Summary
আমরা খোলা জায়গায় আকাশ দেখতে পাই, যা সব জায়গায় একইরকম। দিনে সূর্য আকাশে সোনালী আলো ছড়ায়, এবং আকাশ সাধারণত নীল হয়, যদিও এটি কখনও-কখনও মেঘে ঢেকে যায়। রাতের আকাশ কালো হলেও চাঁদ ও তারারা উজ্জ্বল থাকে।
আগে মানুষ ভাবত আকাশ একটা কঠিন ঢাকনা, কিন্তু আজ আমরা জানি এটি গ্যাস-ভরতি ফাঁকা স্থান। বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন বর্ণহীন গ্যাস, জলীয়বাষ্প, এবং ধূলিকণা রয়েছে। আকাশ নীল দেখায় কারণ গ্যাসের কণাগুলো ছোট আলোর ঢেউ ছড়িয়ে দেয়।
আকাশের রঙ সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় পরিবর্তিত হয়। দিনে সূর্যের আলো সরাসরি আসে, কিন্তু সকালে ও সন্ধ্যায় আলো তেরছাভাবে আসে, যা বেশি ডিফ্রাক্ট করে এবং লাল আলোকে তৈরি করে। ঘন মেঘে বড় কণারা রশ্মিকে আটকায়, ফলে মেঘ কালো দেখায়।
অতীতে বিজ্ঞানীরা বেলুন ও রকেট পাঠিয়ে গবেষণা করতেন, আর এখন মানুষ মহাকাশে গিয়ে চাঁদে পৌঁছেছে। মহাকাশযান থেকে পৃথিবীর ছবি তোলা হচ্ছে এবং আবহাওয়া, কৃষি ও যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

খোলা জায়গায় মাথার ওপরে দিনরাত আমরা আকাশ দেখতে পাই। গাছপালা, নদীনালা দুনিয়ায় কোথাও আছে, কোথাও নেই। এমনকি ঘরবাড়ি, জীবজন্তু, মানুষও সব জায়গায় না থাকতে পারে। কিন্তু আকাশ নেই, ভূপৃষ্ঠে এমন জায়গা কল্পনা করা শক্ত।
দিনের বেলা সোনার থালার মতো সূর্য তার কিরণ ছড়ায় চারপাশে। এমনি সময়ে সচরাচর আকাশ নীল। কখনো সাদা বা কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। ভোরে বা সন্ধ্যায় আকাশের কোনো কোনো অংশে নামে রঙের বন্যা। কখনো-বা সারা আকাশ ভেসে যায় লাল আলোতে। রাতের আকাশ সচরাচর কালো, কিন্তু সেই কালো চাঁদোয়ার গায়ে জ্বলতে থাকে রুপালি চাঁদ আর অসংখ্য ঝকঝকে তারা আর গ্রহ।
আগেকার দিনে লোকে ভাবতো, আকাশটা বুঝি পৃথিবীর ওপর একটা কিছু কঠিন ঢাকনা। কখনো তারা ভাবতো, আকাশটা পরতে পরতে ভাগ করা।
আজ আমরা জানি, আকাশের নীল চাঁদোয়াটা সত্যি সত্যি কঠিন কোনো জিনিসের তৈরি নয়। আসলে এ নিতান্তই গ্যাস-ভরতি ফাঁকা জায়গা। হরহামেশা আমরা যে আকাশ দেখি তা আসলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ঢাকনা। সেই বায়ুমণ্ডলে রয়েছে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এমনি গোটা কুড়ি বর্ণহীন গ্যাসের মিশেল। আর আছে পানির বাষ্প আর ধুলোর কথা।
আকাশ যদি বর্ণহীন গ্যাসের মিশেল, তবে তা নীল দেখায় কেন? মাঝে মাঝে সাদা আর লাল রঙের খেলাই- বা দেখি কী করে? আসলে সাদা মেঘে রয়েছে জলীয়বাষ্প জমে তৈরি অতি ছোট ছোট অসংখ্য পানির কণা। কখনো মেঘে এসব কণার গায়ে বাষ্প জমার ফলে ভারি হয়ে বড় পানির কণা তৈরি হয়। তখন সূর্যের আলো তার ভেতর দিয়ে আসতে পারে না, আর তাই সে মেঘের রং হয় কালো।
কিন্তু সারাটা আকাশ সচরাচর নীল রঙের হয় কী করে? আকাশ নীল দেখায় বায়ুমণ্ডলে নানা গ্যাসের অণু ছড়িয়ে আছে বলে। এইসব গ্যাসের কণা খুব ছোট মাপের আলোর ঢেউ সহজে ঠিকরে ছিটিয়ে দিতে পারে। এই ছোট মাপের আলোর ঢেউগুলোই আমরা দেখি নীল রঙ হিসেবে। অর্থাৎ পৃথিবীর ওপর হাওয়ার স্তর আছে বলেই পৃথিবীতে আকাশকে নীল দেখায়।
সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় আকাশের রঙ হুবহু এক রকম থাকে না। এরও কারণ হলো পৃথিবীর ওপরকার বায়ুমণ্ডল। সূর্য থেকে যে আলো আমাদের চোখে পড়ে, তাকে পৃথিবীর ওপরকার বিশাল হাওয়ার স্তর পেরিয়ে আসতে হয়। দুপুর বেলা এই আলো আসে সরাসরি অর্থাৎ প্রায় লম্বভাবে হাওয়ার স্তর ফুঁড়ে। কিন্তু সকালে বা সন্ধ্যায় এই আলো আসে তেরছাভাবে হাওয়ার স্তর পেরিয়ে। তাতে আলোকে হাওয়ার কণা ডিঙাতে হয় দুপুরের তুলনায় অনেক বেশি।
সকালে বা সন্ধ্যায় মেঘ আর হাওয়ার ধুলোর কণার ভেতর দিয়ে লম্বা পথ পেরিয়ে আসতে পারে শুধু সূর্যের লাল আলোর ঢেউগুলো। সে মেঘকে তখন দেখায় লাল। ঘন বৃষ্টি-মেঘের বড় বড় কণারা যখন আকাশ ছেয়ে ফেলে, তখন তার ভেতর দিয়ে আলো পেরিয়ে আসতে পারে না, তাই সে মেঘকে দেখায় কালো।
আগেকার দিনে আমাদের ওপরকার আকাশ নিয়ে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন শূন্যে বেলুন পাঠিয়ে বা যন্ত্রপাতিসুদ্ধ রকেট পাঠিয়ে। আজ মানুষ নিজেই মহাকাশযানে চেপে সফর করছে পৃথিবীর উপরে বহু দূর পর্যন্ত। পৃথিবী ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে চাঁদে। পৃথিবীর উপর দেড়শ দুশ মাইল বা তারো অনেক বেশি উপর দিয়ে ঘুরছে অসংখ্য মহাকাশযান। যেখান দিয়ে ঘুরছে সেখানে হাওয়া নেই বললেই চলে।
মহাকাশযান থেকে দিনরাত তোলা হচ্ছে পৃথিবীর ছবি। জানা যাচ্ছে কোথায় কখন আবহাওয়া কেমন হবে, কোন দেশে কেমন ফসল হচ্ছে। মহাকাশযান থেকে ঠিকরে দেওয়া হচ্ছে টেলিফোন আর টেলিভিশনের সংকেত। তাই দূরদেশের সঙ্গে যোগাযোগ আজ অনেক সহজ হয়ে উঠেছে ।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
ভূপৃষ্ঠ - পৃথিবীর উপরের অংশ।
সচরাচর - সাধারণত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। প্রায়শ।
চাঁদোয়া - শামিয়ানা। কাপড়ের ছাউনি।
পরতে পরতে - স্তরে স্তরে। ভাঁজে ভাঁজে।
কণা - বস্তুর অতি সূক্ষ্ম বা ক্ষুদ্র অংশ।
হরহামেশা - সবসময়। সর্বদা।
বায়ুমণ্ডল - পৃথিবীর উপরে যতদূর পর্যন্ত বাতাস রয়েছে।
নাইট্রোজেন - বর্ণ ও গন্ধ নেই এমন একটি মৌলিক গ্যাস, বাতাসের প্রধান উপাদান।
অক্সিজেন - জীবের প্রাণ বাঁচানো ও আগুন জ্বালানোর জন্য দরকারি বর্ণহীন, স্বাদহীন, গন্ধহীন মৌলিক গ্যাস।
কার্বন ডাই অক্সাইড - কার্বন পুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। প্রাণীর নিশ্বাসের সঙ্গে বের হওয়া বর্ণগন্ধহীন গ্যাস।
মিশেল - বিভিন্ন বস্তুর মিলন। মিশ্রণ।
জলীয়বাষ্প - পানির বায়বীয় অবস্থা।
ঠিকরে - ছিটকে। ছড়িয়ে।
হুবহু - অবিকল। একেবারে একই রকম।
স্তর - একের ওপর আর এক-এমনিভাবে সাজানো। ধাপ।
লম্বভাবে - খাড়াভাবে।
ফুঁড়ে - ভেদ করে।
তেরছা - বাঁকা। আড়। হেলানো।
রকেট - গ্রহে-উপগ্রহে যেতে পারে এমন মহাকাশযান।
মহাকাশযান - মহাকাশে যাতায়াতের বাহন।
সংকেত - ইঙ্গিত। ইশারা।
এক সময় আকাশকে মনে করা হতো মানুষের মাথার উপরে বিশাল একটি ঢাকনা বলে। আসলে আকাশ কোনো ঢাকনা নয়। এ হচ্ছে বায়ুর স্তর। বাতাসে প্রায় বিশটি বর্ণহীন গ্যাস মিশে আছে। বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের অণু ছড়িয়ে আছে বলে আকাশ নীল দেখায়। সকাল বা সন্ধ্যায় মেঘ ও বাতাসের ধুলোকণার মধ্যে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারে শুধু সূর্যের লাল আলো। তাই এ সময় মেঘ লাল দেখায়। ঘন বৃষ্টি ও মেঘে ছেয়ে ফেললে আকাশ দেখার কালো। শূন্যে মহাকাশযান পাঠিয়ে বিজ্ঞানীরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। পৃথিবীর অন্তত কয়েক শ' মাইল ওপর দিয়ে পাঠানো মহাকাশযান থেকে প্রেরিত অসংখ্য ফটো বা ভিডিও থেকে মানুষ আবহাওয়ার খবর পাচ্ছে। একই কারণে টেলিভিশন, টেলিফোন, মোবাইল ফোন ইত্যাদিতে সংকেত পাঠিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করা সম্ভব হয়েছে।
শিশুদের জন্য বিজ্ঞানবিষয়ক সাহিত্য রচনা করে আবদুল্লাহ আল-মুতী বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার ফুলবাড়িতে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। বিজ্ঞানের অনেক জটিল রহস্যময় অজানা দিককে তিনি আকর্ষণীয় ও সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন।
ছোটদের জন্যে তাঁর লেখা বইগুলো হচ্ছে: 'এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে', 'অবাক পৃথিবী', 'আবিষ্কারের নেশায়', 'রহস্যের শেষ নেই', 'জানা অজানার দেশে', 'সাগরের রহস্যপুরী', 'আয় বৃষ্টি বোঁপে', 'ফুলের জন্য ভালোবাসা' ইত্যাদি।
সাহিত্য রচনা ও বিজ্ঞান সাধনার জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ইউনেসকো আন্তর্জাতিক কলিঙ্গ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ১৯৯৮ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
১. এসো শিক্ষার্থীরা, আমরা স্কুলে আসা দৈনিক পত্রিকার সাপ্তাহিক বিজ্ঞান পাতাগুলো সংগ্রহ করি। তারপর পাতাগুলোর কয়েকটি বিষয় আমরা দলে ভাগ হয়ে পাঠ করি। পঠিত বিষয়ে আমাদের জ্ঞান ও ধারণা শ্রেণিকক্ষে দলীয়ভাবে পোস্টার পেপারের মাধ্যমে উপস্থাপন করি।