গ্রামীণ বসতির ধরন ও বিন্যাস (Patterns of rural settlements)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - মানব বসতি | NCTB BOOK
3k
Summary

গ্রামীণ বসতিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. গোষ্ঠীবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ বসতি (Nucleated settlement):

    এই ধরনের বসতিতে বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রিত হয়ে বসবাস করে। এর ফলে সামাজিক বন্ধন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে এটি শহরে রূপান্তরিত হতে পারে।

  2. বিক্ষিপ্ত বসতি (Dispersed settlement):

    এ ধরনের বসতিতে পরিবারগুলো ছড়ানো-ছিটানো থাকে। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের বিল অঞ্চল এবং কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের খামার বসতি উল্লেখ করা যায়। বিক্ষিপ্ত বসতির বৈশিষ্ট্য হলো দূরত্ব, অতি ক্ষুদ্র বসতি, এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা।

  3. রৈখিক কাভি (Linear settlement):

    বাড়িগুলো একই সরলরেখায় গড়ে উঠেছে, যা প্রধানত প্রাকৃতিক ও কিছু সামাজিক কারণে গঠিত। নদী, রাস্তা প্রভৃতির আশপাশে এই ধরনের বসতি দেখা যায়।

গ্রামীণ বসতির ধরন সমূহের জন্য একটি চার্ট তৈরি করার কাজ প্রয়োজন।

অবস্থানের প্রেক্ষিতে ও বাসগৃহসমূহের পরস্পরের ব্যবধানের ভিত্তিতে গ্রামীণ বসতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় :

১। গোষ্ঠীবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ বসতি (Nucleated settlement) : এই ধরনের বসতিতে কোনো
একস্থানে বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রিত হয়ে বসবাস করে (চিত্র ৮.৩)। এই ধরনের বসতি আয়তনে
ছোটগ্রাম হতে পারে, আবার পৌরও হতে পারে। এই ধরনের বসতির যে লক্ষণ চোখে পড়ে তা হলো এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির দূরত্ব কম ও বাসগৃহের একত্রে সমাবেশ। সামাজিক বন্ধন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্যই বাসগৃহগুলোর মধ্যে পরস্পরের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। যদি স্থানটি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উন্নত হয়, তবে সেখানে আরও বসতি ও রাস্তা গড়ে উঠবে। এভাবে একাধিক রাস্তার সংযোগস্থলে বর্ধিষ্ণু বসতিটি কালক্রমে শহর বা নগরে রূপান্তরিত হবে। সমাজবদ্ধ জীব মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনে এবং নিরাপত্তার জন্য একত্রে বসবাস করতে চায়। এছাড়া ভূপ্রকৃতি, উর্বর মাটি ও জলের উৎসের উপর নির্ভর করে এ ধরনের বসতি গড়ে ওঠে।

২। বিক্ষিপ্ত বসতি (Dispersed settlement) : এই ধরনের বসতিতে একটি পরিবার অন্যান্য পরিবার থেকে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় বসবাস করে (চিত্র ৮.৪)। যেমন বাংলাদেশের বিল অঞ্চলের বসতি।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের খামার বসতি এবং অস্ট্রেলিয়ার মেষপালন কেন্দ্র এই ধরনের বসতির উদাহরণ। কখনো কখনো দুটি বা তিনটি পরিবার একত্রে বসবাস করে। তবে এক্ষেত্রেও এদের অতি ক্ষুদ্র বসতি অপর ক্ষুদ্র বসতি থেকে দূরে অবস্থান করে। হিমালয়ের বন্ধুর পার্বত্য অঞ্চলে এমন কিছু বসতি আছে যেখানকার এক অঞ্চলের উপত্যকার অধিবাসীদের সঙ্গে অন্যদিকের উপত্যকাবাসীদের সারা জীবনে দেখা সাক্ষাৎ হয় না। এই ধরনের বসতিগুলো বিক্ষিপ্ত বসতির পর্যায়ে পড়ে। বিক্ষিপ্ত বসতির বৈশিষ্ট্যগুলো হলো :

(ক) দুটি বাসগৃহ বা বসতির মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান । (খ) অতি ক্ষুদ্র পরিবারভূক্ত বসতি। (গ) অধিবাসীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা।
বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠার পেছনে কতকগুলো প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক কারণ কাজ করে। বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ জলাভাব, জলাভূমি ও বিল অঞ্চল, ক্ষয়িত ভূমিভাগ, বনভূমি এবং অনুর্বর মাটি।

৩। রৈখিক কাভি (Linear settlement) : এই ধরনের বসতিতে বাড়িগুলো একই সরলরেখায় গড়ে ওঠে (চিত্র ৮.৫)। প্রধানত প্রাকৃতিক এবং কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক কারণ এই ধরনের বসতি গড়ে উঠতে সাহায্য করে। নদীর প্রাকৃতিক বাঁধ, নদীর কিনারা, রাস্তার কিনারা প্রভৃতি স্থানে এই ধরনের বসতি গড়ে ওঠে। এই অবস্থায় গড়ে ঠা পুঞ্জীভূত রৈখিক ধরনের বসতিগুলোর মধ্যে কিছুটা ফাঁকা থাকে। এই ফাঁকা স্থানটুকু ব্যবহৃত হয় খামার হিসেবে। বন্যামুক্ত সम উচ্চমि এই ধরনের বসতির জন্য সুবিধাজনক।

কাজ : গ্রামীণ বসতির ধরন নিচের ছকাকার ঘরে লেখ (দলভিত্তিক কাজ)। 

   গোষ্ঠীবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ কলভি         বিক্ষিপ্ত কলভি      রৈখিক বসতি
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...