Job

’গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা' বিষয়ে ২০০ শব্দে একটি রচনা লিখুন ।

Created: 1 year ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

                                                                                                                   গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা

ব্যাংককে বলা হয় অর্থনীতির ধারক ও বাহক। লক্ষ লক্ষ সঞ্চয়ী মানুষের ভরসা হলো ব্যাংক। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আর্থিক খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক খাত। এ খাতের আওতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক সেবামান। ব্যাংকিং ব্যবস্থা হচ্ছে আধুনিকায়ন। মানুষ দ্রুত ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছে। যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় চালিকশক্তি হলো ব্যাংকিং খাত। অর্থ গচ্ছিত রাখা, অর্থ লেনদেন করা, বিভিন্ন ধরনের ঋণসেবা প্রদান, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, এসএমই-এর উন্নয়নসহ নানাবিধ কার্যক্রমে ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সোনালী, পূবালী, রূপালী, জনতা ও কৃষি ব্যাংকসহ সব ব্যাংকই ছিল রাষ্ট্রীয়াত্ব ব্যাংক। পাশাপাশি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোও ছিল সরকারি। অর্থনৈতিক যাবতীয় লেনদেন ছিল এ ব্যাংকগুলোকে ঘিরেই। পরবর্তী সময়ে কিছু সরকারি ব্যাংককে আবার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয় । 

আশির দশকের প্রারম্ভে ব্যাংকিং খাতকে আরো গতিশীল এবং সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে বেসরকারি ব্যাংক চালু করার অনুমোদন দেয়া হয়। ১৯৮২ সালে প্রথম বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে এবি ব্যাংক ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে দেশে ৪০টিরও বেশি বেসরকারি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। এর বাইরে বৈদেশিক বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানসহ আরো ১০টি ব্যাংক ব্যাংকিং, কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাষ্ট্র পরিচালিত আরো কয়েকটি বিশেষায়িত ব্যাংক যেমন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকও ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে সরকারি ৬টি, বিশেষায়িত ব্যাংক ৩টি বেসরকারি ব্যাংক ৪২টি এবং বৈদেশিক ব্যাংক ৯টি মিলে মোট ব্যাংক রয়েছে ৬০টি। শহরের চেয়ে গ্রামেই এখন ব্যাংকের শাখা বেশি। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অভাবনীয় পুনর্জাগরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। আধুনিকায়ন এবং তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের ধারায় গ্রাহকসেবা ও চাহিদা পূরণে বেসরকারি ব্যাংকগুলো গতিশীল ভূমিকা রাখছে। সরকারি ব্যাংকগুলোও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে গ্রাহকসেবা আধুনিকায়ন করার ব্যাপারে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট রয়েছে। এখন কোনো ব্যাংকেই আগের মত টাকা তুলতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণেই গ্রাহকরা দ্রুত ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন। অনলাইন পদ্ধতিতে যে কেউ এখন এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) সেবার আওতায় যে কোন জায়গা থেকে যেমন টাকা তুলতে পারেন তেমনি জমাও দিতে পারেন। প্রতিটি ব্যাংকে আধুনিক জনবল রয়েছে। প্রতিটি ব্যাংকেই বর্তমান প্রজন্মের মেধাবী সৃজনশীল তরুণদের লক্ষ্য করা যায়। ব্যাংকগুলো মুনাফা করে বেশি। প্রবৃদ্ধির হারও বেশি। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো শুধুমাত্র মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যেই কাজ করে না, দেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়েও অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। সামাজিক দায়বদ্ধতায়ও ব্যাংকগুলোর ভূমিকা প্রশংসনীয়। মেধাবৃত্তি প্রদান, হাসপাতাল ক্লিনিক নির্মাণ, হাসপাতালে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম ব্যাংকগুলো পরিচালনা করছে। এছাড়াও ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় স্পনসর করছে বিভিন্ন ব্যাংক। দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সহায়তায়ও ব্যাংকগুলো অবদান রাখছে। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে অর্থ প্রদানসহ শীতার্ত মানুষের জন্য কম্বল বিতরণ করেও সামাজিক দায়বদ্ধতায় চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকগুলো। 

সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা এগিয়ে নিতেও ব্যাংকগুলো বর্তমানে অবদান রেখে চলেছে। দেশের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোটি কোটি টাকা মেধাবৃত্তি প্রদান করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির লেখাপড়া করার সুযোগ নিশ্চিত করেছে ব্যাংকগুলো। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এগিয়ে এসেছে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে বিভিন্ন ব্যাংকের ভূমিকা লক্ষনীয়। সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে ব্যাংকিং সেবার কর্মসূচীর আওতায় আনার জন্য কৃষকদের জন্য ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক। উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য দূরীকরণ। আর দারিদ্র্য দূরীকরণের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এসএমই খাত। এসএমই খাতের বিকাশে বাংলাদেশ ব্যাংকের বহুমুখী কর্মসূচী প্রশংসনীয়। দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে এসএমই খাত হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। 

সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে বেকার সমস্যার সমাধানে অবদান রেখে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। জানাি এসএমই ঋণের কারণে সারাদেশে এসএমই শিল্পোদ্যোক্তাদের মাঝে গতির সঞ্চার হয়েছে। এসএমই এর কারণে বিপুল সংখ্যক নারীর জীবনে পরিবর্তন এসেছে। এছাড়াও ব্যাংকিং চ্যানেলে স্বল্প সময়ে রেমিট্যান্স প্রদান, ২৪ সেবা (এটিএম), মোবাইল ব্যাংকিং, স্কুল ব্যাংকিং, প্রবাসী ঋণ, মৎস্য ঋণ, আমদানি বিকল্প শস্য খাতে ৪% হারে সুদে ঋণ প্রদান, দুগ্ধ উৎপাদন ও কৃত্রিম প্রজনন খাতে পুনঃ অর্থায়ন স্কিমের আওতায় কম সুদে ঋণ প্রদান, প্রাণি সম্পদ থা ব্যাংকগুলো ঋণ প্রদান অব্যাহত রেখেছে। বর্গাচাষীদের জন্যও জামানতবিহীন রয়েছে। অন্তভা আর্থসামাজিক উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষের হ করেছে। ব্যাংকিং কার্যক্রমকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য কৃষিবান্ধব এবং গ্রিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা থা করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে ব্যাংকিং অর্থায়নের মধ্যে এনে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো, এ শ্রেণি ও পেশার মানুষকে জাতীয় উন্নয়নে শামিল করা, সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেতে ব্যাংকগুলোর ভূমিকার কারণে এখন আর কোনো কিছুই অসম্ভব বলে মনে হয় না। ব্যাংকিং খাতের গতিশীলতার করা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী সমাজ দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান কারিগর ও চালিকাশক্তি। দেলে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হলে ব্যবসায়ী সমাজকে নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হয়। ব্যবসায়ীদের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে হলে ব্যাংকিং খাতের ইতিবাচক ভূমিকাকেও এগিয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে ব্যাংকগুলো সে ভূমিকাই পালন করছে। 

দেশের প্রান্তিক কৃষক, বর্গাচাষী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের কৃষি ঋণ দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলে দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখে চলছে। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে, ২০১৬ ও ২০১৮ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য উল্লেখযোগ্য বছর। এ সময়ে অর্থনীতি। অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল। গত দুই বছরের উন্নয়ন বিস্ময়কর। দেশের জিডিপি এখন ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং মানুষে মাথাপিছু আয় ২,০৬৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। দেশের প্রবৃদ্ধি যেমন ছিল ঈর্ষণীয় ঠিক তেমনি দারিদ্র্য বিমোচন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যোগাযোগ, গড় মাথাপিছু আয়, রিজার্ভ, খাদ্য উৎপাদন, শিক্ষা স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নসহ উন্নয়নের সব সূচকের সাফল্য ছিল অভূতপূর্ব। দাতা সংস্থাগুলো তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ প্রত্যাহারের পর নিজস্ব অর্থায়নে পা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এসব কারণেই বিদেশে দেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়েছে। জাতিসংঘ ও বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব ধারাবাহিক উন্নয়নকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে অভিহিত। করেছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল ৯২ শতাংশ মানুষ। আর মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় ছিল ১০০ ডলার। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে সাড়ে ২৩ শতাংশে। বিশ্ব ব্যাংকের হিসন অনুযায়ী, অতি দারিদ্র্যের হার এখন ১২ দশমিক ১ শতাংশ। এক সময় খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে বিদেশের দিকে চেয়ে থাকতে হয়েছে। বাংলাদেশ এখন আর খাদ্য সহায়তা নেয় না। আর্থিক খাতে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সফলতার স্বাক্ষ রেখেছে সরকার। এ কারণেই আগামীতে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

1 year ago

বাংলা

Please, contribute to add content.
Content
Promotion