On This Page

জাল (Net)

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

চিংড়ি আহরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চিংড়ি ও মাছ ধরার জন্য সাধারণত যে সমস্ত জাল ব্যবহৃত হয়ে থাকে তার বিবরণ নিয়ে দেয়া হলো:

ক. বেহুন্দি জাল

স্থানীয় নাম: বেহুন্দি জাল, বিউটি জাল, খোর জাল ইত্যাদি ।
ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী এবং বরিশাল অঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় এর সর্বাধিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। মূলত এ জালের সাহায্যে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চিংড়ি ও চিংড়ির পোনা ধরা হয়।

জাল তৈরির উপকরণ: সাধারণত নাইলন সুতা দ্বারা বেহুন্দি জাল তৈরি করা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক থেকে এ ধরনের জাল মোচাকৃতি বা নলাকৃতির। লম্বায় বা দৈর্ঘ্যে ১৫ থেকে ৬০ মিটার এবং প্রস্থে ১০ থেকে ৪৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ জালের ফাঁসের আকার ১.২৫ থেকে ২.৫ সেমি. হয়ে থাকে। অন্যান্য থলে জালের মতো এ জালের মুখের অগ্রভাগে পাখনা বা ডানা বিদ্যমান এবং ডানার দৈর্ঘ্য ৯ মিটার হয়ে থাকে। জালের থলের দৈর্ঘ্য ২০ মিটারের অধিক এবং জালের মুখের দিকের ফাঁসের আকৃতি ৪ সেমি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাছ ও চিংড়ি আহরণের কৌশল হিসেবে এ ধরনের জাল উপকূলবর্তী অঞ্চলের জোয়ার-ভাটা প্রভাবিত নদ- নদীসমূহে স্রোতের বিপরীতে নৌকার মাধ্যমে স্থাপন করা হয়। একটি বড় ধরনের জাল প্রতিস্থাপনে ২০ থেকে ৩০ জন জেলের প্রয়োজন হয়। অগভীর অঞ্চলে জাল প্রতিস্থাপনের জন্য দু'টি বাঁশ বা কাঠের খুঁটি ব্যবহার করা হয়। জালের ডানা প্রতিস্থাপনের জন্য দৃঢ় কাঠের ফ্রেমের প্রয়োজন হয়। অপেক্ষাকৃত গভীর পানিতে এ ধরনের জাল প্রতিস্থাপনের জন্য নোঙর ব্যবহার করা হয়। জালের মুখ খোলা রাখার জন্য বাঁশের পুল বা খুঁটি ব্যবহার করা হয়।

আহরণকৃত চিংড়ি প্রজাতি: হন্নি চিংড়ি, রোয়াই চিংড়ি, ছটকা চিংড়ি, ঢাকা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি ইত্যাদি। ৩০ জন জেলের প্রয়োজন হয়। অগভীর অঞ্চলে জাল প্রতিস্থাপনের জন্য দু'টি বাঁশ বা কাঠের খুঁটি ব্যবহার করা হয়। জালের ডানা প্রতিস্থাপনের জন্য দৃঢ় কাঠের ফ্রেমের প্রয়োজন হয়। অপেক্ষাকৃত গভীর পানিতে এ ধরনের জাল প্রতিস্থাপনের জন্য নোঙর ব্যবহার করা হয়। জালের মুখ খোলা রাখার জন্য বাঁশের পুল বা খুঁটি ব্যবহার করা হয়।

আহরণকৃত চিংড়ি প্রজাতি: হন্নি চিংড়ি, রোয়াই চিংড়ি, ছটকা চিংড়ি, ঢাকা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি ইত্যাদি।

চিত্র-৪.৫: বেহুন্দি জাল (behundi jal)

খ. বেহতি জাল

স্থানীয় নাম: বিউটি জাল।

ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও খুলনা অঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় এ ধরনের জালের মাধ্যমে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ আহরণ করা হয়। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ জালের প্রচলন অধিক পরিমাণে দেখা যায়।

জাল তৈরির উপকরণ: সুতা বা নাইলন তন্তু দিয়ে এ ধরনের জাল তৈরি করা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক থেকে এটি নলাকৃতি বা মোচাকৃতির। এ জালের মুখের দু'পাশে মুখের ব্যাসের সমান প্রস্থ বিশিষ্ট পাখনা বা ডানা বিদ্যমান। ডানার দৈর্ঘ্য উভয়দিকে ৪ থেকে ৬ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এ ধরনের জালের দৈর্ঘ্য ১২ থেকে ১৫ মিটার এবং প্রস্থ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এ জালের ফাঁসের আকার সম্মুখভাগে প্রায় ১.২৫ সেমি.। জাল পরিচালনা ও প্রতিস্থাপনের জন্য ৩ থেকে ৪ জন আহরণকারী প্রয়োজন হয় এবং বাঁশের খুঁটি ও কাঠের ফ্রেমের মাধ্যমে স্রোতের বিপরীতে প্রতিস্থাপন করা হয়।

গ. টার জাল

ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: সাধারণত মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ জালের সাহায্যে চিংড়ি ধরা হয়। চট্টগ্রাম, খুলনা, পটুয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলের উপকুলবর্তী এলাকায় এ ধরনের জাল দিয়ে চিংড়ি পোনা ধরা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক দিয়ে এ জাল আয়তাকার এবং নৌকার সাহায্যে পরিচালনা করা হয়। জালের লম্বা দিক বাঁশের খুঁটির সাহায্যে দৃঢ় করা হয় এবং জালের খর্বাকার দিক নৌকার সম্মুখভাগের সাথে সংযুক্ত থাকে। আয়তনগত দিক থেকে এ জালের দৈর্ঘ্য ৪.৫ থেকে ৫.৫ মিটার, প্রস্থ ৩.৫ থেকে ৪.৫ মিটার এবং জালের ফাঁসের আকার ০.৬ থেকে ১.২৫ সেমি হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলে মশারির নেট দিয়ে এ জাল তৈরি করা হয়।

জাল পরিচালনা পদ্ধতি: চিংড়ি ও অন্যান্য ছোট মাছ ধরার সময় জালের খুঁটি হাতের সাহায্যে জালের অগ্রভাগ পানির নিচে পেতে রাখা হয় এবং কিছু সময় পর পর মাছের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে পানির উপরিভাগে তোলা হয় এবং মাছ আহরণ করা হয়। প্রকৃতিগতভাবে এ ধরনের জাল ছাঁকি জালের (dip net) অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. চইন জাল

ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: বরিশাল, পটুয়াখালী ও আন্যান্য উপকূলবর্তী অঞ্চলে এ ধরনের জাল দিয়ে অগভীর জলাশয়ের মাছ ও চিংড়ি এবং চিংড়ি পোনা ধরা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক থেকে এ ধরনের জাল ইংরেজি অক্ষর V এর অনুরূপ। সাধারণত তিনটি বাঁশের খুটি সংযুক্ত করে এ জালের অবকাঠামো বা ফ্রেম তৈরি করা হয় এবং অবকাঠামোর সাথে ঘন ফাঁসের মশারী নেট বা নাইলনের সুতা দিয়ে জাল তৈরি করা হয়। আকৃতিগত দিক থেকে জালের মুখ ফ্রেমের আয়তন অনুসারে ত্রিকোণাকার হয়ে থাকে। জালের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১.০ থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

জাল ব্যবহার পদ্ধতি: এ জাল সাধারণত জলজ ভাসমান উদ্ভিদের নীচে স্থাপন করে হঠাৎ করে উপরের দিকে তুলে জালের মধ্য থেকে জলজ উদ্ভিদসমূহ সরিয়ে ফেলে মাছ আহরণ করা হয়। চিংড়ির পোনা আহরণের জন্য খুলনা অঞ্চলে জালের আকৃতি ডিম্বাকার বা চামুচাকৃতি হয়ে থাকে।

 

ঙ. আটনা জাল

ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: উপকূলবর্তী অঞ্চলে বিশেষ করে চট্টগাম অঞ্চলে এ ধরনের জালের প্রচলন অধিক দেখা যায়। সাধারণত এ জালের সাহায্যে ছোট আকৃতির মাছ ও চিংড়ি ধরা হয়।

চ. চরপাতা জাল 

ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এ জালের প্রচলন বেশি দেখা যায়। সাধারণত জোয়ার-ভাটা বাহিত অগভীর নদীসমূহে পানির গতিপথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এ জালের সাহায্যে মাছ ধরা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: এ ধরনের জাল দৈর্ঘ্যে ৬ থেকে ১২ মিটার এবং প্রস্থে ৩ থেকে ৪ মিটার হয়ে থাকে। জালের ফাঁসের আকার ১.২৫ থেকে ২.৫০ সেমি হয়ে থাকে। জালের উপরিভাগে ও পার্শ্বদেশে শক্ত দড়ি লাগানো থাকে, যাতে পানির অধিক গতিবেগের কারণে জাল ছিড়ে না যায়। ভাটার সময় এ জালের নিম্নপ্রান্ত জলাশয়ের তলদেশে খুঁটির সাহায্যে স্থাপন করা হয় এবং উপরের অংশ প্রান্তভূমির উপর ফেলে রাখা হয়। জোয়ারের সময় জালের উপরের প্রান্ত তুলে খুঁটির উপরের প্রান্তের সাথে বাঁধা হয়। পানি কমিয়ে হাতের সাহায্যে জালের মধ্য থেকে মাছ/ চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়।

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion

Promotion