Blockchain কী এবং এর কাজের ধরণ

Blockchain হলো একটি ডিস্ট্রিবিউটেড এবং বিকেন্দ্রীভূত ডেটাবেজ বা লেজার, যা তথ্য সংরক্ষণ, যাচাই, এবং শেয়ার করার একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছ পদ্ধতি প্রদান করে। এটি একাধিক ব্লকের একটি ক্রমশৃঙ্খলা যা ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে। প্রতিটি ব্লকে একাধিক ট্রানজ্যাকশনের তথ্য থাকে, এবং একবার কোনো ব্লক চেইনে যুক্ত হলে তা পরিবর্তন করা বা মুছে ফেলা প্রায় অসম্ভব।

Blockchain-এর কাজের ধরণ

Blockchain-এর কাজের প্রক্রিয়া অনেক ধাপে বিভক্ত, যা প্রতিটি ট্রানজ্যাকশন সুরক্ষিত ও স্বচ্ছভাবে সংরক্ষণ করতে এবং যাচাই করতে সাহায্য করে। নিচে Blockchain-এর কাজের ধরণ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:

১. ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার প্রযুক্তি (Distributed Ledger Technology - DLT)

Blockchain একটি ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেম, যেখানে একাধিক নোড বা পিয়ার একই কপি শেয়ার করে। প্রতিটি নোড একটি কম্পিউটার বা সার্ভার হিসেবে কাজ করে যা ব্লকচেইনের অংশ। ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার প্রযুক্তি নিশ্চিত করে যে প্রতিটি নোড একই ডেটা কপি রাখছে এবং কোনো পরিবর্তন হলে তা নোডগুলোর মধ্যে সিঙ্ক্রোনাইজড হয়।

  • উপকারিতা: এই ডিস্ট্রিবিউটেড প্রকৃতির কারণে, ব্লকচেইনে একবার ডেটা এন্ট্রি করলে তা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব, কারণ তা সমস্ত নোডে সুরক্ষিত থাকে।
  • সেন্ট্রাল অথরিটির প্রয়োজন নেই: Blockchain কেন্দ্রীয় সার্ভার বা অথরিটির প্রয়োজন ছাড়াই সম্পূর্ণভাবে পিয়ার-টু-পিয়ার ভিত্তিতে কাজ করে।

২. ব্লক এবং ট্রানজ্যাকশন

Blockchain-এর প্রতিটি ইউনিটকে ব্লক বলা হয়, এবং প্রতিটি ব্লকে একাধিক ট্রানজ্যাকশন বা ডেটার এন্ট্রি থাকে। একটি ব্লকে সাধারণত নিচের তথ্য থাকে:

  • হ্যাশ (Hash): প্রতিটি ব্লকের একটি ইউনিক ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ থাকে, যা সেই ব্লকের তথ্য এবং আগের ব্লকের হ্যাশের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।
  • প্রিভিয়াস ব্লক হ্যাশ: প্রতিটি ব্লকে আগের ব্লকের হ্যাশের তথ্য থাকে, যা ব্লকগুলোকে ক্রমশৃঙ্খলা এবং সুরক্ষিতভাবে সংযুক্ত করে রাখে।
  • ট্রানজ্যাকশনের তথ্য: ব্লকটিতে ঘটে যাওয়া সকল ট্রানজ্যাকশনের ডেটা থাকে, যেমন কার কাছ থেকে কার কাছে কত পরিমাণ মুদ্রা প্রেরণ হয়েছে।

৩. ব্লক তৈরি এবং ভ্যালিডেশন

Blockchain সিস্টেমে যখন নতুন কোনো ট্রানজ্যাকশন ঘটে, তখন সেটি একটি নতুন ব্লকে অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু এই ব্লকটি Blockchain-এ যোগ করার আগে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাচাই এবং নিশ্চিত করা হয়।

মাইনিং এবং কনসেনসাস প্রোটোকল:

  • Proof of Work (PoW): Bitcoin-এর মতো অনেক ব্লকচেইনে মাইনিংয়ের মাধ্যমে ব্লক তৈরি হয়, যেখানে মাইনাররা জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে ব্লক তৈরি করে। প্রথম যে মাইনার সমস্যার সমাধান করে, সে ব্লকটি চেইনে যুক্ত করে এবং একটি পুরস্কার পায়।
  • Proof of Stake (PoS): Ethereum-এর মতো কিছু ব্লকচেইনে PoS ব্যবহার করা হয়, যেখানে ব্লক তৈরির জন্য অংশগ্রহণকারীরা তাদের অ্যাসেট স্টেক করে। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে ব্লক তৈরি করা হয় এবং পুরস্কার প্রদান করা হয়।

কনসেনসাস মেকানিজম: Blockchain-এ সকল নোডের সম্মতির মাধ্যমে একটি ব্লক বৈধ হিসেবে গণ্য হয়। এই সম্মতির প্রক্রিয়াকে কনসেনসাস মেকানিজম বলা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে ব্লকচেইনে কোনো পরিবর্তন বা মিথ্যা তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

৪. Immutable এবং Tamper-Proof

Blockchain-এর প্রতিটি ব্লক একবার চেইনে যোগ হলে তা পরিবর্তন করা বা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। কারণ প্রতিটি ব্লক আগের ব্লকের হ্যাশের ওপর নির্ভর করে এবং চেইনে কোনো একটি ব্লক পরিবর্তন করলে পরবর্তী সমস্ত ব্লকের হ্যাশ পরিবর্তিত হবে। এই স্থায়ী প্রকৃতি নিশ্চিত করে যে তথ্য সুরক্ষিত এবং অপরিবর্তনীয় থাকে।

  • সিকিউরিটি: ব্লকচেইনের Immutable প্রকৃতি এটি একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত সিস্টেম হিসেবে প্রমাণিত করে। তথ্য পরিবর্তন করার জন্য ব্লকচেইনের সমস্ত নোড বা অংশগ্রহণকারীদের সম্মতি প্রয়োজন, যা অত্যন্ত কঠিন।

৫. পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক

Blockchain একটি পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে, যেখানে প্রতিটি নোড সমান ভূমিকা পালন করে। ব্লকচেইনে কোনো সেন্ট্রাল অথরিটি নেই; বরং, সমস্ত নোড একসাথে মিলে ব্লক তৈরি, যাচাই, এবং তথ্য সংরক্ষণ করে।

  • স্বচ্ছতা: প্রতিটি নোড একই তথ্য শেয়ার করে, যা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং প্রতিটি নোড সব ট্রানজ্যাকশন দেখতে পায়।
  • Fault Tolerance: পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কের কারণে ব্লকচেইন কোনো একটি নোড বিকল হয়ে গেলেও চলতে থাকে, যা সিস্টেমকে রেজিলিয়েন্ট এবং ফলোট টলারেন্ট করে তোলে।

৬. স্মার্ট কন্ট্রাক্ট

Ethereum এবং অন্যান্য উন্নত ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করা হয়। এটি হলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হওয়া চুক্তি, যেখানে কোডের মাধ্যমে চুক্তির শর্তাবলী সংরক্ষিত থাকে। স্মার্ট কন্ট্রাক্টগুলো Blockchain-এ রেকর্ড করা থাকে এবং নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়।

  • ব্যবহার ক্ষেত্র:
    • ফাইনান্সিয়াল ট্রানজ্যাকশন অটোমেশন
    • ইনস্যুরেন্স পলিসি এবং দাবি প্রসেসিং
    • সরবরাহ চেইন ম্যানেজমেন্ট

৭. প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি

Blockchain সিস্টেমে তথ্য এনক্রিপ্টেড থাকে, এবং প্রতিটি ট্রানজ্যাকশন ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে সুরক্ষিত হয়। প্রতিটি ব্যবহারকারী তাদের ব্যক্তিগত কী ব্যবহার করে তাদের ট্রানজ্যাকশন স্বাক্ষর করে, যা সুরক্ষিত এবং ভেরিফায়েবল।

  • ক্রিপ্টোগ্রাফি: Blockchain ক্রিপ্টোগ্রাফির ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা সিস্টেমকে নিরাপদ এবং মিথ্যা ট্রানজ্যাকশনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী করে তোলে।
  • পাবলিক এবং প্রাইভেট ব্লকচেইন: ব্লকচেইন পাবলিক (যেমন Bitcoin, Ethereum) এবং প্রাইভেট (যেমন Hyperledger, Corda) হতে পারে। পাবলিক ব্লকচেইনে ট্রানজ্যাকশন উন্মুক্ত, কিন্তু প্রাইভেট ব্লকচেইনে ট্রানজ্যাকশনগুলো অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যবহারকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

Blockchain-এর উপকারিতা

  1. ডিসেন্ট্রালাইজেশন: কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভরশীল নয়।
  2. স্বচ্ছতা: সব অংশগ্রহণকারী নোড একই তথ্য শেয়ার করে এবং দেখতে পারে।
  3. সুরক্ষা: Immutable এবং ক্রিপ্টোগ্রাফির কারণে ব্লকচেইন নিরাপদ।
  4. স্বয়ংক্রিয়তা: স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করে ট্রানজ্যাকশন এবং চুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করা যায়।
  5. বিশ্বাসযোগ্যতা: Immutable নেচার এবং ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেমের কারণে Blockchain একটি বিশ্বাসযোগ্য সিস্টেম হিসেবে পরিচিত।

উপসংহার

Blockchain একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং নিরাপদ প্রযুক্তি যা ডেটা স্টোরেজ, ট্রানজ্যাকশন ম্যানেজমেন্ট, এবং চুক্তি পরিচালনার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে শুরু করে স্মার্ট কন্ট্রাক্ট এবং এন্টারপ্রাইজ সলিউশনে, Blockchain বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এর ক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion