গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্রঃ এপিডার্মাল ও ভাস্কুলার টিস্যুতন্ত্রের অন্তর্গত টিস্যু ছাড়া উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ যে টিস্যুতে গঠিত, তাকে গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্র বলে । এটি এপিডার্মিসের অন্তঃস্তর থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত । এতে রয়েছে একাধিক বৈচিত্র্যময় টিস্যু । এখানে প্যারেনকাইমা কোষের আধিক্য থাকলেও কোলেনকাইমা ও স্ক্লেরেনকাইমা কোষও থাকে। গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্রের উৎস হচ্ছে পেরিব্লেম জাতীয় ভাজক টিস্যু। মূলের ক্ষেত্রে এটি বহিঃস্তর (cortex) ও অন্তঃত্বক (endodermis) নিয়ে গঠিত এবং কাণ্ডের ক্ষেত্রে এটি অধঃত্বক (hypodermis), বহিঃস্তর (cortex) ও অন্তঃত্বক নিয়ে গঠিত। কিছুক্ষেত্রে অধঃত্ব স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত আর বাকি সবটুকু প্যারেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত। পাতায় এই তন্তু শুধু প্যারেনকাইমা দিয়ে গঠিত হয়।
উদ্ভিদের মূলে ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডে গ্রাউন্ড টিস্যু দুটি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত। যথা- বহিঃস্টিলিয় অঞ্চল (extrastclar region) এবং অন্তঃস্টিলিয় অঞ্চল (intrastelar region)। (কাণ্ডে ও মূলের কেন্দ্রে অবস্থিত পরিচক্র (পরিসাইকেল) থেকে মজ্জা পর্যন্ত বিস্তৃত টিস্যুগুচ্ছকে স্টিলি (stele) বে ) বলে। স্টিলির অভ্যন্তরীণ টিস্যুগুচ্ছকে অন্তঃস্টিলিয় অঞ্চল বা অন্তস্টিলিয় টিস্যু বলে। মূলের এ অঞ্চলটি পরিচক্র ও মজ্জা এবং কান্ডে এ অঞ্চলটি পরিচক্র, মজ্জা ও মজ্জারশ্মি নিয়ে গঠিত । স্টিলির বাইরের টিস্যুগুচ্ছকে বহিঃস্টিলিয় টিস্যু বলে।
ক. বহিঃস্টিলিয় অঞ্চলঃ স্টিলির বাইরের অংশকে বহিঃস্টিলিয় অঞ্চল বলে। এটি নিম্নোক্ত অংশগুলো নিয়ে গঠিত।
১.হাইপোডার্মিস (Hypodermis) বা অধঃত্বকঃ (এপিডার্মিসের নিচে এক বা একাধিক কোষস্তরবিশিষ্ট কেন্দ্রীভূত অংশকে হাইপোডার্মিস বলে।) একবীজপত্রী উদ্ভিদে এই টিস্যু (স্ক্লেরেনকাইমা কোষে এবং (দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে কোলেনকাইমা কোষে গঠিত (মূলে অধঃত্বক অনুপস্থিত)।
২.কর্টেক্স (Cortex) : হাইপোডার্মিসের নিচু থেকে এন্ডোডার্মিস পর্যন্ত বিস্তৃত বিরাট অংশকে কর্টেক্স বলে। এটি সাধারণত প্যারেনকাইমা জাতীয় কোষে গঠিত। এর কোষগুলো গোল হওয়ায় আন্তঃকোষীয় অবকাশ থাকে। মূলের কর্টেক্স বহুস্তরবিশিষ্ট ও কাণ্ডের কর্টেক্স কমেক স্তরবিশিষ্ট। এ সকল কোষে অনেক সময় স্ক্লেরাইড, তেলগহ্বর ও রেজিননালি উপস্থিত থাকে। মূলের কর্টেক্সের প্রধান কাজ হচ্ছে পানি ও খাদ্য সঞ্চয় করে রাখা। কাজের কর্টেক্স পানি শু খাদ্য সঞ্চয় ছাড়াও উদ্ভিদকে দৃঢ়তা প্রদান করে এবং সালোকসংশ্লেষণে অংশ নেয়।
কাজ : কর্টেক্স অন্তঃস্টিলিয় টিস্যুগুলোকে রক্ষা করে। মূলজ চাপ নিয়ন্ত্রণ করায় ভূমিকা রাখে। মূলরোম দিয়ে শোষিত পানি ও রস জাইলেম বাহিকায় প্রবেশের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কর্টেক্স শ্বেতসার জাতীয় খান্য জমিয়ে রাখে।
৩. এন্ডোডার্মিস (Endodermis) বা অন্তঃত্বকঃ কর্টেক্সের একেবারে ভিতরের দিকে অবস্থিত স্তরটি। এন্ডোডার্মিস। এটি স্টিলিকে কর্টেক্স থেকে পৃথক করে MAT রাখে। এন্ডোডার্মিস একটি মাত্র কোষস্তরে গঠিত। কোষগুলো পিপাকৃতির, ঘনসন্নিবিষ্ট এবং আন্তঃকোষীয় কোষবিহীন। মূলের অন্তঃত্বকীয় কোষের প্রস্থ ও পার্শ্বপ্রাচীর সুবেরিন ও লিগনিনযুক্ত হয়ে সরু ফিতার মতো বেষ্টনির সৃষ্টি করে। আবিষ্কারক বিজ্ঞানী ক্যাসপেরি (Caspary - ১০১ 1865)-এর নামানুসারে একে ক্যাসপেরিয়ান ফিতা বা স্ট্রিপ (casperian strip) বলে। কিন্তু অন্তঃত্বকের যেসব কোষগুলোর প্রাচীর পাতলা থাকে তাদের পারণ কোষ | (passage cell) বলে। দ্বিবীজপত্রী কাণ্ডের অন্তঃত্বকীয় কোষে এ ফিতা না থাকায় এবং কোষগুলোতে প্রচুর শ্বেতসার দানা সঞ্চিত থাকায়। একে এন্ডোডার্মিস না বলে স্টার্চ সিথ (starch sheath) বলে।
কাজঃ ভাস্কুলার বান্ডল ও তৎসংলগ্ন কোষগুলো যাতে বায়ু ও পানিতে আবদ্ধ হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য এন্ডোডার্মিস বাঁধ (dam)-এর মতো কাজ করে। এছাড়া খাদ্য সঞ্চয় করাও এর কাজ।
খ.অন্তঃস্টিলিয় অঞ্চলঃ
স্টিলীর ভেতরের অংশকে অন্তঃস্টিলিয় অঞ্চল বলে ) এটি নিম্নোক্ত অংশগুলো নিয়ে গঠিত ।
১. পেরিসাইকল (Pericycle) : অন্তঃত্বকের ঠিক নিচে অবস্থিত এক বা একাধিক স্তরে বিন্যস্ত টিস্যুকে পরিসাইকল বলে। শুধু প্যারেনকাইমা টিস্যু অথবা স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু অথবা দুই টিস্যুর মিশ্রণে এ স্তর গঠিত হতে পারে। কুমড়া ও কুমারিকা কাণ্ডে পরিচক্র বহুস্তর বিশিষ্টি ও স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু শুধু — ফ্রায়েমের মাথায় টুপির মতো অবস্থান করে, তখন একে হার্ড বাষ্ট বা গুচ্ছটুপি বলে। এ স্তর হতে ভাজক টস্যুর সৃষ্টি হয়। (bundle cap) বলে (যেমন-সূর্যমুখী)। পরজীবী ও জলজ উদ্ভিদ ছাড়া সপুষ্পক উদ্ভিদের মূলে ও টেরিডোফাইট উদ্ভিদের কাণ্ড ও মূলে পেরিসাইকল রয়েছে। আধুনিক ধারণা অনুযায়ী, পেরিসাইকল ফ্লোয়েমের অংশ।
কাজঃ খাদ্য সঞ্চয় করা, দেহকে দৃঢ়তা প্রদান করা, পার্শ্বমূল সৃষ্টি করা, কাণ্ডে অস্থানিক মূল সৃষ্টি করা এর কাজ।
২. মেডুলা (Medulla) : কাণ্ড বা মূলে ভাস্কুলার বান্ডল দিয়ে পরিবেষ্টিত ও একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত টিস্যুকে মেডুলা বা মজ্জা বলে। এটি গোল, পাতলা, প্রাচীরবিশিষ্ট ও কোষাবকাশযুক্ত প্যারেনকাইমা বা স্ক্লেরেনকাইমা কোষে গঠিত। গ্রাউন্ড ভাজক টিস্যু থেকে এর উৎপত্তি হয়। একবীজপত্রী কাজে ভাস্কুলার টিস্যু বিক্ষিপ্ত অবস্থান করায় মেডুলা গড়ে উঠে না। অন্যদিকে, দ্বিবীজপত্রী মূলে মেডুলা নেই বললেই চলে, কিন্তু একবীজপত্রীর মূলে মেডুলা রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো উদ্ভিদের কাণ্ডে বৃদ্ধির সাথে সাথে মেডুলার কেন্দ্রীয় অংশ নষ্ট হয়ে ফাঁপা কান্ডের সৃষ্টি করে (যেমন- কুমড়া)।
কাজ : খাদ্যবস্তু সঞ্চয় করে রাখা এর প্রধান কাজ এবং স্ক্লেরেনকাইমায় গঠিত হলে দেহকে দৃঢ়তা প্রদান করা মেডুলার কাজ।
৩. মেডুলারি রশ্মি (Medullary rays) : দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদকাণ্ডের দুই ভাস্কুলার বাগুলের মাঝ বরাবর মেডুলা থেকে পেরিসাইকল পর্যন্ত বিস্তৃত, দেখতে রশ্মির মতো টিস্যুকে মেডুলারি রশ্মি বলে। এগুলো সরু ও লম্বা প্যারেনকাইমা কোষে গঠিত ও পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট। এ টিস্যু কেবল দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদকাণ্ডে পাওয়া যায়।
কাজ : মেডুলারি রশ্মি পানি ও খাদ্যবস্তু পরিবহন এবং সঞ্চয় করে। প্রয়োজনে সেকেণ্ডারি টিস্যু সৃষ্টি করে।
পাতার গ্রাউন্ড টিস্যুঃ পাতার গ্রাউন্ড টিস্যুকে মেসোফিল (mesophyll) বলে । এটি অসংখ্য ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত ও পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট প্যারেনকাইমা কোষে গঠিত। বিষমপৃষ্ঠ পাতায় মেসোফিল প্যালিসেড (Palisade) ও স্পঞ্জি (spongy) প্যারেনকাইমা কোষে বিভক্ত)। প্যালিসেড প্যারেনকাইমার কোষগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট, লম্বা ও উল্লম্ব বিন্যস্ত এবং স্পঞ্জি প্যারেনকাইমার কোষগুলো প্রধানত ডিম্বাকার, অনিয়ত, কোষাবকাশযুক্ত ও শিথিলভাবে বিন্যস্ত। সমদ্বিপৃষ্ঠ পাতায় মেসোফিল শুধু এক ধরনের প্যারেনকাইমা টিস্যুতে হয় স্পঞ্জী, নয়তো প্যালিসেড গঠিত হয়।
কাজঃ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করা এ টিস্যুর কাজ।