথা চিন্তা করতে হবে।
  • চাকরির প্রকৃতি বদলির চাকরি হলে আসবাব হালকা এবং কেবল দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটায় এমন আসবাবই নির্বাচন করতে হবে। বেশি আসবাব বদলির সময় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আসবাবও সহজে নষ্ট হয়ে যায়। আবহাওয়াআমাদের দেশে গরম ধুলাবালি বেশি। তাই হালকা ডিজাইনের আসবাব বেশি উপযোগী এবং যত্ন নেওয়া সহজ।
  • যত্ন আসবাব নির্বাচনের সময় যত্ন রক্ষণাবেক্ষণের কথা চিন্তা করতে হবে। কারণ যত্ন রক্ষণাবেক্ষণের উপর আসবাবের স্থায়িত্ব সৌন্দর্য নির্ভর করে।
  • কক্ষের আয়তন আকার কক্ষের আয়তন আকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আসবাব নির্বাচন করলে
  • রুচির পরিচয় পাওয়া যায়। এতে কক্ষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়

 

কাজতুমি তোমার পরিবারের জন্য আসবাব ক্রয় করার সময় কোন কোন বিষয় বিবেচনা করবে লেখ।

Content added By

আসবাব নির্বাচনের পরবর্তী কাজ হলো সঠিকভাবে তা বিন্যাস করা। আসবাবপত্র বিন্যাস যে শুধু ঘর সাজানোর উদ্দেশ্যে করা হয়তা নয়। সঠিকভাবে আসবাব বিন্যাসের মাধ্যমে গৃহের অভ্যন্তরীণ সজ্জাকে আকর্ষণীয়, আরামদায়ক সুবিধাজনক করে রাখা হয়। এর ফলে পরিবারের সদস্যদের আরাম মানসিক তৃপ্তি বাড়ে।

গ্রাম কিংবা শহরে সর্বত্রই অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জায় আসবাব বিন্যাসের কতিপয় নিয়ম মেনে চলতে হয়। যথা:

 প্রয়োজনীয় আসবাব বিন্যাস আসবাব বিন্যাসের প্রথমেই মনে রাখা প্রয়োজন যে কোনো ঘরেই অতিরিক্ত আসবাব রাখতে নেই। বাসগৃহের জন্য আসবাবপত্র বিন্যাসের সময় প্রথমে দেখতে হবে কক্ষটি কী কাজে ব্যবহার হবে। কক্ষের ব্যবহার অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আসবাব রাখতে হবে। যেমন :

শয়ন কক্ষ খাট, ওয়ারড্রোব, আলনা, আলমারি ইত্যাদি।

বসার কক্ষ সোফাসেট, বেতের চেয়ার, টেবিল, সোকেস, বুকসেলফ ইত্যাদি।

খাবার কক্ষ ডাইনিং টেবিল, সোকেস, ফ্রিজ ইত্যাদি।

পড়ার কক্ষ বুকসেলফ, টেবিল, চেয়ার, কম্পিউটার ইত্যাদি।

  • ব্যবহারিক সুবিধা- আসবাবপত্র বিন্যাসের সময় আসবাবের ব্যবহারিক দিকটি বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি কক্ষের কাজ অনুযায়ী আসবাব সাজাতে হবে।
  • চলাচলের সুবিধা গৃহের মধ্যে চলাচল, কাজ সম্পাদনের সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে আসবাবপত্র সাজাতে হবে। ঘরের মধ্যে একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলাচলে যেন অসুবিধা না হয় কার্য সম্পাদনে যেন অতিরিক্ত চলাচল প্রয়োজন না হয় আসবাব বিন্যাসের সময় সে দিকে লক্ষ রাখতে হয়। যেমন: বুক সেলফটিকে পড়ার টেবিলের পাশেই রাখতে হয়। ঘরে ছোট শিশু থাকলে তাদের ক্রিয়াকলাপের প্রতি খেয়াল রেখে আসবাবপত্র সাজানো শ্রেয়। শিশুরা যাতে ঘরময় স্বাধীন নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে সে বিষয়ে লক্ষ রাখা প্রয়োজন
  • কাজ অনুযায়ী আসবাব বিন্যাসআসবাব সজ্জা এমন হতে হবে যেন কাজের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ যে কক্ষে যে যে কাজ সম্পন্ন হয় তার সাথে সম্পর্কযুক্ত আসবাব স্থাপন করতে হয়।
  • আলো-বাতাস চলাচল সুবিধা আসবাবসমূহ এমনভাবে বিন্যাস করতে হবে যাতে দরজা-জানালা খুলতে এবং বন্ধ করতে কোনো অসুবিধা না হয়। ছাড়া গৃহের অভ্যন্তরে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে না পারলে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও ব্যাহত হয়
  • দেয়াল ঘেষে বিন্যাস না করা- আসবাব বিন্যাসের সময় মনে রাখতে হবে যে টেবিল, চেয়ার, সোফা ইত্যাদি কখনো দেয়াল ঘেষে রাখতে নেই। দেয়াল হতে একটু সামান্য দূরত্বে স্থাপন করতে হয়। তা না হলে ঘষা লেগে দেয়ালের রং নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং আসবাবপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে আসবাবপত্র বিন্যাসের মাধ্যমে কক্ষের গঠনগত ত্রুটি ঢেকে রাখা যায়।
  • গৃহসজ্জায় নতুনত্ব আনা- আসবাবপত্র বিন্যাস কখনো স্থায়ীভাবে একই জায়গায় করা উচিত নয়। এতে গৃহসজ্জায় একঘেঁয়েভাব চলে আসে। মাঝে মাঝে আসবাবপত্রের বিন্যাসে রুচির রদবদল করলে গৃহসজ্জায় নতুনত্ব আসে।
  • শিল্পনীতির প্রয়োগ আসবাব বিন্যাসের উপর গৃহসজ্জার সৌন্দর্য নির্ভর করে। এই শিল্পরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে গেলে শিল্প সৃষ্টির মূলনীতি যথাসমানুপাত, সামঞ্জস্য, ভারসাম্য, ছন্দ এবং প্রাধান্য বজায় রাখতে হয়। নিম্নে আসবাব বিন্যাসে শিল্পনীতির প্রয়োগ বর্ণনা করা হলো

 

. সমানুপাত (Proportion)- আসবাব বিন্যাসে ঘরের আকৃতির সাথে আসবাবপত্রের আকার নির্ধারন করা দরকার। বড় ঘরে বড় আসবাব ছোট ঘরের জন্য ছোট আসবাব মানানসই। আবার যেখানে বড় ছোট আসবাবের সংমিশ্রণ প্রয়োজন সেখানে বড় আসবাবের সঙ্গে সমতা রক্ষা করে ছোট দুই-তিনটি আসবাব একত্রে সাজানো যায়। আসবাবপত্রের পরস্পরের আকৃতির অনুপাত ঠিক হলে সমগ্র গৃহসজ্জার আসবাব বিন্যাসে পারস্পরিক মিত্রতা বা মিল হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়।

. ভারসাম্য (Balance) - আসবাবপত্র বিন্যাসে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজন আছে। কক্ষের একদিকের সঙ্গে অন্য দিকের আসবাবপত্রের, মাঝখানের কর্নারের আসবাবপত্রের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। ঘরের একদিকে বেশি অন্য দিকে কম আসবাব সংস্থাপন করলে ভারসাম্য রক্ষা হয় না। একটি কক্ষের দুই দিকের আসবাবের গুরুত্ব সমান হলে তাকে প্রত্যক্ষ ভারসাম্য বলে। অন্যদিকে একপাশের জিনিসে বেশি গুরুত্ব থাকলে অর্থাৎ বেশি সাজানো থাকলে তাকে অপ্রত্যক্ষ ভারসাম্য বলে। অপ্রত্যক্ষ ভারসাম্য গৃহসজ্জায় নতুনত্ব আকর্ষণ সৃষ্টি করে।

. সামঞ্জস্য (Harmony) - সবার সাথে সবার মিত্রতাকেই সামঞ্জস্য বলে। ঘরে কেবল দামি আসবাব, চিত্রকর্ম, সো-পিস থাকলেই হবে না। সবকিছুর সাথে একটা সামঞ্জস্য থাকতে হবে।

. ছন্দ (Rhythm)- আসবাব বিন্যাসে ছন্দ বজায় রাখা দরকার, এতে দৃষ্টি কক্ষের একটা আসবাবে আবদ্ধ না থেকে সহজ সাবলীল ভঙ্গিতে অন্য আসবাবে গিয়ে পৌঁছায়। কক্ষের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দৃষ্টি উঠানামা করে। দৃষ্টির এই উঠানামাই ছন্দ ছন্দের গতি আসবাব বিন্যাসে আকর্ষণ সৃষ্টি করে। একঘেয়েমি দূর করে এবং নতুনত্ব আনয়ন করে।

ঙ. প্রাধান্য (Emphasis)- আসবাব বিন্যাসের অন্যতম নীতি হলো প্রাধান্য। প্রাধান্য বলতে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুকে বোঝায়। বসার ঘরে সুদৃশ্য সেন্টার টেবিলে ফুলদানিতে তাজা ফুলের সমারোহ, খাবার ঘরে টেবিলে বিভিন্ন ফলের সমারোহ, শোবার ঘরে সুদৃশ্য আসবাব বা কার্পেট ইত্যাদি দিয়ে ঘর সাজিয়ে প্রাধান্য সৃষ্টি করা যায়।

কাজ : তুমি তোমার কক্ষে আসবাব বিন্যাসে কী কী বিষয় লক্ষ রাখবে লেখ।

Content added By

বিভিন্ন কক্ষে আসবাব বিন্যাস

শয়নকক্ষ (Bed Room ) -

সারা দিন কর্মব্যস্ততার পর মানুষ গৃহে ফিরে আসে। গৃহের শান্তিময় পরিবেশ আমাদের আরাম দেয়। তাই শয়নকক্ষে আসবাব বিন্যাসে যত্নবান হতে হবে।

লক্ষণীয় বিষয়

  • শয়নকক্ষে খাট বা চৌকি, ড্রেসিং টেবিল, আলনা, আলমারি, ওয়ারড্রোব ইত্যাদি আসবাব থাকে। খাট বা চৌকির অবস্থান এমনভাবে হবে যাতে চোখে আলো না পরে।
  • কক্ষের দেয়ালের রং হালকা হলে ভালো হয়।
  • শয়নকক্ষ
  • খাটের পাশে বই বা খবরের কাগজ রাখার জন্য ছোট টেবিল রাখা যায়। টেবিল ল্যাম্প থাকলে পড়ার সময় পর্যপ্ত আলো পাওয়া যায় ৷
  • দেয়াল সজ্জার জন্য চিত্রকর্ম থাকতে পারে। ড্রেসিং টেবিল বা সাইড টেবিলের উপর একগুচ্ছ ফুল ঘরের সৌন্দর্য অনেকখানি বাড়িয়ে দেয় ৷

বসার ঘর (Drawing Room)-

বসারকক্ষে পরিচিত লোকজন বা আত্মীয়স্বজন এসে বসে। সামাজিকতা রক্ষার কেন্দ্রস্থল হলো বসার ঘর। এই কক্ষের বিন্যাস বাড়ির লোকদের রুচিবোধ বাইরের লোকের কাছে প্রকাশ করে।

লক্ষণীয় বিষয়

  • বসার ঘরে সোফাসেট, ডিভান, মোড়া, বুকসেলফ, সোকেস থাকে।
  • কক্ষকে আকর্ষণীয় কারার জন্য বড় ফুলদানিতে ফুল একুরিয়াম, চিত্রকর্ম, খ্যাতিমান ব্যক্তির ছবি, কার্পেট ইত্যাদি রাখা যেতে পারে।
  • আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, চলাচলের সুবিধা, শিল্পনীতি অনুসরণ করে আসবাব বিন্যাস করতে হবে।

খাবার ঘর (Dining Room)-

খাবার ঘর পরিবারের সদস্যদের একত্র হওয়ার স্থল। বাড়ির সবাই একত্রে খেতে বসলে একটা আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

  • খাবার ঘরে খাবার টেবিল, চেয়ার সোকেস, মিটসেফ,, ফ্রিজ, ট্রলি ইত্যাদি থাকে। টেবিল গোল, ডিম্বাকৃতির বা চার কোণাকার হতে পারে টেবিলের উপরিভাগ ফর্মিকা, কাচ বা কাঠের হয়।
  • খাবার টেবিলে যাতে পর্যাপ্ত আলো পড়ে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
  • টেবিলের মাঝখানে সমতল ফুলদানিতে ফুল বা ঝুড়িতে বিভিন্ন ফলের সমারোহ টেবিলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়
  • টেবিল এমনভাবে রাখতে হবে যাতে চেয়ারে বসা বা চলাচলে অসুবিধা না হয়
  • পানির ফিল্টার এককোনায় একটু উঁচুতে রাখতে হবে। ঘরের বড় দেয়াল ঘেঁষে এমনভাবে ফ্রিজ রাখতে হবে যেন ফ্রিজের পেছনে বাতাস চলাচলের সুবিধা থাকে

অতিথির ঘর (Guest Room)

অতিথির ঘর বসার ঘরের পাশে হলে ভালো হয়। এই কক্ষে খুব বেশি আসবাবপত্রের প্রয়োজন হয় না। খাট, ড্রেসিং টেবিল, দেয়াল আলমারি হলেই চলে।

লিভিং রুম (Living Room)

বর্তমান আধুনিক বাড়িতে খেলার ঘর লিভিং রুম থাকে। এই রুমে পরিবারের সদস্যরা অবসর সময় কাটায়। এই রুমে টেলিভিশন দেখা, বসা শোয়ার ব্যবস্থা থাকে। গিটার, হারমোনিয়াম ইত্যাদি বিনোদনের জিনিসপত্র থাকে

 

পড়ার ঘর (Reading Room)

পড়ার ঘর এমন জায়গায় হবে যেখানে কোনো শব্দ বা কথাবার্তা পড়াশোনার ব্যঘাত ঘটাতে না পারে। পড়ার রুমে টেবিল, চেয়ার, বুকসেলফ, কম্পিউটার ইত্যাদি থাকে।টেবিলে যাতে পর্যাপ্ত আলো পড়ে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

রান্নাঘর (Kitchen )

রান্নাঘর খাবার ঘরের পাশে হয়ে থাকে। এতে খাদ্য পরিবেশন করতে সুবিধা হয়। চুলার স্থান জানালার পাশে হলে সহজেই ধোঁয়া বের হয়ে যায়। চুলা গ্যাস, কেরোসিন বা মাটির হতে পারে। শহর এলাকায় গ্যাস, গ্রামাঞ্চলে লাকড়ি বা কেরোসিনের চুলা দেখা যায়। আবার অনেকেই হিটারেও রান্না করে। রান্নাঘরে পানির কল এক কোনায় রাখলে ভালো হয়। বিভিন্ন জিনিসের কৌটা রাখার জন্য সেলফ ব্যবহার করতে হয়। দা-বঁটি, ছুরি ইত্যাদি ধারালো জিনিস শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

রান্নাঘরের ওয়ালে সিলিং পর্যন্ত ক্যাবিনেট করে নিলে অনেক জিনিস রাখা যায়। তবে পোকামাকড় যাতে না জন্মায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

Content added By

গৃহের নান্দনিকতা বৃদ্ধি

আসবাবপত্র নির্বাচন, বিন্যাসের পরই মানুষ চায় গৃহের মেঝে, দেওয়াল, পর্দা পুষ্প বিন্যাসের মাধ্যমে গৃহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে। সব কিছুর সামঞ্জস্য বিন্যাসই একটি গৃহকে অপরূপ করে তোলে। সুরুচির প্রকাশ ঘটায়

মেঝের আচ্ছাদন আমাদের দেশে ঘরের মেঝে সিমেন্টের বা সিমেন্টের সাথে রং মিশিয়ে মেঝে তৈরি করা হয়। গ্রামাঞ্চলে মাটির মেঝে থাকে। তবে আধুনিক বাড়িতে টাইলস বা মোজাইকের মেঝে দেখা যায়। শহরাঞ্চলে মেঝেতে কার্পেট ব্যবহার করা হয়। কার্পেট আসবাবের সাথে মানানসই হতে হবে। আমাদের দেশে ধুলা বেশি তাই ছোট আকারের কার্পেট ব্যবহার ভালো এতে যত্ন নিতে সহজ হয়।

দেয়াল সজ্জা প্রতিটি গৃহেরই বিভিন্ন কক্ষে ছবি বা চিত্রকর্ম দেখা যায়। গৃহের অভ্যন্তরীণ সজ্জায় চিত্রকর্মের ভূমিকা অপরিসীম। খ্যাতনামা ব্যক্তির ছবি গৌরবের প্রতীক। মাতৃভূমির ছবি, প্রাকৃতিক দৃশ্য মনে প্রশান্তি আনে।

দেয়ালে ছবি টাঙানোর কিছু নিয়ম আছে। যেমন

  • ছবি টাঙানোর জন্য স্থান নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বড় দেয়ালে বড় ছবি বা ছোট ছোট কয়েকটি ছবি একত্রে টাঙানো যায়
  • ছবি দৃষ্টি বরাবর টানাতে হবে। বেশি উপরে বা নিচে ছবি টানালে সৌন্দর্য ফুটে উঠে না এবং দৃষ্টিনন্দন হয় না।
  • কক্ষের কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ছবি টানাতে হবে। বসার কক্ষে খ্যাতনামা ব্যক্তি, প্রাকৃতিক দৃশ্য, খ্যাতনামা ব্যক্তির আঁকা ছবি রাখা যায়। খাবার ঘরে খাবারের ছবি, লিভিং রুমে পারিবারিক ছবি টাঙানো যায়। পারিবারিক ছবি শয়ন ঘরে রাখা রুচিসম্মত।
  • ছবি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শোপিস, ফুল, লতা-পাতা, ওয়ালমেট, পাটশিল্প, লোকশিল্প উপকরণ দিয়েও দেয়াল সজ্জা করা যায়। তবে এক্ষেত্রে শিল্পনীতি অনুসরণ করা আবশ্যক

পর্দাপর্দা হচ্ছে দরজা, জানালার আচ্ছাদন। দেয়ালের রং, মেঝের আচ্ছাদন অন্যান্য আসবাবের সাথে

সামঞ্জস্য রেখে পর্দা নির্বাচন করা উচিত।

পর্দার প্রয়োজনীয়তা-

  • ঘরের  আব্রু রক্ষা করে
  • ঘরে শীতলতার ভাব আনে
  • ধুলাবালি থেকে কক্ষকে রক্ষা করে
  • কক্ষের সৌন্দর্য বাড়ায়

আমাদের দেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ তাই হালকা রংয়ের পর্দাই আমাদের জন্য উপযুক্ত। এতে করে শীতলতার সৃষ্টি হয়। তবে শীতের দিনে গাঢ় রংয়ের পর্দা ব্যবহার করা যায়। পর্দার কাপড়টি এমন হতে হবে যাতে যত্ন নেওয়া সহজ হয়।

পুষ্পবিন্যাস

পুষ্পবিন্যাস গৃহসজ্জার অন্যতম প্রধান অংশ। ফুল সাজানোর জন্য প্রয়োজন নানা ধরনের ফুলদানি বা পাত্র। এই পাত্রগুলো চীনামাটি, প্লাস্টিক, কাচ, বাঁশ, বিভিন্ন ধাতুর তৈরি হতে পারে। ফুলদানি বা পাত্র গোলাকার, চ্যাপ্টা, ডিম্বাকৃতি বা চারকোনা হতে পারে।

 

পুষ্পবিন্যাসের নিয়ম

  • রংপুষ্পবিন্যাসের সময় খেয়াল রাখতে হবে ফুলের রংটি যেন সবাইকে আকর্ষণ করে।
  • রেখাফুলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার রেখা বা গড়ন। লিলি, রজনীগন্ধা ফুলের লম্বা ডাটা থাকে আবার গাঁদা, বেলি, গোলাপ এগুলো স্তুপাকারে সাজানোর উপযোগী।
  • শিল্পনীতিপুষ্পবিন্যাসে শিল্পনীতি অনুসরণ করলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। যেমন- ফুলদানির সাথে ফুলের সামঞ্জস্য থাকা বাঞ্চনীয়।
  • পুষ্পবিন্যাসের সময় ফুলের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখতে হয়। অর্থাৎ গাছে যেভাবে ফুল ফুটে থাকে সেভাবে ফুলকে সাজালে ভালো হয়
  • সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুলটিকে প্রাধান্য দিয়ে পুষ্পবিন্যাস করতে হয়। তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অন্যান্য ফুল, পাতা সাজাতে হবে।
  • ফুলদানির চেয়ে ফুলের প্রাধান্য বেশি হবে। ফুলদানির আকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পুষ্পবিন্যাস করতে হয়।
  • ফুলদানিতে যথেষ্ট পানি থাকতে হবে। পিনহোল্ডার ঢেকে পুষ্পবিন্যাস করতে হবে।
  • পুষ্পবিন্যাসের জন্য অনেক ফুলের প্রয়োজন হয় না। দুই একটা ফুলের সাথে ডাল, লতা, পাতা দিয়েও পুষ্প বিন্যাস করা যায়। পিন হোল্ডার ব্যবহার করে বাটি, প্লেটেও পুষ্পবিন্যাস করা যায়।
  • খুব ভোরে বা পড়ন্ত বেলায় গাছ থেকে ডালসহ ফুল কাটলে সেটা তাজা থাকে
  • পাত্রের পানির মধ্যে চিনি মেশালে ফুল অনেক বেশি সময় ধরে তাজা থাকে
Content added By

গৃহে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সংরক্ষণ

গৃহকে আসবাবপত্র দিয়ে সুসজ্জিত করলেই চলবে না গৃহের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষার কথাও চিন্তা করতে হবে। নিজ গৃহকে সুসজ্জিত করে রাখলে সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায়। তবে কেবল দামি, চমৎকার আসবাব দিয়ে ঘর সাজালেই চলবে না, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। ময়লা, ধুলা পড়া আসবাব ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করে। যত্নের অভাবে আসবাবের স্থায়িত্ব হ্রাস পায়, মাকড়সার জাল, পিঁপড়া, পোকার উপদ্রব হয় এবং রোগ-জীবাণু ছড়ায়।

তাই গৃহের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজন

  • গৃহে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা :
  • আলো, উত্তাপ এবং জীবাণুনাশক শক্তির অফুরন্ত উৎস হলো সূর্য। সূর্যের আলো অন্ধকার দূর করে। উত্তাপ রোগ-জীবাণু ধ্বংস করে। আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষা করে। তাই ঘরের মধ্যে যাতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে সেই দিকে লক্ষ রেখে আসবাব বিন্যাস করতে হবে
  • বায়ুর অক্সিজেন আমাদের দেহ কোষকে বাঁচিয়ে রাখে। স্বাস্থ্যের উপর বায়ুর প্রভাব খুব বেশি। তবে গৃহে যাতে সূর্য কিরণ এবং বায়ু সহজেই প্রবেশ করতে পারে সেজন্য গৃহের অবস্থান দক্ষিণ অথবা পূর্বমূখী হলে ভালো হয়।

 

      গৃহের মেঝে আসবাব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা :

প্রতিদিন গৃহের মেঝে আসবাব পরিষ্কার করা আবশ্যক। গৃহের মধ্যে চলাফেরার ফলে মেঝে ময়লা হয় আসবাবের উপর ধুলাবালি জমে। এই ধুলা থেকে সর্দি, কাশি হয়। তাই প্রতিদিন ঘরের মেঝে, রান্নাঘর, গোসলখানার মেঝে আসবাবপত্র ধোয়া, মোছা করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে সপ্তাহে এক দিন জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। দরজা, জানালা, রান্নাঘরের দেয়াল, বেসিন, টয়লেটের প্যান/কমোড ইত্যাদি প্রতি সপ্তাহে পরিষ্কার করা উচিত।

  • পর্দা, বিছানার চাদর, টেবিল ক্লথ, বিভিন্ন আসবাবের কভার পরিষ্কার করা :
  • ঘরের পর্দা, চাদরে কভারে ধুলা জন্মায়। প্রতি সপ্তাহে বিছানার ছাদর পরিষ্কার করা উচিত। / মাস পর পর ঘরের পর্দা আসবাবের কভার পরিষ্কার করা উচিত। এতে ঘরের ধুলাবালি দূর হয়ে ঘরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
  • রাতে কাজ অনুযায়ী পর্যাপ্ত কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করা :
  • কাজ অনুযায়ী পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকলে চোখের ক্ষতি হয়। তাই পড়াশোনা, রান্নাঘরের কাজ, খাবার টেবিল ইত্যাদি জায়গায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক
  • গৃহের ভিতর চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা :
  • ঘরের ময়লা ফেলার জন্য ঘরের ভিতর বিন রাখা প্রয়োজন। সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য গৃহের চারপাশের পরিবেশ-পরিষ্কার রাখাও আবশ্যক। ঘরের চারপাশে ময়লা, আবর্জনা, খোলা নর্দমা, ঝোপ-ঝাড় থাকলে পোকামাকড় মশার উপদ্রব হয়। মারাত্মক রোগ ছড়ায়। তাই ঘরের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। ময়লা, আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থান বা ডাষ্টবিনে ফেলতে হবে। গৃহের চারপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে পোকামাকড় ধ্বংস করার ঔষধ স্প্রে করতে হবে। টবে বা চারপাশে পানি জমে যেন মশার উপদ্রব না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
Content added By

অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জায় অব্যবহৃত জিনিসের ব্যবহার

মানুষ সৌন্দর্যের পূজারি। তাই গৃহের আরাম সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আসবাবপত্রের পাশাপাশি গৃহসজ্জায় নানা উপকরণ ব্যবহার করা যায়। তবে গৃহসজ্জায় শুধু যে বাজার থেকে মূল্যবান জিনিসই ব্যবহার করতে হয় তা নয়। বরং নিজস্ব সৃজনশীলতার মাধ্যমে গৃহের অব্যবহৃত জিনিস দিয়েও নানা ধরনের শিল্প সামগ্রী বানিয়ে ব্যবহার করা যায়। শিল্প সৃষ্টি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এই শিল্প সৃষ্টি করতে যেয়ে সব সময় দামি জিনিসের প্রয়োজন হয় না। হাতের কাছে যা পাওয়া যায় বা ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়েও শিল্প সৃষ্টি করে নিজের সৃজনশীলতা তুলে ধরা যায়

গৃহে বিভিন্ন অব্যবহৃত জিনিসের নাম :

পানি বা কোল্ডড্রিঙ্কস এর বোতল, ক্যান, টিসুবক্স, পুরনো ক্যালেন্ডার, পুরনো কাপড়, ডিমের খোসা, বিস্কুট, চকলেট বা চিপসের শক্ত কাগজের বক্স, কালি শেষ হয়ে যাওয়া বলপেন, ছোট হয়ে যাওয়া পেনসিল ইত্যাদি।

এখন আমরা অব্যবহৃত জিনিসের ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব :

ডিমের খোসা

প্রতিদিন আমাদের খাদ্য তালিকায় ডিম থাকে। ডিমের খোসা আমরা ফেলে দিই। কিন্তু এই ফেলে দেওয়া খোসা দিয়েও আমরা শিল্প সৃষ্টি করতে পারি। যেমন :

ডিমটিকে একদিকে ছোট করে ছিদ্র করে ভেতরের অংশ বের করে নিয়ে আসতে হবে। তারপর রোদে ভেতরটা শুকাতে হবে। তারপর ডিমের খোসার গায়ে রং দিয়ে চমৎকার বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন করে গৃহসজ্জায় ব্যবহার করা যায়।

আবার ডিমের খোসা ছোট ছোট টুকরা করে টুকরাগুলোকে আর্ট পেপারের উপর আঠা দিয়ে আটকিয়ে শুকিয়ে গেলে তার উপর রং দিয়ে এঁকে বিভিন্ন দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা যায়

 

নমুনা- : পুতুলের আকৃতিতে হোল্ডার তৈরিকরণ

উপকরণ: ক্যালেন্ডারের পাতা, শক্ত কাগজ, ফেলে দেওয়া টুকরা কাপড়, উল, পাটের দড়ি, কালো টার্সেল, লেইস, গোল টিপ, ফিতা, আইকা/গাম। ক্যালেন্ডারের শক্ত কাগজ ব্যবহার করে নিম্নের চিত্র অনুযায়ী ফর্মা কেটে প্রথমে মূল কাঠামো তৈরি করে নিতে হবে। তারপর এর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আঠা দিয়ে লেস লাগিয়ে, ফুল/পাটের দড়ি/টার্সেল দিয়ে বেণী তৈরি করে, গোল টিপ দিয়ে কিংবা রং দিয়ে চোখ, নাখ, ঠোঁট এঁকে নেওয়া যায়। শক্ত কাগজের পেছনের দিকে ফিতা/দড়ি লাগিয়ে ঝোলানোর জন্য হুকিং ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে সম্পূর্ণ পুতুল তৈরি হয়ে গেলে টেলিফোন সেটের পার্শ্বে, ক্লিপ-কাঁটা রাখার জন্য কিংবা ম্যাসেজ হোল্ডার হিসেবে দেয়ালে ঝুলিয়ে ব্যবহার করা যায়

 

 

নমুনা : চটের তৈরি ওয়াল পকেট

ব্যবহৃত উপকরণচট, বর্ডারের জন্য রঙিন কাপড়, সেলাই করার জন্য সুঁই- সুতা। চট দিয়ে ওয়াল পকেট বানিয়ে হুকে ঝুলানোর ব্যবস্থা করে একদিকে গৃহসজ্জার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়, আবার প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছে রাখারও ব্যবস্থা করা যায়

 

Content added By
Promotion