দুর্ঘটনা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটি স্বাভাবিক বিষয়। দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়ে আমরা প্রায়শই বিভিন্ন ধরনের শারীরিক দুর্ঘটনার শিকার হই যার জন্য প্রয়োজন দ্রুত গতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা এবং উন্নত চিকিৎসার আশু ব্যবস্থা। প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান বা কেয়ারগিভারের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় দক্ষতা। এই অধ্যায়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের জরুরি পরিস্থিতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা সংক্রান্ত মৌলিক কিছু ধারণা ও কর্মদক্ষতা অর্জন করব যাতে করে এ ধরনের পরিস্থিতে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করার পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা
উল্লেখিত শিখনফল অর্জনের লক্ষ্যে এই অধ্যায়ে আমরা দুই আইটেমের জব (কাজ) সম্পন্ন করব। এই দুই আইটেম জবের মাধ্যমে আমরা সিপার শুরুর আগে প্রারম্ভকিভাবে করণীয় ধাপ ও অজ্ঞান ব্যক্তিকে ধাপানুসারে সিপিজার দেওয়ার পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারব।
১.১.১ প্রাথমিক চিকিৎসা কি?
কোনো দুর্ঘটনায় হঠাৎ আহত বা অসুস্থ ব্যক্তিকে ডাক্তার বা হাসপাতালে পাঠানোর আগে তাৎক্ষণিকভাবে যে সেবা দেওয়া হয় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বা First Aid বলা হয়। যিনি প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন তিনি একজন প্রাথমিক চিকিৎসক বা ফার্স্ট এইডার (First Aider).
প্রাথমিক চিকিৎসার উদ্দেশ্য: প্রাথমিক চিকিৎসার মূলনীতি ৩টি। যথা :
১। আহত বা অসুস্থ ব্যক্তির জীবন বাচাতে সাহায্য করা।
২। অবস্থার অবনতি রোধ করা।
৩। অবস্থার উন্নতি করা এবং উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
প্রাথমিক চিকিৎসার কার্যন্তর
১। রোগ নির্ণয় (উপসর্গ, লক্ষণ ও ঘটনার বিবরণ থেকে) ।
২। শুশ্রূষা বা সেবা প্রদান।
৩। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্থানান্তর ।
প্রাথমিক চিকিৎসার নীতি
১। মাথা ঠাণ্ডা রেখে দ্রুত কাজ করা।
২। প্রাথমিক চিকিৎসক ডাক্তার নন।
একজন প্রাথমিক চিকিৎসক যেকোনো ব্যক্তিই হতে পারেন। তবে প্রাথমিক চিকিৎসক হতে ইচ্ছুক ব্যক্তির কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। যথা-
১। ঠাণ্ডা মাথায় দ্রুত পরিস্থিতি যাচাই করা ।
২। নিজের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন থাকা।
৩। সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকা ।
৪। আহত বা অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থা যাচাই করা।
৫। দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা ।
৬। হাসপাতাল, চিকিৎসক বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা।
৭। নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকা
৮। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আস্থা যাচাই করা।
৯। প্রতিবেদন তৈরি করা।
দুই স্তরের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একজন আহত বা অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থা যাচাই করা হয়ে থাকে। যথা-
১। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ: জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ বিষয়সমূহ উপস্থিত আছে কিনা; যেমন: শ্বাসপ্রশ্বাস ও রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে আছে কিনা।
২। পরবর্তী পর্যবেক্ষণ: মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভালো করে দেখা। সর্বোপরি লক্ষণ থেকে সমস্যা নির্ণয় করা।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ
একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ভদ্র (System) হচ্ছে শ্বাসতন্ত্র এবং রক্ত সঞ্চালন। তাই ব্যক্তির অবস্থার উপর নির্ভর করে কখনো কখনো প্রানিক পর্যবেক্ষণ হিসেবে শ্বাস চলাচল ও রক্ত সঞ্চালন পরীক্ষা করা এবং যদি তন্ত্রগুলোর একটি বা উচ্চরই কার্যকর না থাকে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিষয়গুলো সহজে মনে রাখার জন্য ইংরেজি ABCDE তিনটি আদ্যাক্ষর ব্যবহার করা যায়।
A- Airway (শ্বাসনালি খুলে দেওয়া): শ্বাসনালি খুলে দিতে হবে। এক হাত কপালে ও অন্য হাতের আঙ্গুল থুতনিতে রেখে আহত/অসুস্থ ব্যক্তির মাথা আলতো করে পেছনে হেলিয়ে এবং হা করিয়ে দেখতে হবে যে মুখে কিছু আটকে আছে কিনা, থাকলে তা বের করে ফেলতে হবে। |
B. Breathing (শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করা) শ্বাসনালি খোলা রেখে দেখা, শোনা ও অনুভবের মাধ্যমে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করা যায়। এটি সহজে মনে রাখার জন্য দেখা, শোনা, অনুভব করা (Look, Listen, Fecl/ Palpate) শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে:
| |
C Circulation (রক্ত সঞ্চালন) ভালো করে খেয়াল করতে হবে শরীরের কোথাও প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা। রক্তক্ষরণ হলে তা দ্রুত বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় আহত ব্যক্তির জীবননাশের হুমকি অরূপ রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়ে শক এ আক্রান্ত হতে পারে। |
D- Disablity (পঙ্গুত্ব বা অঙ্গহানি) এক্সিডেন্ট বা দুর্ঘটনায় কোনো অঙ্গহানী হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা এবং যদি হাত-পা ভেঙ্গে গিয়ে থাকে তাহলে সেটাকে যথাসম্ভব সোজা অবস্থায় বেঁধে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া। |
E- Exposure (রক্ত সঞ্চালন এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি অজ্ঞান হয় তাহলে তার প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য শরীরের কাপড় অপসারণ করে খুটে খুটে পর্যবেক্ষণ করা যে শরীরে আর কোথায় কোনো বড় ধরনের আঘাত বা ক্ষত আছে কিনা । |
পরবর্তী পর্যবেক্ষণ
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করার পর ব্যক্তির সার্বিক অবস্থা যাচাই করার লক্ষ্যে মাথা থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এই অবস্থা যাচাই করার জন্য ঘটনার বিবরণ, ব্যক্তির উপসর্গ এবং লক্ষণসমূহ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসক বিষয়সমূহ নোট করবেন যা ব্যক্তিকে হাসপাতালে প্রেরণ করলে মূল্যবান তথ্যসূত্র হিসেবে কাজ করবে।
বিবরণ সংগ্রহ
আহত বা অসুস্থ ব্যক্তি বা উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে প্রধানত দুটি বিষয়ে জানা প্রয়োজন; ঘটনার বিবরণ এবং যদি কোন রোগ থেকে থাকে তাহলে রোগের বিবরণ। বিবরণ সংগ্রহের কৌশল হিসেবে সহজে মনে রাখার জন্য ইংরেজী AMPLE ব্যবহার করা হয়।
একজন আহত বা অসুস্থ ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের পর তাঁর অবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত অথবা হাসপাতালে প্রেরণের পূর্ব পর্যন্ত তাকে পরিবীক্ষণে রাখা প্রয়োজন। যথাযথ পরিবীক্ষণের মাধ্যমে ঐ ব্যক্তির অবস্থা উন্নতি করা ও অবনতি রোধ করা সম্ভব হয়। নিচে পরিবীক্ষণের তিনটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ক) সাড়া দেওয়ার পর্যায় (Level of Response)
পর্যায়গুলো সহজে মনে রাখার জন্য AVPU আদ্যাক্ষরসমুহ ব্যবহার করা হয়।
খ. নাড়ির (গতি ও শক্তি)
নাড়ি গতি ও শক্তি মনিটর কর। এটা নিয়মিত কিনা, স্বাভাবিক বা দুর্বল কিনা, স্বাভাবিক গতির তুলনায় যুক্ত বা ধীর কিনা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বিশ্ৰাম অবস্থায় নাড়ির স্বাভাবিক পতিও পরিমাপ করতে হবে।
চিত্র ১.১ : নাড়ির গতি পর্যবেক্ষণ
গ. শ্বাস-প্রশ্বাস (গতি, গভীরতা)
শ্বাস-প্ৰশ্বাস (Breathing) নিয়মিত কিনা, শ্বাস-প্রশ্বাসে শব্দ হচ্ছে কিনা, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কিনা এসব বিষয় নিবিড়ভাবে মনিটর করা ও নোট নেয়া। বয়সবেধে বিশ্রাপ্ত অবস্থার শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক গতি:
বয়স | শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি (প্রতি মিনিট) | পালস বা নাড়ির গতি (প্রতি মিনিট) |
০-১২ মাস | ৩০-৪০ | ১০০-১৪০ |
১-১২ বছর | ২০-৩০ | ৮০-১০০ |
১২ বছরের ঊর্ধ্বে | ১২-২০ | ৬০-৯০ বা ১০০ |
সংক্রামণ প্রতিরোধ
সংক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়টি আহত বা অসুস্থ ব্যক্তি এবং প্রাথমিক চিকিৎসকের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। উত্তরেই পরিবেশ থেকে সংক্রমিত হতে পারেন। যেমন, আহত ব্যক্তির ক্ষপ্ত মাটি থেকে টিটেনাস জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকালীন প্রাথমিক চিকিৎসক নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন এবং তিনিও টিটেনাস জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন। আবার উত্তরে একে অপরের কাছ থেকে সংক্রমিত হতে পারেন যাকে ক্রস ইনফেকশন (Cross Infection) বলা হয়ে থাকে। যেমন রক্ত বা দেহ রসের মাধ্যমে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই একজন প্রাথমিক চিকিৎসককে সংক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রয়োগ করতে হবে।
সাধারণত তিন ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যাগ বা বক্স ব্যবহার করা হয়ে থাকে যথা: ব্যক্তি, পরিবার ও স্কুল বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে। নিচে অত্যাবশকীয় কিছু উপাদানসমূহের অভি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উল্লেখ করা হলো।
ক. জীবাণুমুক্ত গজ পিস: ক্ষত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে ও জীবাণু সংক্রমণ কমায়। ওটা ক্ষতস্থানকে নিরাপদে রাখে, তাতে ময়লা হতে দেয় না এবং ক্ষত থেকে নিঃসৃত তরল পদার্থ শুষে নেয়।
খ.রোলার ব্যান্ডেলঃ ড্রেসিংকে তার জায়গায় ভালোভাবে আটকে রাখার জন্য বা অতিরিক্ত রক্তপাত হলে, ব্যান্ডেজের ওপর চাপ দিয়ে পেঁচিয়ে রক্ত বন্ধ করতে, রোলার ব্যান্ডেজ ব্যবহৃত হয়। হাতে প্লাস্টার করা হলে তা জায়গামতো রাখতে, স্লিং বানাতে রোলার ব্যান্ডেজ প্রয়োজন হয়।
গ. কাঁচি : ক্ষতের পাশে প্রয়োজনে পরনের কাপড় কাটা, গজ, ব্যান্ডেজ, মাথার চুল ইত্যাদি কাটার জন্য কাঁচি দরকার।
ঘ. নিউকোপ্লাস্ট: বাজে ক্ষতের ওপর আটকানোর জন্য দরকার।
ঙ. অ্যান্টিসেপটিক লোশন বা ক্রিম : ক্ষত পরিষ্কার ও জীবাণুযুক্ত করতে দরকার হয়। যেমন- স্যাঙ্কলন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, পতিসেড ইত্যাদি।
চ. ট্যুইজারস বা চিমটি : শরীর থেকে কাঁটা, কোনো ক্ষুদ্র বস্তু বা স্পিনটার, পোকামাকড়ের শূল ইত্যাদি সরাতে বেশ ফলদায়ক। তা ধাতু বা প্লাস্টিকের তৈরি ও বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।
ছ. ক্রেপ ব্যান্ডেজ : হাড় কেটে গেলে বা কোথাও মচকে গেলে ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যবহারে ব্যথা কমে ফোনাও ক্রমশ হ্রাস পায়।
জ. সেফটিপিন : কাঁটা বা ক্ষত থেকে কোনো স্প্লিনটার সরাতে, ব্যান্ডেজ আটকাতে ও স্লিং জায়গামতো ধরে রাখার জন্য সেফটিপিন একটি প্রায়াজনীয় জিনিস। এটি হালকা, শক্ত ও নিরাপদ।
ঝ. অ্যান্টিহিস্টামিন : যেমন হিস্টাসিন, ফেক্সোফেনাডিন ইত্যাদি। এগুলো সর্দি, হাঁচি, কাশি, চুলকানি ও পোকার কামড়ের চিকিৎসায় সহায়ক।
ঞ. ব্যথার ওষুধঃ যেমন প্যারাসিটামল, আইবনুষেন ইত্যাদি।
ট. বার্ন ক্রিম : পোড়া জায়গার ব্যথা কমাতে ও যা শুকাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন— বাল বা সিলভারজিন ক্রিম। অ্যালোভেরা জেল পোড়া, চুলকানি ও চামড়ায় র্যাশ হলে বেশ কার্যকর। ক্যালেন্ডুলা ও আরটিকা ইউরেন্স বার্ন ক্রিম যুক্ত ব্যথা কমায়।
শারীরিক ঝুকি বা বিপত্তি হল একধরনের এজেন্ট, ফ্যাক্টর বা পরিস্থিতি যেটি কোনো ব্যক্তি শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এটাকে আবার দুইটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
ওয়ার্কপ্রেস হ্যাজার্ড বা কর্মক্ষেত্রের ঝুকি
খুব সহজ ভাষায় বললে, কর্মক্ষেত্রের ঝুঁকিগুলো হ'ল কাজের যে কোনো দিক যা স্বাস্থ্যের এবং সুরক্ষার ঝুঁকি নিয়ে আসে এবং ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েকটি উদাহরন নিচে দেওয়া হলো:
জৈবিকঃ জৈবিক বিপদের মধ্যে ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া, পোকামাকড়, প্রাণী ইত্যাদির গ্রেষ্মা স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, ছাঁচ, রক্ত এবং অন্যান্য শারীরিক ভরল, ক্ষতিকারক উদ্ভিদ, নিকাশী, ধূলিকণা এবং ভার্জিন। | |
রাসায়নিক: রাসায়নিক বিপদ কর্মস্থলে ব্যবহৃত বিভিন্ন বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা হতে পারে। এই বিপদগুলোর ফলে ত্বকের দহন, শ্বাসযন্ত্রের জ্বালা, রজত্ব, ক্ষয় এবং বিস্ফোরণের মতো স্বাস্থ্য এবং শারীরিক প্রভাব উভয়ই হতে পারে। | |
সুরক্ষার অভাব জনিত : এগুলো এমন ঝুঁকি যা অনিরাপদ কাজের পরিস্থিতি তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, উন্মুক্ত বৈদ্যুতিক তার বা ক্ষতিগ্রস্থ কার্পেটের ফলে ট্রিপিং বিপত্তি হতে পারে। এগুলো কখনও কখনও শারীরিক বিপদের কারণ হয়ে থাকে। | |
এরগনোমিক: অ্যারগোনসিক বিপত্তি শারীরিক অবস্থানের সমস্যার ফলে মাস্কুলোস্কেলিটাল সিস্টেমের সমস্যা। উদাহরণস্বরূপ, অফিসে একটি দুর্বল ওয়ার্কস্টেশন সেটআপ, দুর্বল ভঙ্গি এবং ম্যানুয়াল হ্যান্ডলিং। |
এনভায়রনমেন্টাল হ্যাজার্ড বা পরিবেশগত ঝুঁকি
পরিবেশগত ঝুঁকি এমন একটি বিপর্যয় যেটি সাধারণত ক্ষতিকারক কোনো পদার্থ, অবস্থা বা ঘটনা যা আশেপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে হুমকির সম্ভাবনা তৈরী করে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে ।
পরিবেশে বিষাক্ত রাসায়নিক, জৈবিক বা শারীরিক এজেন্টের যে কোনো একক বা সংমিশ্ৰ মানুষের ক্রিয়াকলাপ বা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলোর ফলস্বরূপ, ভারী ধাতু, কীটনাশক, জৈবিক দূষক, বিষাক্ত বর্জ্য, শিল্পের মতো দুষণকারীগুলো ঝুঁকিপ্রস্ত স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে ।
এছাড়াও, কর্মক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ফলে কিংবা কোন দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার দরুনও অনেক সময় শারীরিক বিপত্তি বা ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে
ফার্স্ট এইড ম্যানেজমেন্ট বা প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা:
ফার্স্ট এইড ম্যানেজমেন্ট বলতে মূলত বাসা-বাড়ি কিংবা কর্মস্থলে কোনো ব্যক্তির শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে উন্নত চিকিৎসা না পাওয়া পর্যন্ত প্রসারিত প্রাথমিক চিকিৎসার ধারাবাহিক ব্যবস্থাপনাকে বুঝায়। প্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বেশি অর্থবহ। এর মধ্যে কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যায়:
এক্সিডেন্ট ও ইমার্জেন্সি অবস্থা নিয়ে আমরা আগের অনুচ্ছেদে জেনেছি। এখন আমরা বিভিন্ন জরুরি অবস্থায় ফার্স্ট এইডের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতা অনুশীলন করব।
যখন কোনো খাদ্যকণা বা তরল জাতীয় কিছু গলায় আটকে যায় এবং কখনো কখনো শ্বাসনালির মুখ বন্ধ করে দেয়সে অবস্থাকে চোকিং বলে।
চোকিং এর লক্ষণ
হালকা ব্যথা - |
|
মারাত্মক ব্যথা - |
|
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
একজন প্রাথমিক চিকিৎসক হিসেবে তোমার লক্ষ্য হবে
চোকিং এর প্রাথমিক চিকিৎসা
সাবধানতা
যে কোনো পর্যায়ে আহত/ অসুস্থ ব্যক্তি যদি অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে তার শ্বাসনালি খুলে দিয়ে বাস চলাচল পরীক্ষা করতে হবে। শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ থাকলে সিপিজার দিতে হবে।
সিপিআর কি?
হঠাৎ কোনো কারণে যদি একজন মানুষের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তখন বাইরে থেকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস ও হৃৎপিন্ড চালু করার পদ্ধতিকে সিপিআর বলে।
শ্বাস বন্ধ হওয়ার কারণ
শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার গুরুত্ব
যদি কারো স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে জরুরিভিত্তিতে কৃত্রিম উপায়ে তার শ্বাস চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় দেহে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হবে। অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হলে কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যক্তি সম্পর্ণভাবে জ্ঞান হারাবে এবং হৃৎপিন্ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎপিন্ড বন্ধ হওয়া অবস্থায় ৪-৫ মিনিট অতিক্রম হলে, তার মস্তিষ্ক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। যার ফলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তিকে বাচিয়ে রাখার জন্য কৃত্রিমভাবে তার ফুসফুস ও হৃৎপিন্ড চালু রাখা খুবই জরুরি।
শ্বাসনালি খুলে দেওয়া
একজন আহত বা অসুস্থ ব্যক্তি, বিশেষ করে তিনি যদি অজ্ঞান অবস্থায় থাকেন তাহলে তার মাংসপেশির নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে আসে। ফলে মুখের ভেতরে জিভ পেছন দিকে ঝুঁকে পড়ে। শ্বাসনালির পথ আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় এবং শব্দ হতে থাকে। এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধও হয়ে যেতে পারে। তখন ঐ ব্যক্তির মাথা (ছবির ন্যায়) পেছন দিকে টেনে, থুতনি উপরের দিকে তুলে ধরলে জিভ দ্বারা বন্ধ হওয়া শ্বাসনালি খুলে যায়।
শ্বাসনালি খুলে দেওয়া কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার ৩টি পদ্ধতি
কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার মৌলিক বিষয়টি হলো একজন প্রাথমিক চিকিৎসক শ্বাস গ্রহণ করার পর নির্গত শ্বাস আহত/অসুস্থ ব্যক্তির ফুসফুসে ঢুকিয়ে দেওয়া। আমরা যখন বাতাস থেকে শ্বাস গ্রহণ করি তাতে প্ৰায় ২১% অক্সিজেন থাকে। যখন শ্বাস নির্গত করি তাতে ১৬% অক্সিজেন থাকে, যা একজন আহত/অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলার জন্য যথেষ্ট। তিনটি পদ্ধতিতে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়া হয়ে থাকে।
-মুখ থেকে মুখে (Mouth to Mouth )
-মুখ থেকে নাকে (Mouth to Nose)
-মুখ থেকে নাকে ও মুখে একসাথে (Mouth to Nose and Mouth) ০-১২ মাসের শিশুদের জন্য
হৃৎপিন্ড ও শ্বাস চালু করার পদ্ধতি
শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা: শ্বাসনালি খোলা রেখে ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করতে হবে অর্থাৎ দেখতে হবে ঐ ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কিনা। দেখা শোনা ও অনুভবের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করতে হবে। ১০ সেকেন্ড ধরে এই শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে।
শ্বাস পরীক্ষা পদ্ধতি: সহজে মনে রাখার জন্য নিচের শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
১-১২ বছর বয়সের শিশুদের জন্য শিশুর সাড়া দেওয়া পরীক্ষা কর
শ্বাসনালি খুলে দাও, শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা কর
জীবন রক্ষাকারী ফুঁ
সিপিআর প্রয়োগ কর
ধাপ ৩ এরপর ২ বার জীবন রক্ষাকারী ফুঁ দিয়ে ৩০ বার চাপ দিতে হবে। এভাবে ৩০ বার চাপ এবং ২ বার ফুঁ চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না হাসপাতালে পৌঁছানো যায় অথবা শ্বাস চালু হবার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়।
বয়স ভেদে সিপিআর ছক
রিকভারি পজিশন (Recovery Position )
প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পন্নের পর একজন আহত বা অসুস্থ ব্যক্তি পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় না আসা পর্যন্ত তাকে একটি বিশেষ ভঙ্গিতে শুইয়ে রাখা হয়। এই বিশেষ ভঙ্গিকে রিকভারি পজিশন বলা হয়। নিচে রিকভারি পজিশনের বিভিন্ন ধাপসমূহ বর্ণনা করা হলো:
ধাপ ১: তুমি ব্যক্তির যে কোনো একপাশে হাঁটু গেড়ে বস। ঐ ব্যক্তির পকেট থেকে ভারি সামগ্রী যেমন-মোবাইল, চাবি, কলম সরিয়ে দাও। ধাপ ২: ঐ ব্যক্তি চিৎ অবস্থায় থাকলে তার পা দু'টি সোজা করে দাও। ব্যক্তির যে হাতটি তোমার কাছাকাছি তা শরীর থেকে লম্ব অবস্থানে রাখ, হাতের তালু উপরের দিকে রাখ। ধাপ ৩: ব্যক্তির যে হাতটি তোমার কাছ থেকে দূরে তা ধরে ব্যক্তির বুকের উপর দিয়ে আন এবং হাতের তালুর উল্টোদিক ব্যক্তির পালের নিচে রাখ। তোমার অপর হাত দিয়ে ব্যক্তির দুরের পায়ের হাঁটুর উপরে ধরুন এবং হাঁটু ভাজ করে পা-টি টেনে আন যতক্ষণ না পায়ের পাতা মাটির সমান্তরালে আসে। ধাপ ৪: এবার ব্যক্তির হাত গালের নিচে রাখা অবস্থায় তুমি পায়ের যে স্থানে ধরেছ তা টেনে ব্যক্তির শরীরটি তোমার দিকে কাত করে দাও। ধাপ ৫: যে পা-টি ধরে ব্যক্তিকে কাত করেছ এবার সে পা-টিকে কোমর ও হাঁটু থেকে লম্ব অবস্থানে রাখ। ধাপ ৬: ব্যক্তির কপাল ও থুতনি ধরে মাথা পেছন দিকে কাত করে দাও। শ্বাসনালি খোলা অবস্থায় থাকবে। ধাপ ৭: ব্যক্তিকে ১/২ ঘন্টা পর্যন্ত এ অবস্থায় রাখার পর পুনরায় একইভাবে অন্য পাশে রিকভারি পজিশনে রাখতে হবে। ধাপ ৮: ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস, পাস এবং সাড়া দেওয়ার পর্যায় পরীক্ষা কর এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা নাও। |
সাবধানতা
রিকভারি পজিশনে রাখার পূর্বে ব্যক্তির শরীরের আঘাত বা ক্ষত বিবেচনায় আনতে হবে। মেরুদন্ডের হাড়ে ব্যথা বা ভেঙ্গে যাওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে একাধিক সাহায্যকারীর সহায়তায় রিকভারি পজিশনে রাখতে হবে। এ বিষয়ে হাড় ভাঙ্গা অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
কোন কারণে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে মস্তিষ্ক ও শরীরে প্রধান অঙ্গসমূহ অক্সিজেনের ঘাটতি হলে যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয় তা-ই শক (Shock) |
শকের কারণ
শকের লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে
শকে আক্রান্ত হবার পর
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
প্রাথমিক চিকিৎসা
১) শকের কারণ সনাক্ত করে (যেমন- রক্তপাত বা পোড়া) সে অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা দাও।
২) ব্যক্তিকে কখন, কাঁথা বা তোষকের উপর সমান্তরালভাবে শুইয়ে পা দুটি উঁচু করে দিতে হবে। এতে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহের উন্নতি ঘটবে।
৩) প্রয়োজনে ব্যক্তিকে উষ্ণ রাখার জন্য কম্বল বা গরম কাপড় পায়ে দিতে হবে।
৪) ব্যক্তিকে নিরবিচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাস, নাড়ি (পালস), সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি।
৫) পরিধেয় আঁটসাট কাপড় চোপড় ঢিলা করে দিতে হবে, যেমন- বেল্ট, জুতা, মোজা, কোট, টাই, শার্ট, ব্লাউজ ইত্যাদি। এতে রক্ত সঞ্চালনে সুবিধা হবে।
৬) খোলামেলা ও মুক্ত বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭) ব্যক্তির অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৮) ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি হলে রিকভারি পক্ষিশনে (আরামদায়ক অবস্থা) শুইয়ে দিতে হবে।
সাবধানতা
একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুসের শরীরে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্তের বিবিধ কাজের মধ্যে একটি অন্যতম কাজ হচ্ছে শরীরের সর্বত্র অক্সিজের পৌঁছে দেওয়া। কোন কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মস্তিষ্ক অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হবে, ব্যক্তি শক অবস্থা থেকে অবশেষে মারা যেতে পারে। তাই প্রাথমিক চিকিৎসায় রক্তক্ষরণের ব্যবস্থাপনা একটি জরুরি বিষয়। | |
রক্তক্ষরণের প্রকারভেদ ১. বাহ্যিক রক্তক্ষরণ ২. অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ দৃষ্টমানঃ চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ, নাক-কান-মুখ থেকে রক্তক্ষরণ, মল-মুত্র বমির সাথে রক্তক্ষরণ, যোনীপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। অদৃশ্যমান: মস্তিষ্কের ভিতর রক্তপাত, গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। | |
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
|
বাহ্যিক রক্তক্ষণের প্রাথমিক চিকিৎসা
১। প্রয়োজনে পরিহিত কাপড় কেটে সরিয়ে ফেলে ক্ষতস্থানটি ভালোভাবে দৃষ্টির মধ্যে আনুন ।
২। ব্যক্তিকে একটি কম্বল বা তোষকের উপর শোয়াতে হবে, তাতে করে ব্যক্তির শরীরে মেঝের ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করা যাবে। শক প্রতিরোধের জন্য ব্যক্তির পা মাথার তুলনায় উঁচুতে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত কর।
৪। রক্তক্ষরণের স্থানটিকে উপরের দিকে রাখার জন্য প্রয়োজনে স্লিং ব্যবহার কর। পরবর্তীতে ব্যান্ডেজের স্থানে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক আছে কিনা তা প্রতি ১০ মিনিট পরপর পরীক্ষা কর। (এ ক্ষেত্রে ব্যান্ডেজের স্থানে নাড়ি বা পাল্স পরীক্ষা করতে হবে) ব্যান্ডেজটি সামান্য ঢিলা করে দাও। রক্ত চলাচল অব্যাহত থাকবে।
৫। রক্তক্ষরণের স্থানটি সরাসরি চেপে ধর। রক্তক্ষরণের স্থানটির উপর একটি জীবাণুমুক্ত গজ বা প্যাড ব্যবহার করে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধর। যদি জীবাণুমুক্ত গজ বা প্যাড পাওয়া যায় তাহলে ব্যক্তিকেই বল নিজের রক্তক্ষরণের স্থানটি চেপে ধরতে। রক্তক্ষরণের স্থানে যদি কোনো কিছু ঢুকে গিয়ে থাকে তাহলে বস্তুটিকে যথাস্থানে রেখে তার উভয় পাশে চাপ দিতে হবে।
৬। কাটা স্থানটি হৃদপিণ্ডের তুলনায় উপরে উত্তোলন (হাত ও পায়ের ক্ষেত্রে) করতে হবে।
৭। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে, প্রথম ব্যান্ডেজের উপর দ্বিতীয় আর একটি চাপ ব্যান্ডেজ প্রয়োগ কর। প্রয়োজনে তারপরও যদি রক্তক্ষরণ বন্ধ না হয় তাহলে পূর্বের ব্যান্ডেজ না সরিয়ে পুনরায় চাপ ব্যান্ডেজ প্রয়োগ কর। লক্ষ্য রাখবে রক্তক্ষরণের সঠিক স্থানে যেন ব্যান্ডেজটি করা হয়।
৮। উপরোক্ত ব্যবস্থার পরও যদি রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয় তাহলে চাপ বিন্দুতে (Pressure point) চাপ প্রয়োগ করতে হবে (হাত ও পায়ের ক্ষেত্রে)।
প্রেসার পয়েন্ট বা চাপ বিন্দুতে চেপে ধরে হাত ও পায়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যেতে পারে। রক্তক্ষরণের প্রাথমিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও যদি রক্তক্ষরণ বন্ধ না হয় তখন চাপ বিন্দুতে চেপে ধরা যায়। হাতের চাপ বিন্দু হাতের উপরের অংশের ভেতর দিকের মাঝামাঝি। এখানে ব্রেকিয়াল আর্টারি বলে একটি ধমনি আছে পায়ের চাপ বিন্দু কুঁচকিতে। এখানে ফিমোরাল আর্টারি বলে একটি ধমনি আছে। মনে রাখতে হবে, চাপ বিন্দুতে অধিক সময় চাপ দিয়ে রাখা যাবে না। কারণ তাতে হাত বা পায়ের নিম্নাংশে রক্ত তথা অক্সিজেনের অভাব দেখা দিবে।
অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ: কখনো কখনো বাহ্যিক কোনো ক্ষত ছাড়াই হাড় ভাঙ্গা বা আঘাতের কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো রোগে যেমন পাকস্থলির বা আলসার থেকে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। যদি ব্যক্তি বাহ্যিক কোনো আঘাত ছাড়াই শকে গিয়ে থাকে তাহলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ সন্দেহ করা যেত পারে। সে ক্ষেতে ব্যক্তির মুখ, নাক, কান, প্রস্রাবের রাস্তা, যোনিপথ ও পায়ুপথে করতে হবে।
রক্তক্ষরণের স্থান | রক্তক্ষরণের প্রকৃতি | রক্তক্ষরণের মূল কারণ |
মুখ | উজ্জল লাল, ফেনাযুক্ত, কাশির সাথে রক্তক্ষরণ | ফুসফুস থেকে রক্তক্ষরণ |
শরীরের চামড়া বা ত্বক এমনকি টিস্যু কেটে বা ছিঁড়ে গিয়ে জায়গাটির যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয় তা'ই ক্ষত। কোনো কারণে আমাদের দেহে কোনো ক্ষত সৃষ্টি হলে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ এবং রক্তের একটি বিশেষ কণিকা, অনুচক্রিকা (Platelet) সম্মিলিতভাবে একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি জালিকা তৈরী করে। এই জালিকা রক্ত জমাট বাধতে সহায়তা করে। জমাট রক্তের মধ্য থেকে 'সিরাম' (Serum) নামক বিশেষ পদার্থ বেরিয়ে আসে। সিরামে জীবাণুনাশক গুণাবলি থাকার কারণে তা ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে। অবশেষে ক্ষতের উপর একটি প্রতিরক্ষাকারী আবরণ (Scab) সৃষ্টি হয় যা ক্ষতটি সম্পুর্ণভাবে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে ।
ক্ষতের প্রকারভেদ
ক্ষত প্রধানত দুই প্রকার- বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ। ক্ষতের ধরনের উপর টিস্যু ক্ষতির পরিমাণ ও সংক্রমণের সম্ভাবনা নির্ভর করে।
প্রাথমিক চিকিৎসার লক্ষ্য
প্রাথমিক চিকিৎসা
ক্ষতকে পরিষ্কার করা, জীবাণুমুক্ত করা এবং অবস্থার আর যাতে অবনতি না হয় এমন ব্যবস্থাপনাকেই ক্ষতের পরিচর্যা বলে। ক্ষতের পরিচর্যার ধাপ দু'টি-ড্রেসিং ও ব্যান্ডেজ।
ড্রেসিং (Dressing)
ড্রেসিং হলো ক্ষতের উপরে সরাসরি ব্যবহৃত একটি আবরণ যা ক্ষতকে ঢেকে রাখে। ড্রেসিং জীবাণুমুক্ত, ক্ষতের চেয়ে বড়, নরম, পুরু এবং আরামদায়ক হতে হবে। ড্রেসিং এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষতকে জীবাণুমুক্ত রাখা।
ব্যান্ডেজ
ব্যান্ডেজ হলো ড্রেসিং এর সুরক্ষা। খেয়াল রাখতে হবে এমনভাবে ব্যান্ডেজ করতে হবে যাতে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে।
ড্রেসিং ও ব্যান্ডেজের উপরকরণ
ড্রেসিং এর সাধারণ নিয়মাবলি
ড্রেসিং ক্ষতের সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি রক্তকরণ প্রতিরোধেও সহায়তা করে। একজন প্রাথমিক চিকিৎসক সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত ড্রেসিং ব্যবহার করবেন। বিকল্প হিসেবে পরিচ্ছন্ন কাপড় যা ক্ষতের সাজে আটকে যাবে না এমন কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে ড্রেসিংয়ের কিছু সাধারণ নিয়মাবলি উলেখ্য করা হলো-
মানুষের শরীরের ত্বক যখন কোনো দাহ্য পদার্থ অর্থাৎ আগুন, যে কোনো উত্তপ্ত পদার্থ, যেমন উত্তপ্ত কোনো বন্ধু, উত্তপ্ত কোনো তরল পদার্থ বা উত্তপ্ত বাদু, এসিডসহ অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদির সংস্পর্শে এসে কোনো ক্ষতের সৃষ্টি করে তাকেই পুড়ে যাওয়া বা গোড়া বলে। গোড়ার প্রকৃতি ও গুরুত্ব নিরুপণ করা, গোড়ার কারণ, শরীরের কোন কোন জায়গা পুড়েছে, পোড়ার গভীরতা কতটুকু, শ্বাসনালি পুড়েছে কিনা, আলেগালের কোনো সামগ্রী পোড়ার ফলে নির্গত কার্বন-মনো-অক্সাইড বা অন্য কোনো বিষাক্ত গ্যাস ব্যক্তি শ্বাসের সাথে গ্রহণ করেছে কিনা ইত্যাদি বিষয় নিরুপণ করা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তির শরীরের বেশ খানিকটা জায়গা যদি পুড়ে থাকে তাহলে শরীর থেকে জলীয় পদার্থ বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অধিক এবং এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি শকে যেতে পারে। হাতে ও পায়ে পোড়ার কারণে জলীয় পদার্থ জমে ফুলে উঠার সম্ভাবনা থাকে। প্রায় সকল ধরনের পোড়ার ক্ষেত্রেই যেহেতু সুরক্ষা ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই সংক্রমণের সম্ভাবনাও থাকে খুব বেশি।
পোড়ার মাত্রা সনাক্তকরণ
পোড়ার কারণে ত্বকের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার উপর নির্ভর করে মাত্রা নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
প্রাথমিক চিকিৎসা
১। পোড়া স্থানে প্রচুর ঠাণ্ডা পানি ঢালুন। ব্যক্তি যে অবস্থায় আরাম পায় সে অবস্থায় রাখ কিন্তু লক্ষ্য রাখ যাতে পোড়া স্থান কোনভাবেই মাটির সংস্পর্শে না আসে।
২। হাসপাতালে প্রেরণের জন্য যোগাযোগ কর। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে উপস্থিত কাউকে এ কাজটি করতে বল।
৩। পোড়া স্থানটিতে কমপক্ষে ১০ মিনিট ঠাণ্ডা পানি ঢালুন। ব্যথা না কমা পর্যন্ত ঠাণ্ডা পানি ঢালা যাবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে অতিরিক্ত ঠাণ্ডাপানি ঢালার কারণে শরীরের তাপমাত্রা যেন স্বাভাবিকের চাইতে কমে না যায়। শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এমন অবস্থা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
৪। পোড়া স্থানটিতে হাত দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এমনকি পোড়া স্থানে আটকে থাকা কাপড়ও তুলে ফেলার প্রয়োজন নেই। পোড়া স্থানের আশেপাশের কাপড়, বেল্ট, জুতা,মোজা, আংটি, ঘড়ি খুলে ফেলুন। তা না হলে পোড়া স্থান ফুলে গিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
৫। পোড়া স্থানটি ঠাণ্ডা হয়ে এলে একটি পরিষ্কার প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিন। প্লাস্টিক ব্যাগটি যথাস্থানে রাখার ফলে ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা যাবে। তবে ব্যান্ডেজটি যেন কোনভাবেই পোড়া স্থানকে স্পর্শ না করে।
৬। ব্যক্তিকে আশ্বস্ত কর। প্রয়োজনে শকের প্রাথমিক চিকিৎসা দাও। মনিটর কর শ্বাস-প্রশ্বাস, পালস এবং সাড়া দেওয়ার পর্যায়।
সাবধানতা
১৪.২.৮ ফিট, মূর্ছা যাওয়া ও অজ্ঞান হওয়া: (Fit, Fainting and Unconsciousness)
ফিট (Fit) কি
কোন ব্যক্তির যখন কোনো কারণে খিচুনি অর্থাৎ মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণ হয় সে অবস্থাকে ফিট বলে।। উল্লেখ্য যে, এই ফিট ২-৩ মিনিটের মধ্যে নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। ফিটকে মেডিক্যালের ভাষায় Seizure বা Convulsion বলা হয়ে থাকে।
ফিটের কারণ
মানব দেহের মস্তিষ্ক বিদ্যুৎ তরঙ্গের মাধ্যমে কাজ করে। কোনো কারণে এই বিদ্যুৎ তরঙ্গে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে ফিট অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
ফিটের লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
ফিটে আক্রান্ত শিশুর প্রাথমিক চিকিৎসা
শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত অতিরিক্ত জ্বরের সাথে গলা বা কান বা অন্য কোনো প্রকার সংক্রমণ থাকার কারণে ফিট হয়ে থাকে। অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে মস্তিষ্কে বিদ্যুৎ তরঙ্গের তারতম্য দেখা দেয় এবং ফলশ্রুতিতে ফিট হয়ে থাকে। প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে শিশুদের ফিটের জটিলতা প্রশমন করা যায়। তবে শিশুদের সকল ফিটের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ফিটের ক্ষেত্রে কখন হাসপাতালে প্রেরণ জরুরি?
সাবধানতা
মূর্ছা (Fainting) কি
কোন ব্যক্তির অল্প সময়ের (২-৩ মিনিট) জন্য সচেতনতা বোধ কমে যাওয়া এবং কিছু সময় পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা, আবার একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হতে পারে এ রকম অবস্থাকে মূর্ছা বলে।
মুর্ছার কারণ
মুর্ছার লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসা: ব্যক্তিকে সমান্তরালভাবে শুইয়ে পা দু'টি উঁচু করে দিতে হবে। এতে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহের উন্নয়ন ঘটবে।
অজ্ঞান (Unconsciousness )
কোন ব্যক্তি যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য অচেতন হয়ে যায় এবং কোন প্রকারের সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়। তবে সে অবস্থাকে অজ্ঞান বলে। ব্যক্তির অজ্ঞান অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার সচেতনতা পর্যবেক্ষণ। করতে হবে। নিচে সচেতনতার বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো উল্লেখ্য যে, সচেতনতা পর্যবেক্ষণের পূর্বে শ্বাসনালি পরিষ্কার ও খোলা আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। অঠচট কোড ব্যবহার করে সচেতনতার পর্যায় বোঝা যাবে।
অজ্ঞান ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা
সাবধানতা
মানুষের শরীরে বিষ বা অন্য কোন পদার্থ যদি এমন পরিমাণে প্রবেশ করে যে তা ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করে তাকে বিষক্রিয়া বলে। বিষক্রিয়ার প্রভাব স্বল্প মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি উভয় ধরনেরই হতে পারে।
বিষক্রিয়ার ধরণ
বিষক্রিয়ার লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
এক নজরে বিষক্রিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসার ছক :
প্রবেশ পথ | বিষের ধরন | লক্ষণ | করণীয় |
খেয়ে ফেলা বা পান করার মাধ্যমে |
|
|
|
সাবধানতা
বাংলাদেশে প্রতি বছর সাপের কামড়ে অনেক মানুষ মারা যায়। সব সাপ বিষধর নয়। সাপের কামড়ে আমাদের দেশের প্রচলিত চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত নয়। সাপে কামড়ালে হাসপাতালে নিতে হবে; ওঝা বা গ্রাম্য কবিরাজ এদের কাছে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। কুকুরের কামড় থেকে জলাতঙ্ক রোগ হয়েও অনেক মানুষ মারা যায়। জলাতঙ্ক একটি প্রাণঘাতী রোগ। যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এ রোগটি প্রতিরোধ সম্ভব। এছাড়া আমাদের দেশে আছে নানা ধরনের পোকা-মাকড় কীট-পতঙ্গ। একজন প্রাথমিক চিকিৎসক হিসেবে এ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা থাকা জরুরি ।
বিভিন্ন ধরনের পোকা মাকড়
বিভিন্ন প্রকার জীবজন্তু ও পোকা-মাকড়, স্পর্শ এবং হুল ফোটানোর প্রতিক্রিয়া:
প্রাথমিক চিকিৎসা
সাবধানতা
হাড় ভাঙ্গা দুই প্রকার-
উন্মুক্ত হাড় ভাঙ্গার প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
প্রাথমিক চিকিৎসা
সাবধানতা
আবদ্ধ হাড় ভাঙ্গার প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রাথমিক চিকিৎসার লক্ষ্য
প্রাথমিক চিকিৎসা
সাবধানতা
অনড়করণের উপকরণ
কখনো কখনো মারাত্মক আঘাত, পড়ে গিয়ে বা অস্বাভাবিক টানের ফলে জয়েন্ট থেকে হাড় সরে যেতে পারে। এ ধরনের সরে যাওয়া সাধারণত কাধের জয়েন্ট (সোল্ডার জয়েন্ট), হাঁটু, চোয়াল, আঙ্গুল এবং মেরুদন্ডের জয়েন্টে ঘটে থাকে। এ অবস্থায় খুব ব্যথা থাকে এবং জয়েন্টের আশেপাশের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ অবশ বা প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। হাড় সরে যাওয়ার সাথে কখনো কখনো হাড় ভেঙ্গেও যেতে পারে। হাড় সরে যাওয়া এবং ভাঙ্গা নির্ণয় করতে একজন প্রাথমিক চিকিৎসকের অসুবিধা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টিকে হাড় ভেঙ্গে যাওয়া হিসেবে বিবেচনা করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।
লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
প্রাথমিক চিকিৎসা
সাবধানতা
কোনো সন্ধিস্থলের হাড়ের চারপাশের নরম গঠনের উপর যদি হঠাৎ সজোরে কোনো আঘাত, ধাক্কা বা চাপ লাগে তবে ঐ স্থানের লিগামেন্ট, টেন্ডন ও মাংসপেশির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে, এ অবস্থাকে মচকানো বলে। এ ধরনের আঘাত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খেলাধুলার সময় লক্ষ করা যায়। সহজে মনে রাখার জন্য Rice শব্দটি ব্যবহার করে মচকানোর প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায়-
সাবধানতা
মেরুদন্ডে আঘাত বা হাড় ভেঙ্গে যাওয়া (Spinal injury / Fracture )
মানব দেহের মেরুদন্ডে মোট ৩৩টি হাড় আছে। প্রতি দু'টি হাড়ের মাঝে আছে ডিস্ক নামক এক ধরনের টিস্যু। হাড়গুলো মাংসপেশি ও লিগামেন্ট দ্বারা সংযুক্ত ও সুরক্ষিত থাকে। হাড়ের মাঝের ছিদ্র দিয়ে মস্তিষ্ক থেকে নিতম্ব পর্যন্ত মেরুরজ্জু অবস্থান করে। মেরুরজ্জু থেকে স্নায়ু বেরিয়ে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে। মেরুদন্ডের হাড়ে আঘাত, হাড় ভেঙ্গে যাওয়া এবং মেরুরজ্জুতে আঘাত অত্যন্ত মারাত্মক। এ সকল ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মেরুদন্ডে আঘাত বা হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার কতিপয় কারণ
মেরুদন্ডে আঘাত/হাড় ভেঙ্গে যাওয়া সজ্ঞান ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
প্রাথমিক চিকিৎসা
সাবধানতা
লগ-রোল কৌশল
মেরুদন্ডে আঘাত/হাড় ভেঙ্গে যাওয়া ব্যক্তিকে কাত করানোর জন্য এই কৌশলটি অবলম্বন করা হয়। প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসক ব্যক্তির মাথা ও ঘাড় সুরক্ষা করবে। সহযোগীরা ব্যক্তির পা সোজা করে দিবে। ব্যক্তিকে যে পাশে কাত করাতে হবে তিনজন সহযোগী ব্যক্তির সে পাশে এবং দু'জন অপর পাশে অবস্থান নিবে। তিনজনের যে পায়ের দিকে আছে সে ব্যক্তির দূরের পায়ের নিচে হাত রাখবে, যে মাঝখানে আছে সে ব্যক্তির দূরের পায়ের নিচে ও কোমরে হাত রাখবে এবং যিনি মাথার পাশে আছেন তিনি ব্যক্তির কাঁধে ও পিঠে হাত রাখবে। এবার ব্যক্তিকে তিনজন তাদের পাশে কাত করানোর জন্য টানবেন। অপর পাশের দু'জন এ কাজে সহায়তা করবেন। মাথার পেছনে থাকা প্রধান প্রাথমিক চিকিৎসক শরীরের সাথে সঙ্গতি রেখে মাথা ও ঘাড় ঘুরাতে সহায়তা করবে। কাত করার পর মেরুদন্ডের সাথে সঙ্গতি রাখার জন্য উপরের পাটিকে সামান্য উঁচু করে রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে প্রতি বছর অনেক মানুষের মৃত্যু হয় পানিতে ডোবার কারণে। বিশেষ করে বন্যা প্ৰবণ এলকায় বন্যাকালীন সময়ে কোনো কোনো স্থানের শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ পানিতে ডোবা।
আমাদের দেশে পানিতে ডোবার প্রচলিত প্রাথমিক চিকিৎসা বলতে ব্যক্তিকে মাথায় তুলে বা হাত ধরে ঘুরানো যাতে করে পেটের পানি বেরিয়ে আসে। এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করার পর জীবনরক্ষাকারী জরুরি প্রথম কাজটি হচ্ছে মুখের ভেতর পরীক্ষা করে, শ্বাসনালি খুলে দিয়ে প্রয়োজনে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়া। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাথমিক চিকিৎসক পারেন ডুবন্ত মানুষের জীবন বাচাতে।
পানিতে ডুবে মৃত্যুর কারণ
পানিতে ডোবা ব্যক্তি যখন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা চালায় তখন নাক মুখ দিয়ে পানি ঢুকে পাকস্থলি ও ফুসফুস পানিতে ভরে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থা কিছুক্ষণ চললে বিপদাপন্ন ব্যক্তির শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হবার সম্ভাবনা থাকে।
পানি থেকে উদ্ধার
কোনো ব্যক্তি পুকুর, জলাশয়, সমুদ্র বা নদীতে ডুবে গেলে তাকে উদ্ধারের জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে-
মনে রাখবে- ডুবন্ত ব্যক্তি যেন কখনোই তোমাকে জাপটে ধরতে না পারে। সে ক্ষেত্রে তুমি ও ডুবন্ত ব্যক্তি দু'জনেই ডুবে যেতে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
প্রাথমিক চিকিৎসা
১। ব্যক্তিকে মাটিতে শুইয়ে দাও। সাড়া দেওয়ার পর্যায় পরীক্ষা কর। শ্বাসনালি খুলে দাও। শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা কর। তোমার সঙ্গী কাউকে হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে বল।
২। যদি শ্বাস চালু না থাকে তাহলে জীবন রক্ষাকারী ৫টি প্রাথমিক ফুঁ দিন ।
৩। এরপর ৩০ বার বক্ষ চাপ ও ২ বার ফুঁ দাও। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি না হলে ৩০:২ হারে সিপিআর প্রয়োগ করতে হবে। ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি হলে কাশি দিবে অথবা চোখ খুলে তাকাবে বা নড়াচড়া করবে ও শ্বাস নিবে।
৪। ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হলে তাঁর ভিজা কাপড় চোপড় খুলে তাঁকে চাদর বা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া প্রতিরোধ করার জন্য এ ব্যবস্থা জরুরি। ব্যক্তিকে রিকভারি পজিশনে রাখ। মনিটর কর-সাড়া দেওয়ার পর্যায়, পাল্স, শ্বাস চলাচল।
সাবধানতা
আমাদের দেশে পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদের প্রচলিত ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানসম্মত নয়। মাথায় তুলে ঘুরানো বা পা ধরে ঘুরোনোর ফলে পেট থেকে পানি বের হয়ে আসে ঠিকই কিন্তু তার চেয়ে বেশি জরুরি প্রচলিত ব্যবস্থাপনায় শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করা।
ক. জ্বর (Fever)
আমাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেড়ে যাওয়া অবস্থাকে জ্বর বলে। জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, জ্বর হচ্ছে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। মানুষের শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি হলে সে অবস্থাকে জ্বর বলে।
জ্বরের কারণ
বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ ও সংক্রমণ থেকে জ্বর হতে পারে।
জ্বর যদিও একটি সাধারণ অসুস্থতা তথাপি কখনো কখনো কোনো কোনো জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে গিয়ে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করে। কয়েকটি প্রধান জ্বর সম্পর্কে এই অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
প্রাথমিক চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বর কি?
ডেঙ্গু এক ধরনের ভাইরাস জাতীয় জ্বর। শহর এলাকায় সীমিত। ‘এডিস’ প্রজাতির মমার কামড়ে এই ভাইরাস ছড়ায়।
উপসর্গ ও লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসা
ম্যালেরিয়া জ্বর কি?
এই জ্বর বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সীমিত। এটি ম্যালেরিয়া, প্লাসমোডিয়াম নামক পরজীবী দ্বারা সংঘটিত একটি রোগ। স্ত্রী এনোফিলিস নামক মশার কামড় ছাড়াও রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমেও ম্যালেরিয়া রোগ হতে পারে।
উপসর্গ ও লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসা: জ্বরের সাধারণ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অবশ্যই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে।
টাইফয়েড জ্বর কি
বাংলাদেশে টাইফয়েড রোগের ব্যাপকতা খুব বেশি। টাইফয়েড রোগের জীবাণু রোগীর মলের সাথে বেরিয়ে দূষিত পানির মাধ্যমে অপর সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে প্রবেশ করে। এই রোগের কারণে সালমনেলা টাইফি। ইহা পানি বাহিত রোগ।
উপসর্গ ও লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসা: টাইফয়েড রোগ সন্দেহ হলে জ্বরের সাধারণ পরিচর্যার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
খ. হিট স্ট্রোক কি: উত্তপ্ত আবহওয়ার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করে তাকে হিট স্ট্রোক বলে।
হিট স্ট্রোকের কারণ: দীর্ঘ সময় ধরে যদি প্রকৃতির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি থাকে অথবা কোনো ব্যক্তি যদি অধিক সময় ধরে উত্তপ্ত পরিবেশে কাজ করেন তাহলে আমাদের মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা লোপ পায়। ফলশ্রুতিতে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। কোনো কোনো ওষুধ সেবনের ফলেও এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা
হাইপোথারমিয়া (Hypothermia):
কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা ৯৫° ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৫° ডিগ্রি সেলসিয়াস) এর নিচে নেমে গেলে সে অবস্থাকে হাইপোথারমিয়া বলে।
হাইপোথারমিয়ার কারণ
হাইপোথারমিয়ার লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
প্রাথমিক চিকিৎসা
সাবধানতা
গ. নিউমোনিয়া কি
বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। এই রোগে শিশুর ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া কখনো কখনো বৃদ্ধ ব্যক্তিদেরও হয়ে থাকে।
উপসর্গ ও লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসা
নিউমোনিয়া একটি জীবানু ঘটিত রোগ। বর্তমানে নিউমোনিয়া উন্নত চিকিৎসা আছে। সময়মতো চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলে শিশু/ব্যক্তি বেঁচে যেতে পারে।
ঘ. ডায়রিয়া
ডায়রিয়া মূলত একটি পানিবাহিত রোগ। তাছাড়া অপরিচ্ছন্ন হাত, বাসি পচা খাবার, মাছি ইত্যাদির মাধ্যমেও ডায়রিয়া ছড়াতে পারে। ডায়রিয়ার মূল কারণ কিছু ভাইরাস ও জীবাণু। আক্রান্ত ব্যক্তির মলের মধ্যে ডায়রিয়ার ভাইরাস বা জীবাণু উপস্থিতি থাকে, তা দূষিত পানি বা অন্য কোনো মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির মুখ দিয়ে প্রবেশ করে তাঁকে সংক্রমিত করে। সকল বয়সের মানুষই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে, তবে সাধারণত শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
ডায়রিয়ার উপসর্গ ও লক্ষণ: পাতলা পায়খানা ও বমিই প্রধান উপসর্গ। সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পানি স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসা
কখন হাসপাতালে প্রেরণ করবে?
প্রতিরোধের উপায়: ডায়রিয়া একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। উন্নত স্যানিটেশন ও ব্যক্তি স্বাস্থ্য অভ্যাস বজায় রাখার মাধ্যমে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব ও সহজ।
ঙ. পানির স্বল্পতা (Dehydration)
আমাদের শরীরের পানি স্বাভাবিক পরিমাণের চাইতে কমে গিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি করে তাকে পানি স্বলপ্তা বলে।
আমাদের দেশে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ প্রতি ২৪ ঘন্টায় সাধারণত ২.৫-৩ লিটার পানি পান করে থাকেন। শরীরের অভ্যন্তরের পরিচ্ছন্নতার কাজ সম্পন্ন করে ১.৫ লিটার পানি প্রসাবের মাধ্যমে এবং বাকি ১.৫ লিটার ঘাম, মল, নিশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত হয়।
পানি স্বল্পতার কারণ
পানি স্বল্পতার লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসা
কোনো কারণে আমাদের শরীর থেকে পানি বা জলীয় অংশ বেরিয়ে গেলে তার সাথে কিছু প্রয়োজনীয় লবণও বেরিয়ে যায়। তাই পানিস্বল্পতার প্রাথমিক চিকিৎসায় পানি পুরণের সাথে সাথে লবণের বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।
সাবধানতা
ছ. হার্ট এটাক (Heart Attack)
হৃৎপিণ্ড বা হার্টে রক্ত সরবরাহকারী করোনারি ধমনিতে বাধার কারণে হৃৎপিন্ডের মাংসপেশি পর্যাপ্ত অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে হার্ট এটাক বলে। হার্ট এটাক বর্তমান বিশ্বে মৃত্যুর একটি প্রধানতম কারণ। হার্ট এটাকের কারণ ও ঝুঁকিসমূহ
হার্ট এটাকের লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ
প্রাথমিক চিকিৎসা
সাবধানতা
জ. ব্রেন সেট্রাক (Brain Strock)
মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে ব্রেন স্ট্রোক বলে। ব্রেন স্ট্রোক সাধারণত বয়স্ক লোকদের, বিশেষ করে যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাঁদের মধ্যে দেখা যায়। ব্রেন স্ট্রোকের কারণ ও ঝুঁকিসমূহ:
ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
প্রাথমিক চিকিৎসা
সাবধানতা
ঝ. আহত বা অসুস্থ ব্যক্তি পরিবহন
প্রাথমিক চিকিৎসার তিনটি কার্যস্তরের মধ্যে সর্বশেষ স্তরটি ব্যক্তিকে স্থানান্তর করা। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের পর প্রয়োজনবোধে ব্যক্তিকে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থানান্তর করা না হলে তা ব্যক্তির জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। আহত বা অসুস্থ ব্যক্তিকে স্থানান্তর করার জন্য সব সময় হাতের নাগালে সুব্যবস্থা নাও থাকতে পারে । তাই একজন প্রাথমিক চিকিৎসকের এ বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।
অসুস্থ ব্যক্তিকে পরিবহনের গুরুত্ব
পরিবহনের পূর্ব প্রস্তুতি
উত্তোলনের সময় বিবেচ্য বিষয়সমূহ
পরিবহনকালে লক্ষণীয়
পরিবহনের বিভিন্ন পদ্ধতি
স্বাস্থ্য হলো শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে সামগ্রিক ও পূর্ণাঙ্গ সুস্থতা, কেবল কোনো রোগের অনুপস্থিতি নয়। মানসিক স্বাস্থ্য হলো আমাদের আবেগীয় ও আত্মিক সহনক্ষমতা, যা দুঃখ, কষ্ট ও হতাশার মধ্যে টিকে থেকে জীবনকে উপভোগ করতে সাহায্য করে। এটি একটি সুস্থতার অনুভুতি, যার মূলে রয়েছে নিজের ও অন্যের প্রতি সম্মান ও সক্ষমতা সম্পর্কিত বিশ্বাস। মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ই একটি অংশ।
মনস্তাত্বিক আঘাত
ব্যক্তি পরিবার বা সামাজিক যে কোনো পর্যায়েই যখন প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়টি উত্থাপিত হয় আমরা সাধারণত শারীরিক আঘাত বা অসুস্থতা বুঝে থাকি। যে কোনো ধরনের শারীরিক আঘাত বা অসুস্থতার পাশাপাশি একজন ব্যক্তির মনের মধ্যে নেতিবাচক কিছু পরিবর্তন আসে যেমন- অনিশ্চয়তা, অনিরাপত্তা। তাই আঘাত বা অসুস্থতার প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি ব্যক্তির মনোবল উজ্জীবিত রাখাও একজন প্রাথমিক চিকিৎসকের নৈতিক দায়িত্ব। আবার এমন অনেক ঘটনা ঘটে যাতে শারীরিক কোনো আঘাত বা অসুস্থতা থাকে না কিন্তু ব্যক্তি মানসিকভাবে আঘাতগ্রস্ত হয়ে থাকেন। এ অধ্যায়ে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ঝুঁকিমূলক উপাদান
প্রতিরক্ষামূলক উপাদান
মনস্তাত্ত্বিক আঘাতের কারণ
মনস্তাত্ত্বিক আঘাতের উপসর্গ ও লক্ষণ
প্রাথমিক চিকিৎসকের করণীয়
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক পরিচর্যার লক্ষ্য হচ্ছে:
বিষণ্ণতার লক্ষণসমূহ:
আবেগের ওপর প্রভাব :
চিন্তার ওপর প্রভাব :
আচরণের ওপর প্রভাব :
শরীরের ওপর প্রভাব :
উদ্বেগজনিত অসুস্থতার লক্ষণগুলো :
শারীরিক প্রকাশ
মানসিক প্রকাশ
আচরণগত প্রকাশ
ইটিং ডিসঅর্ডার বা খাদ্যবিকার কী?
আচরণগত লক্ষণ
শারীরিক লক্ষণ
মানসিক লক্ষণ
খাদ্যবিকারের ধরন
খাদ্যবিকারের কারণ :
সিজোফ্রেনিয়া
লক্ষণসমূহ:
ভ্রান্ত বিশ্বাস বা ডিলিউশান
অলীক প্রত্যক্ষণ বা হ্যালুসিনেশান
চিন্তার ক্ষেত্রে অসুবিধা: মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা করার ক্ষমতায় এক ধরনের সমস্যা। কেউ একজন হয়ত খুব দ্রুত চিন্তা করতে পারে, এক চিন্তা থেকে আর এক চিন্তায় দ্রুত চলে যেতে পারে; আবার তার চিন্তা করার ক্ষমতা খুব শ্লথও হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় বিচারবোধ, যোগাযোগ করার ক্ষমতা এবং দৈনন্দিন কাজগুলো করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার (ম্যানিক ডিপ্রেশন)
ম্যানিয়া পর্যায়ের লক্ষণসমূহ:
সাইকোসিসের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা
করণীয় ১: সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে এগিয়ে যাও, সমস্যাটি বুঝ, ঝুঁকি নিরূপন কর ও সংকট উত্তরণে সহায়তা দাও
আত্মহত্যার সম্ভাব্য সতর্কতা চিহ্ন:
করণীয় ২: যে বিষয়গুলো আপনার আলোচনার জন্য সহায়ক হতে পারে;
দ্বিতীয় ধাপ : ব্যক্তিগত ও নৈতিক মানদণ্ডে অন্যকে বিচার না করে সহমর্মিতার সাথে তার কথা শুনুন
কথা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তুমি এরকমভাবে কিছু বলতে পার;
মনোভাব
মৌখিক দক্ষতা
করণীয়-৩: আশ্বস্ত কর ও প্রয়োজনীয় তথ্য দাও
আমি ব্যক্তিকে যা দিতে পারি :
করণীয় ৪: উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ সহায়তা নিতে ব্যক্তিকে উৎসাহিত কর
করণীয় ৫: অন্যান্য সহায়তা নিতেও উৎসাহিত কর :
একজন বিষন্ন ও আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে সাহায্য করা বেদনাদায়ক ও ক্লান্তিকর:
পারদর্শিতার মানদন্ড
ব্যক্তিগত সুরক্ষ সরঞ্জাম (PPE): প্রয়োজন অনুযায়ী।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস ইকুইপমেন্ট ও মেশিন): ফার্স্ট এইড কিটের অন্তর্ভুক্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
অর্জিত দক্ষতা /ফলাফলঃ
ফলাফল বিশ্লেষন ও মন্তব্যঃ আশাকরি বাস্তব জীবনে তুমি এর যথাযথ প্রয়োগ করতে পারবে।
শারিরীকভাবে অক্ষম ব্যক্তি বলতে আমরা বুঝি এমন কোনো ব্যক্তি, যে তার কোনো দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা, বার্ধক্যজনিত কারণ অবা জন্মগত ত্রুটি বা দুর্ঘটনাকবলিত কারণে আজীবন প্রতিবন্ধীতার কারণে দৈনন্দিন জীবনের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সহায়ক যন্ত্র এবং প্রযুক্তির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল সামগ্রিক সুস্থতা উন্নত করা যা একজন ব্যক্তির কার্যকারিতা বজায় রাখা। কার্যকারিতা, অক্ষমতা এবং স্বাস্থ্যের ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন (ICF) অনুযায়ী সহায়ক যন্ত্র এবং প্রযুক্তি হ'ল যে কোনো পণ্য, যত্ন, সরঞ্জাম বা প্রযুক্তি যা বিশেষভাবে সক্ষম বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন (ISO) সহায়ক যন্ত্রগুলোকে আরও বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করে বিশেষভাবে উৎপাদিত বা সাধারণভাবে উপলব্ধ পণ্য হিসাবে, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দ্বারা বা তাদের জন্য ব্যবহৃত হয়: তাদের অংশগ্রহণের জন্য; তাদের সুরক্ষা, সমর্থন, প্রশিক্ষণ, শরীরের কাঠামো এবং কার্যকলাপের বিকল্প হিসেবে; ৰা প্রতিবন্ধকতা, কার্যকলাপের সীমাবদ্ধতা বা অংশগ্রহণের সীমাবদ্ধতা প্রতিরোধ করতে।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা
উল্লেখিত শিখনফল অর্জনের লক্ষ্যে এই অধ্যায়ে আমরা বভিন্নি আইটেমের জব (কাজ) সম্পন্ন করব। এই জবের মাধ্যমে আমরা শারীরকি অক্ষমতায় ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো সনাক্ত করতে পারবো, ব্যবহার ও রক্ষণাবক্ষেণরে উপায় জানতে পারবো। জবগুলো সম্পন্ন করার পূর্বে প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক বিষয়সমূহ জানব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অক্ষমতা বা প্রতিবন্ধীতার তিনটি মাত্রা আছে:
১। জন্মগত ত্রুটি
২। বাহ্যিক আঘাত
উদাহরণস্বরূপ, মস্তিষ্কের আঘাত বা মেরুদণ্ডের আঘাত
৩। দীর্ঘস্থায়ীরোগ
উদাহরণস্বরূপ, ডায়াবেটিস, যা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, স্নায়ুর ক্ষতি বা অঙ্গহানির মতো অক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে। নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার, মসকুলার ডিসট্রোফি, নিউরোপ্যাথি ইত্যাদি।
৫। বার্ধক্য জনিত রোগ
শারীরিক অক্ষমতা হল একজন ব্যক্তির উল্লেখযোগ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী অবস্থা যা তার শরীরের যেকোন একটি অংশকে প্রভাবিত করে তাদের শারীরিক কার্যকারিতা, গতিশীলতা, সহনশীলতা বা দক্ষতাকে দুর্বল ও সীমিত করে। শারীরিক ক্ষমতা হ্রাসের ফলে ব্যক্তির শরীরের চলনশক্তি যেমন, হাত ও বাহু নড়াচড়া করা, বসা- দাঁড়ানো-হাঁটা এবং সেইসাথে তাদের পেশী নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কমে যায়। শারীরিক অক্ষমতা ব্যক্তির নির্দিষ্ট কাজগুলো করতে বাধা দেয় না, তবে সেগুলোকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে শারীরিক অক্ষমতাকে সংজ্ঞায়িত করা হয় শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে না, বরং এটি কীভাবে দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে তার উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ শারীরিক অক্ষমতার উদাহরণ:
সেরিব্রাল পালসি: সেরিব্রাল পালসি শিশুদের বিকাশকালীন সময়ে ঘটে, যার ফলে বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আচরণগত অক্ষমতা সহ সাধারণত নড়াচড়া এবং সমন্বয়ের সমস্যা হয়ে থাকে ।
মস্তিষ্কের আঘাত: মস্তিষ্কের আঘাত যেমন: স্ট্রোক, মাথায় আঘাত, অ্যালকোহল, ওষুধ, অক্সিজেনের অভাব বা ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন রোগ সহ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। মস্তিষ্কের আঘাত ও আবদ্ধতা ব্যক্তির প্যারালাইসিসের কারণ হতে পারে।
মেরুদন্ডের আঘাত: ফলে শরীর এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্রিয়াকলাপের সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রতিবন্ধকতা হতে পারে। মেরুদণ্ডের আঘাতও ব্যক্তির প্যারালাইসিসের কারণ হতে পারে।
মৃগী রোগ: মৃগীরোগ হল একটি স্নায়বিক অবস্থা যা একজন ব্যক্তির বারবার খিঁচুনি হওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি করে। ।
আর্থ্রাইটিস: আর্থ্রাইটিস হাড়ের সংযোগস্থলে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটা শিশুদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদেরও প্রভাবিত করতে পারে।
শারীরিক অক্ষমতায় ব্যবহৃত সহায়ক যন্ত্রগুলোকে গতিশীলতা সহায়ক যন্ত্রও বলা যায়। যেমন হুইলচেয়ার, ওয়াকার, ক্রাচ, মেডিকেল বেড এবং অর্থোটিক ডিভাইস।
হুইলচেয়ার হল চাকা সহ একটি চেয়ার যা অসুস্থতা, আঘাত, বার্ধক্যজনিত সমস্যা বা অক্ষমতার কারণে চলাফেরায় সমস্যা বা তা অসম্ভব হলে ব্যবহৃত হয়। হুইলচেয়ারগুলো তাদের ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন ধরনের ফর্ম্যাটে আসে। এগুলোতে বিশেষ বসার অভিযোজন, স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং স্পোর্টস হুইলচেয়ারগুলোর বিশেষ কার্যকলাপের জন্য নির্দিষ্ট হতে পারে। ব্যবহারকারী নিজে বা সাহায্যকারী কেউ বল প্রয়োগ করে ম্যানুয়াল হুইলচেয়ার চালায়। মোটর চালিত হুইলচেয়ারগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এগুলো ব্যাটারি এবং বৈদ্যুতিক মোটর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
একটি মেডিকেল বেড হল একটি বিছানা যা বিশেষভাবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য বা যাদের কিছু বিশেষ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন তাদের জন্য ব্যবহার করা হয়। রোগীর আরাম ও সুস্থতার জন্য এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সুবিধার জন্য এই বিছানাগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাধারণত এর অংশগুলোর মধ্যে আছে বিছানা, মাথা এবং পায়ের জন্য উচ্চতার সামঞ্জস্য করার ব্যবস্থা, সামঞ্জস্যযোগ্য পার্শ্ব রেল, এবং মেডিকেল বেডের সকল কার্যকারিতার ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল। মেডিকেল বেডের কার্যকারিতা এবং শক্তির উৎসের উপর ভিত্তি করে এগুলো তিন ধরনেরঃ
• ম্যানুয়াল বেড
• সেমি ইলেক্ট্রনিক বেড
• পূর্ণ ইলেক্ট্ৰনিক বেড
শারিরীক অক্ষমতায় ব্যবহৃত সহায়ক যন্ত্র
বৈশিষ্ট্য
প্রাত্যহিক পরিচর্যা:
১. বিছানা এবং গদি প্রতিদিন পরীক্ষা এবং পরিষ্কার করা উচিত। রোগী যখন বিছানায় থাকবে না তখন এটা করতে হবে। যদি এটি সম্ভব না হয় তবে রোগীকে ব্যাখ্যা করতে হবে যে কি করা হচ্ছে।
২. হাত ধুয়ে একটি এপ্রোন এবং এক জোড়া গ্লাভস পরে নিতে হবে।
৩. ডিসপোজেবল ওয়াইপ ব্যবহার না করলে, প্রস্তুতকারকের নির্দেশিকা অনুযায়ী বালতিতে পরিষ্কার পানি ও ডিটার্জেন্ট ব্যবহার করতে হবে।
৪. বিছানাটি সুবিধাজনক উচ্চতায় উঠাতে বাঁ নামাতে হবে।
৫. বিছানার ফ্রেম থেকে যেকোনো জিনিস সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে।
৬. উপর থেকে নীচের দিকে পরিষ্কার করার পর বেডের উপরের অংশগুলো তারপর পৃষ্ঠের প্রান্ত এবং নীচের দিকগুলো পরিষ্কার করতে হবে।
৭. গদি পরিষ্কার করার সময়, একটি S-আকৃতিতে এবং অন্য আরেকটি কাপড় ব্যবহার করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। গদিটি ঘুরিয়েনাও এবং নীচের অংশটি পরিষ্কার করার পর সমস্ত প্রাপ্ত পরিষ্কার কর। ময়লা হয়েগেলে পরিষ্কার করার দ্রবণ এবং কাপড় পরিবর্তন করে গদিটি শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর একটি জীবাণুনাশক দিয়ে সমস্ত পৃষ্ঠ মুছে ফেলতে হবে।
৮. বিছানা সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে বেডশিট বিছিয়ে বিছানাটিকে তার আসল অবস্থানে নিয়ে আসতে হবে।
৯. পরিষ্কার করার জন্য প্রবণ ব্যবহার করা হয়েছে তা ফেলে দিতে হবে।। এপ্রোন এবং গ্লাভস খুলে হাত আবারো ধুয়ে নিতে হবে।
১০. পরিষ্কারের সময় ও তারিখ চার্টে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।
একটি ওয়াকার বা হাঁটার ফ্রেম এমন একটি ডিভাইস যা হাঁটার সময় ভারসাম্য বা স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অতিরিক্ত সহায়তা দেয়, সাধারণত বয়স-সম্পর্কিত গতিশীলতার অক্ষমতা বা প্রতিবন্ধীতার কারণে। যারা পায়েৰা পিঠের আঘাত থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন তারা প্রায়ই ওয়াকার ব্যবহার করেন। এটি সাধারণত যারা হাঁটার সমস্যা বা হালকা ভারসাম্যের সমস্যা আছে তারা ব্যবহার করেন।
বিভিন্ন ধরনের ওয়াকার
১. হাইব্রিড ওরাকার (Hybrid Walker):
একটি হাইব্রিড ওয়াকারে দুটি পা থাকে যা পার্শ্বীয় ভারসাম্য রক্ষায় সমর্থন দেয়। এটি ব্যবহারকারীকে এক বা দুই হাতে ব্যবহার করে, সামনে ও পাশে, পাশাপাশি একটি সিঁড়ি আরোহণের জন্য সামঞ্জস্যতা প্রদান করে।
২. রোলেটর (Rollator) :
ওয়াকারের একটি ভিন্ন পদ্ধতি হ'ল রোলটর, যাকে ঢাকাযুক্ত ওয়াকারও বলা হয়। রোলেটরটিতে তিন বা চারটি বড়চাকা, হ্যাভেলবার এবং একটি ফ্রেম থাকে, যা ব্যবহারকারীকে সহজে চলাফেরায় সাহায্য করে। এগুলোর উচ্চতা উঠা নামা করে ব্যবহারকারীর সুবিধা অনুযায়ী সামজস্য করা যায়। হ্যান্ডেলৰাৱে হ্যান্ডৱেক আছে যার সাহায্যে রোলেটরটিকে তাৎক্ষণিকভাবে থামানো সম্ভব।
৩. জিমার ফ্রেম (Zimmer Frame):
জিমার ফ্রেমটি হাঁটার সাহায্যের সবচেয়ে উপযোগী একটি ওয়াকার। জিমার ফ্রেমের সামনে দুটি ঢাকা আছে।
শারিরীক অক্ষমতায় ব্যবহৃত সহায়ক যন্ত্র
ওয়াকার ব্যবহারকারীর জন্য টিপস
পরিচর্যা পদ্ধতি
১. সময়ের সাথে সাথে ওয়াকার বেশ নোংরা হতে পারে। এর ফলে অংশগুলো দ্রুত জীর্ণ হয়ে যেতে পারে। সপ্তাহে একবার সাবান এবং পানি দিয়ে ওয়াকার মুছতে হবে। ফ্রেম, চাকা, আসন এবং হ্যান্ডলগুলো পরিষ্কার করতে হবে। চাকাগুলো নিখুঁতভাবে ঘুরছে কিনা তা লক্ষ্য করতে হবে। ওয়াকার বৃষ্টিতে ভিজে গেলে দ্রুত শুকিয়েনিতে হবে।
২. যদি ওয়াকারে কোনো সিট থাকে, তা সপ্তাহে একদিন পরীক্ষা করে দেখতে হবে। নিরাপদে থাকার জন্য নিশ্চিত করতে হবে যে সিটটি ছিড়ে নিয়েছে কিনা তা পরীক্ষা কর।
৩. যদি ওয়াকারে কোনো চাকা থাকে, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে যে তা চাকাগুলো সমানভাবে মাটিতে স্পর্শ করে কিনা। না করলে ওয়াকার মেরামত না করে ব্যবহার করা যাবে না। এই চাকাগুলো সঠিকভাবে সারিবদ্ধ না থাকলে সহজেই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ভাই কোনো সমস্যা হলে একজন সারভিসিং এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে হবে ।
৪. গ্রিপ পরীক্ষা করতে হবে। ওয়াকারের গ্রিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিপ নষ্ট হলে পরিবর্তন করতে হবে।
৫. ব্রেক হল রোলিং ওয়াকারের সবচেয়েগুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলো সঠিকভাবে কাজ না করলে, ওয়াকার ব্যবহারকারী দুর্ঘটনার আক্রান্ত হতে পারেন।
পারদর্শীতার মানদণ্ড :
ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE): প্রয়োজন অনুযায়ী।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি/ইকুইপমেন্ট
১। নরম কাপড়, ২। উষ্ণ পানি, ৩।ডিটারজেন্ট পাউডার, ৪।স্ক্রু-ড্রাইভা ৫। লগ বুক
কাজের ধারাঃ
১। একটি নরম, ভেজা কাপড় দিয়ে বিছানার উপরিভাগ হাত দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। শক্ত কোন ক্লিনার বা সাবান ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে শুধুমাত্র উষ্ণ জল এবং হালকা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হবে।
২. বিছানা মুছে এমনভাবে শুকিয়ে নিতে হবে যেন, ব্যবহার করা ডিটারজেন্ট বিছানায় জমে না থাকে ।
৩। বিছানার ম্যাট্রেছ পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে ম্যানুফ্রাকচারিং কোম্পানির নির্দেশীকা অনুসরণ করতে হবে।
৪। ম্যাট্রেছের কভার নষ্ট বা ছিড়ে গেলে তা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পরিবর্তন করে দিতে।
৫। বিছানায় বিভিন্ন জায়গায় লাগানো স্ক্রু, হুকিং পিন, হাই-লো সংযোগকারী টিউব, স্প্রিং ইত্যাদি পরীক্ষা করে তাতে গ্রীস লাগিয়ে দিতে হবে।
৬। প্রতি দুই বছরে, বিছানার রেল শ্যাফ্ট, নাইলন ওয়াশার এবং হাই-লো মেকানিজম পরীক্ষা করে তাতে গ্রীস লাগাতে হবে।
৭। সমস্ত বোল্ট, লকনাট এবং স্ক্রুগুলো পরিদর্শন করে তা এবং শক্ত করে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৮। সাইডরাইলগুলো সঠিকভাবে লাগানো আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে
৯। পায়ের এবং মাথার সাপোর্টের জন্য বেডের যে অংশ রয়েছে তা অক্ষত ও সঠিক আছে কি না, তা পরিক্ষা করতে হবে।
১০। বেডের ঢাকা সঠিকভাবে শক হয় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
১১। বেডটি পরীক্ষা করার দিন ও তারিখ লগ বইতে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।
কাজের সতর্কতাঃ
১। কাজের সময় পিপিই ব্যবহার পরতে হবে।
২। পদ্ধতির আগে এবং পরে সঠিকভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
৩। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানুয়াল সাথে রাখতে হবে।
৪। মনে রাখতে হবে যে, মেডিকেল বিছানা রক্ষণাবেক্ষন মানে জীবানুমুক্তকরন নয়
৫। কাজটি করার সময় পেশাগত ঝুঁকি এড়াতে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে।
অর্জিত দক্ষতা / ফলাফল: তুমি মেডিকেল বেড রক্ষণাবেক্ষণে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছ।
ফলাফল বিশ্লেষণ/মন্তব্য: আশাকরি বাস্তব জীবনে তুমি এর যথাযথ প্রয়োগ করতে পারবে।
পারদর্শিতার মানদণ্ড
ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE): প্রয়োজন অনুযায়ী ।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুইপমেন্টস ও মেশিন)
জব অনুযায়ী যদি প্রয়োজন হয়।
কাজের ধারাঃ
১। ওয়াকারটি শুধুমাত্র হাঁটার জন্য সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে এটি শুধুমাত্র চলাচল যোগ্য ফুটপাথ বা বাড়িতে ব্যবহার করতে হবে।
২। পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, যে সমস্ত চাকা এবং ভাঁজ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে কিনা এবং সমস্ত চাকা অবাধে চলাচল করে কিনা। সামনের চাকার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
৩। যদি লকিং সিস্টেম থাকে তাহলে সেই লকিং বন্ধনীটি পরীক্ষা করে সর্বদা নিশ্চিত করতে হবে যে, এটি ব্যবহারের জন্য নিরাপদে রয়েছে।
৪। যদি কোনো চাকা ঘুরতে বা নড়াচড়ায় অসুবিধা হয় এবং সেই ত্রুটির জন্য রোগীর কোনো ক্ষতির আশংকা থাকে তাহলে ওয়াকারটি ব্যবহার না করাই ভালো।
৫। মাসিক চেক - সাইড লকিং লেভেলগুলো সঠিকভাবে সুরক্ষিত কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
৬। কোন উপাদান আলগা আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
৭। ওয়াকারে যদি কোনো ব্রেক সন্নিবেশিত থাকে তাহলে তা পরীক্ষা করে ব্রেকগুলো সঠিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ন করে নিতে হবে।
৮। ওয়াকারটিকে হালকা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
৯। যদি ওয়াকারটিতে কোনো সমস্যা দেখা যায় তাহলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে তার সমাধান করতে হবে। রোগীকে ওয়াকার ব্যবহার করার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানদান করতে হবে।
১০। ওয়াকারটি রোগীর নাগালের মধ্যে একটি নির্ধারিত জায়গায় সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
অর্জিতি দক্ষতা/ফলাফলঃ তুমি ওয়াকার রক্ষনাবক্ষেনরে প্রক্রয়াটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়ছে। ।
ফলাফল বশ্লিষেন ও মন্তব্যঃ আশাকরি বাস্তব জীবনে তুমি এর যথাযথ প্রয়োগ করতে পারবে।
স্বাস্থ্যসেবা আমাদের সবার জন্য কোন কোন সময়ে অপরিহার্য একটি বিষয়, কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিষয়টি সকলের জন্য সব সময় অত্যাবশ্যক। জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের বিশেষ আগ্রহ আছে। এটি সাধারণত জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী বিষয় সমূহের কারণ ও প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করে। শুধুমাত্র চিকিৎসা সেবাদানকারীদের একার পক্ষে স্বাস্থ্য ব্যাবস্থায় উদ্ভূত স্বাস্থ্য সমস্যা বা ৰাধা অতিক্রম করে সমাধান করা কখনোই সম্ভব নয়। মানুষ যখন রোগাক্রান্ত হয় তখন আরোগ্য লাভের জন্য হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়। আর স্বাস্থ্যসেবা এবং জনস্বাস্থ্যের মূলনীতিই হল মানুষ যাতে রোগাক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা পড়ে ভুলতে পারে তার ব্যবস্থা করা। এছাড়াও জনস্বাস্থ্যের মূল কাজই হচ্ছে কমিউনিটি লেভেলে একটি অবিচ্ছিন্ন সুন্দর স্বাস্থ্য কাঠামো তৈরি করা, যাতে পুরো দেশের জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস ও সুস্বাস্থ্যের নির্ভুল জায়গা নিশ্চিত করা। জনস্বাস্থ্য বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সকল কর্মীকে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান, রোগ প্রতিরোধ ও জনগনের স্বাস্থ্য উন্নয়নে দক্ষতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধারন করে।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমর
জনস্বাস্থ্য বলতে কোনো একটি এলাকার সব শ্রেণির জনগণের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ভাবে সুস্থ থাকাকে বোঝায়। সেই জন্য জনস্বাস্থ্য বিষয়টির মধ্যে শুধু স্বাস্থ্যের কথা বলা হয় না। এর মধ্যে রয়েছে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, প্রজনন ও শিশু স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ, রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থা, পুষ্টি, পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানীয় জল, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। তাই, কেবল মাত্র নিজের নয়, এলাকার সমস্ত মানুষের এবং পরিবেশের সুস্থ থাকাটাও জনস্বাস্থ্যের আওতায় পড়ে ।
উইকিপিডিয়া মতে “জনস্বাস্থ্য হল সমাজ, সংগঠন, সরকারি এবং বেসরকারি, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মিলিত চেষ্টা এবং তথ্যাভিজ্ঞ পছন্দের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ, জীবনকাল বৃদ্ধি ও মানব স্বাস্থ্য উন্নয়নের বিজ্ঞান ও কলা।" জনগণের স্বাস্থ্য ও তার ঝুঁকির দিকগুলো বিশ্লেষণ করা জনস্বাস্থ্যের মূল বিষয়।
জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বঃ জনস্বাস্থ্য বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সেবাদানের মান উন্নত এবং জীবন দীর্ঘায়িত করার জন্যে ব্যপক ভুমিকা রাখে । স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধের মাধ্যমে ব্যক্তিরা একটি সুস্বাস্থ্যের মাধ্যমে তাদের সুদীর্ঘ জীবন কাটাতে পারে। বছরের বেশি সময় ভালো স্বাস্থ্য নিয়ে কাটাতে পারে। জনস্বাস্থ্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাস্থ্য সমস্যা সনাক্ত করতে সাহায্য করে এবং রোগের বিস্তার এড়াতে যথাযথভাবে ভুমিকা রাখে। জনস্বাস্থ্যের একটি মৌলিক গুণ হল এর প্রতিরোধমূলক অবস্থা। কারণ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অনেক বেশি কার্যকর এবং অনেক কম ব্যয়বহুল। জনস্বাস্থ্য বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মসূচি, প্রচারাভিযানের মাধ্যমে জনগনকে সচেতনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে এবং সরকারী স্বাস্থ্যনীতিতে অসামান্য অবদান রাখে। এই ধরনের পদক্ষেপ জনগণের স্বাস্থ্য এবং জীবনকাল বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উন্নয়নশীল ও উন্নত-উভয় ধরনের দেশেই স্থানীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং বে-সরকারি সংগঠনের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টায় জনস্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একটি আন্তর্জাতিক মাধ্যম যেটি বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলো পরিচালনা করে এবং কাজ করে।
জনস্বাস্থ্যের প্রকৃতিঃ জনস্বাস্থ্য-এর মূল প্রকৃতি হলো :
১। বিভিন্ন রোগীর রোগ তদারকি এবং স্বাস্থ্যকর আচরণ নিশ্চিত করা,
২। গোষ্ঠী ও জনসাধারনের উৎসহদানের মাধ্যমে রোগ, আঘাত এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা।
৩। রোগকে চিকিৎসা ছাড়া সহজ কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিরোধ করা। যেমন: উদাহরণস্বরূপ, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মত সাধারণ কাজটি দিয়েই অনেক সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়াও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার, টিকাদান কন্ডোম বিতরণ প্রচলিত প্রতিরোধমূলক জনস্বাস্থ্য কর্মসূচীর উদাহরণ।
বাংলাদেশে আয়তনের দিক থেকে মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী। সাথে রয়েছে সীমিত সম্পদের সঠিক ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ। এই অবস্থায় নিম্ন লিখিত স্বাস্থ্য সমস্যা আমাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছেঃ
যে রোগগুলো একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় না, অর্থাৎ ছোঁয়াচে না তাদের অসংক্রামক ব্যাধি (Noncommunicable diseases, or NCDs) বলা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটি একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত শারীরিক অবস্থা বা রোগ যেটা এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে ছড়ায় না। দুনিয়াজুড়ে অসংক্রামক ব্যাধি এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদূরোগ ইত্যাদি অসংক্রামক ব্যাধি এখন মরণ ঘাতক। অসংক্রামক ব্যাধি আক্রান্ত মানুষের মধ্যে তাদের পূর্ব পুরুষের রোগের জোরালো পারিবারিক ইতিহাস থাকে । এই রোগগুলোর ক্ষেত্রে পারিবারিক বা জিনগত (জেনেটিক) ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে যোগ হয় পরিবেশগত উপাদান (Environmental factors) যেমন পরিবেশ দূষণ, অস্বাস্থ্যকর ও বাজে খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রমের অভাব, ধূমপান, মানসিক চাপ ইত্যাদি। এই দুয়ে মিলে বর্তমান সময়ে অনেক কম বয়সেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এ ধরনের রোগে। ফলে সারা পৃথিবীজুড়ে অনেক মানুষ কম বয়সে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন, ফলে পারিবারিক ব্যয় বাড়ছে। সময়মতো সচেতন হলে বংশ পরম্পরায় থাকা এসব রোগ প্রতিরোধ করা সহজ। অসংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদরোগ, হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ক্যান্সার মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিসঅর্ডারস, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, পরিবেশগত স্যানিটেশন, অপুষ্টি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সমস্যা, পেশাগত স্বাস্থ্য সমস্যা, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, সড়ক পথের দুর্ঘটনা, পানিতে ডুবা ইত্যাদি।
অসংক্রামক ব্যাধির প্রকারভেদঃ
সাধারণত চার ধরনের অসংক্রামক ব্যাধি আছে এবং সেগুলো হলো:
১। হৃদরোগ (cardiovascular diseases) যেমন হৃদযন্ত্রের বৈকল্য (heart attacks) এবং উচ্চ রক্তচাপ জনিত মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (stroke); ২ ক্যান্সার, ৩।দীর্ঘকালস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোপ (chronic respiratory diseases) যেমন দীর্ঘকাল স্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের বিশেষত ফুসফুসের বাধাগ্রস্থতার রোগ এবং ৪। হাঁপানি এবং বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস
সংক্রামক ব্যাধি (Communicable diseases) সংক্রামক রোগ বলতে সেই সব রোগ বোঝায়, যেসব রোগ একজন থেকে আর একজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ছড়িয়ে পড়া শুধু মানুষ থেকে মানুষ নয়, পশু পাখি থেকে মানুষে, পশু পাখি থেকে পশু পাখির মাঝে, কিংবা মানুষ থেকে পশু পাখির মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বর্তমানে সংক্রামক রোগ এর প্রকোপ অনেকাংশে কমে এসেছে। বরং অসংক্রামক জীবন ঘাতী রোগ মহামারী আকারে দেখা দিচ্ছে। সংক্রামক রোগের মধ্যে রয়েছে- যক্ষ্মা, এইচআইভি, টিটেনাস, ম্যালেরিয়া, হাম, রুবেলা, কুষ্ঠ, কোভিড-১৯, ডায়রিয়া, ফাইলেরিয়া, ফুড পয়জনিংইত্যাদি।
সংক্রামক রোগের কারণগত শ্রেণিবিভাগ: ১। ব্যাকটেরিয়াল: যক্ষ্মা, ধনুস্টংকার, টাইফয়েড, কলেরা। ২। ভাইরাল: ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা, রোটা ভাইরাল ডায়রিয়া, ভাইরাল হেপাটাইটিস, এইডস, হাম, রুবেলা।
৩। ছত্রাক জনিত: বিভিন্ন চর্মরোগ, ছত্রাক জনিত ফুসফুস সংক্রমণ, মস্তিষ্ক ও মস্তিষ্ক আবরন সংক্ৰমণ, মহিলাদের শ্বেতপ্রদর ইত্যাদি। ৪। প্রোটিন জনিত: ম্যাড কাউ, ক্রুজফিল্ড জ্যাকব
সংক্রমণ ঝুঁকি
১।ডায়াবেটিস রোগী, ২।জন্মগত স্বপ্ন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সংক্রমণ ঝুঁকি বেশি। তাকিছু রোগেও শরীর এর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যেমন এইডস, যক্ষ্মা, কালাজ্বর, ক্যনসার। ৪।তাছাড়া অতি ছোট শিশু এবং অতি বৃদ্ধদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি
পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশা রয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ১০০ টির মত প্রজাতি রোগ হুড়ায়।এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে মশা থেকে ২০টির মত রোগ ছড়ায়।পুরো পৃথিবীতে কীটপতঙ্গের আক্রমণে প্রতিবছর যত মানুষ মারা যান, তাদের মধ্যে মশাবাহিত রোগে মারা যান সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ (সূত্রঃ বিবিসি বাংলা, ঢাকা, ২০ অগাস্ট ২০২১)। মশাবাহিত রোগ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ২০শে অগাস্ট পালিত হয় বিশ্ব মশা দিবস। মশার একটিমাত্র কামড় একজন মানুষের জন্য মরণঘাতি হয়ে উঠতে পারে। রোগসৃষ্টিকারী বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী বহন করায় মশার কামড়ে সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে(সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর, ২৮ আগষ্ট, ২০২১)। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মশাবাহিত পাঁচটি রোগের কথা জানা যায়। যথা-ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জাপানিজ এনসেফালাইটিস। নিন্মে এই পাঁচটি মশাবাহিত রোগ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো:
ম্যালেরিয়া
মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে ম্যালেরিয়া সবচেয়ে পুরোনো রোগ। ম্যালেরিয়া রোগটি স্ত্রী এনোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে হয়। এ রোগটির জন্য দায়ী প্লাজমোডিয়াম গোত্রভুক্ত কিছু পরজীবী। বাংলাদেশের সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার এবং ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
ফাইলেরিয়া
কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতি এবং ম্যানসোনিয়া মশার একটি প্রজাতির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফাইলেরিয়া রোপ হুড়ায়। ফাইলেরিয়া রোগে মানুষের হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে। একে স্থানীয়ভাবে গোদ রোগও বলা হয়।
ডেঙ্গু
এডিস মশার দুইটি প্রজাতি এডিস ইজিপ্টি এবং অ্যালবোপিকটাস, মুলত ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু ছড়ায়। এডিস মশা পাত্রে জমা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষাকালে এর ঘনত্ব বেশি হয়, ফলে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবও এ সময়ে বেড়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা হয়ে থাকে। তাঁর পেটে ব্যথাও হতে পারে। শরীরে বিশেষ করে মাংসপেশীতে তাঁর ব্যথা হয়। ক্ষরের ৪/৫ দিন পার হচ্ছে শরীরজুড়ে র্যাশ বা ঘামাচির মত লালচে দানা দেখা দেয়। সাথে বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে।
চিকুনগুনিয়া
'এডিস অ্যাজিস্টাই' মশার কামড়ের মাধ্যমে শরীরে রোগের জীবাণু প্রবেশের দুই থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ চোখে পড়া শুরু হয়। জ্বর, মাথাব্যথা, ত্বকের র্যাশ, বমিভাব ও বমি ইত্যাদি ছাড়াও শরীর ব্যথা, বিশেষত, হাড়ের জোড়ে ব্যথা হওয়া এর বিশেষ লক্ষণ। রোগ সেরে যাওয়ার পরও এই জোড়ের ব্যথা সপ্তাহ, মাস কিংবা বছরব্যাপী জোগাতে পারে।
জাপানিজ এনসেফালাইটিস
"কিউলেক্স" নামক মশার মাধ্যমে ছড়ায় এই রোগ। যার প্রকোপ সবচাইতে বেশি এশিয়া মহাদেশে, বিশেষত জাপানে। এর উপসর্গ হল জ্বর ও মামাব্যথা। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি আড়াইল জনের মধ্যে একজনের দেখা দেয় খিঁচুনি, মানসিক ভারসাম্যহীনতা এবং 'প্যারালাইসিস' বা অসাড়তা।
বাংলাদেশে অপুষ্টি একটি মারাত্মক জাতীয় সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত। দারিদ্র্য, খাদ্য ঘাটতি, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং নানা রকম কুসংস্কার ছাড়াও বিভিন্ন আর্থ-সমাজিক কারণে দেশের অধিক সংখ্যক মানুষ, গৰ্ভৱতী ও প্রসুতি মহিলা এবং বাড়ন্ত শিশুরা সহজেই অপুষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার খাদ্য তথা পুষ্টি উপাদানের অভাবের ফলে বিভিন্ন বয়সের লোকদের মধ্যে নানা রকম অপুষ্টিজনিত রোগ দেখা দেয়। এ সমস্ত রোগের মধ্যে রয়েছে- ১। আমিষ শক্তির ঘাটতিজনিত অপুষ্টি (প্রোটিন এনার্জি ম্যালনিউট্রিশন) ক) ম্যারাসমাস বা হাড্ডিসার রোপ, এ কোয়াশিয়রকর বা গা ফোলা রোগ, ২। রাতকানা (নাইট ব্লাইন্ডনেস), ৩। মুখের বা ঠোঁটের কোনায় মা (এঙ্গুলার ভাষাটাইটিস), ৪। রিকেটস, ৫। রক্তাল্পতা, নিউট্রিশনাল এনিমিয়া)
অপুষ্টিজনিত এই রোগগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-
ম্যারাসমাস বা হাড্ডিসার রোগঃ সাধারণত এক বৎসরের নীচের বয়সী শিশুদের মধ্যেই এ রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায়। এ রোগ হলে শরীর ক্রমশঃ রোগা হয়ে শীর্ণকায় বা হাড্ডিসার বা কঙ্কালসার হয়ে যায়। কোয়াশিয়রকর/পা ফোলা রোগঃ এক থেকে তিন বৎসর বয়সী শিশুদের মধ্যেই কোয়াশিয়রকর রোপটি বেশী দেখা যায়। শিশুর যখন মায়ের দুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়ে অন্য খাবার খেতে শুরু করে তখনই সাধারণত এ রোগটি বেশী হয়। একটি শিশু মায়ের দুধ খাওয়া অবস্থায় আরেকটি শিশুর জন্ম হলে প্রথম শিশুটি স্বভাবতই মায়ের দুখ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে একদিকে মায়ের দুধের উৎকৃষ্ট আমিষ থেকে বঞ্চিত হয়, অপরদিকে দারিদ্রতার কারণে নিম্ন মানের অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ এবং শিশুর ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের দরুণ ঐ শিশুর খাদ্যে মারাত্ম জামিষের ঘাটতি হয়। এরকম অবস্থাতেই শিশুটি কোয়াশিয়রকর রোগে আক্রান্ত হয়।
রাতকানা রোগ (Night Blindness) : রাতকানা শিশুদের একটি প্রধান রোগ। বাংলাদেশের ব্যপক সংখ্যক শিশু রাতকানায় ভোগে। ৬ মাস থেকে ৬ বৎসর বয়সী শিশুদের মধ্যে রাতকানার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
মুখের বা ঠোঁটের কোনায় ঘা (Angular Stomatitis): বাংলাদেশে শীতকালে বিশেষতঃ গ্রামাঞ্চলে অনেকেরই ঠোঁটের কোনায় এবং জিহব্বায় ঘা হয়ে থাকে। এ রোগের লক্ষণ হল-ঠোঁট লাল হয়ে ফেটে যায়; মুখের বা ঠোঁটের দুই কোনায় ঘা হয় এবং হা করা যায় না,জিহব্বায় ঘা হয়, লাল হয়ে ফুলে যায়, ব্যথা হয় এবং খেতে অসুবিধা হয়।
রিকেটসঃ বাংলাদেশে রিকেটস রোগের প্রকোপ খুব কম। ঘনবসতি বা বস্তি এলাকায় সেখানে মানুষ সূর্যের আলো কম পায় এবং সাথে সাথে ভিটামিন 'ডি' এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্যও কম খায়, সে এলাকায় বিশেষতঃ ছোট শিশুদের রিকেটস রোগ বেশী হয়।
রক্তসল্পতা (Anaemia) : রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলেই রক্তসল্পতা রোগ হয়। বাংলাদেশের প্রায় ৭০ জন লোকই রক্তসল্পতায় ভোগে। গর্ভবতী, প্রসূতি মহিলা এবং ছোট শিশুরাই এ রোগের সহজ শিকার। এ রোগের ফলে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসে, কর্মক্ষমতা লোপ পায় এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগ সহজেই দেহকে আক্রমন করতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ।বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণ জনিত অসুখ বিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এধরনের মৃত্যুর গড় মাত্রা ১৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, শহরাঞ্চলে এই দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তারা বলছে, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে (সূত্রঃবিবিসি নিউজ, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। পরিবেশ দূষনের প্রকারভেদঃ পরিবেশ দূষণের বেশ কয়েকটি ভাগ রয়েছে। যেমন বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, খাদ্য দূষণ ইত্যাদি। এর সবগুলোর ফলেই কোন না কোনভাবে মানুষবিভিন্ন রোগের শিকার হচ্ছে। এসব দূষনের ফলে জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি বা সমস্যাগুলো হয় তা নিন্মরুপঃ
১. শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ব্যাহত এবং স্নায়ুর ক্ষতি: আমাদের দেশে সাধারণত দূষণের শিকার হয় দরিদ্র নারী এবং শিশুরা।কারণ তাদের বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করে, যেখানে সীসা দূষণেরও ঝুঁকি রয়েছে এর ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে এবং স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে ।
২. গর্ভবতী মহিলাদের শারীরিক ক্ষতি: দূষিত এলাকায় বসবাসের ফলে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এসব এলাকার দূষিত বায়ু এবং পানির কারণে তার নিজের এবং গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হয়।
৩. বায়ু দূষণে চোখ, শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি: রাসায়নিক মিশ্রণ আছে, এমন দুষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকার কারণে চোখ, নাক বা গলার সংক্রমণ হয়। সেই সঙ্গে ফুসফুসের নানা জটিলতা, যেমন ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমা এবং নানাবিধ অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়।
৪. ক্যান্সার ও হৃদরোগ: দীর্ঘদিন বায়ু দূষণের মধ্যে থাকলে বা এরকম পরিবেশে কাজ করলে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের দেখা দিতে পারে। এমনকি সেটা মস্তিষ্ক, লিভার বা কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও তৈরি করতে পারে।
৫. পানি দূষনের ফলে সৃষ্ট রোগ: পানিবাহিত রোগ সংক্রমণের মূল কারণ হলো দূষিত পানি, শিল্প কলকারখানার বর্জ্য দুর্বল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা । এ দূষিত পানি মানব শরীরে প্রবেশ করে পানিবাহিত রোগ ছড়ায়। যেমন— ডায়রিয়া, কলেরা, চর্মরোগ, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস এবং হেপাটাইটিস ।কলেরাও একটি মারাত্মক রোগ। দূষিত জীবাণুযুক্ত পানি পান করলে এ রোগ হয়। পাতলা পায়খানার সঙ্গে প্রচুর বমি হয়। সলমনেলা টাইফি এবং প্যারাটাইফি নামক পানিবাহিত জীবাণুর কারণে যে রোগটি হয় তাকে টাইফয়েড বলে। জন্ডিস একটি পানিবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। এটি লিভারকে নষ্ট করে ফেলতে পারে। জন্ডিসের ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৬. শব্দ দূষণে সৃষ্ট রোগ: গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত শব্দ দূষনের কারণে হাইপার টেনশন, আলসার, হৃদরোগ, মাথাব্যথা বা স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত শব্দের পরিবেশে থাকলে শিশুর জন্মগত ক্রুটির তৈরি হতে পারে। শব্দ দূষণের কারণে ব্লাড প্রেশার, শ্বাসের সমস্যা এমনকি হজমের সমস্যার তৈরি হতে পারে।
৭. খাদ্য দূষণে সৃষ্ট রোগঃ খাদ্য দূষণের কারণে অন্ত্রের নানা রোগ, লিভার, কিডনি বা পাকস্থলী কার্যকারিতা হারায়। গ্যাস্ট্রিক আলসারসহ নানা সমস্যার তৈরি হয়। কখনো কখনো এসব কারণে ক্যান্সারেরও তৈরি হচ্ছে। শিশুরা ছোটবেলা থেকে এ ধরনের দুষিত খাবার খেলে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বা বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
অসংক্রামক রোগে মৃত্যুঃ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)-২০২১ জরিপ মতে ২০২০ সালের চেয়ে দেশে ব্রেন স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত মৃত্যু দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ব্রেন স্ট্রোকের পাশাপাশি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুও। ২০২০ সালে হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ৪০৮ জন মারা গেছে। ২০১৯ সালে এ রোগে মারা যান ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৯ জন।মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর পাশাপাশি ২০২০ সালে ৮ হাজার ২৪৮ জন মারা গেছেন করোনাভাইরাসের কারণে। লিভার ক্যানসারেও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২০ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৯ হাজার ৮৫০ জন। ২০১৯ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২১ হাজার ৩৭৪ জনের।‘শুধু ধুমপানজনিত কারণে দেশে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে সাড়ে তিন শ মানুষের। এসব রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি ও ব্যবস্থা না নিলে ২০৪০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার বেড়ে ৮০ শতাংশে দাঁড়াবে। ৬ বৎসরের নীচের শিশুদের মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ শিশু প্রতি বছর রাতকানায় ভোগে এবং প্রায় ৩০,০০০ শিশু প্রতি বছর পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়, যাদের প্রায় অর্ধেকই আবার আমিষ শক্তি অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম বছরই মারা যায়।
মশাবাহিত রোগে মৃত্যু হার: পুরো পৃথিবীতে কীটপতঙ্গের আক্রমণে প্রতিবছর যত মানুষ মারা যান, তাদের মধ্যে মশাবাহিত রোগে মারা যান সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, মারা যান ১৫৪ জন। (সূত্রঃ বিবিসি বাংলা, ২০ আগষ্ট, ২০২১)।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু-আক্রন্ত হয়ে মৃত্যুর হার দশমিক ২ শতাংশেরও কম। মৃত্যুহারের দিক দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যু হার মোট মৃত্যুর প্রায় ৫ শতাংশ। যা সাধারণ মানুষের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ গুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুসংখ্যা শতকরা দশমিক ৫ শতাংশ। (সূত্রঃ বাসস রিপোর্ট, ২৫ আগষ্ট, ২০১৯)
অন্যান্য কারণে মৃত্যু সূচক
১। বাংলাদেশের স্থূল মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে নবজাতক/শিশু মৃত্যুহার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এখনো আশঙ্কাজনক। প্রতি হাজারে মাতৃ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
২। বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি মারা যাচ্ছেন। প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে আঘাতজনিত মৃত্যুর মধ্যে এটাই প্রধান কারণ।
৩। আর ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে প্রতিদিন ১৪ জন সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে
৪। শিশুদের মধ্যে পানিতে ডুবে মরার হার সবচেয়ে বেশি (প্রতিদিন ৪০ জন)
৫। নয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ডুবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। তবে ১০-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে আঘাতজনিত মৃত্যুর দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আত্মহত্যা।
৬। মাতৃ মৃত্যুর মাত্রা ১০০ জন্মের প্রায় ১ জন হয়েছে। (সূত্রঃ বাংলানিউজটোইয়েন্টিফোর.কম, ২০১২ )
রোগতাত্ত্বিক অনুশীলনে প্রধানতঃ সংক্রামক ব্যাধি বিস্তারে তিনটি বিষয়কে একত্রে রোগ সৃষ্টির ও সংক্রমণের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। যথাঃ
১। রোগ সৃষ্টিকারী উপাদান (Agent): ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবি, ছত্রাক ইত্যাদি।
২। পোষকঃ (Host): যেমন: মানুষের দেহ, প্রানীর দেহ ইত্যাদি।
৩। পরিবেশ (Environment): যেমন: অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, স্বাস্থ্য অসচেতন জঙ্গোষ্ঠী প্রভৃতি।
এর দ্বারা রোগ সংক্রমণের পরম্পর সম্পর্কিত প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে। সংক্রমণের ধারা নিন্মলিখিত ভাবে প্রদর্শন করা হয়।
১। স্পর্শ: বেশ কিছু রোগ স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। যেমন স্কেবিস, ছত্রাক জনিত চর্ম রোগ ইত্যাদি।
২। যৌন সংস্পর্শ: এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিস (বি, সি), হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ইনফেকশন যেটি জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ, লিমফো গ্রানুলোমা ভেনেরিয়াম, শ্যাাংক্রয়েড ইত্যাদি ।
৩। খাদ্য ও পানীয়: টাইফয়েড, পোলিও মায়েলাইটিস, হেপাটাইটিস (এ, ডি), কলেরা, ডায়রিয়া, আমাশয়, বিভিন্ন কৃমি সংক্রমণ
৪। বায়ু বাহিত: যক্ষ্মা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হুপিং কাশি, মেনাওজাইটিস, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ব্রংকিওলাইটিস, মাম্পস, রুবেলা, বসন্ত, হাম, করোনা ভাইরাস রোগ
৫। ভেক্টর বাহিত: মশা: ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়াসিস। মাছি: উদরাময়, আমাশয়, ক্রিমি সংক্রমণ, কালাজ্বর, চ্যাগাস ডিজিস, স্লিপিং সিকনেস, চোখের কৃমি (deer fly)।
আমরা ইতিমধ্যে সংক্রামক রোগ, কারণগত শ্রেণিবিভাগ, ছড়ানোর মাধ্যম, ঝুঁকি এবং সংক্রামক রোগ সৃষ্টি ও সংক্রমণের কারণ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই পর্যায়ে উদাহরনস্বরুপ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংক্রামক রোগ নিয়ে আলোচনা করব। যেমন: এইডস।
এইডস-এর পরিচয়ঃ এইডস হচ্ছে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত একটি মারাত্নক যৌনবাহিত সংক্রমক রোগ । এ রোগ কতগুলো উপসর্গ ও লক্ষণের সমষ্টি । এইডস্ ইংরেজী চারটি শব্দের সমন্বয়। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে
এ: অ্যাকুয়ার্ড- যা অর্জিত হয়েছে, বংশানুক্রমে বা উত্তরাধিকারসূত্রে সংক্রামিত হয়নি
আই: ইমিউন- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
ডি: ডেফিশিয়েন্সি- কম, যথেষ্ট নয়
এস: সিনড্রোম- বিভিন্ন জটিলতা ও একটি বিশেষ অসুখের লক্ষণ
এইচআইভি এর সংক্রমণের কারণ
১। এইচআইভি/এইডস এর দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অসুরক্ষিত শারীরিক সম্পর্কের ফলে
২। মায়ের দ্বারা: যদি জন্ম দেওয়ার সময় এইচআইভি ভাইরাস মায়ের দেহে থেকে থাকে তাহলে সেই ভাইরাস বাচ্চার শরীরেও আসতে পারে। যদি জন্ম দেওয়ার পরে কোন কারণে মায়ের ভেতরে থাকা এইচআইভি ভাইরাস চলে আসে তাহলে সেই বাচ্চাকে স্তন্যপানের দ্বারাও বাচ্চার মধ্যে আসতে পারে।
৩। ইনজেকশন: কোন এইচআইভি/এইডস এর রোগীর দেহে ব্যবহৃত করা সুচ কোন অন্য ব্যক্তির শরীরে ব্যবহার করলেও এইচআইভি/এইডস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৪। শল্য চিকিৎসাশাস্ত্র: শল্য চিকিৎসা শাস্ত্র অর্থাৎ সার্জিকেল ইন্সট্রুমেন্ট যা সার্জারি করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যদি এইচআইভি /এইডস এর রোগীদের শরীরে ব্যবহার করা ইন্সট্রুমেন্ট যদি ভালো করে না ধুয়েঅন্য কোন রোগীর শরীরে ব্যবহার করা হয় তাহলে এইচআইভি/এইডস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৫। সংক্রামিত রক্ত: এইচআইভি/ এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বিনা পরীক্ষা করে যদি ব্যবহার করা হয় তাহলে তার থেকেও এইচ আই ভি / এইডস হতে পারে।
৬। শ্লেষ্মা আবরণ: শ্লেষ্মা আবরণ যা শরীরের ভেতরের অঙ্গ ঘিরে রাখে এবং সকল ক্যাভিটির সবচেয়ে উপরের স্তর তাতে যদি এইচআইভি সংক্রমিত রক্ত লেগে যায় তাহলে ওই ব্যক্তির এইচআইভি/এইডস হতে পারে।
এইডস রোগের লক্ষন
১। শরীরের ওজন দ্রুত হ্ৰাস পাবে,
২। দুই (২) মাসেরও বেশি সময় ধরে পাতলা পায়খানা,
৩। ঘন ঘন জ্বর হবে অথবা রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হবে,
৪। শুকনা কাশি হওয়া
এইডস এর সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই। আবার এইডস আক্রান্ত ব্যাক্তি অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হলে সে রোগের লক্ষণ দেখা যাবে। কারো মধ্যে উপরের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে তার এইডস হয়েছে। তবে, কোন ব্যক্তির এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই বিলম্ব না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে করণীয়
এইচআইভি সংক্রমণ কিভাবে হয়, সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধ করতে হবে। এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারেঃ
১। কোন কারণে রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হলে রক্তদাতার রক্তে এইচআইভি আছে কি না সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে।
২। শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
৩। যেকোনো যৌনরোগে আক্রান্ত হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৪। প্রতিবারই ইনজেকশনের নতুন সূঁচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
৫। এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের ক্ষেত্রে, সন্তান গ্রহণ, গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং সন্তানকে বুকের দুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে জিডোভুডিন ওষুধ ব্যবহার করে এই সম্ভাবনা কিছুটা কমানো যায়, এবং তা করলে মায়ের দুধও বাচ্চাকে দেওয়া যেতে পারে (কারণ মার দুধ না পেলে গরিব ঘরে জন্মানো বাচ্চার মৃত্যুসম্ভাবনা আরো বেশী)।
১। সংক্রামক রোগ জীবাণুর মাধ্যমে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করা এবং রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
২। সুষম খাদ্য গ্রহণ করা
৩। নিরাপদ পানি ব্যবহার করা এবং হাত জীবাণুমুক্ত রাখা
৪। ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকা জরুরি
৫। বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে পারে এমন আবর্জনা যেমন- কৌটা, টায়ার, ফুলের টব ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। কারণ এতে জমে থাকা পানিতে ডেলু এবং ম্যালেরিয়া রোগের বাহক মশা ভিম পাড়ে।
৬। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু, রুমাল বা হাত দিয়ে সুখ ঢাকা, চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
৭। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করা ও রোগীকে সেবা দেওয়ার সময় ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম পরিধান করা।
১। পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধের ভালো একটি উপায় হল পানিতে জীবাণুর বিস্তার রোধ করা।
২। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর মলমূত্র পানিতে না ফেলা।
৩। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিসপত্র পানিতে না ধোয়া।
৪। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ও মলমূত্র ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকা। কারণ বৃষ্টির সময় উক্ত ময়লা আবর্জনা ও মলমূত্র পানিতে গিয়ে পানি দূষিত হয়।
৫। খাবার আগে এবং পায়খানা ব্যবহারের পরে ভালো করে হাত ধোয়া।
৬। পানি ফুটিয়ে পান করা।
৭। সর্বোপরি স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাটিন ব্যবহার করা।
১।যাদের পরিবারে অসংক্রামক ব্যাধি জনিত রোগ আছে, তাদের উচিত হবে তাদের বিশেষভাবে সচেতন হওয়া। শৈশব থেকেই এ ধরনের পরিবারের সন্তানদের দিকে মনোযোগী হতে হবে।
২।ওজন বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড বা কোমল পানীয় গ্রহণ, ধূমপান —ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। তাই এগুলো বর্জনীয়।
৩। ছেলেবেলা থেকে কায়িক শ্রম, ব্যায়াম ও খেলাধুলায় উৎসাহী করা
৪। কাঁচা শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে বেশি।
৫। ইদানীং বলা হচ্ছে স্তন ক্যানসার, অন্ত্রের ক্যানসারসহ কিছু ক্যানসারেরও পারিবারিক ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। আর স্থূলতা, ওজনাধিক্য প্রতিরোধ করা গেলে, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারলে এ ধরনের ক্যানসারকেও প্রতিরোধ করা যায়।
৬। পরিবারে মা-বাবার ডায়াবেটিস থাকলে তাদের তরুণী কন্যাসন্তানের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ও ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এ ধরনের পরিবারের মেয়েদেরও হতে হবে সচেতন। মুটিয়ে যাওয়া এবং কায়িক শ্রমের অভাব এই ঝুঁকি বাড়াবে। তাই তাদের উচিত সন্তান নেওয়ার আগেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা ও খাদ্যাভ্যাস পাল্টানো। পাশাপাশি নিয়মিত নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
৭।৩৫ বছর বয়সের পর থেকেই বছরে অন্তত একবার রক্তে শর্করা, চর্বির পরিমাণ পরীক্ষা করা, রক্তচাপ মাপা উচিত। মাত্রা বর্ডার লাইনে হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৮।উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক আছে কি না দেখতে হবে। এ ধরনের পরিবারের সন্তানদের সামান্য উপসর্গকেও উপেক্ষা করা যাবে না। মেয়েরা গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই রক্তের শর্করা দেখে নেয়া উচিত।
৯।থাইরয়েডের সমস্যা পরিবারে থেকে থাকলে তা-ও দেখে নেওয়া ভালো।
১০।মা-খালাদের স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে নিজের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। নিম্নমিত নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে আলট্রাসনোগ্রাম বা ম্যামোগ্রাফি করা উচিত
১১। কোলন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে পারিবারিক খাদ্যাভ্যাস পাল্টে ফেলতে হবে। লাল মাংস (গরু-খাসি) কম খাওয়া, বেশি আঁশযুক্ত খাবার ও ফলমুল খাওয়া।
১২।এ ছাড়া কিছু জিনগত রোগ আছে, যেমন থ্যালাসেমিয়ার জিন বংশগতভাবে সন্তানেরা শেষে থাকে। এসব ক্ষেত্রে শিশুকাল থেকেই তার যথাযথ স্ক্রিনিং, রোগ নির্ণয় প্রয়োজন। বড় হলে প্রয়োজনে যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায় এ জন্য সচেতন হতে হবে। এ ধরনের পরিবারে নিজেদের মধ্যে বিয়ে না হওয়াই ভালো। 'কাজিন ম্যারেজ' পরবর্তী প্রজন্মের সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে।
এমনকি বিয়ে-শাদির সময় জীবনসঙ্গীও এ ধরনের জিনের বাহক কি না তা জেনে নেওয়া ভালো।
মাতৃ মৃত্যুর প্রতিরোধের জন্য চারটি উপাদান অপরিহার্য।
১। প্রথমত, জন্মপূর্ব যত্ন কোনো মহিলা সন্তানসভ্যতা হলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নিরীক্ষণের জন্য মায়েদের কমপক্ষে চারটি প্রসবকালীন চেক করতে যেতে হবে।
২। দ্বিতীয়ত, এই সময় ডাক্তার, সেবিকা এবং ধাত্রীদের জরুরি অবস্থা যেনো উপস্থিতি থাকে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্বাভাবিক প্রসব পরিচালনা করার এবং অন্যান্য জটিলতার সনাক্ত করা।
৩। তৃতীয়ত, মাতৃ মৃত্যুর প্রধান কারণগুলো মোকাবেলার জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা ও যত্নশীল হতে হবে যেমন রক্তক্ষরণ, ক্ষত, অনিরাপদ গর্ভপাত, উচ্চ রক্তচাপ রোপ এইসব সমস্যা হলে যেন ছু ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এবং
৪I অবশেষে, প্রসবের পর ছয় সপ্তাহ জন্মাত্তর যত্ন।
বাংলাদেশের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির উদ্দেশ্য, সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি সেবা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ও সীমিতকরণের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, বিপর্যয়কর চিকিৎসা ব্যয় হতে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া। যেহেতু বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বহুগুণ বেড়ে গেছে, যা জাতীয স্বাস্থ্যনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই রাষ্ট্রের উচিত ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য' এই মৌলিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। এর পাশাপাশি নিন্ম লিখিত পদক্ষেপগুলো নেয়া যেতে পারে।
১। কার্বন নিঃসরণ: কার্বন এর মাত্রাধিক্যতা, বিশাল নির্গমন আমাদের শহরগুলোকে অনেক বেশি অনিরাপদ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে গড়ে তুলেছে। সরকারকে স্বপ্রণোদিত হয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানীর প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ করতে হবে। কারখানা গুলোকে শহরের প্রধানতম সড়ক এবং বসতির বাইরে নিয়ে যেতে হবে এবং কারখানার জন্যেও আলাদা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
২। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কিংবা প্রোপার ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।
৩। পর্যাপ্ত হাসপাতাল স্থাপন: আমাদের দেশের অঞ্চলগুলো পরিকল্পনার সময়ই এমন ভাবে সাজাতে হবে যেনো, একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জনগোষ্ঠীর বসবাসরত পরিধির জন্য একটি করে হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ এবং পর্যাপ্ত কর্মীর সংখ্যা সেখানে বিদ্যমান থাকে।
৪। পরিকল্পনাবিদগণের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা প্রদান: জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি নগর পরিকল্পনাতে গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং সুষ্ঠু বাস্তবায়ন দেখতে চাইলে পরিকল্পনাবিদগণের হাতে অবশ্যই পর্যাপ্ত ক্ষমতা প্ৰদান করতে হবে এবং একই সঙ্গে কাজের তদারকি করার সুযোগ দিতে হবে।
৫। এসডিজি ও নগর পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্য: এসডিজির ৩ নং লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে, “সকল বয়সী মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে” এবং ১১ নং লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে, “অন্তৰ্ভূক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত সহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তুলতে হবে।”তাই নগর পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে পরিকল্পনা সাজালে সর্বোপরি, শত শত প্রাণ রক্ষা পাবে ।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ে অনেক ধরনের কাজ আছে যেগুলো একটি অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
১। কোন কমিউনিটির সাস্থ্য সমস্যা নির্দিষ্ট করার জন্য জনগনের স্বস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা।
২। স্বাস্থ্য সমস্যা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ সমুহ নির্নয় ও অনুসন্ধান করা,
৩। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে জনগনকে জানানো, শিক্ষাদান এবং ক্ষমতায়ন করা,
৪। স্বাস্থ্য সমস্যা নির্দিষ্টকরন ও সমাধানের জন্য জনগনের অংশগ্রহণ কার্যকর করা,
৫। ব্যক্তিগত ও কমিউনিটি স্বাস্থ্য সহায়ক নীতিমালা প্রনয়ন করা,
৬। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী আইন-কানুন প্রয়োগ করা,
৭। জনগনকে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংযুক্ত করা এবং অন্য কোনোভাৰে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া সম্ভব না হলে তখন স্বাস্থ্য সেবার নিশ্চয়তা প্রদান করা,
৮। জনস্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবার জন্য দক্ষ কর্মীবাহিনীর নিশ্চয়তা প্রদান করা,
৯। ব্যক্তগত ও গনভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার কার্যকারিতা, সহজলভ্যতা ও মানের মুল্যায়ন করা এবং
১০। বিভিন্ন গবেষনার মাধ্যমে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির অনুসন্ধান ও স্বাস্থ্য সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করা।
১। সামাজিক ও অর্থনৈনিক পরিবেশ,
২। প্রাকৃতিক পরিবেশ,
৩। ব্যক্তিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও আচারন,
৪। শিক্ষা
৫। সামাজিক সহায়তা নেটওয়ার্ক,
৬। স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা ও
৭। জেন্ডার বা লিঙ্গ বৈষম্য
১। সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা;
২। সমতার ভিত্তিতে সেবা গ্রহীতা কেন্দ্রিক মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার সহজ প্রাপ্যতা বৃদ্ধি ও বিস্তৃত করা;
৩। রোগ প্রতিরোধ ও সীমিতকরনের জন্য অধিকার ও মর্যাদার ভিত্তিতে সেরা গ্রহনে জনগনকে উদ্বুদ্ধ করা।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবায় সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, বিভিন্ন এনজিও ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সরকারি খাতে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা এবং ব্যষ্টিক এবং সামষ্টিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ব্যাপারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে৷ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন অধিদপ্তর নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকে। যথা-
১। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,
২। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর,
৩। নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তর
৪। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর
পুষ্টি ও জনসংখ্যা ধাতঃ সরকার সকল জনগণ বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষে স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রজনন স্বাস্থ্যসহ পরিবার পরিকল্পনার বর্তমান অবস্থা বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রবীণদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং শারীরিক, সামাজিক, মানসিক ও আত্মিক সুস্থতার ক্ষেত্রে টেকসই উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাভ (এইচএনপি) সেক্টরের মূল লক্ষ্য। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতি এবং জাতীয় জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এনজিওঃ স্বাস্থ, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবায় গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রে এনজিও সমূহের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তারা মূলত: পরিবার পরিকল্পনা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য অধিক্ষেত্রে কাজ করে থাকে । সাম্প্রতিককালে এনজিওসমূহ তাদের সেবার পরিধি বাড়িয়েছে এবং শহরে প্রাথমিক সেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কাজ করছে।
ঔষধ নীতিঃ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত পুন: গঠনের ক্ষেত্রে ১৯৮২ সালে প্রণীত ঔষধ নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো ক্ষতিকর, মূল্যহীন ও অপ্রয়োজনীয় ঔষধ বাজার থেকে অপসারণ করা এবং স্বাস্থ্য সেবার সকল স্তরে প্রয়োজনীয় ঔষধ ন্যায্য মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
অর্জনঃ
১। ১৯৮২ সালের জাতীয় ঔষধ নীতি সাফল্যজনকভাবে রূপায়নের ফলে বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিকাল খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে।
২। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) সমূহ অর্জনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিছু সূচক যেমন: শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, শিশু ও মায়েদের টীকা দেওয়া, ভিটামিন 'এ'-এর ঘাটতি দূরীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসাধারণ অর্জন সাধিত হয়েছে।
জনস্বাস্থ্যের পরিধির মধ্যে রয়েছে সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা, কমিউনিটি, ব্যক্তি এবং সমাজ। এই ক্ষেত্রেগুলোতে সাধারণত জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পেশাদারদের বহু-শ্রেনীর দল নিয়ে গঠিত যারা স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য কাজ করে। জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্র এবং জনস্বাস্থ্য শিক্ষায় শিক্ষিতদের জন্য পেশার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। মূল ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ ১। পরিবেশগত স্বাস্থ্য, ২। সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য, ৩। মহামারীবিদ্যা, ৪। বিশ্ব স্বাস্থ্য, এবং ৫। স্বাস্থ্য নীতি এবং ব্যবস্থাপনা।
জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিহ হল এমন একটি অবস্থা যেখানে রেডিওলজিক্যাল, পানি বা পয়ঃনিষ্কাশন সম্পর্কিত জীবানুগুলো বিভিন্ন প্রকার এবং পরিমাণে জৈবিক, রাসায়নিক বা শারীরিক পদার্থ রয়েছে যা মানুষের অসুস্থতা, ব্যাধি বা অক্ষমতার কারণ হতে পারে। এর মধ্যে প্যাথোজেন, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী, বিষাক্ত রাসায়নিক এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।
১। কীটপতঙ্গ (যেমন ইঁদুর এবং মশা)
২। বর্জ্য জল এবং পয়ঃনিষ্কাশন
৩। বর্জ্য পদার্থের আধার
৪। সংক্রমণ এজেন্টের সংস্পর্শে আসা যেকোনো কিছু (যেমন ক্লিনিকাল বর্জ্য এবং শার্পস)
৫। রাসায়নিক পদার্থ বা পণ্য (যেমন অ্যাসবেস্টস বা বিষাক্ত ধোঁয়া) দ্বারা নিঃসরণ বা বিচ্ছুরণ।
রোগ তত্ত্ব হচ্ছে কোন রোগের প্রাদূর্ভাবের বিস্তারিত কারণ নির্নয় সম্পর্কীয় বিজ্ঞান। যখন কোনো জনগোষ্ঠীকে সাওস্থ্য সম্পর্কিত অবস্থা ও ঘটনাবলীর বিস্তৃতি ও কারণ সম্মন্ধে অধ্যয়ন ওবং উক্ত সমস্যা সমাধানে জ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে মহামারির হাত হতে রক্ষা করা সম্ভব হয় তখন উক্ত জ্ঞানকে রোগ তত্ত্ব বিজ্ঞান বলা হয়।
জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ভূমিকা রাখে। যেমন:
১। ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে,
২। নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে
৩। চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে
৪। শহরের কলকারখানার বর্জ্য, গ্রামাঞ্চলের ময়লা-আবর্জনা, কাঁচা পায়খানা, মলমূত্র যাতে খাল-বিল ৰা নদীর পানিতে না মেশে সে দিকে জনসাধারণকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫। প্লাস্টিক ও পলিখিন দ্রব্য যেখানে-সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে
৬। টয়লেট ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতা একে অন্যের পরিপুরক। আমাদের অনস্বাস্থ্যে পরিবেশের প্রভাব এক তাৎপর্যপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের অবশ্যই পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। পরিবেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হলে আমাদের জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়বে। এ ছাড়া পরিবেশের বিপর্যয় ঘটলে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পতিত হবে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় সমর্থিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
জনস্বাস্থ্যের প্রচার এবং বিপজ্জনক স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিস্তার রোধ করা আধুনিক সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এইডস, ক্যান্সার, হৃদরোগ বা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচারাভিযান জরুরিভাবে প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্যের জন্য প্রচারাভিযানের ক্ষেত্রে যোগাযোগের কৌশল এবং বিশেষজ্ঞ দক্ষ কর্মীরা জনগণের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সহায়তা করে। জনস্বাস্থ্যকে লক্ষ্য করে প্রচারাভিযান চালালে জনসাধারণের আসন্ন স্বাস্থ্য হুমকি প্রতিরোধ করতে এবং ভালো স্বাস্থ্যের অভ্যাস গ্রহণ করতে সহায়তা করে। সাধারণত, এই প্রচারাভিযানগুলো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে (অর্থাৎ লক্ষ্য শ্রোতাদের) সম্ভাব্য স্বাস্থ্য হুমকি এবং তাদের ক্ষতি করতে পারে এমন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ সম্পর্কে শিক্ষিত ও সচেতন করে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। এই প্রচারাভিযান গুরুত্তর স্বাস্থ্য হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত অনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু ক্যাম্পেইন সমস্ত বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। যেমন:
১। বিশ্ব নেগলেক্টেড ট্রপিক্যাল ডিজিস দিবস (World Neglected Tropical Disease (NTD) Day) - ৩০ই জানুয়ারী
২। বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস (World TB Day)- ২৪শে মার্চ ।
৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস (World Health Day) - ৭ই এপ্রিল।
৪। বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস (World Malaria Day)- ২৫শে এপ্রিল।
৫। বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ (World Immunization week ) - ২৪-৩০শে এপ্রিল।
৬। বিশ্ব ভাষাকমুক্ত দিবস (World no tobacco day) -৩১ই মে ।
৭। বিশ্ব রক্তদাতা দিবস (World blood donor day) - ২৪শে জুন।
৮। বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস (World hepatitis day)- ২৮শে জুলাই।
৯। বিশ্ব রোগী নিরাপত্তা দিবস (World patient safety day) ১৭ই সেপ্টেম্বর।
১০। বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ (World antimicrobial awarness week ) - ১৮ - ২৪ নভেম্বর।
২০। বিশ্ব এইডস দিবস (World AIDS Day)- ১লা ডিসেম্বর।