ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার পরিমাপ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা | NCTB BOOK

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সফলভাবে পরিচালনার জন্য ঝুঁকি পরিমাপ করা অত্যাবশ্যকীয়। প্রত্যাশিত আয় থেকে প্রকৃত আয়ের বিচ্যুতি থেকেই ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। প্রত্যাশিত আয় থেকে প্রকৃত আয়ের বিচ্যুতি যত বেশি হয়, ঝুঁকি তত বাড়ে, আয়ের বিচ্যুতি যত কম ঝুঁকি তত কমে। এ কারণে প্রত্যাশিত আয় এবং প্রকৃত আয়ের বিচ্যুতি বা  প্রত্যাশিত ফলাফল এবং প্রকৃত ফলাফলের বিচ্যুতি থেকে ঝুঁকি পরিমাপ করা হয়।

ঝুঁকি পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। প্রয়োজন বা অবস্থাভেদে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় । এই পর্যায়ে আমরা ঝুঁকি পরিমাপের জন্য আদর্শ বিচ্যুতির ব্যবহার দেখব।

আদর্শ বিচ্যুতি : আদর্শ বিচ্যুতি ব্যবহার করে অতীতে অর্জিত আয়ের বিচ্যুতি থেকে যেমন ঝুঁকি পরিমাপ করা হয়, তেমনি ভবিষ্যতে প্রত্যাশিত আয়ের ঝুঁকি ও পরিমাপ করা হয়। এটি একটি পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি। নিচে আদর্শ বিস্তৃতির সূত্র দেয়া হলো :

আদর্শ বিচ্যুতি =‌‌‌√((Σ(আয় হার - গড় হার)^২)/n -১)

এখানে, Σ(আয় হার-গড় হার)^২ = অতীতে অর্জিত আয় হার থেকে গড় আয় হারের পার্থক্যের বর্গের সমষ্টি

n= বছরের সংখ্যা

উদাহরণ : নিচের ছকে, একটি প্রকল্পের ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই পাঁচ বছরের আয় দেয়া আছে। আমরা এর আয় ও ঝুঁকি গণনা করব।

বছর আয়(%) গড় থেকে ব্যবধান (আয়-গড়) ব্যবধানের বর্গ
২০০৭ ২০ (২০-১৩)=৭ (৭×৭)= ৪৯
২০০৮ (৫-১৩)=৮ (৮×৮)=৬৪
২০০৯ -৫ (-৫-১৩)= -১৮ (১৮×১৮)=
২০১০ ১৫ (১৫-১৩)=২ (২×২)=৪
২০১১ ৩০ (৩০-১৩)=১৭ (১৭×১৭)
যোগফল= ৬৫ ব্যবধানে বর্গের যোগফল= ৭৩০
গড় আয় ৬৫/৫=১৩% ব্যবধানের বর্গের গড়=৭৩০/(n-১)

১৮২.৫

আদর্শ বিচ্যুতি =√ ১৮২.৫

= ১৩.৫%

প্রথমে পাঁচ বছরের আয় যোগ করে ৫ দিয়ে ভাগ করলে আমরা গত পাঁচ বছরের গড় আয় পাব। টেবিলে এটা দেখা যাচ্ছে ১৩%। এবার ঝুঁকি গণনার জন্য আদর্শ বিচ্যুতি গণনা করতে হবে। প্রথমে আমরা প্রতিবছরের আয় থেকে গড় আয় বা ১৩%-এর ব্যবধান বের করব। এর পরের কলামে এটাকে বর্গ করতে হবে। এবার উক্ত বর্গসমূহের যোগফল বের হলো ৭৩০। একে (n-1) বা (৫-১) বা ৪ দিয়ে ভাগ করতে হবে। যত বছরের আয় তা থেকে সর্বদাই ১ কম দিয়ে ভাগ করতে হবে। ভাগফলকে বর্গমূল করলে আমরা আদর্শ বিচ্যুতি পাব। উদাহরণে এটা ১৩.৫%। সুতরাং ২০০৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত আয়ের ভিত্তিতে আমাদের গড় আয় ১৩% আর ঝুঁকির পরিমাণ ১৩.৫% । এই আয় ও ঝুঁকি ব্যবহার করে আমরা ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিতে পারব। যেমন: এর বিকল্প একটা প্রকল্পে যদি আমরা ১৩% আয় পাই এবং ১৫% আদর্শ বিচ্যুতি বা ঝুঁকি পাই, তবে সেটা থেকে আমাদের প্রথম প্রকল্প বেশি গ্রহণযোগ্য। কারণ একই আয়ে কম ঝুঁকি বেশি গ্রহণযোগ্য। আবার অন্য একটি বিকল্প প্রকল্পে যদি সমান ঝুঁকি হয় কিন্তু লাভের গড় কম হয়, তবে সেটা থেকেও আমাদের মূল প্রকল্প বেশি গ্রহণযোগ্য। কারণ সমান ঝুঁকিতে অধিক লাভ বেশি গ্রহণযোগ্য।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ নীতি : সাধারণত আদর্শ বিচ্যুতির বড় মান অধিক ঝুঁকি এবং আদর্শ বিচ্যুতির ছোট মান কম ঝুঁকি নির্দেশ করে। সমান আয়ে কম ঝুঁকি বেশি গ্রহণযোগ্য এবং সমান ঝুঁকিতে অধিক লাভ বেশি গ্রহণযোগ্য ।

Content updated By

আরও দেখুন...

Promotion