= কত?
আমরা প্রতিনিয়ত ত্রিভুজ, বিশেষ করে সমকোণী ত্রিভুজের ব্যবহার করে থাকি। আমাদের চারিদিকের পরিবেশে নানা উদাহরণ দেখা যায় যেখানে কল্পনায় সমকোণী ত্রিভুজ গঠন করা যায়। সেই প্রাচীন যুগে মানুষ জ্যামিতির সাহায্যে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে নদীর প্রস্থ নির্ণয় করার কৌশল শিখেছিল। গাছে না উঠেও গাছের ছায়ার সঙ্গে লাঠির তুলনা করে নিখুঁতভাবে গাছের উচ্চতা মাপতে শিখেছিল। এই গাণিতিক কৌশল শেখানোর জন্য সৃষ্টি হয়েছে ত্রিকোণমিতি নামে গণিতের এক বিশেষ শাখা। Trigonometry শব্দটি গ্রিক শব্দ tri (অর্থ তিন), gon (অর্থ ধার) ও metron (অর্থ পরিমাপ) দ্বারা গঠিত। ত্রিকোণমিতিতে ত্রিভুজের বাহু ও কোণের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ে পাঠদান করা হয়। মিশর ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় ত্রিকোণমিতি ব্যবহারের নিদর্শন রয়েছে। মিশরীয়রা ভূমি জরিপ ও প্রকৌশল কাজে এর বহুল ব্যবহার করত বলে ধারণা করা হয়। এর সাহায্যে জ্যোতির্বিদগণ পৃথিবী থেকে দূরবর্তী গ্রহ-নক্ষত্রের দূরত্ব নির্ণয় করতেন। অধুনা ত্রিকোণমিতির ব্যবহার গণিতের সকল শাখায়। ত্রিভুজ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান, নেভিগেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ত্রিকোণমিতির ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। জ্যোতির্বিজ্ঞান, ক্যালকুলাসসহ গণিতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শাখায় ত্রিকোণমিতির ব্যবহার রয়েছে।
এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---
সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর নামকরণ
আমরা জানি, সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলো অতিভুজ, ভূমি ও উন্নতি নামে অভিহিত হয়। ত্রিভুজের অনুভূমিক অবস্থানের জন্য এ নামসমূহ সার্থক। আবার সমকোণী ত্রিভুজের সূক্ষ্মকোণদ্বয়ের একটির সাপেক্ষে অবস্থানের প্রেক্ষিতেও বাহুগুলোর নামকরণ করা হয়। যথা :
১. ‘অতিভুজ (hypotenuse)', সমকোণী ত্রিভুজের বৃহত্তম বাহু যা সমকোণের বিপরীত বাহু
২. বিপরীত বাহু (opposite side)', যা হলো প্রদত্ত কোণের সরাসরি বিপরীত দিকের বাহু
৩. ‘সন্নিহিত বাহু (adjacent side)', যা প্রদত্ত কোণ সৃষ্টিকারী একটি রেখাংশ।
∠PON কোণের জন্য অতিভুজ OP, সন্নিহিত বাহু ON, বিপরীত বাহু PN | ∠OPN কোণের জন্য অতিভুজ OP, সন্নিহিত বাহু PN, বিপরীত বাহু ON |
জ্যামিতিক চিত্রের শীর্ষবিন্দু চিহ্নিত করার জন্য বড় হাতের বর্ণ ও বাহু নির্দেশ করতে ছোট হাতের বর্ণ ব্যবহার করা হয়। কোণ নির্দেশের জন্য প্রায়শই গ্রিক বর্ণ ব্যবহৃত হয়। গ্রিক বর্ণমালার ছয়টি বহুল ব্যবহৃত বর্ণ হলো :
প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত গণিতবিদদের হাত ধরেই জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতিতে গ্রিক বর্ণগুলোর ব্যবহার হয়ে আসছে।
উদাহরণ ১. θ কোণের জন্য অতিভুজ, সন্নিহিত বাহু ও বিপরীত বাহু চিহ্নিত কর।
সমাধান :
উদাহরণ ২. a ও β কোণের জন্য অতিভুজ, সন্নিহিত বাহু ও বিপরীত বাহুর দৈর্ঘ্য নির্ণয় কর।
সমাধান :
সদৃশ সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর অনুপাতসমূহের ধ্রুবতা
মনে করি, ∠XOA একটি সূক্ষ্মকোণ। OA বাহুতে যেকোনো একটি বিন্দু P নিই। P থেকে OX বাহু পর্যন্ত PM লম্ব টানি। ফলে একটি সমকোণী ত্রিভুজ POM গঠিত হলো। এই ∆POM এর PM, OM ও OP বাহুগুলোর যে তিনটি অনুপাত পাওয়া যায় এদের মান OA বাহুতে নির্বাচিত P বিন্দুর অবস্থানের ওপর নির্ভর করে না।
∠XOA কোণের OA বাহুতে যেকোনো বিন্দু P ও P1 থেকে OX বাহু পর্যন্ত যথাক্রমে PM ও P1M1 লম্ব অঙ্কন করলে ∆POM ও দুইটি সদৃশ সমকোণী ত্রিভুজ গঠিত হয়।
এখন, ∆POM ও সদৃশ হওয়ায়,
অর্থাৎ, অনুপাতসমূহের প্রত্যেকটি ধ্রুবক। এই অনুপাতসমূহকে ত্রিকোণমিতিক অনুপাত বলে।
মনে করি, ∠XOA একটি সূক্ষ্মকোণ। OA বাহুতে যেকোনো একটি বিন্দু P নিই। P থেকে OA বাহু পর্যন্ত PM লম্ব টানি। ফলে একটি সমকোণী ত্রিভুজ POM গঠিত হলো। এই ∠POM এর PM, OM ও OP বাহুগুলোর যে ছয়টি অনুপাত পাওয়া যায় এদের ZXOA এর ত্রিকোণমিতিক অনুপাত বলা হয় এবং এদের প্রত্যেকটিকে এক একটি সুনির্দিষ্ট নামে নামকরণ করা হয়।
∠XOA সাপেক্ষে সমকোণী ত্রিভুজ POM এর PM বিপরীত বাহু, OM সন্নিহিত বাহু, OP অতিভুজ। এখন ∠XOA = 6 ধরলে, θ কোণের যে ছয়টি ত্রিকোণমিতিক অনুপাত পাওয়া যায় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
চিত্র থেকে,
লক্ষ করি, sin θ প্রতীকটি θ কোণের সাইন-এর অনুপাতকে বোঝায়; sin ও θ এর গুণফলকে নয়। θ বাদে sin আলাদা কোনো অর্থ বহন করে না। ত্রিকোণমিতিক অন্যান্য অনুপাতের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য।
ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলোর সম্পর্ক
মনে করি, ∠XOA = θ একটি সূক্ষ্মকোণ।
পাশের চিত্র সাপেক্ষে, সংজ্ঞানুযায়ী,
ত্রিকোণমিতিক অভেদাবলি
উদাহরণ ৩. হলে, A কোণের অন্যান্য ত্রিকোণমিতিক অনুপাতসমূহ নির্ণয় কর।
সমাধান : দেওয়া আছে, ।
কাজ : নিচের ত্রিকোণমিতিক সূত্রগুলো সহজে মনে রাখার জন্য তালিকা কর। |
উদাহরণ ৪. ABC সমকোণী ত্রিভুজের ∠B কোণটি সমকোণ। tan A = 1 হলে 2sin A.cos A = 1 এর সত্যতা যাচাই কর।
সমাধান : দেওয়া আছে, tan A = 1
অতএব, বিপরীত বাহু = সন্নিহিত বাহু = a
কাজ : ABC সমকোণী ত্রিভুজের ∠C সমকোণ, AB = 29 সে.মি., BC = 21 সে.মি. এবং ∠ABC = θ হলে, এর মান বের কর। |
উদাহরণ ৫. প্রমাণ কর যে,
সমাধান :
বামপক্ষ =
উদাহরণ ১০. প্রমাণ কর :
সমাধান :
30°, 45° ও 60° কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত
30° ও 60° কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত :
ত্রিকোণমিতিক অনুপাতসমূহ বের করি :
45° কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত :
পূরক কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত
আমরা জানি যে, দুইটি সূক্ষ্মকোণের পরিমাপের সমষ্টি 90° হলে, এদের একটিকে অপরটির পূরক কোণ বলা হয়। যেমন, 30° ও 60° এবং 15° ও 75° পরস্পর পূরক কোণ।
সাধারণভাবে, θ কোণ ও ( 90° – θ) কোণ পরস্পরের পূরক কোণ
উপরের সূত্রগুলো নিম্নলিখিতভাবে কথায় প্রকাশ করা যায় :
পূরক কোণের sine = কোণের cosine
পূরক কোণের cosine = কোণের sine
পূরক কোণের tangent = কোণের cotangent ইত্যাদি।
0° ও 90° কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত
আমরা সমকোণী ত্রিভুজের সূক্ষ্মকোণ θ এর জন্য ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলো নির্ণয় করতে শিখেছি। এবার দেখি, কোণটি ক্রমশঃ ছোট করা হলে ত্রিকোণমিতির অনুপাতগুলো কীরূপ হয়। θ কোণটি যতই ছোট হতে থাকে, বিপরীত বাহু PN এর দৈর্ঘ্য ততই ছোট হয়। P বিন্দুটি N বিন্দুর নিকটতর হয় এবং অবশেষে θ কোণটি যখন 0° এর খুব কাছে অবস্থিত হয়, OP প্রায় ON এর সাথে মিলে যায়।
θ সূক্ষ্মকোণ হলে আমরা দেখেছি
0° কোণের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে এ সম্পর্কগুলো যাতে বজায় থাকে সে দিকে লক্ষ রেখে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
0 দ্বারা ভাগ করা যায় না বিধায় cosec 0° ও cot 0° সংজ্ঞায়িত করা যায় না।
আবার, যখন ৪ কোণটি 90° এর খুব কাছে, অতিভুজ OP প্রায় PN এর সমান। সুতরাং, sin θ এর মান প্রায় 1 । অন্যদিকে, θ কোণটি প্রায় 90° এর সমান হলে ON শূন্যের কাছাকাছি; cos 8 এর মান প্রায় 0।
দ্রষ্টব্য : ব্যবহারের সুবিধার্থে 0, 30, 45, 60° ও 90° কোণগুলোর ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলোর মান নিচের ছকে দেখানো হলো :
লক্ষ করি : নির্ধারিত কয়েকটি কোণের জন্য ত্রিকোণমিতিক মানসমূহ মনে রাখার সহজ উপায়।
উদাহরণ ১৩. মান নির্ণয় কর :
সমাধান :
সমাধান :