থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া নিম্নের কোন রোগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য?
ডেঙ্গু (প্রকৃত উচ্চরণ ডেঙ্গী) একটি ভাইরাসঘটিত মারাত্মক জ্বররোগ । বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে এ জুরকে ডেঙ্গু জ্বর নামে অভিহিত করা হয়। এ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের নাম ফ্লাভিভাইরাস (thagavirus)। সাধারণভাবে এটি ডেঙ্গু ভাইরাস নামেও পরিচিত । এ ভাইরাসে নিউক্লিক এসিড হিসোবে RNA থাকে। মানুষ এ ভাইরাসের পোষক (host), আর বাহক বা ভেক্টর (vector) হচ্ছে Aedes aegypti ও Aedes albopictus নামক মশকী। এ ভাইরাসের বাহক উষ্ণমন্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে বেশি বিস্তৃত। প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে প্রায় ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়।
রোগের লক্ষণ : সংক্রমণের ৪-৬ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ দেখা দেয় এবং ১০ দিন পর্যন্ত থাকে। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে- (হঠাৎ প্রচন্ড জ্বর; তীব্র মাথাব্যথা; চোখের পেছনে ব্যথা; কোমর, মাংশপেশি ও জয়েন্টে তীব্র ব্যথা; কখনও রাখা এত তীব্র হয় যে, রোগী ব্যথায় কেঁদে ফেলে। এজন্য একে হাড় ভাঙ্গা জন্ম (bone breaking disease) বলে । বমি হওয়া বা বমি বমিভাব; চামড়ায় ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি (rash); মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছালে রক্তক্ষরণ (bleeding) হয়
মাঝে মাঝে রোগের উপসর্গ মৃদুভাবে প্রকাশ পায় এবং ফ্লু বা অন্য ভাইরাস জ্বর হিসেবে ভুল করা হয়। যে সমস্ত শিশু বা পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি আগে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় নাই তাদের ক্ষেত্রে আগে আক্রান্ত রোগীর চেয়ে রোগের উপসর্গ হালকাভাবে প্রকাশ পায়। রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে রোগির রক্তক্ষরণ, লসিকানালি ও রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দাঁতের মাড়ি, মুখগহ্বরের প্রাচীর ও নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, সংবহনতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। পরবর্তীতে রক্তক্ষরণ বেড়ে গেলে রোগী শকে চলে যায় এবং মৃত্যু ঘটে। একে বলে ডেঙ্গু শক সিনড্রম (Dengue Shock Syndrome).
রোগের সঞ্চারণ : স্ত্রী' এডিস মশা (Aedes aegypti, A. albopictus) এ ভাইরাসের প্রাথমিক বাহক। এই মশার ডিম উৎপাদনের জন্য মানুষের রক্তের প্রোটিন প্রয়োজন, তাই এরা মানুষকে কামড়ায়। তাই এ মশার কামড়ে ভাইরাস মানবদেহে সঞ্চারিত হয়। ভাইরাস প্রবেশের ৪-১০ দিন পর আক্রান্ত মশা তার বাকী জীবনে এ ভাইরাসের সঞ্চারণ ঘটাতে পারে। সংক্রমিত মানুষ এ ভাইরাসের প্রধান বাহক এবং মানুষের মধ্যেই এদের বৃদ্ধি ঘটে থাকে এবং অসংক্রমিত মশার জন্য ভাইরাসের উৎস বা ভান্ডার হিসেবে কাজ করে।
প্রতিকারের উপায় : ডেঙ্গু জ্বরের রোগীতে রক্ত ক্ষরণের সম্ভাবনা থাকায় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষুধ মারাত্মক পরিণতি দেখা দিতে পারে। তাই ব্যাথা ও জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিতে হবে। রক্তের সাম্যতা রক্ষার জন্য প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন-এর প্রয়োজন পড়ে। রোগীকে প্রচুর পানি, তরল খাবার ও ফলের রস খাওয়াতে হবে । মাথায় পানি দেয়া জরুরি। তাছাড়া ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর স্পঞ্জ করে দিতে হবে। তবে রোগীর দেহে লক্ষণগুলো প্রকাশের সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিরোধের উপায় : যেহেতু এডিস মশার মাধ্যমে রোগটি বাহিত হয় তাই মশার আবাসস্থল ধ্বংস করা এরোগ প্রতিরোধের প্রধান পদক্ষেপ। পানি জয়ে এমন ভাঙ্গা পাত্র, টায়ার, ফুলের টব প্রভৃতিতে যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণত ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ এডিস মশা হতে ৭ দিন সময় লাগে। এজন্য ফ্রিজের তলদেশে, এয়ারকুলারের নিচে এবং ফুলের টব বা ফুলদানির পানি ৭ দিনের মধ্যে অন্তত একবার পরিষ্কার করা উচিত। দিনের বেলায় এ ধরনের মশা কামড়ায় বলে মশা দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। বাড়ি ঘরের আশেপাশে জঞ্জাল মুক্ত করে পরিচ্ছন্ন রাখা একান্ত প্রয়োজন। পূর্ণাঙ্গ মশা নিধনের জন্য নিয়মিত পতঙ্গনাশক স্প্রে করে রোগ প্রতিরোধ করা যায়। সম্প্রতি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিতে পতঙ্গনাশক ছাড়াই ডেঙ্গু মশা নিধনের ব্যবস্থা আবিষ্কৃত হয়েছে ।