'বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য সংকটঃ কারণ ও প্রতিকার' শীর্ষক শিরোনাম অনধিক ৫০০ শব্দের মধ্যে একটি বছ রচনা করুন।

Created: 1 year ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

প্রচলিত অর্থে তারল্য (Liquidity) বলতে গ্রাহকের অর্থ চাহিবামাত্র পরিশোধের ক্ষমতাকে বুঝানো হয়। আর তারল্য সংকট (Liquidity crisis) হলো কোনো কারণে গ্রাহক যদি ব্যাংকের নিকট (তার সঞ্চিত অর্থ কিংবা বিনিয়োগের জন্য ঋণের টাকা) চেয়ে না পান তখন যে অবস্থার সৃষ্টি হয় সেই অবস্থা। অর্থাৎ গ্রাহকের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর মতো টাকা ব্যাংকে জমা না থাকার মত অবস্থাকে তারল্য সংকট বলে। অর্থনীতিবিদদের মতে তারল্য সংকট বলতে এমন একটি অবস্থাকে বুঝায় যখন বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের স্বল্পতা (Scarcity) পরিলক্ষিত হয়।

তারল্য সংকট বর্তমানে আমাদের দেশে প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এই অবস্থা বেশি দিন থাকলে ব্যাংকের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা পুরোপুরি উঠে যাবে। বেশ কিছু কারণে ব্যাংকিংখাতে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে । দু-একটি ব্যাংক ছাড়া সব ব্যাংকই গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক অর্থ দিতে পারছে।

তারল্য সংকটের কারণঃ

০১. ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করায় তাদের সাময়িক ঋণদানের ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে ।. 

০২. বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ঋণ আমানত অনুপাত কমিয়ে দিয়েছে, যা আগে ছিল সাধারণ ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৫ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ছিল ৯০ শতাংশ। নতুন সার্কুলার অনুযায়ী, সাধারণ ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ছিল ৮৯ শতাংশ। প্রথম সার্কুলারে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে ঋণ আমানত অনুপাত সমন্বয় করতে বলা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তা ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে ।

০৩. আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনে ফলে টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চলে যায় । অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নগদ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক নেওয়ার কারণে তারল্য সংকট দেখা দেয়।

০৪. বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ কমে যাওয়া। বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে আমাদের দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে । বিদেশ থেকে কর্মী ফেরত ও কর্মী না নেয়াসহ বিভিন্ন কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে। ফলে তারল্য সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে ।

০৫. একটি বেসরকারি ব্যাংকের কারণে বাজারে প্যানিক তৈরি হয়েছে, যার ফলে তারল্য সংকটের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু সরকারি সংস্থা বেসরকারি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে এবং নিচ্ছে।

তারল্য সংকটের প্রতিকারঃ

০১. সরকারের অতিমাত্রায় ঋণ গ্রহণ বন্ধ করতে হবেঃ সরকারকে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ব্যাংক থেকে অতিমাত্রায় ঋণ গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। ফলে ব্যাংকগুলি তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। এতে তারল্য সংকট অনেক তা কমে আসবে।

০২. মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণঃ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সরকারের কাজেই সরকারকে এর প্রয়োজনীয় সময় উপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।

০৩. শেয়ার মার্কেটের লুট করা টাকা উদ্ধার করে শেয়ার মার্কেটকে সচল করাঃ সরকার মার্কেটের দোষীদের থেকে লুট করা টাকা উদ্ধার করে পুনরায় শেয়ার মার্কেটে প্রদানের মাধ্যমে পুরো মার্কেটকে সচল করা। ফলে তারল্য সংকট থেকে কিছুটা মুক্তি মিলবে।

০৪. দেশের বাহিরে টাকা পাচার বন্ধ করাঃ অনেক সময় আমাদের দেশে কিছু অসৎ দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা দেশের বাহিরে পাচার করে থাকেন। এতে বড় ধরনের একটা অঙ্ক দেশের বাহিরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে এর প্রভাব তারল্য সংকট হয়ে পুরো দেশের উপর পড়ছে।

1 year ago

বাংলা

Please, contribute to add content.
Content
Promotion