ম্যালেরিয়া পরজীবীর প্রতিকারঃ পৃথিবী ম্যালেরিয়ার প্রতিকার (Prevention of Malaria) থেকে কখনো সম্পূর্ণরূপে ম্যালেরিয়া উচ্ছেদ সম্ভব নয়। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিকার করা যায়। ম্যালেরিয়া প্রতিকারের প্রধান তিনটি উপায় হচ্ছে- ক. মশকী নিধন, খ. মশকীর দংশনের হাত থেকে আত্মরক্ষা এবং গ. ম্যালেরিয়াগ্রস্ত রোগীর চিকিৎসা । নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো-
১. মশকী নিধন : মশককুলের বংশ ধ্বংস করা কঠিন কাজ। তবে নিম্নলিখিত পন্থায় এদের বিস্তার রোধ করা সম্ভব ।
ক. জননক্ষেত্র নির্মূলকরণ: মশকী বদ্ধ, পচা পানিতে ডিম পাড়ে এবং সেখানে ডিম ফুটে লার্ভা ও পিউপা দশার বিকাশ ঘটে। তাই মশা নিধনের জন্য জননক্ষেত্রগুলো বিনাশ করাই উত্তম। নিম্নোক্ত উপায়ে এ কাজ করা যায় । ডোবা, নালা ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় গর্ত মাটি দিয়ে ভরাট করা উচিত যাতে ঐসব স্থানে পানি জমতে না পারে। উন্মুক্ত নর্দমাগুলো ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করা এবং নর্দমাগুলো যাতে পানি বদ্ধ না থাকে সে দিকে নজর দেওয়া। বাড়ির আশেপাশের ঝোপ-ঝাড় ও জঙ্গল কেটে ফেলা। লোকালয়ের আশেপাশে যাতে পানি আবদ্ধ হয়ে না থাকে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া ।
খ. লার্ভা ও পিউপা ধ্বংসসাধন : যেসব জলাশয়ে মশকী ডিম পাড়ে সেখানে পানির উপর কেরোসিন বা পেট্রোল জাতীয় তেল ছিটিয়ে দিলে পানির উপর একটি পাতলা স্তর সৃষ্টি হয়। ফলে এ স্তর ভেদ করে মশকীর লার্ভাগুলোর পক্ষে বাতাস গ্রহণ করা সম্ভবপর না হওয়ায় তারা মারা পড়ে। বিএইচসি (BHC), ডায়েলড্রিন (dieldrin) ইত্যাদি কীটনাশক ওষুধ তেলের পানিতে ছিটিয়ে দিলে মশকীর লার্ভা ও পিউপা মারা যায়। জলাশয়ে কই, খলসে, তেলাপিয়া জাতীয় লার্ভা খাদক মাছ চাষের মাধ্যমে মশকীর লার্ভা ও পিউপা ধ্বংস করা যায়।(জুভেনাইল হরমোন পানিতে মিশিয়ে দিয়ে লার্ভাকে আজীবন লার্ভা করে রেখে দেওয়া।
গ. পূর্ণাঙ্গ মশকী নিধন : দংশন উদ্যত মশকী হাত দিয়ে মেরে ফেলা যায়। বিভিন্ন ফাঁদের সাহায্যে মশকী ধরা সম্ভব। সালফার ডাই-অক্সাইডের ধোঁয়া মশা তাড়াতে বা মেরে ফেলতে সাহায্য করে। বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও বিকিরণ দিয়ে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে এদের বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
২. মশকীর দংশনের হাত থেকে আত্মরক্ষা : শয়নকক্ষে মশারী ব্যবহার করতে হবে। দেহের অনাবৃত অংশে বিশেষ ক্রিম বা লোশন লাগানে হবে। মশকী নিধন কয়েল জ্বালাতে হবে। ঘরের দরজা জানালায় ঘন তারের নেট লাগাতে হবে। গোয়ালঘর থেকে শয়নকক্ষ দূরে রাখা।
৩. ম্যালেরিয়াগ্রস্ত রোগীর চিকিৎসা : ম্যালেরিয়া রোগাক্রান্ত রোগীকে সর্বদা মশারীর মধ্যে রাখতে হবে। রোগীকে যেন কোনভাবেই মশা দংশন করতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা মশকীর মাধ্যমে রোগীর দেহ থেকে এই রোগের পরজীবী অন্য সুস্থ ব্যক্তির দেহে সঞ্চারিত হয়ে থাকে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে তৎক্ষনাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । ক্লোরোকুইন, নিভাকুইন, ম্যাপাক্রিন, প্যালুড্রিন ইত্যাদি ম্যালেরিয়া পরজীবীর
ভালো ওষুধ ।