জীবনীশক্তি

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) - | NCTB BOOK

জীবন পরিচালনার জন্য জীবকোষে প্রতি মুহূর্তে হাজারো রকমের জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে থাকে। এসব বিক্রিয়ার জন্য কমবেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। পৃথিবীতে শক্তির মূল উৎস সূর্য। সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরি করে। প্রাণী কিংবা অসবুজ উদ্ভিদ সৌরশক্তিকে সরাসরি আবদ্ধ করে দৈহিক কাজে ব্যবহার করতে পারে না। জীবন পরিচালনার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয়, সে শন্তির জন্য তাদের কোনো না কোনোভাবে সবুজ উদ্ভিদের উপরেই নির্ভর করতে হয়। এসব বিষয় আলোচনা করাই জীবনীশক্তি বা বায়োএনার্জেটিক্স (Bioenergetics)-এর মূল উদ্দেশ্য। এই অধ্যায়ে সংক্ষিপ্তাকারে জীবনীশক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

 

  • কোষে প্রধান শক্তির উৎস হিসেবে এটিপির (ATP) ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব। 
  • সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা প্রস্তুতি ব্যাখ্যা করতে পারব।
  •  সালোকসংশ্লেষণে ক্লোরোফিল এবং আলোর ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব। 
  • সালোকসংশ্লেষণের প্রভাবকের ভূমিকা বর্ণনা করতে পারব। 
  • সালোকসংশ্লেষণের উপর জীবের নির্ভরশীলতার কারণ মূল্যায়ন করতে পারব। 
  • শ্বসন ব্যাখ্যা করতে পারব। সবাত ও অবাত শ্বসনের ধারণা ও পুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব। 
  • সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের মধ্যে তুলনা করতে পারব। 
  • সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিল ও আলোর অপরিহার্যতার পরীক্ষা করতে পারব।
  •  শ্বসন প্রক্রিয়ায় তাপ নির্গমনের পরীক্ষা করতে পারব। 
  • জীবের খাদ্য প্রস্তুতে উদ্ভিদের অবদান উপলব্ধি করতে পারব এবং উদ্ভিদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে শিখব।
Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

বৃদ্ধি পায়
হ্রাস পায়
সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়
অপরিবর্তিত থাকে

জীবনীশক্তি ও ATP-এর ভূমিকা

জীবনীশক্তি বা জৈবশক্তি (bioenergy) বলতে আমরা ভিন্ন বা বিশেষ কোনো শক্তিকে বুঝাই না। পদার্থবিজ্ঞানে শক্তির যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা থেকে এটি আলাদা কিছু নয়, জীবদেহ বা জৈব অণুর রাসায়নিক বন্ধন ছিন্ন করার মাধ্যমে প্রাপ্ত শক্তিকে এই নামে ডাকা হয় মাত্র। জীব প্রতিনিয়ত পরিবেশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, সংগৃহীত শক্তিকে একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত করে, কখনো বা সঞ্চয় করে এবং শেষে সেই শক্তি আবার পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়।

চিত্র 4.01: অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেটের (ADP) সাথে ফসফেট (P) যুক্ত হয়ে অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) গঠিত। হতে যতখানি শক্তি বাইরে থেকে সরবরাহ করা প্রয়োজন, ATP ভেঙে ADP ও ফসফেট উৎপাদন করলে প্রায় ততখানি শক্তি নির্গত হয়। জীবকোষে এই দুটি বিক্রিয়া চক্রাকারে চলতে থাকে।

DNA এবং RNA-এর গাঠনিক উপাদানগুলোর একটি হলো অ্যাডেনিন। এটি একটি নাইট্রোজেন বেস। এর সাথে পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট রাইবোজ সুপার অণু যুক্ত হয়ে তৈরি হয় অ্যাডিনোসিন। অ্যাডিনোসিন অণুর সাথে পর্যায়ক্রমে একটি, দুটি এবং তিনটি ফসফেট/ফসফোরিক এসিড গ্রুপ যুক্ত হয়ে যথাক্রমে অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট (AMP), অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট (ADP) এবং অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) গঠন করে। এভাবে ফসফেট যুক্ত করতে বাইরে থেকে শক্তি দিতে হয়। এই বিক্রিয়ার নাম ফসফোরাইলেশন (phosphorylation)। আবার এর বিপরীত প্রক্রিয়ায়, ফসফেট গ্রুপ বিচ্ছিন্ন হলে শক্তি বের হয়ে আসে। এই বিক্রিয়ার নাম ডিফসফোরাইলেশন (dephosphorylation)। উল্লেখ্য, প্রতিমোল ATP অণুর প্রান্তীয় ফসফেট গ্রুপে 7.3 কিলোক্যালরি (প্রায় 30.55 কিলোজুল) শক্তি জমা থাকতে পারে।

পরিবেশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে তাকে কোষের তথা জীবদেহের ব্যবহার-উপযোগী রূপে পরিবর্তিত করার জন্য কাজ করে দুটি কোষীয় অঙ্গাণু: মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাস্টিড। উভয়েরই রয়েছে ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম নামক একসেট বিশেষ জৈব অণু, যাদের কাজ হলো বাহ্যিক শক্তি-উৎস থেকে আহরিত শক্তিকে ATP -এর ফসফেট গ্রুপের শক্তি হিসেবে জমা করা। মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্ষেত্রে সেই শক্তি-উৎস হতে পারে পুষ্টি উপাদান (যেমন: গ্লুকোজ) বা কোনো অন্তর্বর্তীকালীন অণু (যেমন: NADH₂) এবং প্লাস্টিডের (বিশেষত ক্লোরোপ্লাস্ট) ক্ষেত্রে সেই শক্তি-উৎস হলো সূর্যালোক বা অন্য কোনো উপযুক্ত উৎস থেকে আগত ফোটন। আবার, ATP-এর রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে যে শক্তি বের হয়, সেই শক্তি দিয়ে জীবদেহের প্রতিটি জৈবনিক কাজ অর্থাৎ, মাংসপেশির সংকোচন থেকে ইন্দ্রিয়ানুভূতি, খাবার খাওয়া থেকে হজম করা, নিঃশ্বাস নেওয়া থেকে কথা বলা, চিৎকার করা থেকে হাসি-কান্না, দৈহিক বৃদ্ধি থেকে প্রজনন, দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখা থেকে শুরু করে দেহের প্রতিটি কোষের স্বাভাবিক আয়তন বজায় রাখা এর সবই সম্পন্ন হয়। আমরা যে খাবার খাই তা জারিত হয়, সেই জারণ থেকে নির্গত শক্তি দ্বারা ফসফোরাইলেশনের মাধ্যমে আবার সেই ভাঙা দুই টুকরা জোড়া লেগে ATP তৈরি হয়। শক্তির প্রয়োজন হলে তা আবার ভাঙে। তারপর খাদ্য থেকে শক্তি নিয়ে আবার জোড়া লাগে। এ যেন এক রিচার্জেবল ব্যাটারি। ATP শক্তি জমা করে রাখে এবং প্রয়োজন অনুসারে অন্য বিক্রিয়ায় শক্তি সরবরাহ করে। এজন্য ATP-কে অনেক সময় 'জৈবমুদ্রা' বা 'শক্তি মুদ্রা' (Biological coin or energy coin) বলা হয়।

Content added By

সালোকসংশ্লেষণ (Photosynthesis)

সবুজ উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো যে এরা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড CO2) এবং পানি থেকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরি করে। সবুজ উদ্ভিদে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য তৈরি হওয়ার এ প্রক্রিয়াকে সালোকসংশ্লেষণ (Photosynthesis) বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় আলোকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সবুজ উদ্ভিদে প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদ নিজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে ব্যবহার করে এবং অবশিষ্ট খাদ্য ফল, মূল, কাণ্ড অথবা পাতায় সঞ্চিত রাখে। উদ্ভিদে সঞ্চিত এই খাদ্যের উপরেই মানবজাতি ও অন্যান্য জীবজন্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে।

সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হলো: ক্লোরোফিল, আলো, পানি এবং কার্বন ডাই- অক্সাইড। সালোকসংশ্লেষণ একটি জৈব রাসায়নিক (biochemical) বিক্রিয়া, যেটি এরকম:

পাতার মেসোফিল টিস্যু সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার প্রধান স্থান। স্থলজ সবুজ উদ্ভিদ মাটি থেকে মূলের মাধ্যমে পানি শোষণ করে পাতার মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে পৌঁছায় এবং স্টোমা বা পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে বায়ু থেকে CO2গ্রহণ করে, যা মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে পৌঁছে। জলজ উদ্ভিদ পানিতে দ্রবীভূত CO2 গ্রহণ করে। বায়ুমণ্ডলে 0.03% এবং পানিতে 0.3% CO2আছে, তাই জলজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের হার স্থলজ উদ্ভিদ থেকে বেশি।

চিত্র 4.02: সালোকসংশ্লেষণ

অক্সিজেন এবং পানি সালোকসংশ্লেষণের উপজাত দ্রব্য (by-product)। এটি একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া (oxidation-reduction process)। এ প্রক্রিয়ায় H2O জারিত হয় এবং CO2বিজারিত হয়।

 

Content added By

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া

সালোকসংশ্লেষণ একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। 1905 সালে ইংরেজ শারীরতত্ত্ববিদ ব্ল‍্যাকম্যান (Blackman) এ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেন। পর্যায় দুটি হলো, আলোকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) এবং আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় (Light independent phase)।

চিত্র 4.03: একটি পত্ররন্দ্র বা স্টোমা

(a) আলোকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) 

আলোকনির্ভর পর্যায়ের জন্য আলো অপরিহার্য। এ পর্যায়ে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট), NADPH (বিজরিত নিকোটিনামাইড অ্যাডনিন ডাইনিউক্লিওটাইড ফসফেট) এবং H' (হাইড্রোজেন আয়ন বা প্রোটন) উৎপন্ন হয়। আলোর ফোটন কণা থেকে রূপান্তরিত এই শক্তি ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন এর মাধ্যমে সঞ্চিত হয় ATP অণুর ফসফেট গ্রুপের রাসায়নিক বন্ধনশক্তি হিসেবে। এই বিক্রিয়ায় ক্লোরোফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্লোরোফিল অণু আলোকরশ্মির ফোটন (photon) শোষণ করে এবং শোষণকৃত ফোটন থেকে শক্তি সঞ্চয় করে ADP (অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট) অজৈব ফসফেট (Pl - inorganic phosphate)-এর সাথে মিলিত হয়ে ATP তৈরি করে। ATP তৈরির এই প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন (photophosphorylation) বলে। 

সূর্যালোক এবং ক্লোরোফিলের সাহায্যে পানি বিয়োজিত হয়ে অক্সিজেন, প্রোটন/হাইড্রোজেন আয়ন ও ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়াকে পানির ফটোলাইসিস (photolysis) বলা হয়।

 

(b) আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় বা অন্ধকার পর্যায় (Light independent phase বা dark phase) 

আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়ে আলোর প্রত্যক্ষ প্রয়োজন পড়ে না, তবে আলোর উপস্থিতিতেও এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। বায়ুমণ্ডলের CO₂ পত্ররন্দ্রের মধ্য দিয়ে কোষে প্রবেশ করে। আলোক পর্যায়ে তৈরি ATP, NADPH এবং H+ এর সাহায্যে আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়ে CO₂ বিজরিত হয়ে কার্বোহাইড্রেটে পরিণত হয়। সবুজ উদ্ভিদে CO₂ বিজারণের তিনটি গতিপথ শনাক্ত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ক্যালভিন চক্র, হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র এবং ক্রেসুলেসিয়ান এসিড বিপাক (Crassulacean Acid Metabolism বা CAM) এদের মধ্যে প্রথম দুটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা দেওয়া হলো।

চিত্র 4.04: C, উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের দুটি ধাপ- আলোকনির্ভর পর্যায় ও ক্যালভিন চক্র

(i) ক্যালভিন চক্র বা C3 গতিপথ (Calvin cycle বা C3 cycle): CO2 আত্তীকরণের এ পতিপথকে আবিষ্কারকদের নামানুসারে ক্যালভিন-বেনসন ও ব্যাশাম চক্র বা সংক্ষেপে ক্যালভিন চক্র বলা হয়। ক্যালভিন তার এ আবিষ্কারের জন্য 1961 সালে নোবেল পুরস্কার পান। অধিকাংশ উদ্ভিদে এই প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরি হয়। এর প্রথম স্থায়ী পদার্থ ও-কার্বনবিশিষ্ট ফসফোগ্লিসারিক এসিড, সেজন্য এ ধরনের গতিপথকে C3 গতিপথ এবং যেসব উদ্ভিদে এই চক্র সম্পন্ন হয় তাদেরকে  C3উদ্ভিদ বলে।

(ii) হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র বা C4 গতিপথ (Hatch and Slack cycle বা C4cycle): অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী M.D. Hatch ও C.R. Slack (1966 সালে)CO2 বিজারণের আর একটি গতিপথ আবিষ্কার করেন। এই পতিপথের প্রথম স্থায়ী পদার্থ হলো 4-কার্বনবিশিষ্ট অক্সালো এসিটিক এসিড, সেজন্য একেC4গতিপথ এবং যেসব উদ্ভিদে এই চক্র সম্পন্ন হয় তাদেরকে C4উদ্ভিদ বলে।

C4উদ্ভিদে একই সাথে হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র এবং ক্যালভিন চক্র পরিচালিত হতে দেখা যায়।C4 উদ্ভিদের তুলনায় C4 উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের হার বেশি এবং উৎপাদন ক্ষমতাও বেশি। সাধারণত ভুট্টা, আখ, অন্যান্য ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ, মুথা ঘাস, নটে গাছ (Amaranthus) ইত্যাদি উদ্ভিদেC4পরিচালিত হয়।

 

 

 

Content added By

সালোকসংশ্লেষণে ক্লোরোফিলের ভূমিকা

পাতার ক্লোরোফিলের পরিমাণের সাথে সালোকসংশ্লেষণের হারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, কারণ একমাত্র ক্লোরোফিলই আলোকশক্তি গ্রহণ করতে পারে। পুরাতন ক্লোরোপ্লাস্ট নষ্ট হয়ে যায় এবং তখন নতুন ক্লোরোপ্লাস্ট সংশ্লেষিত হয়। নতুন ক্লোরোপ্লাস্ট এবং ক্লোরোপ্লস্টের উপাদান সৃষ্টির হারের উপর সালোকসংশ্লেষণের হার নিভর্রশীল। সালোকসংশ্লেষণ ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য ক্লোরোপ্লাস্টের বিভিন্ন উপাদান দ্রুত এবং প্রচুর পরিমাণে পুনর্গঠিত হওয়া প্রয়োজন। তবে কোষে খুব বেশি পরিমাণ ক্লোরোফিল থাকলে এনজাইমের অভাব দেখা দেয় এবং সালোকসংশ্লেষণ কমে যায়।

 

Content added By

সালোকসংশ্লেষণে আলোর ভূমিকা

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলোর গুরুত্ব অপরিসীম। পানি এবংCO2থেকে শর্করা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস আলো। সূর্যালোক ক্লোরোফিল সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে। সূর্যালোকের প্রভাবেই পত্ররন্ধ্র উন্মুক্ত হয়, CO2পাতার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে এবং খাদ্য প্রস্তুতকরণে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু পাতায় যেটুকু আলো পড়ে, তার অতি সামান্য অংশই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। আবার আলোকবর্ণালির লাল, নীল, কমলা এবং বেগুনি অংশটুকুতেই সালোকসংশ্লেষণ ভালো হয়। সবুজ কিংবা হলুদ আলোতে সালোকসংশ্লেষণ ভালো হয় না। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আলোর পরিমাণ বাড়লে সালোকসংশ্লেষণের হারও বেড়ে যায়। কিন্তু আলোর পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে গেলে পাতার ভিতরকার এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়, ক্লোরোফিল উৎপাদন কম হয়। ফলে সালোকসংশ্লেষণের হারও কমে যায়। সাধারণত 400 nm থেকে 480 nm এবং 680 nm (ন্যানোমিটার) তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোতে সালোকসংশ্লেষণ সবচেয়ে ভালো হয়।

Content added By

সালোকসংশ্লেষণের প্রভাবক

আলো এবং ক্লোরোফিল ছাড়াও সালোকসংশ্লেষণ আরও কতগুলো প্রভাবক দিয়ে প্রভাবিত হয়। প্রভাবকগুলো কিছু বাহ্যিক এবং কিছু অভ্যন্তরীণ। প্রভাবকের উপস্থিতি, অনুপস্থিতি, পরিমাণের কম- বেশি সলোকসংশ্লেষণের পরিমাণও কম-বেশি করে থাকে। প্রভাবকগুলো হচ্ছে:

(a) বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ 

(i) আলো: এ সম্পর্কে ইতোমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। 

(ii) কার্বন ডাই-অক্সাইড: কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়া সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চলতে পারে না। এ প্রক্রিয়ায় যে খাদ্য প্রস্তুত হয় তা কার্বন ডাই-অক্সাইড বিজারণের ফলেই হয়ে থাকে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ 0.03 ভাগ, কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ শতকরা এক ভাগ পর্যন্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করতে পারে। তাই বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সালোকসংশ্লেষণের পরিমাণও বেড়ে যায়। তবে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ খুব বেশি মাত্রায় বেড়ে গেলে পাতার মেসোফিল টিস্যুর কোষের অম্লত্বও বেড়ে যায় এবং পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়। 

(iii) তাপমাত্রা: সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা বিশেষ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত অতি নিম্ন তাপমাত্রা (০° সেলসিয়াস, এর কাছাকাছি) এবং অতি উচ্চ তাপমাত্রায় (45° সেলসিয়াসের উপরে) এ প্রক্রিয়া চলতে পারে না। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য পরিমিত (optimum) তাপমাত্রা হলো 22° সেলসিয়াস থেকে 35° সেলসিয়াস পর্যন্ত। তাপমাত্রা 22° সেলসিয়াসের কম বা 350 সেলসিয়াসের বেশি হলে সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়। 

(iv) পানি: সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরির উদ্দেশ্যে CO₂ কে বিজারণের জন্য প্রয়োজনীয় H+ (হাইড্রোজেন আয়ন) পানি থেকেই আসে। পানির ঘাটতি হলে পত্ররন্দ্রের রক্ষীকোষের স্ফীতি হারিয়ে রন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাতাস থেকে CO₂ অনুপ্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়। অতিরিক্ত পানি ঘাটতির ফলে এনজাইমের সক্রিয়তা বিনষ্ট হয়ে সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্থ হতে পারে। 

(v) অক্সিজেন: বাতাসে অক্সিজেনের ঘনত্ব বেড়ে গেলে সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায় আর অক্সিজেনের ঘনত্ব কমে গেলে সালোককসংশ্লেষণের হার বেড়ে যায়। তবে অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে সালোকসংশ্লেষণ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে।

 (vi) খনিজ পদার্থ: ক্লোরোফিলের প্রধান উপকরণ হচ্ছে নাইট্রোজেন এবং ম্যাগনেসিয়াম। লোহার অনুপস্থিতিতে পাতা ক্লোরোফিল সংশ্লেষণ করতে পারে না, ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। কাজেই মাটিতে এসব খনিজের অভাব হলে সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।

 (vii) রাসায়নিক পদার্থ: বাতাসে ক্লোরোফর্ম, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন বা কোনো বিষাক্ত গ্যাস থাকলে সালোকসংশ্লেষণে ব্যাঘাত ঘটে বা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

 

(b) অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ

(i) ক্লোরোফিল: এ সম্পর্কে ইতোমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। 

(ii) পাতার বয়স ও সংখ্যা: একেবারে কচি পাতা এবং একেবারে বয়স্ক পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ কম থাকে বলে সালোকসংশ্লেষণ কম হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্লোরোপ্লাস্টের সংখ্যাও বেশি হয়। মধ্যবয়সী পাতায় সবচেয়ে বেশি সালোকসংশ্লেষণ ঘটে। পাতার সংখ্যা বেশি হলে সালোকসংশ্লেষণ বেশি হয়। 

(iii) শর্করার পরিমাণ: সালোকসংশ্লেষণ চলাকালীন শর্করার পরিবহন কম হলে তা সেখানে জমা হয়ে থাকে। বিকেলে পাতায় বেশি শর্করা জমা হয় বলে সালোকসংশ্লেষণের গতি মন্থর হয়। 

(iv) পটাশিয়াম: পটাশিয়ামের অভাবে সালোকসংশ্লেষণের পরিমাণ বেশ কমে যেতে দেখা যায়। কারণ, সম্ভবত এ প্রক্রিয়ায় পটাশিয়াম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। 

(v) এনজাইম: সালোকসংশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের এনজাইমের প্রয়োজন হয়।

Content added By

জীবজগতে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব

সালোকসংশ্লেষণ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া। এ বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সূর্যালোক এবং জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। নিচের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যাবে। বিশ্বজুড়ে এ বিক্রিয়ার ব্যাপকতা লক্ষ করে কোনো কোনো বিজ্ঞানী এ প্রক্রিয়াকে জৈব রাসায়নিক কারখানা নামে অভিহিত করেছেন।

সমস্ত শক্তির উৎস হলো সূর্য। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ করতে পারে। কোনো প্রাণীই তার নিজের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না। আমরা খাদ্য হিসেবে ভাত, রুটি, ফলমূল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি যা-ই গ্রহণ করি না কেন, তার সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি। কাজেই খাদ্যের জন্য সমগ্র প্রাণিকুল সবুজ উদ্ভিদের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, আর সবুজ উদ্ভিদ এ খাদ্য প্রস্তুত করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। কাজেই বলা যায়, পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণীর খাদ্য প্রস্তুত হয় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, বিশেষ করে O₂ ও CO₂-এর সঠিক অনুপাত রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বায়ুতে অক্সিজেন গ্যাসের পরিমাণ 20.95 ভাগ এবং CO₂ গ্যাসের পরিমাণ 0.033 ভাগ।

পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং জীবনযাপনের জন্য বায়ুতে এ দুটি গ্যাসের পরিমাণ স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকতে হয়। এ পরিমাণের তারতম্য ঘটলে বায়ুমণ্ডল জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। আমরা জানি, সব জীবেই (উদ্ভিদ ও প্রাণী) সব সময়ের জন্য শ্বসনক্রিয়া চলতে থাকে। শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীব O₂ গ্রহণ করে এবং CO₂ ত্যাগ করে। কেবল শ্বসন প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বায়ুমণ্ডলে O2 গ্যাসের স্বল্পতা এবং CO₂ গ্যাসের আধিক্য দেখা দিত। কিন্তু সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডল থেকে CO₂ গ্রহণ করে এবং O₂ ত্যাগ করে বলে এখনও বায়ুমণ্ডলে O₂ ও CO₂ গ্যাসের সঠিক অনুপাত রক্ষিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে অধিক হারে বন-জঙ্গল ধ্বংস করার ফলে বায়ুমণ্ডলে এ দুটি গ্যাসের অনুপাত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, কাজেই আমাদেরকে অবশ্যই অধিক হারে গাছ লাগাতে হবে।

মানবসভ্যতার অগ্রগতি অনেকাংশে সালোকসংশ্লেষণের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। অন্ন, বস্ত্র, শিল্পসামগ্রী (যেমন নাইলন, রেয়ন, কাগজ, সেলুলোজ, কাঠ, রাবার), ঔষধ (যেমন কুইনাইন, মরফিন), জ্বালানি কয়লা, পেট্রল, গ্যাস প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। তাই সালোকসংশ্লেষণ না ঘটলে মানবসভ্যতা ধ্বংস হবে, বিলুপ্ত হবে জীবজগৎ। সুতরাং সালোকসংশ্লেষণ জীবজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া।

শুধু তা-ই নয়, আজ থেকে প্রায় 5 বিলিয়ন বছর আগে যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয়, তখন এখানে কোনো গ্যাসীয় অক্সিজেন ছিল না। আদি উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন তৈরি করে এই পৃথিবীকে আমাদের জন্য বাসযোগ্য করে দিয়েছিল।

 

 

কাজ: সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলোর অপরিহার্যতার পরীক্ষা। 

পরীক্ষায় উপকরণ: টবে লাগানো সবুজ পাতাবিশিষ্ট একটি গাছ, কালো কাগজ, 95% ইথাইল অ্যালকোহল, 1% আয়োডিন দ্রবণ, ক্লিপ, পেট্রিডিস, টেস্ট টিউব, বিকার, বুনসেন বার্নার বা স্পিরিট ল্যাম্প, ড্রপার, ফোরসেপ, পানি।

চিত্র 4.05: সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলোয় অপরিহার্যতায় পরীক্ষা

পদ্ধতি: টবে লাগানো পাছটিকে 48 ঘণ্টার জন্য অন্ধকার কোনো স্থানে রেখে দিতে হবে যেন পাতাগুলো শ্বেতসারবিহীন হয়ে পড়ে। অন্ধকারে রাখা গাছটির একটি পাতার একাংশের উভয় দিক কালো কাগজ দিয়ে আবৃত করে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিতে হবে যেন ঐ অংশে সূর্যালোক প্রবেশ করতে না পারে। এরপর গাছসহ টবটিকে সূর্যালোকে রেখে দিতে হবে। কয়েক (6-7) ঘণ্টা পর গাছ থেকে পাতাটিকে ছিঁড়ে এনে কালো কাগজ খুলে ফেলে পানিতে কয়েক মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। এরপর পাতাটিকে ক্লোরোফিলমুক্ত করার জন্য 95% ইথাইল অ্যালকোহলে সিদ্ধ করতে হবে, যতক্ষণ না পাতাটি বিবর্ণ হয়। এবার সিদ্ধ বর্ণহীন পাতাটিকে অ্যালকোহল থেকে তুলে পানিতে ধুয়ে নিয়ে আয়োডিন দ্রবণে ডুবাতে হবে। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য অ্যালকোহলে সিদ্ধ করার সময় সরাসরি তাপ না দিয়ে টেস্ট টিউবে অ্যালকোহল এবং পাতা নিয়ে টেস্ট টিউবকে বিকারের পানিতে রেখে তাপ দিতে হবে। 

পর্যবক্ষেণ: আয়োডিন দ্রবণ থেকে উঠিয়ে আনলে দেখা যাবে, পাতাটির কালো কাগজ দিয়ে আবৃত অংশ ছাড়া বাকি সবটুকু অংশই নীল বা পাঢ় বেগুনি বা কালো বর্ণ ধারণ করেছে। 

সিদ্ধান্ত: শ্বেতসার এবং আয়োডিন দ্রবণের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে শ্বেতসার নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালো বর্ণ ধারণ করবে। কালো কাগজ দিয়ে আবৃত অংশে সূর্যালোক পৌঁছাতে পারে না, ফলে পাতার ঐ অংশে সালোকসংশ্লেষণ হয় না বলে শ্বেতসারও প্রস্তুত হয় না। শ্বেতসার প্রস্তুত হয় না বলে পাতার আবৃত অংশ আয়োডিন দ্রবণে বিক্রিয়া করে নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালো বর্ণ ধারণ করে না। কিন্তু পাতাটির অনাবৃত অংশে সূর্যালোক পড়েছিল বলে ঐসব সথানে শ্বেতসার উৎপন্ন হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় সালোকসংশ্লেষণ তথা শ্বেতসার প্রস্তুতের জন্য আলো অপরিহার্য। 

সতর্কতা: 

(a) পরীক্ষার পূর্বে টবের গাছটি যেন বেশ কিছু সময়ের জন্য অন্ধকারে রাখা হয়। 

(b) কালো কাগজ এমন হতে হবে যেন তার মধ্য দিয়ে সূর্যালোক প্রবেশ করতে না পারে। 

(c) পরীক্ষা চলাকালীন কমপক্ষে 6-7 ঘণ্টা পূর্বে টবটিকে সূর্যালোকে রাখতে হবে। 

(d) অ্যালকোহলে পাতাটিকে সিদ্ধ করার সময় সরাসরি তাপ না দেওয়াই ভালো।

 

কাজ: সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিলের অপরিহার্যতার পরীক্ষা।

পরীক্ষার উপকরণ: ম্যানিহট বা পাতাবাহার উদ্ভিদের নানা বর্ণের পাতা, অ্যালকোহল, আয়েডিন দ্রবণ, পানি, পেট্রিডিস, টেস্ট টিউব, বুনসেন বার্নার, ড্রপার, বিকার। পদ্ধতি: দুপুরের দিকে উদ্ভিদের একটি বাহারি পাতা এনে এর সবুজ অংশটুকু চিহ্নিত করে পাতাটিকে কয়েক মিনিট পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। এরপর পানি থেকে পাতাটিকে তুলে নিয়ে অ্যালকোহলে সিদ্ধ করতে হবে যতক্ষণ না পাতাটি বিবর্ণ হয়। এবার পাতাটিকে তুলে পানিতে ধুয়ে নিয়ে আয়োডিন দ্রবণে ডুবাতে হবে। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য অ্যালকোহলে সিদ্ধ করার সময় সরাসরি তাপ না দিয়ে টেস্ট টিউবে অ্যালকোহল এবং পাতা নিয়ে টেস্ট টিউবকে বিকারের পানিতে রেখে তাপ দিতে হবে। 

পর্যবেক্ষণ: আয়োডিন দ্রবণে ডুবানোর পর দেখা যাবে পাতার কেবল সবুজ অংশই নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালো হয়েছে। 

সিদ্ধান্ত: ক্লোরোফিল থাকায় কেবল সবুজ অংশই সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে শর্করা প্রস্তুত করেছে। ক্লোরোফিল না থাকায় অসবুজ (কমলা বা হলুদ) অংশে শর্করা প্রস্তুত হয়নি। সবুজ অংশে শর্করা ছিল বলেই আয়োডিন দ্রবণে ঐ অংশ নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালো হয়েছে। 

সতর্কতা: অ্যালকোহলে পাতাটিকে সিদ্ধ করার সময় সরাসরি তাপ না দেওয়াই ভালো।

 

Content added By

শ্বসন (Respiration)

আগের শ্রেণিতে তোমরা শ্বসন প্রক্রিয়া কাকে বলে এবং শ্বসনের ফলে যে দেহের বৃদ্ধিসাধন হয় এবং দেহ শক্তি পায়, সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে জেনেছ। এ অধ্যায়ে শ্বসন সম্পর্কে আরও একটু বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

জীবের জীবন ধারণ অর্থাৎ চলন, ক্ষয়পুরণ, বৃদ্ধি, জনন প্রভৃতি জৈবিক কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। আমরা আগেই জেনেছি এ শক্তির প্রধান উৎস হলো সূর্যালোক। সালোকসংশ্লেষণের সময় উদ্ভিদ সৌরশক্তিকে শর্করা জাতীয় খাদ্যবস্তুর মধ্যে স্থিতি শক্তিরূপে (Potential energy) সঞ্চয় করে রাখে। খাদ্যের মধ্যে সঞ্চিত এই ধরনের শক্তি জীব তার জীবন ধারণের জন্য সরাসরি ব্যবহার করতে পারে না। শ্বসনের সময় জীবদেহে এই স্থিতি শক্তি রাসায়নিক শক্তি (ATP) হিসেবে তাপরূপে মুক্ত হয় এবং জীবের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়। শকরাজাতীয় খাদ্যবস্তু ছাড়াও প্রোটিন, ফ্যাট এবং বিভিন্ন জৈব এসিড শ্বসনিক বস্তুরূপে ব্যবহৃত হয়। জীবদেহে এই জটিল যৌগগুলো প্রথমে ভেঙে সরল যৌগে পরিণত হয় এবং পরে জারিত হয়ে রাসায়নিক শক্তিতে (ATP) রূপান্তরিত হয়। সাধারণ তাপমাত্রায় জীবদেহের প্রতিটি কোষে দিবারাত্রি 24 ঘণ্টাই শ্বসন চলতে থাকে। তবে উদ্ভিদের বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে (ফুল ও পাতার কুঁড়ি, অঙ্কুরিত বীজ, মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগ) শ্বসন ক্রিয়ার হার অনেক বেশি। সজীব কোষের সাইটোপ্লাজম ও মাইটোকন্ড্রিয়াতে শ্বসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবদেহ যৌগিক খাদ্যদ্রব্য জারিত করে সরল দ্রব্যে পরিণত করে এবং শক্তি উৎপন্ন করে।

 

Content added By

শ্বসনের প্রকারভেদ

শ্বসনের সময় অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে শ্বসনকে দুভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসন।

সবাত শ্বসন (Aerobic respiration): যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় এবং শ্বসনিক বস্তু (শর্করা, প্রোটিন, লিপিড, বিভিন্ন ধরনের জৈব এসিড) সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে CO₂, H₂O এবং বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে, তাকে সবাত শ্বসন বলে। সবাত শ্বসনই হলো উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক শ্বসন প্রক্রিয়া। সবাত শ্বসনের সামগ্রিক সমীকরণটি এরকম:

সবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে সর্বমোট 6 অণু CO2,  6 অণু পানি এবং 38টি ATP উৎপন্ন করে।

 

অবাত শ্বসন (Anaerobic respiration): যে শ্বসন প্রক্রিয়া অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে হয়, তাকে অবাত শ্বসন বলে। অর্থাৎ যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোনো শ্বসনিক বস্তু অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই কোষের ভিতরকার এনজাইম দিয়ে আংশিকরুপে জারিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ (ইথাইল অ্যালকোহল, ল্যাকটিক এসিড ইত্যাদি), CO₂ এবং সামান্য পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে, তাকে অবাত শ্বসন বলে।

কেবল মাত্র কিছু অণুজীবে যেমন ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট ইত্যাদিতে অবাত শ্বসন হয়ে থাকে।

 

(a) সবাত শ্বসনের সংক্ষিপ্ত বর্ননা 

চিত্র 4.06; সবাত শ্বসন প্রক্রিয়া

 

 

সবাত শ্বসন প্রক্রিয়া সাধারণত চারটি ধাপে সম্পন্ন হয়। ধাপগুলো এরকম:

              ধাপ 1: গ্লাইকোলাইসিস (Glycolysis): এই প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ C6H12O6) বিভিন্ন সবাত শ্বসন প্রক্রিয়া সাধারণত চারটি ধাপে সম্পন্ন হয়। ধাপগুলো এরকম: রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জারিত হয়ে দুই অণু পাইরুভিক এসিড (C3H4O3 ) উৎপন্ন করে। এই ধাপে চার অণু ATP (এর মাঝে দুই অণু খরচ হয়ে যায়) এবং দুই অণু NADH+H+ উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ার জন্য কোনো অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না, তাই গ্লাইকোলাইসিস সবাত ও অবাত উভয় প্রকার শ্বসনেরই প্রথম পর্যায়। গ্লাইকোলাইসিসের বিক্রিয়াগুলো কোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে থাকে।

          ধাপ 2: অ্যাসিটাইল কো-এ সৃষ্টি: গ্লাইকোলাইসিস পর্যায়ে সৃষ্ট প্রতি অণু পাইরুভিক এসিড পর্যায়ক্রমিক বিক্রিয়া শেষে 2 কার্বনবিশিষ্ট এক অণু অ্যাসিটাইল কো এনজাইম-এ (Acetyl Co-A), এক অণু  এবং এক অণু NADH+H+ (অথবা NADH₂) উৎপন্ন করে (অর্থাৎ দুই অণু পাইরুভিক এসিড থেকে দুই অণু অ্যাসিটাইল কো এনজাইম-এ, দুই অণু CO2 এবং দুই অণু NADH+H+ উৎপন্ন হয়)। এই ধাপটি সাইটোপ্লাজমে ঘটে বলে এক সময় মনে করা হতো, তবে সর্বশেষ তথ্য উপাত্ত অনুসারে জানা গেছে বিক্রিয়াটি ঘটে মাইটোকন্ড্রিয়ার ম্যাট্রিক্সে।

          ধাপ 3: ক্রেবস চক্র (Krebs cycle): ইংরেজ প্রাণরসায়নবিদ Sir Hans Krebs এ চক্রটি আবিষ্কার করেন বলে একে ক্রেবস চক্র বলা হয়। এ পর্যায়ে অ্যাসিটাইল Co-A মাইটোকন্ড্রিয়াতে প্রবেশ করে এবং ক্রেবস চক্রে অংশগ্রহণ করে। এ চক্রের সকল বিক্রিয়াই মাইটোকন্ড্রিয়াতে সংঘটিত হয়। এই চক্রে এক অণু অ্যাসিটাইল Co-A থেকে দুই অণু কার্বন ডাইঅক্সাইড, তিন অণুNADH+H+ এক অণু FADH2 এবং এক অণু GTP (গুয়ানোসিন ট্রাইফসফেট) উৎপন্ন হয় (অর্থাৎ দুই অণু অ্যাসিটাইল Co-A থেকে চার অণু CO2, 6 অণু NADH+H+, দুই অণুFADH2 এবং দুই অণু GTP উৎপন্ন হয়)। উল্লেখ্য, প্রাণিকোষের ক্রেবস চক্রে কখনো কখনো GTP এর পরিবর্তে সরাসরি ATP উৎপন্ন হতে পারে কিন্তু প্রায় সমস্ত উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এই চক্রে GTP এর পরিবর্তে সবসময়ই ATP উৎপন্ন হয়। পরবর্তী ধাপ ইলেকট্রন প্রবাহতন্ত্রে যেহেতু এক অনু GTP এর সমতুল্য হিসেবে এক অনু ATP উৎপন্ন হয়, সেহেতু এই পার্থক্যটি ক্রেবস চক্র থেকে উৎসারিত মোট শক্তির পরিমাণে কোনো তারতম্য ঘটায় না।

         ধাপ 4: ইলেকট্রন প্রবাহতন্ত্র (Electron transport system): উপরোক্ত তিনটি ধাপে যে NADH+H+ (বিজারিত NAD), FADH2(বিজারিত FAD) উৎপন্ন হয়, এই ধাপে সেগুলো জারিত হয়ে ATP, পানি, উচ্চশক্তির ইলেকট্রন এবং প্রোটন উৎপন্ন হয়। উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রনগুলো ইলেকট্রন প্রবাহতন্ত্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় যে শক্তি প্রদান করে সেই শক্তি ATP তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রন প্রবাহতন্ত্র মাইটোকন্ড্রিয়ায় সংঘটিত হয় (চিত্র: 4.06)। 

কাজেই তোমরা দেখতে পাচ্ছ যে সবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে সর্বমোট ছয় অণু CO₂ ছয় অণু পানি এবং 3৪টি ATP উৎপন্ন করে। নিচের চার্টে সেটি দেখানো হলো: 

 

(b) অবাত শ্বসনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা 

দুটি ধাপে অবাত শ্বসন হয়ে থাকে। ধাপ দুটি হলো: 

ধাপ 1: গ্লুকোজের অসম্পূর্ণ জারণ: এই ধাপে এক অণু গ্লুকোজ থেকে দুই অণু পাইরুভিক এসিড, চার অণু ATP (এর মধ্যে দুই অণু ব্যবহার হয়ে যায়) এবং দুই অণুNADH+H+ উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে এ পর্যন্ত বিক্রিয়া সবাত শ্বসনের গ্লাইকোলাইসিসের অনুরূপ। তবে উৎপন্ন পাইরুভিক এসিড পরবর্তী ধাপে বিজারিত হয়ে যায় বলে অবাত শ্বসনে গ্লুকোজের অসম্পূর্ণ জারণ ঘটে- এমনটা বিবেচনা করা হয়। 

ধাপ 2: পাইরুভিক অ্যাসিডের বিজারণ: সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত এনজাইমের কার্যকারিতায় পাইরুভিক অ্যাসিড বিজারিত হয়ে CO₂ এবং ইথাইল অ্যালকোহল অথবা শুধু ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। এক্ষেত্রে গ্লাইকোলাইসিসে উৎপন্ন বিজারিত NAD (অর্থাৎ NADH+H+) জারিত হয়ে যে ইলেকট্রন, প্রোটন ও শক্তি নির্গত করে, তা ব্যবহৃত হয় পাইরুভিক অ্যাসিড থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড বা ক্ষেত্রবিশেষে ইথানল উৎপাদনের জন্য। অন্যদিকে, অক্সিজেনের অভাবে তখন অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশনও চলে না। তাই অবাত শ্বসনের ক্ষেত্রে এক অণু গ্লুকোজের গ্লাইকোলাইসিসে নিট মাত্র 2 অণু ATP পাওয়া যায়।

 

 

 

 

 

 

 

Content added || updated By

শ্বসন প্রক্রিয়ার প্রভাবকসমূহ

শ্বসন প্রক্রিয়ার প্রভাবকগুলো বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ দুরকম হতে পারে।

(a) বাহ্যিক প্রভাবক: বাহ্যিক প্রভাবকগুলো হলো: 

(i) তাপমাত্রা: 20° সেলসিয়াসের নিচে এবং 45° সেলসিয়াসের উপরের তাপমাত্রায় শ্বসন হার কমে যায়। শ্বসনের জন্য উত্তম তাপমাত্রা 20° সেলসিয়াস থেকে 45° সেলসিয়াস। 

(ii) অক্সিজেন: সবাত শ্বসনে পাইরুভিক এসিড জারিত হয়ে CO₂ ও H₂O উৎপন্ন করে। কাজেই অক্সিজেনের অভাবে সবাত শ্বসন কোনোক্রমেই চলতে পারে না। (iii) পানি: পরিমিত পানি সরবরাহ শ্বসন ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে। কিন্তু অত্যন্ত কম কিংবা অতিরিক্ত পানির উপস্থিতিতে শ্বসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। 

(iv) আলো: শ্বসন কার্যে আলোর প্রয়োজন পড়ে না সত্যি কিন্তু দিনের বেলা আলোর উপস্থিতিতে পত্ররন্ধ্র খোলা থাকায় ০₂ গ্রহণ ও CO₂ ত্যাগ করা সহজ হয় বলে শ্বসন হার একটু বেড়ে যায়। 

(v) কার্বন ডাই-অক্সাইড: বায়ুতে CO₂-এর ঘনত্ব বেড়ে গেলে শ্বসন হার একটুখানি কমে যায়। 

 

 

(b) অভ্যন্তরীণ প্রভাবক: অভ্যন্তরীণ প্রভাবকগুলো হলো: 

(i) খাদ্যদ্রব্য: শ্বসন প্রক্রিয়ায় খাদ্যদ্রব্য (শ্বসনিক বস্তু) ভেঙ্গে শক্তি, পানি এবং CO₂ নির্গত করে, তাই কোষে খাদ্যদ্রব্যের পরিমাণ ও ধরন শ্বসন হার নিয়ন্ত্রণ করে। 

(ii) উৎসেচক: শ্বসন প্রক্রিয়ায় অনেক ধরনের এনজাইম বা উৎসেচক সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। কাজেই এনজাইমের ঘাটতি শ্বসনের হার কমিয়ে দেয়। 

(iii) কোষের বয়স: অল্পবয়স্ক কোষে, বিশেষ করে ভাজক কোষে প্রোটোপ্লাজম বেশি থাকে বলে সেখানে বয়স্ক কোষ থেকে শ্বসনের হার বেশি। 

(iv) অজৈব লবণ: কোনো কোনো লবণ শ্বসন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করলেও কোষের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক কাজের জন্য এবং স্বাভাবিক শ্বসন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য কোষের ভিতরে অজৈব লবণ থাকতে হয়। 

(v) কোষমধ্যস্থ পানি: বিভিন্ন শ্বসনিক বস্তু দ্রবীভূত করতে এবং এনজাইমের কার্যকারিতা প্রকাশের জন্য পানির প্রয়োজন।

 

Content added By

শ্বসনের গুরুত্ব

শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি দিয়ে জীবের সব ধরনের ক্রিয়া-বিক্রিয়া এবং কাজকর্ম পরিচালিত হয়। শ্বসনে নির্গত  CO2 জীবের প্রধান খাদ্য শর্করা উৎপন্নের জন্য সালোকসংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। এ প্রক্রিয়া উদ্ভিদে খনিজ লবণ পরিশোষণে সাহায্য করে, যা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং অন্যান্য জৈবিক প্রক্রিয়া চালু রাখে। কোষ বিভাজনের প্রয়োজনীয় শক্তি ও কিছু আনুষঙ্গিক পদার্থ শ্বসন প্রক্রিয়া থেকে আসে। তাই বলা যেতে পারে এ প্রক্রিয়া জীবের দৈহিক বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণ করে। এ প্রক্রিয়া বিভিন্ন উপক্ষার ও জৈব এসিড সৃষ্টিতে সহায়তা করার মাধ্যমে জীবনের অন্যান্য জৈবিক কাজেও সহায়তা করে।

কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বাঁচতে পারে না। এদের শক্তি উৎপাদনের একমাত্র উপায় হলো অবাত শ্বসন। এ প্রক্রিয়ায় ইথাইল অ্যালকোহল তৈরি হয়, যা বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ল্যাকটিক এসিড ফার্মেন্টেশনের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ায় দই, পনির ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। রুটি তৈরিতে এ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। ইস্টের অবাত শ্বসনের ফলে অ্যালকোহল এবং CO, গ্যাস তৈরি হয়। এই CO₂ প্যাসের চাপে রুটি ফুলে গিয়ে ভিতরে ফাঁপা হয়।

 

কাজ: শ্বসন প্রক্রিয়ায় তাপ নির্গমনের পরীক্ষা।

 উপকরণ: দুটি থার্মোফ্লাস্ক, দুটি থার্মোমিটার, ছিদ্রযুক্ত দুটি রাবার কর্ক, অঙ্কুরিত ছোলা এবং 10% মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণ। 

চিত্র 4.07: থার্মোফ্লাস্ক

পদ্ধতি: দুটি থার্মোফ্লাস্কের একটিতে 'ক' ও অন্যটিতে 'খ' লেবেল লাগাতে হবে। 'ক' চিহ্নিত থার্মোফ্লাক্ষে সামান্য পানিসহ কিছু অঙ্কুরিত ছোলাবীজ নিতে হবে। ছিদ্রযুক্ত রাবার কর্কের মধ্য দিয়ে একটি থার্মোমিটার প্রবেশ করানোর পর ফ্লাস্কের মুখটি ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে। অবশিষ্ট অঙ্কুরিত ছোলাগুলোকে 10% ফুটন্ত মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণে 10 মিনিট ডুবিয়ে রেখে 'খ' চিহ্নিত ফ্লাঙ্কে নিতে হবে এবং ছিদ্রযুক্ত কর্কের মধ্য দিয়ে একটি থার্মোমিটার ঢুকিয়ে ফ্লাস্কের মুখ ভালোভাবে আটকে দিতে হবে। এবার 'ক' ও 'খ' চিহ্নিত থার্মোমিটার দুটির প্রাথমিক তাপমাত্রা লিখে রেখে ফ্লাস্ক দুটিকে রেখে দিতে হবে।

পর্যবেক্ষণ: কয়েক ঘণ্টা পর দেখা যাবে 'ক' থার্মোমিটারের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে কিন্তু 'খ' থার্মোমিটারের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। 

সিদ্ধান্ত: 'ক' থার্মোফ্লাস্কের অঙ্কুরিত ছোলাপুলো সজীব থাকায় শ্বসন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে এবং তাপ নির্গমনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে 'খ' ফ্লাস্কের ছোলাগুলো মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণে ডুবিয়ে নেওয়াতে বীজগুলো মরে গিয়ে নির্বীজ (Sterilized) হয়ে যায়। ফলে শ্বসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকে। 

সতর্কতা: 

1. লক্ষ রাখতে হবে যেন বীজগুলো সতেজ এবং অঙ্কুরিত হয়।

2. থার্মোমিটারের পারদপূর্ণ অংশটি যেন বীজের মাঝখানে থাকে।

 

 

 

Content added By

অনুশীলনী

১. সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে? বিক্রিয়ার মাধ্যমে দেখাও।

২. সালোকসংশ্লেষণের কাঁচামাল কী কী? 

৩. শ্বসন কাকে বলে? বিক্রিয়ার মাধ্যমে দেখাও। 

৪. সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের মধ্যে সম্পর্ক কী? 

৫. অবাত ও সবাত শ্বসনের পার্থক্য লেখ।

 

১. জীবের সালোকসংশ্লেষণের উপর নির্ভরশীলতার কারণ ব্যাখ্যা কর। 

২. শ্বসনের গুরুত্ব আলোচনা কর।

১. সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে নির্গত হয় কোনটি?

 ক. পানি          খ. শর্করা 

গ. অক্সিজেন   ঘ. কার্বন ডাই-অক্সাইড 

২. শ্বসনের গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় কত অণু ATP তৈরি হয়? 

ক. 4    খ. 6 

গ. ৪    ঘ. 18

উদ্দীপকটি লক্ষ কর এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও 

৩. চিত্রে A ও B উভয়েরই কাজ হচ্ছে- 

1. O2 গ্রহণ 

ii. H2O নির্গমন 

iii. C2O ত্যাগ 

নিচের কোনটি সঠিক? 

 ক. i ও ii     খ. i ও iii 

গ. ii ও iii      ঘ. i, ii ও iii 

৪. চিত্রে X-এ সংঘটিত প্রক্রিয়াটি- 

i. পরিবেশকে শীতল রাখে 

ii. সালোকসংশ্লেষণে সহায়তা করে 

iii. শ্বসনে ব্যাঘাত ঘটায় 

নিচের কোনটি সঠিক? 

 ক. i ও ii      খ. i ও iii 

গ. ii ও iii      ঘ. i, ii ও iii 

 

 

ক. পাইরুভিক এসিডের সংকেত কী? 

খ. অবাত শ্বসন বলতে কী বোঝায়? 

গ. চিত্রে এ উপাদানটি কীভাবে তৈরি হচ্ছে তা ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. চিত্রে এ উৎপাদনটি উৎপন্নে ব্যাঘাত ঘটলে উদ্ভিদের উপর কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে তা যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

 

২. দশম শ্রেণির ছাত্রী বিপাশা গাজর খেতে পছন্দ করে। গাজরে গ্লুকোজ থাকায় এটা তার কাজ করার শক্তি যোগায়। তার ছোট বোন তাকে প্রশ্ন করে, গাছ বড় হওয়ার জন্য শক্তি কীভাবে পার? সে তার বোনকে জানায়, গাজও শ্বসন প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ থেকে শক্তি পায়। 

ক. ফটোলাইসিস কী? 

খ. C4উদ্ভিদ বলতে কী বোঝায়? 

গ. বিপাশার গৃহীত খাদ্য উপাদানের 2 অণু থেকে ক্রেবস চক্রে কী পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় ছকের মাধ্যমে ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. উত্ত প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হলে উদ্ভিদের মধ্যে কী প্রভাব ফেলবে তা বিশ্লেষণ কর।

Content added By
Promotion