১. কিকিং
ক. লো হার্ড কিক বা জোরালো কিক : জোরে নিচু দিয়ে কোনো বল অল্প দূরত্বে সোজাসুজি পাঠাতে হলে বলের দিকে সোজা আসতে হবে। পায়ের পাতার ভেতরের ওপর অংশ দিয়ে বলের মাঝখানে বা পেটে সজোরে লাথি মারতে হবে। যে পা দিয়ে কিক করবে, সে পায়ের হাঁটু এবং কোমর বলের ওপর ঝুঁকে থাকবে। অন্য পা বলের ৭/৮ ইঞ্চি দূরে প্রায় সোজাসুজি অবস্থান করবে। এ কিককে ইনস্টেপ কিক বলে। বল উঁচু দিয়ে দূরে পাঠাতে হলে সোজা না এসে একটু কোনাকুনিভাবে দৌড়ে আসবে এবং বলের পেটের নিম্নভাগে আঘাত করবে। পায়ের পাতার অগ্রভাগ সম্পূর্ণ নিম্নমুখ না রেখে কিছুটা কোনাকুনিভাবে রাখবে।
খ. ভলি কিক: ওপর দিয়ে বল দূরে পাঠাবার জন্য বল মাটিতে পড়ার পূর্বেই বা মাটিতে পড়ে কিছুটা ওপরে উঠলে যে কিক দেওয়া হয় তাকে ভলি কিক বলে।
গ. হাফ ভলি কিক : বল মাটিতে পড়ার পরক্ষণেই ওপরে উঠতে শুরু করার সাথে সাথে জোরে যে কিক করা হয়, তাকে হাফ ভলি কিক বলে। হাফ ভলি কিক খুব জোরালো হয়।
ঘ. চিপ শট: অল্প দূরের সঙ্গীর কাছে উঁচু দিয়ে বল পাঠাবার পদ্ধতিকে চিপ শট বলে। যখন নিচু দিয়ে বা গড়িয়ে নিজ দলের খেলোয়াড়ের কাছে বল পাস করা সম্ভব হয় না অর্থাৎ বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় দ্বারা বল ধরে ফেলার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তখন এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বা দু-এক পা দূর থেকে এসে পায়ের ভিতর অংশ দিয়ে বলের পেটের নিচের অংশে কিক করতে হবে।
২. ট্র্যাপিং বা বল আটকানো
ক. সোল ট্র্যাপিং (পায়ের পাতার তলদেশ দিয়ে বল থামানো): পায়ের পাতার অগ্রভাগ ওপরের দিক করে গোড়ালি মাটি থেকে ৩/৪ ইঞ্চি ওপরে তুলে, অনেকটা ইংরেজি অক্ষর 'V 'এর মতো করে বল থামানো।
খ. শিন ট্র্যাপিং (হাঁটুর নিচের অংশ দিয়ে বল থামানো): মাটিতে পড়া বল বাউন্স করে ওপরে ওঠার সাথে
সাথে হাঁটু ভাঁজ করে সামনের দিকে নিয়ে এবং পায়ের পাতা পিছনে রেখে হাঁটুর নিচের অংশ দিয়ে বল থামানো।
গ. থাই ট্র্যাপিং (উরুর সাহায্যে বল থামানো) প্রায় লম্বভাবে বা ৭৫° থেকে ৮৫° উঁচু দিয়ে আসা বল উত্তর ওপর ধরে থামাতে হয়। বল উরু স্পর্শ করার সাথে সাথে বলসহ হাঁটু নিচের দিকে নামিয়ে আনতে হবে।
ঘ. হেড ট্র্যাপিং (মাথা দিয়ে বল থামানো) লম্ব বা তির্যকভাবে আসা বল আস্তে করে মাথায় লাগিয়ে বলের গতি কমিয়ে দিয়ে যতদূর সম্ভব বল নিজের কাছে মাটিতে ফেলা।
৩. হেডিং: বল হেড করার সময় নিচের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে:
ক. দৃষ্টি বলের দিকে থাকবে (চোখ কখনো বন্ধ থাকবে না)।
খ. মাথার সম্মুখ অংশে কপাল ও চুলের সন্ধিস্থলে বল লাগবে।
গ. ঘাড় শক্ত রেখে বলে আঘাত করতে হবে।
ঘ. মাথা ঘুরিয়ে বল পাঠানোর দিক পরিবর্তন করতে হবে।
ঙ. পিছনের দিকে হেড করার সময় মাথা সম্পূর্ণ পিছন দিকে নিয়ে কপাল দিয়ে হেড করতে হবে।
৪. গোল রক্ষা (গোল কিপিং) ফুটবল খেলায় গোল কিপিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোলরক্ষককে বেশির ভাগ সময় হাত দিয়ে বল ধরতে হয়। আবার সময় সময় পা দিয়েও বল আটকাতে বা মারতে হয়। তাই হাত ও পা দিয়ে মারার ও ধরার কলাকৌশল অবশ্যই শিখে নিতে হবে।
বিভিন্নভাবে আসা বল ধরার পদ্ধতি
ক. নিচু বল- সকল অবস্থায় বলের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। নিচু বল ধরার জন্য সম্পূর্ণ দেহ ঠিক বলের পিছনে রাখবে এবং হাঁটু সোজা রেখে শরীর সামনে ঝুঁকে দুহাত দিয়ে বল কুড়িয়ে নিয়ে বুকের কাছে নিয়ে নেবে।
খ. কোমর সমান বল- কোমর সমান বলকে বলের লাইনে দাঁড়িয়ে ধরতে হয়। বল ধরার সঙ্গে সঙ্গেই তলপেটটাকে ভিতরের দিকে নিয়ে বলটাকে পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েই দুই হাত দিয়ে বল শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে হবে যেন বলটা ছিটকে না পড়ে।
গ. উঁচু বল- উঁচু বল ধরার জন্য দুই হাত সামনে বা ওপরে বাড়িয়ে দুই হাতের তালু বা আঙ্গুলের সাহায্যে বল ধরে বুকের কাছে টেনে আনতে হবে।
৫. বল কাড়াকাড়ি করা (বল ট্যাকলিং) ফুটবল খেলায় ট্যাকলিং একটা গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণাত্মক কৌশল। সামনে, পিছনে ও পাশ থেকে ট্যাকলিং করা যায়। ট্যাকলিংয়ের সময় চোখ অবশ্যই বলের উপর রাখতে হবে। বিপক্ষ যখন তার ভারসাম্য রক্ষা করতে অসুবিধাবোধ করে ঠিক সে মুহূর্তেই ট্যাকলিং করা সোজা ও সুবিধাজনক। ট্যাকলিংয়ের সময় যাতে বিপজ্জনক চার্জ না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
কাজ-১: ফুটবল খেলার কলাকৌশল ব্যাখ্যা কর এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মাঠে প্রদর্শন কর। |