পারদ ও কাচের স্পর্শকোণ হলে-
কোনো কঠিন পদার্থকে কোনো তরলে ডুবালে দেখা যায় যে, তরল পদার্থ যেখানে কঠিন পদার্থটিকে স্পর্শ করে সেখানে তরল পদার্থের মুক্ততল বা উপরিতল অন্যান্য জায়গার মতো অনুভূমিক হয় না বরং তরলের মুক্ত তল হয় বেঁকে খানিকটা উপর ওঠে যায় অথবা খানিকটা নিচে নেমে যায়। দেখা গেছে, যে সকল তরল কঠিন পদার্থকে ভিজায় যেমন (পানি ও কাচ) সেক্ষেত্রে তরলতল খানিকটা উপর ওঠে যায় (চিত্র : ৭.২১ক)। পক্ষান্তরে যে সকল তরল কঠিন পদার্থকে ভিজায় না যেমন (পারদ ও কাচ) তাদের ক্ষেত্রে তরলতল খানিকটা নিচে নেমে যায় বা অবনমিত হয় (চিত্র : ৭.২১)।
কঠিন ও তরলের স্পর্শ বিন্দু C থেকে বক্র তরল তলে স্পর্শক CA টানলে ঐ স্পর্শক কঠিনের পৃষ্ঠ CB-এর সাথে তরলের ভেতরে যে কোণ উৎপন্ন করে তাই স্পর্শ কোণ । ৭-২১ চিত্রে হচ্ছে স্পর্শ কোণ।
সাধারণত: যে সব তরলের ঘনত্ব কঠিন পদার্থের ঘনত্বের চেয়ে কম সেসব তরল পদার্থ সাধারণত কঠিন পদার্থকে ভেজায় এবং তাদের বেলায় স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম কোণ হয় অর্থাৎ 90° এর কম হয়। কাচ ও বিশুদ্ধ পানির বেলায় স্পর্শ কোণের মান প্রায় 8° রূপা ও বিশুদ্ধ পানির মধ্যকার স্পর্শ কোণ প্রায় 90°। যে সব তরল পদার্থের ঘনত্ব কঠিন পদার্থের ঘনত্বের চেয়ে বেশি সেসব তরল পদার্থ সাধারণত কঠিন পদার্থকে ভেজায় না এবং তাদের বেলায় স্পর্শ কোণ স্কুল কোণ অর্থাৎ 90°এর চেয়ে বেশি হয়। কাচ ও বিশুদ্ধ পারদের বেলায় স্পর্শ কোণের মান প্রায় 139°।
১. কঠিন ও তরলের প্রকৃতির উপর।
২. তরলের মুক্ততলের উপরস্থ মাধ্যমের উপর। যেমন পারদের উপর বায়ু থাকলে পারদ ও কাচের স্পর্শ কোণ যা হবে পারদের উপর পানি থাকলে স্পর্শ কোণ তা থেকে আলাদা হবে।
৩. কঠিন ও তরল পদার্থের বিশুদ্ধতার উপর। তরল যদি বিশুদ্ধ না হয় বা কঠিন পদার্থের পৃষ্ঠে কোনো কিছু থাকলে স্পর্শ কোণ পরিবর্তিত হয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানি ও পরিষ্কার কাচের মধ্যকার স্পর্শ কোণ প্রায় শূন্য। কিন্তু কাচে সামান্য পরিমাণেও তৈলাক্ত পদার্থ থাকলে স্পর্শ কোণের মান বৃদ্ধি পায়।
অতি সূক্ষ্ম ও সুষম ছিদ্রবিশিষ্ট নলকে কৈশিক নল (capillary tube) বলে। কোনো কৈশিক কাচ নলের এক প্রান্ত তরলের মধ্যে খাড়া করে ডুবালে নলের ভেতর কিছু তরল তরলের মুক্ত তল থেকে উপরে ওঠে যায় বা নিচে নেমে আসে। যেসব তরল (যেমন পানি) কাচ নলকে ভিজিয়ে দেয় তাদের বেলায় নলের ভেতরকার তরলের তল (চিত্র : ৭.২২ক)
পাত্রের তরলের মুক্ততলের চেয়ে উপরে ওঠে যায় অর্থাৎ তরলের ঊর্ধ্বারোহণ বা অধিক্ষেপ হয়। যেসব তরল (যেমন পারদ) কাচ নলকে ভিজায় না তাদের বেলায় কাচ নলের ভেতরকার তরল স্তম্ভের উপরিতল পাত্রের তরলের (চিত্র: ৭.২২খ)
মুক্ততলের চেয়ে নিচে নেমে আসে অর্থাৎ তরলের অবনমন বা অবক্ষেপ হয়। কৈশিক নলে তরলের এরকম অধিক্ষেপ বা অবক্ষেপকে কৈশিকতা বলে। তরলের পৃষ্ঠটানের জন্য এরূপ হয়ে থাকে। অধিক্ষেপের বেলায় নলের ভেতর তরলের উপরিতল অবতল থাকে এবং অবক্ষেপের বেলায় নলের ভেতর তরলের উপরিতল উত্তল থাকে। আসঞ্জন ও সংসক্তি বলের আপেক্ষিক মানের ওপর নির্ভর করে নলের ভেতরকার তরলের উপরিতলের বক্রতা কেমন হবে। আসঞ্জন বা সংসক্তি বলের মান কতটা হবে তা তরল ও কঠিন পদার্থের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। যে তরল পদার্থ কঠিন পদার্থকে ভিজিয়ে দেয় (যেমন পানি ও কাচ) তার আসন বল, যে তরল পদার্থ কঠিন পদার্থকে ভেজায় না (যেমন পারদ ও কাচ) তার আসঞ্জন বলের চেয়ে অনেক বেশি। আবার পানির সংসক্তি বল পারদের সংসক্তি বলের চেয়ে অনেক কম দেখে গেছে,
(i) সংসক্তি বল = আসঞ্জন বল হলে কৈশিক নলে তরলের অবক্ষেপ বা অধিক্ষেপ হয় না, তরলের মুক্ত তল অনুভূমিক থাকে এবং স্পর্শ কোণ শূন্য অর্থাৎ = 0° হয়।
(ii) সংসক্তি বল > আসঞ্জন বল হলে কৈশিক বলে তরলের অবক্ষেপ হয়, তরলের মুক্ততল উত্তল হয় এবং স্পর্শ কোণ স্থুল কোণ অর্থাৎ ৪> 90° হয়।
(iii) সংসক্তি বল < আসঞ্জন বল হলে কৈশিক বলে তরলের অধিক্ষেপ হয়, তরলের মুক্ততল অবতল হয় এবং স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম কোণ অর্থাৎ < 90° হয়।