নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) -
বিজ্ঞান অনুশীলন বই -
| NCTB BOOK
30
30
খেলার মাঠে বিজ্ঞান
খেলাধূলা করতে তোমাদের কেমন লাগে? বছরের শুরুতে নিশ্চয়ই তোমাদের স্কুলে অনেক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে? তার ফাঁকে যদি একটা খেলাধুলার ইভেন্টের আয়োজন করা যায় তাহলে নিশ্চয়ই মন্দ হয় না! আর এই খেলার ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞানের অনেকগুলো বিষয় শেখা হয়ে গেলে তো এক ঢিলে দুই পাখি!
প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন:
কেমন আছো তোমরা সবাই? বিজ্ঞান বিষয়ে বছরের প্রথম শিখন অভিজ্ঞতায় তোমাদের সবাইকে স্বাগতম!
খুব সিরিয়াস পড়াশোনার আগে একটু খেলাধুলা নিয়ে বরং আলাপ করা যাক। খেলাধুলা করতে তোমাদের কেমন লাগে? তোমাদের মধ্যে নিশ্চয় এমন অনেকে আছো যারা বিভিন্ন খেলায় অনেক ভালো; কেউ হয়তো দাবা, কেউ হয়তো ক্যারাম বোর্ড, কেউ ফুটবল বা ক্রিকেট, কেউবা হয়তো দৌড়ে খুব ভালো।
তোমাদের যেসব খেলা খেলতে ভালো লাগে সেটা দিয়ে স্কুলে একটা আয়োজন করলে কেমন হয় বলতো? তবে সেজন্য এই আয়োজনের সমস্ত কাজটাই তোমাদেরকেই করতে হবে। আয়োজনের জন্য শুরুতেই ঠিক করে নাও কী কী ইভেন্ট তোমাদের এই খেলায় থাকবে। কিছু পরিচিত ইভেন্ট থাকতে পারে যেমন দৌড়, ভার নিক্ষেপ, ক্যারাম বোর্ড ইত্যাদি। এর বাইরেও তোমরা যদি কোনো ইভেন্ট রাখতে চাও সেটা নিজেরা কথা বলে ঠিক করে নাও।
ক্লাসে সবাই ৫-৬ জনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যাও। দলের কে কোন খেলায় অংশগ্রহণ করতে চাও, সেটা ঠিক করে নাও।
ক্লাসে মোট কতগুলো দল হলো হিসাব করো এবং তোমাদের মধ্যে এক বা একাধিক দল মিলে এক একটি ইভেন্ট আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে, সেই অনুযায়ী কাজ ভাগ করে নাও।
চূড়ান্ত খেলাধুলার ইভেন্টের জন্য একটা তারিখ ঠিক করে নাও। এই ব্যাপারে শিক্ষকের পরামর্শ নিতে পারো। কোন একটা ছুটির দিন এই আয়োজন করা যেতে পারে। কিংবা কোন একদিন স্কুলের পরের ফাঁকা সময় টা তো তোমরা এই আয়োজন করতে পারো।
চূড়ান্ত খেলার আগে সবগুলো ইভেন্ট নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তুতি প্রয়োজন। শুরুতেই সবচেয়ে পরিচিত আইটেম- দৌড়, তার প্রস্তুতি নেয়া যাক।
দৌড় প্রতিযোগিতার দায়িত্বে যেসব দল থাকবে তারা প্র্যাকটিসের সময়টাতেও সকল শিক্ষার্থীকে পর্যবেক্ষণ করবে এবং কাদের পারফরম্যান্স ভালো তা দেখে সেই অনুযায়ী চূড়ান্ত খেলায় কারা কারা অংশগ্রহণ করতে পারে তার একটি তালিকা তৈরি করবে।
শুরু করা যাক প্র্যাকটিস সেশন।
দৌড়ের প্র্যাকটিসে তোমাদের দল থেকে কে অংশগ্রহণ করেছে তার নামটা এখানে লিখে রাখো।
প্র্যাকটিস তো হলো এবার একটু চিন্তা করে দেখো দৌড়ের সময় কোনো দৌড়বিদ কি হঠাৎ করে থেমে যেতে পারে? খেয়াল করে দেখো ঠিক যেখানে দৌড়ে ট্রাক শেষ হয়- ওই যে যেখানে সবাই লাল ফিতা হাতে দাঁড়িয়ে থাকে; সেখানটা এসে কেউ কি হুট করে থেমে যেতে পারে? নাকি তাকে কারো কিছুটা দৌড়ে তারপরে থামতে হয়?
শুধু দৌড়ের কথাই বলছি কেন? গাড়িতে বাসে বা যে কোনো দ্রুতগামী যানবাহনে চলাচল করার সময় গাড়ি যদি হঠাৎ করে থেমে যায় তাহলে কি আমরা সাথে সাথে থামতে পারি নাকি সামনের দিকে ঝুঁকে যাই? এই ঝুঁকে যাওয়ার ফলে অনেক সময় বড়ো বড়ো দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। যে কারণে সবসময় যাত্রীদের গাড়ির সিট বেল্ট বেঁধে রাখতে বলা হয়।
এখন ভেবে দেখো এই ঝুঁকে যাওয়ার কারণটাই বা কী? কেনই বা আমরা দৌড়ের সময় হঠাৎ করে থেমে যেতে পারি না?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে একটা ছোট্ট পরীক্ষা করে দেখা যাক।
একটি গ্লাসের ওপরে এক টুকরো শক্ত কাগজ বা কার্ডবোর্ডের ওপর একটি মুদ্রা রাখো।
এবার ঝট করে টান দিয়ে কাগজটি সরিয়ে নাও। কী ঘটছে? মুদ্রাটি কি গ্লাসের ভেতরে গিয়ে পড়েছে? কেন? আগের দুইটি উদাহরণ যেমন দৌড় ও গাড়ি ব্রেকের ঘটনার সাথে কি এই ঘটনার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছো?
এবার শিক্ষকসহ তোমার অন্য সহপাঠীদের সাথে আলাপ করে দেখ তারা কী লিখেছে।
তোমাদের বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে 'বল, চাপ ও শক্তি' অধ্যায়ে নিউটনের প্রথম সূত্র এবং স্থিতিজড়তা ও গতিজড়তা সম্পর্কে পড়ে নাও।
কোন বস্তুর তার নিজের অবস্থায় থাকতে চাওয়ার এই যে প্রবণতা অর্থাৎ জড়তার ব্যাখ্যা কি বুঝতে পেরেছ? জড়তার আরো কিছু উদাহরণ কি তোমরা তোমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে দিতে পারবে?
এবার নিজে চিন্তা করে নিচের প্রশ্ন দুইটির উত্তর লেখো।
তোমরা কখনো কম্বল পিটিয়ে পরিষ্কার করতে দেখেছ? তোষক বা কম্বলকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে এর ধুলা বের করা হয়, এই ঘটনার সাথে জড়তার কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও?
ক্রিকেট খেলা দেখতে তোমাদের কেমন লাগে? তোমাদের মধ্যে কারা কারা স্পিন বোলিং আর পেস বোলিং এর পার্থক্য জানো? যারা জানো না তারা তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারো। এবার একটু ভেবে উত্তর দাও, স্পিন বোলাররা মোটামুটি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেই বল করেন, কিন্তু পেস বোলাররা দূর থেকে ছুটে এসে বল করেন কেন?
তোমাদের খেলার প্রস্তুতি কেমন চলছে? দৌড়ের পাশাপাশি অন্য যেসব ইভেন্ট তোমাদের খেলায় থাকবে সেগুলোর প্রস্তুতিও নিশ্চয়ই নিচ্ছ?
আজকে চলো ভার নিক্ষেপের প্রস্তুতি নেয়া যাক। তোমাদের বিভিন্ন দল থেকে কে কে ভার নিক্ষেপের খেলায় অংশগ্রহণ করতে চাও এই বিষয়ে নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাহলে চলো প্রস্তুতিতে যাওয়া যাক।
প্র্যাকটিস সেশন তো হলো এখন এই খেলাটা নিয়ে একটু আলোচনা করি চলো। তোমরা তোমরা যেই ভার বা বস্তু নিয়ে এই খেলার প্র্যাকটিস করেছ তার ভর কেমন ছিল? কোন দলের অংশগ্রহণকারী কতদূর পর্যন্ত ভার নিক্ষেপ করতে পেরেছ? এই ভর যদি বিভিন্ন হয়, অর্থাৎ এই ভর যদি কম বেশি হয় তাহলে কি এই দূরত্ব কম বেশি হবে? হলে কেন? এর উত্তর খোঁজার আগে বিভিন্ন ভরের কিছু বস্তু একইভাবে ছুঁড়ে দিয়ে দেখো। বিভিন্ন ভরের বস্তু একই রকম জোরে ছুড়ে মারলে সেগুলো কি একই দূরত্বে গিয়ে পড়ে? কেন নয়? তোমাদের উত্তর নিচের ফাঁকা জায়গায় লিখে রাখো।
বুঝতেই পারছ কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে তার ফলাফল কি দাঁড়াবে তা তার ভর এবং দুটার উপরে নির্ভর করে। আর এই দুটিকে একত্রে বোঝাতে ভরবেগ নামক একটা রাশি ব্যবহার করা হয়। ভরবেগ হিসাব করার জন্য কোনো বস্তুর ভর এবং বেগের মানকে গুণ করে এই গুণফলকে ব্যবহার করা হয়।
এখন তোমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ভর এবং বেগের মানের গুণফল হিসাব করেই যদি কাজ চলে যায় তাহলে ভরবেগ নামক আলাদা একটা রাশির কি প্রয়োজন? এই বিষয়টি ভালো করে বুঝে নেয়ার জন্য তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে ভরবেগের ধারণা অংশটুকু নিজেরা ভালো করে পড়ে নাও। পড়া হয়ে গেলে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে দেখো। ভর এবং বেগের গুণফল দিয়েই যে সব সময় হিসাব করা সম্ভব হয় না তা কি বুঝতে পেরেছ?
শিক্ষকসহ ক্লাসের বাকিদের সাথে আলোচনা করো। এবার অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে ভরবেগের হিসাব করার একটি উদাহরণ দেয়া আছে। উদাহরণটি দেখো বুঝতে পারো কিনা। এরপর নিচের ফাঁকাজায়গায় প্রদত্ত সমস্যাটির সমাধান করো।
তোমার 50 kg ভরের বন্ধু একটি 250 kg ভরের মোটরসাইকেল 20 m/s বেগে চালাচ্ছে। তুমি কি ভরবেগ বের করতে পারবে?
এবার আরেকটি বিষয় ভেবে দেখা যাক। ভার নিক্ষেপের সময় স্থির অবস্থা থেকে কোনো বস্তুকে তোমরা গতিশীল করার চেষ্টা করেছ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বস্তুটিকে তোমরা যত জোরে ছুঁড়তে পেরেছ, অর্থাৎ যত বেশি গতিশীল করতে পেরেছ নিশ্চয়ই ভার, মানে বস্তুটি তত বেশি দূর গিয়ে পড়েছে। তারমানে এখানে স্থির অবস্থা থেকে নির্দিষ্ট সময় তার গতি কতখানি বেড়েছে সেটাও একটি বিবেচ্য বিষয়। এই যে বেগের পরিবর্তনের হার, তা কতটা হবে এটি বস্তুর ভরবেগের সাথে সম্পর্কিত; এটা নিশ্চয়ই তোমরা ভার নিক্ষেপের সময় টের পেয়েছ। এই যে বস্তুটির ভরবেগ, সময়ের সাথে তার পরিবর্তনের হার, এবং তোমার প্রযুক্ত বল অর্থাৎ তুমি কত জোরে বস্তুটিকে ছুঁড়ে দিয়েছো এই বিষয়গুলোর সম্পর্ক নিয়ে নিউটন তার দ্বিতীয় গতিসূত্রটি দিয়েছেন।
অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র এবং তার ব্যাখ্যা তোমার বন্ধুদের সাথে জোড়ায় পড়ো এবং আলোচনা করো। প্রয়োজনে শিক্ষকের সহায়তা নাও। এবার বিভিন্ন দল থেকে লটারির মাধ্যমে একজন করে শিক্ষার্থী অন্য দলের কাছে গিয়ে উদাহরণসহ সূত্রটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করো, অন্য দলের সদস্যদের কাজ হবে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝে নেয়ার চেষ্টা করা। কোনো বিষয়ে দ্বিমত হলে, বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে শিক্ষককে জিজ্ঞেস করে ধারণা পরিষ্কার করে নাও।
ভরবেগের পরিবর্তনের হার কীভাবে হিসাব করতে হয় তা কি বুঝতে পেরেছ?
এরপর নিচের ফাঁকা জায়গায় প্রদত্ত সমস্যাটির সমাধান করো।
তোমার বন্ধু ব্রেক করে 10s এর মধ্যে মোটরসাইকেলটি পুরোপুরি থামিয়ে ফেলল। এক্ষেত্রে ভরবেগের পরিবর্তনের হার নির্ণয় করতে পারবে? এজন্য মোটরসাইকেলের ওপরে কী পরিমাণ বল প্রয়োগ করতে হয়েছে তা কী জানা যাবে?
বল সম্পর্কে তোমরা তো জানলে। এর আগের ক্লাসে হয়তো বল সম্পর্কে তোমরা কিছুটা ধারণা পেয়েছ। কিন্তু বল মোট কত ধরনের হয় বা মহাবিশ্বে মোট কত রকম বল আছে তা কি তোমরা জানো?
মহাবিশ্বে মোট কয়টি মৌলিক বল রয়েছে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক বছর ধরে গবেষণা করেছেন। এই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নিতে তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে মৌলিক বলের ধারণা অংশটুকু বন্ধুদের সাথে মিলে একসাথে পড়ে নাও। পড়া হয়ে গেলে তারপর চার ধরনের মৌলিক বল সম্পর্কে নিজের আলোচনা করো প্রয়োজনে শিক্ষকের সহায়তা নাও।
এই চার ধরনের মৌলিক বলের মধ্যে কোন বলটি সবচেয়ে বেশি সবল, কোন বলটি সবচেয়ে বেশি দুর্বল, কোন বলের পাল্লা কতটুকু? নিজের ফাঁকা জায়গায় মৌলিক বলসমূহের মান ও পাল্লার ভিত্তিতে সবল থেকে দুর্বল কিংবা বেশি থেকে কম এভাবে চারটি মৌলিক বলকে ক্রমান্বয়ে সাজাও।
পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেশন
তোমাদের খেলাধুলার প্রস্তুতি কতদূর? দৌড়, ভার নিক্ষেপসহ বিভিন্ন খেলার প্রস্তুতি তো নিয়েছ। এই সেশনে ক্যারাম খেলার প্র্যাকটিস করা যাক।
যথারীতি প্রতিটি দল থেকে যেই যেই সদস্য ক্যারাম খেলায় অংশগ্রহণ করবে তারা প্র্যাকটিসে যোগ দাও।
প্র্যাকটিস শেষ? তাহলে এবার এই খেলাটা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। ক্যারাম খেলার সময় লক্ষ করেছ যে, ক্যারাম খেলার স্ট্রাইক যত জোরে টোকা দেয়া হয় সেটি উল্টো পাশে ধাক্কা খেয়ে তত জোরে ফিরে আসে! আরেকবার দেখে নিতে চাইলে আবার স্ট্রাইক এর টোকা দিয়ে দেখো। একইরকম তুমি যদি কোনো দেয়াল বা শক্ত জায়গায় ঘুসি দাও, যত জোরে ঘুসি দেবে তত বেশি ব্যথা পাবে এটা নিশ্চয়ই তোমাদের বলে দিতে হবে না। বেশি জোরে ঘুসি দিয়ে আবার পরীক্ষা করে দেখতে যেও না! এই সহজ সরল সূত্রটি নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র। তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে নিউটনের তৃতীয় সূত্র সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জেনে নাও। শিক্ষকসহ ক্লাসের বাকিদের সাথে আলোচনা করো।
এই সূত্র কাজে লাগিয়ে কী ধরনের সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে বলতো? অনুশীলন বইয়ে উদাহরণ হিসেবে এই ধরনের একটি গাণিতিক সমস্যা রয়েছে। সেটা একবার দেখে নাও।
নিচের ফাঁকা জায়গায় প্রদত্ত সমস্যাটির সমাধান করো।
একটি কাঠের পাটাতন সর্বোচ্চ 500 N প্রতিক্রিয়া বল দিতে পারে। একটি সাইকেলের ভর 15 kg এবং স্কুটারের ভর 110 kg হলে, কোনটিকে এই পাটাতনে রেখে মেরামত করা যাবে?
নিউটনের তিনটি গতি সূত্র নিয়ে তো আলোচনা হলো। আমরা এখন বিজ্ঞানের যেসব তথ্য বা সূত্র পড়ে থাকি সেগুলো কিন্তু একদিনে আসেনি। যেমন ধরো একটু আগেই তোমরা জেনেছ, চার রকম মৌলিক বলের কথা। যার মধ্যে একটি হচ্ছে মহাকর্ষ বল। এই মহাকর্ষ বলের ধরনটা কেমন? সেটা নিয়ে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন। পৃথিবী কেন সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে, আবার গোলাকার পৃথিবীর উপর থেকে কেন কোনো কিছু পড়ে যায় না, চাঁদ কীভাবে নির্দিষ্ট কক্ষপথে আটকে থাকে, এ সকল প্রশ্ন নিয়ে বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে মাথা ঘামিয়েছেন। অনেক অনেক পরে স্যার আইজ্যাক নিউটন মহাকর্ষ বল কে ব্যাখ্যা করেন, তিনি এও বলেন, যে কারণে আমরা উপর থেকে ধুপ করে পড়ে যাই, সেই একই বলের কারণে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে।
তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে মহাকর্ষ বল, নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র, এবং ওজনের ধারণা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে নাও। শিক্ষকসহ ক্লাসের অন্য বন্ধুদের সাথে আলোচনা করো। মহাকর্ষ সূত্রের সাহায্যে কীভাবে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা যায় তা নিশ্চয়ই দেখেছ। তোমরাও কি এরকম সমস্যা সমাধান করতে পারবে?
নিচের ফাঁকা জায়গায় প্রদত্ত সমস্যাটির সমাধান করো।
তোমার কাছে এমন একটি দড়ি আছে, যা 200 N বলে টানলে ছিঁড়ে যাবে। এই দড়িটি দিয়ে তোমাকে একটি বাক্স ঝুলিয়ে রাখতে দেয়া হলো। তুমি কী যেকোনো ভরের বাক্স ঝোলাতে পারবে?
এবার একটু ভেবে দেখো, ভার নিক্ষেপের খেলায় তোমরা যখন বস্তুটি দূরে ছুড়ে মারো পৃথিবীতে না হয়ে একই খেলাটা চাঁদে খেললে একই বল প্রয়োগে বস্তুটি কি বেশি দূরে যাবে নাকি কম? তোমাদের উত্তর নিচে ফাঁকা জায়গায় লিখে রাখ।
মঙ্গল গ্রহের ভর 6.4 × 1023 kg এবং ব্যাসার্ধ 3390 km হলে, তুমি কি মঙ্গল গ্রহে অভিকর্ষজ ত্বরণ নির্ণয় করতে পারবে? মঙ্গল গ্রহে তোমার ওজন কত হবে? (সবাই নিজের ভর ব্যবহার করে হিসাব করো। জানা না থাকলে মেপে নাও।)
সপ্তম, অষ্টম ও নবম সেশন
ধরো তুমি একটি বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে দোকান থেকে বেশ কিছু মালামাল কিনে ফিরছ। এখন ব্যাগের হাতলটা কেমন হলে তোমার কষ্ট কম হবে? চওড়া হলে না কি চিকন হলে? কিংবা তোমাদের স্কুল ব্যাগের কথাই ধরো, স্কুলব্যাগের স্ট্র্যাপ যদি চিকন হয় তাহলে কি ব্যাগ বহন করতে কষ্ট বেশি হবে নাকি কম? তোমাদের উত্তর এবং ব্যাখ্যা নিচে লিখে রাখো।
একইভাবে আরেকটা প্রশ্ন ভেবে দেখো, সবজি বা ফল কাটার জন্য আমরা যখন ছুরি ব্যবহার করি, ছুরিটি ভোতা হলে আমাদের কাটতে কষ্ট হয় কেন? তোমাদের উত্তর নিয়ে নিজেরা আলোচনা করো।
বলের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাশি হচ্ছে চাপ। তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে চাপ এবং এই সম্পর্কিত গাণিতিক সমস্যার উদাহরণটা ভালো করে পড়ে নাও। নিচের ফাঁকা জায়গায় প্রদত্ত সমস্যা দুইটির সমাধান করো।
আগের উদাহরণে উল্লেখিত স্কুটারের প্রতিটি চাকার মাটি স্পর্শ করে থাকা অংশের ক্ষেত্রফল 10 cm² হলে তুমি কী প্রতি চাকায় স্কুটারটি কত চাপ দিচ্ছে, সেটা বের করতে পারবে? মেরামতের এক পর্যায়ে স্কুটারটিকে যদি এক চাকায় ভর দিয়ে রাখা হয়, তখন ঐ চাকায় চাপ কী একই থাকবে?
বাতাসের গড় ঘনত্ব 1.3 kg/m³ এবং স্বাভাবিক পরিবেশে বাতাসের চাপ 101,325 N/m² হয়ে থাকে। এই তথ্য থেকে তুমি কি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উচ্চতা বের করতে পারবে?
তোমরা অনেকেই হয়তো বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের কথা শুনেছ।
তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে আর্কিমিডিসের সূত্র এবং প্লবতা সম্পর্কে ভালোভাবে পড়ে নাও।
তোমাদের মধ্যে কারা কারা সাঁতার জানো? একবার ভেবে দেখো তো সাঁতারের সময় আমাদের ওজন বেশি মনে হয় নাকি কম? কেন? তোমাদের উত্তর নিচের ফাঁকা জায়গায় লিখে রাখো।
মানবদেহের গড় ঘনত্ব 985 kg/m³ বিশুদ্ধ পানির ঘনত্ব 1000 kg/m³ এবং ডেড সী এর পানির ঘনত্ব 1240 kg/m³ তুমি বিশুদ্ধ পানি ভরা সুইমিং পুলে নামলে তোমার শরীরের কয় শতাংশ ডুবে থাকবে? তুমি যদি ডেড সী-তে সাঁতার কাটার সুযোগ পেতে, সেক্ষেত্রে তোমার শরীরের কত শতাংশ ভেসে থাকত?
দশম দশম ও ও একাদশ সেশন
এই সেশনে একটা নতুন খেলার আয়োজন করা যাক। গুলতি তো তোমরা অনেকেই চেনো তাই না? এই গুলতির বড়ো আকারের রূপ মানুষের আদিমতম অস্ত্রের মধ্যে একটি। না না ভয় পেয়ো না, তোমাদেরকে অস্ত্রপাতি বানাতে হবে না। তবে খুব সাধারণ একটি গুলতি বা catapult বানিয়ে একটি ছোট্ট খেলার আয়োজন করতে হবে।
নিচে একটি catapult বানানোর একদম সহজ উপায় বলা আছে। তোমরা যার যার দলের সাথে বসে নিজেরা একটি ক্যাটাপল্ট বানানোর পরিকল্পনা করতে পারো এবং সেই অনুযায়ী সেটি বানাতে পারো। চাইলে একেবারে অভিনব কোন বুদ্ধিও বের করতে পারো, তবে মনে রেখো খরচ সাপেক্ষ উপকরণ ব্যবহার করতে হয় এমন কোনো পরিকল্পনা করা যাবে না।
catapult বানানোর প্রক্রিয়া:
১০টা পুরনো আইস্ক্রিমের কাঠি জোগাড় করো।
এবার ৭টি কাঠি একসাথে করে দুই পাশে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে নাও।
এবার আরেকটি আইসক্রিমের কাঠি নাও। কাঠিটির গোড়ার দিকে দুই পাশে একটি গর্তের মতো করে চেঁছে বা কেটে নাও। এবার ছবির মতো করে ৭টি কাঠির বান্ডিলের মাঝামাঝি জায়গায় একটা কাঠি লম্বালম্বি রেখে ৯ নম্বর কাঠি দিয়ে অন্যপাশে আটকে নাও। ৭টির বান্ডিলের সাথে এই ৯ নম্বর কাঠিকেও একইভাবে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে নাও।
বাকি থাকল একটি আইস্ক্রিমের কাঠি। এই ১০ নম্বর কাঠির গোড়ার দিকে একইভাবে দুইপাশে সামান্য অংশ কেটে নাও। বান্ডিলের উপরে কাঠিটিকে লম্বালম্বি রাখো, এবং ৮ নম্বর কাঠির গোড়ার সাথে মিলিয়ে কেটে রাখা অংশে রাবারব্যান্ড দিয়ে কাঠি দুইটিকে ভালোভাবে আটকে দাও।
উপরের কাঠিটির সাথে একটি পুরনো প্লাস্টিকের চামচ বা এই জাতীয় কিছু রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকে দাও।
তৈরি হয়ে গেল তোমাদের গুলতি বা catapult। এবার এই কাগজ মুড়িয়ে ছোট ছোট বলের মতো বানাও, চামচের উপরে রেখে চামচসহ কাঠিটিকে টেনে পিছিয়ে নিয়ে ছেড়ে দিলে সেটি কাগজের বলকে দূরে ছুঁড়ে মারবে। পরীক্ষা করে দেখো।
সব দলের গুলতি বানানো শেষ? এবার তাহলে খেলা শুরু করা যাক। প্রত্যেক দল পাঁচটি করে কাগজের বল বানিয়ে পাশে রাখবে। সব দলের গুলতি পাশাপাশি এক সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখো। এবার যার যার দলের গুলতি ব্যবহার করে একটা একটা করে কাগজের বল ছুড়ে মারবে এবং সেইটি কত দূরে গিয়ে পড়ল তার হিসাব রাখবে। পাঁচবারের মধ্যে যেই বার কাগজের বল সর্বোচ্চ দূরত্বে গিয়ে পড়বে সেটি হিসাব করবে।
এবার সবার হিসাব মিলিয়ে দেখো, কোন দলের কাগজের বল সবচেয়ে বেশি দূরে গিয়ে পড়েছে? কেন? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও, প্রয়োজনে হিসাব করে দেখাও। দলে আলোচনা করে তোমাদের উত্তর নিচের ফাঁকা জায়গায় লিখে রাখো।
একটু ভেবে দেখো তো, তোমাদের Catapult এর চামচের হাতল যদি একটু লম্বা হতো বা চামচটা আরেকটু উঁচুতে আটকানো হতো, তাহলে কি তোমাদের ছুঁড়ে দেওয়া কাগজের বল আরও দূরে গিয়ে পড়তো? কেন?
দলে আলোচনা করো এবং তোমাদের দলের উত্তর নিচে লিখে রাখো।
অনেক তো কাজ হলো। এবার ঠান্ডা মাথায় বসে এই পুরো শিখন অভিজ্ঞতা তোমরা যা যা করলে সে কাজগুলো একবার মনে মনে ভেবে নাও। এবার নিচে প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজে নিজে চিন্তা করে লিখে রাখো।
Catapult বা গুলতি ব্যবহারের প্রক্রিয়ায় নিউটনের তিনটি গতি সূত্র কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে?