এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ও এর ব্যবহার

এসএসসি(ভোকেশনাল) - মেকানিক্যাল ড্রাফটিং উইথ ক্যাড-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

কম্পিউটার ভাইরাসঃ-

ভাইরাস হল এমন একটি প্রোগ্রাম যা একটি ধ্বংসকারী/সন্ত্রাসী হিসেবে নিজেকে অন্যান্য প্রোগ্রামের সাথে মিলিয়ে দিয়ে এর সংক্রমণ ঘটায় এবং পর্যায়ক্রমে এর ধ্বংসযজ্ঞের বিস্তৃতির নিশ্চয়তা বিধান করে। প্রকারান্তে এ সংক্রমিত প্রোগ্রামগুলো ভাইরাসের হয়ে অন্যান্য অসংক্রমিত প্রোগ্রামগুলোতে সংক্রমণ এবং ধ্বংস ঘটায়। যার ফলে প্রথমোক্ত প্রোগ্রামগুলো মূল ভাইরাসের হয়ে অন্যান্য ভালো প্রোগ্রামগুলোতে সংক্রমণ ঘটায়।

ভাইরাস নামকরণঃ

কম্পিউটারের পরিভাষায় (VIRUS) শব্দটিকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘ভাইটাল ইনফরমেশন রিসোর্সেস আন্ডার সিজ (Vital Information Resources Under Siege), - অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্রখ্যাত গবেষক ফ্রেডরিক কোহেন বা সংক্ষেপে ফ্রেড কোহেন ভাইরাস নামকরণ করেন।

ভাইরাস কম্পিউটারের কি ক্ষতি করেঃ

বর্তমান যুগে মানুষের সব কাজকর্ম কমপিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। কমপিউটারের বহুবিধ ব্যবহার মানব সভ্যতাকে গতিশীল করে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যাচ্ছে। যে প্রযুক্তি ধরে এত সফলতা সে প্রযুক্তিই যদি হঠাৎ করে ক্ষতি করতে শুরু করে তাহলে এর ক্ষতিটাও যে কত ভয়াবহ হবে তা চিন্তা-ভাবনা করা দুরূহ।

নিচে সংক্ষেপে ভাইরাসের ক্ষতিকারক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

* ডিস্কে সংরক্ষিত অতি মূল্যবান তথ্য হারিয়ে যেতে পারে।
* কমপিউটার চলতে চলতে হঠাৎ স্থির (Hang) হয়ে কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় কমপিউটার পুনরায় চালু করতে হয় বিধায় সেভ না করা অনেক মূল্যবান তথ্য হারিয়ে যায়।

* গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল ব্যবহৃত অনেক প্রোগ্রামের এক্সিকিউটেবল ফাইলকে আক্রমন করে ধংস করে দিতে পারে। ফলে প্রোগ্রামটি রান করবে না।
* প্রতিদ্বন্দ্বী বিরাট কোন কোম্পানির কম্পিউটারাইজড সিস্টেম অনুপ্রবেশ করে গোপনীয় অনেক তথ্য পাচার করে কোম্পানির বিরাট ক্ষতিসাধন করতে পারে।
* কোন কোন ভাইরাস হার্ডডিস্ক ফরম্যাট করে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রোগ্রাম ও তথ্য নষ্ট করে দিতে পারে ।
* ভাইরাস তার বংশবৃদ্ধির কার্যক্রম করতে গিয়ে কমপিউটারের গতিকে মন্থর করে দেয়।
* কিছু ভাইরাস হার্ডডিস্কের বুট সেক্টর আক্রান্ত করে। আক্রান্ত হার্ডডিস্ক ফরম্যাট করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না
* কিছু কিছু ভাইরাস সিপিইউ এর ব্যাবহার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়।

কমপিউটার ভাইরাসের লক্ষ্যবস্তুঃ

ভাইরাস বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সমিশন মিডিয়া বা হোস্টকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে থাকে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখিত কিছু হলঃ-

১। যেমন- মাইক্রোসফট উইন্ডোজে পোর্টেবল এক্সিকিউটেবল ফাইল সমূহ এবং লিনাক্স ফাইলসমূহ।
২। পেন ড্রাইভ এবং হার্ডডিস্ক পার্টিশনের ভলিয়ম বুট রেকর্ডসমূহ।
৩। অ্যাপ্লিকেশনে নির্দিষ্ট ফাইল সমূহ নষ্ট করে দিতে পারে।
৪। ইন্টারনেটে ব্যবহৃত আইডি ও পাসওয়ার্ড।

কমপিউটার ভাইরাস ছড়ানোর মাধ্যম সমূহঃ

০১। বাইরের হার্ড ডিস্ক, সিডি, ডিভিডি, ফ্ল্যাশ ডিস্ক (পেন ড্রাইভ) বা অন্য কোনো ডেটা সংরক্ষক মাধ্যমে (মেমোরি স্টিক) প্রোগ্রাম বা ডেটা আদান-প্রদানের সময় কম্পিউটার ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে।
০২। ইন্টারনেট ও ই-মেইলের মাধ্যমে।
ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণঃ- একটি কমপিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলোঃ-
০১। কমপিউটার চালু হতে আগের চেয়ে বেশি সময় নেয়া

0২। হঠাৎ করে ফাইল উধাও হয়ে যাওয়া অথবা নাম পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া | 

০৩। ফাইলের কিছু অংশে অবাঞ্ছিত চিহ্ন বা বার্তা দেখা । 

০৪। পর্দায় অদ্ভুত বা হাস্যকর বার্তা বা চিত্র পরিলক্ষিত হওয়া । 

০৫। অস্বাভাবিক এরর সংকেত প্রদর্শিত হওয়া । 

০৬। ড্রাইভের নাম পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া । 

০৭। পর্দায় অপ্রত্যাশিত শব্দ শোনা বা ছবি দেখতে পাওয়া।

এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামঃ

প্রতিদিন সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য নতুন নতুন ভাইরাস সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ভাইরাসের উপর গবেষণা করে এর প্রতিষেধক অর্থাৎ এন্টিভাইরাসও তৈরি হচ্ছে। ভাইরাসের সাথে তাল মিলিয়ে এন্টিভাইরাস তৈরি করা অনেক সময়, মেধা ও অর্থের প্রয়োজন। তাই বৃহৎ কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া আপডেটেড এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম তৈরি করা সম্ভব হয় না।

বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় কয়েকটি এন্টিভাইরাস হলোঃ-

0১। এভিজি
0২। আভাস্ত
০৩। আভিরা
০৪। ক্যাসপারেস্কি
০৫। ম্যাকাফির ভাইরাস স্ক্যান
০৬। নর্টন এন্টিভাইরাস
০৭। আইবিএম এন্টিভাইরাস
০৮। পিসি সিলিন
০৯। ইসেট নড 

১০। বিটডিফেন্ডার

ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়াঃ-

ভাইরাসে আক্রান্ত হলে হয়ত ভাইরাস নিধন করে পিসিটিকে পুনরায় কার্যপযোগী করে তুলতে পারা যায় । কিন্তু তাতে করে মূল্যবান, অনেক সময় নষ্ট ছাড়াও প্রয়োজনীয় অতি মূল্যবান প্রোগ্রাম বা তথ্য ও হারিয়ে যেতে পারে। ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে অর্থাৎ প্রতিরোধ সব সময় প্রতিকারের চেয়ে উত্তম। তাই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিকারের চেয়ে আক্রান্ত না হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কমপিউটার ভাইরাস থেকে পিসিকে সুরক্ষিত রাখা খুব কঠিন কাজ নয়। সাধারণ কিছু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং পূর্ব-সতর্কতা প্রিয় কম্পিউটারটিকে ভাইরাস নামক ভয়ানক শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করবে। নিম্নে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো- 

০১। সব সময় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের আপডেটেড ভার্সন ব্যবহার করা। ০২। ইন্টারনেটের সংযোগ থাকলে প্রতিদিন এন্টিভাইরাসকে আপডেট করা। তাতে প্রতিদিন যেসব ভাইরাস তৈরি হচ্ছে সেগুলোকে প্রতিরোধ করা যায়। ০৩। মাঝে মাঝে এন্টিভাইরাস দিয়ে ফুল পিসি স্ক্যান করা। ০৪। ভাইরাস স্ক্যানিং করে ইন্টারনেট থেকে ফাইল ডাউনলোড করা। ০৫। ই-মেইলের অপরিচিত এটাচমেন্ট ফাইল খোলার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। ০৬। অযথা অপ্রয়োজনীয় ফ্রি সফটওয়্যার কিংবা ডেমো সফটওয়্যার ব্যবহার না করা।

৫.১) এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করা। 

সঠিক নিয়মে কম্পিউটারে এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল দেবার কৌশল নিয়ে চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপিত করা হলো। আমরা অ্যাভাট এন্টি-ভাইরাস সফট্ওয়্যার ইন্সটল দেবার কৌশল দেখবো। তবে সকল এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার একই পদ্ধতিতে ইন্সটল দেয়া হয়ে থাকে।
প্রথমে যে ফোল্ডারে এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যারটি রয়েছে সে ফোল্ডারটি ওপেন করতে হবে। তারপরে সেটআপ ফাইলে ডাবল ক্লিক করতে হবে। তারপরে নিম্নের চিত্রের মতন কিছু উইন্ডো আসবে, সেখান থেকে চিহ্নিত টিক মার্ক স্থানে ক্লিক করতে হবে।

এখান থেকে “I Agree লেখা আসে তবে "I Agree" বাটনে ক্লিক করে পরে Install বাটনে ক্লিক করলে এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যারটি ইন্সটল হয়ে যাবে। এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া। এখানে উল্লেখ্য যে, যেহেতু সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট হতে থাকে সেহেতু আমাদের দেখানো নিয়মের সাথে আপডেট নিয়মের সামান্য তারতম্য হতে পারে।


ভবে, কম্পিউটারের Windows 10 বা তার পরবর্তী সকল ভার্সনে একটি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার স্টি ইন অবস্থায় থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের নতুন করে কোন এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল করার কোন প্রয়োজন নেই।

৫.২) আপডেট এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে যেকোন ফাইল, ফোল্ডার এবং ড্রাইভ স্ক্যান করার কৌশল: যে ফাইল, ফোম্বার বা ড্রাইভ স্ক্যান করার দরকার তার উপর মাউসের রাইট বাটন ক্লিক করতে হবে। তাহলে Scan With Avast কথাটি লেখা আসবে। সেখানে ক্লিক করার সাথে সাথে অটোমেটিক ভাবে উক্ত ফাইল, ফোল্ডার বা ড্রাইভ ক্যান হতে থাকবে।

ফুল কম্পিউটার স্ক্যান করার নিয়মঃ

এজন্য প্রথমে কম্পিউটারের All Program এ যেতে হবে। সেখান থেকে আমাদের ইন্সটল করা এভাস্ট এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি ওপেন করতে হবে। তাহলে নিম্নের চিত্রের মতন একটি স্ক্রিন ওপেন হবে।

এর পরে এখান থেকে “RUN SMART SCAN” এই বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। তাহলে অটোমেটিক ভাবে সম্পূর্ন কম্পিউটার স্ক্যান হয়ে নিম্নের একটি স্কিন প্রদর্শিত হবে। নিম্নের স্কিন আসার সাথে সাথে বুঝতে হবে কম্পিউটার এখন ভাইরাস মুক্ত

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion