যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা | NCTB BOOK

যুক্তরাষ্ট্র বলতে সেই ধরনের সরকারকে বোঝায়, যেখানে একাধিক অঞ্চল বা প্রদেশ মিলে একটি সরকার গঠন করে । এ ধরনের সরকার ক্ষমতা বণ্টনের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এতে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার কিছু অংশ প্রদেশ বা আঞ্চলিক সরকারের এবং জাতীয় বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকে। ফলে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় উভয় সরকারই মৌলিক ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থেকে দেশ পরিচালনা করে । অর্থাৎ এতে দ্বৈত সরকারব্যবস্থা থাকে। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতি দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পদ্ধতি রয়েছে ।
জোড়ায় কাজ : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্যের তালিকা তৈরি কর ।


যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুণঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বেশ কিছু গুণ আছে । যথা :
১. জাতীয় ঐক্য ও আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্যের সমন্বয় ঘটায় : এ ধরনের সরকার আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্য ও ভিন্নতা বজায় রেখে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে। এতে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ও ভিন্নতাকে স্বীকৃতি দিয়ে সেগুলোকে লালন করা হয় । ফলে এ ব্যবস্থায় বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠে ।

২. কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের চাপ কমায়: এ সরকার ব্যবস্থায় সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে দেওয়া হয় । ফলে কেন্দ্রের কাজের চাপ কমে যায় এবং কেন্দ্রের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন সহজ হয় ।

৩. আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের উপযোগী: যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আঞ্চলিক সরকার সহজেই অঞ্চলের সমস্যাগুলো বুঝতে এবং তা চিহ্নিত করে সমাধান করতে পারে।

৪. রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি ও স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশে সহায়ক: যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জনগণ দুটি সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখায় এবং দুই প্রকার আইন ও আদেশ মেনে চলে। ফলে জনগণ রাজনৈতিকভাবে অধিকতর সচেতন হয়ে উঠে। এ ধরনের ব্যবস্থা স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশে খুবই সহায়ক।

৫. কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতা লোপ পায়: কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ফলে কেন্দ্র নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে না । ফলে কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার আশঙ্কা থাকে না ।


যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ত্রুটিঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে নিম্নোক্ত ত্রুটি দেখা দিতে পারে :

১. জটিল প্রকৃতির শাসন: যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গঠনপ্রণালি জটিল প্রকৃতির । এ যেন সরকারের ভিতর সরকার । ফলে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ, ক্ষমতা বণ্টন, আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ প্রভৃতি বিষয়ে জটিলতা দেখা দেয় ।


২. ক্ষমতার দ্বন্দ্ব: এতে ক্ষমতার এখতিয়ার নিয়ে কেন্দ্র, প্রদেশ এমনকি বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব- সংঘাত সৃষ্টি হতে দেখা যায় ।

৩. দুর্বল সরকার: ক্ষমতা বণ্টনের ফলে জাতীয় ও আঞ্চলিক সরকার উভয়েই দুর্বল অবস্থায় থাকে । জরুরি অবস্থায় অনেক সময় দ্রুত ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না । আঞ্চলিক সরকারের মতামতের প্রয়োজন হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হয় ।

৪. বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা: যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের প্রদেশগুলো স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত । এ কারণে সুযোগ বুঝে প্রয়োজনে কোনো অঞ্চল বা প্রদেশ বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টা করতে পারে ।


৫. ব্যয়বহুল: এতে দ্বৈত সরকার কাঠামো থাকায় প্রশাসনের ব্যয় বৃদ্ধি পায় ।

আরও দেখুন...

Promotion