ঘরবাড়ি, দালানকোঠা, ব্রিজ, বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ ইত্যাদির নকশা যিনি তৈরি করেন ও কাজটি সঠিকভাবে হচ্ছে কি না খেয়াল রাখেন তাদেরই আমরা স্থপতি বলি। যেমন- শহিদ মিনার, সংসদভবন, স্মৃতিসৌধ, পদ্মা সেতু ইত্যাদি আমাদের দেশের এক একটি স্থাপনা, যা বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে পরিচিতি এনে দিয়েছে। স্থপতিরা এগুলোর নকশা তৈরি করেছেন এবং এগুলো সঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে কি না খেয়াল রেখেছেন। তাহলে বুঝতেই পারছি ‘স্থপতি’ তার নির্মাণ দক্ষতা,জ্ঞান, বুদ্ধি ও সৃজনশীল চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে এক একটি চমৎকার স্থাপনা তৈরি করেন।
এই অধ্যায়ে স্থপতিদের নিয়ে কথা বলা হচ্ছে কারণ আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু আমাদের নিজেদের জীবন ও ব্যক্তিত্ব গড়ার এক একজন স্থপতি। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেও রয়েছে একটি করে ম্যাজিক বক্স (magic box), যার ভেতরে রয়েছে কিছু গুণ বা সুপার পাওয়ার (super power)। আমরা আমাদের জীবনে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই সুপার পাওয়ারগুলিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকি। এছাড়াও নতুন নতুন সুপার পাওয়ার আবিষ্কার করে সুন্দর ও নান্দনিক জীবন গড়ি। এই অধ্যায়ে আমরা আমাদের সুপার পাওয়ার আবিষ্কার করব যা আমাদের জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যা বা পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। যেমন- রেগে গিয়ে কোনো অঘটন না ঘটিয়ে ফেলা, ভয় পেয়ে কোনো ভালো কাজ থেকে নিজেকে বিরত না রাখা, দুঃখ/কষ্ট পেলে তার ব্যবস্থাপনা করা ইত্যাদি। অর্থাৎ একজন স্থপতি যেমন তার নলেজ বক্সকে ব্যবহার করে নির্মাণ কাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে, তেমনি আমরাও আমাদের ম্যাজিক বক্স থেকে সুপার পাওয়ার বের করে বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলা করব।
কোন কোন পরিস্থিতিতে নিজের সুপার পাওয়ারগুলো ব্যবহার করব
আমরা কি কখনো কোনো মানুষকে রেগে যেতে বা ভয় পেতে দেখেছি? অথবা কোনো বন্ধু খেলায় জিততে না পারলে মন খারাপ করতে দেখেছি? অন্যদের মতো আমাদেরও রাগ, ভয় ও মন খারাপ হয়। তখন আমরা কী করি? এই অধ্যায়ে আমরা নিজেদের ও বন্ধুদের জীবনের সেইসব অভিজ্ঞতার কথা বলব ও শুনব। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বন্ধুরা তাদের যে সুপার পাওয়ার গুলো ব্যবহার করে তাদের ‘রাগ ও ভয়’ এর পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে তা থেকে ধারণা নেব। ভবিষ্যতে আমার জীবনে এধরনের পরিস্থিতি ঘটলে তা মোকাবিলা করার জন্য যে সুপার পাওয়ারগুলো ব্যবহার করতে পারি তা আবিষ্কার করব। আমার নিজস্ব ম্যাজিক বক্সটি আমার জানা সুপার পাওয়ারগুলোর পাশাপাশি আরও নতুন সুপার পাওয়ার দিয়ে পূর্ণ করব। এর ফলে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সঠিক ও উপযোগী সুপার পাওয়ার ব্যবহার করতে পারব।
তবে ম্যাজিক বক্সটি সুপার পাওয়ার দিয়ে পূর্ণ করার জন্য আমাদের বেশকিছু কাজ করতে হবে । যে যত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করব সে তত ভালোভাবে ম্যাজিক বক্সটি সুপার পাওয়ার দিয়ে পূর্ণ করতে পারব। আমরা কি চাই আমাদের কাছে এমন একটি ম্যাজিক বক্স থাকুক, যা দিয়ে আমরা আমাদের জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলা করব এবং অন্যকে সহায়তা করব? তাহলে এবার সুপার পাওয়ারগুলো খুঁজে বের করি আর আমাদের নিজস্ব ম্যাজিক বক্সটি সমৃদ্ধ করি।
ম্যাজিক বক্সের সুপার পাওয়ারগুলো পাওয়ার জন্য আগামী কয়েকদিন নিজেদের বিভিন্ন অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করব। এজন্য বিভিন্ন মানুষের সাক্ষাৎকার নেব। বোঝার চেষ্টা করব রাগ, দুঃখ, ভয় ও মানসিক চাপ-এর সময় তারা কী আচরণ করে, কীভাবে করে, তাদের অনুভূতির প্রকাশগুলো কেমন হয় । নিচে কিছু অনুভূতির ছবি ও নাম এলোমেলাভাবে দেওয়া আছে, নাম দেখে সঠিক অনুভূতিগুলো খুজে বের করি ও দাগ টেনে মিলিয়ে নিই-
বিশেষ বার্তা এই অধ্যায়ে আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত ঘটনা বা অনুভূতির কথা আলোচনা করব, বন্ধুদের কথা শুনব। সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় অন্যদের কাছ থেকে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা জানব। এ ধরনের আলোচনা করতে গিয়ে অনেক সময় মন খারাপ হতে পারে, যা খুবই স্বাভাবিক। সেজন্য আমাদের কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে, তা হলো - • আমরা যেন প্রত্যেকের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতি রেখে কথা বলি। • অন্যের ব্যক্তিগত ঘটনাগুলো নিয়ে যেন পরবর্তীতে হাসাহাসি না করি বা খাটো করে কথা না বলি। • কেউ বিশ্বাস করে কিছু বললে সেটা যেন অন্য কাউকে বলে না দিই। • কেউ ব্যক্তিগত কোনো কথা বলতে না চাইলে তা শোনার জন্য জোর না করি ওপরের চারটি পয়েন্টই হলো এক একটি সুপার পাওয়ার। নিজেকে সমাজের একজন দায়িত্বশীল ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এইসব সুপার পাওয়ার থাকা অপরিহার্য। নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যে - ওপরের চারটি বিষয় মেনে চলব। |
সাক্ষাৎকার শুরু করার আগে নিচের বিশেষ বার্তাটি একটু পড়ে নেব :
মানসিক চাপ ও ভয়
প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছু ঘটনা ঘটে যখন তার মানসিক চাপ ও ভয় হয়। ফলে কোনো কাজ সঠিকভাবে করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আবার দেখা যায় ভয় পেয়ে আমরা অনেক কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখছি, যা হয়তো আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ । নিচে যে ঘরটি দেওয়া আছে সেখানে ‘আমার মানসিক চাপ ও ভয়ের পরিস্থিতিগুলো লিখি এবং সেসব মুহূর্তে আমি কী করি সেটাও উল্লেখ করি :
আমার মানসিক চাপ ও ভয়ের অভিজ্ঞতা |
---|
কোন কোন বিষয়ে বা পরিস্থিতিতে আমার মানসিক চাপ ও ভয় হয় :
|
যখন মানসিক চাপ ও ভয় হয় তখন আমি কী করি
|
মানসিক চাপ ও ভয় বিষয়ক একক কাজ
নিজের মানসিক চাপ ও ভয়ের বিষয়গুলো দেখে নিলাম। এবার বন্ধু ও কাছের কিছু মানুষদের সাথে কথা বলে জেনে নিই তাদের মানসিক চাপ ও ভয়ের অভিজ্ঞতা ও এমন পরিস্থিতিতে তারা কী করে ।
নিচের ঘর দুটিতে বন্ধু ও কাছের কিছু মানুষদের মানসিক চাপ ও ভয়ের অভিজ্ঞতাগুলো লিখি
মানসিক চাপ ও ভয়ের অভিজ্ঞতা | মানসিক চাপ ও ভয় হলে তারা কী করে |
---|---|
তারা কখন মানসিক চাপ অনুভব করে?
| মানসিক চাপ হলে তারা কী করে?
|
তারা কখন ভয় অনুভব করে?
| ভয় হলে তারা কী করে?
|
ওপরের ছকটি পূরণ করার মাধ্যমে আমরা জানলাম যে, মানসিক চাপ ও ভয়ের পরিস্থিতিতে তারা কী কী করে। এবার আমরা আরও একটি অনুভূতির বিষয়ে জানব।
রাগ
এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন যার কখনো রাগ হয়নি। রাগ প্রকাশের অনেক ধরন আছে। যেমন : কেউ রেগে গিয়ে কাঁদে, কেউ চুপ করে থাকে, কেউ বা চিৎকার, ভাঙচুর কিংবা নিজের বা অন্যের ক্ষতি হয় এমন আচরণ করে ইত্যাদি। অর্থাৎ মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে রাগ প্রকাশ করে। এবার নিচের ঘরে – ‘কেউ রেগে আছে তা আমি কীভাবে বুঝি' সে বিষয়ে লিখি। তখন আমি কী করি সেটাও লিখি।
কেউ রেগে আছে তা আমি কীভাবে বুঝি | তখন আমি কী করি |
---|---|
|
|
আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছি যে অধ্যায়ের এই অংশে ‘রাগ ও রাগ হলে আমরা কী করি' নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অন্যদের রাগ তাদের আচরণ দেখে বুঝতে পারি এবং সে পরিস্থিতিতে আমার আচরণের ধরনও এখন আমি জেনেছি। এবার তাহলে আমার নিজের রাগ সম্পর্কে জেনে নিই। কোন কোন ঘটনা বা পরিস্থিতিতে আমি রেগে যাই এবং তখন আমি কী করি—সে বিষয়ে নিচের ছকটিতে লিখে নিই -
আমার রাগের অভিজ্ঞতা | ||
রাগের ঘটনা বা পরিস্থিতি | কীভাবে রাগ প্রকাশ করি | আমি যেভাবে রাগ প্রকাশ করি, তা নিয়ে কি আমি সন্তুষ্ট? এতে কি আমার সমস্যার সমাধান হয়? |
|
|
|
ওপরের ছকটি পূরণ করার মাধ্যমে আমি দেখে নিলাম আমার রাগের ধরন বা বহিঃপ্রকাশ কেমন। এবার আমি তিনজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেব সাংবাদিকদের মতো করে আর জানব তাদের অভিজ্ঞতা। প্ৰথমে আমার পাশে বসে থাকা বন্ধুর কাছ থেকে জানব তার রাগের বহিঃপ্রকাশ নিয়ে-
সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ করে আমরা জানতে পারলাম যে একটা মানুষ কোন কোন পরিস্থিতেতে রেগে যায় এবং কেমন আচরণ করে। রাগের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আরও ধারণা পাওয়ার জন্য শ্রেণিকক্ষের সহপাঠীদের কাছ থেকে জেনে নিই তাদের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে। তারা কী কী তথ্য পেয়েছে সেগুলো জেনে নিই এবং নিচের ছকটিতে রাগের বহিঃপ্রকাশ নিয়ে লিখি
রাগের অভিজ্ঞতা ও আচরণ | |
---|---|
রাগের অভিজ্ঞতা | আচরণ |
|
ওপরের ছকটি পূরণ করে আমরা রাগের বিভিন্ন পরিস্থিতি ও কী কী উপায়ে তারা রাগের প্রকাশ করে সে বিষয়ে জানলাম। এবার আমরা দুঃখ সম্পর্কে জানব।
কখন কী এমন হয়েছে আমরা কোনো কারণে কষ্ট পেয়েছি অথবা কাউকে কষ্ট পেতে দেখেছি? এমন কি হয়েছে আমার কোনো আচরণে কেউ কষ্ট পেয়েছে? এই অধ্যায়টি যেহেতু নিজেকে গড়ে নেওয়ার একটি অধ্যায়, তাই আমি আমার সুপার পাওয়ারগুলো জানব এবং ফলপ্রসূভাবে কাজে লাগাব যেনো যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। এধরনের অভিজ্ঞতা আলোচনা করতে গিয়ে কিছুটা মন খারাপ হলেও এই আলোচনাটা জরুরি। কারণ এর মাধ্যমে জানা যাবে দুঃখ বা কষ্টের কারণ কী এবং কীভাবে এর ফলপ্রসূ ব্যবস্থাপনা করা যায়। নিচে দুঃখ-কষ্ট নিয়ে চারটি কেস বা ঘটনা দেওয়া আছে। শ্রেণিকক্ষে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে নিজেদের মতামত দিই।
কেস ১ আনন্দপুর উচ্চবিদ্যালয়ের বার্ষিক দাবা প্রতিযোগিতার ফাইনালে সপ্তম শ্রেণির দুজন শিক্ষার্থী ‘ক’ এবং ‘খ’ মুখোমুখি হয়। দুজনেই প্রতিযোগিতার প্রতিটি ম্যাচ দাপটের সাথে জয়লাভ করে ফাইনালে নিজেদের জায়গা করে নেয়। ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ‘ক’জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, ‘ক’ ও তার বন্ধুরা প্রায়ই ‘খ’ এর সাথে সকলের সামনে এটি নিয়ে ঠাট্টা করে। সময়-অসময়ে ‘খ” এর সামনে গিয়ে হাসাহাসি ও করে। শুধু তাই নয়, তারা স্কুলের দেয়ালে ‘খ’ কে বিদ্রূপ করে নানা কথা লিখে রাখব। এতে ‘খ’ প্রচণ্ড কষ্ট পায়, কারণ ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে দাবাড়ু হওয়ার এবং নিজের দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনার। কিন্তু সহপাঠীর বিপক্ষে পরাজিত হয়ে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। সে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয় এবং দুঃখে নিজের দাবার সেট ভেঙে ফেলে। পরিবারের লোকজন বিষয়টি লক্ষ করেন। পরবর্তীতে তার অভিভাবকেরা বিদ্যালয় পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন। |
প্রশ্ন : ‘ক’ ও তার বন্ধুরা যে আচরণ করেছিল তুমি কি তার সাথে একমত, নাকি একমত নও? কেন? |
|
প্রশ্ন : তুমি ‘খ’ এর জায়গায় থাকলে কী করতে ? |
|
কেস ২ রহিম ও করিম একে অপরের ভালো বন্ধু। বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দলের সাথে যুক্ত থাকায় রহিম নাচে ও গানে পারদর্শী হয়ে ওঠে। বিদ্যালয়ের সকলের কাছে সে পরিচিত মুখ। রহিম এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে করিম এ ধরনের কোনোসাংস্কৃতিক কার্যক্রমে নিজেকে যুক্ত না করায় সে এসবের থেকে পিছিয়ে পড়ে। করিমের অন্য কোনো বন্ধু না থাকায় করিম নিজেকে বন্ধুহীন মনে করে এবং রহিমের প্রতি তার একধরনের অভিমান তৈরি হয়। সে রহিমের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে। মাঝে মাঝে রহিমের সাথে নিজের অজান্তেই দুর্ব্যবহার করে বসে এবং ওর সাথে আর বন্ধুত্ব রাখবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় । |
প্রশ্ন : রহিমের প্রতি করিমের আচরণকে তুমি কীভাবে দেখছ? |
|
প্রশ্ন : তুমি করিমের জায়গায় থাকলে কী করতে? |
|
কেস ৩ ফাতিমা গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে নানার বাড়ি বেড়াতে যায়। সেখানে তার মামা তাকে একটি টিয়া পাখি উপহার দেন। প্রথমে সে পাখিটির প্রতি আকৃষ্ট না হলেও দিনকে দিন পাখিটি তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে ওঠে। দিনের অধিকাংশ সময় সে পাখিটির সাথে কাটায়। পাখিটির খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে গোসল করানো, কথা শেখানো সবকিছুই সে দেখাশোনা করতে শুরু করে। পাখিটিকে নিয়ে ফাতিমা অনেক পরিকল্পনা করে- পাখির জন্য সুন্দর খাঁচা বানাবে, তাকে নিজের বাসায় নিয়ে যাবে, বন্ধু-বান্ধবদের দেখাবে আরও কত কি! হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে যে পাখিটি মারা গেছে। এই বিষয়টি কোনোভাবেই সে মানতে পারে না, অনেক কান্নাকাটি করে, এমনকি খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে সে নিজের রুমে বসে থাকে। কারও সাথে কথাবার্তা বলে না। তার বাবা তাকে আরেকটি টিয়া পাখি এনে দেন। কিন্তু তারপরেও সে মন খারাপ করে অন্যমনস্ক হয়ে থাকে। |
প্রশ্ন : ফাতিমা কেন পাখিটির মুত্যু মেনে নিতে পারছিল না? |
|
প্রশ্ন : এমন তিনটি পরিস্থিতির কথা লিখি যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। |
|
কেস ৪ মনিকা গোমেজ প্রতিদিন বিদ্যালয়ে হেঁটেহেঁটে যাতায়াত করে। একদিন সে তার বাবার কাছে একটি সাইকেলের বায়না ধরল। তার বাবা তাকে বললেন, যদি সে এবার বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে পাস করে, তবেই তাকে সাইকেল কিনে দেবেন। মনিকা তো বেশ খুশি। সে বরাবরই ভালো ছাত্রী। সে খুব উৎসাহ নিয়েই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্টের দিন দেখা গেল তার ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। রেজাল্ট আশানুরূপ না হওয়া সত্ত্বেও বাবা তার জন্য সাইকেল কিনে আনলেন। তবু তাকে খুশি দেখা গেলনা। সে দিনকে দিন পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে যেতে লাগলো। তার মনে হতে লাগল- সে আর কখনওই ভালো কিছু করতে পারবে না। মনিকা সারাদিন নিজের ঘরে থাকা শুরু করল, সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল, এমনকি কষ্ট পেয়ে সে নিজের পছন্দের কাজগুলো করা বা পছন্দের জিনিসগুলো নিয়ে খেলা বন্ধ করে দিল। |
প্রশ্ন : মনিকার এই আচরণ কি তাকে ভবিষ্যতে ভালো ফল এনে দেবে ? |
|
প্রশ্ন : তুমি মনিকার জায়গায় থাকলে কী করতে? |
|
এই ঘটনাগুলোর মতো ঘটনা হয়তো আমরাও শুনেছি। এ ধরনের ঘটনা হয়তো আমাদের সাথে হয়েছে বা আমরা অন্যের সাথে হতে দেখেছি। আমাদের জীবনেও কিছু না কিছু ঘটনা আছে, যা এখনো আমাদের কষ্ট দেয় বা সেসব কথা মনে করে আমি দুঃখ পেয়েছি। এবার নিচের ‘আমার দুঃখের অভিজ্ঞতা' নামক ছকটিতে আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যবস্থাপনা নিয়ে লিখি। এই বিষয়ে লিখতে গিয়ে হয়তো মন খারাপ হতে পারে। তবে আমি যেহেতু সেসব সময় পার করে এসেছি তাই আমার ভেতর একটি সুপার পাওয়ার আছে যে ‘আমি পারি’। তাহলে শুরু করা যাক -
দুঃখ/কষ্টের অভিজ্ঞতা ও ব্যবস্থাপনা | |
---|---|
দুঃখ/কষ্টের অভিজ্ঞতা | এ পরিস্থিতিতে কী করেছি |
|
|
নিজের কষ্টের বা দুঃখের অনুভূতির কথা মনে করে হয়তো আমাদের খারাপ লাগছে। তবে আমরা যেন ভুলে না যাই যে, আমরা সেই পরিস্থিতিগুলোর মোকাবিলা করেছি। সেজন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিই। সুখ- দুঃখ মিলিয়েই মানুষের জীবন এবং আমাদের ভেতরের সুপার পাওয়ারগুলো দিয়ে জীবনের কঠিন সময়কে ফলপ্রসূভাবে মোকাবিলা করতে পারব।
পরিস্থিতির মোকাবিলার ফলপ্রসূ দক্ষতা
আমরা মানসিক চাপ ও চার ধরনের অনুভূতি এবং এর মোকাবিলায় আমাদের ও অন্যদের কাজগুলো সম্পর্কে জানলাম। কোনো পরিস্থিতি বা ঘটনা মোকাবিলায় আমরা খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা (coping skills) ব্যবহার করি। আমরা জেনে বা না জেনে বিভিন্নভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে থাকি। অনেকসময় আমরা এমনভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলায় এমন আচরণ করে ফেলি, যা হয়তো আমার জন্য ভালো নয়। এবার আমরা দলে ভাগ হয়ে একটা খেলা খেলব যেখানে এই সব অনুভূতির ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উদাহরণ দেওয়া আছে। আমরা কোন কাজ বা উপায়গুলো স্বাস্থ্যকর (healthy) এবং কোন কাজ বা উপায়গুলো স্বাস্থ্যকর নয় (unhealthy) সেগুলোকে আলাদা করা।
মানসিক চাপ,ভয়, রাগ ও দুঃখের পরিস্থিতিতে অনুভূতির যত্ন নিয়ে নিজের ইতিবাচক, কার্যকর কাজ বা কৌশলগুলোকে অব্যাহত রাখা এবং নেতিবাচক ও অকার্যকর কাজ বা কৌশলগুলোর পরিবর্তে ইতিবাচক, কার্যকর কাজ বা কৌশল নির্বাচন করে তার ব্যবহার করাই হল ব্যবস্থাপনা।
পরিস্থিতি মোকাবিলার উদাহরণ |
নিজের সাথে ইতিবাচক কথাবার্তা বলা, বই পড়া, অপরকে অপমান করা, ছবি আঁকা, অন্যদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া, প্রতিশোধ নেওয়া, সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে কথা বলা, চেঁচামেচি করা, খেলাধুলা করা, প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো, হাঁটতে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘুমানো, গান শোনা, স্বেচ্ছাসেবক | হিসেবে কাজ করা, মাদকসেবন করা, গভীর নিঃশ্বাস নেওয়া, শরীরচর্চা করা, অন্যের সাথে দুর্ব্যবহার করা, অতিরক্ত/কম খাওয়া, অপরকে হুমকি দেওয়া, নিজের অনুভূতির প্রকাশ করা। |
ওপরের খেলার মাধ্যমে আমরা জানলাম ‘পরিস্থিতি মোকাবিলার ফলপ্রসূ দক্ষতা' সম্পর্কে। আমরা নিজেরা, বন্ধুরা এবং যাদের সাক্ষাতকার নিয়েছি. সবাই মানসিক চাপ, ভয়, রাগ ও দুঃখের পরিস্থিতিতে যে কাজগুলো করেছি এগুলোর মধ্যে কোন কোন কাজগুলো ইতিবাচক ও কার্যকর তা খুঁজে বের করেছি। এবার ভবিষ্যতের কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কোন দক্ষতাগুলো আমাকে সহায়তা করবে তার একটা পরিকল্পনা করি। এই এক একটি দক্ষতা হলো এক একটি সুপার পাওয়ার। এইসব সুপার পাওয়ার যদি আমার ম্যাজিক বক্সে থাকে তাহলে জীবনের যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি আমরা স্বাস্থ্যকর উপায়ে মোকাবিলা করতে পারবে। এই সুপার পাওয়ারগুলো আমাদের সহায়তা করবে নিজের জীবনকে সঠিক উপায়ে গড়ে তুলতে ও আত্মবিশ্বাসী মানুষের মতো সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ।
নিজের সুপার পাওয়ারগুলো বেছে নিই
ভবিষ্যতের অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমার সুপার পাওয়ারগুলো বাছাই করি। সুপার পাওয়ারগুলো নিচের ম্যাজিক বক্সে লিখি। নিজের ও অন্যের সহায়তায় যেকোনো সময় আমি ম্যাজিক বক্স থেকে সুপার পাওয়ারগুলো ব্যবহার করব।
এই ম্যাজিক বক্সটি সবসময় আমার সাথে থাকবে। যখনই আমার সাথে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা, ঘটবে আমি আমার সুপার পাওয়ারগুলো কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করব।
আমার সুপার পাওয়ারগুলো ব্যবহার বা চর্চার পরিকল্পনা
নিচের ছকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কোন সুপার পাওয়ার ব্যবহার করে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করব তার একটি তালিকা করি।
পরিস্থিতি বা ঘটনা | কোন সুপার পাওয়ার ব্যবহার করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করব | সুপার পাওয়ার ব্যবহারে আমার অনুভূতি কী হতে পারে |
---|---|---|
মানসিক চাপ ও ভয় | ||
রাগ | ||
দুঃখ-কষ্ট |
একজন দক্ষ স্থপতি যেমন তার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর সুন্দর স্থাপনা তৈরি করে, তেমনি আমিও আমার সুপার পাওয়ারগুলো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করে নিজের জীবন গড়ে তুলব। নিজের ও সমাজের কল্যাণে নিয়োজিত থাকব। সুপার পাওয়ার চর্চার যে পরিকল্পনা করেছি, বছরজুড়ে সেই অনুযায়ী কাজগুলো করব। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ বা চর্চাগুলো ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করব। নির্দিষ্ট সময় পরপর কাজের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষককে দেখিয়ে নেব। পাশাপাশি শিক্ষক নির্দিষ্ট সময় পরপর আমাদের সাথে শ্রেণিতে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। এভাবে চর্চা এবং মতবিনিময় বছরজুড়ে চলবে।
নিজের চর্চাগুলো ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করব এবং প্রতিফলন লেখার সময় নিচের প্রশ্নগুলোর আলোকে লিখব।
• গত এক মাসে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী কী কী কাজকরেছি?
• কাজগুলো করতে কেমন লেগেছে?
• কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি কি? হয়ে থাকলে কীভাবে তা মোকাবিলা করেছি?
• শিক্ষক বা পরিবারের কাছে কি আমার কোনো সাহায্য দরকার? তা কী?
আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন
নিচের ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণ করবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমার অগ্রগতি সম্পর্কে আমি ধারণা লাভ করব। আমি নিজে আমাকে উৎসাহ দেব এবং কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। আমার অভিভাবক ও শিক্ষক আমাকে স্বীকৃতি দেবেন। কী ভালো করেছি এবং কীভাবে আরও ভালো করতে পারি সে ইউপায় জানাবেন। এর মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি সম্পর্কে শিক্ষক ধারণা দেবেন। কীভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আরও ভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন।
শিখন কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে আমার কাজগুলো মান অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে তারকা বা স্টার দিয়ে মূল্যায়ন করবেন।
Read more