বঙ্গবাণী

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা সাহিত্য - কবিতা | | NCTB BOOK

কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস ।

সে সবে কহিল মোতে মনে হাবিলাষ ॥

তে কাজে নিবেদি বাংলা করিয়া রচন।

নিজ পরিশ্রম তোষি আমি সর্বজন ৷

আরবি ফারসি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ ।

দেশী ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ ॥

আরবি ফারসি হিন্দে নাই দুই মত ।

যদি বা লিখয়ে আল্লা নবীর ছিফত ॥

যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ ।

সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন ॥

সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী ।

বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী ॥

মারফত ভেদে যার নাহিক গমন ।

হিন্দুর অক্ষরে হিংসে সে সবের গণ ॥

যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী ।

সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি ॥

দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায় ।

নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায় ॥

মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি।

দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি ॥

Content added || updated By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও

অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়ায় বাবা খুশি হয়ে রেডিওতে গান শোনার জন্য সিফাতকে একটি মোবাইল সেট কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুদিন বাদেই সে মন খারাপ করে সেটটা বাবাকে ফেরত দিল। কারণ FM চ্যানেলগুলোতে নাকি উপস্থাপকরা বাংলা ভাষাকে ইচ্ছেমতো বিকৃত করে উচ্চারণ করে আর ইংরেজি ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ দেখায়। সিফাতের এটা ভালো লাগে না । 

দেশী ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ
সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন
দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি
বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী
বাংলা ভাষাকে যারা হিংসা করে
মারফত জ্ঞান যার নেই
যাদের বই পড়ার অভ্যাস নেই
ভিনদেশি ভাষাপ্রেমী যারা
মারফত জ্ঞানহীন
মাতৃভাষা বিদ্বেষী
বাংলা ভাষা হিংসাকারী
বিদেশি ভাষাপ্রেমী
মাতৃভাষাকে ভালোবাসতে
মাতৃভাষার চর্চা করতে
কিতাব পড়তে
দেশ ত্যাগ করতে
দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়
বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি
নিজ দেশ ত্যাগ করে যারা বিদেশে যায়
দেশি ভাষায় বিদ্যা লাভ করে যে তৃপ্ত নয়
বাংলাদেশে যারা বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে
যারা বাংলাকে হিন্দুয়ানি ভাষা বলে মনে করে
আনুমানিক ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে
আনুমানিক ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে
আনুমানিক ১৬২০ খ্রিস্টাব্দে
আনুমানিক ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে
কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে
নাটোরের আজিমনগরে
কেশবপুরের পাঁজিয়ায়
সন্দ্বীপের সুধারামপুরে
মধ্যযুগে
ষোড়শ শতকে
সপ্তদশ শতকে
ঊনবিংশ শতকে
প্রাক-মধ্যযুগের
আধুনিক যুগের
মধ্যযুগের
মধ্যযুগ পরবর্তী
সপ্তদশ শতকের একজন প্রখ্যাত কবি
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পুরোধা
ষোড়শ শতকের অন্যতম বিশিষ্ট লেখক
অমর কথাসাহিত্যিক
দুর্বার ক্ষোভের অনুভূতি
অনন্য মমত্বের অনুভূতি
চাপা আক্রোশের অনুভূতি
অসহনীয় বিরক্তিভাব
আবদুল হাকিমের উপন্যাস
দৌলত কাজীর কাব্য
আলাওলের কাব্য
আবদুল হাকিমের কাব্যগ্রন্থ
শাহাদাৎ হোসেনের
সুফিয়া কামালের
আবদুল হাকিমের
কাজী নজরুল ইসলামের
আবদুল হাকিমের কাব্যগ্রন্থ
আল মাহমুদের উপন্যাস
শাহ মুহম্মদ সগীরের কাব্যগ্রন্থ
ফররুখ আহমদের কাব্যগ্রন্থ
কাব্যনাট্য
কাব্যগ্রন্থ
ছোটগল্প
উপন্যাস
শহরনামা
পাঞ্জেরি
বখতিয়ারের ঘোড়া
উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ
শহরনামা
পাঞ্জেরি
বখতিয়ারের ঘোড়া
উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
কায়কোবাদ
আবদুল হাকিম
আবদুল কাদির
অনুপম ব্যক্তিত্বের
চমৎকার উপমার
অনুপম ছন্দের
সুন্দর গতিময়তার
১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে
১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে
১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে
১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে
কবিদের কথা
যাদের বইপত্র পড়ার অভ্যাস নেই তাদের কথা
বাংলা ভাষা অবজ্ঞাকারীদের কথা
কবিবিরোধীদের কথা
আমাকে সবকিছু বলল
তারা সবাই আমাকে বলল
তারা সবাই অনেক কিছু বলল
সে আমাকে সবকিছু বলল
সব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা
শুধু মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগ
বাংলা ভাষার উৎপত্তি
বিদেশি ভাষার প্রতি আকর্ষণ
আল্লাহ ও নবির গুণকীর্তন
আল্লাহ ও নবির কার্যক্রম
আল্লাহ ও নবির ভাষা
আল্লাহ ও নবির শপথ
জনসাধারণের বোধগম্য
সকল মানুষের জন্য উপকারী
শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেশি উপযোগী
প্রত্যেকের প্রিয় ভাষা
বাংলা ভাষা
প্রাচীন বঙ্গীয় ভাষা
মাতৃভাষা
বিদেশি ভাষা
যারা মরমি সাধনা সম্পর্কে অবগত নয়
যারা নিজের দেশকে ভালোবাসে না
যারা কিতাব পড়তে জানে না
যারা মাতৃভাষাকে ভালোবাসে না
বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি
বাংলাদেশ আমাদের পিতামাতার জন্মভূমি
বংশানুক্রমে বাংলাদেশে আমাদের বসতি
বাংলাদেশে আমাদের বসতি
মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি
দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি
সে সবে কহিল মোতে মনে হাবিলাষ
স্রষ্টার
আরবি ও ফারসিভাষীদের
বাংলা যাদের মাতৃভাষা
সব ভাষার মানুষের
মরমি সাধনা
বলিষ্ঠ কণ্ঠ
সরল পথ
সংকীর্ণচেতা
কাজী নজরুল ইসলাম
শাহ মুহম্মদ সগীর
আবদুল হাকিম
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
কুসংস্কারের
মাতৃভাষার
ধর্মপ্রাণ মুসলমানের
নির্যাতিত পরিবারের
বিদেশি ভাষার প্রতি মমত্ববোধ
দেশি ভাষার প্রতি ক্ষোভ
মাতৃভাষার প্রতি প্রীতি
বিদেশি ভাষার প্রতি বিদ্বেষ
এদেশে জন্মেও যারা বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে করেনি
যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ নেয়নি
যারা ভাষা আন্দোলনে অংশ
যারা কোনো ধর্ম মানে না
যারা বাংলা ভাষায় কথা বলে না
যারা বাংলা ভাষায় কিতাব পড়ে না
যারা নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সংকীর্ণচেতা
যারা অন্য ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট
প্রকৃতপক্ষে তো দেশপ্রেমিক
জাতিপ্রেমিক
শিকড়বিহীন পরগাছা
খোদাপ্রেমিক
সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা
স্বদেশের ঐতিহ্যের প্রতি আকর্ষণ
আরবি-ফারসি ভাষার প্রতি অনুরাগ
স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি অনুরাগ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করা গর্হিত আচরণ বলে বিবেচা। যারা তা করে তাদের দেশত্যাগ করাই কর্তব্য। কারণ তারা পরগাছারই নামান্তর।

হৃদয় আমার বাংলার লাগি/যে দেশেই থাকি সদা থাকে জাগি
বাংলার কাব্য, বাংলার ভাষা,/মিটায় আমার প্রাণের পিপাস
বাংলার গল্প বাংলার গীত/শুনিলে এ চিত্ত সদা বিমোহিতা
বাঙালির সনে মিশে প্রাণে প্রাণে থাকিব সতত জীবনে মরণে
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

বংশানুক্রমে বাংলাদেশেই আমাদের বসতি, বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষায় বর্ণিত বক্তব্য আমাদের মর্ম স্পর্শ করে। মাতৃভাষার চেয়ে হিতকর আর কিছুই নেই।

কবি পরিচিতি

 আনুমানিক ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দে সন্দ্বীপের সুধারামপুর গ্রামে আবদুল হাকিম জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যযুগের অন্যতম প্রধান কবি আবদুল হাকিমের স্বদেশের ও স্বভাষার প্রতি ছিল অটুট ও অপরিসীম প্রেম। সেই যুগে মাতৃভাষার প্রতি এমন গভীর ভালোবাসার নিদর্শন ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কালজয়ী আদর্শ। নূরনামা তাঁর বিখ্যাত কাব্য। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্য হলো : ইউসুফ জোলেখা, লালমতি, সয়ফুলমুলক, শিহাবুদ্দিননামা, নসীহত্থামা, কারবালা ও শহরনামা। তাঁর কবিতায় অনুপম ব্যক্তিত্বের পরিচয় মেলে। তিনি ১৬৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন ।

Content added By

শব্দার্থ ও টিকা

হাবিলাষ- অভিলাষ, প্রবল ইচ্ছা। ছিফত- গুণ। নিরঞ্জন- নির্মল (এখানে সৃষ্টিকর্তা, আল্লাহ)।বঙ্গবাণী- বাংলা ভাষা। মারফত - মরমি সাধনা, আল্লাহকে সম্যকভাবে জানার জন্য সাধনা। জুয়ায়- যোগায় । ভাগ- ভাগ্য। দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়- এই কবিতাটি সপ্তদশ শতকে রচিত । তৎকালেও এক শ্রেণির লোক নিজের দেশ, নিজের ভাষা, নিজের সংস্কৃতি, এমন কি নিজের আসল পরিচয় সম্পর্কেও ছিল বিভ্রান্ত এবং সংকীর্ণচেতা। শিকড়হীন পরগাছা স্বভাবের এসব লোকের প্রতি কবি তীব্র ক্ষোভে বলিষ্ঠ বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, “নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়'। আপে- স্বয়ং, আপনি ৷

Content added || updated By

পাঠ পরিচিতি

বঙ্গবাণী' কবিতাটি কবি আবদুল হাকিমের নূরনামা কাব্য থেকে সংকলন করা হয়েছে। মধ্যযুগীয় পরিবেশে বঙ্গভাষী এবং বঙ্গভাষার প্রতি এমন বলিষ্ট বাণীবদ্ধ কবিতার নিদর্শন দুর্লভ ।
কবি এই কবিতায় তাঁর গভীর উপলব্ধি ও বিশ্বাসের কথা নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করেছেন। আরবি ফারসি ভাষার প্রতি কবির মোটেই বিদ্বেষ নেই। এ সব ভাষায় আল্লাহ ও মহানবীর স্তুতি বর্ণিত হয়েছে। তাই এসব ভাষার প্রতি সবাই পরম শ্রদ্ধাশীল। যে ভাষা জনসাধারণের বোধগম্য নয়, যে ভাষায় অন্যের সঙ্গে ভাববিনিময় করা যায় না সে সব ভাষাভাষী লোকের পক্ষে মাতৃভাষায় কথা বলা বা লেখাই একমাত্র পন্থা। এই কারণেই কবি মাতৃভাষায় গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেছেন। কবির মতে, মানুষ মাত্রেই নিজ ভাষায় স্রষ্টাকে ডাকে আর স্রষ্টাও মানুষের বক্তব্য বুঝতে পারেন। কবির চিত্তে তীব্র ক্ষোভ এজন্য যে, যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, অথচ বাংলা ভাষার প্রতি তাদের মমতা নেই, তাদের বংশ ও জন্মপরিচয় সম্পর্কে কবির মনে সন্দেহ জাগে। কবি সখেদে বলেছেন, এ সব লোক, যাদের মনে স্বদেশের ও স্বভাষার প্রতি কিছুমাত্র অনুরাগ নেই তারা কেন এদেশ পরিত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায় না! বংশানুক্রমে বাংলাদেশেই আমাদের বসতি, বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা বাংলায় বর্ণিত বক্তব্য আমাদের মর্ম স্পর্শ করে । এই ভাষার চেয়ে হিতকর আর কী হতে পারে । কবিতায় মাতৃভাষার প্রতি প্রেম ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় ফুটে উঠেছে।

Content added || updated By
Promotion