প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রকারভেদ

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-১ - প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর ধারণা | NCTB BOOK

প্রতিষ্ঠানের আকার, আয়তন, কর্মপদ্ধতি প্রভৃতির ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কাঠামো দেখা যায়। নিচে এসব কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া হলো-

চিত্র : সংগঠন কাঠামোর প্রকারভেদ

ক. আনুষ্ঠানিক কাঠামো (Formal Organization Structure ) : প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-নীতি ও বিধি বিধানের আওতায় যে সংগঠন কাঠামো গড়ে ওঠে, তাকে আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলে। এ ধরনের সংগঠন কর্তৃপক্ষ তৈরি করে দেয়। বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি বাস্তবায়নের জন্য এ সংগঠন কাঠামো তৈরি করা হয়। এতে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এছাড়া, প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দায়িত্ব-কর্তব্য সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। তাই কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে সচেতন থাকেন। আনুষ্ঠানিক সংগঠন নিচের পাঁচ প্রকার হয়ে থাকে-

১. সরলরৈখিক সংগঠন (Line organization) : যেখানে কর্তৃত্ব রেখা ঊর্ধ্বতন নির্বাহী থেকে ক্রমান্বয়ে অধীনস্থ কর্মীদের কাছে সরলরেখার আকারে নেমে আসে, তাকে সরলরৈখিক সংগঠন বলে। এটি সবচেয়ে প্রাচীন এবং সহজ প্রকৃতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। এখানে প্রত্যেক কর্মীর দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সুস্পষ্ট থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গ অপেক্ষাকৃত নিচু পদের লোকজনের ওপর কর্তৃত্ব আরোপ করে থাকেন। তাই একে সামরিক সংগঠনও বলা হয়ে থাকে।

চিত্র : সরলরৈখিক সংগঠন

২. সরলরৈখিক ও পদস্থ কর্মী সংগঠন (Line and staff organization) : এ ধরনের সংগঠন কাঠামোতে একই সাথে নির্বাহী এবং বিশেষজ্ঞ পদস্থ কর্মী পাশাপাশি অবস্থান করেন। অর্থাৎ সরলরেখায় অবস্থিত নির্বাহীকে সাহায্য ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ কর্মীকে পাশাপাশি রাখা হয়। ফলে নির্বাহী প্রয়োজনে পদস্থ কর্মীদের পরামর্শ নিয়ে কাজ সম্পাদন করতে পারেন। কিন্তু এ সংগঠনে বিশেষজ্ঞ কর্মীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। এ সংগঠনকে উপদেষ্টা সংগঠনও বলা হয়।

চিত্র: সরলরৈখিক ও পদস্থ কর্মী সংগঠন

৩. কার্যভিত্তিক সংগঠন (Functional organization) : প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রকৃতি, গুরুত্ব, বিশেষজ্ঞতা এবং শ্রম বিভাগের নীতি অনুসরণ করে যে সংগঠন প্রণীত হয়, তাকে কার্যভিত্তিক সংগঠন বলা হয়। এ ব্যবস্থায় বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাজকে শ্রেণিবিভাগ করে প্রতিটি কার্যবিভাগের দায়িত্ব এক একজন নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞের ওপর ন্যস্ত করা হয়। বিশেষজ্ঞ কয়েকজন অধস্তন কর্মীকে নিয়ে বিভাগের কাজ সম্পাদন করেন। এতে বিশেষজ্ঞ কর্মী সার্বিক দায়িত্বে থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক কাজ দক্ষতার সাথে দ্রুত সম্পন্ন হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক এফ. ডব্লিউ. টেলর (F. W. Taylor) এ ধরনের সংগঠন কাঠামোর উদ্ভাবক।

চিত্র : কার্যভিত্তিক সংগঠন

৪. কমিটি সংগঠন (Committee organization) : প্রাতিষ্ঠানিক কোনো বিশেষ কাজ সম্পাদনের জন্য বিশেষভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সমষ্টি হলো কমিটি সংগঠন। অর্থাৎ, কমিটি হলো কিছু সংখ্যক লোকের একটি দল, যারা সিদ্ধান্ত নেন অথবা ব্যবস্থাপনাকে উপদেশ দেন। এ ধরনের সংগঠনে সদস্যরা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সাধারণত স্বল্পমেয়াদে কমিটি সংগঠন কাজ করে থাকে। যেমন: একটি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হলো। উক্ত দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। এছাড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত কমিটি, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কমিটি, পরীক্ষা কমিটি প্রভৃতি এরূপ সংগঠনের উদাহরণ। কমিটিকে পর্ষদ, বোর্ড, কমিশন, টাস্কফোর্স, কাউন্সিল প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়।

চিত্র: কমিটি সংগঠন

৫. ম্যাট্রিক্স সংগঠন (Matrix organization) : ম্যাট্রিক্স সংগঠন হলো এক ধরনের মিশ্র সংগঠন। প্রতিষ্ঠানে কার্যভিত্তিক এবং দ্রব্যভিত্তিক বিভাগীয়করণের সমন্বয়ে যে সংগঠন কাঠামো তৈরি হয়, তাকে ম্যাট্রিক্স সংগঠন বলে। অর্থাৎ, একই সাংগঠনিক কাঠামোর অধীনে কার্যভিত্তিক এবং প্রকল্প বা দ্রব্যভিত্তিক বিভাগীয়করণের স্বাভাবিক সমন্বিতকরণকে ম্যাট্রিক্স সংগঠন বলে। এরূপ সংগঠন বৃহদায়তন ও জটিল প্রকৃতির প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী।

খ. অনানুষ্ঠানিক কাঠামো (Informal Organization Structure) : এ ধরনের সংগঠনে প্রাতিষ্ঠানিক নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন ও রীতিনীতি অনুসরণ না করে ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। এ ব্যবস্থায় সংবাদ ও তথ্য বিনিময়ের কোনো আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না। অনানুষ্ঠানিক সংগঠন প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ওপর অর্পিত ক্ষমতা ও দায়িত্ব রেখা বা সাংগঠনিক কাঠামো অনুসরণ করে চলে না। যেমন : প্রতিষ্ঠানে কোনো বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা প্রতিরোধে জ্যেষ্ঠ কর্মীরা এগিয়ে আসেন।

অতএব, বর্তমান সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী ওপরের সংগঠন কাঠামোগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে সব প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের সংগঠন কাঠামো ব্যবহার করা হয় না বা উপযোগীও নয়। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, প্রকৃতি, আয়তন, কাজের ধরন, কর্মীদের সংখ্যা, কর্মীদের যোগ্যতা, ব্যবহৃত প্রযুক্তি, পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে উপযুক্ত কাঠামো নির্বাচন করা হয়।

Content added || updated By
Promotion