গ্যালভানোমিটার একটি সুবেদী যন্ত্র। গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে বেশি পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ চালনা করা হলে এটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এর স্প্রিং ছিঁড়ে যেতে বা পুড়ে যেতে পারে। তাই গ্যালভানোমিটারকে রক্ষা করার জন্য এর সাথে সমান্তরাল সংযোগে একটি অল্পমানের রোধ সংযুক্ত করে একটি বিকল্প পথের সৃষ্টি করা হয়। সমান্তরাল সংযোগে লাগানো এই রোধকেই শান্ট বলা হয়। এর ফলে মূল প্রবাহ দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় এবং শার্টের রোধ কম হওয়ায় বেশি পরিমাণ প্রবাহ এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং অল্প পরিমাণ প্রবাহ গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় । এতে গ্যালভানোমিটার নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।
আবার গ্যালভানোমিটার বর্তনীতে শ্রেণি সংযোগে যুক্ত করতে হয় তাই এর রোধ বর্তনীতে কার্যকর হয়, ফলে বর্তনীর প্রবাহের মান পরিবর্তিত হতে পারে। এর জন্যে গ্যালভানোমিটারের কুণ্ডলীর সাথে সমান্তরাল সংযোগে একটি অল্প মানের রোধ সংযুক্ত করা হয়। ফলে যন্ত্রের তুল্য রোধ খুব কম হয়, তাই গ্যালভানোমিটার বর্তনীতে যুক্ত করলে বর্তনীর প্রবাহ কার্যত অপরিবর্তিত থাকে। অধিক পরিমাণ প্রবাহ গিয়ে যাতে গ্যালভানোমিটারকে নষ্ট করতে না পারে তার জন্য গ্যালভানোমিটারের সাথে সমান্তরাল সংযোগে যে অল্পমানের রোধ সংযুক্ত করা হয় তাকে শান্ট বলে।
বর্তনীর তুল্য রোধ কমানোর জন্যে বর্তনীতে অল্প মানের যে রোধ সমান্তরালে সংযুক্ত করা হয় তাকেই শান্ট বলা হয়।
ধরা যাক, গ্যালভানোমিটারের রোধ G। এর সাথে A ও B বিন্দুতে সমান্তরাল সংযোগে S মানের রোধ শান্ট হিসেবে যোগ করা হয়েছে। বর্তনীর মূল প্রবাহ I এসে A বিন্দুতে Ig ও ls শাখায় বিভক্ত হয়ে যথাক্রমে গ্যালভানোমিটার ও শার্টের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে [চিত্র ৩.১৩]। অতএব
l = lg + Is
A ও B বিন্দুর বিভব যথাক্রমে VA ও VB হলে
আমরা জানি,
গ্যালভানোমিটারের ক্ষেত্রে, VA - VB = IgG
এবং শান্টের ক্ষেত্রে, VA - VB = ls S
এই দুই সমীকরণের তুলনা থেকে পাওয়া যায়,
IsS = lg G
বা,
শান্টের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা যায় অ্যামিটারে। প্রবাহ পরিমাপের যন্ত্র হচ্ছে অ্যামিটার।
যে যন্ত্রের সাহায্যে বর্তনীর তড়িৎপ্রবাহ সরাসরি অ্যাম্পিয়ার এককে পরিমাপ করা যায় তাকে অ্যামিটার বলে। একে বর্তনীর সাথে শ্রেণি সমবায়ে যুক্ত করতে হয়।
এই যন্ত্রে একটি চলকুগুলী জাতীয় গ্যালভানোমিটার থাকে। কুগুলীর বিক্ষেপ নির্ণয়ের জন্য কুণ্ডলী তলের সমকোণে একটি সূচক বা কাঁটা লাগানো থাকে। সূচকটি অ্যাম্পিয়ার এককে দাগকাটা একটি স্কেলের উপরে ঘুরতে পারে। কুণ্ডলীর সাথে সমান্তরাল সমবায়ে একটি অল্পমানের রোধ লাগানো থাকে [চিত্র ৩.১৪]।
যেহেতু অ্যামিটারটিকে বর্তনীতে শ্রেণি সমন্বয়ে যুক্ত করতে হয় তাই এর রোধ বর্তনীতে কার্যকর হয়, ফলে বর্তনীর প্রবাহের মান পরিবর্তিত হতে পারে। এর জন্য গ্যালভানোমিটারের কুণ্ডলীর সাথে সমান্তরাল সমবায়ে একটি অল্পমানের রোধের তার শান্ট হিসেবে যুক্ত করা হয়। এতে যন্ত্রের তুল্য রোধ খুব কম হয়, ফলে অ্যামিটার বর্তনীতে যুক্ত করলে বর্তনীতে প্রবাহের কার্যত কোনো পরিবর্তন হয় না এবং প্রবাহের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র কুণ্ডলীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং যন্ত্রটি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।
ধরা যাক, যে গ্যালভানোমিটার দ্বারা অ্যামিটার তৈরি করা হয়েছে তার রোধ G এবং গ্যালভানোমিটার সর্বাধিক যে প্রবাহ নিতে পারে তার মান Ig । একে সর্বাধিক l প্রবাহ পরিমাপের উপযোগী অ্যামিটারে পরিণত করতে হলে এর সাথে যদি S রোধের শান্ট ব্যবহার করতে হয়, তবে
:- ... (3.31)
কুণ্ডলীর ভেতর দিয়ে প্রবাহ চললে সূচকটি স্কেলের উপর ঘুরে যায়। প্রবাহ যত বেশি হবে সূচকের বিক্ষেপও তত বেশি হবে। একটি আদর্শ যন্ত্রের সাথে তুলনা করে এর স্কেল অ্যাম্পিয়ারে দাগ কাটা হয়। অ্যামিটারকে একটি স্বল্প রোধের শান্ট যুক্ত অ্যাম্পিয়ারে দাগাঙ্কিত গ্যালভানোমিটার হিসেবে ধরা যেতে পারে।
অ্যামিটারের পাল্লা বৃদ্ধি : একটি অ্যামিটার সর্বাধিক যে পরিমাণ তড়িৎপ্রবাহ পরিমাপ করতে পারে তাকে তার পাল্লা বলে। একটি অল্প পাল্লার অ্যামিটারকে সহজেই বেশি পাল্লার অ্যামিটারে পরিণত করা যায় অর্থাৎ কম প্রবাহ পরিমাপে সক্ষম অ্যামিটারকে বেশি প্রবাহ পরিমাপে সক্ষম যন্ত্রে পরিণত করা হয় । অ্যামিটারটি সর্বোচ্চ যে তড়িৎপ্রবাহ পরিমাপ করতে পারে তার ” গুণ প্রবাহ ঐ অ্যামিটার দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব। এর জন্য অ্যামিটারের সাথে সমান্তরাল সমন্বয়ে একটি অত্যন্ত অল্পমাত্রার রোধ যুক্ত করতে হয় অর্থাৎ একটি শান্ট ব্যবহার করতে হয় [চিত্র ৩-১৫]।
ধরা যাক, অ্যামিটারটির অভ্যন্তরীণ রোধলে S রোধ লাগাতে হবে। তাহলে,
আরও দেখুন...