তোমার প্রাত্যহিক জীবনে 'ক্রম' শব্দটি বহুল পরিচিতি একটি শব্দ, তাই না? প্রতিদিন কত জিনিসই না তোমাকে ক্রমানুসারে সাজাতে হয়। তোমার পড়ার টেবিল বা পাশের বুক সেলফটির কথা ভাবো। আকারে সবচেয়ে বড় বইগুলো নিশ্চয়ই সবার নিচে রেখেছ। তারপর ক্রমানুসারে ছোটগুলো উপরের দিকে তাক করে রাখা আছে। তোমার স্কুলের ক্লাস শুরুর আগে তোমাদেরকে সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে হয়। খেয়াল করেছ কি তোমাদের প্রতিটি কলামে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে একটি নিয়ম মানতে হয়। তোমাদেরকে তোমাদের উচ্চতার ক্রম অনুসারে দাঁড়াতে হয়। সমাবেশ শেষে ক্লাসে যাওয়ার পরই শ্রেণিশিক্ষক তোমাদের উপস্থিতি নেন। তোমাদের রোল নম্বর কীভাবে সাজানো? নিশ্চয়ই ক্রমানুসারে, তাই না? এত গেল তোমার স্কুলের কথা, তুমি বাজারে গিয়ে নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, কোনো কোনো দোকানি দোকানের জিনিসপত্র নানান রকমে সাজিয়ে রাখেন। যেমন: ফলের দোকানদার আপেল, কমলা সুষম পিরামিডের মতো সাজিয়ে রাখেন। হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, বালতি-মগ বিক্রেতারাও তাদের দ্রব্যাদি বড় থেকে উপরের দিকে ক্রমানুসারে ছোটো আকারে সাজিয়ে রাখেন। খেলার মাঠের গ্যালারির আসন ব্যবস্থার কথা চিন্তা করো। এমনকি সিনেমা হলে দর্শকদের বসার ক্রম? নিচের ছবি দুটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করো।
আসন ব্যবস্থা ও মাটির পাতিলগুলোর মধ্যে কোনো বৈশিষ্ট্য আছে কী? সহপাঠীর সাথে আলাপ-আলোচনা করো। তোমরা কী কী বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেলে তা নিচের খালি বক্সে লেখো।
আমরা আমাদের চারপাশে নানাবিধ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ক্রম দেখে থাকি। আর এই ক্রম থেকেই মূলত অনুক্রমের ধারণাটি এসেছে। তাছাড়া তোমরা ইতোমধ্যেই সংখ্যা পদ্ধতি সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছ। যেমন: স্বাভাবিক সংখ্যা 1, 2, 3, 4, ... এর কথা ভাবতে পার। সংখ্যাগুলো ক্রমানুসারে সাজানো ছাড়াও আরও বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। ভেবে দেখো তো আর কী কী বৈশিষ্ট্য আছে? বৈশিষ্ট্যগুলো নিচের খালি বক্সে ঝটপট লিখে ফেলো :
মনে করো, তোমাকে এক মাসের জন্য প্রতিদিন কিছু হাত খরচ দেয়া হবে। হাত খরচ প্রাপ্তির জন্য তোমাকে তিনটি বিকল্প দেওয়া হলো যার মধ্য থেকে যে কোনো একটি তোমাকে বেছে নিতে হবে। বিকল্পগুলো নিম্নরূপ:
ক) প্রতিদিন 10 টাকা
খ) মাসের প্রথম দিন 3 টাকা, দ্বিতীয় দিন 3.50 টাকা, তৃতীয় দিন 4 টাকা, এভাবে প্রতিদিন 50 পয়সা করে বৃদ্ধি পাবে
গ) মাসের প্রথম দিন 1 টাকা, দ্বিতীয় দিন 2 টাকা, তৃতীয় দিন 4 টাকা, এভাবে প্রতিদিন আগের দিনের দ্বিগুণ করে বৃদ্ধি পাবে
এই তিনটি বিকল্পের মধ্য থেকে তুমি কোনটি বেছে নিবে এবং কেন নিবে তা যুক্তি ও ব্যাখ্যাসহ তোমাকে উপস্থাপন করতে হবে।
কমপক্ষে তিনটি মৌলিক সংখ্যা খুঁজে বের করতে হবে। শর্ত হলো: পাশাপাশি দুইটি সংখ্যার পার্থক্য সাধারণ বা একই হতে হবে এবং শর্ত মেনে খালি ঘরগুলো পূরণ করতে হবে। যদি শর্ত মেনে তিনটি সংখ্যা না পাওয়া যায়, তবে তার কারণ ব্যাখ্যা করো।
এতক্ষণ তোমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করলে তার প্রতিক্ষেত্রে প্রাপ্ত সংখ্যা বা বস্তুগুলো সাজানোর মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে, তাই না? এই বৈশিষ্ট্য বা নিয়মটিকেই আমরা প্যাটার্ন বলে থাকি। পূর্বের শ্রেণিতে প্যাটার্ন সম্পর্কে তোমরা জেনেছ।
তোমার হাত খরচ প্রাপ্তির মজার খেলার মধ্যে-
উপরের উদাহরণে প্রতিদিনের সাপেক্ষে টাকার পরিমাণের সংগ্রহ হলো একেকটি অনুক্রম। কোনো অনুক্রমের প্রতিটি উপাদানকে এর একেকটি পদ বলে। অনুক্রমের প্রথম উপাদানটিকে প্রথম পদ, দ্বিতীয়টিকে দ্বিতীয় পদ, তৃতীয়টিকে তৃতীয় পদ, এভাবে ক্রমানুসারে পদগুলোর নামকরণ করা হয়। যে কোনো স্বাভাবিক সংখ্যা। এর জন্য, অনুক্রমের সাধারণ পদকে -তম পদ বলা হয়। যদি কোনো অনুক্রমের প্রথম পদ ৫₁, দ্বিতীয় পদ ৫, তৃতীয় পদ ৫, ... এবং তম পদ ৫, হয় তবে, অনুক্রমটি লিখতে পারি, । একে (a) দ্বারা নির্দেশ করা হয়।
1, 1, 1, 1,...,1,... একটি অনুক্রম যার -তম পদ = 1। এটি একটি ধ্রুবক অনুক্রম। তোমরা কি এর কারণ বলতে পারবে? একটু খেয়াল করে দেখো, এই অনুক্রমের প্রত্যেকটি পদ একই। এর কোনো পরিবর্তন নেই। এই ধরনের অনুক্রমকে ধ্রুবক অনুক্রম (constant sequence) বলে।
একক কাজ
ধ্রুবক অনুক্রমের দুইটি উদাহরণ দাও এবং প্রত্যেকটির -তম পদ লেখো।
উদাহরণ ০২: 1, -1, 1, -1,... একটি অনুক্রম যার n-তম পদ a = (-1)n+1। একে ((-1)n+1)দ্বারা নির্দেশ করা হয়। এটি একটি পর্যায়ক্রমিক অনুক্রম। তোমরা কি এর কারণ বলতে পারবে? একটু খেয়াল করে দেখো, এই অনুক্রমের পদগুলো কীভাবে আসছে? এখানে দুইটি পদ পর্যায়ক্রমিকভাবে ফিরে আসছে। এজন্য এই ধরনের অনুক্রমকে পর্যায়ক্রমিক অনুক্রম বলে। বাস্তব জীবনে প্রতিদিন যে জোয়ার-ভাটা হয়, তা একটি পর্যায়ক্রমিক অনুক্রমের উদাহরণ।
একক কাজ : পর্যায়ক্রমিক অনুক্রমের দুইটি উদাহরণ দাও এবং প্রত্যেকটির n-তম পদ লেখো।
উল্লেখ্য, অনুক্রমের পদ সংখ্যা সসীম ও অসীম উভয়ই হতে পারে। যে অনুক্রমের পদ সংখ্যা নির্দিষ্ট অর্থাৎ যার শেষ পদ আছে, তাকে সসীম অনুক্রম (Finite Sequence) বলে। আর যে অনুক্রমের পদ সংখ্যা অনির্দিষ্ট অর্থাৎ যার শেষ পদ নেই, তাকে অসীম অনুক্রম (Infinite Sequence) বলা হয়।
উদাহরণ
চলো প্রথমে কয়েকটি ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখি:
ঘটনা ১
খাতার উপর ম্যাচের কাঠি বসিয়ে নিচের মতো প্যাটার্ন তৈরি করো:
ঘটনা - ২
ধরো, পড়াশোনা শেষ করে তুমি একটি চাকুরিতে যোগদান করলে। তোমার প্রারম্ভিক মাসেক বেতন 25,000 টাকা এবং বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (Increment) 500 টাকা। তাহলে, ১ম, ২য় এবং ৩য় বছরে তোমার মাসিক বেতন হবে যথাক্রমে 25,000 টাকা, 25,500 টাকা এবং 26,000 টাকা। এখন তুমি যদি পাশাপাশি দুই বছরের মাসিক বেতনের পার্থক্য হিসাব করো, তাহলে দেখবে প্রতি বছর তোমার বেতন 500 টাকা করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আচ্ছা, এই দুটি ঘটনা বা উদাহরণের মধ্যে কোনো বৈশিষ্ট্য কি লক্ষ করেছ? বৈশিষ্ট্যগুলো নিচের খালি ঘরে লেখো:
একক কাজ
কাজটি করে নিশ্চয়ই জানতে পারলে, প্রতিটি অনুক্রমের পাশাপাশি দুইটি পদের মধ্যে একটি সাধারণ পার্থক্য আছে, তাই না? প্রথম পদটির সাথে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা যোগ বা বিয়োগ হয়ে পরবর্তী পদটি তৈরি হয়েছে এবং অনুক্রমটির যে কোনো পদ থেকে পরের পদ তৈরিতে একই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান আছে। যে অনুক্রম এই ধরনের বৈশিষ্ট্য মেনে চলে, তাকে আমরা সমান্তর অনুক্রম (Arithmetic Sequence) বলে থাকি। সমান্তর অনুক্রমের প্রথম পদটিকে ৫, এবং সাধারণ অন্তরকে ঐ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তাহলে, একটি সমান্তর অনুক্রমের বীজগণিতীয় রূপটি আমরা নিচের মতো লিখতে পারি:
দলগত কাজ
নিচের অনুক্রমগুলোর কোনটি সমান্তর ও কোনটি সমান্তর নয় তা দলের সকলে আলোচনা করে বের করো। নিচের ছকটিতে সঠিক উত্তরের জায়গায় টিক (√) চিহ্ন এবং অন্যথায় ক্রস (x) চিহ্ন দাও। তারপর শ্রেণিতে উপস্থাপন করো।
নিচের অনুক্রমগুলোর সাধারণ অন্তর ও পরের তিনটি পদ নির্ণয় করো। তোমাদের জন্য একটি নির্ণয় করে দেওয়া হলো:
উদাহরণ-৭: 7, 11, 15, 19,... অনুক্রমের তম পদ নির্ণয় করো এবং তম পদের সূত্র থেকে 15তম, 120তম পদ নির্ণয় করো।
সমাধান : প্রদত্ত 7, 11, 15, 19,... অনুক্রমটি একটি সমান্তর অনুক্রম। কারণ-
২য় পদ – ১ম পদ = 11 - 7 = 4,
৩য় পদ - ২য় পদ = 15 - 114
অর্থাৎ অনুক্রমটির সাধারণ অন্তর = 4
এবার আমরা জানি, তম পদ
যেখানে, প্রথম পদ = a₁ = 7, পদ সংখ্যা = n এবং সাধারণ অন্তরd=4
∴ nতম পদ = 7 + (n - 1)47 + 4n - 4=4n + 3
∴ 15তম পদ = 4 × 15 + 3 = 63
এবং 120তম পদ =4 × 120 + 3 = 483
গুণোত্তর অনুক্রম আলোচনার শুরুতেই দুএকটি ঘটনার আলোকপাত করা যাক।
ঘটনা - ১
লিলি তার মায়ের জন্য একটি উপহার কিনতে চায়। উপহারটি কিনতে তার কমপক্ষে 300 টাকা লাগবে। লিলি পরিকল্পনা করে, সে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে থাকবে। প্রথম সপ্তাহে যত টাকা সঞ্চয় করবে পরের সপ্তাহে করবে তার দ্বিগুণ। পরিকল্পনা অনুযায়ী লিলি 5 টাকা দিয়ে সঞ্চয় শুরু করল। কত সপ্তাহ শেষে লিলি উপহারটি কিনতে পারবে?
এবার চলো হিসেবটি করে দেখি :
যেহেতু লিলির মোট 315 টাকা সঞ্চয় হবে, সেহেতু সে ছয় সপ্তাহ শেষে তার মায়ের জন্য উপহারটি কিনতে পারবে।
তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, লিলির সঞ্চয় পরিকল্পনায় একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে, তাই না? চলো আরও একটু পর্যালোচনা করে দেখি। লক্ষ করো, এই সপ্তাহের সাপেক্ষে সঞ্চয়ের অনুক্রমের যে কোনো সংখ্যাকে তার আগের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল একই (2) হয়। নিচে হিসাবটি করে দেখানো হলো।
ঘটনা ২: ভাইরাসের বিস্তার
আমরা অনেক সময় ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি। ধরো, কোনো এক ভাইরাসজনিত রোগ এমনভাবে ছড়ায় যে প্রথমে একজন আক্রান্ত হয়, তারপর পাশের ছবির মতো ছড়াতে থাকে। ছবি দেখে রোগটি ছড়ানোর যে ক্রমটি পাওয়া গেল, তা হলো: 1, 2, 4, 8,... যেখানে প্রথম পদটি ছাড়া প্রতিটি পদই তার পূর্বের পদের দ্বিগুণ।
উভয় ঘটনা বিশ্লেষণ করে আমরা কী পেলাম?
উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিটি পদ তার পূর্ববর্তী পদের দ্বিগুণ। অন্যভাবে যে কোনো পদ ও তার পূববর্তী পদের অনুপাত নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা। অর্থাৎ যে কোনো পদ ও তার পূববর্তী পদের অনুপাত সাধারণ। আর এই ধরনের অনুক্রমই হলো গুণোত্তর অনুক্রম (Geometric Sequence).
উদাহরণ: একটি গুণোত্তর অনুক্রম, কারণ এখানে যে কোনো পদ ও তার পূর্ববর্তী পদের অনুপাত ।
দুইটি গুণোত্তর অনুক্রম নিচের বক্সে লেখো যেখানে একটির সাধারণ অনুপাত এবং অন্যটির সাধারণ অনুপাত তোমার নিজের মতো পছন্দ করো।
গুণোত্তর অনুক্রমের প্রথম পদটিকে ৫ এবং সাধারণ অনুপাতকে। দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তাহলে, একটি গুণোত্তর অনুক্রমের বীজগণিতীয় রূপটি আমরা নিচের মতো লিখতে পারি:
একক কাজ
নিচের অনুক্রমগুলোর সাধারণ অনুপাত ও পরের তিনটি পদ নির্ণয় করো। তোমাদের জন্য একটি নির্ণয় করে দেওয়া হলো:
জোড়ায় কাজ
সমান্তর অনুক্রমের মতো এক্ষেত্রেও একটি উদাহরণ নিয়ে প্রতিটি পদ বিশ্লেষণ করো। অনুসন্ধান করে দেখো পদগুলোর মধ্যে কোনো সাধারণ বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় কি না।
লিলির সপ্তাহিক সঞ্চয়ের অনুক্রম
এবার ভেবে দেখো তো, লিলির যদি গুণোত্তর অনুক্রমের সাধারণ পদ বা তম পদ নির্ণয়ের এই সহজ ধারণাটি জানা থাকত, তাহলে 52 তম সপ্তাহে সে কত টাকা সঞ্চয় করেছে তা বের করা কি কঠিন বা অনেক বেশি সময় লাগতো?
হিসাবটি ঝটপট করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো:
উদাহরণ
ধরো, তুমি একটি কাজ পেলে, যা পড়াশোনার পাশাপাশি করা সম্ভব। কাজটি করে তুমি প্রথম মাসে আয় করেছ 4000 টাকা। পরবর্তী প্রতিমাসে পূর্ববর্তী মাসের 5% করে আয় বৃদ্ধি পাবে। 10তম মাসে তোমার আয় কত টাকা হবে?
সমাধান : চলো সমস্যাটি একটি তালিকা করে বিশ্লেষণ করি:
ফিবোনাচ্চি অনুক্রম সমান্তর ও গুণোত্তর অনুক্রম থেকে ভিন্নতর। নিচের অনুক্রমগুলো লক্ষ করো। প্রতিটির ক্ষেত্রেই তুমি কি তার পরের পদটি নির্ণয় করতে পারবে? যেগুলো পারবে যুক্তিসহ নিচের ছকে লেখো:
i) ও (ii) নং অনুক্রমের পরের পদটি খুব সহজেই নির্ণয় করতে পেরেছ, তাই না? কারণ এদের পাশাপাশি দুইটি পদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তোমার ধারণা আছে। কিন্তু (iii) নং অনুক্রমটির পরবর্তী পদ কোনোভাবেই বের করা যাচ্ছে না। আর অনুক্রমটির পদগুলোতে একই বৈশিষ্ট্যের পুনরাবৃত্তিও ঘটছে না। যেহেতু (iii) নং সমস্যাটিকে অনুক্রম বলা হয়েছে, সেহেতু নিশ্চয়ই এর পদগুলোর মধ্যে কোনো না কোনো একই বৈশিষ্ট্যের পুনরাবৃত্তি থাকবেই। এটি একটি বিশেষ ধরনের অনুক্রম।
এই বিশেষ ধরনের অনুক্রমের পদগুলোর মধ্যকার সম্পর্কের সৌন্দর্য আবিষ্কার করেছিলেন একজন বিখ্যাত গণিতবিদ। তিনি ইতালীর বিখ্যাত গণিতবিদ Leonardo Pisano, যার ডাকনাম ফিবোনাচ্চি (Fibonacci)। প্রকৃতির মাঝে অনুসন্ধান করে তিনি সংখ্যারাশির এই বিশেষ ধরনের অনুক্রম খুজে পান, যা তিনি "Liber Abaci" নামক গ্রন্থে প্রকাশ করেন। ফিবোনাচ্চি অনুক্রমে প্রথম সংখ্যা দুইটি যথাক্রমে ) এবং 1 এবং এর পরবর্তী যে কোনো পদ পূর্ববর্তী দুটি পদের সমষ্টির সমান। অর্থাৎ তৃতীয় পদ = 0 + 1 = 1, চতুর্থ পদ = 1 + 1 = 2. সুতরাং ফিবোনাচ্চি অনুক্রমটি নিম্নরূপ:
0, 1, 1, 2, 3, 5, 8, 13, 21,...
ফিবোনাচ্চি অনুক্রমের পদগুলোকে আমরা নিম্নোক্ত সূত্র থেকে বের করতে পারি,
যেখানে
ফিবোনাচ্চি একজন প্রকৃতিপ্রেমী গণিতবিদ ছিলেন। প্রকৃতির বিভিন্ন সৃষ্টি রহস্য নিয়ে তিনি গবেষণা করতেন। তিনি গবেষণা করতে গিয়ে দেখলেন যে, প্রকৃতিতে কিছু জিনিস আছে যা একটি নিয়মিত সজ্জা অনুসরণ করেছে। নিচের ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করো।
সুতরাং ক্ষেত্রফল = (13 × 8) = 104 বর্গ একক।
এত গেল, আয়তক্ষেত্রটির জ্যামিতিক হিসাবনিকাশ। কিন্তু তোমরা যদি গভীরভাবে লক্ষ করো, আয়তটির ভিতরে কয়েকটি সংখ্যা দেখতে পাবে। সংখ্যাগুলো ছোটো থেকে ক্রমানুসারে সাজালে একটি অনুক্রম তৈরি হবে। অনুক্রমটি নিশ্চয়ই চিনতে পারছ, তাই না? এখন আমরা যদি প্রতি ক্ষেত্রে ফিবোনাচ্চি ক্রমের পদ অনুসারে একটির পিঠে একটি করে বর্গ আঁকি এবং এভাবে আঁকতে আঁকতে যেখানেই থামি না কেনো সব সময় দেখব একটি আয়তক্ষেত্র তৈরি হবে। যাকে আমরা ফিবোনাচ্চি আয়তক্ষেত্র বলতে পারি। আবার আয়তক্ষেত্রটির ভিতরে বিভিন্ন আকৃতির যে বর্গগুলো তৈরি হবে, তাদের ক্ষেত্রফলের সমষ্টিই হবে আয়তটির ক্ষেত্রফল। চলো যাচাই করে দেখি :
∴ আয়তটির ক্ষেত্রফল = 12 + 12 + 22 + 32 + 52 + 82 = 104 = (13× ৪) বর্গ একক।
ধারা (Series)
তোমরা ইতোমধ্যেই অনুক্রম সম্পর্কে জেনেছ। আর অনুক্রমের পদগুলো পরপর যোগ আকারে লিখলে ধারা (Series) পাওয়া যায়। যেমন:
উদাহরণ-১: ধ্রুব সংখ্যার ধারা: 3+3+3+3+...
উদাহরণ-১. স্বাভাবিক সংখ্যার ধারা: 1+2+3+4+...
ধারার সাধারণ আকার
কোনো অনুক্রমের প্রথম পদ a, দ্বিতীয় পদ a,, তৃতীয় পদ a,, ... এবং n-তম পদ ৫ হলে, অনুক্রমটি লিখতে পারি, a1, a2, a3, a4, ……, an…….. এই অনুক্রমের পদগুলো যোগ আকারে লিখলে, অর্থাৎ
আকারে লিখলে অনুক্রমটি ধারায় রূপান্তরিত হয়ে গেল। একে ধারার সাধারণ আকার (general form of series) বলে।
সসীম ও অসীম ধারা
ধারার পদ সংখ্যা নির্দিষ্ট হলে তাকে সসীম ধারা (Finite Series) এবং পদ সংখ্যা অনির্দিষ্ট বা অসীম হলে, তাকে অসীম ধারা (Infinite Series) বলা হয়। যেমন :
দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা
অনুক্রমের মতো ধারার ক্ষেত্রেও পরপর দুইটি পদের মধ্যে সম্পর্কের উপর নির্ভর করে দুই ধরনের ধারা পাওয়া যায়। যেমন :
যে ধারার পদগুলো সমান্তর অনুক্রম মেনে চলে, তাকে সমান্তর ধারা (Arithmatic Series) বলে। তোমরা জেনেছ, সমান্তর অনুক্রমের পরপর দুইটি পদের পার্থক্য সমান। সমান্তর ধারার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। কোনো সমান্তর ধারার প্রথম পদ a এবং সাধারণ অন্তর d হলে, ধারাটি হবে-
চলো, প্রথম বছরের (12 মাসের) হিসাবটি করে দেখি। নিচের ছকে কয়েকটি উপাত্ত দেয়া আছে, বাকিগুলো তোমরা পূরণ করো।
তোমরা হয়তো বুঝতে পারছ, হিসেবটিকে ধারায় রূপান্তর করলে এটি একটি সমান্তর ধারা হবে। সমান্তর ধারাটি নিম্নরূপ:
ধরি, কোনো একটি সমান্তর ধারার প্রথম পদ a এবং সাধারণ অন্তর d. তাহলে -তম পদ an = a + (n - 1)d
ধরি, প্রথম -সংখ্যক পদের সমষ্টি Sn, তাহলে
মাটির ব্যাংকটিতে তিন মাসে মোট কত টাকা জমা হয়েছে ব্যাংকটি না ভেঙে অপু তা জানার পরিকল্পনা করে। তার মাথায় দুটি ভাবনা উঁকি দেয়। প্রথমটি হলো- তিন মাসে অর্থাৎ মোট 13 সপ্তাহে যত টাকা জমা হয়েছে তা প্রতি সপ্তাহের টাকা হিসাব করে নির্ণয় করে যোগ করা। কিন্তু এটি অনেক সময় সাপেক্ষ্য ব্যাপার। আর দ্বিতীয়টি হলো- এমন কোনো ব্যবস্থা অনুসন্ধান করা যার মাধ্যমে সরাসরি মোট টাকা জানা যাবে। অপুর অনুসন্ধানী মন দ্বিতীয়টিতেই স্থির হয়।
গুণোত্তর ধারাটির ১ম পদ ৫, সাধারণ অনুপাত [যেখানে ≠ 1] এবং প্রথম n সংখ্যক পদের সমষ্টি S হলে, আমরা লিখতে পারি,
কিন্তু ধারাটির পদ সংখ্যা অসীম হলে এর সমষ্টি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমাদের আলাদাভাবে কিছু ভাবতে হবে কিনা অনুসন্ধান করে দেখি। বলো তো ধারাটি কখন অসীম হবে? এর মান অসীম হলে ধারাটিও অসীম হবে। এই অবস্থায় আমরা লিখতে পারি,
আরও দেখুন...