রায় বাহাদুর রণদা প্রসাদ সাহা বাংলাদেশের একটা সাধারণ সাহা পরিবারের সন্তান ছিলেন । ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার সাভারের উপকণ্ঠে কাছুর পল্লীতে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম । পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে । তাঁর পিতা দেবেন্দ্র পোদ্দার ছোট ব্যবসায়ী ছিলেন। অভাবের সংসারে রণদা প্রসাদ বাল্যকালে দুর্দান্ত প্রকৃতির হওয়ায় তাকে নিয়ে মাঝে-মধ্যেই পরিবারে অশান্তি হতো । শুনা যায়, এক অপরাধের কারণে তাঁর বাবা তাঁকে একবার খড়ম ছুড়ে মারেন । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই খড়ম গিয়ে তাঁর মায়ের কপালে লাগে। সেই আঘাতে তার মায়ের জ্বর এবং ধনুষ্টঙ্কার রোগ হয় এবং কয়েকদিনের মধ্যেই মা কুমুদিনী দেবী ইহলোক ত্যাগ করেন । মায়ের এই অপমৃত্যু এবং আত্মীয়-স্বজনদের তার প্রতি ক্ষোভ ও চরম নির্লিপ্ততা বালকের মনে এক তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে- যা তিনি সারা জীবনেও ভুলতে পারেননি ।
তখনকার দিনে সাহা পরিবারের ছেলেমেয়েদের বেশি লেখাপড়া শিক্ষা দেয়া হতো না । তাই নিম্ন-প্রাইমারির অধিক শিক্ষা তিনি পাননি। ১৯১৪ সনে ইউরোপে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলে বাড়ি হতে পালানোর এক সুযোগে যুদ্ধে লোক নিয়োগের অফিসে তিনি তার নিজের নাম লেখালেন। পরে তাকে বেঙ্গল এ্যাম্বুলেন্স কোরে পুরুষ নার্স হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তিনি মেসোপটেমিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে আহত কয়েকজন সৈনিকের প্রাণরক্ষা করেন। এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ যুদ্ধ শেষ হলে রণদা প্রাসাদকে স্বয়ং রাজার সঙ্গে করমর্দনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এটাই তাঁর প্রথম ইংল্যান্ড সফর।
যুদ্ধে অংশগ্রহণের পুরস্কার হিসেবে প্রথম মহাযুদ্ধ ফেরত সকল ভারতীয়কেই ইংরেজরা তাদের যোগ্যতা অনুসারে কোন না কোন সরকারি চাকরিতে যোগদান করার সুযোগ দেয়। মি প্রসাদের লেখাপড়া নিম্ন প্রাইমারিতে শেষ হলেও যুদ্ধে তার কৃতিত্ব বিবেচনায় রেলের টিকেট কালেকটরের চাকরি দেয়া হয় । অবশ্য এই চাকরিটি তাঁর বেশিদিন থাকেনি। একটি মামলায় পড়ে শেষ পর্যন্ত ১৯৩২ সালে তাঁকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। চাকরি জীবনের অবসানের পর কলকাতায় তিনি ছোট একটি কয়লার ব্যবসায় শুরু করলেন। এটাই তাঁর ব্যবসায় জীবনের শুরু ।
রণদা প্রসাদের একটি আশ্চর্য গুণ ছিল এই যে, যে ব্যবসায় অন্য লোকেরা চালাতে না পেরে স্বল্পমূল্যে বিক্রয় করে দিত, সুযোগ মতো তিনি তা কিনে নিজ দক্ষতা ও ঐকান্তিকতা দ্বারা স্বচ্ছল অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করতেন । হয়তোবা ব্যবসায়ী গোত্রের লোক বলেই সম্ভবত তিনি যেকোন ব্যবসায়ের প্রধান সাংগঠনিক সমস্যাগুলো বুঝতে ও দ্রুত সমাধান করতে পারতেন। তিনি এ কয়লার ব্যবসায় যখন করছিলেন, সেই সময় একদিন লক্ষ করলেন, তাঁর জনৈক খরিদ্দার লঞ্চের মালিক বেশ কিছুদিন ধরে আর কয়লার দাম পরিশোধ করতে পারছেন না। তিনি নিজেই উক্ত লঞ্চটি ক্রয় করলেন। লঞ্চ ব্যবসায় কিছুকাল চললে দেখা গেল পুরানো লঞ্চ সারাবার জন্য প্রায়ই ডকইয়ার্ডে প্রচুর পয়সা দিতে হয়। যদি ডকইয়ার্ড বানানো যায়, তবে নিজের ব্যয় কমবে এবং অন্যদের কাজ করে আয় করা যাবে- এ চিন্তাতেই পরে তিনি ডকইয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন । এভাবে কয়লা হতে লঞ্চ এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যে লঞ্চ মেরামতের ডকইয়ার্ড তাঁর ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত হয় ।
বেশ ক'টি ব্যবসায় একত্রে যুক্ত হলেও এগুলো সুষ্ঠুভাবে চালানোর মত অর্থ তখন তাঁর কাছে ছিল না । তৎকালীন কয়েকজন বিত্তশালী বাঙালি অর্থের যোগানদারকে তিনি অংশীদার করেন এবং তাদের সহযোগে বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানি চালু করেন । এই কোম্পানির অন্যান্য অংশীদার ছিলেন মহেড়ার জমিদার নৃপেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরী, ড. বিধান চন্দ্র রায়, ধনপতি ও রাজনীতিক নলিনী রঞ্জন সরকার এবং জাস্টিস জে.এন. মজুমদার ।
এক সময় ব্যবসায়ে চড়া ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায় সম্প্রসারণের সুযোগ আসে। তিনি বিষয়টা অন্যান্য অংশীদারদের জানালেন । কিন্তু অন্যরা ঝুঁকি গ্রহণ পছন্দ করলেন না । ফলে অন্যান্য অংশীদারদের টাকা পরিশোধ করে দিয়ে তিনি নিজেই এর মালিক হন এবং সমগ্র দায় ও ঝুঁকি নিজের কাঁধে নিয়ে ব্যবসায়কে এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য এ সময়েও তাঁর মোট মূলধনের পরিমাণ সহস্রের অঙ্কেই সীমাবদ্ধ ছিল, লক্ষের কোঠায় যায়নি।
বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানির কাজ ছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নদীপথে মাল আনা-নেয়া করা । এ কোম্পানি যখন মধ্যম আকারে বেশ লাভজনক ব্যবসায় এসে পৌঁছেছে, সেই সময় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ আরম্ভ হয়। ১৯৪২ সালের দিকে বাংলাদেশে খাদ্যের মূল্য চড়তে শুরু করে এবং যুদ্ধ ক্রমশ বাংলাদেশের উপকণ্ঠে আসতে থাকে। জাপানিরা তখন ব্রহ্মদেশ (বর্তমান মায়ানমার) দখল করেছে। এই ব্রহ্মদেশই ছিল তখন ইংরেজদের চাউলের প্রধান ভরসা । তাই ব্রহ্মদেশ যখন তাদের হাতছাড়া হলো, তখন সামরিক বাহিনীর জন্য এবং বেসামরিক প্রশাসনের খাতিরে ইংরেজ সরকার তৎকালীন বেঙ্গল (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা হতে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য ক্রয় করার একটি পরিকল্পনা করে। এই সময় সরকারের পক্ষে খাদ্যশস্য খরিদ করার জন্য তৎকালীন বেঙ্গলে চারজন ক্রয়কারী এজেন্ট নিয়োগ করা হয়। এই চারজন সংগ্রহকারীর মধ্যে রণদা সাহা একজন সংগ্রহকারী রূপে নিযুক্ত হন। এই সময় চাউলের মূল্য দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে এবং অনেক সময়ই আগাম ক্রয় করা চাউলের জন্য এজেন্টগণ বাজার দরে যে টাকা পেতেন তা অভাবনীয় মাত্রায় বেশি ছিল। ফলে ১৯৪৪ সালের মধ্যে রণদা সাহার অর্জিত মূলধনের পরিমাণ সে সময়ে কয়েক লক্ষে গিয়ে দাঁড়ায়। যখন উদ্বৃত্ত টাকার তিনি মালিক হলেন তখন তার মনে এক ভাবাত্তরের জন্ম নেয়। বিনা চিকিৎসায় মাতার মৃত্যু এবং যুদ্ধকালে সৈনিকদের দুঃসহ অবস্থা স্মরণ করে জীবন সম্পর্কে এক অদ্ভুত চেতনা তিনি অনুভব করেন । তাই তিনি প্রথমে ঠিক করলেন স্বগ্রামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করবেন এবং নিজ সন্তানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন । তাই দ্বিতীয় কন্যা জয়া (পরে মিসেস জয়াপতি) কে উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃটেনে প্রেরণ করেন। ১৯৪৪ সালে রণদা সাহা মির্জাপুরের ভুতুড়ে খাল বলে পরিচিত এলাকায় একটি পঞ্চাশ বেডের হাসপাতাল এবং একটি দাতব্য ডিসপেন্সারি স্থাপন করেন । এর নাম ছিল শোভা সুন্দরী ডিসপেন্সারি ।
এ সময়ে নারায়ণগঞ্জে অতি প্রাচীন পাট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জর্জ এন্ডারসন কোম্পানি তাদের পাটের ব্যবসায় তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে রণদা সাহা একে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে জর্জ এন্ডারসনের পাটের ব্যবসায় ক্রয় করেন এবং বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানির সাথে যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জে পাটের বেইলিং, ভাড়া দেয়ার জন্যে পাটের গুদাম এবং একটি ডকইয়ার্ড চালু করেন ।
পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্ব মুহূর্তে তাঁর মোট খাটানো মূলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দুই কোটি টাকার মত। কিন্তু ব্যবসায় বা টাকার মালিকানা তাঁকে তৃপ্তি দিতে পারেনি। তাই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তিনি তাঁর সম্পূর্ণ ব্যবসায় হতে যে আয় হবে তা দ্বারা মায়ের নামে একটি দাতব্য ট্রাস্ট গঠন করেন । এটাই কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট নামে খ্যাত। বর্তমানে বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানি এই ট্রাস্টেরই একটি সম্পত্তি এবং ট্রাস্টেরই আয় হতে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী হাসপাতালের স্কুল অব নার্সিং, টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজ এবং এস.কে হাই স্কুল (ছেলেদের জন্য) পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, মানিকগঞ্জের বিখ্যাত দেবেন্দ্র কলেজটিও তাঁর পিতার স্মৃতির রক্ষার্থে রণদা সাহাই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কুমুদিনী হাসপাতালে বর্তমান প্রায় এক হাজার বেড রয়েছে এবং ভারতেশ্বরী হোমসে ছাত্রীদেরকে সম্পূর্ণ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয় । এখানে একত্রে এক হাজার ছাত্রী পড়াশুনা করে থাকে।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর বিক্তশালী হিন্দুরা অনেকেই ভারতে চলে যান, কিন্তু রণদা প্রসাদ সাহা তাঁর মাতৃভূমি ত্যাগ করেননি। এমনকি ১৯৭১ সালে যখন দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, তখন তিনি নিজে এবং মির্জাপুরের অনেক হিন্দু বিজ্ঞজন বাংলাদেশে থেকে মাতৃভূমির সেবা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন । যার ফল হয় খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ১৯৭১ সালে ৭ মে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে ও তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র ভবানী সাহাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং তাঁদের আর কোনো সন্ধানই পাওয়া যায়নি। জীবনযুদ্ধে সফল এই সৈনিক যে দেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, মাতৃভূমিকে ভালোবেসেছিলেন, দেশের ও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছিলেন দেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে তাঁর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ও মৃত্যু জাতির জন্য খুবই বেদনাদায়ক ।
বর্ণালী প্রতিভা ও গুণের অধিকারী সফল সমাজ উন্নয়ন কর্মী, দক্ষ সংগঠক ও সফল উদ্যোক্তা ড. হুসনে আরা বেগম দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি মহিলা উন্নয়ন সংগঠন TMSS (ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ) এর নির্বাহী পরিচালক ।
১৯৫৩ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি বগুড়া জেলার সদর উপজেলার ঠেঙ্গামারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাস করার পর ওয়াশিংটন ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেন। তার কোর্স বিষয়ের নাম ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ কাঠামোতে লিঙ্গ সাম্য ও সমতা (Gender equity & equality) উন্নয়নে TMSS (NGO) এর ভূমিকা। বগুড়ার নাসরাতপুর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে তিনি শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন এবং কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ১৯৮৫ সালে পূর্ণাঙ্গ একজন সমাজকর্মী হিসেবে TMSS এর কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ১৯৮৫-১৯৯১ পর্যন্ত TMSS এর সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সাল থেকে TMSS এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
একটা গ্রাম থেকে কাজ শুরু করলেও TMSS তার সুযোগ্য পরিচালনায় বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় ২৮,৪০,৭৭৪টি পরিবারকে ইতোমধ্যে সহায়তা প্রদান করেছে। যার মধ্যে ১০,৬০,৮৫৪টি পরিবারকে উন্নয়ন সেবা এবং ১৭,৭৯,৯২০টি পরিবারকে ক্ষুদ্র ঋণ সেবা প্রদান করা হয়েছে। TMSS এর ২০ ধরনের ক্ষুদ্র ঋণ সেবা চালু রয়েছে । এছাড়া কৃষি, সামাজিক উন্নয়ন সেবা, মানবধিকার ও লিঙ্গ, মৎস্য ও গবাদি পশু, স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কার্যক্রম, শিক্ষা, কৃষি ও অকৃষি কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি কর্মসূচি, পরিবেশ ও বনায়ন কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য । বৈশ্বিক ও দেশীয় বিভিন্ন সমস্যাকে সামনে রেখে TMSS এখন বিভিন্ন কর্মসূচি;
যেমন- দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমানো, স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে । ড. হুসনে আরা বেগম একজন দক্ষ সামাজিক সংগঠক হিসেবে TMSS এর সাথেই শুধু সংযুক্ত থাকেননি তিনি বগুড়ার আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে শুরু থেকেই কাজ করে এসেছেন। যেখানে যতটা সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই সমাজকর্মের সাথে সম্পৃক্ত থেকে উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হয়েছেন । শিক্ষা জীবনেই তিনি আল-আমীন সমিতি নামে একটা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপার্সন হিসেবে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন । এরপর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ৩০টির অধিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থেকে তাঁর বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়েছেন। এর মধ্যে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, PKSF (পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন) এর সদস্য, আনসার ভিডিপি ব্যাংকের পরিচালক সদস্য, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (BARK) এর গভর্নিং বডির সদস্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । তিনি বর্তমানে TMSS এর নির্বাহী পরিচালক ছাড়াও নারী উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রচণ্ড আত্মপ্রয়াসী ও কর্মনিষ্ঠ ড. হুসনে আরা বেগম সমাজ তথা নারী সমাজের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে যেয়ে বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন, প্রায় ২০টি দেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যার মধ্যে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে গ্রামীণ মহিলা সংগঠন ও নেতৃত্ব পুরস্কার, ১৯৯৩ ও ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় জনসংখ্যা পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর বনায়ন পুরস্কার, ২০০৫ সালে মৎস ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রদত্ত জাতীয় মৎস্য পক্ষ স্বর্ণপদক পুরস্কার, জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা UNCDF কর্তৃক বৈশ্বিক ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার বাংলাদেশ ২০০৫ এর সম্মান অর্জন, ২০০৫ সালে PKSF কর্তৃক Best Partner Award, ২০০৭ সালে কেয়ারটেকার সরকার প্রধান থেকে Best Award for National Forestry 2007 এবং ২০০৯ সালে কেয়ারটেকার সরকার প্রধান থেকে বেগম রোকেয়া পুরস্কার ২০০৭ লাভ করেন ।
আরও দেখুন...