পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা

এসএসসি(ভোকেশনাল) - জেনারেল মেকানিক্স- ১ - জেনারেল মেকানিক্স -১ | NCTB BOOK

ওয়ার্কশপে বিভিন্ন প্রকার ভারী যন্ত্রপাতি এবং মেশিন নিয়ে কাজ করতে হয়। এখানে কোনো মেশিন, যন্ত্রপাতি, টুলস, ছোট ছোট যন্ত্রাংশ ইত্যাদি এলোমেলো অবস্থায় রাখলে যেকোনো প্রকার দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এছাড়া কাজ করার পর বিভিন্ন প্রকার ধাতব টুকরা, চিপস, তৈল, মবিল, গ্রিজ ইত্যাদি পড়ে থাকলে- সেগুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করলে এবং যন্ত্রপাতিগুলি সাজিয়ে গুছিয়ে না রাখলে ওয়ার্কশপের কর্মীগণ যেকোনো প্রকার দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে এমন একটি পরিবেশ থাকা দরকার যেখানে প্রতিটি কর্মী কাজ করার সময় পর্যাপ্ত আলো বাতাস পেতে পারেন, প্রয়োজনে সহজেই একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারেন এবং একজন কর্মী সুস্থতার সাথে মনোযোগ সহকারে কাজ করতে পারেন। পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা হলো কাজে বা চাকুরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ বিষয়ক নিয়ম শৃঙ্খলা বা নিয়ম-নীতি। পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যা কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা করে।

পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার উদ্দেশ্য হলো-

ক) সকল পেশার কর্মীরা শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে কল্যাণ সাধন করে পদোন্নতি লাভ করবেন।

খ) কাজের পরিবেশের কারণে কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধ করা।

গ) বিপজ্জনক কাজ বা ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে কর্মীদের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখবে। ঘ) কর্মীদের শারীরিক এবং মানসিক সামর্থ্য অনুসারে পেশাগত পরিবেশ তৈরি এবং ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন।

১.২ স্বাস্থ্য সচেতনতা

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যই সকল স্যুখের মূল। একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকলে তারা মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারে না। ফলে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং কাজে অনুপস্থিতির হার বেড়ে যায়। ফলে কর্মী এবং মালিক উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং কর্মী, প্রশাসন এবং মালিকপক্ষের সকলকেই স্বাস্থ্য সচেতন থাকা একান্ত আবশ্যক।

১.২.১ স্বাস্থ্যবিধি

স্বাস্থ্যবিধি হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা আমাদেরকে অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তার প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে। একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক, পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক অবস্থার পূর্ণাঙ্গ সুস্থ জীবনই হলো ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি যেমনভাবে আমাদের নিরাপদ রাষ্ট্রে তেমনভাবে অন্যদেরকেও অসুস্থ হওয়া থেকে নিরাপদ রাখে। 

পেশাগত রোগসমূহ

কর্মস্থলের পরিবেশ এবং কাজের ধরনের কারণে কর্মরত অবস্থায় একজন কর্মী যে সকল রোগ বা ব্যধিতে আক্রান্ত হয় বা হতে পারে তাদেরকে পেশাগত রোগ বলা হয়। নিম্নে কতিপয় পেশাগত রোগের নাম উল্লেখ করা হলো-

১. চর্মরোগ- Dermatitis

২. শ্বাসতন্ত্রের রোগসমূহ - Respiratory illnesses

৩. পেশী ও হাড়ের ব্যাধিসমূহ - Musculoskeletal disorders (MSD9)

৪. শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস Hearing loss

৫. ক্যানসার- Cancer

৬. সে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাসমূহ - Streas and mental health disorders 

৭. সংক্রামক রোগসমূহ - Infectious diseases

চিত্র: ১.২ পেশাগত রোগসমূহ

পেশাগত রোগের কারণসমূহ

কর্মরত অবস্থায় একজন শ্রমিক বা কর্মচারি সাধারণত ৩টি কারণে অসুস্থতায় ভুগতে পারে-

১. কর্মস্থলের পরিবেশ সংক্রান্ত: বিশৃঙ্খলা, উচ্চ শব্দ, উচ্চ তাপমাত্রা, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের অভাব, পর্যাপ্ত আলোর অভাব এবং ধূলাবালির কারণে একজন কর্মী নানারকম রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যেমন- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, প্রবণশক্তি কমে যাওয়া, ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ, যক্ষা, শ্বাসনালীর প্রদাহ ইত্যাদি।

২. কর্মীসংক্রান্ত: প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব, নির্দেশিকা সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাব, বয়স ও দৈহিক সামর্থের অভাবেও নানা রকম অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।

৩. মানসিক অস্যুস্থতা: কর্মক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সহকর্মীদের আচার-আচরণ, বৈষম্য, চাকুরির অনিশ্চয়তা, অতিরিক্ত কাজের চাপ, দীর্ঘ কর্মঘন্টা, অকারণে হয়রানি, নির্যাতন ইত্যাদি একজন কর্মীর উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে যা তার কর্মক্ষেত্রের উৎসাহ ও উদ্দীপনা কমিয়ে দেয় এবং কাজের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ধীরে ধীরে একসময় সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

১.২.২ স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শ্রম বিধিসমূহ

প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং কোনো নর্দমা, পয়ঃবর্জ্য বা অন্য কোনো জঞ্জাল হতে সৃষ্ট দুষিত বাষ্প হতে মুক্ত রাখতে হবে এবং বিশেষ করে-

(ক) প্রতিষ্ঠানের মেঝে, কর্মকক্ষ, সিঁড়ি, যাতায়াতের পথ হতে প্রতিদিন ঝাড়ু দিয়ে ময়লা ও আবর্জনা ঢাকনা দেওয়া বাক্সে অপসারণ করতে হবে, যাতে উক্ত আবর্জনা দুর্গন্ধ বা জীবাণু বিস্তার করতে না পারে। ধাতব পদার্থ, উৎকট গন্ধময় আবর্জনা, রাসায়নিক আবর্জনা ও মেডিকেল আবর্জনা ভিন্ন ভিন্ন বক্সে প্রতিদিন নিয়মিত অপসারণ করতে হবে।

(খ) প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রের মেঝে সপ্তাহে অন্তত একদিন অবস্থাভেদে এবং কাজের প্রকৃতি ভেদে পানি দ্বারা ধুতে হবে এবং প্রয়োজনে ধোয়ার কাজে জীবানু নাশক ব্যবহার করতে হবে। অবস্থাভেদে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে ভিজা কাপড় দ্বারা মেঝে ধুয়ে দিতে হবে।

(গ) যেক্ষেত্রে উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে কোনো মেঝে এমনভাবে ভিজে যায় যে, এর জন্য পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।

• উক্ত মেঝে অবশ্যই অভেদ্য পদার্থ (Impervious Material) দ্বারা নির্মিত হতে হবে। 

• উক্ত মেঝের নির্মাণকৌশল ঢালুবিশিষ্ট এবং উপযুক্ত নিষ্কাশন নালার মাধ্যমে কারখানার মূল নর্দমা ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে, যাতে নিষ্কাশিত পানি অথবা কোনো তরল পদার্থ মেঝেতে জমে থাকতে না পারে।

(ঘ) প্রতিষ্ঠানের সকল অভ্যন্তরীণ দেওয়াল, পার্টিশন, ছাদ, সিঁড়ি, যাতায়াতপথ-

• রং অথবা বার্নিশ করা থাকলে, প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার 

• পুনরায় রং বা বার্নিশ করতে হবে। রং অথবা বার্নিশ করা এবং 

• বহির্ভাগ মসৃণ হলে, প্রতি চৌদ্দ মাসে অন্তত একবার পানি, ব্রাশ ও ডিটারজেন্ট দ্বারা ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।

অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতি চৌদ্দ মাসে অন্তত একবার চুনকাম বা রং করতে হবে।

 (ঙ) উক্ত কার্যক্রমের যাবতীয় রেকর্ডসমূহ নির্ধারিত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।

১.২.৩ কর্মক্ষেত্রে বায়ু চলাচল ও তাপমাত্রা

প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মকক্ষে নির্মল বায়ু প্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা রাখতে হবে।

উক্তরূপ প্রত্যেক কক্ষে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে এবং প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মকক্ষে নির্মল বায়ু প্রবাহের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিপরীতমুখী জানালার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, যেখানে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা রাখা সম্ভব নয় সেখানে নিষ্কাশন পাখা (Exhaust Fan) স্থাপন করা যাবে, যাতে সেখানে কর্মীগণ মোটামুটি আরামে কাজ করতে পারেন, যাতে কর্মীগণের স্বাস্থ্যহানি রোধ হয়। আরও শর্ত থাকে যে, কর্মক্ষেত্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকলে বায়ুচলা চলের উক্ত ব্যবস্থার প্রয়োজন হবেনা। প্রত্যেক কর্মকক্ষে অন্তত একটি তাপ পরিমাপকযন্ত্র (থার্মোমিটার) সচল অবস্থায় রাখতে হবে এবং ইহা যথাযথ মান সম্পন্ন হতে হবে এবং কর্মকক্ষের দেয়ালের দৃশ্যমান স্থানে ইহা স্থাপন করতে হবে। প্রয়োজনে কক্ষের দেওয়াল এবং ছাদ এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে উক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পায় এবং যতদূর সম্ভব কম থাকে।

১.২.৪ কর্মীর সংখ্যা

• প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকক্ষে কর্মরত শ্রমিকগণের স্বাস্থ্যহানি হয় এই প্রকার অতিরিক্ত কর্মী এক সাথে করা যাবে না।

• প্রত্যেক কর্মকক্ষে কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য অন্তত ৯.৫ কিউবিক মিটার পরিমাণ জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে (কোনো ঘরের উচ্চতা মেঝে হতে ৪.২৫ মিটারের অধিক হলে এটি বিবেচনায় আনা হবেনা)। 

• যদি প্রধান পরিদর্শক লিখিত আদেশ দ্বারা কোনো মালিককে অনুরোধ করে তাহলে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কর্মকক্ষে সর্বোচ্চ কতজন লোক কাজ করতে পারবেন, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা একটি নোটিশ বোর্ডে দিতে হবে।

প্রধান পরিদর্শক লিখিত আদেশ দ্বারা কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকক্ষকে অনুমতি দিতে পারবেন, যদি তিনি এইমর্মে সন্তুষ্ট হন যে, তাতে কর্মরত শ্রমিকগণের স্বাস্থ্যের প্রয়োজনে এই বিধান মানার প্রয়োজন নেই।

১.২.৫ আলোর ব্যবস্থা

• কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক অংশে, যেখানে শ্রমিকগণ কাজ করে বা যাতায়াত করেন, যথেষ্ট, স্বাভাবিক,

• কৃত্রিম বা উভয়বিধ আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।

• প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের কর্মকক্ষ আলোকিত করার জন্য ব্যবহৃত সকল কাঁচের জানালা এবং ছাদে বসানো

• জানালা সমূহের উভয়পার্শ্ব পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে- কোনো স্বচ্ছ পদার্থ বা বাতি হতে বিচ্ছুরিত বা প্রতিফলিত আলোকচ্ছটা অথবা

• কোনো শ্রমিকের চোখের উপর চাপ পড়তে পারে বা তার দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকতে পারে, এরূপ কোনো ছায়াসৃষ্টি, প্রতিরোধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে।

১.২.৬ খাবার পানির ব্যবস্থা

• প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল শ্রমিকের পান করার জন্য কোনো সুবিধাজনক স্থানে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করতে হবে।

• প্রত্যেক পানি সরবরাহের স্থানকে বাংলায় 'পান করার পানি' কথাগুলি স্পষ্টভাবে লিখে চিহ্নিত করতে হবে।

• যেসমস্ত প্রতিষ্ঠানে সাধারণত দুইশত পঞ্চাশ জন বা ততোধিক শ্রমিক নিযুক্ত থাকেন, সে সকল প্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালে পান করার পানি ঠান্ডা করে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

• মাত্রাতিরিক্ত তাপ উদ্রেককারী যন্ত্রের সন্নিকটে কাজ করার কারণে শ্রমিকের শরীরে পানি শূন্যতার সৃষ্টি হলে, ঐ সকল শ্রমিকের জন্য ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপির ব্যবস্থা করতে হবে।

১.২.৭ শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষ

প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকগণ কাজের সময়ে যাহাতে সহজে ব্যবহার করতে পারেন এরূপ সুবিধাজনক স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বাস্থ্য সম্মত শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষের ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

• উক্ত শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষ পুরুষ এবং মহিলা কর্মীগণের জন্য স্বতন্ত্রভাবে ব্যবস্থা করতে হবে।

শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষ পুরুষ এবং মহিলা কর্মীগণের জন্য স্বতন্ত্রভাবে ব্যবস্থা করতে হবে।

উক্ত শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষ কারখানা মালিকের নিজ খরচে জীবাণুনাশক ও পরিষ্কারক ব্যবহারের

মাধ্যমে সবসময় পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হবে।

১.২.৮ আবর্জনা বক্স

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে প্রতি ১০০ জন শ্রমিকের জন্য :

একটি করে পৃথক আবর্জনা ও পিকদানি বক্স রাখতে হবে;

পিকদানি বালুভর্তি থাকতে হবে এবং এর উপরে ব্লিচিং পাউডার থাকতে হবে;

আবর্জনা বক্স প্লাস্টিকের তৈরি ও ঢাকনাসহ থাকতে হবে, এতে প্রতিদিন জমাকৃত আবর্জনা অপসারণ করতে হবে এবং উভয়ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে;

উক্ত পিকদানি ও আবর্জনা বক্স কর্মকক্ষের দরজার সন্নিকটে স্থাপন করতে হবে এবং এটি এমনভাবে

স্থাপন করতে হবে যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় ও ময়লা আবর্জনা চোখে না পড়ে;

কোনো ব্যক্তি কোনো প্রতিষ্ঠানে পিকদানি ও আবর্জনা বক্স ব্যতীত অন্য কোথাও থুথু বা আবর্জনা ফেলবেনা এবং এই বিধান সম্পর্কে নোটিস কারখানার ভিতরে উপযুক্ত স্থানে সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমনভাবে টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে।

১.৩ পেশাগত নিরাপত্তা (Occupational Safety )

যে কোনো প্রকার প্রতিকুল অবস্থাকে প্রতিরোধের মাধ্যমে নিরাপদের সাথে কাজ করাকে অকুপেশনাল সেফটি বা পেশাগত নিরাপত্তা বলে।

পেশাগত নিরাপত্তা তিন প্রকার, যথা-

১. ব্যক্তিগত নিরাপত্তা;

২. যন্ত্রপাতি ও মেশিনের নিরাপত্তা;

৩. কারখানার নিরাপত্তা।

১.৩.১ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা

দুর্ঘটনার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যে সকল সাবধানতা মেনে চলা হয়, তাই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা শিল্প-কারখানায় কর্মীগণ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে।

১.৩.২ যন্ত্রপাতি ও মেশিনের নিরাপত্তা

যন্ত্রপাতির কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন না করে কার্য সম্পন্ন করার পর বন্ধ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হয়। অতঃপর সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়, এই কর্মকুশলতাই যন্ত্রপাতি ও মেশিনের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে।

যন্ত্রপাতি ও মেশিনের নিরাপত্তা পদ্ধতি:

• সঠিক নিয়মে মেশিন চালু করা; কাজ শেষে মেশিন অবশ্যই বন্ধ করা;

• কাজের জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা;

• কোনো প্রকার গোলযোগ দেখা দিলে সাথে সাথে মেশিন বন্ধ করা এবং দ্রুত মেরামত করা;

• বৈদ্যুতিক সংযোগসমূহ মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা ইত্যাদি।

১.৩.৩ কারখানার নিরাপত্তা 

সকল প্রকার দুর্ঘটনার হাত হতে ওয়ার্কশপকে রক্ষা করাকে ওয়ার্কশপের নিরাপত্তা বলে। যেমন-

• প্রয়োজনীয় প্রোটেকটিভ ডিভাইস সমেত সকল বৈদ্যুতিক সংযোগ ইনস্যুলেটেড রাখা;

• দাহ্য পদার্থের পাশে ওয়েল্ডিং ও গ্রাইন্ডিং না করা;

• আগুন নিভানোর উপকরণ, পানি, বালু ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখা;

• দৈবক্রমে আগুন লাগলে দ্রুত ফায়ার স্টেশনে খবর দেওয়া; কারখানার অভ্যন্তর ও বাহির সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।

১.৪ ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম

ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সমূহ (Personal Protective Equipment - PPE): কর্মস্থলে কার্যাবস্থায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি হতে কর্মীকে বাঁচানোর জন্য যে সমস্ত সাজ সরঞ্জাম ও পোষাক পরিচ্ছদ ব্যবহার করা হয়, সেগুলিকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা পিপিই বলা হয়। একজন ব্যক্তির কোন অঙ্গ- প্রত্যঙ্গকে সম্ভাব্য ক্ষতি বা দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করা হবে তার ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই) নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করা যায়-

জাইন (Apron )

অতিরিক্ত তাপমাত্রা, খারাপ আবহাওয়া, ছিটকে আসা কোনো রাসায়নিক পদাৰ্থ ৰা খাতৰ খণ্ড, ভয়ানক গতিতে ৰায়ু প্রবাহ, সুচালো কোনো বস্তু শরীরে ঢুকে পড়া এবং ধুলাবালি ইত্যাদি থেকে কারখানার কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য অ্যাপ্রন ব্যবহার করা হয়। অ্যাপ্রন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, যথা- বয়লার স্যুট, রাসায়নিক স্যুট, ডেন্ট, অ্যাগ্র পুরো শরীর ঢাকা স্যুট, জ্যাকেট ইত্যাদি। ওয়ার্কশপে কাজ করার সময় নিয়ম মেনে সঠিক অ্যাপ্রন পরিধান করলে ধূলা, বালি, বিভিন্ন প্রকার লুব্রিক্যান্ট, ধাতব চিপস, আগুনের স্ফুলিঙ্গ ও ভাগ হতে জামা কাপড় ও শরীর সুরক্ষা পায়।

হ্যান্ড গ্লাভস (Hand Gloves ) 

অধিক তাপমাত্রা, সুঁচালো কোনো বন্ধু ভারী কোনো বস্তু, বৈদ্যুতিক শক, রাসায়নিক পদার্থ, চর্ম ক্ষয়কারক ইত্যাদি থেকে হাতকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করা হয়।

সুরক্ষা জুতা (Safety shoes)

ওয়ার্কশপে বা কর্মস্থলে পিচ্ছিল মেঝে, ভিজা মেঝে, ধারালো বস্তু, পড়ে থাকা বস্তু, রাসায়নিক স্পেস এবং অন্যান্য তরল পদার্থ ইত্যাদি থেকে পাও পায়ের পাতাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সুরক্ষা জুতা, সুরক্ষা বুট, লেগিনস্ (মোটা কাপড়ের তৈরি পায়ের আচ্ছাদন), প্যাট (পাতলা আচ্ছাদন) ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সেফটি স্যুজ বা নিরাপদ জুতা ওয়েঙ্কার/কর্মাকে ভারী ধাত্তৰ উত্তপ্ত গলিত ধাতু, ধাঁরানো পড়ন্ত বস্তুর আঘাত থেকে রক্ষা করে। এমনকি, বৈদ্যুতিক শক্‌ থেকেও ওয়েদার বা কর্মীকে রক্ষা করে।

সেফটি মাস্ক (safety Mask) 

ওয়ার্কশপে অনেক সময় ধোঁয়া, বিষাক্ত গ্যাস, দুর্গন্ত ইত্যাদির সৃষ্টি হলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এমন অবস্থায় ওয়ার্কশপে কাজ করতে হলে শ্বাস প্রশ্বাসের নিরাপত্তার জন্য গ্যাস মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। কখনো ৰাভাসে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে অক্সিজেন মাস্ক ও ব্যবহার করা হয়। রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, হাসপাতালে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীগণ তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক ও এন-১৫ মাস্ক পরিধান করে থাকেন।

ইয়ার প্লাগ বা কানের সুরক্ষা উপাদান (Ear plug) 

কর্মক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা ৮৫ ডেসিবল এর অধিক হলে শব্দ দূষণের ফলে কানের ক্ষতি হতে পারে। ওয়ার্কশপে যেকোনো ধরনের উচ্চ মাত্রার শব্দ প্রতিরোধের জন্য ইয়ার নাফ, ইয়ার ডিফেন্ডার, ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করলে শ্রবণযন্ত্র তথা কানের সুরক্ষা হয়।

সেফটি গগলস বা চোখের সুরক্ষা সরঞ্জাম (Safety Goggles) 

ওয়ার্কশপে মেশিন চলাকালীন ছিটকে আসা রাসায়নিক পদার্থ বা ধাতব বস্তু, ধুলোবালি, ক্যাটালিস্ট পাউডার, গ্যাস, বাষ্প এবং রেডিয়েশন, ওয়েল্ডিং এর সময় নির্গত ক্ষতিকর আলোকরশ্মি ইত্যাদি চোখে সরাসরি প্রবেশ করলে চোখের সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চোখের জন্য পিপিই যেমন- নিরাপদ চশমা, পালস, ফেস শি (মুখের ঢাকনা), ওয়েন্ডিং হেলমেট ইত্যাদি পরিধান করে ওয়ার্কশপের কর্মীদের কাজ করতে হবে। ওয়ার্কশপে গ্রাইন্ডিং, ড্রিলিং, টার্নিং, বোরিং, ওয়েন্ডিং ইত্যাদি কাজ করার সময় সেফটি গগলস অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।

হেলমেট বা মাথা সুরক্ষা সরঞ্জাম 

সকল ধরনের হেলমেট আরামদায়ক ও যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা থেকে মাথা রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়। উপর থেকে কোনো বস্তু পড়লে, শক্ত বর আঘাত, ঘূর্ণায়মান বস্তুতে চুল পেঁচিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

১.৪.১ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর নাম দেয়া আছে, ব্যবহার লিখ।

 

১.৪.২ পিপিই ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা:

ওয়ার্কশপে কাজ করার সময় যেকোনো দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য অবশ্যই নিরাপদ পোশাক ও নিরাপদ সরঞ্জামাদি পরিধান করা দরকার। যেমন-

• গ্রাইন্ডিং, মেশিনিং এবং চিপিং করতে নিরাপদ চশমা পরিধান করলে ছিটকে যাওয়া চিপস এর আঘাত থেকে চোখকে রক্ষা করা যায়;

• অ্যাপ্রন পরিধান না করলে অসতর্কতাবশত টিলেঢালা পোশাক কোথাও জড়িয়ে বা পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে;

• লম্বা চুল বেঁধে হেলমেট না পড়লে ঘূর্ণায়মান কোনো যন্ত্রাংশে জড়িয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে;

১.৪.৩ পিপিই নির্বাচন:

ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপাদানগুলো (পিপিই) এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যা প্রতিটি স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পিপিই যেমনটি হওয়া উচিত-

• কাজের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত হতে হবে এবং বিপদের ঝুঁকির উপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে

• ব্যবহারকারীকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদান করবে; স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা বিষয়ে অতিরিক্ত ঝুঁকি সৃষ্টি করে না;

• ব্যবহৃত অন্যান্য পিপিই এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সহজে ব্যবহার যোগ্য ও আরামদায়ক; ব্যবহারকারীর যেকোনো ধরনের মেডিকেল শর্তের বাঁধা বা বিপত্তি ঘটাবে না;

• বাংলাদেশের আদর্শমান অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক হবে ।

• পিপিই নির্বাচনের সময় কর্মীদের ব্যক্তিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সামাজিক নিয়মনীতি, ধর্মীয় সংস্কৃতি এবং স্টাইলকে বিবেচনা করতে হবে।

১.৪.৪ পিপিই এর সঠিক ব্যবহার:

পিপিই ব্যবহারের পূর্বে নিন্মলিখিত বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে হবে- উৎপাদনকারীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপাদানগুলো (পিপিই) ব্যবহৃত হয়

• পিপিই সঠিকভাবে ফিট হয় ;

• কীভাবে এটি ব্যবহৃত হয় তার নির্দেশনার জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়;

• যেখানে পিপিই পরিধান করতে হবে সেখানে অবশ্যই একটি চিহ্ন দিয়ে রাখতে হবে, যেন কর্মীরা খুব সহজেই মনে করে ব্যবহার করতে পারে ;

১.৪.৫ পিপিই ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা :

স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার সম্ভাব্য ক্ষতির বা দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পিপিই ব্যবহার করতে হবে। দূষণ কমানোর জন্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপাদান ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারণ কোনো সতর্কতা বার্তা ছাড়াই এগুলো মাঝে মধ্যে শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়। ঝুঁকির উপযুক্ত নিরাপত্তা প্রদানে

• পিপিই এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে-

• ব্যবহারে আরামদায়ক নাও হতে পারে

• কাজের বাঁধা বা বিপত্তি ঘটাতে পারে

• স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার অন্যান্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে থাকে

• দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহার ব্যয় বহুল হয়

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion