তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য বিশেষ পদার্থের বিশেষ ধর্মকে কাজে লাগাতে হয়। তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে পদার্থের যে ধর্মের পরিবর্তন হয় এবং যে পরিবর্তন সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করে তাপমাত্রা মাপা যায় সেটাই হচ্ছে তাপমাত্রিক ধর্ম। তাপমাত্রা মাপার জন্য পদার্থের যে ধর্মটি ব্যবহার করা হয় সেটি হচ্ছে তাপমাত্রিক ধর্ম। তোমরা জ্বর মাপার পারদের থার্মোমিটার দেখে থাকবে, সেটি শরীরের তাপমাত্রা মাপে। এখানে পারদ হচ্ছে তাপমাত্রিক পদার্থ এবং পারদের আয়তনের প্রসারণ হচ্ছে তার তাপমাত্রিক ধর্ম।
পারদ ছাড়াও অ্যালকোহলের থার্মোমিটার আছে, সেখানে অ্যালকোহল হচ্ছে তাপমাত্রিক পদার্থ এবং তরলের প্রসারণ হচ্ছে তাপমাত্রিক ধর্ম।
গ্যাস থার্মোমিটারে গ্যাস হচ্ছে তাপমাত্রিক পদার্থ এবং নির্দিষ্ট আয়তনে রক্ষিত গ্যাসের চাপ হচ্ছে তাপমাত্রিক ধর্ম। তাপমাত্রার সাথে ধাতুর রোধ বা রেজিস্ট্যান্সের পরিবর্তন হয়, তাই রোধকেও তাপমাত্রিক ধর্ম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। একেকটি তাপমাত্রিক পদার্থ একেক তাপমাত্রার জন্য কার্যকর, তাই খুব বেশি বা কম তাপমাত্রা মাপার জন্য বিশেষ তাপমাত্রিক পদার্থের বিশেষ তাপমাত্রিক ধর্ম ব্যবহার করতে হয়। তামা এবং কনস্টান্টেন ধাতুকে তাপমাত্রিক পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দুটি ভিন্ন ভিন্ন ধাতুর সংযোগস্থলে তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে এটি একটি ইএমএফ (emf: electromotive force) তৈরি করে, সেটি মেপে তাপমাত্রা বের করা যায়। এই থার্মোকাপল - 200°C থেকে 1000°C পর্যন্ত তাপমাত্রা মাপতে পারে বলে ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়।
আমরা যদি তাপমাত্রার ধারণাটুকু ঠিক করে পেয়ে যাই তাহলে এর পরেই আমাদের জানতে হবে এর একক কী কিংবা তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, আমরা কেমন করে তাপমাত্রা মাপব। তাপমাত্রার প্রচলিত একক হচ্ছে সেলসিয়াস ( °C)। সাধারণভাবে বলা যায় এই স্কেলে এক এটমস্ফিয়ার বাতাসের চাপের যে তাপমাত্রায় বরফ গলে পানিতে পরিণত হয় সেটাকে 0°C এবং যে তাপমাত্রায় পানি ফুটতে থাকে সেটাকে 100°C ধরা হয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হলো বিজ্ঞানী সেলসিয়াস যখন তাপমাত্রার স্কেল তৈরি করেছিলেন তখন শূন্য ডিগ্রি ধরেছিলেন ফুটন্ত পানির তাপমাত্রা, 100 ডিগ্রি ধরেছিলেন বরফ গলনের তাপমাত্রা। বর্তমান স্কেলের ঠিক উল্টো!
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা সাধারণত সেলসিয়াস স্কেল ব্যবহার করলেও আন্তর্জাতিক এককটির নাম হচ্ছে কেলভিন (K)। সেলসিয়াস স্কেলের সাথে 273.15°C যোগ করলেই কেলভিন স্কেল পাওয়া যায়। যদি শুধু তাপমাত্রার পার্থক্য নিয়ে মাথা ঘামাই তাহলে সেলসিয়াস স্কেল আর কেলভিন স্কেলে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ তাপমাত্রা 10°C বেড়েছে বলা যে কথা, তাপমাত্রা 10K বেড়েছে বলা সেই একই কথা। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয় এই ঘরের তাপমাত্রা কত, তাহলে যদি সেটা হয় 30°C তাহলে কেলভিন স্কেলে সেটা হবে (30+ 273.15 = 303.15 K)। তোমাদের মনে হতে পারে দুটো স্কেল হুবহু একই রকম শুধু 273.15°C পার্থক্য এর পেছনে কারণটি কী?
এটি করার পেছনের কারণটি খুবই চমকপ্রদ। সাধারণভাবে আমাদের মনে হতে পারে আমরা বুঝি যত বেশি বা যত কম তাপমাত্রা কল্পনা করতে পারব, কিন্তু আসলে সেটি সত্যি নয় । তাপমাত্রা যত ইচ্ছে বেশি কল্পনা করতে সমস্যা নেই কিন্তু যত ইচ্ছে কম কল্পনা করা সম্ভব নয়, সবচেয়ে কম একটা তাপমাত্রা আছে এবং তাপমাত্রা এর থেকে কম হওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, আমরা এই তাপমাত্রার কাছাকাছি যেতে পারি কিন্তু কখনোই এই তাপমাত্রায় পৌঁছাতে পারব না। এই তাপমাত্রাকে পরম শূন্য বা Absolute Zero বলা হয়। সেলসিয়াস স্কেলে এই তাপমাত্রার মান – 273.15°C কাজেই কেলভিন স্কেলে এর মান হচ্ছে শূন্য ডিগ্রি। অন্যভাবে বলা যায় কেলভিন স্কেলটি তৈরি হয়েছে চরম শূন্য তাপমাত্রাকে শূন্য ডিগ্রি ধরে।
তাপমাত্রার যেকোনো স্কেল তৈরি করতে হলে দুটো নির্দিষ্ট তাপমাত্রা (ৰা স্থিরাঙ্ক) দরকার। কেলভিন স্কেলে একটি হচ্ছে পরম শূন্য। যেটাকে শূন্য ডিগ্রি ধরা হয়েছে। অন্যটি হচ্ছে পানির ত্রৈধ বিন্দু বা Triple Point এই তাপমাত্রায় একটা নির্দিষ্ট চাপে (0.0060373 atm ) বরফ, পানি এবং জলীয় বাষ্প এক সাথে থাকতে পারে বলে তাপমাত্রাকে অনেক বেশি সুক্ষ্মভাবে নির্দিষ্ট করা যায়। সেলসিয়াস স্কেলে এর মান 0.01°C, এবং এই স্কেলের সাথে মিল রাখার জন্য কেলভিন স্কেলে এর মান 273.16°কেলভিন এবং সেলসিয়াস স্কেলের পাশাপাশি ফারেনহাইট স্কেল বলেও একটা স্কেল আছে যেখানে বরফ গলন এবং পানির বাষ্পীভবনের তাপমাত্রা যথাক্রমে 32°F এবং 212°F। কেলভিন স্কেলে 0°C তাপমাত্রা 273.15K হলেও আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সময়েই এটাকে 273 K ধরে নিই। দৈনন্দিন হিসাবে সেটা কোনো গুরুতর সমস্যা করে না।