তরঙ্গ ও তরঙ্গ-গতি পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব ধরনের তরঙ্গের ক্ষেত্রে দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। প্রথমত, তরঙ্গ চলনক্ষম আলোড়ন বা আন্দোলন এবং দ্বিতীয়ত তরঙ্গ একস্থান হতে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালন করে। আমরা যে শব্দ শুনি বা আলো দেখি তা তরঙ্গ আকারে উৎস থেকে আমাদের কাছে পৌঁছায়। কাজেই তরঙ্গ প্রকৃতি এবং তরঙ্গ গতি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। এই অধ্যায়ে তরঙ্গের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং শব্দতরঙ্গ আলোচনা করব।
একটি পুকুরের স্থির পানিতে ঢিল ছুড়লে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। ঢিলটি যে বিন্দুতে পানিতে প্রবেশ করে সে বিন্দুকে কেন্দ্র করে পানির উপরিপৃষ্ঠে সারি সারি তরঙ্গ ক্রমবর্ধমান বৃত্তাকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে পানির উপরিতলে একস্থান হতে অন্যস্থানে শক্তির সঞ্চালন ঘটে। পানির উপরে একটি শোলা বা পাটকাঠি থাকলে দেখা যাবে যে শোলা বা কাঠিটি একই স্থানে থেকে উপরে-নিচে উঠানামা করছে। এর অর্থ হল মাধ্যমের কণাগুলো স্থান ত্যাগ করে না, যদি করত তবে শোনা বা কাঠিটি সরে পাড়ে চলে আসত। মাধ্যমের কণাগুলোর মধ্যে সংযুক্তি বলের কারণে এগুলো স্থান ত্যাগ করে না, তবে আন্দোলনের দ্বারা পার্শ্ববর্তী কণাগুলোতে শক্তি সঞ্চালিত হয় এবং পাশের কণাগুলো আন্দোলিত হয়। এভাবে শক্তি তরঙ্গাকারে একস্থান হতে অন্যস্থানে সঞ্চালিত হয়। সুতরাং, তরঙ্গের নিম্নরূপ সংজ্ঞা দেয়া যায় :
যে সব তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয় সেগুলোকে যান্ত্রিক তরঙ্গ বলে। শব্দতরঙ্গ, টানা তারে সৃষ্ট তুরঙ্গ ইত্যাদি যান্ত্রিক তরঙ্গের উদাহরণ।
মাধ্যম ছাড়াও তরঙ্গ সঞ্চালিত হতে পারে। সূর্য থেকে আমরা যে আলো পাই তা কোন মাধ্যম ছাড়াই চলাচল করে। এদেরকে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ বলে। তড়িৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রের পর্যাবৃত্ত গতি পরিবর্তনের ফলে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের উৎপত্তি হয়।