আইনগত কাঠামো আদেশ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - সত্তরের নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধ | NCTB BOOK
2.6k
Summary

ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ২৮ মার্চ জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে নির্বাচন সংক্রান্ত আইনগত কাঠামো আদেশ ঘোষণা করেন। এই আদেশে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য সংখ্যা, ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া এবং সংবিধান রচনার সময়সীমা উল্লেখ করা হয়।

গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ:

  • পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ভেঙে সাবেক প্রদেশগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে।
  • জাতীয় পরিষদে ৩১৩ আসনের মধ্যে ১৩ জন মহিলা প্রতিনিধি থাকবে, এবং পাঁচটি প্রাদেশিক পরিষদে ৬২১ জন সদস্য থাকবে।
  • এক ব্যক্তি এক ভোট নীতি গ্রহণ করা হয়।
  • ভোটার তালিকা ১৯৭০ সালের জুনে তৈরি হবে।
  • সংবিধান রচনার জন্য ১২০ দিনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, এবং যদি এই সময়সীমার মধ্যে কাজ সমাপ্ত না হয়, তাহলে নতুন নির্বাচন হবে।

আইনগত কাঠামো আদেশের ২০ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংবিধানের মূল ছয়টি নীতি উল্লেখিত হয়েছে:

  1. ফেডারেল পদ্ধতির সরকার।
  2. রাষ্ট্রের ভিত্তি ইসলামি আদর্শ হবে।
  3. জনসংখ্যার অনুপাতে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন।
  4. মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
  5. অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বৈষম্য নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে।
  6. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

ইয়াহিয়া খানের আদেশে একটি দুর্বল পার্লামেন্টের রূপরেখা দেওয়া হয়, যা পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনার কারণ হয়। তারা অগণতান্ত্রিক ধারাসমূহ বাদ দেওয়ার দাবি জানায়।

ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ২৮শে মার্চ জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে নির্বাচন সংক্রান্ত আইনগত কাঠামো আদেশ ঘোষণা করেন । সেখানে তিনি মূলত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য সংখ্যা কত হবে, ভোটদানের প্রক্রিয়া কী হবে, কত দিনের মধ্যে নির্বাচিত পরিষদ সংবিধান রচনা করবে এবং পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য বিশেষ কিছু দিক তুলে ধরেন ।

তার ঘোষণার বিশেষ দিকগুলো ছিল :

  • পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট ভেঙে দিয়ে সাবেক প্রদেশগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে যা ১লা জুলাই ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হবে ।
  • ১৩ জন মহিলা প্রতিনিধি নিয়ে ৩১৩ আসনের জাতীয় পরিষদ হবে, আর ৬২১ জন সদস্য নিয়ে হবে পাঁচটি প্রাদেশিক পরিষদ ।

 

পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের আসন বন্টণ
         অঞ্চল             জাতীয় পরিষদ          প্রাদেশিক পরিষদ
   সাধারণ মহিলা মোট সাধারণ মহিলা মোট
    পূর্ব পাকিস্তান    ১৬২      ৭  ১৬৯    ৩০০     ১০    ৩১০
  পশ্চিম পাকিস্তান    ১৩৮      ৬  ১৪৪    ৩০০     ১১    ৩১১

 

  •  নির্বাচনে এক ব্যক্তি এক ভোট নীতি গ্রহণ করা হয় ।
  • পাকিস্তানের দুই অংশের আইন ও অর্থনীতি বিষয়ক দায়িত্ব এবং ক্ষমতা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নির্ধারণ করবেন।
  •  ভোটার তালিকা ১৯৭০ সালের জুন মাসের মধ্যে তৈরি হবে।
  •  সংবিধান রচনার জন্য পরিষদের প্রথম অধিবেশন থেকে ১২০ দিনের সময় ধার্য করে দেন । এ সময়ের মধ্যে কাজ সমাধা করতে ব্যর্থ হলে পরিষদ ভেঙে নতুন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা হয় । একই সঙ্গে বলা হয়, সংবিধান রচনা এবং সংবিধানকে সত্যায়িতকরণ পর্যন্ত সামরিক শাসন বহাল থাকবে । নির্বাচনের নির্দেশনাবলির পাশাপাশি সংবিধানের ভিত্তি সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ।

 

আইনগত কাঠামো আদেশের ২০ নং ধারায় সংবিধানের মূল ছয়টি নীতি বেঁধে দেয়া হয় । যথা :

ক. ফেডারেল পদ্ধতির সরকার;
খ. ইসলামি আদর্শ হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি;
গ. প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচনে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন;
ঘ. মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে;
ঙ. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিভিন্ন এলাকার অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বৈষম্য দূর করতে হবে;
চ. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে ।

ইয়াহিয়া খানের আইনগত কাঠামো আদেশে মূলত সার্বভৌম পার্লামেন্টের বদলে একটি দুর্বল পার্লামেন্টের রূপরেখা দেওয়া হয় । ফলে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো এর সমালোচনা করে। তারা এ আদেশের অগণতান্ত্রিক ধারাসমূহ বাদ দেওয়ার দাবি জানায় ।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...