বজ্রপাতের ঠিক আগের মুহুর্তের আলোর ঝলকানি (Lightning) এর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। তোমরা অনেকেই হয়ত বজ্রপাতের ফলে পুড়ে যাওয়া গাছ দেখেছ। বাস্তুবিদ্যুতের কারণে সারাবিশ্বে মানুষ, আশী, গাছপালা, বাড়ি ও পাতি গ্রস্থ হয়। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার (The National Aeronautics and Space Administration) ২০১৪ সালের কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে এপ্রিল-মে মাসে ব্রহ্মপুত্র নদ এলাকার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়। সুতরাং আমাদের দেশে বজ্রবিদ্যুতের কলকানি বা লাইটনিং এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তোমরা কি জানো লাইটনিং এর থেকে মানুষজন ও বৈদ্যুতিক বা পাতিকে রক্ষা করতে হলে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
মেষে সৃষ্ট উচ্চ বিভবের কারণে সংগটিত ইলেকট্রিক ডিসচার্জের ফলে লাইটনিং সৃষ্টি হয়। পাওয়ার লাইনের উচ্চ বিভব পার্থক্যের দুইটি তার বা উচ্চ ভোটেজ ব্যবহার করা হয় এমন যন্ত্রের সাথে নিম্ন ভোল্টেজের কোন কিছুর শর্ট সার্কিট ঘটলেও কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়া বা এসব জায়গায় স্পর্শ ঘটলে মানুষের শরীর বিদ্যুতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব বিপদ ও সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হলো অনাকাঙ্ক্ষি উচ্চবিভব বা কারেন্টকে তার বা অন্য কোনো পরিবাহীর মাধ্যমে মাটির অভ্যন্তরে পাঠিয়ে সেরা। এ ব্যবস্থাকে আর্থিং' (Earthing) বা গ্রাউন্ডিং' (Grounding) বলে। আর্থিং এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক স্থাপনা বা সরঞ্জামের ধাতব অংশগুলোকে মাটির সাথে ইলেকট্রিক্যালি সংযুক্ত করা হয়। আর্থ লিকেজ কারেন্টের জন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের বড়ি বা ফ্রেম ইলেকট্রিক চার্জপ্রাপ্ত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় কোন মানুষ বা প্রাণী এগুলোর সংস্পর্শে এলে ভীষণভাবে তড়িতাহত হয়। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি আর্থ করার ফলে দুর্বল ইনসুলেশনের জন্য বা অন্য কোনো কারণে কারেন্ট লিকেজ হলে তা সরাসরি মাটিতে চলে গিয়ে সরঞ্জাম ও ব্যবহারকারীকে নিরাপদ রাখে। এই অধ্যায়ে আর্থিং সিস্টেম, লাইটনিং অ্যারেস্টার ও আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার এর গঠন, কার্যপ্রণালি, প্রয়োজনীয়তা এবং স্থাপন ( Installation) ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এই অধ্যায় শেষে আমরা-
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আর্থিং সিস্টেম স্থাপন কাজের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারব ;
২. প্রয়োজনীয় টুলস, ইকুইপমেন্ট ও অন্যান্য সরঞ্জাম নির্বাচন ও সংগ্রহ করতে পারব;
৩. আর্থিং সিস্টেম ইনস্টল করতে পারব;
৪. আর্থ টেস্টার দিয়ে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করতে পারব; ৫. আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার ইনস্টল করতে পারব;
৬. লাইটনিং অ্যারেস্টার ইনস্টল করতে পারব;
৭. টুলস, ম্যাটেরিয়াল ও অন্যান্য ইকুইপমেন্ট রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারব; এই শিখনফলগুলো অর্জনের জন্য তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক প্রয়োগের দক্ষতা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য এই অধ্যায়ে আমরা নিম্নলিখিত ৪টি জব সম্পন্ন করব:
জব-১: আর্থিং সিস্টেম ইনস্টল
জব-২: আর্থিং সিস্টেমের আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ; জব-৩: আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার ইনস্টল;
জব-৪: লাইটনিং অ্যারেস্টার ইনস্টল।
কোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতির ধাতব অংশকে অত্যন্ত কম রোধবিশিষ্ট (Very low resistance) তার দিয়ে মাটির সাথে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করাকে আর্থিং বলে। অনাকাঙ্খিত বিদ্যুতের প্রভাব থেকে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও মানুষকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ধাতু নির্মিত বহিরাবরণ বা অন্য কোন ধাতব অংশ হতে বিদ্যুত প্রবাহকে পরিবাহী তারের সাহায্যে নিরাপদে মাটিতে প্রেরণের ব্যবস্থাই আর্থিং ।
আর্থিং বৈদ্যুতিক সিস্টেমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের জীবন ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি রক্ষার জন্য আর্থিং একটি অপরিহার্য বিষয়। আর্থিং এর প্রয়োজনীয়তা নিচে উল্লেখ করা হলো। ১। বজ্রপাত, শর্ট সার্কিট, ইনসুলেশন নষ্ট হয়ে বা অন্য যে কোন কারণে ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট বা সিস্টেমের ভোল্টেজ বেড়ে গেলে তা মাটিতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ।
২। অতিরিক্ত লিকেজ কারেন্ট আর্থিং তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার (ELCB) এর সাহায্যে অল্টারনেটর, ট্রান্সফরমার ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক মেশিনারিজ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়।
৩| ট্রান্সফরমারের লাইন ত্রুটি যুক্ত হলে হাই ভোল্টেজ উৎপত্তি হয়। এই হাই ভোল্টেজকে মাটিতে প্রেরণ করার জন্য আর্থিং প্রয়োজন।
৪। কখনো কখনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামাদির কাঠামো ও বহিরাবরণ বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। এসব বিদ্যুতায়িত যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামের সংস্পর্শে মানুষ বা কোনো প্রাণী এলে শরীর বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের সম্ভাবনা থাকে। আর্থিং বৈদ্যুতিক শকের প্রাবল্য কমিয়ে দেয়।
৫। বড় বড় ইমারতকে বজ্রপাত হতে রক্ষা করার জন্য আর্থিং প্রয়োজন ।
১। ত্রুটিযুক্ত সার্কিটের কারেন্টকে আর্থিং সহজে মাটির অভ্যন্তরে প্রেরণ করে। এর ফলে ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার প্রভৃতি রক্ষণযন্ত্র খুলে যায় এবং ত্রুটিযুক্ত অংশ সহজে উৎস হতে আলাদা হয়ে পড়ে।
২। ওয়্যারিংয়ের যে কোন অংশের ভোল্টেজকে আর্থের সাপেক্ষে কোনো নির্দিষ্ট মানে বজায় রাখার জন্য সঠিকভাবে আর্থিং করা প্রয়োজন।
৩। অনেক সময় আমাদের অজান্তে বিদ্যুৎ সিস্টেমে ত্রুটি থেকে যেতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে যেন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি উচ্চ ভোল্টেজ এর প্রভাবে নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য সঠিকভাবে আর্থিং করা জরুরি।
আর্থিং এর প্রধান উপাদান তিনটি, যথা-
১। আর্থ প্লেট বা আর্থ ইলেকট্রোড,
২। মেইন আর্থিং লিড বা আর্থ তার
৩। আর্থের নিরবিচ্ছিন্ন (Continuity) তার।
১। আর্থ-ইলেকট্রোড (Earth-Electrode ) : মাটির তলায় পোতা ধাতব পদার্থকে আর্থ ইলেকট্রোড বলে। আমরা জানি পৃথিবীর সব অংশের মাটি অবিচ্ছিন্ন বা সংযুক্ত। ফলে যেখানেই স্থাপন করা হোকনা কেন আর্থ-ইলেকট্রোড পৃথিবীর সব মাটির সাথে ইলেকট্রিক্যালি সংযুক্ত হয়ে যায়। আর্থিং এর কাজে বেশির ভাগ সময় নিম্নলিখিত পাঁচ ধরনের অর্থ ইলেট্রোডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়-
(ক) পাইপ ইলেকট্রোড
(খ) রঙ ইলেকট্রোড
(প) প্লেট ইলেকট্রোড
(ঘ) ফ্লিপ বা কন্ডাকটর ইলেকট্রোড
(খ) শিট ইলেকট্রোড।
(ক) পাইপ ইলেকট্রোড: এটি এক ধরনের গ্যালভানাইজ করা লোহা বা ইস্পাতের তৈরি পাইপ যার ভিতর দিকের সর্বনিম্ন ব্যাস ৩৮.১ মিমি. এবং ঢালাই লোহার তৈরি পাইপ হলে সর্ব নিম্নব্যাস ১০০ মিমি.। পাইপের দৈর্ঘ্য কখনোই ২.৫ মিটার (৯ ফুট) এর কম হলে চলবে না। পাইপ ইলেকট্রোড মাটিতে খাড়া করে এমনভাবে পুঁততে হবে যেন পাইপের উপরি ভাগ কমপক্ষে ১.২৫ মিটার মাটির তলায় থাকে। শুকনো মাটির তুলনায় ভেজামাটির রোধ কম হয়। একারণে কার্যকর আর্থিং এর জন্য অবশ্যই মাটির আর্দ্র র পর্যন্ত আর্থ ইলেকট্রোড পৌঁছাতে হবে। ইলেট্রোডের চারপাশে এক স্তরের পর আরেক স্তর কাঠ-কয়লা এবং লবণ দিয়ে ঠেলে মাটি ভরাট করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। পাইপকে ৭.৫ সেমি. অন্তর ব্যাস বরাবর এফোর ওফোর ১২ মিমি. ব্যাস বিশিষ্ট ছিদ্র করা হয়। ওপরের ফানেল দিয়ে পাইপের ভিতরে মাঝে মাঝে পানি ঢাললে ঐ ছিদ্রের মাধ্যমে ইলেকট্রোডের চারপাশের পানি ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মাটি ভেচ্ছা থাকে। ইমারত থেকে পাইপ ইলেকট্রোডের দূরত্ব ১.৫ মিটার (৫ ফুট) এর কম রাখা যাবে না।
(খ) রড ইলেকট্রোড: গ্যালভানাইজ করা লোহার বা ইস্পাত রঙ (যার সর্বনিম্ন ব্যাস ১৬ মি.মি. বা ৫/৮ ইঞ্চি) অথবা তামার রঙ (বার সর্বনিম্ন ব্যাস ১২.৫ মি.মি.) কে ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে রঙের সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্য ২ মিটার হতে হবে। কাঙ্খিত অর্থ রেজিট্যাল পাওয়ার জন্য রঙের দৈর্ঘ্য বাড়তে পারে।
(গ) প্লেট ইলেকট্রোড: গ্যালভানাইজ করা লোহার বা ইস্পাতের প্লেট, যার সাইজ ৬০ সে. মি. x ৬সে. মি.×৬.৩৫ মি.মি. এবং তামার আর্থ প্লেটের সাইজ ৬০ সে. মি. x ৬০ সে. মি. x ৩১৫ মি.মি. কে প্লেট ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চালাই লোহার প্লেটের ক্ষেত্রে পুরুত্ব ১.৪৫ মি.মি। উভয়ক্ষেত্রে প্লেটকে দাঁড় করিয়ে মাটিতে এমনভাবে পুঁততে হবে, যাতে প্লেটের উপরের অংশ ভূমির অন্তত তিন মিটার নিচে থাকে (চিত্র-২.৩)। আর্থ রেজিস্ট্যান্স সন্তোষজনক পাওয়া না গেলে একাদিক প্লেট প্যারালাল-এ সংযুক্ত করে ব্যবহার করা হয়।
(ঘ) স্ট্রিপ বা কন্ডাকটর ইলেকট্রোড: গ্যালভানাইজ করা লোহা বা ইস্পাতের পাত (যার সর্বনিম্ন প্রস্থচ্ছেদ ২৫ মি. মি. × ৪ মি. মি.) কিংবা তামার পাত (যার সর্বনিম্ন প্রস্থচ্ছেদ ২৫ মি. মি. x ১.৬ মি. মি.) কে ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গোলাকার তামার কন্ডাকটর হলে সর্বনিম্ন প্রস্থচ্ছেদ ৩ বর্গ মি. মি. এবং গ্যালভানাইজ করা লোহা বা ইস্পাতের হলে ৬ বর্গ মি. মি. হওয়া উচিত। স্ট্রিপ বা কন্ডাকটরের দৈর্ঘ্য ১৫ মিটারের কম হওয়া উচিত নয়। কাঙ্খিত আর্থ রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে কন্ডাক্টরের দৈর্ঘ্য বাড়াতে হয়।
(ঙ) শীট ইলেকট্রোড : গ্যালভানাইজ করা লোহার শিট, যার পুরুত্ব কমপক্ষে ১.৬৩ মি. মি. (১৬ গেজ) এবং সাইজ ২ হতে ৬ বর্গমিটার হওয়া উচিত।
আর্থ ইলেকট্রোডের সঙ্গে মেইন সুইচের বডি, আর্থবাস বার প্রভৃতির সংযোগ করার জন্য যে তার ব্যবহার করা হয় তাকে মেইন আর্থিং লিড বা আর্থ তার বলে। ইলেকট্রোড যে ধাতুর তৈরি হবে আর্থ তারও সেই ধাতুর তৈরি হতে হবে। আর্থের তারে যেন কোন আঘাত না লাগে সেজন্য আর্থিং তার মেঝেতে এবং দেয়ালে ঢুকিয়ে দিলে ভাল হয়। মাটির তলা দিয়ে নেয়ার সময় তার যেন কমপক্ষে ৬০ সেমি. (২ ফুট) মাটির নিচে থাকে। ক্ষতি এড়ানোর জন্য আর্থের তারটিকে একটি ১২ মিমি. জিআই পাইপের ভেতর দিয়ে নেয়া যেতে পারে। আর্থ তারকে নাট-বল্টু দিয়ে আটকিয়ে, প্রয়োজনে ঝালাই করে আর্থ ইলেকট্রোডের সঙ্গে সংযোগ দিতে হয়।
৩। আর্থ কন্টিনিউয়িটি (Continuity) কন্ডাকটর যে কন্ডাকটরের সাহায্যে বৈদ্যুতিক আসবাব, যন্ত্রপাতি কিংবা ওয়্যারিংয়ের ধাতুর আবরণ বা খোলের সঙ্গে আর্থ তার এর কানেকশন করা হয় তার নাম আর্থ কন্টিনিউটি কন্ডাকটর। এ তারের সাহায্যে সমস্ত ওয়্যারিং ও আসবাবপত্রে আর্থের কন্টিনিউটি বজায় থাকে।
সঠিক আর্থিং করতে সঠিক উপাদান সমূহ ব্যবহার করে নিয়ম মোতাবেক আর্থিং করতে হয়। ব্যবহৃত আর্থ ইলেকট্রোডের উপর ভিত্তি করে আর্থিং পাঁচ প্রকার হয়ে থাকে। যথা-
১। পাইপ আর্থিং
২। প্লেট আর্থিং
৩। রড আর্থিং
৪। শিট আর্থিং এবং
৫। স্ট্রিপ আর্থিং ।
নিচে আর্থিং করার বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া হলো।
১। পাইপ আর্থিং: গ্যালভানাইজ করা লোহার বা ইস্পাতের পাইপ ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাইপের দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ২.৫ মিটার আর ভিতরের ব্যাস ৩৮.১ মি. মি. হতে হবে। মাটি যদি শুকনা এবং খুব শক্ত হয়, তবে পাইপের দৈর্ঘ্য ২.৭৫ মিটার নিতে হবে। পাইপকে লম্বালম্বিভাবে ৭.৫ সে. মি. অন্তর ১২ মি. মি. ব্যাস বিশিষ্ট ছিদ্র করা হয়। একটি ছিদ্র পরবর্তী ছিদ্রের আড়াআড়ি হবে যেন উপর হতে পানি ঢাললে ছিদ্রের মাধ্যমে পানি গিয়ে ইলেকট্রোডের চারপাশে মাটি ভেজা রাখে। বিল্ডিং হতে ১.৫ মিটার ব্যবধানে সাধারণত ৩.৭৫ মিটার গভীর গর্ত করা হয়। তবে মাটির ভিতর যতটা গভীরে ভেজা মাটি পাওয়া যায়, ততদূর পর্যন্ত গর্ত খোড়া প্রয়োজন । পাইপের নিচের দিকে চারপার্শ্বে ১৫ সে. মি. পর্যন্ত জায়গা কাঠকয়লার ও লবণ দিয়ে ঘিরে দিতে হয়। এর ফলে পাইপ আর মাটির মধ্যে সংযোগের আয়তন বাড়ে এবং লবণ সে আর্থেও রেজিস্ট্যান্স কমিয়ে দেয়। গর্তের মধ্যে প্রথম স্তরে লবণ আর দ্বিতীয় স্তরে কাঠ কয়লা আবার তৃতীয় স্তরে লবণ এবং চতুর্থ স্তরে কাঠ কয়লা এভাবে স্তর থাকে। গ্রীষ্মকালে যখন মাটির আর্দ্রতা কমে গিয়ে মাটির রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায়, তখন যেন গর্তের মধ্যে কয়েক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে মাটিকে স্যাঁত স্যাঁতে রাখা যায়, সে জন্য ইলেকট্রোডের মাথায় সকেটের সাহায্যে একটি ২.৫ মি. মি. ব্যাসের লোহার পাইপ বসিয়ে তার উপর একটি ফানেল বসানো হয়। ফানেলের মুখ তারের জালি দিয়ে ঢেকে দিতে হয় যেন কোন শক্ত জিনিস ঢুকে পাইপের মুখটা বন্ধ করে ফেলতে না পারে (চিত্র- ২.৪)। বৈদ্যুতিক স্থাপনার কোথাও কোন দোষত্রুটি দেখা দিলে সর্বাপেক্ষা বেশি কারেন্ট আর্থে যাবে, তা হিসেব করে সে অনুসারে আর্থের তারের আয়তন নির্ণয় করা হয়। বৈদ্যুতিক স্থাপনার কোথাও কোন দোষত্রুটি দেখা দিলে সর্বাপেক্ষা বেশি যত কারেন্ট আর্থে যাবে, তা হিসেব করে সে অনুসারে আর্থের তারের আয়তন নির্ণয় করা হয়। তবে সচরাচর ৮ নং এসডব্লিউজি গেজের গ্যালভানাইজকরা লোহার তার আর্থ তার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর্থ ইলেকট্রোডের উপরে ১৯.০৫ মি. মি. ব্যাসের যে লোহার পাইপ বসান থাকে, তার সঙ্গে আর্থ তার সংযোগ করে ভূমির প্রায় ৬০ সে. মি. নিচ দিয়ে ১২.৭ মি. মি. ব্যাসযুক্ত গ্যালভানাইজ করা লোহার পাইপের মধ্য দিয়ে আর্থের তারকে আর্থিং বাসবার বা মেইন সুইচ পর্যন্ত নেয়া হয়। অতঃপর আর্থ কন্টিনিউয়িটি তারের মাধ্যমে সকল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামে সংযোগ দিতে হয়। উল্লিখিত কার্যক্রমে আর্থিং সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে।
২। গ্যালভানাইজ করা লোহার প্লেট বা তামার প্লেটের সাহায্যে আর্থিং:
গ্যালভানাইজ করা লোহার প্লেট, যার সাইজ কমপক্ষে ৬০ সে. মি. x ৬০ সে. মি. x ৬.৩৫ মি.মি. কিংবা ডামার প্লেট, যার সাইজ কমপক্ষে ৬০ সে: মি: x ৬০ সে. মি. x ৩.১৮ মি. মি. কে আর্থ ইলেকট্রাড হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। উভয় ক্ষেত্রে প্লেটকে দাড় করিয়ে মাটিতে পুঁততে হবে, যাতে তার উপরের দিকটা ভূ-পৃষ্ঠের অন্তত ৩ মিটার নিচে থাকে। এমন মাটিতে আর্থ প্লেট রাখতে হবে, যেখানে অনবরত ভিজে থাকে। প্লেটের চারিদিকে কাঠ-কয়লা কিংবা কার্বনের টুকরা ঠেসে দিয়ে লবণ মিশ্রিত পানি ঢেলে গর্ত ভরাট করতে হবে। প্লেটের উপর থেকে সাধারণত দুইটি গ্যালভানাইজ করা লোহার পাইপ উঠে আসে। একটি পাইপের ব্যাস ১২.৭ মিলিমিটার। এই পাইপের মধ্য দিয়েই আর্থেও তার ভূমির প্রায় ৬০ সে. মি. নিচ দিয়ে মেইন সুইচ বোর্ড কিংবা আর্থিং বাস বার পর্যন্ত আনা হয়। অন্য পাইপটির ব্যাস ১৯.০৫ মি. মি., যার উপর মাথায় একটি ফানেল থাকে। ফানেলের মুখ তারের জালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় যেন কোনো শক্ত জিনিস ভিতরে ঢুকে মুখ বন্ধ করে ফেলতে না পারে। শুষ্ক মৌসুমে মাঝে মাঝে পানি ঢেলে আর্থ প্লেটের পার্শ্ব ভিজে রাখার জন্য এরূপ বন্দোবস্ত করা হয়। ফানেলসহ পাইপের উপরের মাথায় চারদিকে ৩০ সে. মি. x ৩০ সে. মি. x ৩০ সে. মি. মাপের ইটের চৌবাচ্চা গাঁথা থাকবে। চৌবাচ্চাটির একটি ঢাকনা থাকবে যেটা প্রয়োজনে খুলে পানি ঢালা যায়। চিত্র ২.৫-এ প্লেট আর্থিং দেখানো হয়েছে।
৩। রড আর্থিং বর্তমানে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি গ্যালভানাইজ করা ২.৫ মিটার লম্বা ১৬ মি. মি. ব্যাসের লোহার বা জিআই পাইপকে আর্থিং ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করছে। পাথরের জায়গায় এ রকম রড অনুভূমিকভাবে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রয়োজনে রডের দৈর্ঘ্য বাড়ানো যেতে পারে।
৪। কন্ডাকটর বা স্ট্রিপ আর্থিং
এতে গ্যালভনাইজ করা লোহা বা ইস্পাতের পাত (যার সর্বনিম্ন প্রস্থচ্ছেদ ২৫ মি. মি. x ৪ মি. মি.) অথবা তামার পাত (যার সর্বনিম্ন প্রস্থচ্ছেদ ২৫ মি. মি. x ১.৬ মি. মি.)-কে ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই ইলেকট্রোডের দৈর্ঘ্য ১৫ মিটারের কম নেয়া উচিত নয়। কমপক্ষে ৫০ সে. মি. মাটির নিচে একটি বা একাধিক নালা খনন করে তার মধ্যে ইলেকট্রোড শুইয়ে রাখা হয়।
৫। শিট ইলেকট্রোড
এতে গ্যালভানাইজ করা লোহার পাত (যার সাইজ ২ বর্গমিটার থেকে ৬ বর্গমিটার এবং পুরুত্ব কমপক্ষে ১.৬৩ মি. মি.) কে ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত পাহাড়ের ঢালে পরিখা খনন করে শিট ইলেকট্রোড বসাতে হয়। এছাড়া ভূ-গর্ভস্থ জিআই পাইপের পানির লাইনের সাহায্যেও আর্থিং করা যায়। এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের আর্থিং ক্যাম্পের সাহায্যে পাইপের কাছে আর্থিং তার এমনভাবে এটে দেওয়া হয়, যাতে সংযোগস্থলের রেজিস্ট্যান্স খুবই সামান্য থাকে। পানির লাইন নিজস্ব সম্পত্তি না হয়ে মিউনিসিপ্যালিটি কিংবা অন্য কারো সম্পত্তি হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত আর্থিং করা যাবে না।
আর্থ ইলেকট্রোড ও আর্থ লিড এর সমন্বিত রেজিস্ট্যান্সকে আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে। বাসা-বাড়ি, কল-কারখানায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি নিরাপদে ব্যবহার করার জন্য, আর্থিং টার্মিনাল থেকে ১টি আর্থের তার টেনে নিয়মানুযায়ী মাটির নিচে স্থাপিত ইলেকট্রোডের সাথে সংযোগ থাকে। আর্থিং এর রেজিস্ট্যান্স খুব কম হওয়া বাঞ্ছনীয়। সামান্য কারেন্টও যদি কোনো সরঞ্জামাদির বডিতে আসে তা যেন সাথে সাথে আর্থিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই মাটির নিচে যেতে পারে সে জন্য আর্থ রেজিস্ট্যান্স কম হওয়া দরকার। বড় বড় মিল ফ্যাক্টরিতে ১ ওহম এর কম এবং বাসাবাড়ির আর্থ রেজিস্ট্যান্স ৫ ওহম এর কম হওয়া উচিত।
আর্থিং পদ্ধতির কার্যকারীতা নির্ভর করে সর্বনিম্ন আর্থ রেজিস্ট্যান্সের মানের উপর। আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলতে সম্পূর্ণ আর্থিং পদ্ধতির রেজিস্ট্যান্সকে বোঝায়। বাড়ি ঘর, ওয়ার্কশপ, কলকারখানার মেইন আর্থ টার্মিনাল থেকে আর্থ ইলেকট্রোডের মাধ্যমে যে রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায় তাকে আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে। অর্থাৎ আর্থ লিড এবং আর্থ ইলোকট্রোডের মোট রেজিস্ট্যান্সকেই আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে। আর্থিং সিস্টেম ইনস্টল করার পর অথবা পুরাতন আর্থিং সিস্টেমের আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা খুবই জরুরি। আর্থিং সিস্টেম সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা তা নিম্নলিখিত যে কোন পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়।
১। মেগার আর্থ টেস্টার পদ্ধতি ও ২। টেস্ট ল্যাম্প পদ্ধতি
১। মেগার আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাণ: মেগার আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ ইলেকট্রোডের রেজিস্ট্যাপ মাপা হয়। এতে তিনটি টার্মিনাল থাকে। আর্থ টার্মিনাল (E), পটেনশিয়াল টার্মিনাল (P) এবং কারেন্ট টার্মিনাল (C) (চিত্র-২.৬)। যে আর্থ ইলেকট্রোড এর রেজিস্ট্যান্স মাপতে হবে তার সঙ্গে E টার্মিনাল কানেকশন করতে হবে। এবার দুইটি স্পাইক নিয়ে একই লাইনে ঐ আর্থ ইলেকট্রোড হতে ২০ থেকে ২৫ মিটার
পর পর দূরে মাটিতে পুঁততে হবে। প্রথমটির অর্থাৎ আর্থ ইলেকট্রোড এর নিকটবর্তী স্পাইককে P টার্মিনালের সাথে এবং পরবর্তী দ্বিতীয়টির সাথে C টার্মিনাল সংযোগ করতে হবে। এবার মেগারের হাতলের সাহায্যে জেনারেটরকে ঘুরালে E হতে মাটির মধ্য দিয়ে C তে পরবর্তী কারেন্ট প্রবাহিত হবে। এই কারেন্টকে ধরলে এবং E হতে P পর্যন্ত ভোল্টেজকে V ধরলে E হতে P পর্যন্ত আর্থের রেজিস্ট্যান্স হবে , এই R এর মান অবশ্য আর্থ টেস্টারে সরাসরি রিডিং পাওয়া যাবে। টেস্ট পদ্ধতিটি ২.৬ নং চিত্রে দেখানো হয়েছে। এভাবে মাঝের স্পাইককে একই লাইনে ১.৫ মিটার হতে ৩ মিটার যথাক্রমে আর্থ ইলেকট্রোডের নিকট ও দূরে সরিয়ে পুঁতে আরও দুইটি রিডিং নিতে হবে। তারপর মোট তিনটি রিডিং এর গড় মানকে আর্থের রেজিস্ট্যান্স ধরা হবে। কিন্তু জনবহুল শহরে যেখানে P এবং C স্পাইক পোঁতার জায়গা নেই। সেখানে আর্থ টেস্টারের P ও C টার্মিনাল দুইটিকে শর্ট করে তার সংগে একটি লিডিং তার সংযোগ করে পানির পাইপের সংঙ্গে সংযোগ করতে হবে। এবার হাতল ঘুরিয়ে আর্থ টেস্টারের রিডিং নিতে হবে। অতঃপর E টার্মিনালের সাথে P এবং C এর লিডিং তার সংযোগ করে পুণরায় রিডিং নিতে হবে। প্রথম রিডিং হতে দ্বিতীয় রিডিং বাদ দিলে আর্থ রেজিস্ট্যান্স এর মান পাওয়া যাবে। টেস্ট করার সময় সতর্ক হতে হবে যেন আর্থ ইলেকট্রোড ও স্পাইক কাছাকাছি না থাকে।
আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপের সময় যেসব সাবধানতা মানতে হবে সেগুলো হলো- ১। টার্মিনাল সংযোগ শক্তভাবে দিতে হবে যাতে ঢিলা (Lose) না থাকে।
২। সাহায্যকারী স্পাইক মাটির মধ্যে ১ মিটার পর্যন্ত পুঁততে হবে।
৩। আর্থ টেস্টারের পাঠ সাবধানতার সাথে গ্রহণ করতে হবে।
৪। রেজিস্ট্যান্সের মান সন্তোষজনক কিনা তা প্রতি বছর অন্তত একবার পরীক্ষা করা উচিত
২. আর্থ টেস্টিং বাতি দিয়ে আর্থ রেজিস্ট্যাল পরীক্ষা করা।
আর্থ টেস্টার ছাড়াও আর্থ টেস্টিং বাতি দিয়ে খুব সহজে আর্থিং এর কার্যকারিতা জানা যায়। এক্ষেত্রে টেস্ট বাতির এক প্রাপ্ত সাপ্লাইয়ের সাথে এবং অন্য প্রাপ্ত আর্থিং এর সাথে সংযোগ করলে বাতি যদি ভালোভাবে জ্বলে তবে বোঝা যাবে আর্থিং ঠিকভাবে কাজ করছে না। যদি আর্থ কানেকশন থেকে কিছু দূরে ঠাণ্ডা পানির পাইপ বা অন্য কোনো আর্থ করা জিনিস পাওয়া যায় যার রেজিস্ট্যান্স খুব কম তাহলে ভোল্টমিটার এবং অ্যামিটার দিয়ে আর্থ কানেকশনের রেজিস্ট্যান্স বের করা যাবে। প্রক্রিয়াটি ২.৭ নং চিত্রে দেখানো হয়েছে। পানির পাইপ আর আর্থ-
কানেকশনের সঙ্গে একটি অ্যামিটারের দুইপ্রান্ত সংযোগ করে অল্টারনেটিং কারেন্ট প্রবাহিত করতে হবে। এরপরপানির পাইপ ও আর্দ্র কানেকশনের মধ্যেকার বিভব পার্থক্য (ভোল্টেজ পরিমাপ করতে হবে।
এখন যদি পানির পাইপের রেজিস্ট্যান্স অতি নগন্য হয়, তবে মাটির রেজিস্ট্যান্স = ভোল্টেজ/ কারেন্ট
কোনো পদার্থই রেজিস্ট্যান্স শূন্য হয় না। একারণে একেবারে রেজিস্ট্যান্স বিহিন কানেকশন দেয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই প্রক্রিয়ায় আর্থ রেজিস্ট্যান্স মাপার সময় ডাইরেক্ট কারেন্ট (ডি.সি) ব্যবহার করা উচিত নয়।
ইলেকট্রিফিকেশনের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বাসা বাড়ির ক্ষেত্রে আর্থ রেজিস্ট্যান্স সর্বনিম্ন ১ ওহম এবং সর্বোচ্চ ৫ ওহম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। বড় বড় মিল ফ্যাক্টরিতে আর্থ রেজিস্ট্যান্স ১ ওহম এর কম হওয়া উচিত। পাহাড়ি এলাকায় আর্থ রেজিস্ট্যান্সের মান ৮ ওহম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।
বৈদ্যুতিক স্থাপনা ও যন্ত্রপাতির ত্রুটি পরীক্ষার জন্য মেগার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। উচ্চমানের রেজিস্ট্যান্স মেগাওহম স্কেলে পরিমাপ করতে মেগার ব্যবহৃত হয়। যন্ত্রপাতির ত্রুটি পরীক্ষার জন্য যে বিদ্যুৎ সরবরাহ দরকার হয় তা একটি মেগারে হস্তচালিত ডিসি জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন করা যায়। আজকাল ব্যাটারি চালিত ডিজিটাল মেগার পাওয়া যায়। এগুলোর মাধ্যমে সরাসরি আর্থ রেজিটেন্সের মান পাওয়া যায়।
২.১ নং চিত্রে একটি মেগারের সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখানো হয়েছে। এতে ডিসি জেনারেটর, স্থায়ী ম্যাগনেট মুভিং কয়েল, পিএমএমসি (Permanent Magnet Moving Coil) থাকে। পিএমএমসি একটি মেগারের প্রধান অংশ। ফেগারে দুইটি টার্মিনাল থাকে: লাইন টার্মিনাল ও আর্থ টার্মিনাল। মেগারের সাহায্যে সর্বনিম্ন ৫০০ কলা (KO) বা ০.৫ মেগাও (IMSI) সঠিক ভাবে মাপা যায়। উচ্চ রেজিস্ট্যাল বিশিষ্ট পদার্থকে কুপরিবাহী বা ইনসুলেটর (Insulator) বলে। মেগারের সাহায্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট মাপা হয়। একারণে যেগারকে ইনসুলেশন টেস্টিং মেগারও বলে।
মেগারের সাহায্যে উচ্চ রেজিস্ট্যান্স বা ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স মাপা ছাড়াও সুইচের পোলারিটি টেস্ট ও ওয়্যারিং এর কন্টিনিউটি টেস্ট করা যায়।
মেগার একটি পারমানেন্ট ম্যাগনেট মুভিং কয়েল টাইপ ইনস্ট্রুমেন্ট । এই যন্ত্রে একটি ডিসি জেনারেটর ও একটি ওহম মিটার থাকে। ডিসি জেনারেটরটি ঘুরানোর জন্য যন্ত্রের বাহিরে একটি হাতল থাকে। ওহম মিটারের মধ্যে দুইটি কয়েল একই দন্ডের উপর সমকোণে আটকানো থাকে। একটি স্থায়ী চুম্বকের ক্ষেত্রের মধ্যে বসানো ঐ দন্ডটির মাথায় একটি মান নির্দেশক কাঁটা থাকে। কয়েল দুইটি হচ্ছে- প্রেসার কয়েল বা কন্ট্রোল কয়েল এবং কারেন্ট কয়েল বা ডিফ্লেকটিং কয়েল। কন্ট্রোল কয়েলের সাথে একটি কন্ট্রোল সার্কিট রেজিস্ট্যান্স সিরিজে সংযোগ করা থাকে এবং এই সমবায় জেনারেটরের লাইনে প্যারালালে সংযুক্ত থাকে। আবার ডিফ্লেক্টিং কয়েলের সঙ্গেও একটি ডিফ্লেক্টিং সার্কিট রেজিস্ট্যান্স সিরিজে সংযোগ করা থাকে। রেজিস্ট্যান্স যুক্ত ডিফ্লেক্টিং কয়েল সার্কিটের এক প্রান্ত জেনারেটরে নেগেটিভ (-ve) টার্মিনাল এবং অপর প্রান্ত মেগারের টেষ্টিং টার্মিনাল L এর সঙ্গে সংযোগ করা থাকে। জেনারেটরের পজেটিভ (+ve) টার্মিনাল মেগারের অপর টেষ্টিং টার্মিনাল E এর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ করা থাকে। এর জেনারেটিং ভোল্টেজ ৫০০ ভোল্ট কিংবা ১০০০ ভোল্ট হয়ে থাকে। এ অবস্থায় মেগারের হাতল ঘুরালে শুধু প্রেসার কয়েলের ভেতর দিয়ে কারেন্ট সরবরাহ হবে এবং স্থায়ী চুম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে ক্রিয়ার ফলে পয়েন্টারটি বামাবর্তে ঘুরে অসীম মান (o) দেখাবে। আবার মেগারের টেষ্টিং টার্মিনাল দুইটি শর্ট করে দিলে কারেন্ট কয়েলের ভেতর দিয়ে প্রচুর কারেন্ট প্রবাহিত হবে এবং স্থায়ী চুম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে ক্রিয়ার ফলে পয়েন্টারটি ডানাবর্তে ঘুরে শূন্য (০) মান দেখাবে। এর ব্যতিক্রম হলে বুঝতে হবে মেগার ঠিক নেই। যখন কোনো উচ্চ মানের রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার জন্য রেজিস্ট্যান্সটিকে মেগারের L ও E টার্মিনালের সাথে কানেকশন দিয়ে হাতল ঘুরানো হয় তখন জেনারেটর হতে দুইটি কয়েলেই কারেন্ট প্রবাহিত হবে। দুইটি কয়েলের কারেন্টের অনুপাত অনুযায়ী পয়েন্টারটি ডানে বা বামে বিক্ষেপণ (Deflection) দিবে। রেজিস্ট্যান্স এর মান খুব কম হলে পয়েন্টারটি শূন্য মানের কাছাকাছি এবং রেজিস্ট্যান্স এর মান খুব বেশি হলে পয়েন্টারটি অসীম (Infinity, a) মানের কাছাকাছি অবস্থান করবে। এখানে উল্লেখ্য যে, মেগারের মধ্যস্থিত ডিসি জেনারেটরটি বাহিরের দিকের হাতলের সাথে সেন্ট্রিফিউগাল কাপলিং এর মাধ্যমে আটকানো থাকে। মেগারকে খুব দ্রুত ঘুরালেও এটি একটি নির্দিষ্ট আরপিএম এর বেশি গতিতে ঘুরবে না। মেগার ঘোরানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এর হাতলটি মুক্ত ভাবে ঘোরে। এসময় এতে নির্দিষ্ট ভোল্টেজ উৎপন্ন হবে। মেগারে লিকেজ প্রতিরোধ করার জন্য গার্ড রিং ব্যবহার করা হয়। পরিমাপকৃত রেজিস্ট্যান্সের মান অসীম হলে ডিফ্লেকটিং কয়েল সার্কিটে কোন কারেন্ট প্রবাহিত হয় না। শুধু কন্ট্রোলিং কয়েলের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয়। কন্ট্রোলিং কয়েলে কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ায় চৌম্বক ক্ষেত্র উৎপন্ন হয় এবং মিটারের কাঁটা অসীম (Infinity) দেখায়। আবার পরিমাপাধীন রেজিস্ট্যান্সের মান শূন্য হলে ডিফ্লেকটিং কয়েলের মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ কারেন্ট প্রবাহিত হয়, ফলে মিটার শূন্য (০) পাঠ দেয় ।
বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন ( ১৭০৬-১৭১০) প্রমাণ করেন যে, ইলেকট্রিক ডিসচার্জের কারণে বজ্রপাত (Lightning Stroke) সৃষ্টি হয়। মেঘ এবং আর্থের মধ্যে অথবা মেঘ ও মেঘের মধ্যে অথবা একই মেঘের চার্জ কেন্দ্রের মধ্যে বৈদ্যুতিক ডিসচার্জকে লাইটনিং বা বজ্রপাত বলা হয়। যখন মেঘের চার্জ ভূপৃষ্ঠের তুলনায় অথবা আশপাশের জন্য মেঘের তুলনায় খুব বেশি থাকে তখন লাইটনিং সংঘটিত হয়। কারণ এ সময় আশপাশের বাবুরের ইনসুলেশন ব্রেক করে লাইটনিং স্ট্রোকের সৃষ্টি হয়।
পৃথিবীতে প্রতিদিন হাজার হাজার লাইটনিং সহ ঝড় বৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার সব লাইটনিং স্ট্রোক পৃথিবী পর্যন্ত এসে পৌঁছায় না, পথেই নিঃশেষ হয়ে যায়। লাইটনিং স্ট্রোক সাধারণত ওভারহেড বৈদ্যুতিক লাইন এবং আউটডোর সাব স্টেশনের উপর তুলনামুলক বেশি হয় । এছাড়া দালানের কার্নিশ, মসজিদ-মন্দির-গীর্জার চূড়া, বড়বড় গাছপালা, বাড়ি ঘর এমনকি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী লাইটনিং স্ট্রোকের শিকার হয়। ওভারহেড লাইনের তার আকাশের নীচে খোলা অবস্থায় থাকে। একারণে এসব বৈদ্যুতিক লাইনের উপর যে কোন সময় বজ্রপাত ঘটতে পারে। বৈদ্যুতিক লাইনের উপর বজ্রপাত হলে লাইনের ভোল্টেজ ও ফ্রিকুয়েন্সি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ক্ষণস্থায়ী এই হঠাৎ ভোল্টেজ বৃদ্ধিকে সার্জ (Surge) বলে। ঐ সার্জ কারেন্ট বৈদ্যুতিক লাইন এবং লাইন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয় এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে প্রবেশ করলে সেগুলি পুড়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষতির হাত থেকে সরঞ্জামাদি রক্ষা করার জন্য দুই রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়। লাইনের উপরে আর্থ তার সংযোগ করা।
(১) লাইটনিং অ্যারেস্টার ব্যবহার করা। ওভার হেডলাইনে আর্থের তার সবচেয়ে উপরে থাকায় বজ্রপাত হলে তা আর্থের ভারের উপরে প্রথমে পড়বে। লাইন কন্ডাক্টরের উপর বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আর্থের তারে বজ্রপাত হলে সার্জ কারেন্ট সরাসরি মাটিতে চলে গিয়ে যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামের ক্ষতি রোধ করেতে পারে। কিন্তু যেখানে আর্থের তার টানা হয় না সেখানে লাইটনিং অ্যারেস্টার ব্যবহার করা হয়।
লাইটনিং অ্যারেস্টারের প্রধান কাজ হলো লাইনে বজ্রপাত হলে সার্জ কারেন্টকে সরাসরি মাটিতে নিয়ে যাওয়া। একাজের জন্য লাইটনিং অ্যারেস্টারের মোটামুটি তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক। যেমন-
(১) প্রত্যেক অ্যারেস্টারে এক বা একাধিক ফাঁক (gap) থাকবে যার ভেতর দিয়ে আর্ক হবে।
(২) আর্ক নেভানোর ব্যবস্থা;
(৩) স্বাভাবিক অবস্থায় অ্যারেস্টারের মধ্য দিয়ে কোন কারেন্ট প্রবাহ না হওয়া।
বিভিন্ন ভোল্টেজে বিভিন্ন ধরনের লাইটনিং অ্যারেস্টার ব্যবহৃত হয় । এল.টি. লাইনে যে অ্যারেস্টার ব্যবহৃত হয় তার নাম হর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টার।
সর্বাধিক প্রচলিত লাইটনিং অ্যারেস্টার হলো বর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টার। ২.১২ নং চিত্রে হর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টার দেখানো হয়েছে। একে এল.টি. লাইনে ব্যবহার করা হয়। এধরনের অ্যারেস্টারে হর্ণ এর মত দুইটি বাঁকানো তার থাকে। তার জ্বরের নিচের দিক থেকে উপরের দিকে দূরত্ব বাড়তে থাকে। বর্ণের নিচের দিকে এমনভাবে ফাঁকা রাখা হয়-
যেন সাধারণ লাইন ভোল্টেজের সেড় বা দ্বিগুণ ভোল্টেজ না হলে কারেন্ট ঐ ফাঁকা জারণা অতিক্রম করতে না পারে। হর্ণ দুইটি একটি ইনসুলেটরের উপর বসানো থাকে। একটি হর্ণকে আর্থের তার দিয়ে কোনো একটি আর্থ ইলেকট্রোডের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয়। অপর হর্ণটিতে এক দিকে লাইনের তার এবং অন্যদিকে যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম প্রভৃতি থেকে আগত তার সংযুক্ত থাকে। অ্যারেস্টার কে আরো কার্যকরী করার জন্য পাতি এবং হর্ণের মধ্যে একটি চোকিং করে লাগানো থাকে। এর ফলে লাইটনিং কারেন্ট (সার্জ কারেন্ট) যন্ত্রপাতির দিকে যেতে বেশি বাঁধা পায়। যখন লাইনের ভোল্টেজ স্বাভাবিক থেকে দ্বিগুনেরও বেশি হয় তখন এই ফাঁকের মধ্যে স্ফুলিঙ্গ (arc) সৃষ্টি হয় এবং কারেন্ট ভূমিতে চলে যায়। খুনিদের জায়গায় বাতাস গরম হয়ে উপরের দিকে যেতে থাকে এবং তাতে আর্ক ও উপরের দিকে উঠে যেতে থাকে। স্ফুলিঙ্গ যত উপরের দিকে ওঠে তত লম্বা হয়ে যায় এবং এক সময় দৈর্ঘ্য এত বেশি হয় যে লাইন ভোল্টেজ স্কুলিজটিকে আর ধরে রাখতে পারেনা। ফলে এক পর্যায়ে এটি নিভে যায় ।
দেখা গেছে, হর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টারের মধ্য দিয়ে আনুমানিক ১০ অ্যাম্পিয়ারের বেশি কারেন্ট গেলে স্ফুলিঙ্গ বহু হয় না। কারেন্টের মান ১০ অ্যাম্পিয়ারের মধ্যে রাখার জন্য হর্ণগ্যাপ অ্যারেস্টারের সঙ্গে প্রয়োজন মতো রেজিস্ট্যান্সকে সিরিজে সংযোগ করা হয়।
আর্থ পিকেজ সার্কিট ব্রেকার একটি রক্ষশয্যা বা প্রটেকটিভ ডিভাইস যা বৈদ্যুতিক লিকেজজনিত ত্রুটিপূর্ণ সার্কিটকে ত্রুটিহীন অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিপদজনক অবস্থা থেকে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও ব্যবহারকারীকে নিরাপদ রাখে। সার্কিটের লিকেজ কারেন্ট ব্রেকারের মধ্য দিয়ে ভূমিতে প্রবাহিত হয়ে লাইনকে বিচ্ছিন্ন করে বলে একে আর্থ পিকেজ সার্কিট ব্রেকার বা সংক্ষেপে ইএলসিবি (ELCB) বলে। আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার তিন প্রকার: (১) এক পোল, (২) দুই গোল ও (৩) চার গোল বিশিষ্ট আর্দ্র লিকেজ সার্কিট ব্রেকার।
আমরা জানি কোনো কিছুর ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে যে বাঁধা সৃষ্টি হয় তাকে রোধ (Resistance) বলে। আসলে ডি. সি বিদ্যুৎ প্রবাহের ক্ষেত্রে যে বাঁধা সৃষ্টি হয় তাকে বলে রোধ। অন্যদিকে এসি সার্কিটের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ প্রবাহের বাঁধাকে ইম্পিডেন্স (Impedance) বলে। ইম্পিডেন্স ও রেজিস্ট্যান্স উভয়েরই একক ওহম। ইম্পিডেন্সের মান এসি প্রবাহের কম্পাংকের উপর নির্ভর করে। কোন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনার আর্থ লুপ ইম্পিডেন্স (Earth Loop Impedance) বলতে ঐ ব্যবস্থাপনায় আর্থ-ফন্ট সার্কিটে কারেন্ট বা বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য সমগ্র বাঁধাকে বুঝায়। দোষমুক্ত অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে কার্যকরী করতে হলে আর্থ ইম্পিডেন্সের মান ঐ ব্যবস্থাপনার আর্থ ভোল্টেজ ও ফিউজের গলন কারেন্টের ভাগফলের চেয়ে সব সময়ই কম থাকতে হবে।
যেখানে আর্থ ইম্পিডেন্সের সন্তোষজনক মান পাওয়া সম্ভব হয়না সেক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির বডি আর্থিং এর উদ্দেশ্য সফল করার জন্য আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার সংযুক্ত করা হয়। আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকারের কয়েল বা রীলেকে ওয়্যারিংয়ের আর্থ সার্কিটের সঙ্গে সিরিজে সংযোগ করতে হয়। সার্কিটে কারেন্ট লিকেজ হলে তা যন্ত্রের রিলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে আর্থে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে সংযুক্ত সার্কিট ব্রেকার লাইন বন্ধ করে দেয়। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারকারীকে লিকেজ জনিত কারেন্টের শক থেকে সুরক্ষা দিতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ব্রেকার অপারেশনে লিকেজ সার্কিট আলাদা হয়ে যায়। পাওয়ার সার্কিটে এ ধরনের সার্কিট ব্রেকারের গুরুত্ব খুব বেশি।
আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রটেকটিভ ডিভাইস। এর মধ্যে টেষ্ট রেজিস্ট্যান্স, ট্রিপিং কয়েল, পুশ সুইচ ও কন্ট্যাক্ট পাত থাকে। আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার রিলে বা কয়েলকে ওয়্যারিং এর আর্থ সার্কিটের সাথে সিরিজে সংযোগ করতে হয়। এ ধরনের সার্কিটে সলিড স্টেট ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকারে একটি টেস্টিং বাটন থাকে, যার মাধ্যমে ব্রেকারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা যায়। আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার-এর সুইচের আর্থ টার্মিনাল আর্থ ইলেকট্রোডের সাথে ইনসুলেটর দিয়ে সংযুক্ত করতে হয়। যখন সার্কিটের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত কারেন্ট লিক করে তখন আর্থ লিকেজ ব্রেকারের রিলের মধ্য দিয়ে লিকেজ কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার সময় আর্মেচার টেনে রাখে এবং সুইচের পাত অন্য সার্কিটের সাথে সংযোগ করে দেয়। এর ফলে যে সার্কিটে কারেন্ট লিক করছিল সেটি খুলে যায় এবং দুর্ঘটনা ছাড়াই কারেন্ট প্রবাহ বন্ধ হয়। অপেক্ষাকৃত ছোট বাড়ির ওয়্যারিং-এ এটি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।
Read more