আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য নিচ্ছি এবং এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। ছোট পরিসরে উদাহরণ দিলে বলা যায়, বিদ্যালয়ের বাৎসরিক ছুটির তালিকা বা শিক্ষাপঞ্জি থেকে গ্রীষ্মের ছুটির সময় জেনে আমি পরিবারের সদস্যদের সাথে কবে বেড়াতে যেতে পারি তার সিদ্ধান্ত নিই বা ভিডিও সম্পাদনা (এডিটিং) করার জন্য কোন সফটওয়্যার বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং বড় ফাইল নিয়ে কাজ করা যায় সে তথ্য নিয়ে আমি সে সফটওয়্যার আমার কম্পিউটারে ইনস্টল করি। এভাবে নানারূপে তথ্যের উপর আমরা নির্ভর করি। কিন্তু সকল তথ্য আবার সংবাদ না। সংবাদের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। আমরা এই বৈশিষ্ট্য জানব এবং আজকের সেশনে সিদ্ধান্ত নিব আমরা আমাদের বিদ্যালয় বুলেটিনে কোনও বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন বা আর্টিকেল লিখব।
সময়োপযোগিতা: ঘটে যাওয়া ঘটনার তথ্য যত কম সময়ে পাঠক বা সংবাদগ্রহীতার কাছে যাবে ততই এটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো ঘটনা ঘটার অনেক সময় পর ঘটনার তথ্যটি আর সংবাদ থাকে না। যেমন- ১লা জুন বাংলাদেশের ফুটবল দলের কোনো ম্যাচ জয়ের তথ্য ১০ জুন পর্যন্ত আর গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হিসেবে বিবেচিত হবে না। |
নৈকট্য: কোনো একটি নিজস্ব পরিমন্ডলের তথ্য সম্পর্কিত মানুষদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবাদ হিসেবে বিবেচ্য। আমার বিদ্যালয় উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে এটি আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক বা আমার উপজেলার মানুষের কাছে সংবাদ কিন্তু আরেকটি বিভাগের উপজেলার মানুষের কাছে এটি প্রয়োজনীয় বা অকৃষ্ট হওয়ার মতো তথ্য নয়, তাই তাদের কাছে এটি সংবাদও নয়। |
প্রভাব: কোনো তথ্য যদি নিজস্ব পরিমণ্ডলের মধ্যে না হয় কিন্তু ঐ তথ্য অসংখ্য মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে তখন সংবাদ হয়ে উঠে। প্রভাব অনেক রকম হতে পারে, যেমন- অর্থনৈতিকভাবে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত, আবেগের সাথে সম্পর্কিত বা কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সাথে সম্পর্কিত। |
ভারসাম্যতা: কোনো ঘটনায় যদি একাধিক বা তার বেশি পক্ষ সম্পর্কিত থাকে তবে ঐ ঘটনার উপর তৈরি সংবাদে সকল পক্ষের মতামত বা তথ্য থাকতে হবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং বৈধতা নিয়ে কেউ অভিযোগ করে তবে শুধু সেই অভিযোগ নিয়েই একটি তথ্য প্রকাশ করলে সেটি একটি মানসম্মত সংবাদ বলে বিবেচিত হবে না। অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত কর্তৃপক্ষ দুই পক্ষেরই মতামত নিয়ে সংবাদটি প্রকাশ বা পরিবেশন করতে হবে। |
আমরা জেনে রাখলাম, যখন আমরা কোনো সংবাদ পরিবেশন করব তখন কোন কোন বিষয় আমাদের বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির কোনো কাজ, জীবনযাপন বা বক্তৃতাও আকর্ষণীয় সংবাদ হয়ে উঠতে পারে। খেলোয়াড়, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচ্য।
সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, তা হলো ৬ক। একটি সংবাদে কী, কে, কোথায়, কখন, কীভাবে, কেন এই ছয়টি প্রশ্নের উত্তর থাকলে সংবাদটি পরিপূর্ণতা পায়। এছাড়া সংবাদ বা ঘটনাটির সাথে সম্পর্কিত উপাত্ত, ছবি, ভিডিও সংবাদের সাথে যুক্ত করলে এটি আরও বেশি বেশি গ্রহণযোগ্য ও আকর্ষণীয় হয়।
সংবাদের কাঠামোকে উল্টা পিরামিডের সাথে তুলনা করা হয়।
আমরা আজকে আমাদের আর্টিকেল বা নিবন্ধ লেখার বিষয়বস্তু ঠিক করব। বিষয়বস্তু ঠিক করার আগে একটি অনুশীলন করা যাক। নিচে একটি বিষয়বস্তু দেওয়া আছে, এই বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত সংবাদ উপাদান কী হতে পারে তা নিজের মতো করে লিখি:
বিষয়: আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি
|
যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাই: শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির কারণ
|
যে যে তথ্য থাকতে পারে:
|
যে উপাত্ত (ডেটা) থাকতে পারে:
|
যার যার সাক্ষাৎকার থাকতে পারে:
|
যে ধরনের ছবি বা ভিডিও ব্যবহার হতে পারে:
|
আমাদের অনুসন্ধানী বা গবেষণামূলক সংবাদ নিবন্ধ/আর্টিকেল/ব্লগ লেখার পরিকল্পনা:
এই অভিজ্ঞতা শেষে আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল তৈরি করব। সে পোর্টালে থাকবে আমাদের তৈরি নিবন্ধ বা আর্টিকেল/ব্লগ। আমরা আমাদের আশপাশ থেকে আমাদের ব্লগের বিষয়বস্তু ঠিক করব। মনে রাখতে হবে এমন বিষয়বস্তু নির্বাচন করব যার জন্য আমাদের উপাত্তের প্রয়োজন হবে। কারণ আমরা আগামী কিছু সেশনে উপাত্ত এবং তার উপস্থাপন নিয়ে কাজ করব।
নিচে কিছু বিষয়বস্তুর উদাহরণ দেওয়া হলো এবং সাথে ওই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত উপাত্তের ধারণাও দেওয়া হলো।
বিষয়বস্তু | সম্পর্কিত উপাত্তের (ডেটা) ধারণা |
আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি | গত বছর অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোন মাসে উপস্থিতির হার কেমন। কোন মাসে অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। |
আমার এলাকায় বাল্য বিবাহ | বাল্য বিবাহের সবচেয়ে প্রচলিত ৫টি কারনের মধ্যে কোন কারনে বেশি বাল্যবিবাহ হয় তার তুলনামূলক হার |
আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ | কোন শ্রেণির এবং জেন্ডারের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় বেশি অংশগ্রহণ করে তার হার |
অনলাইনে ভুল তথ্য বা গুজব | কোন ৫টি কারনে/মাধ্যমে গুজব সবচেয়ে বেশি ছড়ায় এবং সেগুলোর হার |
অনলাইন প্রতারণা | সাধারণত মানুষ কী ধরনের অনলাইন প্রতারনার শিকার হন এবং হার |
ইন্টারনেটে শেখা | কত শতাংশ শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষক মনে করেন ইন্টারনেট ব্যবহার করে পড়াশোনা করা বা শেখা সম্ভব। |
উপরের উদাহরণগুলো শুধু আমাদের বোঝার সুবিধার্থে দেওয়া হয়েছে। আমরা উপরের বিষয়বস্তু থেকে আমাদের ডায়েরী কিংবা আমাদের আশপাশের যে কোনো বিষয়বস্তু থেকে যে কোনো একটি বিষয় নিব এবং এখন থেকে এর উপর কাজ শুরু করব। আমাদের বিষয়বস্তু ঠিক করে আগামী শ্রেণিতে শিক্ষককে দেখাব। শিক্ষক আমাদের সাহায্য করবেন যেন আমাদের সবার বিষয়বস্তু একইরকম না হয়ে যায়।
আমার নির্ধারিত বিষয়:
আরও দেখুন...