আমাদের চারপাশে প্রতিমূহূর্তে যা ঘটেছে, যেমন শব্দ, আলো চাপ তাপমাত্রা বা অন্য কিছু—সেগুলোকে আমরা কোনো এক ধরনের তথ্য বা উপাত্ত হিসেবে প্রকাশ করি। তাদের মান নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। আমাদের নানা কাজে সেই মানের প্রয়োজন হতে পারে তাই সেই মান আমরা সংরক্ষণ করি, বিশ্লেষণ করি কিংবা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রেরণ করি। উপাত্ত প্ৰক্ৰিয়া করার জন্য আমরা ইলেকট্রনিকস ব্যবহার করতে পারি। নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তিত হতে থাকা এই তথ্য বা উপাত্তকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে পরিবর্তন করা সম্ভব এবং এই ধরনের সিগন্যালকে আমরা বলি অ্যানালগ সিগন্যাল। এই অ্যানালগ সিগন্যালকে যদি সরাসরি কোনো এক ধরনের ইলেকট্রনিকস দিয়ে আমরা প্রক্রিয়া করি তাহলে সেটাকে বলা হয় অ্যানালগ ইলেকট্রনিকস।
নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তিত হতে থাকা তথ্য বা উপাত্তের এই সিগন্যালকে সম্পূর্ণ অন্যভাবে প্রক্রিয়া করা সম্ভব। সেটি করার জন্য একটু পরপর তার মানটি কত বের করে সেটিকে কোনো এক ধরনের সংখ্যায় প্রকাশ করে নিতে হয়। তারপর ধারাবাহিকভাবে এই সংখ্যাটির মানকে সংরক্ষণ করতে হয়। আমরা তখন আমাদের প্রয়োজনমতো এই সংখ্যাগুলো ইলেকট্রনিকস ব্যবহার করে প্রক্রিয়া করতে পারব। যখন আবার সেটিকে তার মুল অ্যানালগ সিগন্যালে পরিবর্তন করতে হয় তখন ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষিত মানের সমান বৈদ্যুতিক সিগন্যাল তৈরি করে নিতে হয়।
আমরা দৈনন্দিন জীবনে দশভিত্তিক দশমিক (Decimal) সংখ্যা ব্যবহার করি। কিন্তু ইলেকট্রনিকসে সংখ্যা প্রকাশ করা হয় বাইনারি সংখ্যা দিয়ে, কারণ তাহলে খুব সহজেই কোনো একটি ভোল্টেজকে 1 এবং শূন্য ভোল্টেজকে ধরে প্রক্রিয়া করা যায়। সিগন্যালের মানকে সংখ্যা বা ডিজিটে প্রকাশ করে ইলেকট্রনিকস করা হয় বলে এই ধরনের ইলেকট্রনিকসকে বলা হয় ডিজিটাল ইলেকট্রনিকস।
ইলেকট্রনিকসের সবচেয়ে বড় অবদান কম্পিউটার। কম্পিউটারে সকল তথ্যের আদান-প্রদান বা তথ্য প্রক্রিয়া হয় ডিজিটাল ইলেকট্রনিকস দিয়ে। ইন্টারনেট বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কেও ডিজিটাল ইলেকট্রনিকস ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। শব্দ ছবি বা ভিডিও ইত্যাদি সিগন্যাল শুরু হয় অ্যানালগ সিগন্যাল হিসেবে এবং ব্যবহারও হয় অ্যানালগ সিগন্যাল হিসেবে কিন্তু সেগুলো ডিজিটাল সিগন্যাল হিসেবে সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকরণ বা প্রেরণ করা হয়। অ্যানালগ সিগন্যালে খুব সহজেই নয়েজ (Noise) প্রবেশ করে সিগন্যালের গুণগত মান নষ্ট করতে পারে। একবার সেটি ডিজিটাল সিগন্যালে পরিবর্তিত করে নিলে সেখানে Noise এত সহজে অনুপ্রবেশ করতে পারে না। কাজেই সিগন্যালের পুণগত মান অবিকৃত থাকে।
ডিজিটাল সিগন্যাল প্রক্রিয়া করার জন্য বিশেষ ধরনের আইসি তৈরি করা হয়। এই আইসিগুলো ধীরে ধীরে অনেক ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছে। অর্থাৎ অনেক কম সময়ে নির্ভুলভাবে অনেক বেশি পরিমাণ ডিজিটাল সিগন্যালে প্রক্রিয়া করতে পারে। কাজেই যতই দিন যাচ্ছে ডিজিটাল প্রক্রিয়া করার বিষয়টি ততই সহজ হয়ে যাচ্ছে এবং এটি বলা বাহুল্য নয় যে আমাদের চারপাশের জগংটি একটি ডিজিটাল জগতে রূপান্তরিত হচ্ছে।