মোবাইল অ্যাড হক নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার

Computer Science - মোবাইল কম্পিউটিং (Mobile Computing) - মোবাইল অ্যাড হক নেটওয়ার্ক (Mobile Ad-hoc Networks - MANET)
131

মোবাইল অ্যাড হক নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার (Mobile Ad Hoc Network Architecture - MANET)

মোবাইল অ্যাড হক নেটওয়ার্ক (MANET) হলো একটি স্বতঃসিদ্ধ বেতার নেটওয়ার্ক যেখানে মোবাইল ডিভাইসগুলি একে অপরের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে এবং তথ্য আদান-প্রদান করতে সক্ষম হয়। MANET-এ কোনো স্থায়ী ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক নেই, বরং প্রতিটি ডিভাইস একটি স্বাধীন নোড হিসেবে কাজ করে এবং প্রয়োজন অনুসারে যোগাযোগের জন্য একটি অ্যাড হক পদ্ধতিতে সংযোগ স্থাপন করে। MANET আর্কিটেকচারের মধ্যে প্রতিটি ডিভাইসই নেটওয়ার্ক গঠন এবং পরিচালনার অংশ হিসেবে কাজ করে।

MANET-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য

  1. বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্ক:
    • MANET একটি বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার, যেখানে কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বা স্থায়ী রাউটার নেই। প্রতিটি ডিভাইস নিজেই রাউটার হিসেবে কাজ করে এবং নেটওয়ার্কে ডেটা ফরওয়ার্ড করে।
  2. স্ব-সংগঠিত এবং স্ব-শাসিত:
    • MANET নেটওয়ার্ক নিজেই তৈরি হয় এবং পরিচালিত হয়, যা ডিভাইসগুলোর চলাচল সত্ত্বেও সংযোগ রক্ষা করে। এই নেটওয়ার্কে ডিভাইসগুলির জন্য পূর্বনির্ধারিত কোনো কাঠামো বা নিয়ম প্রয়োজন নেই।
  3. মাল্টি-হপ রাউটিং (Multi-hop Routing):
    • MANET-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল মাল্টি-হপ রাউটিং। এক নোড থেকে অন্য নোডে তথ্য পাঠানোর জন্য সরাসরি সংযোগ না থাকলেও একাধিক নোডের মাধ্যমে তথ্য গন্তব্যে পৌঁছায়।
  4. সীমিত ব্যান্ডউইথ এবং ডায়নামিক টপোলজি:
    • MANET এ ব্যান্ডউইথ সীমিত থাকে এবং এর টপোলজি ডাইনামিক বা পরিবর্তনশীল, কারণ ডিভাইসগুলির চলাচল ও গতিবিধি অনুযায়ী সংযোগগুলি পরিবর্তিত হয়।
  5. প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়াই সংযোগ:
    • MANET এমন পরিস্থিতিতে কার্যকর যেখানে কোনো কেন্দ্রীয় ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই বা সেটি স্থাপন করা কঠিন, যেমন যুদ্ধক্ষেত্র, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা, বা দূরবর্তী অঞ্চল।

MANET আর্কিটেকচারের উপাদানসমূহ

  1. নোড (Nodes):
    • MANET-এ প্রতিটি ডিভাইসকে নোড বলা হয়। প্রতিটি নোড স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং ডেটা ট্রান্সফার বা রাউটিংয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  2. লিঙ্ক (Links):
    • MANET-এ নোডগুলির মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে লিঙ্ক ব্যবহৃত হয়। এই লিঙ্কগুলি বেতার এবং অস্থায়ীভাবে গঠিত হয়, যা নোডগুলির চলাচল অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
  3. রাউটিং প্রটোকল:
    • রাউটিং প্রটোকল নেটওয়ার্কে ডেটা ট্রান্সফারের জন্য নির্ভরযোগ্য এবং দ্রুততম পথ নির্ধারণে সহায়তা করে। MANET-এ সাধারণত তিনটি ধরনের রাউটিং প্রটোকল ব্যবহৃত হয়: প্রোঅ্যাক্টিভ (Proactive), রিঅ্যাক্টিভ (Reactive), এবং হাইব্রিড (Hybrid) প্রটোকল।

MANET-এর রাউটিং প্রোটোকল

  1. প্রোঅ্যাক্টিভ প্রটোকল (Proactive Protocol):
    • এই প্রটোকলে প্রতিটি নোডে একটি রাউটিং টেবিল থাকে যা নেটওয়ার্কের প্রতিটি গন্তব্যের জন্য রুট নির্দেশ করে। এটি রুট তৈরিতে অপেক্ষা না করে ডেটা প্রেরণে সহায়ক। উদাহরণ: OLSR (Optimized Link State Routing), DSDV (Destination Sequenced Distance Vector).
  2. রিঅ্যাক্টিভ প্রটোকল (Reactive Protocol):
    • এই প্রটোকলে নোড তখনই রুট তৈরি করে যখন ডেটা প্রেরণ করতে হয়। এটি ব্যান্ডউইথ সাশ্রয়ী হলেও প্রাথমিকভাবে রুট তৈরি করতে কিছুটা সময় লাগে। উদাহরণ: AODV (Ad-hoc On-Demand Distance Vector), DSR (Dynamic Source Routing).
  3. হাইব্রিড প্রটোকল (Hybrid Protocol):
    • এই প্রটোকল প্রোঅ্যাক্টিভ এবং রিঅ্যাক্টিভ প্রটোকলের সমন্বয়ে কাজ করে। এটি বড় আকারের নেটওয়ার্কে কার্যকর, যেখানে নোডগুলির একাংশ প্রোঅ্যাক্টিভ এবং অন্য অংশ রিঅ্যাক্টিভ রাউটিং ব্যবহার করে। উদাহরণ: ZRP (Zone Routing Protocol).

মোবাইল অ্যাড হক নেটওয়ার্কের ব্যবহার

  1. জরুরি অবস্থায় যোগাযোগ:
    • প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরবর্তী সময়ে বা অন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে যেখানে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়, MANET ব্যবহার করে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।
  2. সামরিক যোগাযোগ:
    • যুদ্ধক্ষেত্রে বা সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য MANET এর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। এটি দ্রুত এবং নিরাপদ যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে স্থায়ী নেটওয়ার্ক তৈরি করা সম্ভব নয়।
  3. স্মার্ট যানবাহন নেটওয়ার্ক (VANET):
    • VANET (Vehicular Ad-hoc Network) একটি বিশেষ ধরনের MANET যেখানে গাড়িগুলি একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে এবং ট্রাফিক পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
  4. অস্থায়ী ইভেন্ট নেটওয়ার্ক:
    • কোন বিশেষ ইভেন্ট যেমন কনফারেন্স, মেলা, বা অন্যান্য বড় জমায়েতে অস্থায়ী নেটওয়ার্ক তৈরি করতে MANET ব্যবহার করা যেতে পারে।

MANET-এর সুবিধা

  • বিকেন্দ্রীভূত সংযোগ: MANET কোনো কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কের উপর নির্ভরশীল নয়, তাই নেটওয়ার্ক ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
  • ডাইনামিক টপোলজি: নেটওয়ার্কের টপোলজি পরিবর্তনশীল, যা ডিভাইসের চলাচল অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হয়।
  • নমনীয়তা: প্রয়োজনের সময় এবং স্থানে সহজেই নেটওয়ার্ক তৈরি এবং অপসারণ করা যায়।
  • কম খরচ: কোনো স্থায়ী অবকাঠামো প্রয়োজন হয় না, ফলে খরচ অনেক কম।

MANET-এর সীমাবদ্ধতা

  • নেটওয়ার্ক স্থায়িত্ব: MANET এ নোডগুলি চলমান থাকায় সংযোগ মাঝে মাঝে ভেঙে যেতে পারে।
  • সীমিত ব্যান্ডউইথ: MANET এ ব্যান্ডউইথ সীমাবদ্ধ থাকে, যা বড় পরিসরের ডেটা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
  • নিরাপত্তা ঝুঁকি: বিকেন্দ্রীভূত হওয়ায় এটি প্রায়ই নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, কারণ এতে তথ্য ফাঁস বা হ্যাকিং-এর সম্ভাবনা থাকে।
  • শক্তি ব্যবস্থাপনা: প্রতিটি নোড নিজস্ব ব্যাটারির উপর নির্ভর করে এবং অতিরিক্ত ব্যাটারি খরচ হতে পারে।

উপসংহার

মোবাইল অ্যাড হক নেটওয়ার্ক (MANET) মোবাইল ডিভাইসগুলির মধ্যে সরাসরি এবং বিকেন্দ্রীভূত যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। এটি সামরিক অভিযান, জরুরি অবস্থা, এবং স্মার্ট যানবাহন নেটওয়ার্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর। যদিও এতে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে এর সুবিধাগুলি একে বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যন্ত কার্যকর নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি হিসেবে প্রমাণিত করেছে।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...