প্রাকৃতিক সৃষ্টি এক গভীর রহস্যে ঘেরা। প্রকৃতির এই সৃষ্টিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে মানুষ তাঁর ক্ষুদ্র জ্ঞানকে বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে। হয়ে উঠে বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীগণ তাদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রয়োজনে কত কিছু আবিষ্কার করে। মানুষ গবেষণা করে দেখেছে যে, পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর ভারসাম্যতার প্রয়োজনে। তাঁদের এই অর্জিত জ্ঞানকে প্রযুক্তিতে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তিবিদরা তৈরি করছে টেকসই স্থাপনা। আমরা এই শিখন প্রক্রিয়ায় খোজার চেষ্টা করব, সৃষ্টির কোথায় কীভাবে লুকিয়ে আছে বহুপদী রাশির গাণিতিক মডেল এবং প্রযুক্তিতে সেগুলোকে ব্যবহারের জন্য গাণিতিক নিয়ম।
বহুপদী রাশি একটি বীজগাণিতিক রাশি। সংখ্যারাশির সমস্যাকে যে কোনো সংখ্যার ক্ষেত্রে সমাধানের জন্য চলকের মাধ্যমে বীজগাণিতিক রাশিতে রূপান্তর করা হয়। পরে বীজগাণিতিক নিয়ম ব্যবহার করে সমস্যাটির সমাধান করে যে কোনো সংখ্যার জন্য ব্যবহার করা হয়। এসো আমরা প্রথমে জেনে নেই বাস্তব সমস্যা থেকে কীভাবে বহুপদী রাশি গঠন করা যায়।
মিনহাজের বাবা একজন কাঠমিস্ত্রিকে তিনটি টেবিল তৈরির অর্ডার দিলেন। একটি মিনহাজের পড়ার টেবিল, একটি তাঁদের খাবার টেবিল এবং একটি মিনহাজের ছোটো বোনের খেলনা রাখার জন্য। কাঠমিস্ত্রি জিজ্ঞেস করলেন টেবিল তিনটি কোন মাপের হবে? মিনহাজের বাবা টেবিলের মাপ সম্বন্ধে মিনহাজের মতামত জানতে চাইলেন। মিনহাজ নবম শ্রেণির ছাত্র। আঁকার সম্বন্ধে তাঁর কিছু ধারণা আছে। সে কাঠমিস্ত্রিকে বলল, তাঁর ছোটো বোনের টেবিলের দৈর্ঘ্য হবে প্রস্থের দ্বিগুণের চেয়ে । একক কম। তাঁর নিজের টেবিলের দৈর্ঘ্য হবে প্রস্থের বর্গের চেয়ে । একক বেশি এবং খাবার টেবিলের দৈর্ঘ্য হবে প্রস্থের ঘন এর থেকে প্রস্থের দ্বিগুণ বাদ দিয়ে 1 একক বেশি। তাহলে, প্রতিটি টেবিলের প্রস্থ x হলে,
মিনহাজের ছোটো বোনের টেবিলের দৈর্ঘ্য = 2x - 1
উপরে দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য চলক x এর মাধ্যমে যে রাশিগুলো পাওয়া গেল, এগুলো বহুপদী রাশি।
তোমরা পূর্বের শ্রেণিতে বীজগাণিতিক রাশির চলক, পদ, ইত্যাদি সম্বন্ধে জেনেছ। বীজগাণিতিক রাশির চলক হলো একটি প্রতীক যা যে কোনো সংখ্যারাশিকে নির্দেশ করে। চলকের মাধ্যমে আমরা সংখ্যারাশিকে বীজগাণিতিক রাশিতে রূপান্তর করতে পারি। চলক যখন কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্দেশ করে তখন তাকে ধ্রুবক (constant) বলে। এক বা একাধিক চলক এবং ধ্রুবক গুণফলই বীজগাণিতিক রাশির এক একটি পদ (term)। এক বা একাধিক পদবিশিষ্ট বীজগাণিতিক রাশিকে বহুপদী (polynomial) বলে। একটি বহুপদী রাশির প্রত্যেকটি পদের চলকের সূচকের সমষ্টিকে ওই পদের মাত্রা (degree of term) বলে। যে পদের মাত্রা । তাকে ধ্রুবপদ (Constant term) বলে। পদসমূহের গরিষ্ঠ মাত্রাকে ওই বহুপদী রাশির মাত্রা (degree of polynomial) বলে।
উদাহরণ-১:
5x - 3 একটি এক চলকবিশিষ্ট দ্বিপদী রাশি। এখানে, -3 একটি পদ এবং এর মাত্রা 0. অর্থাৎ -3 একটি ধ্রুবপদ। আবার 5x একটি পদ এবং এর মাত্রা 1 এবং 5 কে x এর সহগ বলে।
উদাহরণ-২:
xy - 5x + y একটি দুই চলকবিশিষ্ট ত্রিপদী রাশি। এখানে দুইটি চলক x ও y এবং 3 টি পদ রয়েছে। xy একটি পদ এবং এর সহগ 1.
এখানে আমরা একটি চলকবিশিষ্ট বহুপদী নিয়ে আলোচনা করব। যেমন-
১. 3, 2x, -x², x4 ইত্যাদি x চলকবিশিষ্ট একপদী রাশি।
২. 1 + 2x, -2 + x4 ইত্যাদি x চলকবিশিষ্ট দ্বিপদী রাশি।
এবার আমরা বহুপদী রাশির সাধারণ আকার আলোচনা করব। এক চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশির সাধারণ আকার হলো-
এখানে,
চলক x এর যে কোনো নির্দিষ্ট মান a এর জন্য p(x) এর যে মান পাওয়া যায় তাকে p(a) দ্বারা নির্দেশ করা হয়।
উপরের রাশিগুলো পর্যবেক্ষণ করে এক চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশির মাত্রা ও পদসংখ্যার মধ্যে কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কী? খুঁজে পেলে নিচে লিখে রাখো।
কোনো গাণিতিক সমস্যাকে জ্যামিতিক আকারে রূপ দেওয়া গেলে সমস্যাটিকে পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়। এক চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশিকে আমরা গ্রাফের মাধ্যমে জ্যামিতিক রূপে প্রকাশ করতে পারি। চলকের বিভিন্ন মানের জন্য বহুপদী রাশির বিভিন্ন মান পাওয়া যায়। চলক এবং বহুপদী রাশির মান দ্বিমাত্রিক স্থানাঙ্ক জ্যামিতির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। দ্বিমাত্রিক স্থানাঙ্ক জ্যামিতিতে প্রকাশিত এই আঁকারকে বহুপদী রাশির গ্রাফ (graph of polynomial) বলে। সুতরাং গ্রাফ আঁকার জন্য আমাদের প্রথমে দ্বিমাত্রিক স্থানাঙ্ক জ্যামিতির বিষয়ে জানা প্রয়োজন।
দ্বিমাত্রিক স্থানাঙ্ক জ্যামিতিতে একটি সমতলে আনুভূমিকভাবে একটি সংখ্যারেখা এবং উল্লম্বভাবে আরেকটি সংখ্যারেখা স্থাপন করা হয়। আনুভূমিক সংখ্যারেখাকে x-অক্ষ (x-axis), এবং উল্লম্ব সংখ্যারেখাটিকে y-অক্ষ (y-axis) বলে এবং সমতলটিকে xy-সমতল বলে। x-অক্ষ ও-অক্ষ পরস্পর যে বিন্দুতে ছেদ করে, তাকে মূলবিন্দু (origin) বলে। মূলবিন্দুকে • দ্বারা নির্দেশ করা হয়।
xy সমতলে কোনো বিন্দুর অবস্থানকে (a, b) দ্বারা প্রকাশ করা হয়, যেখানে এ সংখ্যাটি x-অক্ষ থেকে এবং b সংখ্যাটি -অক্ষ থেকে নেয়া হয়। এখানে a কে ভুজ (abscissa) এবং b কে কোটি (ordinate) বলে। মূলবিন্দু থেকে x-অক্ষের ডান দিকের সংখ্যা ধনাত্মক এবং বামদিকের সংখ্যা ঋণাত্মক। একইভাবে মূলবিন্দু থেকে -অক্ষের উপরের দিকের সংখ্যা ধনাত্মক এবং নিচের দিকের সংখ্যা ঋণাত্মক। সুতরাং আমরা xy সমতলের যে কোনো বিন্দুকে -অক্ষ এবং y-অক্ষের সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি। (a, b) বিন্দুটি xy-সমতলে উপস্থাপন করতে হলে প্রথমে মূলবিন্দু থেকে x-অক্ষের ধনাত্মক দিকে a একক যাওয়ার পরে y-অক্ষের সমান্তরালে ৮ একক উপরের দিকে গেলে যে বিন্দুটি পাওয়া যাবে, সেটিই xy সমতলে (a, b) বিন্দুটির অবস্থান।
উদাহারণ : (3, 4) বিন্দুটি xy-সমতলে উপস্থাপন করতে হলে প্রথমে মূলবিন্দু থেকে x-অক্ষের ধনাত্মক দিকে ও একক যাওয়ার পরে y- অক্ষের সমান্তরালে 4 একক উপরের দিকে গেলে যে বিন্দুটি পাওয়া যাবে, সেটিই xy- সমতলে (3, 4) বিন্দুটির অবস্থান। মূলবিন্দুর অবস্থানকে (0, 0) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এভাবে xy সমতলে যে কোনো বিন্দুর অবস্থানকে x-অক্ষ এবং y-অক্ষের সাপেক্ষে নির্দেশ করা যায়। পাশের চিত্রে (0, 0), (3, 4), (-5, 4), (-5, -5) এবং (6,-4) বিন্দুর অবস্থান দেখানো হয়েছে।
জোড়ায় কাজ
নিচের বিন্দুগুলোকে পাশের xy-সমতলে উপস্থাপন করো।
(3, 0), (1, 2), (0, 4), (-3, 5), (-6, 0)
(-4, -5), (0, -3), (4, -2)
ধরি, p(x) একটি বহুপদী রাশি। x এর বিভিন্ন মানের জন্য p(x) এর মান বের করতে হবে। ধরি x এর মান a, তাহলে p(x) এর মান হবে p(a). সুতরাং (a,p(a)) বিন্দুটি xy-সমতলে p(x) বহুপদী রাশির লেখের উপর অবস্থিত হবে। এইভাবে x এর কয়েকটি মানের জন্য p(x) এর মান বের করে x এবং p(x) এর মানের সাপেক্ষে তৈরিকৃত বিন্দুগুলো xy- সমতলে স্থাপন করে ওই বিন্দুগুলোর মধ্য দিয়ে একটি মসৃন (smooth) রেখা আঁকলে সেটিই হবে p(x) বহুপদী রাশির গ্রাফ।
কোনো বহুপদী রাশির গ্রাফ আঁকা সহজ নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব। উপরের শ্রেণিতে তোমরা বিভিন্ন গ্রাফ আঁকার কৌশল শিখবে। তবে আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় হলো, আমরা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির যুগে বাস করছি। আমরা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি যেমন- গ্রাফিক্স ক্যালকুলেটর, কম্পিউটার, এমনকিমোবাইল ফোনের মাধ্যমে বহুপদী রাশির গ্রাফ আঁকতে পারি। তোমরা কি জানো এই সকল বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কীভাবে গ্রাফ আঁকে? এই সকল বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির মধ্যে মানুষ গ্রাফ আঁকার একটি মৌলিক পদ্ধতির প্রোগ্রাম সেট করে রেখেছে যার মাধ্যমে যন্ত্রটি নিমিষেই অসংখ্য বিন্দুকে স্থাপন করে মসৃন রেখা তৈরি করে ফেলতে পারে। তোমরাও বড়ো হয়ে তোমাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জন্য অনেক কাজকে সহজ করে দিবে। এখানে আমরা ছোটো ছোটো ঘাতবিশিষ্ট বহুপদী রাশির গ্রাফ আঁকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। সুতরাং বহুপদী রাশির সহগগুলোতে আমরা a, b, c ইত্যাদি বর্ণ ব্যবহার করব।
একঘাত বহুপদী রাশির সাধারণ আকার হলো-
p(x) = ax + b, a ≠ 0
একঘাত বহুপদী রাশির গ্রাফ আঁকা সহজ কারণ, এটি একটি সরলরেখা নির্দেশ করে। যেহেতু কোনো সরলরেখার উপর যে কোনো দুইটি বিন্দু ওই সরলরেখাকে নির্দেশ করে, সুতরাং একটি একঘাত বহুপদী রাশি p(x) এর গ্রাফ আঁকার জন্য দুইটি বিন্দু বের করলেই যথেষ্ট। এখানে x এর দুইটি মানের জন্য p(x) এর দুইটি মান বের করে x এবং p(x) এর মানের সাপেক্ষে তৈরিকৃত বিন্দু দুইটি xy-সমতলে স্থাপন করে ওই বিন্দু দুইটির মধ্য দিয়ে একটি সরলরেখা আঁকলে সেটিই হবে p(x) বহুপদী রাশির গ্রাফ।
উদাহরণ: p(x) = 2x + 1 এর গ্রাফ আঁক।
সমাধান: ধরি, y = p(x) = 2x + 1.
এখন x এর দুইটি মানের জন্য। এর দুইটি মান নির্ণয় করে নিচের ছকটি পূরণ করি।
জোড়ায় কাজ
একঘাত বহুপদী রাশির জ্যামিতিক আকারের সাথে প্রকৃতির অনেক বস্তুর আকারের মিল রয়েছে। বিভিন্ন গাছের পাতা দেখতে এরকম সরলরৈখিক। যেমন- নারিকেল, তাল, সুপারি ইত্যাদি গাছের পাতা। লক্ষ করে দেখো, এই পাতাগুলো সুবিন্যস্তভাবে সাজানো রয়েছে। একটির সাথে অন্যটি ছেদ করেনি। এই ধরনের প্রাকৃতিক সরলরৈখিক বস্তুর বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য আমাদের একঘাত বহুপদী রাশির বিভিন্ন বৈশিষ্ট জানা প্রয়োজন।
প্রযুক্তিতে অনেক সরলরেখার ব্যবহার আছে। তোমার ঘরের অনেক বস্তুই সরলরৈখিক জিনিস দিয়ে তৈরি। যেমন- চেয়ার, টেবিল, জানালা, দরজা, ইত্যাদি সরলরৈখিক কাঠ দিয়ে তৈরি। আবার জানালার রড সরলরৈখিক ডিজাইনের। আমাদের ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসের সার্কিটের ডিজাইন সরলরৈখিক। এইসকল সরলবৈখিক বস্তুর গাণিতিক মডেল তৈরি করতেও একঘাত বহুপদী রাশির জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়।
৪.৬ দ্বিঘাত বহুপদী রাশির গ্রাফ
p(x) = ax + bx + c, a ≠ 0
দ্বিঘাত বহুপদী রাশির গ্রাফ আঁকা একঘাত বহুপদী রাশির মতো সহজ নয়। কারণ, এটি সরলরেখা নির্দেশ করে শিক্ষাবর্ষ ২০২৪ না। সুতরাং একটি দ্বিঘাত বহুপদী রাশি p(x) এর গ্রাফ আঁকার জন্য বেশ কয়েকটি বিন্দু বের করতে হবে। এখানে x এর মানগুলো নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, x এর কোন্ দুইটি ভিন্ন মানের জন্য p(x) এরমান সমান হয়। x এর কোনো মানের জন্য p(x) এর মান 0 হলে x এর ওই সকল মানও বিবেচনা করতে হবে। x এর এরকম ভিন্ন মানের জন্য p(x) এর মান বের করে x এবং p(x) এর মানের সাপেক্ষে তৈরিকৃত বিন্দুগুলো xy-সমতলে স্থাপন করে ওই বিন্দুগুলোর মধ্য দিয়ে একটি মসৃন রেখা আঁকলে সেটিই হবে দ্বিঘাত বহুপদী রাশি p(x) এর গ্রাফ। এক্ষেত্রে যত বেশি বিন্দু নেওয়া যাবে গ্রাফটি ততো বেশি মসৃণ হবে।
উদাহরণ: p(x) = x² - 3x - 1 এর গ্রাফ আঁক।
সমাধান: ধরি, y = p(x) = x² - 3x - 1. এখন নিচের ছকে x এর বিভিন্ন মানের জন্য । এর মান এবং (x, y) বিন্দুগুলো নির্ণয় করি।
জোড়ায় কাজ
নিচের দ্বিঘাত বহুপদী রাশিগুলোকে গ্রাফপেপারে উপস্থাপন করো।
প্রকৃতিতে পাহাড়ের চূড়ার আকার এবং কলার গঠনের আকার লক্ষ করো। এসকল আকারের সাথে দ্বিঘাত বহুপদী রাশির আকারের সামঞ্জস্য রয়েছে। এই ধরনের প্রাকৃতিক আকারকে দ্বিঘাত বহুপদী রাশি দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এই ধরনের প্রাকৃতিক বস্তুর বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য আমাদের দ্বিঘাত বহুপদী রাশির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য জানা প্রয়োজন।
প্রযুক্তিতেও আমরা দ্বিঘাত বহুপদী রাশির আকারের মতো অনেক বস্তু দেখতে পাই। যেমন, ব্রিজ, বাড়ির গেট, ইত্যাদিতে। দ্বিমাত্রিক গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে প্রযুক্তিতে এই ধরনের মজবুত স্থাপনা তৈরি করা হয়। এইসকল গাণিতিক মডেল তৈরি করতেও দ্বিঘাত বহুপদী রাশির জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়।
ত্রিঘাত বহুপদী রাশির সাধারণ আকার হলো-
p(x) = ax3 + bx² + cx + d, a ≠ 0
ত্রিঘাত বহুপদী রাশির গ্রাফ আঁকা বেশ কঠিন। এটি সরলরেখা নির্দেশ করে না। এ জন্য আমাদের ত্রিঘাত বহুপদী রাশির বৈশিষ্ট জানতে হয়। আমরা পরবর্তীতে এই ধরনের রাশির বৈশিষ্ট জানার মাধ্যমে গ্রাফ আঁকতে পারব। এখানে p(x) এর গ্রাফ আঁকার জন্য x এর বেশ কয়েকটি মান নিব এবং x এর মানের সাপেক্ষে p(x) মান বের করে (x, p(x)) বিন্দুগুলো বের করতে হবে। এখানে x এর কোনো মানের জন্য p(x) এর মান ০ হলে x এর ওই সকল মান বিবেচনা করতে হবে। এখন x এবং p(x) এর মানের সাপেক্ষে তৈরিকৃত বিন্দুগুলো x1/- সমতলে স্থাপন করে ওই বিন্দুগুলোর মধ্য দিয়ে একটি মসৃন রেখা আঁকলে সেটিই হবে ত্রিঘাত বহুপদী রাশি p(x) এর গ্রাফ।
উদাহরণ: p(x) = x³ - 2x² + 2x – 1, এর গ্রাফ আঁক।
সমাধান: ধরি, y = p(x) = x3-2x²-x+2,
এখন নিচের ছকে x এর বিভিন্ন মানের জন্য y এর মান এবং (x, y) বিন্দুগুলো নির্ণয় করি।
জোড়ায় কাজ
নিচের ত্রিঘাত বহুপদী রাশিগুলোকে গ্রাফপেপারে উপস্থাপন করো।
১) x² - 4x²+2x+3, ২) x³-3x + 1, ৩) x³
এই রাশিগুলো ত্রিঘাত বহুপদী রাশি। এগুলোর জ্যামিতিক আকার পাশের চিত্রের মতো। তোমার গ্রাফপেপারে উপস্থাপিত এসকল ত্রিঘাত বহুপদী রাশিগুলোকে পাশের চিত্রের সাথে মিলিয়ে নাও। কোন বহুপদী রাশির গ্রাফ কোনটি তা গ্রাফের পাশে লেখো। তোমার কাছে থাকা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের মাধমে গ্রাফ একেও তুমি তোমার গ্রাফপেপারে আঁকা গ্রাফকে মিলিয়ে নিতে পার। যদি না মিলে, তবে তোমার বিন্দুগুলো নির্ণয় বা উপস্থাপন ভুল হয়েছে। সেক্ষেত্রে তোমরা প্রয়োজনীয় সংশোধন করে নাও।
প্রকৃতিতে নদীর গতিপথ, পাশাপাশি পাহাড়ের চূড়াগুলোর উচ্চতা ইত্যাদির আকার, ত্রিঘাত বহুপদী রাশির আকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই ধরনের প্রাকৃতিক আকারকে ত্রিঘাত বহুপদী রাশি দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এই ধরনের প্রাকৃতিক বস্তুর বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য আমাদের ত্রিঘাত বহুপদী রাশির বিভিন্ন বৈশিষ্ট জানা প্রয়োজন।
প্রযুক্তিতেও আমরা ত্রিঘাত বহুপদী রাশির আকারের মতো অনেক বস্তু দেখতে পাই। যেমন- বড়ো বড়ো ব্রিজ, বাড়ির গেট, ইত্যাদি। দ্বিমাত্রিক গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে প্রযুক্তিতে এই ধরনের মজবুত স্থাপনা তৈরি করা হয়। ত্রিঘাত বহুপদী রাশির বৈশিষ্ট পর্যালোচনা করে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হয় বলেই এগুলো মজবুত ও টিকসই হয়।
বাস্তব সমস্যা - ১.
বাজারে বিভিন্ন মূল্যের চাল এবং ডাল পাওয়া যায়। চালের কেজি x টাকা এবং ডালের কেজিy টাকা হলে 6 কেজি চাল এবং 2 কেজি ডালের মূল্য কত? বীজগাণিতিক রাশির মাধ্যমে আমরা লিখতে পারি-
মূল্য = 6x + 2y টাকা
এটি দুই চলকবিশিষ্ট একটি বহুপদী রাশি। কারণ, এর মান দুটি চলক x এবং y এর উপর নির্ভরশীল।
বাস্তব সমস্যা ২.
একখানা জমির দৈর্ঘ্য x এবং প্রস্থ হলে, জমির ক্ষেত্রফল কত? যেহেতু দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ গুণ করে ক্ষেত্রফল পাওয়া যায়, সুতরাং
জমির ক্ষেত্রফল = xy
এটি দুই চলকবিশিষ্ট একটি বহুপদী রাশি। কারণ, এর মান দুটি চলক x এবং এর উপর নির্ভরশীল।
এভাবে বিভিন্ন বাস্তব সমস্যাকে দুই চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। নিচে কয়েকটি দুই চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশির উদাহরণ দেওয়া হলো।
x এবং চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশিকে p(x, y) দ্বারা নির্দেশ করা যায়। দুই চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশির পদ সাধারণত ax" y" আকারের হয়। এখানে,
বহুপদী রাশি p(x, y) এর পদসমূহের গরিষ্ঠ মাত্রাকে p(x, y) এর মাত্রা বলে।
উদাহরণ: বহুপদী রাশি p(x, y) = x³ - x²y² + 5x এর প্রত্যেকটি পদের সহগ এবং মাত্রা বের করো। রাশিটির মাত্রা কত?
সমাধান: x³ এর সহগ = 1 এবং মাত্রা = 3
জোড়ায় কাজ:
নিচের বহুপদী রাশিগুলোর প্রত্যেকটি পদের সহগ এবং মাত্রা বের করো। রাশিটির মাত্রা কত?
দুই চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশির মতো বিভিন্ন বাস্তব সমস্যা থেকে তিন চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশি গঠিত হয়।
একটি বাস্তব সমস্যা: x, y এবং দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তিনটি ঘনকের আয়তনের সমষ্টি কত?
সমাধান: আমরা জেনেছি, x, দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ঘনকের আয়তন x3. তাহলে
x, y এবং - দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তিনটি ঘনকের আয়তনের সমষ্টি = x³ + y³ +z3
এটি তিন চলকবিশিষ্ট একটি বহুপদী রাশি।
x এবং চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশিকে p(x, y) দ্বারা নির্দেশ করা যায়। দুই চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশির পদ সাধারণত axn yn আকারের হয়। এখানে,
উদাহরণ: বহুপদী রাশি p(x, y) = x³ - x²y² + 5x এর প্রত্যেকটি পদের সহগ এবং মাত্রা বের করো। রাশিটির মাত্রা কত?
সমাধান: x³ এর সহগ = 1 এবং মাত্রা = 3
জোড়ায় কাজ:
নিচের বহুপদী রাশিগুলোর প্রত্যেকটি পদের সহগ এবং মাত্রা বের করো। রাশিটির মাত্রা কত?
দুই চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশির মতো বিভিন্ন বাস্তব সমস্যা থেকে তিন চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশি গঠিত হয়।
একটি বাস্তব সমস্যা: x, y এবং দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তিনটি ঘনকের আয়তনের সমষ্টি কত?
সমাধান: আমরা জেনেছি, x, দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ঘনকের আয়তন x3 তাহলে
x, y এবং - দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তিনটি ঘনকের আয়তনের সমষ্টি = x³ + y³ + z3
এটি তিন চলকবিশিষ্ট একটি বহুপদী রাশি।
x, y এবং চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশিকে p(x, y, z) দ্বারা নির্দেশ করা হয়। তিন চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশির সাধারণ পদ ax"y"- আকারের হয় এবং সাধারণ পদের মাত্রা = m + n + p এবং পদসমূহের গরিষ্ঠ মাত্রাকে p(x, y, z) এর মাত্রা বলে।
উদাহরণ: বহুপদী রাশি p(x, y, z) = x² - x²y² + 2xz³ এর প্রত্যেকটি পদের সহগ এবং মাত্রা বের করো। রাশিটির মাত্রা কত?
সমাধান:
জোড়ায় কাজ
নিচের তিন চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশিগুলোর প্রত্যেকটি পদের সহগ এবং মাত্রা বের করো। রাশিটির মাত্রা কত?
তোমরা লক্ষ করছো যে, অসংখ্য বহুপদীরাশি রয়েছে। অনেক বহুপদীরাশির বৈশিষ্ট্য বেশ জটিল। বহুপদীরাশির বৈশিষ্ট্য জানা থাকলে তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। এখানে আমরা কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের বহুপদীরাশির আলোচনা করব।
বহুপদী রাশির বিভিন্ন উদাহরণে তোমরা লক্ষ করছো যে, কিছু বহুপদী রাশি আছে যাদের প্রত্যেকটি পদের মাত্রা সমান। এই ধরনের যে সকল বহুপদী রাশির প্রত্যেকটি পদের মাত্রা সমান তাকে সমমাত্রিক বহুপদী রাশি বলে। যেমন-
১. x + y একটি দুই চলকবিশিষ্ট সমমাত্রিক বহুপদী রাশি। এখানে প্রত্যেকটি পদের মাত্রা 1 ।
২. x² + 2xy + y² একটি দুই চলকবিশিষ্ট সমমাত্রিক বহুপদী রাশি। এখানে প্রত্যেকটি পদের মাত্রা 2 ।
৩. x² - 3xz + 2yz - xy + y² একটি তিন চলকবিশিষ্ট সমমাত্রিক বহুপদী রাশি। এখানে প্রত্যেকটি পদের মাত্রা 3 ।
জোড়ায় কাজ
১. দুই চলকবিশিষ্ট বিভিন্ন পদসংখ্যার 5টি সমমাত্রিক বহুপদী রাশির উদাহরণ দাও যাদের প্রত্যেকটি পদের মাত্রা 2 ।
২. দুই চলকবিশিষ্ট বিভিন্ন পদসংখ্যার 5টি সমমাত্রিক বহুপদী রাশির উদাহরণ দাও যাদের প্রত্যেকটি পদের মাত্রা 3 ।
৩. তিন চলকবিশিষ্ট বিভিন্ন পদসংখ্যার 5টি সমমাত্রিক বহুপদী রাশির উদাহরণ দাও যাদের প্রত্যেকটি পদের মাত্রা 2 ।
৪. তিন চলকবিশিষ্ট বিভিন্ন পদসংখ্যার 5টি সমমাত্রিক বহুপদী রাশির উদাহরণ দাও যাদের প্রত্যেকটি পদের মাত্রা 3 ।
একাধিক চলকবিশিষ্ট কোনো বহুপদী রাশির যে কোনো দুইটি চলক স্থান বিনিময় করলে যদি রাশিটির কোনো পরিবর্তন না হয়, তবে ওই বহুপদী রাশিকে প্রতিসম বহুপদী রাশি বলে। যেমন-
জোড়ায় কাজ
১. উপরের প্রতিসম বহুপদীর উদাহরণে দেওয়া রাশিগুলো কেনো প্রতিসম বহুপদী রাশি তা কারণসহ ব্যাখ্যা করো।
২. প্রতিসম নয় এমন বিভিন্ন পদবিশিষ্ট 5টি সমমাত্রিক বহুপদী রাশির উদাহরণ দাও।
একটি বহুপদী রাশি x + y + z + xyz নিই। যদি এর স্থলে x, এর স্থলে এবং x এর স্থলে বসানো হয়, তবে রাশিটির কোনো পরিবর্তন হবে না। এই ধরনের রাশিই চক্রক্রমিক বহুপদী রাশি। তিন বা তিনের অধিক চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশির চলকসমূহকে পর পর স্থান পরিবর্তন করলে যদি রাশিটির কোনো পরিবর্তন না হয় তবে ওই বহুপদী রাশিকে চক্রক্রমিক বহুপদী (cyclic polynomial) রাশি বলে। স্থান পরিবর্তন আমরা জ্যামিতিক ভাবেও দেখাতে পারি। যেমন- x, y, z চলকসমূহের চক্রক্রমিক স্থান পরিবর্তন নিম্নরূপ।
একইভাবে x, y, z, s, । চলকসমূহের চক্রক্রমিক স্থান পরিবর্তন নিম্নরূপ।
উদাহরণ:
১. x² + y² + z2 একটি তিন চলকবিশিষ্ট চক্রক্রমিক বহুপদী রাশি। এখানে প্রত্যেকটি পদের মাত্রা 2. সুতরাং রাশিটির মাত্রা 2.
2. x³ + y² + 23 +w³ - 3xyzw একটি চার চলকবিশিষ্ট চক্রক্রমিক বহুপদী রাশি। এখানে সর্বাধিক 4 মাত্রার একটি পদ রয়েছে। সুতরাং রাশিটির মাত্রা 4.
জোড়ায় কাজ
১. তিন চলকবিশিষ্ট একটি সরল চক্রক্রমিক বহুপদী রাশির উদাহরণ দাও।
২. চার চলকবিশিষ্ট একটি দ্বিমাত্রিক বহুপদী রাশির উদাহরণ দাও।
বহুপদীর চলক, সংখ্যা নির্দেশ করে। সুতরাং সংখ্যার মতো আমরা বহুপদীর যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ করতে পারি।
৮.১ যোগ ও বিয়োগ
এক চলকবিশিষ্ট দুইটি বহুপদী রাশির যোগ বা বিয়োগের ক্ষেত্রে রাশি দুইটির সমমাত্রার পদের সহগের যোগ বা বিয়োগ করে রাশি দুইটির যোগ বা বিয়োগ করতে হয়।
উদাহরণ: যদি p(x) = x³ - 3x + 1 এবং q(x) = 2x3 - x² + 3 হয়, তবে
(i) p(x) + q(x) এবং (ii) p(x) - q(x) কত?
সমাধান: নিচের সারণিটি পূরণ করো।
৮.২ গুণ
তোমরা জানো, সংখ্যারাশি বন্টন বিধি মেনে চলে। অর্থাৎ যদি a, b, c বাস্তব সংখ্যা হয় তবে,
a(b + c) = ab + ac
এটি হলো সংখ্যারাশির বন্টন বিধি।
এই বিধি ব্যবহার করে আমরা লিখতে পারি- যদি a, b, c, d বাস্তব সংখ্যা হয় তবে,
(a + b) (c + d) = ac + ad + bc + bd
যেহেতু বহুপদী রাশির চলক বাস্তব সংখ্যা নির্দেশ করে, সুতরাং বহুপদী রাশির ক্ষেত্রে আমরা এই নিয়ম ব্যবহার করতে পারি। বাস্তব সংখ্যার গুণ ও ভাগের মতো আমরা বহুপদী রাশির গুণ ও ভাগ করতে পারি। তোমরা পূর্বে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বহুপদী রাশির গুণ শিখেছ। সেখানে তোমরা 0 ও 1 মাত্রার বহুপদী রাশির গুণ শিখেছ। সূচকের নিয়ম এবং উপরের সূত্র ব্যবহার করে আমরা যে কোনো বহুপদী রাশির গুণফল নির্ণয় করতে পারি।
উদাহরণ : x² + 3 কে x + 2 দ্বারা গুণ করো।
সমাধান : (x² + 3)(x+2) = x².x + 2x² + 3x +6
= x² + 2x² + 3x + 6
৮.৩ ভাগ
তোমরা সংখ্যারাশির ক্ষেত্রে দীর্ঘ ভাগ পদ্ধতি শিখেছ। যেমন, 12 কে 5 দিয়ে ভাগ করার দীর্ঘ ভাগ পদ্ধতি নিম্নরূপ:
এখানে 12 ভাজ্য, 5 ভাজক, 2 ভাগফল এবং 2 ভাগশেষ। সংখ্যারাশির মতো আমরা বহুপদী রাশিকেও দীর্ঘ ভাগ পদ্ধতিতে ভাগ করতে পারি। যেমন-
৮.৪ ভাগ প্রক্রিয়ার সাধারণ বৈশিষ্ট্য
যদি p(x) এবং d(x) দুটি বহুপদী রাশি হয় [যেখানে d(x) ≠ 0], তবে
যেখানে, q(x) এবং R(x) দুইটি বহুপদী রাশি। p(x) কে ভাজ্য (dividend), d(x) কে ভাজক (divisor), q(x) কে ভাগফল (quotient) এবং R(x)কে ভাগশেষ (remainder) বলে।
উপরের সমীকরণের উভয় পার্শ্বে d(x) দ্বারা গুণ করলে পাই,
p(x) = d(x) q(x) + R(x) … … … (1)
অর্থাৎ
ভাজ্য = ভাজক ভাগফল + ভাগশেষ
এক চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশির জ্যামিতিক আকার পেতে হলে আমাদেরকে চলকের বিভিন্ন মানের জন্য ওই রাশির মান বের করতে হয়। এক্ষেত্রে ভাগশেষ উপপাদ্যের মাধ্যমে আমরা সহজেই ওই রাশির মান বের করতে পারি। আমরা প্রথমে উদাহরণের মাধ্যমে দেখতে পারি কীভাবে কাজটি করা যায়।
ধরো, p(x) = x² - 3x² + 2x - 2 এবং x এর বিভিন্ন মানের জন্য p(x) এর মান বের করতে চাই। এবার বলো তো,
উপরের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে ভাজকের সাথে ভাগফলের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কী? পর্যবেক্ষণ করে দেখো, নিচের সম্পর্কটি খুঁজে পাওয়া যায়। এই সম্পর্কটিই ভাগশেষ উপপাদ্য নামে পরিচিত।
ভাগশেষ উপপাদ্য
এক চলকবিশিষ্ট ধনাত্মক মাত্রার বহুপদী রাশি p(x) কে (x – a) দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ হবে p(a).
ভাগশেষ উপপাদ্যটি আমরা সহজেই প্রমাণ করতে পারি।
প্রমাণ: উপরের (1) নং সম্পর্ক থেকে আমরা পাই,
p(x) = d(x)q(x) + R(x)
যদি ভাজক q(x) = x - a হয়, তবে
p(x) = d(x)(x - a) + R(x)
যেহেতু q(x) এর মাত্রা 1, সুতরাং R(x) একটি ধ্রুবক। ধরি, R(x) = R. তাহলে,
p(x) = d(x)(x - a) + R
এখন, x = a হলে,
p(a) = d(a)(a - a) + R=R
অর্থাৎ p(a), ভাগশেষ R এর সমান।
এখানে লক্ষণীয় যে, কোনো বহুপদী রাশিকে শুধু সরল রাশি দ্বারা অর্থাৎ ax + b (যেখানে, a ≠ 0) আকারের রাশি দ্বারা ভাগ করতে হলে, ভাগ না করেও ভাগশেষ বের করা যাবে। এক্ষেত্রে ধনাত্মক মাত্রাবিশিষ্ট বহুপদী
রাশি p(x) কে ax + b দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ হবে p
উদাহরণ : বহুপদী রাশি 3x³- 2x + 1 কে 2x + 1 দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ কত হবে, ভাগশেষ উপপাদ্য ব্যবহার করে বের করো।
সমাধান: ভাগশেষ উপপাদ্য অনুযায়ী, ভাগশেষ হবে
একক কাজ:
১. বহুপদী রাশি x² - 4x + 3 কেx - 3 দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ কত হবে ভাগশেষ উপপাদ্য ব্যবহার করে বের করো।
২. বহুপদী রাশি 2x²- x² + 2 কে 3x - 2 দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ কত হবে ভাগশেষ উপপাদ্য ব্যবহার করে বের করো।
বাস্তব সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে উৎপাদক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উৎপাদকের মাধ্যমে আমরা চলকের মান বের করতে পারি। তাই উৎপাদকে বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উৎপাদক একটি সরল রাশি হলে আমরা সহজেই চলকের একটি বাস্তব মান বের করতে পারি। সুতরাং উৎপাদকে বিশ্লেষণের সময়ে আমাদের লক্ষ থাকবে যতদূর সম্ভব সরল রাশিতে বিশ্লেষণ করা। তোমরা এর আগের শ্রেণিগুলোতে বিভিন্ন বীজগাণিতিক রাশির উৎপাদকে বিশ্লেষণ করেছ এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে এর উপযোগিতা যাচাই করেছ। এখানে আমরা বহুপদী রাশির উৎপাদকে বিশ্লেষণের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
কোন একটি বহুপদী রাশিকে যদি একাধিক বহুপদী রাশির গুণফল হিসাবে লেখা যায় তবে গুণফলকৃত বহুপদী রাশিগুলোকে উক্ত বহুপদী রাশির উৎপাদক বলে। যেমন, x4 - 1 এর একটি উৎপাদক x² + 1. তোমরা কি জানো x² + 1 কেনো x 1 এর একটি উৎপাদক হবে? কারণ, x² + 1 দিয়ে x² - 1 কে ভাগ করলে ভাগশেষ ০ হবে। তুমি নিজে ভাগ করে দেখো। x4 - 1 এর আর কী কী উৎপাদক থাকতে পারে? তোমার উত্তর নিচে লেখো।
কোনো একটি বহুপদী রাশিকে এর মৌলিক বহুপদী রাশির গুণফল হিসেবে প্রকাশ করাকে ওই বহুপদী রাশির উৎপাদকে বিশ্লেষণ বলে।
উদাহারণ: x4 - 1কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করলে পাই,
x - 1 = (x² + 1)(x + 1)(x - 1)
এখানে আমরা উৎপাদক হিসাবে দুইটি সরল রাশি x + 1 এবং x - 1 পেয়েছি। কিন্তু অন্য আরেকটি দ্বিঘাত রাশি x² + 1 একটি উৎপাদক। এই দ্বিঘাত রাশিটিকে আর বাস্তব সরল রাশিতে বিশ্লেষণ করা যায় না। উৎপাদকে বিশ্লেষণের সময় যতদূর সম্ভব সরল রাশির গুণফল হিসাবে প্রকাশ করতে হয়। কোনো সরল রাশি কোনো বহুপদী রাশির উৎপাদক কি না তা আমরা উৎপাদক উপপাদ্য ব্যবহার করে যাচাই করতে পারি।
১০.১ উৎপাদক উপপাদ্য (Factor Theorem)
এক চলকবিশিষ্ট বহুপদী রাশি p(x) এর একটি উৎপাদক xa হবে যদি এবং কেবল যদি p(a) = 0 হয়।
প্রমান: ধরি, p(x) এক চলকবিশিষ্ট একটি বহুপদী রাশি। যদি x a, p(x) এর একটি উৎপাদক হয়, তবে (x – a) দ্বারা p(x) ভাগ করলে ভাগশেষ হবে। কিন্তু ভাগশেষ উপপাদ্য অনুযায়ী, p(x) কে (x – a) দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ হবে p(a). অর্থাৎ p(a) = 0. অন্যদিকে p(a) = 0 হলে, p(x) কে (x – a) দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ ০ হবে। অর্থাৎ (xa) হবে p(x) এর একটি উৎপাদক।
কোনো বহুপদী রাশির প্রত্যেকটি পদে কোনো সাধারণ উৎপাদক থাকলে সেটিকে আগে উৎপাদক হিসেবে বের করে নিলে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা সহজ হয়। যেমন,
y² + xy + 3y = y(y + x + 3)
এখানে, y² + xy + 3y রাশির প্রত্যেকটি পদে সাধারণ উৎপাদক. লক্ষ করো যে অন্য উৎপাদক (y + x + 3) একটি মৌলিক উৎপাদক। সুতরাং এটি একটি উৎপাদকের বিশ্লেষণ।
উদাহারণ: x² + 3y3 - xy - 3xy² কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
সমাধান: x² + 3y³ - ху - 3xy²
কিছু কিছু বহুপদী রাশি আছে, যে রাশিগুলোকে পূর্ণবর্গ আকারে প্রকাশ করা যায়। একটু বুদ্ধি খাটালেই তোমরা এই রাশিগুলোকে দেখে বুঝতে পারবে যে এদেরকে পূর্ণবর্গ আকারে করতে হবে। যেমন,
x²+ 6xy +9y2
একটু চিন্তা করে দেখোতো যে এটিকে পূর্ণবর্গ আকারে প্রকাশ করা যায় কিনা? এটিকে আমরা লিখতে পারি,
x² + 2.x.3y + (3y)² = (x + 3y)²
এই ধরনের রাশিকে একই রাশির উৎপাদকের গুণফল হিসাবে প্রকাশ করা যায়, অর্থাৎ
(x+3y)²= (x + 3y)(x + 3y)
একক কাজ
পূর্ণবর্গ আকারে প্রকাশ করে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
x² + y² + 2xy + 2x + 2y +1
কোনো বহুপদী রাশিকে দুইটি রাশির বর্গের অন্তররূপে প্রকাশ করতে চাইলে আমরা নিচের সূত্র ব্যবহার করে তা করতে পারি।
x² - y²= (x + y) (x - y)
উদাহারণ: x² + 4x + 1 কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
সমাধান: x² + 4x + 1 = x² + 2.x.2 + 22 - 3 = (x + 2)² -
উপরের সূত্রানুযায়ী আমরা লিখতে পারি,
x² + 4x + 1 = (x + 2 + ) (x + 2 - )
লক্ষ করো যে, এখানে 2 + এবং 2 - দুইটি অমূলদ সংখ্যা।
একক কাজ: a4 + 4b4 কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
ax² + bx + c, [a ≠ 0] আকারের বহুপদী রাশি বাস্তব সমস্যা তৈরি এবং সমাধানের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের রাশিকে কীভাবে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যায় সে বিষয়ে আমরা এখানে আলোচনা করব।
x² + ax + b আকারের রাশির সহগ ৫ কে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বিভক্ত করে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যায়। এক্ষেত্রে ৫ এর মানকে এমনভাবে দুইটি সংখ্যা ৫ এবং ঐ তে বিভক্ত করতে হয় যাদের যোগফল a এর সমান এবং গুণফল b এর সমান হয়। তখন নিচের সূত্র ব্যবহার করে আমরা উৎপাদকে বিশ্লেষণ করতে পারি।
রাশিটির আকার ax + bx + c হলে, b এর মানকে এমনভাবে দুইটি সংখ্যা d এবং e তে বিভক্ত করতে হয় যাদের যোগফল ৮ এর সমান এবং গুণফল ac এর সমান হয়। পরে সাধারণ উৎপাদক বের করার মাধ্যমে আমরা উৎপাদকে বিশ্লেষণ করতে পারি।
এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করাকে মধ্যপদ বিভক্তি পদ্ধতি বলে।
উদাহারণ: মধ্যপদ বিভক্তির মাধ্যমে দ্বিঘাতবিশিষ্ট বহুপদী রাশি x² + 3x + 2 কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
সমাধান: x² + 3x + 2 রাশিকে ax² + bx + c রাশির সাথে তুলনা করলে a = 1, b = 3, c = 2 পাই। এবার তুমি কি বুদ্ধি খাটিয়ে b = 3 কে এমনভাবে দুইটি সংখ্যায় বিভক্ত করতে পারবে যাদের যোগফল 3 এবং গুণফল a.c = 1 × 2 = 2 এর সমান হয়?
উদাহারণ: মধ্যপদ বিভক্তির মাধ্যমে দ্বিঘাত বহুপদী রাশি 2x²+ 3x - 2 কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
সমাধান: 2x² + 3x - 2 রাশিকে ax² + bx + c রাশির সাথে তুলনা করলে a=2, b = 3, c=-2 পাই।
এবার তুমি কি বুদ্ধি খাটিয়ে b = 3 কে এমনভাবে দুইটি সংখ্যায় বিভক্ত করতে পারবে যাদের যোগফল ৩ এবং গুণফল a.c = 2 × (-2) = -4 এর সমান হয়?
দেখো সংখ্যাদুটি 4, -1। তাহলে, আমরা লিখতে পারি,
জোড়ায় কাজ : উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
অনেক সময় ax² + bx + c, [a ≠ 0] আকারের বহুপদী রাশির মধ্যপদকে সুবিধামতোভাবে বিভক্ত করা যায় না। তখন বিভিন্ন বুদ্ধি খাটিয়ে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করতে হয়।
এখানে দ্বিঘাত বহুপদী রাশিটি সরল বহুপদী রাশির মাধ্যমে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। লক্ষ করো যে, b² - 4ac এর মান ঋণাত্মক হলে, অর্থাৎ b² - 4ac < 0 হলে, দ্বিঘাত বহুপদী রাশিটি সরল বহুপদী রাশির মাধ্যমে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যাবে না। এমতাবস্থায়, ax² + bx + c, [a ≠ 0] দ্বিঘাত রাশিটি একটি বাস্তব মৌলিক রাশি। অর্থাৎ ax² + bx + c, [a ≠ 0] রাশিকে বাস্তব মানের সাপেক্ষে আর উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যাবে না।
জোড়ায় কাজ
নিচের বহুপদী রাশিগলোকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যাবে কি না পরীক্ষা করো। যে সকল রাশিকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যাবে তাদেরকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
ঘন এর সূত্র হতে আমরা জানি,
a³ + b³ = (a + b)(a² - ab + b²)
এই সূত্রকে ব্যবহার করে আমরা অনেক বহুপদী ঘনরাশির উৎপাদকে বিশ্লেষণ করতে পারি।
উদাহরণ: x³ + 8y³ কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
সমাধান: x3 + 8y3 = x3 + (2y)3
= (x + 2y)(x²-x.2y + (2y)²)
= (x + 2y)(x² - 2xy + 4y²)
একক কাজ
দুইটি ঘনরাশির যোগফলের সূত্র ব্যবহার করে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
ঘন এর সূত্র হতে আমরা জানি,
a³ - b³ = (ab)(a² + ab + b²)
এই সূত্রকে ব্যবহার করে আমরা অনেক বহুপদী ঘনরাশির উৎপাদকে বিশ্লেষণ করতে পারি।
উদাহরণ: x3- 64y3 কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
সমাধান: x3 - 64y3 = x3 - (4y)3
= (x - 4y)(x2 + x.4y + (4y)2)
= (x - 4y)(x2 + 4xy + 16y2)
একক কাজ
দুইটি ঘনরাশির যোগফলের সূত্র ব্যবহার করে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
[যেখানে p(x) এবং q(x) ≠ 0 বহুপদী রাশি] আকারের রাশিকে বহুপদীর ভগ্নাংশ বা মূলদ ভগ্নাংশ
(Rational Fraction) বলে। বহুপদীর ভগ্নাংশ রাশিকে ব্যবহারের সুবিধার জন্য অনেক সময় একাধিক ভগ্নাংশে বিভক্ত করতে হয়। এই ভাবে একাধিক ভগ্নাংশে বিভক্ত অংশকে আংশিক ভগ্নাংশ বলে।
উদাহরণ: বহুপদীর ভগ্নাংশ রাশি কে দুইটি অংশে বিভক্ত করতে হবে যেখানে হর একঘাতবিশিষ্ট বহুপদী রাশি। তোমরা কী বুদ্ধি খাটিয়ে বের করতে পারবে? যাদের গণনা শক্তি বেশি তারা হয়তো পারবে। লক্ষ করে দেখো,
বহুপদীর ভগ্নাংশ রাশি কে বিভিন্ন পদ্ধতিতে আংশিক ভগ্নাংশে প্রকাশ করা যায়। এটি p(x) এবং q(x) মাত্রার উপর নির্ভর করে।
প্রকৃত ভগ্নাংশে পরিবর্তনের পদ্ধতি
উদাহরণ: কে আংশিক ভগ্নাংশে প্রকাশ করো।
সমাধান: এখানে, p(x) = 3x + 1 এবং q(x) = x² - 1 । q(x) কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করে পাই,
q(x) = (x - 1) (x + 1). লক্ষ করো যে, q(x) এর শুধু একঘাতবিশিষ্ট 2টি উৎপাদক আছে এবং উৎপাদকসমূহের কোনো পুনরাবৃত্তি নাই।
সমাধান: ধরি,
সমাধান: ধরি,
সমাধান: ভাগ পদ্ধতিতে উপরের ভগ্নাংশকে ভাগ করলে ভাগফল ও ভাগশেষ কত হবে বলতো? তোমার উত্তর মিলিয়ে দেখো যে, ভাগফল x এবং ভাগশেষ = -x + 1.
আরও দেখুন...