কোনটি ঈশ্বরের অসীম ভালোবাসার প্রকাশ?
প্রথম অধ্যায়
মুক্তির পথে আহ্বান
ঈশ্বরের অসীম ভলোবাসার প্রকাশ হলো মানুষ । মানুষকে তিনি শ্রেষ্ঠ করেই সৃষ্টি করেছেন । শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির জন্য ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ দান হলো স্বাধীনতা। মানুষ কিন্তু তার স্বাধীনতার অপব্যবহার করে ঈশ্বরের অবাধ্য হলো ও পাপ করল। সে পাপের দাস হয়ে উঠল। পাপের কারণে সে পরাধীন হয়ে পড়ল । তারপরও ঈশ্বরের কাছ থেকে মানুষ যে প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস লাভ করেছিল তা হলো মুক্তি বা পরিত্রাণ। ঈশ্বর চেয়েছেন মানুষ তাঁর একমাত্র পুত্র যীশুকে মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করে ও তার নিজের স্বাধীনতা ব্যবহার করে মুক্তি লাভ করুক। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই মুক্তিলাভের একটি গভীর আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
• মুক্তির সাধারণ ধারণা ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারব;
যুক্ত মানুষ হওয়ার উপায়সমূহ বর্ণনা করতে পারব;
• মুক্তি সম্পর্কে খ্রিষ্টের শিক্ষাসমূহ বিশ্লেষণ করে নিজেকে মূল্যায়ন ও নিজের কর্তব্য বর্ণনা করতে পারব; • আদর্শ খ্রিষ্টভক্তের মুক্ত জীবনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব এবং
• মুক্ত-স্বাধীন জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ হবো ।
মুক্তির সাধারণ ধারণা ও বৈশিষ্ট্য
মুক্ত থাকা বা স্বাধীন থাকা মানুষের সহজাত প্রবণতা। সবাই স্বাধীন থাকতে ভালোবাসে। ইতিহাসে আমরা দেখেছি, একসময় আমাদের দেশ পরাধীন ছিল, আমরা দীর্ঘদিন ব্রিটিশ ও পরে পশ্চিম পাকিস্তানীদের অধীন ছিলাম । কিন্তু আমাদের দেশের মুক্তিকামী মানুষ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহিদের বিনিময়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। আমাদের স্বাধীনতা দিবস হলো ২৬শে মার্চ। এই দিনটিকে আমরা জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করি। পবিত্র বাইবেবেল থেকে আমরা জেনেছি যে, ইস্রায়েল জাতি মিশরে বন্দী ছিল। মোশীর মাধ্যমে ঈশ্বর তাদের উদ্ধার করেছেন। মোশীর নেতৃত্বে ইস্রায়েল জাতি প্রতিশ্রুত কানান দেশে গিয়েছে। এই ধারণা থেকে আমরা খানিকটা বুঝতে পারি যে স্বাধীনতার অর্থ হলো পরের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজের অধীন থাকা। কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ কেবলমাত্র ভৌগোলিকভাবে অন্যের অধীনতা থেকে মুক্ত থাকাই যথেষ্ট নয়। স্বাধীনতার অর্থ আরও গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে ব্যক্তির বাহ্যিক, আধ্যাত্মিক, জাগতিক ও পারলৌকিক সব ধরনের যুক্তির কথাই বলা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাসের জীবনে স্বাধীনতা বা মুক্তি বলতে আমরা বুঝি সত্যের সাধনায় সফল হওয়া, পাপকে জয় করে ঈশ্বর ও মানুষকে ভালোবাসার শক্তি অর্জন করা।
আমাদের খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের জীবনে আমরা প্রথম থেকেই জেনে এসেছি যে, আদি পিতামাতা আদম ও হবার পাপের ফলে আমরা পাপের অধীন হয়েছিলাম। তখন থেকেই আমরা মুক্তিলাভের অভয়বাণী শুনেছি। ঈশ্বর আমাদের অভয় দিয়েছিলেন একজন মুক্তিদাতাকে পাঠিয়ে তিনি আমাদের পাপমুক্ত করবেন। যীশু এই পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্ম নিলেন। আমাদের পাপের জন্য অসহ্য যন্ত্রণাভোগ করে
ক্রুশীয় মৃত্যুকে বরণ করলেন ও তৃতীয় দিনে পুনরুত্থিত হয়ে আমাদের মুক্ত করলেন। তিনি আমাদের বলেছেন “তাহলেই তো সত্যকে তোমরা জানতে পারবে আর সত্য তখন তোমাদের স্বাধীন করে দেবে” (যোহন ৮:৩২)।
অনেক সময় আমরা মনে করতে পারি বা করেও থাকি যে স্বাধীনতা বা মুক্তির অর্থ হচ্ছে, আমার যা-খুশি তাই করতে পারা, কিংবা যে কোন ধরনের স্বেচ্ছাচারী আচরণ করতে পারা । প্রকৃত স্বাধীনতা কিন্তু কখনো তা নয় । বাংলা ভাষায় স্বাধীনতা শব্দটির মধ্যেই কিন্তু এর অর্থ নিহিত আছে। স্বাধীনতা মানে হলো স্ব-অধীনতা বা নিজের অধীনতা । নিজের অধীনতা বলতে আমরা বুঝি নিজেকে দমন করার ক্ষমতা । অর্থাৎ যা-কিছু মন্দ বা খারাপ এবং যা-কিছু অন্যের জন্য কোনরকম কল্যাণ বয়ে আনে না, তা কখনো স্বাধীনতা হতে পারে না । নিচে স্বাধীনতার বিষয়ে আরও গভীরভাবে আলোচনা করা হলো:
১. কোনো কিছু থেকে স্বাধীনতা: যা কিছু একজন ব্যক্তিকে বাধ্য করে তা থেকে স্বাধীনতা বা মুক্তি । প্রথমে দেখা যাক কোনো কিছু থেকে স্বাধীনতার অর্থ কী। মানুষকে অনেক কিছুই তার অগ্রযাত্রার পথে বাধাগ্রস্ত করে । এর মধ্যে থাকে তার অভ্যন্তরীণ বাধা এবং বাহ্যিক বাধা। অভ্যন্তরীণ দুইটি বাধা হলো (ক) তার অজ্ঞতা এবং (খ) বিশৃঙ্খল আবেগানুভূতি । বাহ্যিক বাধাগুলো হলো (ক) দৈহিক এবং (খ) সামাজিক বাধা ।
অভ্যন্তরীণ বাধাগুলো
ক. অজ্ঞতাঃ যে কোনো বিষয়ে যথাযথ বুদ্ধিগত জ্ঞান না থাকাটাই হলো অজ্ঞতা। কোনো কোনো জ্ঞান আছে যেগুলো আমাদের না থাকলেও চলে আবার কোনো কোনো জ্ঞান আছে যেগুলো না থাকলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয় ।
খ. বিশৃঙ্খল আবেগানুভূতি: যেমন ভয়-ভীতি, খারাপ অভ্যাস, রাগ, অহংকার, হিংসা ইত্যাদি ।
অভ্যন্তরীণ বাধাগুলো থেকে মুক্তিলাভ দরকার হয় সবার আগে । তা না হলে অন্যান্য স্বাধীনতা উপভোগ করা
যায় না ।
বাহ্যিক বাধাগুলো
আগেই আমরা দেখেছি যে বাহ্যিক বাধাগুলো হচ্ছে (ক) দৈহিক এবং (খ) সামাজিক বাধা ।
(ক) দৈহিক বাধা হলো দৈহিক নানা রকম ত্রুটি-বিচ্যূতি বা খুঁত । দৈহিক বাধা মানুষ কখনো কখনো বংশগতভাবে লাভ করে অর্থাৎ শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে। আবার কখনো কখনো জন্মের পরে, অসুস্থতার কারণে বা দুর্ঘটনায় এসব ঘটে থাকে ।
(খ) সামাজিক বাধাগুলো হলো দারিদ্র্য, সামাজিক নিয়মকানুন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইত্যাদি ।
২. ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার জন্য স্বাধীনতা: ব্যক্তি হিসেবে পূর্ণভাবে বিকশিত হওয়া অর্থাৎ ঈশ্বরের দেওয়া সম্ভাবনাগুলোকে বাড়িয়ে তোলা এবং ঈশ্বরের সন্তান হওয়া । ৩. ঐশসন্তানের স্বাধীনতা: দীক্ষাস্নানের মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরের সন্তান হয়েছি। পাপের দাসত্ব ত্যাগ
করে আমরা স্বাধীন মানুষ হয়েছি ।
ক. স্বাধীনতা সবসময় কোনো কিছুর সাথে সম্পর্কযুক্ত। স্বাধীনতার অর্থ যা-খুশি তা-ই করা যায় না।
এমন আচরণ করতে হবে যা দিয়ে অন্যের ক্ষতি সাধিত না হয় ।
খ. স্বাধীনতা একজন পূর্ণ ব্যক্তি হওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত । ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে আমরা সৃষ্ট । সেই কথা মনে রেখে ঈশ্বর যেরকম ব্যক্তি হতে আমাদের আহ্বান করছেন, সেরকম ব্যক্তি হওয়া ।
গ. স্বাধীনতা খাঁটি ব্যক্তি হওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত । ঈশ্বর যেরকম খাঁটি ও পবিত্র, সেরকম হওয়া ।
ঘ. স্বাধীনতা আমাদের মুক্তির পথে পরিচালিত করে ।
ঙ. স্বাধীনতা একটি প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়া অনুসারে আমাদের কাজ করে যেতে হবে ।
চ. স্বাধীনতার লক্ষ্য সব সময় মূল্যবোধের দিকে । কল্যাণসাধন করা হলো স্বাধীনতার লক্ষ্য ।
ছ. স্বাধীনতার পথে কোনো বাধা থাকতে পারে না, সব বাধা অতিক্রম করে সে এগিয়ে চলে ।
জ. স্বাধীনতা পবিত্র আত্মার দান । আমরা শুধু নিজের শক্তিতে বা ইচ্ছায় স্বাধীন হয়ে উঠতে পারি না ।
এটি পবিত্র আত্মার কাজ ও দান । তিনিই আমাদের স্বাধীন করে তোলেন ।
ঝ. স্বাধীনতা সর্বজনীন । স্বাধীনতা কোনো শ্রেণি বা গোষ্ঠীর ক্ষুদ্র গণ্ডির ঊর্ধ্বে। তাকে কেউ নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখতে পারে না । স্বাধীনতা ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির মৌলিক অধিকার । সমস্ত স্বার্থ ও সংকীর্ণতাকে অতিক্রম করে মুক্তি বা স্বাধীনতা ।
কাজ: একক : মুক্ত মানুষের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর ।
মুক্ত মানুষ হওয়ার উপায়
সৃষ্টির শুরুতে ঈশ্বর মানুষকে স্বাধীন করেই সৃষ্টি করেছিলেন । তাকে তিনি দিয়েছিলেন স্বাধীন ইচ্ছা । কিন্তু মানুষ তার স্বাধীনতার অপব্যবহার করে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছে ও পাপ করেছে। সে হয়ে গেছে পরাধীন কারণ সে হয়েছে পাপের অধীন । কিন্তু তারপরও সে স্বাধীন হয়ে ওঠার জন্য সর্বদা চেষ্টা করছে । মানুষ কী করে স্বাধীন হতে পারে সে বিষয়ে আমরা এখন আলোচনা করবো ।
১. আত্মজ্ঞান: আত্মজ্ঞান বলতে আমরা বুঝি নিজের সম্পর্কে জানা । প্রত্যেক মানুষ একেক জন একক
বা অনন্য ব্যক্তি । পৃথিবীতে কেউ কারো মতো নয় । শুধুমাত্র চেহারা বা বাহ্যিক দিকেই এই ভিন্নতা নয় বরং তার আচার-ব্যবহার বা ব্যক্তিত্বে সবকিছুর মধ্যেই এই ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় । তাছাড়াও আমরা প্রত্যেকেই দোষগুণ মিলিয়েই মানুষ । আমরা যখন নিজেদের এসব বিষয় ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পারি তখন আমরা অনেকটা মুক্ত মানুষ হই । দোষগুলোকে কমানোর ও গুণগুলোকে বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করতে করতে আমরা যা আছি তা-ই হয়ে উঠি । এভাবে আমরা যা আছি তাই হয়ে উঠতে পারলে ক্রমান্বয়ে স্বাধীন মানুষ হয়ে উঠি ।
গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন, 'নিজেকে জানো' । নিজেকে জানতে পারলে আমাদের মুখোশ খুলে যায়, এতে আমাদের আসল রূপ প্রকাশ পায় । আমরা তখন নিজের সম্বন্ধে একটা সত্যকে গ্রহণ করি । এভাবে মানুষ হিসেবে আমরা স্বাধীন হয়ে উঠি । যীশু বলেছেন, সত্যই তোমাকে স্বাধীন করে তুলবে ।
২. ভয়মুক্ত বা নির্ভয় হওয়া: স্বাধীনতার প্রধান বাধা হলো ভয়। ভয়ের কারণে মানুষ মিথ্যা বলে বা নিজের আসল আমি-কে প্রকাশ করতে পারে না। এতে সে স্বাধীন হতে পারে না— মিথ্যার কাছে পরাধীন হয়ে থাকে । মিথ্যা ও পাপ থেকে মানুষের ভয় জন্মে । আমরা দেখেছি এদেন বাগানে আদম ও হবা পাপ করার পর ঈশ্বরকে দেখে ভয় পেয়েছেন, কারণ তাঁরা শয়তানের অধীনস্থ হয়ে নিজের স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছিলেন । কাজেই স্বাধীন হবার জন্য আমাদের হতে হবে নির্ভীক ও পবিত্র । কারণ পাপের পথে বিচরণ করে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে । পবিত্র বাইবেলে আমরা অনেক জায়গায় দেখতে পাই ঈশ্বর বলেছেন: “ভয় কোরো না” । ভয় থেকে পুরোপুরি মুক্ত করার জন্য ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠালেন । পুত্র ঈশ্বরের মধ্য দিয়ে, পবিত্র আত্মার সহায়তায় আমরা ভয়মুক্ত হলাম ।
৩. ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখা: ঈশ্বর নিজেই আমাদের স্বাধীনতা দান করেছেন। এটি পবিত্র আত্মার একটি অনুগ্রহ দান । অনেক সময় আমরা চেষ্টা করেও স্বাধীন হতে পারি না । কিন্তু ঈশ্বর নিজেই তা আমাদের দান করেন । তাই তাঁর উপর আমাদের আস্থা রাখতে হয় । আমাদের জীবনে ঈশ্বরের উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকলে আমরা অনেক স্বাধীন হয়ে উঠি । পবিত্র আত্মা আমাদের স্বাধীন করে তোলেন ।
৪. মানুষ ও সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ: ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলো মানুষ । তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের জন্য করেছেন বিচিত্র সৃষ্টি। চারিদিকে তাকালে আমরা এই অপূর্ব সৃষ্টি দেখতে পাই । মানুষ ও বিশ্বসৃষ্টিকে ভালোবেসে আমরা ধীরে ধীরে স্বাধীন হতে থাকি। কারণ মানুষকে ভালোবাসলে আমরা কখনো কারো অকল্যাণ কামনা করতে পারি না । সৃষ্টিকে ভালোবাসলে আমরা সৃষ্টির সুন্দর দিকটি উপলব্ধি করতে পারি । মানুষ ও সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমরা যখন সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের সাধনা করি, আমরা তখন নিজের অজান্তেই স্বাধীন বা মুক্ত হই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন: ‘যুক্ত কর হে সবার সঙ্গে মুক্ত কর হে বন্ধু ।' সবার সাথে যুক্ত হয়েই আমরা মুক্ত হয়ে উঠি ।
৫. দায়িত্বশীলতা ও পরিপক্বতা: দায়িত্বশীল ও পরিপক্ক আচরণ মানুষকে স্বাধীন করে তোলে । আমরা আমাদের প্রত্যেকটি আচরণের জন্য দায়বদ্ধ । আমাদের প্রতিটি হ্যাঁ বা না হলো দায়িত্বশীল হ্যাঁ বা না । সঠিক সিদ্ধান্ত ও আচরণের মধ্য দিয়ে আমরা মুক্ত মানুষ হয়ে উঠি । দায়িত্বশীল ও পরিপক্ক মানুষ নিজের ভুলত্রুটিগুলোও সহজেই স্বীকার ও গ্রহণ করতে পারে বা এগুলোকে জীবনের অংশ বলে মনে করতে পারে । ভুল করতে পারাটাও স্বাধীনতার অংশ । কারণ ভুল করে এবং ভুল সংশোধন করে মানুষ শুদ্ধি লাভের সুযোগ পায় । এভাবে সে দিনে দিনে স্বাধীন হয়ে ওঠে ।
৬. আত্মবিশ্বাস: আত্মবিশ্বাস থেকে স্বাধীনতা জন্ম নেয় । আত্মবিশ্বাসী মানুষ জানে কোন পথে সে অগ্রসর হচ্ছে । তার কৃতকর্ম সম্পর্কেও সে সর্বদা সচেতন থাকে। তার আত্মচেতনা তাকে সঠিক পথে পরিচালনা করে । তার মধ্যে সত্যবোধও জাগ্রত থাকে । এই সত্যই তাকে মুক্ত করে ।
৭. ভালো-মন্দের বিচারবোধ: ভালোমন্দ বিচারবোধকে ঘিরে তৈরি হয় মানুষের বিবেক। সঠিক বিবেকবোধ দ্বারা পরিচালিত মানুষ হলো পবিত্র মানুষ । পবিত্র আত্মা গড়ে তোলে প্রকৃত বিবেক। পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত মানুষই সত্যিকারভাবে স্বাধীন বা মুক্ত মানুষ ।
কাজ: ১. স্বাধীন বা মুক্ত মানুষ হয়ে ওঠার জন্য তোমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাগুলো খুঁজে বের কর ও দলে সহভাগিতা কর । কাজ: ২. দলীয় : “ঈশ্বর মানুষের মুক্ত স্বাধীন জীবন চান' উক্তিটির পক্ষে যুক্তি দিয়ে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর।
খ্রিষ্ট ও মুক্তি
পাপে পরিপূর্ণ জগৎ ও মানুষের জীবন দেখে মানুষের জন্য ঈশ্বর চিন্তিত হলেন। এদেন বাগানে মানুষ ঈশ্বরের অবাধ্য হয়ে পাপ করার পর তিনি মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি একজন মুক্তিদাতাকে পাঠিয়ে মানুষকে মুক্ত করবেন । তিনি মানুষকে দিতে চাইলেন পরিপুর্ণ মুক্ত ও আনন্দময় জীবন । তাই তিনি তাঁর একমাত্র পুত্র যীশু খ্রিষ্টকে এই পৃথিবীতে পাঠালেন । তিনি হলেন আমাদের মুক্তিদাতা বা পরিত্রাতা । মানবজাতির ইতিহাসে যীশু হলেন মুক্তির প্রতীক । মানুষ হিসেবে তিনি তেত্রিশ বছর বেঁচে ছিলেন । তাঁর জীবনকালে তাঁর বিভিন্ন কথা, কাজ ও ঘটনার মধ্যে আমরা তাঁর স্বাধীন ও মুক্ত জীবনের পরিচয় পাই ৷
যীশুর কথা ও কাজ: যীশু যা-কিছু করেছেন ও বলেছেন তার মধ্যে ছিল অধিকার ও স্বাধীনতা । তিনি রোগীদের রোগ নিরাময় করেছেন, অপদূত দূর করেছেন, ফরিসি ও বিধান পণ্ডিতদের তিরস্কার করেছেন । যে নিয়ম দ্বারা মানুষের কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না তিনি নির্দ্বিধায় সেই নিয়মকে ঊপেক্ষা করেছেন । বিশ্রামবারের প্রচলিত নিয়ম লঙ্ঘন করে তিনি রোগীদের সুস্থ করেছেন ।
• যীশুর বিচার ও মৃত্যুদণ্ড: সত্যের পক্ষে সাক্ষী দিতে যীশু এই পৃথিবীতে এসেছিলেন । ভণ্ড ধর্মীয় নেতা ও রাষ্ট্রনেতাদের সামনে তিনি কখনো ভয় পাননি । বরং তাদের ভণ্ডামীগুলো তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন । এই কারণে তারা তাঁকে ঈশ্বরনিন্দুক বলে আখ্যা দিয়েছেন । তাঁকে বিচারে দোষী সাব্যস্ত করেছেন । মৃত্যুদণ্ড ছিল তাঁর জন্য অবধারিত শাস্তি । সত্যের জন্য তিনি মৃত্যুকেও মেনে নিয়েছেন । সত্য তাঁকে স্বাধীন করে তুলল । স্বাধীনভাবেই তিনি মেনে নিলেন প্রহসনের মতো বিচার ও মৃত্যুদণ্ড ।
• প্রাণ বিসর্জন: যীশুর স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো ক্রুশমৃত্যুকে বরণ করে নেওয়া। মৃত্যুই তাঁকে
মহিমান্বিত করে তুলল । তিনি নিজেই বলেছেন, বন্ধুর জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার মতো বড় ভালোবাসা আর নেই । পুনরুত্থান: যীশু স্বাধীনভাবে পিতার ইচ্ছাকে গ্রহণ করে যন্ত্রণাময় মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন বলে পিতা তাঁকে পুনরুত্থিত করলেন । মৃত্যুকে জয় করে তৃতীয় দিনে পুনরুত্থিত হয়ে যীশু তাঁর
স্বাধীনতার শ্রেষ্ঠ প্রমাণ দিলেন । মৃত্যুকে জয় করার মধ্য দিয়ে তিনি সমস্ত সীমা অতিক্রম করলেন ।
• সর্বজনীন হয়ে ওঠা: যীশু এই পৃথিবীতে এসেছিলেন সব মানুষের জন্য । ধর্ম, বর্ণ, ধনী, গরিব, পাপী, সাধু, নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, ইহুদি ও বিজাতি নির্বিশেষে সবাইকে তিনি ভালোবেসেছেন । তিনি নিজে ইহুদি হয়েও সবার সাথে অবাধে মেলামেশা করেছেন । নিজের প্রচলিত প্রথা ও গণ্ডি অতিক্রম করেছেন । এটা তাঁর স্বাধীন জীবনেরই বহিপ্রকাশ ।
ভালোবাসা ও সেবার নিয়ম প্রচলন: মানুষের মুক্তির জন্য যীশুর সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো পরস্পরকে ভালোবাসা ও সেবা করা । শেষ ভোজের সময় শিষ্যদের পা ধুয়ে দিয়ে তিনি এই শিক্ষা আমাদের সবার জন্য রেখে গেছেন। ভালোবেসে ও সেবা করে তিনি নিজেও স্বাধীনতা প্রকাশ করেছেন এবং আমাদের স্বাধীনতার পথ নির্দেশ দিয়েছেন ।
ঈশ্বরের প্রথম স্বাধীন সন্তান হলেন যীশু : যীশুর সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা হলো ঈশ্বর হয়েও মানুষ হওয়া । যীশু হলেন ঈশ্বরের একমাত্র স্বাধীন সন্তান, যিনি পিতার ভালোবাসা নিজ জীবনে বুঝেছিলেন এবং সবাইকে ঐশ সন্তান হয়ে ঈশ্বরকে পিতা বলে ডাকতে শিখিয়েছেন । এই স্বাধীনতা যীশু ছাড়া আর কারো নেই ।
যুগ যুগ ধরে মানব ইতিহাসে যীশুর পরিচয় হলো মুক্তিদাতা যীশু । যীশুকে গ্রহণ করে আমরা মুক্ত মানুষ
হয়ে উঠি । যীশু হলেন আমাদের জীবনাদর্শ ও গুরু ।
| কাজ: যীশুর শিক্ষার কোন বিষয়গুলো তোমাকে মুক্ত মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করে, তা দলে সহভাগিতা কর ।
খ্রিষ্টভক্ত ও মুক্তি
খ্রিষ্টীয় জীবনের প্রথম আহ্বান হলো মুক্তি বা পরিত্রাণ লাভ করা । তাই আমরা খ্রিষ্টভক্তের জীবনে মুক্তির অর্থ গভীরভাবে বুঝতে চাই । খ্রিষ্টভক্তের কাছে মুক্তির প্রথম অর্থ হলো যীশু খ্রিষ্টকে মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করা, বিশ্বাস করা, তাঁর শিক্ষা অনুসারে জীবন যাপন করা । ব্যক্তিগত জীবনে যীশুকে প্রভু বলে স্বীকার করা । খ্রিষ্টকে বিশ্বাস করে আমরা হয়ে উঠি খ্রিষ্টভক্ত এবং খ্রিষ্টের নির্দেশিত পথে চলে আমরা লাভ করি মুক্তি । খ্রিষ্টকে বিশ্বাস করে আমরা সব ধরনের মুক্তি লাভ করি । তিনি এই পৃথিবীতে এসেছিলেন যেন আমরা জীবন পাই এবং তা পরিপূর্ণভাবেই পাই । তাঁর প্রচার জীবনের শুরুতে আমরা তাঁর কণ্ঠে শুনতে পাই:
“প্রভুর আত্মিক প্রেরণা আমার ওপর নিত্য অধিষ্ঠিত
কারণ প্রভু আমাকে অভিষিক্ত করেছেন ।
তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন দীন দরিদ্রের কাছে মঙ্গলবার্তা প্রচার করতে, বন্দীর কাছে মুক্তি আর অন্ধের কাছে নবদৃষ্টি লাভের কথা ঘোষণা করতে,
পদদলিত মানুষকে মুক্ত করে দিতে
এবং প্রভুর অনুগ্রহের বর্ষকাল ঘোষণা করতে” (লুক ৪:১৮-১৯)।
এই বাণী থেকেই আমরা যীশুর মুক্তিকাজের এই সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাই, তিনি কীভাবে মানুষকে সব ধরনের দুর্দশা থেকে মুক্ত করতে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। নিচে খ্রিষ্টভক্তদের জীবনের সার্বিক মুক্তি সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো ।
১. শারীরিক মুক্তি বা নিরাময়তা: যীশু এই পৃথিবীতে এসেছিলেন মানুষকে জীবন দিতে, শারীরিক রোগ- যন্ত্রণা বা দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্ত করতে । তিনি পিতার ভালোবাসা সবার কাছে প্রকাশ করতে চেয়েছেন । তিনি তাঁর মুখের কথায় মানুষকে নানারকম রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত করেছেন । তিনি পঙ্গুকে হাঁটার ক্ষমতা, দৃষ্টিহীনকে দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীকে বাক ও শ্রবণ শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন । তিনি মানুষকে নানা রোগ থেকে নিরাময় করে শারীরিক মুক্তি দিয়েছেন। সমাজে উপেক্ষিত ও অবহেলিত কুষ্ঠরোগীকে তিনি নিরাময় করে সুস্থ ও সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন । তারা লাভ করেছে মুক্তি । নিরাময়তা ও মুক্তিলাভের পর তারা হয়ে উঠেছে খ্রিষ্টবিশ্বাসী ।
২. আবেগিক মুক্তি: মানুষ নানারকম আত্মদ্বন্দ্ব, ভয়, হিংসা, অহংকার, স্বার্থপরতার বেড়াজালে আটকে গিয়েছিল । মানুষের মনের দ্বন্দ্ব নিরসন করে, তার মনের ভয়ভীতি, হিংসা, অহংকার, লোভলালসা ও স্বার্থপরতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে তিনি মানুষকে স্বাধীন ও আনন্দময় জীবন দান করতে চেয়েছেন । মানুষের মন থেকে পাপকালিমা মুছে দিতে চেয়েছেন । যারা তাঁকে বিশ্বাস করে তারা সেই স্বাধীন ও আনন্দময় জীবন লাভ করে ।
৩. মানসিক মুক্তি : খ্রিষ্ট নিজেই মুক্ত চিন্তার মানুষ ছিলেন । তিনি স্বাধীনভাবে তাঁর চিন্তা, ধারণা, মতামত প্রকাশ করেছেন । আমরা বলতে পারি এর জন্য ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করেছিল । কারণ তিনি যা সত্য বলে জানতেন ও বিশ্বাস করতেন তাই প্রকাশ্যে বলতেন। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসও তাঁর স্বাধীন চিন্তার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। তারপরও তিনি সত্যভ্রষ্ট হননি । যীশু চান আমরাও যেন মুক্তচিন্তার মানুষ হয়ে উঠি । চিন্তা চেতনার মধ্যে সেই মুক্ত মানুষের রূপ প্রতিফলিত করি । আমাদের দেশেও ভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বুদ্ধিজীবী মুক্তবুদ্ধির চর্চার কারণে প্রাণ দিয়েছিলেন ।
৪. আধ্যাত্মিক মুক্তি: মানুষের অন্তর বা আত্মা হলো মুক্তির ভিত্তি। অর্থাৎ আধ্যাত্মিক মুক্তিলাভ করলে মানুষ লাভ করে প্রশান্তি । খ্রিষ্ট নিজেই আমাদের এই প্রশান্তি ও মুক্তির জন্য আহ্বান করেন । তিনি বলেন, “ওহে পরিশ্রান্ত, ওহে ভারাক্রান্ত, আমার কাছে এসো, আমি তোমাকে দিব প্রাণের আরাম ।”
৫. সামাজিক মুক্তি: একজন খ্রিষ্টভক্ত সামাজিক মুক্তি কামনা করে । যীশু এসেছিলেন পদদলিত মানুষকে উন্নীত করতে, সামজিকভাবে যারা উপেক্ষিত, নিগৃহীত তাদের উপরে তুলে ধরতে অর্থাৎ মর্যাদার স্থানে উন্নীত করতে । তিনি এসেছিলেন সমাজের বঞ্চিত, শোষিত, অত্যাচারিত, নির্যাতিতদের পক্ষ নিতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং সামাজিক ন্যায্যতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে । একজন খ্রিষ্টভক্ত সামাজিক ন্যায্যতার মাধ্যমে মুক্তি ও স্বাধীনতা লাভ করে ।
৬. অর্থনৈতিক মুক্তি: যীশু এই পৃথিবীতে এসেছিলেন দীন দরিদ্রদের কাছে মঙ্গলবার্তা প্রচার করতে । দরিদ্র ও ক্ষমতাহীনদের পক্ষ নিয়ে তিনি কাজ করেছেন । ক্ষমতা ও অর্থলোভী মানুষদের তিনি ধিক্কার দিয়ে কথা বলেছেন । ধনী লোক ও গরিব লাজারের গল্প বলে মানুষের জীবনের মুক্তির প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছেন । বর্তমানেও খ্রিষ্টভক্তরা অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করে, দারিদ্র্য বিমোচন করে, সমাজের
দরিদ্র মানুষের মুক্তি আনয়ন ও স্বাধীন জীবন কামনা করে ।
সার্বিক মুক্তিলাভের মধ্য দিয়ে একজন খ্রিষ্টভক্ত ঈশ্বরকে লাভ করার বিষয়টিকে পরম প্রাপ্তি বলে স্বীকার করে । সে লাভ করতে চায় অনন্ত জীবন এবং ঐশরাজ্য । ধনী যুবক যীশুকে প্রশ্ন করেছিল: “সদগুরু, অনন্ত জীবন পেতে হলে আমাকে কী করতে হবে?” যীশু তাকে উত্তর দিয়েছিলেন, তোমার যা কিছু আছে তা বিক্রি করে গরিবদের কাছে বিলিয়ে দাও আর আমাকে অনুসরণ কর। ঐশরাজ্যকে তিনি মূল্যবান মুক্তার সাথে তুলনা করেছেন । এটির সন্ধান পাবার পর এক ধনীলোক তার সব বিক্রি করে সেই জমিটা কিনে নিলেন যেখানে সেই মূল্যবান মুক্তাটা ছিল । খ্রিষ্টীয় স্বাধীনতা হলো ঈশ্বরকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করে জাগতিকভাবে নিরাসক্ত জীবন যাপন করা । সত্য তাকে স্বাধীন করে তোলে । একজন খ্রিষ্টভক্ত যখন এই পর্যায়ের স্বাধীনতা অর্জন করে তখন সে তার নিজের জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে অন্যের সেবা করে। মুক্ত মানুষ অন্যের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়ে আনন্দ লাভ করে । তখনই তাঁর জীবন পূর্ণ হয়ে ওঠে
কাজঃ একক : একজন খ্রিষ্টভক্ত হিসেবে কোন কোন দিকে তুমি মুক্ত হতে চাও? এই মুক্ত জীবন কীভাবে সম্ভব তা ব্যক্তিগতভাবে লেখ ও দলে সহভাগিতা কর ।
অনুশীলনী
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. অভ্যন্তরীণ বাধা কয়টি ?
ক. দুইটি
খ. তিনটি
গ. চারটি
ঘ. পাঁচটি
২. যীশু পৃথিবীতে এসেছিলেন কেন ?
ক. যেন আমরা খাদ্য পাই
খ. যেন জীবন পাই
গ. নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য
ঘ. সেবা দেওয়ার জন্য
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
একদিন গির্জায় প্রার্থনা চলাকালীন দুষ্কৃতিকারীরা এসে প্রত্যেককে বলে যীশুকে অস্বীকার করতে । অনেকেই প্রাণের ভয়ে অস্বীকার করলেও ছোট্ট প্রবাল চীৎকার করে বলল, ‘আমি যীশুকে ভালোবাসি ।’
৩. প্রবালের মধ্যে খ্রিষ্ট ভক্তের মুক্ত জীবনের কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে ?
ক. শারীরিক মুক্তি
খ. আবেগিক মুক্তি
গ. মানসিক মুক্তি
ঘ. আধ্যাত্মিক মুক্তি
৪. প্রবালের মতো বিশ্বাস প্রকাশের ফলে সকলেই মানুষের কাছে হয়ে উঠতে পারে -
i. মুক্ত মানুষ
ii. স্মরণীয় মানুষ
iii. ক্ষমতাবান মানুষ
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক. i
খ. i ও ii
গ. iii
ঘ. i ও iii
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. মুক্তি বলতে কী বুঝ ? ব্যাখ্যা দাও ।
২. মুক্তি বা স্বাধীনতার ৪টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর ।
৩. মুক্ত মানুষ হওয়ার উপায়সমূহ সংক্ষেপে লেখ ।
৪ . খ্রিষ্টভক্তদের জীবনের সার্বিক মুক্তির দুইটি দিক সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ ।
সৃজনশীল প্রশ্ন
১. হৃদয় প্রতিষ্ঠিত একজন যুবক । নিজের গ্রামের উন্নয়নের জন্য নৈশ বিদ্যালয়, রাস্তা সংস্কার, সেবা কেন্দ্র ইত্যাদি কল্যাণমূলক কাজ করেছেন। গ্রামের ধর্ম, বর্ণ, ধনী, গরিব, পাপী, সাধু, নারী-পুরুষ প্রতেকের সঙ্গেই তিনি সদ্ভাব বজায় রেখেছেন । তাই সকলেই তাকে খুব পছন্দ করে ।
ক. ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কী ?
খ. স্বাধীনতা বা মুক্তি বলতে কী বোঝায় ?
গ. মুক্তি সম্পর্কে যীশুর কোন শিক্ষাটি হৃদয়ের মধ্যে ফুটে উঠেছে ? ব্যাখ্যা কর । ঘ. স্বাধীন বা মুক্ত হওয়ার জন্য হৃদয়ের কাজের এই একটি দিক কি যথেষ্ট ? তোমার মতামত দাও ।
২. ওসান একজন ধনী যুবক । সে একদিন রাস্তায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল। হঠাৎ সুমন নামে একজন রিক্সাচালক তার গাড়ির সামনে পড়ল এবং সুমনের রিক্সাটি উল্টে পড়ে গেল । ওসান গাড়ি থেকে নেমে এসে চোখ রাঙিয়ে সুমনকে বলল, 'তোর দুই টাকার রিক্সা আমার লক্ষ টাকার গাড়িতে ধাক্কা লাগিয়েছিস ? তোর ক্ষমা নেই, এই বলে সুমনের গালে আঘাত করল । ওসানের বান্ধবী জুলি বলল, 'তুমি ওকে মারলে কেন ? তোমারই তো দোষ । তুমি তোমার ভুল স্বীকার কর । নত ও সরল হও এবং যীশুকে
বিশ্বাস কর।'
ক. বাহ্যিক বাধা কয়টি ?
খ. ভালো মন্দের বিচারবোধ বলতে কী বোঝায় ?
গ. জুলি ওসানকে কোন ধরনের মুক্তির পরামর্শ দিয়েছে ? ব্যাখ্যা কর ।
ঘ. ‘জুলির পরামর্শ ওসানকে সার্বিকভাবে মুক্তি দিতে পারে' – উক্তিটি মূল্যায়ন কর ।