এ অধ্যায় থেকে আমরা জানতে পারব-
বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্ব শব্দ দুটি খুবই পরিপূরক। একটির সঙ্গে অপরটির রয়েছে ঘনিষ্ঠ সংযোগ। 'বুদ্ধ' শব্দের অর্থ জ্ঞানী আর 'বোধি' শব্দের অর্থ জ্ঞান বা প্রজ্ঞা। তবে এর উৎপত্তি বা বিবর্তনের পথ সহজ নয়। বোধিসত্ত্ব হিসেবে শতশত বছরের একাগ্র সাধনা ও কঠোর অধ্যাবসায়ের ফলে বুদ্ধত্ব অর্জন সম্ভব। এখানে বুদ্ধ বলতে শুধু গৌতম বুদ্ধ নয়। বুদ্ধের সাধারণ আদর্শ ও বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হচ্ছে। বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী গৌতম বুদ্ধের আগে আরও অনেক বুদ্ধ ছিলেন। সে হিসেবে বোধিসত্ত্বের সংখ্যাও অপরিমেয়। তবে উভয়ের ক্ষেত্রে তাঁদের আদর্শিক গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য প্রায় একই। নিচে বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বের পরিচয় দেওয়া হলো
বুদ্ধ শব্দের সরল অর্থ জ্ঞানী হলেও এ জ্ঞান কেবল সাধারণ বা জাগতিক নয়, তা পারমার্থিক জ্ঞানও বটে। যেমন: জাতিস্মর বা পরচিত্ত জ্ঞানও এর অন্তর্ভুক্ত। তিনি নিজের ও অন্যের জন্মবৃত্তান্ত যেমন জানেন, তেমনি অন্যের মনের কথাও জানতে পারেন। তাই তিনি কখন, কাকে কীভাবে উপদেশ দেবেন, তা তিনি সম্যকভাবে বুঝতে পারেন। তাই পৃথিবীতে অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি থাকলেও তাঁরা বুদ্ধ হিসেবে অভিহিত নন। এ জ্ঞান অতুলনীয় অনন্য ও অসাধারণ। জাগতিক সব তৃষ্ণার বিনাশ ঘটিয়ে বিশুদ্ধ জ্ঞানসাধনায় পূর্ণতা পেলেই বুদ্ধ হিসেবে অভিহিত হতে পারেন।
জগতে বুদ্ধের আবির্ভাব অত্যন্ত দুর্লভ। বৌদ্ধ বিশ্বাসমতে- একজন বুদ্ধের পরিনির্বাণের পরে আরেকজন বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। এর মাঝখানে পূর্ববর্তী বুদ্ধের অনুশাসন চলে। এ ধারায় বর্তমানে বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা অনুশীলন করছে।
মূলত বুদ্ধত্ব অর্জনের সাধনা দীর্ঘ পথপরিক্রমার মতো। এটিকে বলা চলে পারমী পূর্ণতার পরিক্রমা। বিভিন্ন প্রকার পারমী পুরণের জন্য প্রয়োজন জন্মজন্মান্তরের অসংখ্য কুশল কর্মের প্রভাব। লক্ষণীয় এই জন্ম কেবল মানুষ নয়, অন্যান্য প্রাণী হিসেবেও জন্ম নিয়ে পুণ্য সঞ্চয় করতে হয়। স্মর্তব্য, পূর্বের শ্রেণিতে পঠিত জাতকের বিভিন্ন কাহিনিতে সে সব পুণ্যকর্মের কিছু নিদর্শন রয়েছে। এভাবে পারমী পূর্ণ করে বহু বুদ্ধ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন, ভবিষ্যতেও হবেন।
বৌদ্ধধর্ম গ্রন্থে তিন প্রকার বুদ্ধের উল্লেখ দেখা যায়। যথা:
১. সম্মাসম্বুদ্ধ বা সম্যকসম্বুদ্ধ
২. পচ্চেকবুদ্ধ বা প্রত্যেকবুদ্ধ
৩. সাবকবুদ্ধ বা শ্রাবকবুদ্ধ
১. সম্মাসম্বুদ্ধ বা সম্যকসম্বুদ্ধ: জগতে বুদ্ধগণের মধ্যে সম্যকসম্বুদ্ধই সর্বোত্তম। যিনি কোনো গুরুর সাহায্য ছাড়া জন্মজন্মান্তরের সাধনায় দশ পারমী পূর্ণ করে নিজের কর্মপ্রচেষ্টায় বুদ্ধত্বজ্ঞান লাভ করেন। তিনি সর্বোত্তম প্রজ্ঞাজ্ঞানের অধিকারী। পূর্বের জন্মের সুকর্মের প্রভাবে সর্বজ্ঞতা অর্জন করে বুদ্ধ হন। তাঁরা শুধু নিজের মুক্তির জন্য বুদ্ধ হন না, জগতের সকল প্রাণীর মুক্তির ব্রত নিয়েই বুদ্ধ হন। এজন্য সকল প্রাণীর কল্যাণে তাঁরা দুঃখমুক্তির পথ ও নির্বাণ লাভের উপায়ে তাঁরা এই মুক্তির বাণী প্রচার করেন।
জগতে বুদ্ধগণের আবির্ভাব দুর্লভ। এর মধ্যে সম্যকসম্বুদ্ধের আবির্ভাব অতীব দুর্লভ। পৃথিবীতে একজন বুদ্ধের পরিনির্বাণের পর হাজার বছর সাধনা করে আরেকজন সম্যকসম্বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। ত্রিপিটকে এ পর্যন্ত আটাশজন সম্যকসম্বুদ্ধের আবির্ভাবের কথা জানা যায়।
২. পচ্চেকবুদ্ধ বা প্রত্যেকবুদ্ধ: প্রত্যেকবুদ্ধ হলো- যাঁরা স্বীয় কর্মপ্রচেষ্টায় আত্মমুক্তির সাধনায় পূর্ণতা অর্জনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। বুদ্ধগণ সকল তৃঞ্চা ক্ষয় করার জন্য সম্যকসম্বুদ্ধের সাধনপ্রণালি অনুকরণ করে বুদ্ধ হন। সম্যকসম্বুদ্ধের মতো তাঁরাও স্বীয় সাধনাবলে অর্হত ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বুদ্ধত্ব লাভ করেন। তবে এ বুদ্ধগণ সকল প্রাণীর মুক্তির চিন্তা করে না, শুধু নিজের মুক্তির পথ অনুশীলনে সীমাবদ্ধ। বুদ্ধগণ কোনো একটা সময়ে পৃথিবীতে সম্যকসম্বুদ্ধ হয়ে আবির্ভূত হবেন। তাই তাঁরা অনুগামীবুদ্ধ হয়ে পৃথিবীতে পারমী পূরণে নীরবে প্রজ্ঞাসাধনায় রত থাকেন।
৩. সাবকবুদ্ধ বা শ্রাবকবুদ্ধ: শ্রাবকবুদ্ধ হলো সম্যকসম্বুদ্ধ আদর্শ অনুশীলনের সাধনায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। শ্রাবকবুদ্ধগণই ভবিষ্যতে সম্যকসম্বুদ্ধ হবেন। এভাবে তাঁরা মুক্তিসাধনায় রত থাকেন। প্রকৃতপক্ষে সম্যকসম্বুদ্ধের অনুসারী অনেক শিষ্য প্রশিষ্যরা শ্রাবকবুদ্ধ হিসেবে পারমী পূরণে রত থেকে মুক্তিসাধনায় ব্রতী হন। তাঁরা পৃথিবীতে মানবকল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন এবং অন্যদেরকেও নির্বাণ লাভে সহায়তা করেন। প্রত্যেক সম্যকসম্বুদ্ধের অনেক শিষ্য-প্রশিষ্য থাকেন, যাঁরা অর্হত ফলে প্রতিষ্ঠিত। শ্রাবকবুদ্ধগণ নির্বাণের অভিযাত্রী হয়ে নিজের কর্মপ্রচেষ্টায় সাধনায় মুক্তি লাভ করেন। তাঁরা পৃথিবীতে আর জন্মগ্রহণ করে দুঃখভোগ করেন না। গৌতম বুদ্ধের সময়ে অনেকে শ্রাবকবুদ্ধ হয়ে বুদ্ধের আদর্শ অনুশীলনে রত ছিলেন। তাঁরা বুদ্ধ হওয়ার ব্রত নিয়ে পারমী পূরণ করেন। তাঁদের মধ্যে অগ্রশ্রাবক সারিপুত্র ও মৌদগল্যায়ন অন্যতম। এ ছাড়াও মহাকশ্যপ, বিনয়ধর উপালী, ধর্মভাণ্ডারিক আনন্দ, লাভীশ্রেষ্ঠ সীবলী স্থবির প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
জগতে বুদ্ধের গুণ অনন্ত। এই গুণগুলো পূরণ করা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্যই বুদ্ধের গুণ অচিন্তনীয়।
১. তিনি অর্হৎ: যিনি অন্তরে ও বাইরে পাপমুক্ত মহাপুরুষ। যিনি লোভ, দ্বেষ, মোহ, অহংকার, অজ্ঞানতা, মিথ্যাদৃষ্টি ও শত্রুকে দমন করেছেন। যিনি পুনর্জন্মের কারণ ধ্বংস করতে পেরেছেন বলে পুনরায় তাঁকে আর দুঃখভোগ করতে হবে না। এজন্য তিনি অর্হত্ব।
২. তিনি সম্যকসম্বুদ্ধ: যিনি সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞানের অধিকারী মহাপুরুষ। জগতে সকল বিষয়ে জ্ঞাত। তিনি নিজের ও পরের কল্যাণের কথা চিন্তা করেন এবং নির্বাণ লাভে সহযোগিতা করেন।
৩. তিনি বিদ্যা ও আচরণসম্পন্ন: যিনি সকল বিদ্যা ও সু-আচরণসম্পন্ন। বিদর্শন জ্ঞান, ঋদ্ধিশক্তি, দিব্যশক্তি, মনোময় ঋদ্ধিশক্তি, পরচিত্ত বিজানন জ্ঞান, পূর্বজন্ম সম্পর্কে জ্ঞাত, চ্যুতি-উৎপত্তি জ্ঞান, কাম তৃষ্ণাক্ষয় জ্ঞান- এই অষ্টবিধ বিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞাত। শীল, আহারমাত্রা জ্ঞান, লজ্জা, ইন্দ্রিয় সংযম, সর্বদা আত্মরক্ষা জ্ঞান, শ্রদ্ধা, পাপভয়, স্মৃতি, শ্রুতি, প্রজ্ঞা, উৎসাহ ও চতুর্বিধ ধ্যান প্রভৃতি আচরণে সম্পন্ন।
৪. তিনি সুগত: যিনি নির্বাণে সুপথে বা সুন্দরভাবে গমন করেছেন বলে সুগত।
৫. তিনি লোকবিধ: স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল- এই ত্রিলোক সম্পর্কে সম্যকজ্ঞানসম্পন্ন।
৬. তিনি অনুত্তর: যিনি অনন্ত গুণের আধার। তাঁর গুণে অন্য কোনো ব্যক্তি সমকক্ষ ছিলেন না বলে তিনি শ্রেষ্ঠ। শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞাগুণে পারদর্শিতায় সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত।
৭. তিনি পরুষ দমনকারী: যিনি তাঁর ত্যাগদীপ্ত গুণমহিমায় সকল অশুভ শক্তিকে দমন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে তিনি পুরিসদম্ম সারথি।
৮. তিনি দেব মানুষের শাস্তা: যিনি পরম সত্যজ্ঞান দ্বারা সকলকে জয় করেছেন বলে তিনি দেব ও মনুষ্যগণের শান্তা ও পথপ্রদর্শক।
৯. তিনি বুদ্ধভগবান: যিনি সকল রাগ, দ্বেষ ও মোহকে বিনাশ বা ধ্বংস করে সর্ববিধ পারমী পূরণ করে জগতের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধ হয়েছেন। সেই সমুদয় প্রজ্ঞাজ্ঞানের আধার বলে তিনি ভগবান।
প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমার সবচেয়ে পছন্দের ব্যক্তির নাম ও পরিচয় লেখো
|
তোমার ও তোমার সবচেয়ে পছন্দের ব্যক্তির গুণাবলি চিন্তা করে লিখে ফেলো এবং তোমার সহপাঠীদের সঙ্গে বিনিময় করো।
তোমার গুণাবলি
| তোমার সবচেয়ে পছন্দের ব্যক্তির গুণাবলি
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
'বোধি' শব্দের অর্থ পরম জ্ঞান বা সত্য। বোধ বা জ্ঞান শব্দ থেকেই বোধি শব্দের উৎপত্তি। 'বোধি' ও 'সত্ত্ব' এ দুটি শব্দের সমন্বয়ে বোধিসত্ত্বের উদ্ভব। বোধি শব্দের অর্থ জ্ঞান বা প্রজ্ঞা, আর সত্ত্ব শব্দের অর্থ হলো প্রাণী বা জীব। বোধি বা জ্ঞান সাধনে যিনি সাধক, সেই ব্যক্তি বা সত্ত্বই বোধিসত্ত্ব নামে অভিহিত। যিনি বোধি বা বুদ্ধত্ব জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে জন্মজন্মান্তরে দশ পারমীর পরিপূর্ণতা সাধন করেন, তাকে বোধিসত্ত্ব বলা হয়। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ বুদ্ধত্ত জ্ঞান লাভ করার পূর্ব পর্যন্ত বোধিসত্ত্ব হিসেবে সমাদৃত। বোধিসত্ত্ব পারমীর মূল উদ্দেশ্য বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের জন্য লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা। বুদ্ধত্ব জ্ঞানলাভের জন্য বোধিসত্ত্ব পারমী পূর্ণ করতে। পারমী পূরণরত বোধিসত্ত্বকে বলা হয় বুদ্ধাঙ্গুর। বোধিসত্ত্ব পারমী পূর্ণতা লাভ করা অত্যন্ত কঠিন। বহু জন্মজন্মান্তর পারমী তথা কুশল কর্মের ফলে জগতে বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হয়। বোধিসত্ত্ব পারমীর পূর্ণতা অর্জিত হয় বুদ্ধত্ব লাভের মাধ্যমে। জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া বিবেচনায় বোধিসত্ত্ব তিন প্রকার;
যেমন-
ক) শ্রাবক বোধিসত্ত্ব
খ) প্রত্যেক বোধিসত্ত্ব
গ) সম্যক বোধিসত্ত্ব
ক) শ্রাবক বোধিসত্ত্ব: শ্রাবক, বোধি এবং সত্ত্ব এই তিন শব্দের সমন্বয়ে শ্রাবক বোধিসত্ত্ব গঠিত। এখানে শ্রাবক অর্থ শ্রবণ, বোধি শব্দের অর্থ জ্ঞান আর সত্ত্ব শব্দের অর্থ জীব। বোধিসত্ত্ব পারমী পূরণে শ্রবণের মাধ্যমে বুদ্ধের যে শিষ্য-প্রশিষ্যগণ সাধনায় রত হয়ে জ্ঞান অর্জন করেন, তাঁদের শ্রাবক বোধিসত্ত্ব বলে। বুদ্ধের সময়ে সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়ন প্রমুখ শ্রাবক বোধিসত্ত্ব হিসেবে আখ্যায়িত।
খ) প্রত্যেক বোধিসত্ত্বঃ গুরুর সান্নিধ্য ছাড়া স্বাধীনভাবে নিজস্ব প্রচেষ্টায় বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের সাধনায় রত হওয়াকে প্রত্যেক বোধিসত্ত্ব বলে। প্রত্যেক বোধিসত্ত্ব প্রজ্ঞাগুণে নিজে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাঁর গুণমহিমার প্রভাব অন্যকে প্রভাবিত করতে পারে না। বুদ্ধের সময়ে অনেক শিষ্য এই গুণমহিমায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।
গ) সম্যক বোধিসত্ত্ব: এটি বোধিসত্ত্ব পারমী পূর্ণতার সর্বশেষ প্রক্রিয়া বিশেষ। সকলের কল্যাণে বোধিজ্ঞান লাভের সাধনায় অনুসরণকারীকে সম্যক বোধিসত্ত্ব বলে। এই সাধনায় বোধিচিত্তে জ্ঞানে পূর্ণতা অর্জন করতে পারলে সম্যক সম্বুদ্ধ হন। সম্যক সম্বুদ্ধের বৈশিষ্ট্য হলো- সবার মুক্তির মাধ্যমেই নিজের মুক্তির সাধনায় রত থেকে পারমী পূর্ণ করেন। সাধনার উৎস বিবেচনায় বোধিসত্ত্বকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক) প্রজ্ঞাধিক বোধিসত্ত্ব
খ) শ্রদ্ধাধিক বোধিসত্ত্ব
গ) বীর্যাধিক বোধিসত্ত্ব
ক) প্রজ্ঞাধিক বোধিসত্ত্বঃ প্রজ্ঞা সাধনার মাধ্যমে যে বোধিসত্ত্ব পারমী পূরণের লক্ষ্য অর্জন করেন, তাঁকেই প্রজ্ঞাধিক বোধিসত্ত্ব বলে। প্রজ্ঞা পারমী অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের চিত্তকে পূর্ণতা সাধন করাই এ বোধিসত্ত্বের মূল লক্ষ্য। এই বোধিসত্ত্বগণ সব দিক থেকে প্রজ্ঞা সাধনায় নিজের চিত্তকে নিয়ন্ত্রণ করে অভীষ্ট লক্ষ্যে অগ্রসর হন। তাই এরূপ বোধিসত্ত্বকে প্রজ্ঞা পারমী বোধিসত্ত্ব নামে আখ্যায়িত করা হয়।
খ) শ্রদ্ধাধিক বোধিসত্ত্ব: যে বোধিসত্ত্ব পারমী পূরণে শ্রদ্ধাকে প্রধানভাবে অবলম্বন করেন তাঁকেই শ্রদ্ধাধিক বোধিসত্ত্ব বলে। শ্রদ্ধাধিক বোধিসত্ত্বগণ সবসময় নিজের ব্রত সাধনায় নিবেদিত থাকেন। তাঁরা একবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলে সে আদর্শ থেকে সহজে লক্ষ্যচ্যুত হন না। সকল পারমী পুরণে শ্রদ্ধার সঙ্গে নিজেকে অটল রাখেন।
গ) বীর্যাধিক বোধিসত্ত্ব: বীর্যাধিক বোধিসত্ত্ব পারমী একটি কঠিন ব্রত সাধনা। বীর্যাধিক বোধিসত্ত্ব পারমী পূরণে কর্মপ্রচেষ্টাকে প্রথমেই স্থান দেন বলে তাঁকেই বীর্যাধিক বোধিসত্ত্ব বলে। এ সাধনায় রত বোধিসত্ত্বগণকে সব সময় সাধনায় অটল থাকতে হয়। তাঁরা বীর্য পারমী অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের চিত্তকে অভীষ্ট লক্ষ্যে চালিত করেন।
বোধিসত্ত্ব কত প্রকার ও কী কী? এর মূল বিষয় নিজ ভাষায় লিখে ফেলি।
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
বোধিসত্ত্বের গুণাবলি: বোধিসত্ত্বের প্রথম গুণ দশ পারমীর পূর্ণতাসাধনে প্রতজ্ঞাবদ্ধ থাকা। এটিকে প্রকারান্তরে বোধিসত্ত্বগুণও বলা হয়। বোধিসত্ত্বগুণ হঠাৎ সৃষ্টি হয় না, দশ পারমী পূরণের ক্রমধারায় বোধিসত্ত্বের জীবনাচরণে অনেক ইতবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়, যার ফলে তিনি হয়ে ওঠেন অনন্য ও অসাধারণ গুণের অধিকারী। এই অসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই হলো বোধিসত্ত্বের গুণ। এ গুণের প্রভাবে বোধিসত্ত্ব জন্মজন্মান্তরের সাধনায় নির্দিষ্ট পারমীসমূহ অর্জন করেন।
সাধারণভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বোধিসত্ত্বের চেতনা থাকলেও সকলেই বোধিসত্ত্বগুণ অর্জন করতে পারেন না। যিনি বুদ্ধত্বলাভের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে পারমী পূরণ করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেন তিনিই প্রকৃত বোধিসত্ত্ব।
নিচে বোধিসত্ত্বের উল্লেখযোগ্য গুণসমূহ দেওয়া হলো:
১. সর্ব বিষয়ের অনিত্যতার বোধ বোধিসত্ত্বের প্রধান গুণ।
২. সর্ব সত্তা বা সকল প্রাণীর কল্যাণ কামনা।
৩. নিজের কর্মকেই জন্ম-জন্মান্তরের সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ।
8. বুদ্ধত্ব লাভই বোধিসত্ত্বের একমাত্র লক্ষ্য। নাম, যশ ও খ্যাতিতে তাঁদের উৎসাহ থাকে না।
৫. বোধিসত্ত্বগণ কিছুতেই সত্যসাধনা থেকে বিচ্যুত হন না।
৬. বোধিসত্ত্বগণ সর্বদা সত্য ন্যায় ও ত্যাগের মহিমায় শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞার অনুশীলন করেন।
৭. বোধিসত্ত্বগণ যে কোনো অবস্থায় মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষার সর্বোত্তম অনুশীলন চালিয়ে যান।
বোধিসত্ত্বের গুরুত্ব: বৌদ্ধধর্মে বুদ্ধের পরপরই বোধিসত্ত্বের গুরুত্ব। বুদ্ধত্ব অর্জনের আগের স্তর হলো বোধিসত্ত্ব। বোধিসত্ত্ব অবস্থায় দশ পারমী পূর্ণ করলে বুদ্ধত্ব লাভ সম্ভব। এ পারমীসমূহ পূরণ করার জন্য বহু জীব বা সত্ত্ব হিসেবে বহুবার জন্মগ্রহণ করে কুশল কর্ম সম্পাদন করতে হয়। তাই বোধিসত্ত্বের গুরুত্ব অনেক। বৌদ্ধধর্মের অপর ধারা মহাযানী মতে, বুদ্ধত্ব লাভ করে কেবল নিজে নির্বাণ সাক্ষাতের পরিবর্তে জগতের সকল সত্তার মুক্তি তাঁদের পরম ব্রত। এ লক্ষ্যে তাঁরা বোধিসত্ত্বকে কয়েকটি গুণের অধিকারী কল্পনা করে কয়েক প্রকার বোধিসত্ত্বের সাধনা করেন। তাঁরা প্রত্যেকে দান, ধ্যান, শীল, বীর্য, ক্ষান্তি, প্রজ্ঞা প্রভৃতি সদাণের চর্চা বা পারমিতা অনুশীলন করে বোধিসত্ত্ব হবেন এবং জরা মৃত্যু ও দুঃখ থেকে সমস্ত জীবকে মুক্ত করবেন। এসব কারণে বৌদ্ধধর্মে বোধিসত্ত্বের গুরুত্ব বুদ্ধের চেয়ে কম নয়।
বোধিসত্ত্বের কোন কোন তুমি চর্চা করো/করতে চাও এবং কীভাবে চর্চা করো/করতে চাও সে বিষয়ে একটি অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা উপস্থাপনা করো এবং তোমার সহপাঠীর সঙ্গে বিনিময় করো। (এক্ষেত্রে পাওয়ার পয়েন্ট/পোস্টার/চিত্র উপস্থাপন করতে পারো)
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
ফিরে দেখা: নিচের তালিকার সকল কাজ কি আমরা শেষ করেছি? হ্যাঁ হলে হ্যাঁ ঘরে এবং না হলে না এর ঘরে (✔) চিহ্ন দাও।