প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন দাখিলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-১ - প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর ধারণা | NCTB BOOK

ইংরেজি Report শব্দের বাংলা অর্থ হলো প্রতিবেদন। যিনি রিপোর্ট বা প্রতিবেদন তৈরি করেন তাকে রিপোর্টার বা প্রতিবেদক বলা হয়। সাধারণত কোনো বিষয়ের ওপর পরিচালিত অনুসন্ধানের ফলাফলের বিবরণকে প্রতিবেদন বলা হয়। অর্থাৎ, প্রেরক: কোনো বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধানের পর এ সম্পর্কিত ঘটনাবলির যে ধারাবাহিক বিবরণ তৈরি করা হয় তাকে প্রতিবেদন বলে। এ বিবরণ মৌখিক বা লিখিত যেকোনো ধরনের হতে পারে। প্রতিবেদন হলো প্রতিবেদকের স্বাধীনভাবে পরিচালিত অনুসন্ধানের ফলে এটি সুপারিশসহ বা সুপারিশ ব্যতীত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা ব্যক্তির কাছে উপস্থাপন করা হয়। এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাইয়ের পর নির্ধারিত বিষয়সহ নির্দিষ্ট নিয়মে তৈরি করতে হয়। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । এজন্য এটি সঠিক এবং তথ্য নির্ভর হওয়া উচিত।

প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন সাধারণত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন বা দাখিল করতে হয়। যে সকল ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়ে থাকে, তারা হলো—

→ সুপারভাইজার বা তত্ত্বাবধায়ক (Supervisor) : একজন কর্মী বা নির্বাহী যার অধীনে চাকরি করেন, যার কাছে সরাসরি জবাবদিহি করেন তার কাছেই তাকে প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। এরূপ প্রতিবেদন সাধারণত কাজের অগ্রগতি, কার্যক্ষেত্রের কোনো সমস্যা, কোনো উপকরণগত প্রয়োজন প্রভৃতি বিষয়ের ওপর করা হয়ে থাকে। এরূপ প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে বা যখন প্রয়োজন তখন কিংবা তত্ত্বাবধায়কের চাহিদা সাপেক্ষে প্রণয়ন ও দাখিল করতে হয়। এরূপ প্রতিবেদন অনেক সময় মৌখিকও হয়ে থাকে। কখনো কখনো কাঠামোবদ্ধ নিয়মের বাইরেও এ প্রতিবেদন তৈরি ও উপস্থাপন করা হয় ।

চিত্র: কাজের তত্ত্বাবধান

 

দায়িত্ব অর্পণকারী (Responsibility delegator) : প্রতিষ্ঠানে কিছু অনিয়মিত কাজ থাকে। অর্থাৎ, কিছু কাজ এমন থাকে যেগুলো সারাবছর থাকে না। এগুলো কখনো কখনো বা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়েই করতে হয়। এসব কাজ করার জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই ব্যক্তিবর্গকে কমিটি বলা হয়। আবার প্রতিষ্ঠানের কোথাও কোনো দুর্ঘটনা বা হঠাৎ কোনো ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। এরূপ দুর্ঘটনা বা ঝামেলা মোকাবেলা বা এ ব্যাপারে তদন্ত করার জন্যও কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও কোনো নীতিমালা তৈরি বা সুপারিশমালা তৈরির জন্যও কমিটি গঠন করা হয়। এরূপ কমিটি বিভিন্ন স্তরের কর্মী বা নির্বাহীদের দিয়ে গঠন করা হয়। কমিটিকে কর্তৃপক্ষের দেওয়া লক্ষ্য ও নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। এক্ষেত্রে যিনি বা যারা কমিটি গঠন করে দিয়েছেন প্রতিবেদন (Report) তার/তাদের কাছেই দাখিল করতে হয়।

নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা (Controlling authority) : শিল্প বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদারকি বা দেখাশোনার জন্য বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। যেমন: উৎপাদন সংক্রান্ত কাজ তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়, অর্থ সংক্রান্ত কাজ তদারকির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় প্রভৃতি। বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যবস্থা বা আয়-ব্যয়ের হিসাব এসব সংস্থার কাছে দাখিল করতে হয়।

সরকার (Government) : বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের তথ্য ও প্রতিবেদনের প্রয়োজন হতে পারে। সরকার জাতীয় বাজেট প্রণয়ন, আইন বা নীতিমালা তৈরি, দেশের অবস্থা জানা প্রভৃতি কারণে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নির্ধারিত বিষয়ের ওপর তথ্য ও প্রতিবেদন চাইতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তা বা নির্বাহীকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। উক্ত কর্মকর্তা/নির্বাহী সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকারি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন বা প্রতিবেদন দাখিল করেন।

   তাই বলা যায়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে যথাযথ অনুসন্ধান, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে সঠিক তথ্য, অবস্থা, কার্যাবলি, ঘটনা, সিদ্ধান্ত বা ফলাফল সম্পর্কে যে বিবরণ বা সুপারিশ তৈরি করা হয় তাকে প্রতিবেদন বলে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন সাধারণত উপরিউক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলের জন্যই তৈরি করা হয়ে থাকে ।

Content added By
Promotion