আজকের সেশনে আমরা একটি দলীয় বিতর্কে অংশ নিব। আমরা বুলেটিন তৈরি করার জন্য যে প্রতিবেদন বা প্রবন্ধ লিখব সেখানে যথেষ্ট প্রমাণ ও যুক্তি উত্থাপনের প্রয়োজন হবে। তাই এই বিতর্ক বা যুক্তি-তর্কের খেলা আমাদের যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করবে।
আমরা কি আমাদের ডায়েরি বা জার্নালটি নিয়ে এসেছি? নিয়ে এসে থাকলে শিক্ষককে দেখাই।
যুক্তি-তর্ক শুরু করার আগে 'নিরপেক্ষতা' নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যেতে পারে। যে কোনো তথ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। নিরপেক্ষতা বলতে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে কোনো পক্ষপাত দৃষ্টিভঙ্গি না রেখে, আবেগের উপর নির্ভর না করে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিচার করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়াকে বোঝায়।
বিভিন্ন কারণে আমাদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব কাজ করতে পারে।
মনে করি আমি আমার একজন দূরসম্পর্কের মামাকে খুব পছন্দ করি। কারণ তিনি আমাকে সব সময় পড়াশোনা এবং খেলাধুলা করতে উৎসাহ দিতেন, বিভিন্ন সময় উপহার দিতেন, মজার মজার গল্প শোনাতেন। আমি ভাবতাম ইনি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষদের একজন। সে মামার ছেলে আবির একদিন আমাকে এসে বলল, তার বাবা তাকে পড়াশোনা নিয়ে অনেক চাপ দিচ্ছেন, অযথা অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন কোচিংয়ে পাঠাচ্ছেন। আবিরের কথা আমার বিশ্বাস হলো না। এই বিশ্বাস না হওয়ার কারণে হচ্ছে আমার 'পূর্ব অভিজ্ঞতা'। এই পূর্ব পভিজ্ঞতার কারনে ঐ মামার প্রতি আমার পক্ষপাতিত্ব কাজ করছে। |
আমি ছোট বেলা থেকে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাজ অনেক পছন্দ করি। তার তৈরি সব চলচ্চিত্র প্রায় আমার দেখা হয়ে গেছে। একদিন জানতে পারলাম ওই নির্মাতা আসলে নিজে কিছু তৈরি করেননি বরং বিভিন্ন বিদেশি চলচিত্রের গল্প অনুকরণ করে চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। আমি এই তথ্যটি কিছুতেই বিশ্বাস করলাম না। আমার এই বিশ্বাস না করাটার কারন হচ্ছে আমার 'আবেগ'। এরকম জাতীয়তা, সংস্কৃতি, সম্পর্ক ইত্যাদি কারনে আমাদের মধ্যে আবেগগত পক্ষপাতিত্ব কাজ করে। |
এখানে মনে রাখা জরুরি, পক্ষপাতিত্ব সবসময় মন্দ নয়। আমার নিজের কাছে যখন মনে হবে আমি পক্ষপাতিত্ব করছি তখন আমার উচিৎ হবে আমার মতের বিরুদ্ধ যুক্তিটির পক্ষে যথেষ্ট প্রমান আছে কিনা তা ভেবে দেখা। প্রমান যদি থাকে তাহলে আমাদের ঐ প্রমানের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কোন একজন ব্যক্তি যখন পেশা হিসেবে সাংবাদিক বা তথ্যপ্রদানকারি তখন তাকে নিরপেক্ষভাবে তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। সেখানে তিনি তার আবেগ কিংবা পূর্ব অভিজ্ঞতাকে ভুলে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যই আমাদের দিয়ে থাকেন।
তবে, অনেক ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের উপর এর মালিকানার প্রভাবের কারনে সংবাদ অনেক সময় পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়
মনে করি একজন সংবাদ পত্রের মালিকের চিনির ব্যাবসা আছে। একদিন ওই মালিকের চিনিকলের শ্রমিকরা অনেক দিন বেতন না পেয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। প্রকৃতপক্ষে, সময়মত বেতন না দেওয়া ঐ মালিকেরই অপরাধ। এখন ঐ মালিক যদি তার সংবাদ পত্রের সকল সাংবাদিককে বলে দেয় যেন মালিকের পক্ষে সংবাদ প্রচার করে বা কোন রকম সংবাদ করতে বিরত থাকে, তাহলে দেশবাসী কিন্তু প্রকৃত সংবাদ পাবেনা। |
আর কী কী কারণে একটি তথ্য বা সংবাদ প্রভাবিত হতে পারে বলে আমি মনে করি তা নিচের ঘরে লিখি-
আগামী সেশনের প্রস্তুতি:
এখন আমাদের যুক্তি-তর্কের খেলা শুরু হবে। শিক্ষক আমাদের শ্রেণিকক্ষকে দুইটি দলে ভাগ করে 'পক্ষ দল' ও 'বিপক্ষ দল' নির্বাচন করে দিবেন।
খেলার নিয়ম হচ্ছে, পক্ষ দলের একজন বিষয়ের পক্ষে ১ মিনিট করে বলবে, এরপর বিপক্ষ দলের একজন ১ মিনিট বলবে। এভাবে খেলাটি ১৫ মিনিট চলবে। একজন শিক্ষার্থী একবারের বেশি বলার সুযোগ পাবে না। তবে কারো মনে কোনো যুক্তি এলে সে তার দলের অন্য একজনকে চিরকুটে লিখে দিয়ে সাহায্য করতে পারবে। বিষয়:
১। 'একমাত্র গণমাধ্যমই পারে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে' বা
২। 'সত্য যাচাই করা এবং প্রচার করার দায়িত্ব একমাত্র সাংবাদিকের'
আরও দেখুন...