সুমি ও রনি দুই ভাইবোন। ওরা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেদের বিছানা পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখে। এরপর দাঁত ব্রাশ করে হাত মুখ ধোয়। নিজেদের পড়ার বই খাতা, কলম, পেন্সিল ইত্যাদি ব্যাগে গুছিয়ে রাখে। এগুলো শেষ হলে ওরা রান্নাঘরে গিয়ে বাবা-মায়ের কাজে সাহায্য করে। ওরা কখনো পানি এগিয়ে দেয়, কখনো রান্নার ঘরের আবর্জনা বাইরের ময়লার পাত্রে/ঝুড়িতে ফেলে দিয়ে আসে। আবার কখনো খাবার-দাবার বাটিতে গুছিয়ে খাওয়ার স্থানে এনে রাখে। এজন্যে বাবা-মা খুশি হয়ে দুজনকেই অনেক আদর করেন। সবাই মিলে সকালের নাস্তা খাওয়া শেষ হলে তারা নিজের প্লেট, বাটি ও মগ ধুয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে আসে। এরপর আগে থেকে গুছিয়ে রাখা পরিষ্কার পোশাক পরে বিদ্যালয়ে যায়। বিদ্যালয়ে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক মজা করে।
নিজের কাজ
আমরা প্রতিদিন নিজেদের এবং অন্যের জন্য অনেক কিছু করি। নিজের কাজ নিজে করায় বেশ আনন্দ আছে। অন্যদের ওপর নির্ভরশীলতাও কমে। এতে শরীর ও মন ভালো থাকে। তাছাড়া, আমাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, অভিভাবকগণ সবসময় আমাদের ভালো রাখার জন্য উপার্জন ও পারিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। আমরা নিজেদের কাজগুলো নিজেরা করে নিলে তাদের উপর থেকে চাপ কমে যায়; ফলে তারাও আমাদের অনেক ভালোবাসেন। আমাদের কিছু কাজ রয়েছে একেবারে ব্যক্তিগত; যেমন- দাঁত ব্রাশ করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, পোশাক পরিধান করা, গোসল করা, খাবার খাওয়া, খেলাধুলা করা ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও নিজের বিছানা গোছানো, খাবারের প্লেট ধোয়া, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, খেলনা, বই-খাতা ইত্যাদি গুছিয়ে রাখা, কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা ইত্যাদিও আমাদের নিজেদের কাজ। দাঁত ব্রাশ, খাওয়া, ঘুমের মতো একেবারে ব্যক্তিগত পরিচর্য্যামূলক কাজগুলো ছাড়াও নিজেদের ব্যক্তিগত পরিপাটিমূলক এই কাজগুলোকে প্রায়ই আমরা এড়িয়ে যেতে চাই । আবার কখনো অন্যের ওপর নিজেদের এই কাজগুলো চাপিয়ে দিই কিংবা এগুলোর জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করি। অথচ খাওয়া ও ঘুমানোর মতো ব্যক্তিগত এই কাজগুলোও আমাদের নিজেদেরই।
আমাদের মনে রাখতে হবে, নিজের কাজ নিজে করার মাঝে সামর্থ্য থাকার পরও অন্যকে দিয়ে করানোর মধ্যে কোনো বীরত্ব বা কৃতিত্ব নেই। তাই নিজের কাজগুলো নিজেরই করা উচিত। তা না হলে। অন্যের হাসির পাত্র হয়ে থাকতে হয় অথবা পরনির্ভরশীলতার জন্য অন্যের বোঝা হয়ে থাকতে হয়; যা খুবই ভোগান্তির। তাছাড়া এই কাজগুলো আমরা নিজেরা করলে বাড়ির অন্যান্য সদস্য, যারা আমাদের কাজগুলো করেন, তারা একটু অবসর পান। ফলে তারা আমাদের সঙ্গে সময় কাটানো, গল্প করা ও খেলার সুযোগ পান। এতে পারিবারিক সম্পর্ক অনেক মধুর হয়। তাছাড়া নিজের কাজ নিজে করলে আরও কিছু সুবিধা আছে, যেমন-
তাহলে চল, প্রত্যেকেই শপথ নিই-
আজ থেকে আমার কাজ আমি করি,
সুন্দর একটা জীবন গড়ি।
পরিবারের কাজ
বাড়িতে পরিবারের সব সদস্যই গুরুত্বপূর্ণ। সবারই ভালো থাকা এবং ভালোভাবে সময় কাটানোর অধিকার আছে। কিন্তু সবাইকে ভালো রাখার দায়িত্ব যদি পরিবারের এক বা দুইজনের ওপর ন্যস্ত থাকে তাহলে তাদের জন্য এটা খুবই কষ্টকর। তাই সবাই যদি নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী পারিবারিক কাজে একটু সহায়তা করি, তাহলে পরিবারের সদস্যদের নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। খুশি হয়ে তারা তখন আমাদের অনেক বেশি ভালোবাসবেন।
পরিবারের বিভিন্ন কাজ যেমন- রান্নার কাজে সাহায্য করা, বাগানে পানি দেওয়া, পোষা প্রাণী গবাদি পশুর খাবার দেওয়া, সেগুলোর থাকার স্থান পরিষ্কার করা, ঘর সাজানো গোছানো, পানি সংগ্রহ করা, নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলা, ঘর ঝাড়ু দেওয়া, থালা-বাসন ধোয়া, ঘর গোছানো, ছোট ভাইবোনদের যন্ত্র করা, বয়স্ক /প্রবীণদের সেবা করা ইত্যাদি। এগুলো কি খুব কঠিন কাজ? মোটেও না; বরং আমরা সবাই একটু সচেতন হয়ে যদি এই কাজগুলো নিয়মিত করি অথবা করার ক্ষেত্রে আমাদের সামর্থ অনুযায়ী তাদের সাহায্য করি, তাহলে আমাদের শরীর ও মন দুটোই ফুরফুরে থাকবে। |
এসো সবাই বিশ্বাস করি-
বাঁচতে হলে শিখতে হবে, লড়াইতে জিততে হবে
পৃথিবীজুড়ে কোভিন্ন-১৯ সংক্রমণের প্রথম দিকের ঘটনা। হাসপাতালে পাশাপাশি বেডে সুমির বাবা এবং লিটুর মাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। আট দিন আগে সুমির বাবার কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ায় তাকে নিয়ে তার মা হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে যাওয়ার দুই দিন পরে সুমির মা-ও পজিটিভ হন। এই ঘটনা শোনার পর বাড়ির কাজে সহায়তাকারী কাজে আসা বন্ধ করে দেন। ফলে সুমিকে বাড়িতে ওর দাদীর সঙ্গে একা থাকতে হয়। আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশী কেউ-ই ভয়ে সুমিদের বাসায় এসে থাকতে রাজি হয়নি। সুমি তার কাপড়-চোপড়, জিনিসপত্রে পুরো ঘর খুব এলোমেলো করে ফেলে দুই দিনেই। প্রথম কয়েক দিন সুমি ওর দাদীকে নিয়ে ফ্রিজে রাখা খাবার খেয়ে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু চতুর্থ দিনে ফ্রিজের সব খাবার শেষ হয়ে যায়। এদিকে সুমির বাবার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাকে বাড়িতে নিয়ে আসাও সম্ভব হচ্ছিল না।
সুমির দাদী অনেক বৃদ্ধ হওয়ায় তিনি রান্নাবান্না করতে পারেন না। ফলে কোনো খাবারই প্রস্তুত করতে না পারায় পঞ্চম দিন সে আর দাদী প্রায় না খেয়েই কাটাল। ষষ্ঠ দিনে সুমির মা বাড়ীর দারোয়ানকে অনুরোধ করে কিছু শুকনো খাবার কিনে পাঠালেন। দারোয়ান সে খাবার সিঁড়িতে রেখে চলে গেলেন। সুমি বের হয়ে দেখে, গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দুটো কাক এসে পলিথিনে রাখা খাবার ঠোকরা-ঠুকরি করে খাওয়া শুরু করেছে। দেখে ওর ভীষন কান্না পেল।
তবু ক্ষুধার জ্বালায় নিরুপায় হয়ে সে তার দাদীকে নিয়ে এই খাবারই খেলো। সপ্তম দিনে ইউটিউব দেখে সে ভাত রান্নার চেষ্টা করতে গেল এবং ম হাড়িতে হাত লেগে এক জায়গায় ফোস্কা পড়ে গেল। এদিকে এঁটো বাসন- কোসন আর ময়লা পচা গন্ধে রান্না ঘরে ঢুকতেও তার কষ্ট হচ্ছিল। অষ্টম দিনে তাদের খাবার পানিও শেষ হয়ে গেল। ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ থাকায় বেচারা দোকানে গিয়ে কিছু কিনে খাবে সে অবস্থাও নেই। এভাবে থাকতে গিয়ে দাদী ও নাতনি দুইজনে অসুস্থ হয়ে পড়ল।
এরপর লিটুর বাবা সুমির মায়ের সঙ্গে তাদের পরিবারের গল্প বলতে শুরু করলেন।
তারা দুজনেই কর্মজীবী। প্রতিদিন সকালে কাজে যান এবং সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। সকালে কাজে যাওয়ার আগে খাবার বানানোর কাজে তাদের দুই সন্তান লিটু ও রেখা সাহায্য করে। লিটু পানি এনে দেয়, রান্নাঘরের ময়লা পরিষ্কার করে, ঘর ঝাড়ু দেয়। লিটুর বোন রেখা কথা বলতে পারে না, কিন্তু ইশারা-ইঙ্গিত বুঝতে পারে। সে-ও সকালে তার বিছানা গোছায়, বাবাকে কাপড় ধোয়ায় সাহায্য করে এবং বাবা-মায়ের টিফিন বক্সে খাবার গুছিয়ে দেয়। এর মা রান্না শেষ করে ওদের খাবার গুছিয়ে কাজে যান।
ওরা সবাই মিলে সকালেই ঘরের কাজ শেষ করে। এজন্যে বিকেল বেলা গুরা স্কুল থেকে ফিরে খেলতে পারে। তারা বাসায় ফিরে ওদের সঙ্গে কখনো গল্প করেন, কখনো-বা লুডু খেলে সময় কাটান। ছুটির দিনে সবাই মিলে ঘরের কাজ শেষ করে ওরা পার্কে বেড়াতে যায়। মাঝে মাঝে তারা অফিসের কাজে শহরে যান। তাতেও তাদের দুই সন্তানের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। ওরা নিজেদের জন্য টুকটাক খাবার প্রস্তুত করতে পারে। ঘরের কাজ গুছিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে। তারা সব সময় বাচ্চাদের কাজের প্রশংসা করেন এবং তাদের দুজনকেই ভীষণ ভালোবাসেন। তাই এখন তারা হাসপাতালে থাকলেও বাচ্চাদের না খেয়ে থাকার মতো কোনো বিপদে পড়তে হয়নি।
একটু পরেই সুমির ফোন এলো, “মা, লিচু নামের একটি ছেলে আমাদের খাবার দিয়ে গেছে, দাদী আর আমি খেয়েছি। আর লিচু আমাকে সহজে খিচুড়ি রান্না শিখিয়ে দিয়ে গেছে। রাতের জন্য রান্নাও করেছি। তুমি কোনো চিন্তা করো না'।
পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে সব সময় আমরা একই রকম অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে পারব- এমনটি না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য যদি সবসময় পরিবারের সদস অথবা সাহায্যকারীর ওপর নির্ভর করি, তাহলে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারি। যেমন, হঠাৎ হয়তো মা-বাবা কিংবা যার কাজের ওপর আমরা নির্ভরশীল তিনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন, মারা যেতে পারেন অথবা অন্যত্র চলে যেতে পারেন। যদি আমরা নিজেরা নিজেদের এবং পারিবারিক কাজগুলো না শিখি, তাহলে আমাদের জীবন তখন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রত্যেকেরই উচিত ছোটবেলা থেকে যার যার সামর্থ অনুযায়ী কাজ করার অভ্যাস তৈরি করা। কাজ করার এই অভ্যাস আমাদের সুস্থ ও সুন্দর থাকতে সহায়তা করবে এবং যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে সাহস ও শক্তি জোগাবে; আমাদের আত্মবিশ্বাস (Self Confidence) বাড়িয়ে দিবে। ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনো অবস্থা মোকাবিলায় এটি একটি বড় অস্ত্র। এ কারণে প্রত্যেকের জন্য সামর্থ অনুযায়ী নিজের কাজ নিজে করা বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া বা অবহেলা করা একদম চলবে না। এর পাশাপাশি পরিবারের কাজেও আমাদের সবাইকে হাত লাগাতে হবে। |
নিজের কাজ এবং পরিবারের কাজের পরিকল্পনা
ছক ১.২ এ প্রথমে নিজের কাজের তালিকা তৈরি করো। এবার কোন কাজটি কখন করবে তার একটি পরিকল্পনা অন্য একটি কাগজে লিখে রাখো। যে কাজগুলো করেছো প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে সেগুলোতে টিক (/) চিহ্ন দাও এবং খুঁজে দেখো পরিকল্পনায় রাখা সবগুলো কাজ করেছো কিনা। যদি কোনো কাজ তুমি করতে না পারো, তাহলে কাজটি করতে না পারার কারণ আত্মপ্রতিফলন কলামে লেখ এবং তোমার অভিভাবক/পরিবারের যেকোনো বড় সদস্যের কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে মতামত নিয়ে রাখো। সাত দিন শেষ হলে শিক্ষকের কাছে জমা দাও।
উপরের ছকটিতে প্রথম সপ্তাহের হিসাব শিক্ষকের দেখানোর পর বাড়িতে নিজেদের জন্য একটি রুটিন তৈরী করো। রুটিন লেখা কাজ প্রতিদিন কুরছো কিনা তা নিজেরাই যাচাই করো।
ছক ১.৩ এ পরিবারের কোন কাজগুলো তুমি নিয়মিত করতে চাও তার একটি তালিকা তৈরি করো। এবার অন্য একটি কাগজে কাজগুলো কীভাবে করবে তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করো। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে যে কাজগুলো করেছো সেগুলোতে টিক (√) চিহ্ন দাও এবং খুঁজে দেখো পরিকল্পনায় রাখা সবগুলো কাজ করেছ কিনা। যদি কোনো কাজ তুমি করতে না পারো, তাহলে কাজটি করতে না পারার কারণ পাশের আত্মপ্রতিফলন কলামে লেখো এবং তোমার অভিভাবক/পরিবারের যেকোনো বড় সদস্যের কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে মতামত নিয়ে রাখো। সাত দিন শেষ হলে শিক্ষকের কাছে জমা দাও।
দৃশ্যপট ১: খাবার কখন
রুনু ও রাজু খেতে বসেছে। রাজু বাটি থেকে বেশির ভাগ খাবার নিজের প্লেটে তুলে নিয়ে গপাগপ খেতে শুরু করল। হঠাৎ তার গলায় খাবার আটকে যাওয়ায় সে কাশতে শুরু করল। সামনে পানি না থাকায় রুনু দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে মগে করে পানি এনে রাজুকে দিল। পানির মগটি রাজু এঁটো হাতেই ধরল। রুনু একটু বিরক্ত হয়ে। বলল, “মগটা নোংরা করেছো, মা-বাবা কেউ বাড়িতে নেই, খাওয়ার পর তোমাকেই ধুতে হবে কিন্তু।
উত্তর না দিয়ে রাজু মোবাইল ফোন টিপতে টিপতে খেতে থাকল; ফলে প্লেটের চারপাশে খাবার পড়ে জায়গাটাও নোংরা হয়ে গেল। প্লেটের সবটুকু খাবার শেষ না করেই রাজু উঠে গেল। কিছুই পরিচ্ছন্ন করল না। জুনু খেতে বসে দেখল বাটিতে খুব বেশি খাবার নেই; রুনুর ভীষণ মন খারাপ হলো; সে অল্প একটু খেয়ে উঠল। মা-বাবার কষ্ট হবে ভেবে সে সব পরিষ্কার করতে গেল। কিন্তু ওর খুব রাগ হলো কারণ, রাজুর প্লেট পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখল, ওখানে এর প্রিয় মাছের টুকরাটা অর্ধেক খাওয়া অবস্থায় পড়ে আছে। সব মিলিয়ে রুনুর দিনটা আজ খুব খারাপ। রুনু মনে মনে ঠিক করল, যেভাবেই হোক রাজুকে ভালো কাজগুলো শেখাতেই হবে।
খাবার গ্রহণের সময় যা যা মেনে চলব
|
প্রতিদিন সকালে রিনাদের বাড়িতে খুব হৈচৈ হয়। সকালে রিনা ও সুমন তাদের বিছানা গোছায় না, কাপড়চোপড় কোথায় রাখে তার কোনো ঠিক ঠিকানা থাকে না। স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে প্রায়ই তারা জুতা একেকটা একেক দিকে ছুড়ে মারে। মোজা রাখে আরেক জায়গায়। এ জন্যে রোজই দেখা যায়, স্কুলে যাওয়ার সময় কারও একটা মোজা পাওয়া যাচ্ছে না, কখনো-বা অনেক খোঁজাখুঁজির পর প্যান্টটা পাওয়া যায় টেবিলের তলায়! সুমনের একপাটি জুতা গতকাল স্কুলে যাওয়ার সময় খুঁজে না পাওয়ায় সে বাসার স্যান্ডেল পরেই স্কুলে গেল। আর তা দেখে ওর বন্ধুরা ওকে নিয়ে অনেক হাসাহাসি করল। নিয়ম ভঙ্গ করায় ওদের ক্লাস টিচারও ওকে ডেকে বেশ বকুনি দিলেন। সেদিন একটা বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার সময় রিনার বাইরে যাওয়ার জামা পাওয়া গেল দলা পাকানো অবস্থায়, ইস্ত্রিটা নষ্ট থাকায় আয়রন করাও সম্ভব হলো না। ফলে ওর বাবা ওকে দাওয়াতে নিতেই পারলেন না। সারাটাদিন এজন্যে তার খুব মন খারাপ ছিল।
এরপর বালিশগুলো মাথার দিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হয় যত্ন করে বিছানা সাজানো-গোছানো এবং নিয়মিত বিছানা প্রস্তুত করা একটি শৈল্পিক কাজ। সারাদিনের ব্যস্ততার শেষে মানুষ নিজেকে সঁপে দেয় বিছানায়। বিছানায় একটু আয়েশ দূর করে শরীর ও মনের ক্লান্তি । তাই আমাদের মন ভালো রাখার জন্য কিংবা সকাল থেকেই মনে প্রশান্তির ভাব আনার জন্য নিজের বিছানাটা সুন্দর করে গুছিয়ে দিনটা শুরু করতে পারি।
কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য সামগ্রী গোছানোর সময় যেদিকে লক্ষ্য রাখবো-
|
আগামী সাতদিন তোমার কাজগুলো করেছো কি না তা লক্ষ্য রাখো। সপ্তাহে কতদিন উক্ত কাজটি করেছো তা পূর্বের দুটি ছক থেকে হিসেব করে ছক ১.৪ এর প্রযোজ্য ঘরে টিক চিহ্ন (√) দাও। (যেমন- নিজের বিছানা যদি সপ্তাহে চারদিন গুছিয়ে থাকো, তাহলে চারদিনের ঘরে এবং যদি ছয়দিন গুছিয়ে থাকো তাহলে ছয়দিনের ঘরে টিক দিতে হবে)। অতিরিক্ত কোনো কাজ করে থাকলে সেগুলো ছকের ১৪ ও ১৫ নম্বরে লেখো এবং সপ্তাহে কতদিন করেছো সেই অনুযায়ী ঘরে টিক দাও। (অতিরিক্ত কাজ হতে পারে মা-বাবার পেশাগত কাজে সহায়তা করা, বাগান/গাছ পরিচর্যা করা, গৃহপালিত প্রাণীর যত্নে সহায়তা করা অথবা অন্য যেকোনো কাজ। হিসেব করে তোমার সদস্য খেতাব নির্ধারণ করো। তোমার অভিভাবক/পরিবারের যেকোনো বড় সদস্যের কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে মতামত/স্বাক্ষর নিয়ে রাখো। সাত দিন পর পর শিক্ষকের কাছে জমা দাও।
পরিবারের বাইরে আমাদের ভালো লাগার জায়গা হলো বিদ্যালয়। বিদ্যালয়কে ঘিরে থাকে আমাদের যত উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। বিদ্যালয়ে কাটানো সময়টুকু আমাদের নির্মল ভালবাসার স্মৃতি হয়ে দোলা দেয় সারা জীবন। বিদ্যালয়ে শিক্ষক আর সহপাঠীদের সঙ্গে গড়ে উঠা বন্ধুত্বের বন্ধন ভীষন আবেগময়। বিদ্যালয়ের সহপাঠীদের প্রতি আমাদের কী গভীর ভালোবাসার টানা আমরা সবাই চাই বিদ্যালয়ের প্রতি আমাদের এই টান যুগ যুগ ধরে থাকুক, যেন একে পুঁজি করে আমরা আমাদের এই ভালোবাসার প্রতিষ্ঠানকে স্বপ্নের মতো করে সাজিয়ে তুলতে পারি। আর এজন্য প্রয়োজন আমাদের অতি প্রিয় এই বিদ্যালয়ের পরিবেশকে আন্তরিক, আকর্ষনীয় ও সুন্দর করে তোলা। নিজের অতি আপন এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কাজে আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন যেন ফুটে ওঠে, সেই চেষ্টা করতে হবে।
আমাদের বিদ্যালয়ে আমরা কেমন দেখতে চাই, তা কল্পনা করে একটা ছবি আঁকি অথবা গল্প লিখি -
|
বক্স ১.১: আমার স্বপ্নের বিদ্যালয়
বিদ্যালয়ে আসি, আনন্দে ভাসি
অর্ণবদের ক্লাসে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৫০ জন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী ওদের ক্লাস প্রতিদিন পরিষ্কার করার সময় পান না। ফলে প্রায় সময়ই মেঝেটা কাগজের টুকরা, চিপস ও চকলেটের খোসা, ধুলো-বালি ইত্যাদিতে নোংরা হয়ে থাকে। ক্লাসের দেয়ালেও অনেক লেখালেখি, আঁকাআঁকিতে ভর্তি। গুদের ক্লাসে একটা গ্রুপ আছে, ওরা সব সময় পেছনে বসে হৈচৈ করে আর কাজে ফাঁকি দেয়। সারা দিন ক্লাসের অন্যদের পেছনে লেগে থাকা হলো ওদের সবচেয়ে আনন্দের কাজ। ওরা প্রায়ই ক্লাসে একেকজনকে একেকটা করে উদ্ভট নাম দেয় আর সেই নামে ডেকে তাকে খেপায়। সেদিন টিফিনের ফাঁকে সাম্য, সমতা আর খুশি মাঠে গল্প করছিল, হঠাৎ শুনতে পেল,
...... এদিকে আয়।
ওরা দেখল দুষ্টগুলোর ডাক শুনে অপু আর শান্ত দৌড়ে নারকেল গাছটার পেছনে নিজেদের আড়াল করল। আর তা দেখে দুষ্টগুলো হো হো করে হাসছে।
সামা বলল, এরকম ঘটনা রোজই ঘটে। দ্যাখ, ওরা কী ভীষন মন খারাপ করেছে।
সমতা বলল, ‘অপুর মা বলেছে, এদের বুলিইং এর ভয়ে বাড়িতে অপু নাকি খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে।’
খুশি বলল, জানিস, ওদের জন্য শান্ত প্রায়ই বাথরুমে ঢুকে কান্না করে। ইস৷ যদি ওই দুষ্টগুলো ভালো হয়ে যেতো, তাহলে স্কুলে আমাদের সবার কত আনন্দই না হতো!
সামা বলল, 'ওরা নিচের ক্লাসের বাচ্চাদেরও খুব শাসন করে, যখন তখন ধমকায়, এটা সেটা কাজ ধরিয়ে দেয়। অষ্টম শ্রেণির এক আপুর বাবা পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করে জিনিসপত্র বিক্রি করে বলে ওকে দেখলেই এরা ‘লেসফিতা আপু' ডাকে। এই আপু এ কারণে মন খারাপ করে প্রায়ই স্কুল আসে না। এ সব কিছুর একটা বিহিত করা দরকার। চল, আমরা ওদের সঙ্গে কথা বলে ওদেরকে একটু বোঝানোর চেষ্টা করি।'
ওরা সবাই তখন দুষ্টগুলোর কাছে এগিয়ে গেল, এদেরকে বলল, 'দ্যাখো, বন্ধু, তোমরা যাদের নিয়ে এত হাসছ, ওরা কীভাবে কাঁপছে। আচ্ছা, তোমরাই বলো, এভাবে সবার আনন্দ নষ্ট করে কি নিজে আনন্দ পাওয়া যায়?
দুষ্টগুলো একজন আরেকজনের দিকে তাকাল,
- তা-ই! কাঁদছে? কান্নার কী আছে? আমরা তো মজা করেছি।"
খুশি বললো, 'কিন্তু দ্যাখো বন্ধু, তোমাদের মজা ওদেরকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে।
সমতা ওদেরকে সব কথা খুলে বলল। সব শুনে দুষ্টরাও মন খারাপ করল। বলল, চল, আমরা ওদেরকে নিয়ে আসি।' বলতে বলতে সবাই মিলে নারকেল গাছের পেছনে গিয়ে অপু আর শান্তকে ডেকে আনল। ওদের সঙ্গে কাট্টিবাটি দিয়ে বলল, 'এখন থেকে আমরা সবাই বন্ধু। মজা করতে গিয়ে কেউ কাউকে এখন থেকে আর কষ্ট দেব না।'
মুহূর্তেই সবার মন ভালো হয়ে গেল।
সবাই সবার হাত ধরে উঁচুতে তুলে চিৎকার করল, 'হুররে! কী মজা! চল সবাই উড়রে।'
চলো খুঁজে বের করি
বিদ্যালয়ে আমাদের কাজ ও দায়িত্ব | |
---|---|
নিয়মিত কাজ ও দায়িত্ব | বিশেষ আনুষ্ঠানিক কাজ ও দায়িত্ব |
|
|
বিদ্যালয়ে আমাদের দায়িত্ব
আমরা দিনের অনেকটা সময় বিদ্যালয়ে কাটাই। তাই এখানে কোনো মনব্যথার ঘটনা ঘটলে তা সারা দিনের কাজের ওপর প্রভাব ফেলে। আমাদের মনোজগতে কষ্টের ছাপ ফেলে। একটি বিদ্যালয়ে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব শুধু শিক্ষকের একার নয়। আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজের দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করি তাহলে এটিই হতে পারে আমাদের অনেক আনন্দের ঠিকানা। এবার আসো দেখে নিই, বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনে আমরা কতটুকু সচেতন!
সুন্দরভাবে বসবাসের প্রয়োজনেই সমাজের সৃষ্টি। আমরা প্রত্যেকেই সমাজের কোনো না কোনো কাজে লাগতে পারি। এ জন্য আমাদের ইচ্ছাটাই প্রধান। একটা সুখী, সুন্দর সমাজ আমরা সকলে মিলে ইচ্ছে করলেই গড়ে তুলতে পারি। আমরা এখনো অনেক ছোট হলেও সমাজের প্রতি আমাদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। এসো, একবার দেখে নিই আমাদের দায়িত্বগুলো-
আরও দেখুন...